#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৫
চারদিকে অনেক অন্ধকার এই সময় কে আবার লাইটগুলো অফ করে দিলো উপরের তলায় পুরো ই ফাঁকা। নিচে মানুষ আছে। অন্ধকারের মধ্যে দাড়িয়ে আছি এক জায়গায় ভয় হচ্ছে অনেক। এখান থেকে চিৎকার দিলো ও কেউ শুনবে না। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। হঠাৎ আমার হাতে কারো স্পর্শ পেতে ই ভয়টা আরো বেড়ে গেলো। হাতে ধরে ই কোলে তুলে নিলো। আমি চিৎকার দিতে গেলো ও মুখে চেপে ধরে।
–এতো চেচাচ্ছেন কেনো। কেউ শুনতে পাবে না।
–আপনি এমন করে আমকে কোলে নিলেন কেনো।
— অন্ধকারে শাড়ির মধ্যে পা লেগে পড়ে যাবেন। বেশি কথা না বলে এক হাত দিয়ে শার্ট এর পকেট থেকে ফোনটা বের করেন।
–আমাকে নামান আগে।
–তাহলে অন্ধকারের মধ্যে ই নিয়ে যাবো কোনো কিছুর সাথে ধাক্কা খেলে আপনি ই প্রথম ব্যাথাটা পাবেন।
কথাটা ঠিক ই ব্যাথা পেলে আমার তো আর বাবার বাসায় যাওয়া হবে না। তাই ফোনটা নিলাম পকেট থেকে আর ফ্লাস অন করলাম।
অভ্র রুমে নিয়ে আমাকে নামিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসে। আমি ও পিছাতে থাকি। একপর্যায়ে দেওয়ালের সাথে আটকে যাই।
কী ব্যাপার যাচ্ছেন না কেনো পিছনে।
বলে ই আমাকে তার দুই বাহুতে আবদ্ধ করে নিয়েছে। আমার অনেকটা কাছে চলে এসেছে আমার অন্য রকম শিহরণ সৃষ্টি হচ্ছে, তাই আমি ধাক্কা দিয়ে সরে আসতে চাইলাম কিন্তু বিন্দু পরিমান ও নাড়াতে পারিনি।
এর মধ্যে ই আমার হাতে পাশে লাইট জ্বলে উঠে। কিন্তু অভ্র দূরে যাচ্ছে না, আসতে আসতে আমার মুখের কাছে আসতে ই আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি।
কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেছে উনার কোনো শব্দ পাচ্ছি না। একচোখ একটু খুলে দেখে রসগোল্লা মতো চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
যদি বাসায় গিয়ে বিয়ে সম্পর্কে কিছু বলেছেন তো আজকে তো শুধু নমুনা দেখালাম পরে বুঝবেন কী করি। মনে থাকে যেনো।
বলে ই দূরে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লেন।
–আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।
–আমি যাবো না।
–ওকে। এতো জোর করবো না পরে আবার যদি যেতে রাজি হয়ে যায় তাহলে সব প্লান শেষ। মনে মনে কথাগুলো
বলে ই বাহিরে চলে আসি। খুশি লাগতেছে, নিজের ইচ্ছে মতো থাকতে পাররো কয়েকদিন। কয়েকদিন কী আমি আসবো ই না আর এই বাসায়।
আমাদের বাসা থেকে আসা গাড়িগুলো চলে গিয়েছে। শুধু একটা প্রাইভেট কার আছে, গিয়ে দেখলাম মিনতি অপু দুজন পিছনে বসা আমি গিয়ে তাই ড্রাইভার আঙ্কেল এর সাথে বসলাম। আমাকে দেখে ই মিনতি জিজ্ঞেস করলো,
–মিহি তোর আসতে এতো সময় লাগলো অভ্র ভাইয়া কোথায়।
–যাবে না।
–তুই জোর করে নিয়ে আসবি না।
–আমি এতো জোর করতে পারবো না। ইচ্ছে হলে তুই জোর করে নিয়ে আস।
–মিনতি জোর করে ও লাভ হবে না, ভাইয়া যেহেতু বলেছে যাবে না, তাহলে যাবে ই না।
–এই ড্রাইভার আঙ্কেল লুঙ্গি ড্যান্স গান টা ছাড়ুন তো।
–তুই কী পাগল হয়ে গিয়েছিস মিহি।
–চুপ করে বসে থাকলে থাক নয়তো জামাই নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে যা।
–বেয়াদব মেয়ে।
–তুই তোর জামাই এর দিকে মন দে। আমাকে আমার মতো থাকতে দে মিনতি।
_________________
বাহিরে দাড়িয়ে আছি, মিনতি কে আর জিজুকে বরণ করে নিচ্ছে আম্মুরা। এই নিয়ম তো জানা ছিলো না আগে। মেয়ের বাড়িতে আসলে ও কী আবার একই ভাবে বরণ করে ঘরে তুলে। যা ই হক ভালো ই লাগছে।
–কী রে মা, অভ্র কোথায়।
বাবার ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হলাম।
–আসেনি বাবা।
–সে কী কথা তুই না নিয়ে আসলি কেনো।
–আসলে আসবে না আসলে নাই বাবা ক্ষুধা পেয়েছে অনেক আমি রুমে ডুকে খাবো। বলে ই রুমে চলে আসলাম।
রুমে এসে ই দ্রুত একটা ট্রি-শার্ট আর প্লাজু পড়ে খাওয়ার রুমে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু মা আমার সাথে কথা বলে না।
–মা শুনো না।
……..
–আমার লক্ষি মা শুনো।
…
–মা আমি তোমার একটা ই তো ছোট মেয়ে কেনো রাগ করে আছো।
……
— মা আমার কলিজা না তুমি আমার জান প্রাণ আমার মা, মা কথা বলো, মা অ মা।
–যখন আমদের মান সম্মান নিয়ে খেলা করেছিলি তখন এগুলো মনে ছিলো না।
–মা বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে কিছু করেনি।
–হে এমনি হয়ে গেছে।
মাকে এমন রেগে থাকতে দেখে আমি কান্না করে মায়ের পা জড়িয়ে ধরি। সাথে সাথে মায়ের রাগ শেষ হয়ে যায়। আমাকে উঠিকে কপালে চুমু একে দেয়।
–মা ক্ষুধা লাগছে অনেক খেতে দাও।
–ঐ বাসা থেকে কী না খেয়ে ই চলে এসেছিস।
–না, খেয়েছি অল্প। বেশি খেলে তো বলবে এই মেয়ে বেশি খায়।
–খাওয়া নিয়ে নিয়ে লজ্জা নেই মা। আর তুই এগুলো কী পড়েছিস। বাসা বর্তী মেহমান। আর নতুন জামাইয়ের সামনে তুই এসব পড়ে যাবি।
–তো কী হয়েছে।
–যা এখন গিয়ে চেঞ্জ করে আয়, নয়তো খেতে দিবো না।
—মাআআআআ
–ন্যাকামো করে কোনো লাভ নেই।
–সকালে পড়বো নে। আর আমি এখন থেকে এগুলো ই পড়বো।
খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লাম আমার রুমে, আজকে শান্তিতে ঘুমাবো। ভাবতে ভাবতে ই মিনতি রুমে ডুকলো।
–এই যে অভ্র তোর জন্য এইটা পাঠিয়েছে,মানে অপুর কাছে দিয়ে দিয়েছে।
–তো আমি কী করবো।
–কী পাঠিয়েছে দেখবে তো।
মিনতি বেডের পাশে রেখে চলে গিয়েছে। আদিক্ষেতা দেখে বাচি না, সামনে ছিলাম যখন তখন তো দিতে পারতো। মানুষকে বুঝাচ্ছে উনি কেয়ারিং হাসবেন্ড। উঠে লাইট অন করতে ই দেখলাম একটা বক্স রেপিং করা। খুলতে বসে গেলম, গিফট দেখলে না খুলে থাকা যায় নাকি….
চলবে
#তোমাতে আসক্ত
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৬
রাত তো অনেক হয়েছে এর মধ্যে মিহির এতো জোরে চিৎকার শুনে সবাই মিহির রুমে চলে এসেছে।
–এই কী হয়েছে তোর।
–কিছু না মা।
–তাহলে গরুর মতো চেচাচ্ছিলি কেনো।
–কিছু না মা যা তো এখন রুম থেকে।
–থাপ্পড় মারবো একটা, ভয় পেয়েছিস কী আমি কী তোর সাথে ঘুমাবো।
–নাহ, আমি ভয় পাইনি যাও।
বলে ই শুয়ে পড়লাম, আমাকে শুয়ে পড়তে দেখে আম্মু চলে গেলো।
উঠে ফোনটা হাতে নিলাম। আমি ফোনটা কয়েক মাস আগে হারিয়ে গিয়েছিলো পরে আর আব্বু ফোন কিনে দেয়নি। অনেক দিনের আশা পূরণ হয়েছে।
অভির সাথে কথা বলা টা ও সহজ হয়ে গিয়েছে। দেখি অভিকে একটা কল দিয়ে। কতো দিন পর অভির সাথে কথা বলবো।বলে ই অভির নম্বরটা উঠিয়ে কল দিলাম।
কিন্তু কল ধরলো না। কয়েকবার কল দিলাম রিসিভ করলো না।হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। কালকে সকালে কথা বলবো। ফ্রেশ মুডে একটা ঘুম দিলাম।
_____________
ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে ফোনের দিকে না তাকিয়ে ই রিসিভ করলাম, বুঝতে পারলাম অভির কন্ঠ।
–অভি আমি মিহি
—কেনো কল দিয়েছো তুমি আমাকে, বিয়ে তো করে নিয়েছো, আমি বেচে আছি নাকি মরে গিয়েছি তা দেখতে কল দিয়েছো মিহি।
–অমন করে বলছো কেনো অভি,আই লাভ ইউ বাবু। তোমাকে কথা দিচ্ছি কিছু দিন সময় দেও আমি তোমার কাছে চলে আসবো।
–সত্যি জানু, কবে চলে আসবে।
–আমি তোমার কাছে যেতে চাইলে সব কিছু ভুলে তুমি আমাকে গ্রহণ করবে তো।
–তুমি ঐ বজ্জাত লোক মানে তোমার জামাই এর থেকে দূরে থাকবে। ঐ লোক তো তোমাকে স্পর্শ করেনি তাই নাহ মিহি।
–হে আমি ছয় মাস পর তোমার কাছে চলে আসবো তুমি শুধু এই কয়টা দিন অপেক্ষা করো।
–তোমার জন্য আমি সারা জীবন অপেক্ষা করবো মিহি লাভ ইউ।
অনেক্ষন দুজন কথা বললাম। মনটা ফুরফুরা হয়ে গেলো। আর অভ্রদের বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে না। অভি আমাকে খুব ভালোবাসে না হয় কী বিয়ের পর ও আমাকে নিতে চায়। আমি অভিকে বিশ্বাস করে তাহলে ভুল করেনি।
এসব ভাবতে ভাবতে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেই। জামা চেঞ্জ করে নিচে গেলাম। গিয়ে দেখলাম অপু মানে জিজু বসে আছে আর আমার কাজিনদের সাথে গল্প করছে।
–জিজু আজকে আবার নতুন করে গেইট ধরা থেকে শুরু করে জুতা চুরি সব হবে। ঐদিন আমি কিছু ই করতে পারিনি আর টাকার ভাগটা ও পাইনি।
–কী বলে আমার বড় ভাবি।
–কীসের ভাবি আমি এই বিয়ে মানি না।
–তাই নাকি আজকে বাসায় যাওয়ার পর ই বুঝবেন ভাবি।
–এই ভাবি ভাবি করবে না জিজু টাকা বের করেন না হয় খারাপ হবে।
–ভাবি তো দেবরের পক্ষে থাকার কথা আপনি বিপক্ষে কেনো অবস্থান নিচ্ছেন ভাবি।
–আমি কারো ভাবি না বুঝলেন। আপনার হনুমান মার্কা ভাই ভাইয়ের বউ হতে বয়ে ই গেছে।
বলে ই উঠে চলে আসলাম।
_________________________
আজকে অভ্রদের বাসায় চলে যাবে মিনতি অপু, তাই অভ্রদের বাসা মেহমান আসছে, আমি একবার ও রুম থেকে বের হয়নি রুম লক করে বসে বসে অভির সাথে কথা বলছি। কিছু ক্ষন পর পর আম্মু আব্বু মিনতি এসে দরজা ধাক্কাচ্ছে। আমি একটা ও কথা বলিনি। আজকে যা ই হক আমি অভ্রদের বাসায় যাচ্ছি না। আমি আর কোনো মতে ই অভ্রের কাছে যাবো না, আজকে ওরা না যাওয়ার আগে রুমের দরজা ও খুলবো না।
–অভি তুমি টেনশন করো না আমি অভ্রদের বাসায় যাবো না।
–তাহলে চলো আজকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তোমাদের বাড়ির পেছনে দেখা করি। তুমি রান্নাঘরে আসবে তুমি রান্না ঘরের ভেতরে থাকবে আমি পিছনের সাইডে।
–ঠিক আছে, অভি।
— সাথে কাউকে নিয়ে এসো না, তাহলে কিন্তু সমস্যা হবে।
–আচ্ছা।
–মিহি ভালো হচ্ছে না কিন্তু,,, দরজা খুল নয়তো ভেঙ্গে ফেলবো।
–আম্মু আমি ঐ বাসায় যাবো না অযথা রাগ দেখাচ্ছো কেনো।
–তোর বিয়ে হয়েছে মিহি ভুলে যাস না।
–এই বিয়ে আমি মনে রাখতে চাইনা।
–তোর সাহস থাকলে দরজা খোল
–মিনতি অপু চলে গেলে খুলবো, এর আগে খুলবো না।
–এটা ই তোর শেষ কথা।
–হুম।
মা আর কিছু না বলে চলে গেলো, দরজার লক খুলে আমি সাতটার এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কারণ কালকে রাতে ঘুম কম হয়েছিলো।
_______
সাতটার কিছুটা আগে এসে মিহিদের বাড়ির পেছনে দাড়িয়ে আছে অভ্র। হঠাৎ একটা ছেলেকে দেখে মিহিদের রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
অভ্র ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। যেয়ে ই পর পর কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে দেয়।
অভি অভ্রের শার্ট এর কালারে ধরে ফেলে এতে আরো রাগ বেশি হয়। আবার থাপ্পড় দিতে গেলেই কেউ পিছন থেকে অভ্রের হাত ধরে ফেলে।
–অভ্র কী করছো তুমি।
–আন্টি ও মিহির সাথে কথা বলে এখন ও।
মিহির মা এসে থামায় ওদের। অভ্ররের সামনে এসে দাড়িয়ে অভিকে সরিয়ে দেয়।
— বাবা আমার মেয়েটা দোষি এই ছেলে না।
–অভি তোকে কতো বার নিষেধ করা হয়েছে, মিহির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে। কান খুলে শুনে রাখ মিহির বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
–মা ওকে বলে দেন আবার যদি মিহির আসে পাশে দেখেছি তাহলে ওর গায়ে চামরা থাকবে না।
–মিহিকে কিছু বলে না বাবা, আমার মেয়েটা একেবারে বাচ্চাদের মতো করে বুঝা না এখন ও কোনটা ভালো কোনটা খারাপ। সব সময় ছেলে মানুষি করে। ও নিজে ও জানে না ওর ভবিষ্যত কী। নিজের ভালো মন্দটা খুজে না। তুমি একটু মানিয়ে নিয়ো বাবা।
অভ্র চুপ করে থাকে কোনো কথা বলে না। বুঝা ই যাচ্ছে বেশ রেগে আছে।
–অভ্র চলো বাসায়।
বলে ই অভ্রের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়। বাব তুমি বসো আমি খাবার রেডি করছি।
–আন্টি মিহি কোথায়।
–ওর রুমে ই আছে। বাম দিকে যে রুমটা ঐটায়
অভ্র সোজা মিহির রুমে যায়। গিয়ে ই জোরে দরজা বন্ধ করে দেয়। রুমের লাইটা অন করতে ই দেখে মিহি বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।
নিজের উপর ভারি কিছু অনুভব হলো, সাথে নিঃশ্বাস নিতে ও কষ্ট হচ্ছে ধাক্কা দিয়ে কাউকে অভ্রকে সরিয়ে দেয় মিহি।
অভ্রকে দেখে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকায়। অভ্র এখানে কেনো। আর এটা কী করলো অভ্র।
অভ্র আবার মিহির সামনে এসে অভ্রের হাত দিয়ে মিহির মুখ চেপে ধরে সারাদিন খুব প্রেমলিলা দেখিয়েছিস অভির সাথে।
আমি কী করেছি তা অভ্র কীভাবে জানে। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আল্লাহ আমাকে বাঁচাও….
চলবে
–