তোমাতেই বিমোহিত পর্ব -১৭+১৮

#তেমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ১৭
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

“তুমি সত্যি এখনো আমায় ক্ষমা করতে পারো নি। আচ্ছা ঠিক আছে, বলো কি করলে তুমি আমায় ক্ষমা করবে!! আমি সেটাই করব। ”

ইহানের এমন কথায় যেন ভাবান্তর হলো না আরোহির। সে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ইহান আর একটু করুন স্বরে বলল,

“সত্যি বলছি তুমি যা বলবে আমি তাই করব আরোহি কিন্তু এভাবে আর ভুলের মাঝে থাকতে পারবো না।তুমি যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেব কিন্তু প্লিজ। ”

আরোহি একটু উঁচু হয়ে ইহানের টাই টা ঠিক করে দিয়ে বলল,

” শাস্তি আপনি পাবেন। তবে এখন বলব না।এখন অফিসে যান আজ সন্ধ্যায় বলব আপনার শাস্তির কথা!”

ইহান বুঝতে পারছে না আরোহির মনে কি চলছে।তবে আরোহি যখন বলেছে এখন কিছু বলবে না তখন বলবে না এটা ইহান জানে। তাই কথা না বাড়িয়ে অফিসে চলে গেল ইহান।
____________________

রাফসানকে টানতে টানতে অফিসের ছাঁদে নিয়ে এলো রিনি।রাফসান সিন ক্রিয়েট করতে চাই নি বলে জোর করে নি রিয়াকে।না হলে রাফসানকে রিনি কখনোই এভাবে আনতে পারত না।ছাঁদে এসে রাফসানকে ছেড়ে দিয়ে ঝাঝালো গলায় প্রশ্ন করল রিনি,

“ওই জয়াকে কেন লিফট দিয়েছেন আপনি রাফসান?ভালোবাসেন ওকে তাই না? আমি আপনাকে এতবার বলেছি আমি আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু আপনি যেন আমার কথা শুনতেই পান না। কেন রাফসান কেন? কি করলে আপনি আমায় ভালোবাসবেন, বলুন আমি তাই করব কিন্তু প্লিজ এভাবে আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।দু মাস হলো আপনি আমাদের অফিস জয়েন্ট করেছেন, এই দুই মাস ধরে আমি আপনাকে বলছি আমি আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু আপনি একটা কথায় বলেন আমাকে ভালোবাসা আপনার পক্ষে সম্ভব না। অথচ ওই মেয়েটার সাথে আপনি বেশ ভাব জমাচ্ছেন! কেন করছেন এমন!!”

“তুমি কিন্তু নিজের সীমা অতিক্রম করছো এবার, রিনি!আমি কার সাথে মিশব, কাকে লিফট দেব সটা আমার ব্যাপার। তুমি এটা নিয়ে কথা বলতে পারো না।আমি যেন আর কোনো দিন আমার বিষয়ে তোমাকে এতটা মাথা ঘামাতে না দেখি! আর তুমি যেটাকে ভালোবাসা বলছো সেটা শুধুই এটার্কশান!! তাই এসব ভূত মাথা থেকে নামাও, বুঝেছো!!”

কথাগুলো বলেই রাফসান সেখান থেকে চলে গেল।নিজের ডেস্কে গেল রাফসান।ভীষণ রাগ হচ্ছে রাফসানের। মনে মনে ভাবল,

“এভাবে আর চলতে পারে না। আমার ইহানকে সব জানাতে হবে এবার!”

রাফসানের ফোন পেয়ে একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে ইহান। অফিস থেকে আজ এক ঘন্টা আগে ছুটি নিয়েছে ইহান।ইহান পৌছানোর কিছুক্ষণের মধ্যে রাফসান ও এসে পড়ে। রাফসানকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। ইহান সেটা খেয়াল করল। তাই রাফসানকে জিজ্ঞেস করল,

“কি হয়েছে রাফসান? আজ হঠাৎ দেখা করতে চাইলে? আয়ানকে দেখতে তো ও বাড়িতে যেতে পারতে?”

ইহানের কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাফসান বলে উঠল,

“ইহান এই মুহূর্তে আমার সব থেকে কাছের বন্ধু তুমি। তাই একটা বিষয় নিয়ে তোমার সাথে কিছু আলোচনা করার ছিল।আসলে যেহেতু অফিস টা তোমার সাথে রিলেটেড সেহেতু তোমাকে এটা জানানো খুব দরকার।দেখ তুমি যোগাযোগ করে আমাকে এই চাকরি টা পাওয়িয়ে দিয়েছো।সে জন্য আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।কিন্তু? ”

“কিন্তু কি রাফসান? অফিসে কোনো ঝামেলা হচ্ছে?”

জিজ্ঞেস করে ওঠে ইহান।

“না অফিসে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ঐ অফিসে কাজ করে একটা মেয়ে। নাম রিনি।মানে আমার কলিগ বলতে পারো।মেয়েটা খুব ভালো ইহান।কিন্তু অফিস জয়েন্ট এর দিন ১৫ পর থেকেই কান্টিনিয়াসলি আমাকে প্রপোজ করে যাচ্ছে। প্রথমে আমি ব্যাপার টা সেই ভাবে গুরুত্ব দেয় নি। কিন্তু ইদানীং মেয়েটার কাজ কথা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমি অনেক বার ওকে বুঝিয়েছে যে আমি ওকে বিয়ে করতে পারব না। ওর সাথে কোনো রকম সম্পর্কে ও জড়ানো সম্ভব না আমার পক্ষে। কিন্তু মেয়েটা মানতে নারাজ!”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠে রাফসান।

ইহান মনোযোগ দিয়ে রাফসানের কথাগুলো শুনছিল।এমন কিছু যে হবে সেটা ইহান ভাবেনি।এমনিতেই ইহান প্রচন্ড টেনশনে আছে যে আজ আরোহি তাকে কি শাস্তি দেবে। তার মধ্যে আবার রাফসান এর সমস্যা।চারিদিক দিয়েই সমস্যা যেন ঘিরে ধরেছে ইহান কে। কি বলবে, কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ইহান। তাই রাফসানকে বলল,

“রাফসান এই বিষয় টা তে আমি কি বলব আমি নিজে ও বুঝতে পারছি না। তবে এটুকু বলতে পারি যা ই করো না কেন একটু ভেবে চিন্তে করো। যদি মেয়েটা সত্যি তোমাকে ভালোবেসে থাকে তাহলে ও কে এক বার সুযোগ দাও।”

ইহানের এমন কথা শুনে রাফসান করুন চোখে তাকালো ইহানের দিকে। ইহান এই দৃষ্টির মানে জানে তাই বলে উঠল,

“আমি জানি মায়াকে তুমি আজ ও ভালোবাসো।আমি কিন্তু মায়াকে ভুলে তোমাকে নতুন জীবন শুরু করতে বলছি না।আমি বলতে চাইছে তুমি মেয়েটাকে একটা সুযোগ দাও। তাকে মায়া এবং আয়ান এর ব্যাপারে ও জানাও।এই মুহূর্তে ডিটেইলস এ না বলো, কিন্তু ওদের নিয়ে মেয়েটার সাথে আলাপ তো করতে পারো।যদি মেয়েটা সত্যি তোমাকে ভালোবাসে তাহলে তোমাকে মেনে নেবে আর যদি এটা শুধুই এটার্কশান হয় তাহলে তোমার থেকে দূরে সরে যাবে। এবার সিদ্ধান্ত তোমার!!”

ইহানের কথা শুনে রাফসান দেখল ইহান ভুল কিছু বলছে না।তাই রাফসান ভাবল রিনিকে সব সত্যি টা জানাবে তারপর যা হয় দেখা যাবে।

নিজেদের কথা শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল ইহান ও রাফসান।রাফসান ভাবছে রিনিকে সত্যি টা জানিয়ে দিলে আর এই সমস্যা টা থাকবে না।মেয়েটা নিশ্চয় এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করতে চাইবে না যে বিবাহিত বা বিপত্নীক।

অন্য দিকে ইহানের বুকের মাঝে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আজ বাড়িতে গেলে আরোহি তাকে কি বলবে এটা ভেবে!অনেক চিন্তা নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিল ইহান আর রাফসান।

বাড়িতে ইহানের অপেক্ষায় আছে আরোহি। আজ যে কথা টা বলবে সেটা সবাই কি ভাবে নেবে। ইহান আপত্তি করবে না এটা জানে আরোহি তবে ভেতরে ভেতরে অনেক কষ্ট পাবে। আর বাড়ির লোকজন তারা ও নিশ্চয়ই আরোহির এই সিদ্ধান্ত মানতে চাইবে না।কিন্তু আরোহি এটা করবেই ভেবে নিয়েছে।

একরাশ ভয় নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করল ইহান। প্রতিদিনের মতো আজ ও আরোহি আর আয়ান আরশি বেগম এর ঘরে আছে। ইহান নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর ড্রয়িং রুমে এসে বসল।একটু পরেই সেখানে আরশি বেগম, আরোহি আর আয়ান এলো।আরশি বেগম এর মুখ টা কালো হয়ে আছে। যেন কোনো কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় আছেন তিনি। একটু পর ইহানের বাবা ও ফিরে এলো।সকলের মুখ থমথমে হয়ে আছে। প্রত্যেকের মনে আলাদা আলাদা চিন্তা। ইহানের বাবা ফ্রেশ হয়ে এলে সকলে ডিনার করতে বসবেন। হলো ও তাই। ইহানের বাবা ফ্রেশ হয়ে ফেরার পর সকলে রাতের খাবার এর জন্য বসে পড়ল।সকলে চুপচাপ খাচ্ছে। আরশি বেগম এর মুখ টা ও কেমন কালো হয়ে আছে।ইহানের বাবা খেয়াল করলেন শুধু আরশি বেগম নয় ইহানের মুখ টা ও শুকনো।আবার খাওয়ার টেবিলে ও কেউ কোনো কথা ও বলছে না। তাই তিনি ই কথা শুরু করলেন।বললেন,

“ইহান তেমার অফিস কেমন চলছে?”

“ভালো বাবা।”
ছোট্ট করে উত্তর দিল ইহান।

এতক্ষণ কিভাবে কথাটা বলবে বুঝে উঠতে পারছে না আরোহি। তবে যেহেতু সকলে এখানে আছে আর একসাথে আছে তাই নিজের সিদ্ধান্ত টা জানানোর উপযুক্ত সময় এটা ভেবে আরোহি বলে উঠল,

“আমি কিছু বলতে চাই বড় বাবা।”

নিজের খালামনিকে খালামনি বলে ডাকলে ও ইহানের বাবাকে বড় বাবা বলে ডাকে আরোহি।

আরোহির কথায় চমকে ওঠে ইহান। ভাবে এখন কি বলবে আরোহি!তখন আরোহি বলে ওঠে,

“আমি আবার পড়াশোনা টা শুরু করতে চাই। ”

আরোহির এমন কথায় সকলে খুশি হয়।শুধু আরশি বেগম ছাড়া।তিনি আগের মতো মন খারাপ করে থাকেন। ইহানের বাবা বলে ওঠেন,

“সেটা তো খুব ভালো কথা মামনি।তবে এখন তো আর ভার্সিটির ভর্তির ডেট নেই। তোমাকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে থেকে পড়তে হবে।আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তোমাকে প্রাইভেট ভার্সিটিতেই ভর্তি করিয়ে দেব।”

“তোমার কোনো আপত্তি নেই তো আরশি?”আর ইহান তোমার কি মত?” জিজ্ঞেস করে ওঠে ইহানের বাবা।

” আমার কোনো অসুবিধা নেই বাবা।”

বলে ওঠে ইহান।

তখন আরোহি আবার ও বলে,

“বড় বাবা আর একটা কথা বলার ছিল। ”

“হ্যাঁ মা বলো।”বলে ওঠেন ইহানের বাবা।

আরোহি নিজেকে সামলে এক বুক সাহস নিয়ে বলে ওঠে,

“আমি ভার্সিটির আশপাশে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে ওইখানে থেকে পড়াশোনা করতে চায়। আর সাথে আয়ান কে ও রাখতে চায়। ”

কথাটা বলেই মাথা টা নিচু করে নেয় আরোহি। ইহান ও তার বাবা অবাক হয়ে যায় আরোহির এমন সিদ্ধান্তে তবে আরশি বেগম চুপচাপ থাকেন। এতক্ষণে নিজের স্ত্রীর মন খারাপের বিষয় টা স্পষ্ট হয় ইহানের বাবার কাছে। আরোহির পড়াশোনা নিয়ে তার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আরোহি যে এই বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। এটা ভেবেই মন খারাপ করে আাছেন আরশি বেগম।তবে আরোহি এমন সিদ্ধান্ত কেন নিলো এটাই ভাবতে থাকেন তিনি।
#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ১৮
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

আরোহি এমন একটা আবদার করবে ভাবতে পারেনি ইহানের বাবা।তিনি চান আরোহি পড়াশোনা করুক তবে এভাবে পরিবার থেকে দূরে গিয়ে থাকবে এটা তিনি চান না।তবে আরোহির কথা তিনি ফেলতে ও পারবেন না।তাই বললেন,

“আমি তোমার সব ধরনের আবদার পূরণ করার চেষ্টা করেছি আরোহি। তাই আজ ও তোমার বিরুদ্ধে যাব না।তোমার যদি মনে হয় দূরে গিয়ে পড়াশোনা করা তোমার জন্য ভালো হবে তাহলে আমি মানা করব না।”

কথাগুলো বলেই সেখান থেকে চলে গেলেন ইহানের বাবা।আরশি বেগম ও করুন চোখে তাকালো। তার চোখ স্পষ্ট বলছে এমন কাজ করিস না মা।এতে কেউ ভালো থাকবে না।

নিজের ঘরে মুখ টা বেজার করে বসে আছেন আরশি বেগম। তার পাশেই তার স্বামী বসে আছেন।গভীর ভাবে কিছু ভাবছেন।তখন ইহান এলো সে ঘরে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে নক করল সে। বাবার অনুমতি নিয়ে ঘরে ঢুকল ইহান। ইহান এসে একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে বাবাকে বলল,

” আমাকে ডেকেছে বাবা!”

ইদ্রিস সাহেব ইহানের বাবা নড়ে চড়ে বসলেন।বললেন,

” আরোহির সিদ্ধান্তে তোমার কি মত ইহান?”

ইহান জানত তার বাবা এই ব্যাপারে কথা বলবে বলেই তাকে ডেকেছে। কিন্তু সে কি উত্তর দেবে সেটা বুঝতে পারছে না।ইহানকে চুপ থাকতে দেখে ইদ্রিস সাহেব আবার ও বলে উঠলেন,

“এমনি এমনি এমন একটা সিদ্ধান্ত আরোহি নেবে না আমি জানি। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো কারণ আছে। তবে সেটা তোমাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার।আমি জানতে চায় না।আমি শুধু এটুকু বলব যে আরোহি কে আমি আর তোমার মা অনেক ভালোবাসি তাই ওর সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব।ওকে আটকাবো না।তবে এই সিদ্ধান্ত যদি তোমার ওপর রাগ বা অভিমান থেকে আরোহি নিয়ে থাকে তাহলে সেটা ভাঙানোর দায়িত্ব তোমার। আমি বলছি না তুমি মেয়েটাকে কোনো ভাবে জোর করো তবে তোমাদের উচিত নিজেদের মধ্যে ব্যাপার টা মিটিয়ে নেওয়া।”

তখন আরশি বেগম বলে উঠলেন,

” আমি কিছু জানি না ইহান। তুই আমার মেয়েকে আর নাতিকে আটকা।”

ইহান নিজের বাবা মায়ের কথা টা বুঝলো।তবে কি করবে সেটা ভেবে পেল না।আস্তে আস্তে বাইরে বেরিয়ে এলো।

ড্রয়িং রুমে বসে আছে ইহান।রাত তখন ২ টার বেশি। নিজের ঘরে যায় নি সে।আরোহি ও ঘুমায় নি।সে ভেবেছিল ইহান হয়তো তাকে ঘরে এসে কিছু বলবে। কিন্তু ইহান এখনো ঘরেই আসেনি।তাই আয়ানকে সতর্কতার সাথে শুয়িয়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। ড্রয়িং রুমে এসে দেখল ইহান সোফায় বসে আছে। অবাক হলো আরোহি। ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে ইহানের কাছে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,

“আপনি এখানে?”

আরোহির কথায় ইহান একটু নড়ে চড়ে বসল।আরোহির দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।আরোহি বুঝল ইহানের অভিমান।তবে সেটা বুঝে ও না বোঝার ভান করে আবারও জিজ্ঞেস করে উঠল,

“আজ রাতে কি এখানে ঘুমাবেন? ”

“সেটা তোমার না ভাবলে ও চলবে! তা কখন যাচ্ছেো তুমি?কালকেই? ”

বলে উঠল ইহান।

“হুম ”

বলেই ঘরের দিকে চলে গেল আরোহি।

ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল আরোহি। প্রচন্ড অভিমান হচ্ছে তার।যদিও এ অভিমান এর কোনো অর্থ নেই। তবে আরোহি সেটা বুঝতে চাইলো না।আরোহি একটু আগের কথা ভাবতে লাগল।

খাওয়া শেষে নিজের ঘরে এসে বসেছিল আরোহি। মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা ইহানকে কষ্ট দিতে গিয়ে বাড়ির লোকগুলোকে কষ্ট দিয়ে ফেলছে না তো সে।নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করল,

“আমার সিদ্ধান্ত কি ঠিক!! রাগের মাথায় কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেই নি তো আমি!!”

তখনই দরজায় আওয়াজ হলো।আরোহি ভেবেছিল ইহান কিন্তু না আরশি বেগম আর ইদ্রিস সাহেব এসেছেন। আরশি বেগম ঘরে এসে বললেন ,

“তোর বড় বাবা খুব দুশ্চিন্তা করছে আরোহি। তাকে সবটা বল!”

আরশি বেগম এর এমন কথা শুনে অবাক হলো ইদ্রিস সাহেব। একটু আগেই আরশি বেগম এর মুখটা বাংলার পাঁচের মতো হয়ে ছিল কিন্তু ঘরে ঢুকেই তার কি হলো!!

আরোহি ধীর পায়ে গিয়ে তার বড় বাবার পাশে গিয়ে বসল।তিনি সোফাতে বসে ছিলেন। তারপর অপরাধী সুরে বলল,

“আম সরি বড় বাবা। আসলে এটা আমার দোষ না।এটা আমাকে খালামনি শিখিয়ে দিয়েছে।”

আরোহির কথা কিছুই বুঝল না ইদ্রিস সাহেব। তখন আরোহি বলে উঠল,

“আসলে তোমার ছেলের সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে। আমি মন খারাপ করে ছিলাম। তখন খালামনি আমার কাছ থেকে মন খারাপের কথা শুনে, আমাকে বলল এভাবে সকলকে ভয় দেখাতে। আমি তোমাকে আগে থেকে জানিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু খালামনি দেয় নি।বলল, বাবা ছেলেকে নাকি একসাথে টাইট দিবে! ”

কথাগুলো বলেই চোখ নামিয়ে নিলো আরোহি।আর ইদ্রিস সাহেব বড়বড় করে আরশি বেগম এর দিকে তাকালেন। তার বউ যে এত ড্রামা করবে ভাবেন নি তিনি। সবাই চুপচাপ। হঠাৎই ইদ্রিস সাহেব হো হো করে হেসে উঠলেন।বললেন,

“ঠিক করেছিস,মা।মাঝে মাঝে বরদের টাইট দিতে এমন ভয় দেখাতে হয়।তোর খালামনি আমাকে কম টাইট দিয়েছে নাকি!”

মজার সুরে বলে উঠলেন ইদ্রিস সাহেব। বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেছে যেন। মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসেন তিনি। হঠাৎ এভাবে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার কথা শুনে কষ্ট পেয়েছিলেন। আর সে জন্যই তো নিজের স্ত্রী কে নিয়ে এ ঘরে এসেছিলেন যাতে আরোহি কে বোঝাতে পারে।

“আচ্ছা এখন কি করবি ভাবছিস?সত্যি সত্যি চলে যাবি নাকি!”

জিজ্ঞেস করলেন ইদ্রিস সাহেব।

“হুম। কিছু দিনের জন্য তোমাদের উত্তরার ফ্লাটে গিয়ে থাকব।তারপরই চলে আসবো।আর এখান থেকেই ভার্সিটিতে যাতায়াত করব।”

“ঠিক আছে মা।তোর যেটা ভালো লাগে সেটাই করিস।তবে আমার ছেলেটাকে বেশি কষ্ট দিস না যেন!”

লাজুক হাসল আরোহি। মাথাটা নিচু করে নিলো।ভাগ্যিস বড় বাবার সাথে আর খালামনির সাথে ছোট বেলা থেকেই তার বন্ধুর মতো সম্পর্ক। না হলে নিজের শ্বশুর শ্বাশুড়ি এর সাথে এই ভাবে কথা বলতে পারত না।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল আরোহি। আর ইহান সে ড্রয়িং রুমে বসে একটা নির্ঘুম রাত পার করল।

_____________

আরোহির আজ ও সকালে ঘুম ভাঙল মিষ্টি রোদের ছোঁয়ায়। তবে ইহানকে প্রতিদিনের মতো সোফায় না দেখে ভ্রু কুচকে গেল আরোহির। তবে কি সারারাত ঘরে আসেনি ইহান।ভাবতে লাগল আরোহি। ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হলো সে।তবে ড্রয়িং রুমে ও নেই। মোটামুটি সব জায়গায় খুঁজল আরোহি ইহানকে তবে সেটা নিরবে কাউকে না বুঝতে দিয়ে।
রান্নাঘরে সকালের নাস্তা বানাচ্ছেন লতা বেগম।অন্য দিনের তুলনায় আজ তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছে আরোহি।মূলত দুশ্চিন্তায় ঘুম ভেঙে গেছে ওর।বাড়িতে এখন ও কেউ উঠে নি।এমন কি আয়ান ও ঘুমাচ্ছে। আরোহি রান্নাঘরে এসে লতা বেগম দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিল তবে সে হাসিতে প্রাণ ছিল না। ইহানের জন্য চিন্তা হচ্ছে। তাই লতা বেগম কে জিজ্ঞেস করল আরোহি,

“ফুফু ইহান ভাই কে দেখেছ?”

আরোহির কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন লতা বেগম। বললেন,

“তুমি এখন ও ইহান কে ভাই ডাকো আরোহি?”

লতা বেগম এর কথায় লজ্জা পেল আরোহি ইহানের সাথে তো আরোহি কথায় বলত না।তাই ডাক নিয়ে কখনো কোনো অসুবিধা হয় নি। তবে এখন লতা বেগম এর কাছে ইহানকে ভাই না ডেকে শুধু ইহান ডাকতে ও সংকোচ হচ্ছিল তাই ভাই বলে ডাকল আরোহি।

আরোহি যে লজ্জা পাচ্ছে সেটা বুঝতে পারলেন লতা বেগম। তই বললেন,

“আমি বাড়িতে ঢোকার সময় দেখি ইহান বাবা কোথাও যাচ্ছে। সিড়িতে দেখা হয়েছিল। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কোথায় যাচ্ছে। বলল, কি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরে গেল হঠাৎ, তাই সেখানে যাচ্ছে। আমি যেন সকলকে জানিয়ে দেয়।”

লতা ফুফুর কথায় আরোহি ভালো ভাবে বুঝতে পারল যে ইহান রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে।রাগে অভিমানে চোখে পানি চলে এলো আরোহির। তাই কিছু না বলে ঘরে চলে গেল সে।সে সত্যি সত্যি চলে যাবে।ব্যাগ গোছাতে শুরু করল আরোহি।

“কেন থাকব আমি এখানে? আমার ওপর তো শুধু রাগই দেখানো যায়।আমি বলেছি চলে যাবো সত্যি সত্যি গেছি নাকি! কাল রাতে আমাকে একবার বলতে পারত আরোহি যে ও না।দেখত আমি তার কথা শুনি কিনা।আমার ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে তো এবার আমি ও আয়ানকে নিয়ে চলে যাবো।”

জল ভরা চোখে কথাগুলো
নিজে নিজে বিরবির করতে লাগল আরোহি।

_______________

রাফসান নিজের ডেস্কে বসে আছে। অন্য দিনের তুলনায় আজ দিনটা যেন কেমন লাগছে রাফসানের। আর তার কারণ হলো রিনি।রাফসান অনেক বার বারণ করার পর ও রিনি প্রতিদিন রাফসান অফিসে ঢোকার কিছুক্ষণ পরই কফি আনতো রাফসানের জন্য। কিন্তু আজ মেয়েটা রাফসানের কেবিনে আসেনি।এমন কি ঢোকার সময় রিনির চোখে চোখ পড়লেও রিনি চোখ টা নামিয়ে নিয়েছিল। অথচ অন্য সময় মেয়েটা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকত।

আসলে একটা মানুষ কে অপছন্দ করলেও সাথে সাথে তাকে ভোলা যায় না।আর এ কদিনে রিনির ব্যাবহারগুলো রাফসানের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আজ হঠাৎ ব্যাতিক্রম হওয়ায় মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে রাফসানের। তবে রিনির এমন ব্যাবহার রাফসানের কাছে অদ্ভূত হলে ও রাফসান খুশি। মেয়েটা যে সরে গেছে এটা ভেবেই রাফসান খুশি।বাইরে হঠাৎ চেঁচামেচির শব্দে রাফসানের রিনির কথা ভাবনার ছেদ ঘটে। বাইরে বেরিয়ে দেখে,

চলবে,
চলবে,

(আরোহির সিদ্ধান্ত ঠিক না কি ভুল আর এমন সিদ্ধান্ত এর পেছনে কারণ কি!!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here