#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১৬
নিজেই নিজেকে গালি দিচ্ছে আর সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটার ভিজা মাথা তোয়ালে দিয়ে মুছে দিচ্ছে নুশা । কোন দুঃখে যে নুশা এখানে আসলো আর৷ সে তো একা আসেনি নিশি আপু নিশাত ভাই আর রিফাত ভাইয়ের সাথে এসেছে । কিন্তু তারা কোথায় তারা কি তবে এই রুমে আসেনি কোথায় গেছে তারা তাহলে ভাবছে আর৷ সায়ানের মাথা মুছে দিচ্ছে । কিছুক্ষণ আগে সায়ান নুশাকে রুমের ভেতর এনে বিছানায় বসিয়ে তোয়ালেটা তার দিয়ে ফ্লোরে বসে বলে উঠলো মাথাটা মুছে দিতে। কিন্তু নুশা চুপচাপ বসে আছে তার কাছে কেমন একটা লাগছে নুশাকে চুপ থাকতে দেখে সায়ান আবার বলে উঠে,,,
-এখন আমার কথা না শুনলে নিচের সবাইকে ডেকে আনবো আর বলবো তুমি আমার সব দেখে ফেলছো ।
সায়ানের এমন কথা শুনে নুশা বলে উঠলো,
-কি আজব লোক আপনি আমি কই কি দেখছি আপনার আপনি মিথ্যা বলছেন কেনো আমি তো শুধু দেখছি আপনি উপরে কিছু পরেন নাই নিচে তো ছিলো কাপড় ।
সায়ান নুশার কথা শুনে নুশার চোখে ফু দিয়ে বলে উঠলো ,
-সেটা তো তুমি জানো আর আমি জানি৷ ওরা তো আর জানে না তাই না।
– আচ্ছা ধরে নিলাম আপনি সবাইকে বললেন আমি আপনার সব দেখে ফেলছি৷ তাহলে এখানে আমার কি হবে অরা কি আমাকে থানায় নিয়ে মামলা করবে।
সায়ান মুখটা ভাবার মতো করে বলে উঠলো,
-থানায়ও নিবে না মামলাও করবে না তার থেকে বড় টা করবে আর জানো সেটা কি,,,?
-কি,,,?
উৎসাহ নিয়ে প্রশ্নক্ত চোখে জিজ্ঞেস করলো নুশা সায়ান কে।
– সেটা হলো ধরে নিতে পারো এটা জানার পর হয়তো তোমাকে আজই আমার হাতে তুলে দেবে। আই মিন আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে ।
এটা বলেই চোখ টিপ মারলো সায়ান আর দাত বের করে হাসতে লাগলো ।
সায়ানের হাসিটা সত্যিই খুব সুন্দর নিজের বড় ভাই নিশাতের হাসির থেকে দশ গুন বেশি সুন্দর দাত গুলো ছোট ছোট আগে নুশা সায়ানের হাসি এতোটাও লক্ষ করে নি আজ এতোটা কাছে বসে থেকে সায়ানের হাসি দেখে সায়ানের হাসির প্রেমে না চাইতেও পরে যাচ্ছে বার বার৷ সায়ান হাসলে সায়ানের চোখ গুলো ছোট ছোট হয়ে যায় অসম্ভব সুন্দর লাগে তখন। নুশা তো ভেবেই পায়না সায়ান কি দেখে নুশাকে এতো ভালোবাসে। সায়ান তো নুশার থেকে আরো অনেক সুন্দর মেয়ে কে নিজের জীবন সাথী করে নেওয়া ডির্জাব করে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে এসব কিছুই ভাবছিলো তখনই সায়ান হাসতে হাসতে বলে উঠলো ,
-কি হলো, মিস নুশা বুড়ি আই মিন আমার বুড়ি না নিশাতের নুশা বুড়ি৷ কি এমন ভাবতেছো চুপচাপ আমাকেও বলো আমিও তোমার ভাবনায় একটু জড়িত হই ।
নুশা সেই মুগ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে থেকেই ধীর কন্ঠে বলে উঠলো ,
-সায়ান ভাইয়া আপনি না অনেক সুন্দর বিশেষ করে আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর ।
সায়ান মুখের হাসিটা বজায় রেখেই বলে উঠলো,
-তাই,,,
-হুম । কেনো বিশ্বাস হয় না !
-,নাহ ,,
-মানে কেনো ..?
– কিভাবে বিশ্বাস হবে বলোতো সবার চোখে আমি সুন্দর হলেও আমি যার চোখে সুন্দর হতে চাই যার ভালোবাসা পেতে চাই সেই তো আমাকে চায় না তাহলে তুমিই বলো আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো আমি সুন্দর ।
– কে বলেছে আপনি সুন্দর নাহ সত্যি আপনি অনেক সুন্দর । জানেন সায়ন ভাইয়া আমার তো বিশ্বাসই হয়না আপনি যে আমায় ভালোবাসেন আমি তো এতোটাও সুন্দর না আপনার সাথে পার্রফেক্ট না আপনি তো আরো অনেক সুন্দর মেয়ে ডির্জাভ করেন।
ব্যাস এটুকু কথাই ছিলো সায়ান কে রাগানোর । সায়ানের মুখে লেগে থাকা হাসিটা নিমিষেই অন্ধকার হয়ে গেলো তাই গম্ভীর কন্ঠে নুশাকে মাথা মুছতে দিয়ে নিজে পিছনে ঘুরে গেলো আর নুশা আর কোনো কিছু না ভেবে সায়ানের মাথা মুছে দিতে লাগলো ।
_____
বিকালের দিকে সবাই বাড়িতে চলে আসতে চাইলে সায়নের আম্মু নুশাকে দিতে নারাজ তার মতে মেয়েটা কতোদিন পর এই বাড়িতে এসেছে দুই তিন দিন থাকবে ঐবাড়িতে গেলে আবার না আসার কি মর্জি হয় আল্লাহ যানে। আর সামনে তো পরিক্ষা আছে সহজে আসতেও পারবে না তাই তিনি অনেক জোর দিয়ে বলছে নুশা যদি আজ না থাকে তাহলে উনি আর কখনো নুশাদের বাড়িতে পা রাখবে না। সায়নের মার সাথে সায়ানের আব্বুও বলে উঠলো নুশা আজ চলে গেলে উনিও আর ঐবাড়িতে যাবে না রাস্তা থেকে বোন কে দেখে চলে আসবে । নুশা পরেছে বড় একটা ঝামেলায়৷ মামা মামির বাচ্চামু কথা বার্তা শুনে না চলে যেতে পারছে আর না থাকতে পারছে একা একা মামা মামি ঘুমিয়ে গেলে নুশা তো তখন একা সায়ান অবশ্য আছে৷ অবশেষে সবার অনেক জোরাজোরিতে রাজি হলো নুশা এখানে থাকতে এখন সমস্যা হলো সে তো কোনো কাপড় আনে নাই আর এই কাপড় পরেও থাকতে পারবে না । তখনই নিশাত তার ডান হাত উঠিয়ে বলে উঠলো ,
-হাম হোনা,, হাম তেরা ড্রেস,,,
আর কিছু বলার আগেই মামি বলে উঠলো ,
-হ্যাঁ হ্যাঁ নিশাত তুমি একটু দিয়ে যাবা এক সপ্তাহ থাকতে পারে তাই পাচ ছয় ছিট নিয়ে আসবা
-অকে মামি ।।।
সবাই নুশাকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো সায়ান উপরে নিজের রুমে চলে গেলো নুশার দিকে একবার তাকিয়ে সায়ানের আব্বু বাহিরে চলে গেছে তাদের সাথেই । সায়নের আম্মু সব কিছু গোছগাছ করছে পরিস্কার করছে দুপুরের খাবারের পর৷ গোছানো হয়নি তাই আবার রাতের রান্নার জন্যও সব কিছু ব্যবস্থা করছে। নুশা একা একা কি করবে তাই মামির কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই মামি বলে উঠলো,
-একদম এখানে এসে মাবধরি করবে না৷ , চুপচাপ গিয়ে কোথাও বসে থাকো দরকার পরলে টিভি দেখো ।
-মামি আমি টিভি দেখি না তুমি জানো না। আর আমি একলা একলা বসে কি করবো বলো তার থেকে ভালো হয় না তোমার সাথে থেকে তোমাকে একটু সাহায্য করি।
-একদম দরকার নাই ।
-তাহলে আমি কি করবো।
-চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো । তোমাকে এখানে কাজ করার জন্য রাখিনি তো যে কাজ করবে ।
নুশা আর কথা না বাড়িয়ে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে সোফায় বসে মোবাইল দেখতে লাগলো । কিছুই ভালো লাগছে না সময় যেনো যাচ্ছেই না বাড়িতে তো হুরহুর করে সময় চলে যায় আর এখানে সময় যেনো স্টপ হয়ে আছে নড়াচড়া করছে না।
মাগরিবের আজান পরছে মসজিদ কাছে হওয়ায় আজানের শব্দট্ বেশ স্পষ্ট জোরে শোনা যাচ্ছে । তারাতাড়ি মাথায় উরনা দিয়ে মামি কি করে দেখতে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম তখনই দেখি সায়ান ভাই সাদা পান্জাবি আর সাদা পেন্ট আর টুপি পরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে। দুই জনের চোখে চোখ পরেছে। নুশা সায়ান কে এমন সব সাদা পোশাক কখনো দেখছে বলে মনে হয় না । সায়ানকে যেনো সব কাপড়েই অসাধারণ লাগে কই আগে তো সায়ানকে সয্যই হতো না এখন শুধু তাকিয়ে থাকতে মনে চায় কেনো এটাই নুশার মাথায় কাজ করছে না। সায়ানকে দেখলে মেজাজ গরম হয়ে যেতো আর ইদানীং কিছুদিন হবে সায়ান কে চোখে হারায় তাকে শুধু দেখতে ইচ্ছে করে তার কন্ঠ শুনতে ইচ্ছে করে । কেনো এমন হচ্ছে তা নুশার অজানা , সম্পূর্ণ ভাবে অজানা । সায়ান নুশার সাইট দিয়ে যেতে যেতে বলে উঠলো ,
-এভাবে কেউ কারো দিকে তাকিয়ে থাকে নজর লেগে যাবে তো নাকি তখন তো আর নিজেও তাকাবে না।
এটুকু বলেই চলে গেলো আর নুশা দাঁড়িয়ে থেকে ভাবতে লাগলো আর বিরবির করে বলতে লাগলো,
-লোকটা কি, কি বলে এসব আমার কি খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই তার দিকে তাকিয়ে তাকে নজর লাগিয়ে দেবো। কি ভাবে এই মিস্টার চৌধুরী নিজেকে নায়ক । হুহ নায়কের হাটু সমান হইছে নি যে নায়ক হবে৷।
নুশার বিরবিরানির শব্দ শুনে পিছন থেকে সায়ানের মা বলে উঠলো,
-নুশা ঐখানে দাড়িয়ে থেকে কি বিরবির করতাছো। নামাজ পরবে না৷ আজান দিয়েছে তো যাও রুমে গিয়ে নামাজ টা পরে আসো।
নুশা পিছনে ঘুরে বলে উঠলো ,
-জি মামি
বলে উপরে চলে আসলো , নুশাকে যেই রুমটা দেওয়া হয়েছে থাকতে তার পাশের রুমটাই সায়ানের । রুমটায় ঢুকে তাড়াতাড়ি অজু করে নামাজ টা আদায় করে রুম থেকে বের হয়ে সায়ানের রুমে একটু উঁকি দিয়ে দেখলো সায়ান ফিরে এসেছে কিনা কিন্তু না ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ হচ্ছে না তাই রুমের ভেতর এক পা এগিয়েও আবার পিছিয়ে নিলো যদি সে এখন রুমে যায় আর সায়ানও চলে আসে তাহলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে তাই আর ভেতর না গিয়ে দরজাটা হালকা করে দিয়ে যেই তড়িৎ গতিতে পিছন ফিরবে তখনই কোনো কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নিবে সাথে সাথে সায়ান নুশাকে দরে নিলো কারন নুশা পিছনে গেলে দরজার সাথে লাগবে আর দরজাটা যেহেতু দেওয়া না তাই দরজাটাও পিছিয়ে যাবে আর নুশা পরে যাবে যার ফলে নুশা কোমরে অনেক ব্যাথাও পেতে পারে ।
নুশা তো ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে যেনো চুরি করতে এসে চুর ধরা পরে গেছে সেই অবস্থা এখন তার । অন্য দিকে সায়ান চোখ গুলো ছোট করে নুশার দিকে তাকিয়ে আছে । হটাৎ করে কারেন্ট চলে গেলো এতে করে দুুইজনই আরো চুপ করে আছে, দুই জনের একজনও এই হটাৎ কারেন্ট যাওয়া নিয়ে প্রস্তুত ছিলো না। সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেছে তিন দিন হলো আই পি আ্যসের ব্যাটারিতে কি যেনো একটা সমস্যা হইছে তাই সেটাো এখন জ্বলছে না । নুশা আর সায়ান দুই জনই বেকুব কারন এমন দিনে তো সহজে কারেন্ট যায় না তাহলে আজ হটাৎ করে এখনই বা কেনো কারেন্ট গেলো। পুরোটা রুম অন্ধকারে ছেয়ে গেছে আর এখানে দাড়িয়ে থাকা দুই মানব মানবি চুপচাপ দাড়িয়ে আছে নিঃশব্দ সবকিছু সব কিছুই শান্ত সায়ান নুশাকে ছেড়ে দিয়েছে নুশাও সায়ানের থেকে ছাড়া পেয়ে যেই পিছনে পা রাখলো সাথে সাথে এই অন্ধকারে দরজার কোনার সাথে পায়ের সব থেকে ছোট আঙুল টায় গিয়ে লাগলো আর নুশা সাথে সাথে মুখ দিয়ে শব্দ করে উঠলো,,
“ওফ্ফ,,
সাথে সাথে সায়ান পকেট থেকে মোবাইল বের করে লাইট জ্বালিয়ে সামনে নুশার দিকে দিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
-কি হইছে ব্যথা পাইছো নিশ্চয়ই…! শুধু শুধু কেনো এই অন্ধকারে পিছনে পিছিয়ে গেলা আর পায়ে ব্যাথা পেলে । আমি কি বাঘ ছিলাম যে খেয়ে ফেলবো,,
আরো কিছু বলতে নিচ্ছিলো সায়ান কিন্তু তার বলার আগেই নিচ থেকে তার মার শব্দ কানে আসছে উনি সায়ান আর নুশাকে ডাকছেন। সায়ান নুশাকে ধরে বিছানায় বসিয়ে চার্জার লাইট জ্বালিয়ে ধমকে বলে উঠলো,
-একদম এখান থেকে উঠবে না। চুপচাপ বসে থাকো আমি আসা অবধি বলে চলে আসলো রুম থেকে । নিচে এসে দেখে পুরুটা বাড়ি অন্ধকারে ছেয়ে গেছে আর কারো কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না তাই জোরে চিল্লিয়ে উঠলো,
-” মা,,,
নাহ সায়ানের ডাকেও এবার কোনো সাড়াশব্দ আসলো না। তাই কিছুটা সামনে আসতেই হঠাৎ করেই সায়ান যেনো থমকে গেলো সামনে তাকিয়ে কারন তার মা নিচে অচেতন হয়ে পরে আছে তাই আর দাঁড়িয়ে না থেকে দৌড়ে মার কাছে গিয়ে দেখলো কপাল বেয়ে রক্ত পরছে সায়ান তার মার এমন অবস্থা দেখে মূহুর্তের মধ্যেই যেনো থমকে যায়৷ সাথে সাথে হাত ধরে বিট চেক করে দেখে সব কিছু ঠিক আছে শুধু মাথায় আঘাত পাওয়ায় জ্ঞান হাড়িয়েছে। তাই আর দেরি না করে মোবাইল টা এক হাত নিয়ে দুই হাত দিয়ে মাকে কোলে তুলে নিলো আর নিজের রুমে চলে আসলো।
এদিকে নুশা সায়ানের ধমকে কেঁপে উঠছিলো তাই চুপচাপ বসে আছে। আর ভাবছে নিজেকেই যেনো নুশার এখন অচেনা লাগে। আগের নুশা আর এখনকার নুশাকে নুশা নিজেই মেলাতে পারছে না । নুশার যেনো সব কিছুই এলোমেলো লাগে সায়ানকে এখন কেনো জানি নুশার অসম্ভব ভালো লাগে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে সবসময় তার দিকে। কয়দিন আগে ওতো সায়ানকে নুশা ভয় পেতো না আর আজ হটাৎ সায়ানের এমন সামান্য ধমক শুনে কেপে উঠলো।
তবে কি নুশা আস্তে আস্তে সায়ান কে ভালোবাসতে শুরু করলো , নাহ নাহ আর কিছু ভাবতে পারছে না নুশা আর কোনো কিছু ভাবতে চাইছেও না ।
#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১৭
চার্জার টর্চ লাইটের আবছা আবছা আলোতে প্রায় অনেকক্ষণ ধরে বসে আসে নুশা। সায়ানের বা মামির কোনো সাড়াশব্দই পাচ্ছে না সে ,, এতোক্ষণ লাগে নিচে যেতে লাইট জ্বালাতে আর উপরে আসতে । দরজাটাও হালকা দিয়ে গেছে তাই নিচ থেকে কোনো কথাই কানে আসছে না । ফ্রেবুয়ারি মাস হালকা শীত তো আছেই পায়ের ছোট আঙ্গুলে কাঠের দরজার কোনো লাগায় প্রচন্ড ব্যথাও অনুভব হচ্ছে । ইচ্ছে করলে কষ্ট করে উঠে দাঁড়াতে পারবে কিন্তু সায়ান তো স্টেট বলে গেছে একদম চুপচাপ বসে থাকতে। কতক্ষণ এভাবে একা একা বসে থাকা যায় , বিরক্ত লাগছে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে । হাতটা একটু বাড়য়ে টেবিল থেকে লাইটটা নিতে যাবে উদ্দেশ্য আর বসে থাকবে না নিচে যাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে সায়ান কিছু বললে সেও বলে দিবে এতোক্ষণ চুপচাপ একা একা বসে থাকার মেয়ে না সে। তাই হাতটা বাড়িয়ে যেই লাইটা নেবে সাথে সাথে দরজা খোলার শব্দ এলো সাথে হাতটা আবার সরিয়ে নিয়ে যেই পিছনে ঘুরলো সাথে সাথে কেউ একজন তার নাকে মুখে একটা সুগন্ধি কাপড় দিয়ে চেপে ধরলো । গন্ধটা নুশার কাছে অসাধারণ লাগলেও তার চোখ মেলে তাকিয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না চোখ যেনো না চাইতেও আপনা আপনি বন্ধ হয়ে আসছে । চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসছে তবে জ্ঞান হাড়িয়ে যাওয়ার আগে যতটুকু পারছে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখার ও বুঝার চেষ্টা করছে, রুমটা হালকা আলোকিত হওয়ায় আবার চোখ ঘোলাটে হয়ে আসায় ভালো করে লোকটাকে দেখতে পারেনি নুশা, তবে যতটুকু বুঝেছে লোকটা মাক্স আর টুপি পরা আর লোকটা নুশাকে কোলে নিয়ে কোথাও একটা যাচ্ছে । আস্তে আস্তে সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসছে নুশার চোখে আর কিছু অনুভব করে নি কিছু দেখেনি ঢলে পরে লোকটার বুকের মাঝে।
অন্যদিকে সায়ান মাকে নিয়ে রুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে দিলো আর বিরবির করে কিছু বলতে লাগলো,
“কারেন্ট যাওয়ার আর সময় পেলো না । গেলো তো গেলো আর আসার খবর নাই এদিকে উপরে নুশাকে একা রেখে এসেছে আবার বাবাও বাড়িতে নাই মায়ের এই অবস্থা ভালো করে আলো নাই সব কিছু যেনো সায়ানকে পাগল করার জন্য যথেষ্ট । সায়ান বুঝতে পারছে কি রেখে কি করবে তাই তাড়াতাড়ি মোবাইলের লক খুলে ডায়ালে গিয়ে ‘ BABA ‘ নামে সেভ করা নাম্বারে কল বসালো দুই বার রিং হতেই ঐপাশের ব্যক্তিটি ফোন রিসিভ করে বলে উঠলো ,
-হ্যাঁলো সায়ান ।
-হ্যাঁ বাবা তুমি কোথায় তাড়াতাড়ি একটু বাড়িতে আসোতো।
– আরে আমি তো চলেি আইছি কেনো কি হইছে এবাবে কথা বলছিস কেনো সব ঠিক আছে।
– তুমি তাড়াতাড়ি আসো।
ফোনটা রেখে মোবাইলটা এমন ভাবে রাখলো যেনো ঘরটা একটু আলোকিত হয় । মায়ের পাশে বসে কপালের কাছে রক্ত লেগে থাকা যায়গায় রক্ত পরিষ্কার করে কাটা জায়গাতে লিকুইড এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দিলো। তেমন বেশি একটা ক্ষত হয়নি । সায়ানের ধারণা মতে তার মা হয়তো অন্ধকারে হাঁটার সময় কোনো কিছু লেগে ব্যাথা পেয়েছে আর এমনিতেই তার মা অন্ধকার ছোট বাচ্চা দের মতো অনেক ভয় পাই। তাই সব সময় আলোর ব্যবস্তা করে রাখা হয় কিন্তু তিন দিন আগে আই পি এস এর সমস্যা হওয়ায় এখন আর লাইট জ্বালাতে পারিনি আর কে জানতো আজ হঠাৎ করে এমন ভাবে কারেন্ট চলে যাবে । সায়ান মায়ের পাশে বসে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে আর বাবা আসার অপেক্ষা করছে ।
এইদিকে সায়ানের আব্বু তাড়াতাড়ি বাসার দিকে ফিরছেন৷ তখনই পাশ দিয়ে একটা একটা গাড়ি ধ্রুত গতিতে যাচ্ছে আর ভিতর থেকে শুধু একটা কথাই কানে আসলো কেউ একজন বলছে,,
“মামা এখন কি সোজা কাজী অফিসের দিকে যাবো নাকি গ্যারেজে ”
কথাটা কেউ জোরে বলায় হাটার মাঝেও শুনতে পেয়েছে সায়ানের আব্বু কিন্তু তেমন একটা পাত্তা না দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে ছোটে আসলেন । বাড়ির কাছে আসতেই উনি থমকে গেলেন কারন পুরোটা বাড়ি অন্ধকারে আচ্ছন্ন কেমন একটা ভুতুড়ে বাড়ির মতো কই তার বাড়িতে তো গেটের মধ্যেই লাইট থাকে কিন্তু কই লাইট তো দেখা যাচ্ছে না । কারেন্ট অতো আছে আশে পাশের বাড়িতে তাহলে তার বাড়ির এই অবস্থা কেনো। আর মেন দরজাটাও খোলা দারোয়ান কই মাথায় আসতেই আশে পাশে তাকিয়ে দেখে গেটের কাছে চেয়ার উল্টে অচেতন অবস্থায় পরে আছে । তাড়াতাড়ি তার কাছে দিয়ে ডাকতে লাগলো ,,,
-এই রফু ,, রফু।
একাধারে ডেকেই যাচ্ছে কিন্তু রফু কোনো সাড়াশব্দ দিচ্ছে না তাই বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তা চেক করার জন্য নাকের কাছে হাতটা নিতেই বুঝে গেলো বেঁচে আছে কিন্তু জ্ঞান নাই । তাই তাড়াতাড়ি চেয়ার ঠিক করে রফুর হাত নিজের কাদে দিয়ে রফুকে নিয়ে বাড়ির ভিতর আসতে লাগলো তখনই আবার ফোন বাজতে লাগলো । তাই তাড়াতাড়ি শার্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে সায়ানের নাম্বারে ফোন তাই রিসিভ করলো। রিসিভ করতে দেরি মোবাইলের অপর পাশে সায়ান কিছুটা রাগী সূরে বাবাকে বলে উঠলো,,
-বাবা আর কতক্ষণ লাগবে। এখান থেকে আসতে এতোক্ষণ লাগে তাড়াতাড়ি আসো ।
সায়ানের কথা শুনে সায়ানের বাবা বলে চিন্তিত হয়ে বলে উঠলো ,
-সায়ান আমি আসছি তুই কই বাড়িতে লাইট নাই কেনো বাহিরে তো কারেন্ট কাছে তাহলে আমাদের বাড়ি অন্ধকার কেনো৷। আর রফু “রফু গেটের কাছে অচেতন৷ অবস্থা পরে আছে কেনো কি হচ্ছে এসব ।
বাবার কথা শুনে সায়ান আশ্চর্য হয়ে গেলো আর মনে মনে সিওর হয়ে গেলো যে কারেন্ট শুধু তার বাড়িরই গেছে মানে হলো কারো কার সাজি কিন্তু কে করবে এসব কোনো চুর এই সন্ধ্যা সময় চুর । হঠাৎ করেই তার মাথায় নুশার কথা মনে পরে, নুশা তো একা উপরে আছে আর বাড়ির ভিতর নিশ্চয় কেউ ঢুকেছে। কি করবে বুঝতে পারছে মাকে এভাবে ফেলে রেখেও যেতে পারছে না আবার অন্য দিকে নুশা একা আছে এই চিন্তাও দূর হচ্ছে না। ওপাশ থেকে সায়ানের বাবা বলেই যাচ্ছে হ্যালোঁ সায়ান কথা বলছিস না কেনো সব কিছু ঠিক আছে তো নাকি আর তুই কই৷ এখন ড্রইং রুমে তো কেউ নাই । তখনই সায়ান বলে উঠলো,
-বাবা আমি তোমাদের রুমে আছে তুমি একটু তাড়াতাড়ি তোমার রুমে আসো উপরে নুশা একা আছে অন্ধকারে সে একা আসতে পারবে না আর আমি,,,
আর কিছু বলার আগেই সায়ানের আব্বু তাড়াতাড়ি রুমের ভিতর প্রবেশ করলেন । রফুকে অচেতন অবস্থায় ড্রইং রুমে সোফায় শুয়ে দিয়ে এসেছেন। বিছানায় সায়ানের আম্মু কে দেখে তাড়াতাড়ি বিছানার কাছে গিয়ে সায়ান কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ,
-সায়ান এসব কি তোমার মার এই অবস্থা কেনো মাথায় আঘাত পেয়েছে কিভাবে আর এসব কি হচ্ছে এই সন্ধ্যা সময়।
-বাবা আমি কিছু জানি না তোমার সাথে পরে কথা বলছি আগে আমাকে নুশার কাছে যেতে হবে নুশা উপরে একা আছে ।
-হ্যাঁ হ্যাঁ তাড়াতাড়ি যাও মেয়ে টা হয়তো এতোক্ষণে ভয় পেয়ে কান্না করে দিছে।
সায়ান আর দেরি করলো না দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে তাড়াতাড়ি সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে নিজের রুমের দরজা খুলে দেখে রুমের ভেতর টর্চ লাইটের আবছা আবছা আলো কিন্তু নুশাকে সে যেখানে বসিয়ে রেখে গিয়েছিলো সেখানে নুশা নাই তাই জোরে জোরে এবার নুশার নাম ধরে ডাকতে লাগলো,
-নুশা ,, নুশা,,, কোথায় তুমি দেখো আমি তোমার সায়ান ভাই চলে এসেছি আর ভয় পেতে হবে না।
কিন্তু সায়ানের গলা ফাঠানো চিৎকারেও নুশা কেনো, কোনো কিছুরই সাড়াশব্দ পায়নি । সায়ানের মাথায় এবার অন্য চিন্তা ঢুকে গেলো । তাই তাড়াতাড়ি আবার দৌড়ে নিচে নেমে মেইন সুইচের কাছে চলে আসলো । এখানে এসে আরো বেশি
করে সিওর হলো কেউ ইচ্ছে করে মেইন সুইচ অফ করে রেখেছে তার মানে লোকটা এই বাড়ির সব খবরা খবর জানে এই বাড়িতে এসেছে কোথায় কি আছে সব কিছু জানে । কিন্তু তার মাথায় আসছে না কে করতে পারে এসব। ভাবনা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি সুইচ অন করে দিলো সাথে সাথে সারা বাড়ি বৈদ্যুতিক আলোয় আলোকিত হয়ে গেলো অন্ধকারটা এখন আর নাই সব কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । আর দেরি না করে আবার রুমে চলে আসলো সায়ান আর এবারও ডাকতে লাগলো নুশাকে কিন্তু এবারও সায়ানের সব গুলো ডাক বিফলে গেলো বারান্দায় ওয়াশরুমে নুশার রুম সব জায়গায় নুশাকে খুঁজে কোথায় পেলো না। মনে মনে বিরবির করতে লাগলো,
-নুশা তুমি কোথায় কেনো আসি তোমাকে রুমে একা চুপচাপ বসিয়ে রেখে নিচে চলে আসলাম তার জন্যই তো তারা তোমাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যেতে পারছে৷ । সব দোষ আমার কেনো তোমাকে একা ছাড়লাম। এসব বলতে বলতেই হঠাৎ করে সায়ানের মাথায় আসলো ,,
“নুশাকে কেউ কিডনাপ করেছে কিন্তু কে করেছে ? কি জন্য করছে, এতে তার কি লাভ নুশাকে কিডনাপ করে ,,?
#চলবে,,
#চলবে,