তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব -১৪+১৫

#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১৪

নিশির বিয়ের তৃতীয় দিন আজ শুক্রবার বিয়ে হয়েছে আজ রবিবার মাঝে শনিবারটা কেটেছে। আজ এই বাড়ি থেকে লোকজন রিফাতদের বাড়িতে যাবে তার জন্যই রেডি হওয়ার তোরজোর চলছে। এই বাড়ি থেকে মোট বারো জন যাবে নুশা নুশার বাবা নিশাত সায়ানের আম্মু আব্বু সায়ানের একদম ইচ্ছে নাই যাওয়ার কিন্তু নুশার জন্য যেতে হচ্ছে নুশাকে বারণ করেছে না যাওয়ার কিন্তু নুশা তো নুশাই সে তো যাবেই বোনের শ্বশুর বাড়ি সেই সাথে নুশার বেস্ট ফেন্ড হওয়ায় ইমাও যাবে । দুইজন আজ এক রকম ড্রেস পরেছে। দুইজনকে পিছন থেকে একরকম চেনা সম্ভব না সহজে । দুইজনের মাঝে একটু তফাৎ নুশা ইমার থেকে একটু লম্বা । দুইজন গ্রিন থ্রী -পিছ পরেছে সায়ান হোয়াইট শার্ট ব্লাক পেন্ট কোট পরেছে নিশাত হোয়াইট শার্ট নেবি কোট পেন্ট পরেছে এদের দুই জনের মাঝেও সায়ান একটু লম্বা ।

দুইটা গাড়ি একটায় বড়রা যাবে আরেকটাই ছোট রা যাবে। নিশাত সায়ান নুশা ইমা আরো দুইটা মেয়ে আরেকটা ছেলে উঠেছে সব গুলোই নুশার কাকাতো ভাই বোন এই গাড়িতে আর অপর গাড়িতে নুশার আব্বু সায়ানের আব্বু আম্মু আরেকটা মহিলা আরেকটা পুরুষ যেটা নুশার চাচা আর চাচি লাগে। বড়দের গাড়িতে আলাদা করে ড্রাইবার দেওয়া থাকলেও ছোটদের গাড়িতে নিশাত ড্রাইবারের কাজ করছে ।
এক ঘন্টার মতো সময় লাগলো রিফাতদের বাড়িতে পৌঁছাতে । গাড়ি রিফাতদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো রাস্তা থেকে একটু ভিতরে রিফাত দের বাড়ি রাস্তায় নেমে সেটুকু হেটে যেতে হয় । এক এক করে সবাই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে যেতে লাগলো প্রথমে সব বড়রা তারপর ছোটরা । এতোক্ষণ নিশাত ড্রাইভ করলেও এবার নিশাতের জায়গায় সায়ান বসে সবাইকে নামিয়ে গাড়িটা সাইট করার জন্য কিছুটা সামনের দিকে চলে গেলো ।

সবাই রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থেকে সায়ানের আসার অপেক্ষা করছে। রাস্তার অপজিটে একটা দোকান আছে আর সে দোকানে শুভ বসে ছিলো পরপর দুইটা গাড়ি সে খেয়াল করেছে কিন্তু ভিতরের মানুষ গুলো না দেখতে পেলেও এটা ঠিক বুঝতে পারছে যে রিফাত ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে এসেছে আর রিফাতের শ্বশুর বাড়ির মানুষ বলতে নুশাও এসেছে তাই আর দেরি না করে বসা থেকে উঠে দাড়ালো আর নুশাদের দেখতে পেলো । নুশাকে দেখে ডাক দিতেই যাবে কিন্তু কিছু একটা মনে করে মুচকি হাসি দিয়ে রাস্তা পার হয়ে নুশাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় এতোক্ষণ শুভকে কেউ খেয়াল করে নাই৷ শুভ সবাইকে বলে উঠলো,
-কেমন আছেন আপনারা সবাই এটা বলে নুশার কানে কানে বলে উঠলো, আপনি কেমন আছেন মিস আহমেদ ।
সবাই শুভকে দেখে হেসে বলে উঠলো ,,,
-আমরা সবাই ভালো আছি আপনি কেমন আছেন।
-জি আপনাদের সবার দোয়ায় আমিও খুব ভালো আছে তা এখানে দাড়িয়ে আছেন কেনো ভিতরে চলেন ।
শুভর কথা শুনে ইমা বলে উঠলো,
-আসলে ভাইয়া আমরা সায়ান ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছি । উনি আসলে তারপর আমরা সবাই মিলে এক সাথে যাবো।

ইমাার বলতে বলতে ততক্ষণে সায়ান এসে সকলের সামনে হাজির। সায়ান কে দেখে শুভ তার ডান হাত সায়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
-হ্যালোঁ ড. সায়ান চৌধুরী কেমন আছেন ।
সায়ান শুভর হাতের দিকে তাকিয়ে তার হাতটাও এগিয়ে দিয়ে শুভর হাতের সাথে হাত মিলিয়ে বলে উঠলো ,,
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আর তুমি কেমন আছো।
-জি আলহামদুলিল্লাহ তো আসেন আপনার জন্য সবাই এখানে দাঁড়িয়ে আছে ।
-অহ হ্যাঁ চলো সবাই । বলে সাযান হাটতে লাগলো , সায়ানের সাথে সাথে সবাই হাটতে লাগলো। নুশা আর ইমা পিছনে আর নুশার পাশে শুভ হাঁটতে লাগলো আর নুশাকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করতে লাগলো । সায়ান সবার সামনে হওয়ায় কিছু শুনতে না পারলেও হটাৎ করেই হাঁটার মাঝে পিছনে ঘুরে নুশার আর শুভর দিকে তাকাতেই রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ফেললো যেনো সব রাগ তার হাতের মুষ্টিতে জমা করেছে সঠিক টাইমে মুষ্টি টা খুললে তার হাত তার কন্ট্রোল হারাবে। বাড়ির সামনে বড় উঠান এখানে বেশ কয়েকজন চেয়ারে বসে আছে সব পুরুষ মানুষ কিছু মানুষকে নুশা চিনলেও প্রায় বেশি মানুষকেই সে চিনে না । শুভ এখনো নুশার পাশে দাড়ানো মেয়েদের মতো বকবক করেই যাচ্ছে নুশার কাছে অসয্য লাগছে । কিন্তু কি আর করার আপুর শ্বশুর বাড়ির মানুষ খারাপ আচরণও করতে পারছে না তাই অসয্য হয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে আর হুম না উওর দিচ্ছে৷। নুশার সাথে ইমাও প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে এতো কথা বলতে পারে ছেলে মানুষ আল্লাহ । নুশা অসহায় চোখে সায়ানের দিকে তাকায় সায়ান চেয়ারে বসে মোবাইল দেখছে নুশা সায়ানের এমন আচরন দেখে অবাক না হয়ে পারলো না। নুশাকে এমন ছেলেদের সাথে কথা বলতে দেখেও চুপচাপ কি ভদ্র ছেলের মতো বসে আছে । না নুশাকেই কিছু একটা করতে হবে এই শুভর হাত থেকে বাচতে আর তা হলো এখনি নুশাকে সায়ানের কাছে যেতে হবে কারন এখন সায়ানের কাছে গেলে শুভ তার পিছু ছাড়া বন্ধ করবে কেননা এখন যদি নুশা বোনের কাচে যায় সেখানেও যাবে তাই নুশা আর দেরি না করে শুভর দিকে তাকিয়ে আঙুল দিয়ে এশারা করে বললো,
– একমিনিট ,,,!!

এটা বলে তাড়াতাড়ি সায়ানের কাছে এসে দাড়ালো আর হাত কচলাতে লাগলো৷। সায়ান নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলেও নুশা উপস্থিতি সে ঠিকই বুঝতে পেরেছে শুধু নুশার কথা শুনার অপেক্ষায আছে । নুশা হাত কচলাতে কচলাতে একবার মাথা তুলে ইমা আর শুভর দিকে তাকায় । শুভ একাই দাড়িয়ে আছে তার দিকে প্রশ্ন চোখে ইমা দুরে নিশাতের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। নুশাকে এমন চুপচাপ দেখে সায়ান মাথা তুলে দেখে নুশা শুভর দিকে তাকিয়ে আছে যেটা দেখে সায়ানের আরো রাগ উঠে গেলো তাই বলে উঠলো,
-এখানে কি,,? এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো কথা বলে শেষ হয়নি৷ তাই এখানে এসেও তাকিয়ে আছো। তোমাকে এখানে আসতে কে বলেছে দুর থেকে দেখে কি লাভ এতোক্ষণ তো কাছে দাড়িয়ে থেকেই দেখতেছিলে তাহলে এখানে এসে দুর থেকে দেখার মানে কি..?

সায়ানের এমন কথায় কেঁপে উঠলো নুশা আর ঐদিক থেকে মুখ সরিয়ে সায়ানের দিকে তাকালো সায়ান এখনো মোবাইলে গেমসে ব্যস্ত । নুশা কাপা কন্ঠে বলে উঠলো,

-ভাইয়া আসো ভিতরে যাই াপুর সাথে দেখা করে আসি।
নুশার কথা শুনে সায়ান গেমস টা বন্ধ করে নুশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-তুমি যাও তোমাকে বাদা দিচ্ছে কে৷। তুমি একা না যেতে পারলে তোমার আশিক কে নিয়ে যাও।

নুশা সায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

-ভাইয়া উনি আশিক না তো উনার নাম তো শুভ। তোমার সাথে তো তেমন কথা হযে উঠেনি তাই হয়তো নাম জানো না তাই না ভাইয়া। আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নাই আমি তো বলেই দিছি ।

সায়ন রাগী চোখে নুশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
– আজাইরা মানুষের নাম জেনে রাখা আমার একদম দরকারী না৷ তাই আমাকে না বলে তার সাথেই নিশির সাথে গিয়ে দেখা করে আসো।

নুশা সায়ানের রাগী লুক দেখে ইনোসেন্ট মুখ করে বলে উঠলো,
-ভাইয়া তুমি আসো,,,। আমি উনার সাথে যাবো না।

সায়ান আবার খেলায় মনোযোগ হয়ে বলে উঠলো,
-ইমাকে নিয়ে যাও ।
-ভাইয়া । ইমাকে নিয়ে গেলে শুভ উনিও আমাদের সাথে যাবে প্লিজ ভাইয়া তুমি চলো।

নুশার কথা শুনে সায়নের মেজাজ তেতএিশ হয়ে গেলো মোবাইল বন্ধ করে দাড়িয়ে পকেটে মোবাইল রেখে নুশার হাত ধরে বাড়ির ভিতর যেতে লাগলো । আর নুশা সায়ানের সাথে হাঁটত হাটতে মিন মিন করে বলা শুরু করলো,
-ভাইয়া আস্তে মানুষ কি বলবে। একটু আস্তে হাটো পরে যাবো তো৷। সায়ান কোনো রুমে না গিয়ে একবারে ছাদের দিকে অগ্রসর হলো ভাগ্য ভালো কারো সামনে পরেনি তারা ।

শুভ দূর থেকে নুশা আর সায়ান কে লক্ষ করছিলো হটাৎ সায়ান নুশাকে এভাবে নিয়ে যাওয়াতে তাদের পিছনে যেতে যাবে ঠিক তখনই রিফাত শুভকে ডেকে বলে উঠলো,

-রিপাত এদিকে আয় তো ,,,,
কি আর করার রিফাতের ডাকে নুশাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রিফাতের কাছে চলে গেলো৷।

অপর দিকে সায়ান নুশাকে ছাদে এসে ছাঁদের দরজা দিয়ে দরজার মাঝে নুশাকে আটকে ধরলো। সায়ানের একহাতে নুশার এক হাত সায়ানের হাতের উপর আবার নুশা আবার তার আরেক হাত দিয়ে সায়ানের হাত সরাতে লাগলো কিন্তু সায়ান যেভাবে ধরেছে দশটা নুশাও তা ছাড়াতে পারবে না । সায়ানর আরেক হাত নুশার মাথার কাছে দরজায়, সায়ান নুশার দিকে ঝুঁকে নুশার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠলো,

-অনেক হয়েছে আর সয্য করতে পারছি না। নিজেকে েতো কন্ট্রোল করতে চাই তারপরও পারি না৷। তুই কেনো বুঝতে পারছ না আমি তোর সাথে অন্য কাউকে কল্পনা করতে পারি না। তুই কি আমাকে একটুও বুঝতে পারছ না। তোর আসক্তিতে সেই কবেই আমি আসক্ত হয়ে গেছি৷। আমি হযতো আমার মনের মধ্যে থাকা ভালোবাসাটা সবার সামনে প্রকাশ করতে পারি না। কিন্তু বিশ্বাস কর নুশা রানী আমি তোকে প্রচন্ড ভালো বাসি। তুই ছাড়া আমার এই জিবন খুবই অসহায় আমাকে বাঁচতে হলে তকে আমার দরকার । আমার প্রতিটা শ্বাস নিশ্বাসে তুই মিশে আছিস । তোকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকা মূল্য হীন। আর কিভাবে বুঝাবো বল ।
সিফাত যখন বলেছিলো তুই আর সিফাত রিলেশনে আছিস বিশ্বাস কর নুশা রানী আমার নিচের মাটি যেনো সব সরে যাচ্ছির কি করবো বুঝতে পারছিলাম না । তোর সাথে সব সময় রুড বিহেভিয়ার করতাম তুই যাতে আমাকে ভয় পেয়ে আমার কথা শুনে কোনো ছেলের সাথে কথা না বলোস৷ । তোকে তো আমি সেই ছোট্ট কাল থেকে ভালো বাসি নিজের বউয়ের চোখে দেখি যেটা আজ পর্যন্ত আর কোনো নারীর দিকে সেই চোখে তাকাইনি আর কখনো তাকাতেও চাইনা। তোকে তো অনেক আগেই বলে দিতে পারতাম যে আমি তোকে ভালোবাসি কিন্তু তোর ভবিষ্যতের কথা মনে করে লেখাপড়ার চিন্তা করে কিছু বলি নাই । আর বাকী রইলো নিশির সাথে আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর বিয়ের দিন তোকে কেনো বিয়ে করতে চেয়েছি এর দুইটা কারন এক একবার বিয়ে ভাঙ্গলে কেউ বিয়ে করতে চাইবে না তখন রিফাত আর নিশি এক হতে পারবে আর আমার ভয় হচ্ছিল তোকে জানিয়ে বিয়ে করলে তুই যদি বিয়ে না করোস আমাকে এমনিতেই তুই আমাকে মাফিয়া বলে ডাকতি তার উপর সিফাতের সাথে রিলেশনে ছিলিস তাই তোকে হারানোর ভয়ে বাধ্য হয়ে এবাবে বিয়ে করতে চাইছি ।

এতোবড় একটা রচনা বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে নুশার হাত ধরে দরজার কাছ থেকে নুশাকে সরিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে গেলো সায়ান৷ আর নুশা সে তো এখন স্টপ মোডে আছে৷ তার সারা দুনিয়া যেনো ঘুরতেছে এখনি যেনো পরে৷ যাবে সে৷। কি বলে গেলো সায়ান এসব তার মাথা ফাকা হয়ে আসছে। কি করবে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না চোখের পলক একবারও ভালো করে ফেলছে না । জীবন্ত লাশের মতো দাড়িযে আছে৷। তার কাছে যে এখন সায়ান আর দাড়িয়ে নাই সেই দিকে তার একদম খেয়াল নাই তার মাথায় তার ব্রেনে এখন শুধু সায়ানের বলা কথা গুলো ঘুরাঘুরি করছে ।

#চলবে,#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১৫

রিফাতদের বাড়ি থেকে আসার পর আর দেখা হয়নি সায়ান আর নুশার । নুশা সায়ানের সাথে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে চাইলেও পারছিলো না কারন মোবাইলটা বারবার বন্ধ বলেছে । ঐদিন ইমা গিয়ে ছাদ থেকে নিচে নামিয়ে আনে নুশাকে , নুশা নিচে এসে আর সায়ান কে দেখতে পাইনি ইমাকে জিজ্ঞেস করায় ইমা বলে কোথা থেকে তাড়াহুড়ো করে হেটে ইমার সামনে দাড়িয়ে শুধু বলেছিলো নুশা ছাদে আছে তার কাছে যাও আর নুশাকে নিচে নিয়ে আসো। ইমা আচ্ছা বলে সায়ান কে বলে উঠলো আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন ভাইয়া । কিন্তু সায়ান ইমার কোনো কথার উওর না দিয়েই সামনের দিকে হেটে চলে গেলো আর ইমা আবালের মতো তাকিয়ে রইলো তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা নিশাত এতোক্ষণে সায়ানের পিছু পিছু ছুটতে লাগলো কিন্তু সায়ান রাস্তায় কাছে এসেই গাড়িতে উঠে গেলো পিছন পিছন নিশাত অনেক ডাকাডাকি করেও সায়ান কে তার দিকে ফেরাতে পারে নি। তারপর সন্ধ্যা সময় সবাই বাড়িতে চলে আসলে নিশি সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ,
-সায়ান ভাইয়া কই তাকে তো দেখছি না।
তখন সায়ানের মা সবাই কে জানায় সায়ান এখন গাজীপুর আছে। কি যেনো আর্জেন্ট কাজ পরেছে হটাৎ করে তাই কাউকে না জানিয়েই চলে গেছে ঐখানে গিয়ে ফোন করে তাকে জানিয়ে দিয়েছে যাতে চিন্তা না করে।
সায়ানের এমন হটাৎ করে যাওয়ার কারন কেউ বুঝতে না পারলেও নুশা ঠিকই বুঝতে পারছে। তার জন্যই সায়ান চলে গেছে আসলেই নুশা একটা বোকা মেয়ে জ্ঞান বুদ্ধি কম তার তাই তো এতো কাছে থেকেও বুঝতে পারলো না তার সায়ান ভাইয়া যে তাকে এতো ভালো বাসে।

আজ সবার দাওয়াত সায়ানদের বাড়িতে । রিফাত নতুন জামাই সেই সুবাদে সবার দাওয়াত । নুশা অনেকদিন পর যাচ্ছে সায়ানদের বাড়িতে । সায়ানদের বাড়িতে তেমন মানুষ না থাকায় নুশা তেমন একটা যায় না। দাওয়াত দিলেও যায়না মা বাবা নিশি নিশাত গেলেও নুশা যেতো না৷ তার একটা কারন সায়ান ভাই তখন তো সায়ান ভাইকে নুশা দেখতেই পারতো না । তাই এবারের দাওয়াতেও কেউ নুশাকে যাওয়ার জন্য কেউ একবারও বললো না তারা নিজেরা নিজেদের মতো করে রেডি হতে লাগলো আর নুশা ছোফায় বসে তাদের কার্যকলাপ দেখতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো প্রত্যেকবার যায়না বলে কি সে এবারও যাবে না
একটা বার বললে কি হয় মুখ কি ক্ষয় হয়ে যাবে। নুশার ভাবনার মাঝেই রিফাত তার পাশে এসে বললো,

-আরে নুশা তুমি চুপচাপ বসে আছো যে৷ রেডি হওনা যাবে না নাকি।
-আসলে ভাইয়,,,,

আর কিছু বলার আগেই নিশাত বলে উঠলো,
-একে বলে কোনো লাভ নাই রিফাত ব্রো।
রিফাত নুশার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-কেনো,,,?
– নুশাকে বলে লাভ নাই কারন নুশা যায় না ।
-এমা কেনো..!
নুশা এবার নিশাতের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো,
– আগে যাইনি বলে যে আর কখনো যাবো না এমন তো কথা কোনো দিনই বলিনি। তোমরা আমাকে একটা বার বলছো রেডি হতে যে বলো আমি যাবো না৷। একবার বলেই দেখতে যাই নাকি না যাই।

“শুধু শুধু মুখ নষ্ট করে কি লাভ আমরা সকলেই জানা আছে তুই যে যাবি না ।
নিশি তাদের কাছে আসতে আসতে বলে উঠলো কথাটা আর নুশা নিমির দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো আমি যাবো এটা বলে সোফা ছেড়ে রুমের দিকে চলে গেলো আর নিশি রিফাতের পাশে বসে মুখ হা করে বলে উঠলো,
-কিরে ভাই ! ভুতের মুখে দি রাম রাম । বলে কি এসব যে ব্যাক্তি সায়ান ভাইয়ার এসএসসি পরিক্ষার ভালো রেজাল্ট পাওয়ার পর সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে তখন যে গেছে তার পর আর কোনো দিন জোর করেও কেউ নিতে পারে নাই আর আজ নিজ ইচ্ছেয় বলছে সে যাবে

নিশাত ও নুশার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো ,

-আমি অতো তাই দেখছি আপু।

দুই ভাই বোনের এমন কান্ড দেখে রিফাত হাসতে বলে উঠলো ,
-এখনই এতোটা অবাক হলে চলবে না। সামনে আরো অবাক হওয়ার জিনিস আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

রিফাতের কথা শুনে দুই ভাই বোন এবার অবাক হয়ে রিফাতের দিকে তাকিয়ে এক সাথে বলে উঠলো ,

-মানেহ,,,!!

রিফাত মুখে হালকা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,

– বলা বারণ। আর এখন বললে পরে মজা পাবা না শুধু দেখতে থাকো দুই চোখ দিয়ে আমি আছি তোমাদের সাথে আছি কিছু কিছু আপডেট দেওয়ার জন্য ।

নুশা আজ তার খুব পছন্দের থ্রী-পিছ পরেছে রংটা নেবি ব্লু ফর্সা শরীরে এই রংটা বেশ মানায়। আর নুশার পছন্দ রং হলো ব্লাক হোয়াইট আর নেবি ব্লু। নুশাকে দেখে তারিন বেগম নুশার আব্বুও অবাক । নুশা যে যাবে সেটা কেউ কল্পনাই করেনি ।
অবশেষে দুপুরের দিকে সবাই সায়ান দের বাড়িতে পৌছায়। সেখানেও নুশাকে দেখে সায়ানের আব্বুতো তারিন বেগমকে বলেই উঠলো,
– তারিন নুশা মামুনি কি ভুল করে এই বাড়িতে চলে আসছে নাকি ।
নিজের মামার এমন কথা শুনে নুশা বলে উঠলো,
-কেনো মামা তুমি কি খুশি হওনি আমার আসাতে । যদি খুশি না হও তাহলে চলে যাই কি বলো।

সায়ানের আব্বু এবার কিছুটা এগিয়ে নুশার কাছে গিয়ে নুশার মাথায় হাত রেখে বলে উঠলো,
-দেখো বোকা মেয়ে কি বলে। আমার নুশা মামুনি কতোদিন পর আমাদের বাড়িতে আসছে আর আমি খুশি হবো না তা কি কখনো হয় নাকি। তুমি তো আমাদের বাড়িতে আসাই ভুলে গেছো। আমরা যখন তোমাদের বাড়িতে গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসতে চাইতাম আর তুমি পড়াশোনা বান্ধবী স্কুল কতই না বাহানা দিতে সব ভুলে গেছো নাকি । আর এখন হটাৎ করে আসলে তাই তো এভাবে বলেছি রাগ করো না ।

সায়ানের কোনো বোন নাই না আছে খালাতো বোন না আছে নিজের বোন শুধু ফুফাতো বোন আছে দুইটা । তাই সায়ানের আব্বু আম্মু সবসময় চাইতো নুশাকে নিজের মেয়ে করে নেওয়ার কিন্তু সায়ান সব সময় বলতো সায়ানের বোন করতে হলে নিশিকে বোন বানাতে নুশাকে না। আর নুশার আব্বু আম্মুও নিজের মেয়েদের কে অন্য দের হাতে দিতে তেমন একটা রাজি ছিলো না কারন তাদের সামর্থ ছিলো সবাইকে লালন পালন করার । তখন থেকে সায়ানের আব্বু আম্মু নিশি আর নুশাকে নিজের মেয়ের মতোই আদর স্নেহ করেন। সায়ানের আম্মু এসে তো নুশাকে জরিয়ে ধরে বলে উঠলো ,,

-অবশেষে আমার মা টা আমার বাড়িতে আসছে।

“বাহ আমাকে তো কারোই চোখে পরে না সবাই শুধু নুশা মামুনি আর নুশা মা সেই কখন থেকেই শুরু করেছে তাদের যে নুশা ছাড়া আরেকটা মেয়ে আছে সেটা ভুলেই গেছে৷ বলিকি বিয়ে হওয়ার পর কি আমি এতোটাই পর হয়ে গেছি তোমাদের কাছে ।

সবাই কে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে উঠলো নিশি । নিশির কথা শেষ হতেই নিশাত বলে উঠলো ,,

” আমি তো বানের জলে ভেসে ভেসে আইছি । তাই আমার কোনো দামই নাই এখানে । কপালে হাত দিয়ে দুইটা বারি দিয়ে বলে উঠলো সবই কপাল আজ যদি ছেলে না হয়ে মেয়ে হতাম তাহলে কতোই না ভালো হতো অন্তত সবার মামুনি মা আরো কতো কিছুই শুনতে পারতাম ।

ভাই বোনের কথা শুনে মামা আর মামির কাছে অভিযোগ সূরে বলে উঠলো নুশা,,

-দেখছো মামা দেখছো মামি,, আমার ভাইটা আর বোনটা কি হিংসুটে । আমার সাথে নিজের ছোট বোনের সাথে হিংসে করে৷। বলিকি আপু আর ভাই তোমরা তো পৃথিবীতে আগে আগে আইছো আর ভালোবাসা তো তখন আমার থেকে বেশিই পাইছো ।

তিন ভাই বোনের এমন মিষ্টি ঝগড়াঝাটি দেখে সবাই হাসতে হাসতে শেষ । তারিন বেগম হাসতে হাসতে বলে উঠলো,

-ভাবি সায়ান কি আর বাড়িতে আসে নাই নাকি এখনো গাজীপুরেই আছে ছেলেটাকে গতকাল ফোন দিয়েছিলাম মোবাইল বন্ধ বলেছে।
-না সায়ান বাড়িতে গতকাল রাএেই চলে আইছে শরীর টা বেশি একটা ভালো না জ্বর ঠান্ডা সব এক সাথে আক্রমণ করছে। সায়ানকে তো সহজে কোনো জ্বর ঠান্ডা কাবু করতে পারে না এবার ঠিকই করেছে কথা বার্তা কম বলছে আর খাওয়া দাওয়াও কম করছে ।

“সায়ান ভাইয়ের সাথে আসো করে আসি৷ চলো রিফাত ভাইয়া ”
কথাটি বলে নিশাত রিফাতের হাত ধরে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো আর তাদের পিছু পিছু নিশিও যেতে লাগলো । নুশাও তাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,

-সায়ান ভাইয়ের সাথে আমিও দেখা করে আসি সবাই যেহেতু গিয়েছে ।

___________

একে একে সবাই সায়ানের রুমে ঢুকলো। রুমের দরজাটা হালকা করে ভিড়ানো ছিলো তাই ঢুকতে কোনো সমস্যা হয়নি৷ খুব সহজেই রুমে চলে এসেছে সবাই। রুমে এসে দেখে রুমে কোনো সায়ানের দেখাই নাই৷ তাই রিফাত আর নিশাতের পিছন থেকে নিশি বলে উঠলো,

-সায়ান ভাই কই রুমে তো কেউ নাই।
তখনই ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ সবার কানেই শ্রবন হয়েছে তাই সবাই নিশাত রিফাত আর নিশি একে একে রুম থেকে বাহির হয়ে ছাঁদের দিকে চলে গেলো ।
নুশা রুমের বাহিরে দাড়িয়ে আছে। প্রায় অনেক বছর পর এই রুমটাতে সে আসছে । একটু দেরি করে আসাতে নুশা নিশিদের খেয়াল করেনি তাই নুশা ভাবছে নিশিরা হয়তো রুমের ভেতরই আছে তাই দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে তো হা,,, একি দেখছে সে চোখ দুটি বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ।

অন্য দিকে সায়ান মাএ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসেছে৷ পরনে শুধু একটা টাওয়াল পেঁচানো তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতেছে হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে পিছন ফিরে তাকিয়ে নুশাকে দেখে তো সে অবাক। নুশাদের বাড়ির সবাই যে আজ আমন্ত্রিত তাই সবাই আসতেই পারে কিন্তু নুশা তার সামনে তার দরজার সামনে দেখে সায়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না সে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে নুশাকে তো কতো জোর করেও কেউ আনতে পারেনি কিন্তু সেই নুশা আজ হঠাৎ করে আসলে যে কেউই আশ্চর্য হবে ।

সায়ানকে পিছন ফিরে তাকাতে দেখে তাড়াতাড়ি ঘুরে যেই এক পা সামনে বাড়ালো তখনই পিছন থেকে সায়ান বলে উঠলো ,

-এক মিনিট জ্বরের ঘোরে কি আমি তোমাকে ভুল দেখতেছি ব্লাক ডায়মন্ড ।
নুশা সায়ানের কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ দাঁড়িয়ে থেকেই মাথা দুলিয়ে সায়ানকে বুঝালো যে না সে কোনো গোর টোর দেখছে না যা দেখছে তা সত্য।
নুশার ইশারা বুঝতে পেরে সায়ান বলে উঠলো ,
– তাহলে বাহিরে কেনো ভেতরে এসো।
নুশা এবার সায়ানের উল্টো হয়েই বলে উঠলো,
-আগে ড্রেস চেঞ্জ করেন।
-পিছনে তো তাকাও আগে।
-না আপনি আগে ড্রেস চেন্জ করেন।
-যা দেখার তা তো দেখেই ফেলছো আর চেঞ্জ করে কি লাভ ।
-তাহলে আপনি থাকেন আমি গেলাম। বলে একপা যেই বাড়াবে সাথে সাথে সায়ান নুশার হাত ধরে টেনে রুমে এনে দরজা আটকিয়ে দিলো আর নুশাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে উঠলো ,,,,

#চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here