তোমাতেই বিমোহিত পর্ব -২১+২২

#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ২১
#লেখিকা আরোহি জান্নাত( ছদ্মনাম)

ইহানের গ্রামের বাড়ি পৌঁছাতে বেশ বেলা হয়ে গেছে আরোহি আর ইহানের।বাড়ির সামনে আসতেই হঠাৎ অদ্ভুত অনুভুতি হতে লাগল আরোহির। এই বাড়িতে এর আগে ও তিনবার এসেছে সে। তবে সেটা ইহানের কাজিন হয়ে। ইহানের বউ হয়ে এই প্রথমবার।আরোহির বুকের মধ্যে ধুকধুক করছে। পা যেন চলতে চাচ্ছে না।সবাই কি ভাববে,কি চোখে নেবে আরোহিকে এইসব ভেবেই আরোহি যেন আরো ভয়ে কুকিয়ে যাচ্ছে। আরোহিকে হঠাৎ থেমে যেতে দেখে ভ্রু কুচকায় ইহান।জিজ্ঞেস করে উঠল,

“কি ব্যাপার দাড়িয়ে পরলে কেন? ভেতর চলো!”

আরোহি অসহায় চোখে তাকায়। তারপর মিন মিন করে বলে,

“আমার ভয় করছে! ”

আরোহির কথা শুনে ইহান হো হো করে হেসে ওঠে। তারপর বলে,

” এত ভয় যখন আমাকে বিয়ে করলে কেন!”

ইহানের রসিকতা একটু ও ভালো লাগল না আরোহির।কটমট করে ইহানের দিকে তাকালো সে।ইহান আর কিছু না বলে আরোহির হাতটা শক্ত করে ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসে।বাড়ির মধ্যে ঢুকতেই বড় উঠান ইহানের দাদু বাড়িতে। বাড়িটা দুই তালা বিশিষ্ট। তবে আশপাশে অনেক গাছ।রাতের বেলায় কোনো ভুতুড়ে বাড়ির থেকে কম মনে হয় না আরোহির।

বাড়ির প্রায় সকলেই উঠানে বসে ছিল। আরোহি আর ইহান কে দেখে সকলে তাকায় সেদিকে।

সকলের তাকানো দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায় আরোহি।তবে প্রত্যেক টা মানুষই সাদরে গ্রহণ করে তাকে। আয়ান তো দেখা মাত্রই ঝাপিয়ে পড়ে আরোহির কোলে।সকলের কাছ থেকে এত ভালো ব্যাবহার পেয়ে ভয় কেটে যায় আরোহির। সকলের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে ভালোভাবে মিশে যায় সকলের সাথে।

সকলের সাথে কুশল বিনিময় করে ইহানের দাদীর রুমে যায় আরোহি। তবে রুমে ঢুকেই আরোহির মনটা খারাপ হয়ে গেল। দাম্ভিক ভাব বজায় রেখে চলা মানুষটাকে এভাবে বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে অনেক কষ্ট হচ্ছে আরোহির। আরোহি ধীর পায়ে ওনার কাছে গিয়ে বসলেন। ওনি বেশি মানুষের ভীড় পছন্দ করে না। তাই তার ঘরে বেশি লোক থাকে না।পালা করে করে সকলে দেখে যায় ওনাকে।

আরোহি ওনার পাশে বসল।সাথে ইহান ও ইহান আস্তে করে ডাকল,

“দাদুমনি!”

ইহানের ডাক শুনে ধীরে ধীরে চোখ খুললেন তিনি। কিছু দিন আগে দ্বিতীয় বার হার্ট এট্যাক করেছেন তিনি।ডক্টর ফুল রেস্ট নিতে বলেছেন।ওনাকে দেখার জন্য বাড়ির সদস্য ছাড়া ও আলাদা দুই জন কে রাখা হয়েছে। ইহানকে দেখে মুচকি হাসলেন তিনি। ইহানকে ছোট বেলা থেকে খুব ভালোবাসেন তিনি। আস্তে করে বললেন,

“আমার নাতিবউ কোথায়? ”

আরোহি আর একটু কাছ ঘেসে বসলেন। আরোহিকে দেখে তৃপ্তির হাসি দিলেন তিনি। দাদির সাথে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে আরোহি আর ইহান বাইরে এলো।তবে দাদির ঘর থেকে বের হয়েই আরোহির মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল। আর এর কারণ ইহানের ফুফাতো বোন দিশা। মেয়েটাকে একদম পছন্দ করে না আরোহি। আগে অনেক বার ইহানের বাড়িতে দেখা হয়েছে মেয়েটার সাথে। মেয়েটা ইহানের ওপর যে অনেক দূর্বল সেটা জানে আরোহি। আর এ জন্যই আরোহি দিশা কে পছন্দ করে না।

ইহান কে দেখে এক গাল হাসল দিশা। ওদের দিকে এগিয়ে এসে ইহানকে জিজ্ঞেস করল,

“কেমন আছো ইহান?”

“ভালো। তুমি কেমন আছো? ”

ইহান সৌজন্য হেসে বলল।

“আমি ও ভালো আছি। তা আরোহি তুমি কেমন আছো?”

না চাইতে ও হাসল আরোহি। তারপর জবাবে হ্যাঁ বলল।

দিশা আরো গল্প করতে চাইছিল বুঝতে পেরে ইহান কে নিয়ে বড়দের কাছে চলে গেল আরোহি। সেখানে গিয়ে গল্পে মেতে উঠল সকলে।

দুপুরে খাওয়ার সময় ইহান খেয়াল করল আরোহির মন খারাপ। খাবার ও খায়নি ঠিকমতো। সকলে এখন একটু বিশ্রাম নিচ্ছে। ইহানের প্রায় সব কাজিনরাই এসেছে। সকলে মিলে ডিসাইট করেছে বিকেলে গ্রাম দেখতে বের হবে তাই এখন সকলে রেস্ট করে নিচ্ছে।

ঘরে এসে দেখল আরোহি বেলকনিতে বসে আছে। দূর আকাশে তার দৃষ্টি।ইহান আস্তে করে আরোহির পিছনে গিয়ে দাড়ালো। আলতো করে জড়িয়ে ধরল আরোহিকে। ইহানের উপস্থিতি টের পেয়ে আরোহি কিছু বলল না।তবে নিজেকে এলিয়ে দিল ইহানের প্রসস্ত বুকে।ইহান আরোহিকে নিজের দিকে না ফিরিয়েই জিজ্ঞেস করল,

“মন খারাপ কেন? এখানে এসে খুশি হও নি?”

আরোহি কিছু বলল না। তারপর হঠাৎ জিজ্ঞেস করল,

“দিশার তো বিয়ের বয়স হয়ে গেছে তাহলে ফুফি ওকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে না কেন?”

আরোহির মুখ থেকে এমন কথা শুনে হতবাক ইহান।আরোহি দিশার বিয়ের কথা ভাবছে কেন? বেশ কিছুক্ষণ ভাবল ইহান। তারপর পুরো বিষয়টা মাথাতে আসতে ভ্রু কুচকে ফেলল।আরোহির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,

“আর ইউ জেলাস?”

রাগি চোখে তাকালো আরোহি। তারপর বলল,

“আমি মোটে ও জেলাস না।”

আরোহি মুখে না বললে ও আরোহির চোখ মুখ অন্য কথা বলছে। আর ইহান সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে। তবে আরোহিকে চটানোর জন্য বলে উঠল,

“মেয়েটা আমাকে বেশ পছন্দ করে। ওর সাথে প্রেম করতে পারলে মন্দ হয় না।”

ইহানের মুখ থেকে এমন কথা শুনে রেগে যায় আরোহি। জোরে ধাক্কা দেয় ইহান কে তারপর বলে ওঠে,

“তো এখানে কেন আছেন? যান গিয়ে প্রেম করুন ওর সাথে। শুধু প্রেম কেন বিয়ে ও করে ফেলুন।”

আরোহি কথা শুনে ঠোঁট টিপে হাসে ইহান।তারপর বলে ওঠে,

“বাহ, এই না হলে আমার বউ!কি সুন্দর আইডিয়া দিলে!”

ইহানের রসিকতায় আরোহির রাগ চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।রাগে, কষ্টে কান্না চলে এসেছে আরোহির।ওখান থেকে চলে আসার জন্য পা বাড়ানোর সাথে সাথে ইহান আরোহির হাত ধরে ফেলে। একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আরোহিকে। আরোহি এবার জোরে ফুপিয়ে কেদে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে,

“আপনি এত খারাপ কেন ইহান?আপনি তো জানেন আপনাকে অন্য কারো সাথে দেখলে আমার কষ্ট হয়।আপনি জানেন আপনি যেদিন মায়াকে বিয়ে করেছিলেন আমার সেদিন কি অবস্থা হয়েছিল আপনি জানেন না।আপনি এটা ও জানেন না আমি নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম আয়ান এর কথা শুনে।”

ইহানের বুকে মোচড় দিয়ে উঠল আরোহির কথা শুনে। যতটা সম্ভব শক্ত করে ধরল আরোহিকে। তারপর বলল,

“আম সরি আরোহি। অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমায়।”

আরোহি কিছু বলল না।চুপচাপ ইহানের সাথে মিশে দাঁড়িয়ে আছে। কান্নার গতিটা ও কমে গেছে।

সূর্য লাল হয়ে গেছে। লাল কিরণ ছড়াচ্ছে চারিদিকে। সেই সাথে আরোহি আর ইহান ও যেন সূর্যের লাল আলোতে স্নান করছে।দুজনে দুজনকে আকড়ে রেখে যখন সূর্যের লাল আভা টাকে উপভোগ করছিল তখনই দরজায় নক করল কেউ।

সকলে ঘুরতে যাওয়ার জন্য রেডি।আরোহি আর ইহান ও রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো।বাড়ির বড়রা কেউ যাবে না।আরোহি আয়ানকে সাথে নিতে চেয়েছিল কিন্তু ইহানের বড় চাচিমনি আরোহিকে দেয় নি।নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। সকলে অনেকক্ষণ ধরে ঘোরাঘুরি করছে।দিশা অনেকবার ইহানের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছে। তবে ইহান সেটা কৌশলে এড়িয়ে গেছে। আরোহি এতে বেশ খুশি। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আরোহির চোখ যায় গ্রামের রাস্তায় খেজুর গাছে ঝোলানো খেজুরের রসের পাত্রের দিকে। আরোহি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে দিকে।তবে কিছু না বলে সকলের সাথে এগিয়ে যায়।

ডিনারের পর সকলে ছাঁদে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আরোহি আর আয়ান একসাথে বসে আছে।ইহান ও সেখানে।গ্রাম হওয়ায় বেশ ঠান্ডা। তাই আগুনের ব্যাবস্থা ও করেছে। সবাই আড্ডা দিতে দিতে হঠাৎ ইহানের এক চাচাতো ভাই আরোহিকে গান গাইতে বলে।প্রথমে না করলে ও পরে সকলের জোরাজোরি তে রাজি হয় আরোহি।তারপর গাইতে শুরু করে,

Ye raatein ab nahi dhadakti
Din bhi saansein
Nahi lete ab toh aa jaao
Mere soneya

Baatein reh gayi adhoori
Mere labon
Pe zaroori aaki sun jaao
Mere soneya

Tere bin nahi laage jiyaa
Tere bin ab
To aaja piyaa
tere bin Nahi lage jiyaa

Tere bin nahi laage jiyaa
Tere bin ab
To aaja piyaa
tere bin Nahi lage jiyaa

Pehle jaise mausam bhi
Aati nahi hai
Baarishon mein pehle jaise
Baatein nahi hai

Sookhe sookhe alfaaz khali
Khali mere haathon
Ki laqeerein bulaave soneya
#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ২২
#লেখিকা আরোহি জান্নাত( ছদ্মনাম)

চারিদিকে কিচিরমিচির আওয়াজ।তবে পাখির আওয়াজ থেকে মানুষের আওয়াজ বেশি।বালিসের পাশ থেকে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে সকাল ৬ঃ০৭।আরোহির কাছে এটা অনেক সকাল হলে ও গ্রামের মানুষ এই সময়ই ঘুম থেকে ওঠে। ব্লান্কেট এর মধ্যে থেকে বের হতে ইচ্ছে হচ্ছে না।তবে গ্রামের শীতের সকাল টা দেখার লোভ ও হচ্ছে খুব। তাই সকল আলসেমিকে দূরে সরিয়ে উঠে বসে আরোহি।আয়ান পরম আবেশে আরোহির আচল জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। আরোহি ছোট করে আদর দিল আয়ানের কপালে।বাচ্চা ছেলেটা ব্লান্কেটের মধ্যে ঘুমাচ্ছে। তবে আয়ানের পাশে তাকিয়ে অবাক হলো আরোহি। ইহানের জায়গা ফাঁকা। ইহান তো এতো সকালে ওঠে না।তাহলে!

আরোহি ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলো।তবে আসার আগে আয়ানকে দেখে রাখার জন্য একটা বাচ্চা কে বলে গেছে।যদি ঘুম থেকে উঠে যায় আরোহিকে জানাতে বলেছে।
বাইরে বেরিয়ে দেখে সকলে উঠানে বসে আছে। ছোট বড় সকলেই এত সকালে ঘুম থেকে উঠেছে। ভাবতেই বেশ ভালো লাগল আরোহীর। চারিদিকে এখনো বেশ কুয়াশা রয়েছে। এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর পরিবেশ লাগছে আরোহির কাছে। তবে উঠানে মাটির বেশ কয়েকটি খোপ (এক ধরনের মাটির পাত্র) দেখে মনটা আনন্দে ভরে উঠল আরোহির।কারণ আরোহি জানে এটাতে খেজুরের রস রয়েছে। তখনই দিশা আরোহির পাশে দাড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,

“ইহান ভাই ব্যাবস্থা করেছে। বড় ভাইয়া (ইহানের বড় চাচার বড় ছেলে) কে সেই কাকভোরে ডেকে নিয়ে গেছে। চারিদিকে তখন পুরো অন্ধকার।কেউ জানে না এ কথা আমি ছাড়া।”

আরোহি বিষ্ময়ে হা হয়ে গেছে। ইহান এতো কিছু করেছে। তবে সেই সাথে একটা প্রশ্ন উকি দিল আরোহির মনে।তাই দিশাকে জিজ্ঞেস করল,

“তোমাকে এসব কে বলল?
তুমি তো বললে তখন কেউ ওঠে নি।”

আরোহির কথা শুনে আমতা আমতা করছে দিশা।আরোহি সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে।দিশা তখন আরোহি কে এক কোনায় টেনে এনে বলতে লাগল,

“আসলে ভাবি আমি তো রাতে ঘুমাই নি।না মানে বয়ফ্রন্ডের সাথে কথা বলছিলাম।কথা বলতে বলতে সকাল হয়ে যায়। তখনই সব জানতে পারি। তুমি প্লিজ এটা কাউকে বলো না।প্লিজ ভাবি।”

দিশা করুন চোখে তাকিয়ে আছে। আর এদিকে খুশিতে তো আরোহি আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে। দিশাকে নিশ্চিন্ত হতে বলল।বলল সে কাউকে কিছুই জানাবে না।তারপর উঠানে চলে গেল।সকলে মিলে খেজুরের রস ও খেল।মনের মধ্যে এক প্রশান্তি বয়ে চলছে আরোহির।
_______________

ইহানকে বারবার ফোন দিচ্ছে রাফসান। কিন্তু ইহান ফোন ধরছে না।এদিকে চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে রাফসান। আজ অনেক দিন আয়ানকে দেখে না।বড্ড ইচ্ছে করছে রাফসানের ছেলেটাকে একবার দেখতে। রাফসান জানে ইহানের কাছে আয়ান ঠিক আছে কিন্তু তা ও দেখতে বড্ড ইচ্ছে করছে।

নিজের কেবিনে বসেই ইহানকে বারবার ফোন দিচ্ছে। এদিকে রিনি এসেছিল রাফসানের কাছে একটা ফাইল সাইন করাতে তবে রাফসানকে অস্থির দেখে রাফসানের কাছে যায়।জিজ্ঞেস করে ওঠে,

“এনি প্রবলেম রাফসান? ” আপনাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে! কোনো গুরতর সমস্যা নি তো!”

মানুষের মনে অশান্তি থাকলে ভালো কথা ও গায়ে কাটার মতো লাগে।এখন রাফসানের ও একই দশা।রিনি স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করলে ও সামান্য এই কথায় রাফসানের রাগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। রেগে বলল,

“আমার কি প্রবলেম সেটা আমি বুঝে নেব!তুমি কে যে আমায় এসব জিজ্ঞেস করো? আর কখনো আমাকে এসব জিজ্ঞেস করতে আসবে না।বের হও এখান থেকে। জাস্ট গেট আউট!”

শেষের কথাটা বেশ ধমকে বলল রাফসান।

রাফসানের এমন কথা শুনে চোখে জল চলে এসেছে রিনির।তবে কোনো কথা না বলে নিজের কেবিনে চলে গেল সে। কেবিনে গিয়েই ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল সে।

অনেকবার ফোন করে ও যখন ইহান ফোন ধরল না।তখন ইহানের ফোনে ম্যাসেজ করল রাফসান।যেখানে লেখা ছিল,

ইহান, তোমরা কোথায়? আমি একটু আয়ানের সাথে দেখা করব!আমার ছেলেটাকে না দেখে থাকতে পারছি না আমি।প্লিজ আমার ফোন টা একটু ধরো!

ম্যাসেজ টা পাঠিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিল রাফসান।নিজেকে বোঝালো আয়ান ঠিক আছে। এতো হাইপার হওয়ার কিছু নাই।

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো রাফসান। এখন কিছুটা ফ্রেশ লাগছে।হঠাৎই রাফসানের খেয়াল হলো সে রিনির সাথে খুবই খারাপ ব্যাবহার করে ফেলেছে।

রিনির কেবিনে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো রাফসান। তারপর নক না করেই ভেতরে ঢুকে পড়ল।ভেতরে ঢুকে দেখল রিনি চুপচাপ কাজ করছে। তবে চোখ মুখ বেশ ফোলা। রাফসানের বুঝতে অসুবিধা হলো না যে রিনি কেঁদেছে। রাফসানকে দেখে রিনি বেশ অবাক হলো তবে কিছু বলল না।রাফসান বুঝল রিনির অভিমান টা।তবে সে নিরুপায়। শুধু সরি ছাড়া আর কিছু বলার নেই তার।একজন প্রমিকের মতো রাফসান রিনির রাগ ভাঙাতে পারবে না।তাই রিনির সামনে গিয়ে বলল,

“আম সরি রিনি। আসলে তখন মাথাটা অনেক গরম ছিল। আমার ছেলের সাথে আজ অনেকদিন যোগাযোগ হয় না। এজন্যই তখন এমন একটা কাজ করে ফেলেছি। তুমি প্লিজ কিছু মনে করো না।”

কথাগুলো বলেই রিনির অফিস রুম থেকে বেরিয়ে গেল রাফসান।রাফসান এর চলে যাওয়ার দিকে রিনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। মনে মনে ভাবল,

“আমি জানি রাফসান, এই সরিটুকু ছাড়া আমি আর কিছু পাব না।তবে অপেক্ষায় থাকব। একদিন এই সরি ছাড়াও আপনি আরো কিছু বলবেন আমায়।”
___________________

সকাল থেকে আরোহির মন বেশ ফুরফুরে। ইহান সেটা খেয়াল করেছে।শুধু তাই নয়,দিশার সাথে ও বেশ জমিয়ে গল্প করছে সে।আর সে জন্য ইহান একটু অবাক।ইহান সুযোগ বুঝে আরোহিকে নিয়ে ঘরে চলে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে ওঠে,

“কি ব্যাপার! দিশার সাথে এতো ভালো করে কথা বলছো!গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসেছো!”

ইহানের কথায় মুচকি হাসল আরোহি। তারপর বলল,

“আমি আপনাকে অনেক ট্রাস্ট করি। তাই ওকে নিয়ে আর জেলাস হবো না।”

আরোহির কথা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে ইহানের কাছে। ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে এখনো।আরোহি বুঝতে পারছে ইহান তার কথা বিশ্বাস করছে না।তাই বলে উঠল,

“আপনার বোন প্রেম করছে। ”

আরোহির হাসি হাসি মুখের কথা শুনে ইহান পুরো বিষয়টা বুঝতে পারল।সেই সাথে দিশার সাথে এতো মেলামেশার বিষয়টা ও।তারপর আরোহির মাথায় একটা আস্তে করে গাট্টি মেরে বলে উঠল,

“পাগলি একটা।”

ইহানের কথা শুনে আরোহি খিলখিল করে হেসে উঠল।আর ইহান সেই হাসির দিকে বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে রইল।

আজ বিকেলেই বাড়িতে ফিরে এসেছে সবাই। ইহানের মা আরশি বেগম সকলকে নিয়ে চলে এসেছেন। এভাবে হুট করে চলে আসার সিদ্ধান্তে সকলে অবাক হয়।তবে, আরশি বেগম জানান ঢাকাতে তার একটি বিশেষ কাজ পড়ে গেছে আর সেই জন্য ইমারজেন্সি সকলকে চলে আসতে হলো।তবে আরশি বেগম এর মুখ টা বেশ শুকনো।সকলে অনেকবার অনেক প্রশ্ন করেছে। তবে তিনি উত্তর দেন নি।শুধু একটা কথায় বলেছে, বাড়িতে গেলে সবাই সব কিছু জানতে পারবে।

বাড়িতে ঢুকেই সোফায় ধপ করে বসে পড়লেন আরশি বেগম। কাউকে ঘরে যেতে দিলেন না।মায়ের এমন ব্যাবহারের কারণ বুঝতে পারছে না ইহান। তবে আরশি বেগম যে এমন কিছু জিজ্ঞেস করবে তা ভাবতে পারেনি ইহান।উপস্থিত সকলে যেন হতভম্ব হয়ে গেল আরশি বেগম এর কথা শুনে।

চলবে,
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here