# তোমার_নেশায় !
,
(০১)
.
.
কঠিন হৃধয়ের মেয়ে তৃষ্ণা
.
.
.
.
মেঘলা আকাশ আর কুয়াশা ভরা পিচডালা রোড দিয়ে
এগিয়ে চলছে গাড়ি, উদ্দেশ্য রুপাঞ্জন ভিলা। ১০ তলা
বিশিষ্ট ফ্ল্যেট টির সামনে গাড়ি থামতেই কোনো
দিকে না তাকিয়েই নেমে পড়লাম। আজ আমার চোখ
মনের কালো মেঘে আধার হয়ে আছে। কোথাও তাকাতে
মন চাইছেনা। পিছন থেকে কেউ একজন আমার নাম ধরে
ডেকেই যাচ্ছে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই আমার। ভারি
স্টোনের কাজ করা লেহেংগা আর জড়োয়া গহনা
সামলিয়ে লিফটে উঠলাম। হ্যা, আজ ই আমি বিয়ে নামক
একটা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি, আমার কাছে এই বিয়ে
একটা বিজনেস ডিল মাত্র। এইসব মেয়েলি পোশাক আর
গহনা আমার জন্য না। আমার জিন্স আর শার্ট, বিজনেস
কোট এগুলাই আমার পোশাক। গঠনের দিক থেকে
সৃষ্টিকর্তা আমায় মেয়ে বানালেও এই শরিল ছাড়া সমস্ত
কিছুই পুরুষের মতো! বাবা আমায় এই ভাবেই মানুষ
করেছেন। তার কাছে আমি তার একমাত্র ছেলে।কিন্তু
কয়েক ঘন্টা আগে আমার জিবন একদম বদলে গেছে যার
ফলে এখন আমায় বধু বেসে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অন্য
মেয়েদের মনে এইসময় হয়তো কি করে নতুন সংসার
সাজাবে এইসব চলতো কিন্তু আমার মনে চলছে আমাদের
বিজনেস এম্পায়ার টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ। লিফটে উঠে ৫ম
তলার সুইচ প্রেস করতেই লিফট এর দরজা বন্ধ হতে লাগল।
দরজা টা সম্পু`ন বন্ধ হওয়ার আগেই একটা হাত মাঝে
বাধা হলো। লিফট এর দরজা আবার খুলে গেল। আমার
সামনে দাড়িয়ে আছে সুঠাম দেহের, ফর্সা শরিলের এবং
খোচা খোচা দাড়ির অধিকারি এক মায়াবি পুরুষ! তার
চোখেমুখে আছে আমার জন্য তাচ্ছিল্যর হাসি। ঠিক ইনি
হচ্ছেন মিঃ রুপাঞ্জন খান, আমার সো কল্ড হাজবেন্ড।
যার সাথে কিছুক্ষন আগেই বিয়ে নামক চুক্তি হয়েছিল
আমার। যার সব থেকে বড় পরিচয় আমার বাবার সব থেকে
শত্রু আশ্রাফ খানের একমাত্র ছেলে। এই দুজনের একমাত্র
টার্গেট হচ্ছে, আমার বাবা এবং তার বিজনেস কে ধধংস
করা। ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে পশু টা আমার কানে কানে
বলল, welcome to my hell, Mrs Rupanjon!….
নরকের জিবন কেমন হয় সেটা দেখার ইচ্ছা থাকলে আজ
থেকেই তোমার কাউন্ট ডাউন শুরু! একটা দিন তোমায়
শান্তিতে বাঁচতে দেবোনা তোমায়, I promise! এই বলে
একটা জঘন্য হাসি দিল। এই হাসি দেখলে অন্য কোনো
মেয়ে কি যেন বলে, হ্যা ক্রাশ খেত। কিন্তু এই মুহুরতে
আমার তাকে কোনো জঘন্য পশুর সাথে তুলনা করতে ইচ্ছা
করছে। লিফটের দরজা অন হলো আর আমরা পাঁচতলায়
চলে এলাম। এই পুরো ফ্লেট এই পশুটার কালো টাকায়
তৈরী। ঘরে পা রাখতেই আমি প্রচন্ড রুকমের শক খেলাম।
এটা বাসা নাকি ডান্স বার? পুরো ডাইনিং জুড়ে হাল্কা
মাল্টি কালারের বিভিন্ন লাইট জলছে আর সহস্র
মেয়েরা মিউজিকের তালে হেলে দুলে নাচছে। সব গুলা
মেয়েই ওয়েস্টার্ন ড্রেস আপে। পশুটা কে দেখতেই
মেয়েগুলা প্রায় চেচিয়ে উঠল আর ওকে চারপাশে ঘীরে
ধরে যা তা বলা শুরু করল,
:- রুপ বেইবি!! হোয়ায় আর ইউ সো লেইট?? (মেয়েগুলা)
,
:- ওও সুইটহাট! সরি তোমার ওয়েট করানোর জন্য। লেত’স
ইঞ্জয়!!
,
:– okk but who is she?? (আমাকে দেখিয়ে একটা মেয়ে
জিজ্ঞাস করল)
,
:– কেউনা! ধরো ও তোমাদের মতই! ইঞ্জয় করতে এসেছে।
forget it, let’s enjoy babe!
,
ঘৃন্নায় মুখ ভর্তি থুথু পশুটার গায়ে ছিটিয়ে একটা রুমে
ডুকে দরজা বন্ধ করে ফেললাম। এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ডুকে
গেলাম। আমার অসহ্য লাগছে আজ নিজেকে আয়না
দেখতে। তাড়াতাড়ি ড্রেস গুলা পাল্টে একটা টাওয়েল
পরে নিলাম। তারপর শাওয়ার ছেড়ে নিচে বসে রইলাম।
মাথা টা ঠান্ডা করা প্রয়োজন যদিও বাইরে এখন হাড়
কাপানো শীত। চোখের সামনে পানি পড়ে সব কিছু
ঝাপশা লাগছে। কয়েকদিন আগের স্মৃতি মনে পাতায়
উকি দিচ্ছে বার বার।
flash back>>>>>>>>
,
আমি রুপশা চৌধুরী ! the business women! বাবা মায়ের
একমাত্র মেয়ে। শুনেছি আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে
মায়ের মৃতু্্য হয়। কিন্তু পরবর্তিতে জানতে পারলাম
আমার মাকে প্লেনিং করে মার্ডার করানো হয়েছিল।
বাবা খুব করে চাইতেন যে ওনার একটা ছেলে হোক কিন্তু
আমি ছিলাম মেয়ে। মেয়ে মানুষ তো দুর্বল জাতি তাই
বাবা আমাকে নিয়ে খুব ভয়ে থাকতেন যদি শত্রুরা আমার
কোনো ক্ষতি করে। যখন আমার বয়স ৬ বছর আমি একদিন
খেলতে খেলতে পড়ে যাই আর আমার হাত অনেকখানি
কেটে যায়। বাবা খুব কেঁদেছিলেন সেদিন কিন্তু আমি
এক ফোটা কাদিনি সেদিন। বাবার চোখের পানি মুছে
বলেছিলাম বাবা, আমি কাঁদছি মানে তো আমি হেরে
গেছি। কিন্তু আমরা যদি নিজে না কেদে তাকে কাদাই
যে আমাদের ব্যেথা দিয়েছে তবেই তো আমরা জিতব।
সেদিন বাবার সামনেই যে চেয়ারের সাথে বাড়ি খেয়ে
পড়েছিলাম সেটা দা দিয়ে কুপিয়ে ভেঙগে ফেলি।
সেদিন বাবা অবাক হয়ে দেখছিলেন আমাকে, এইটুকু
মেয়ের মধ্যে এতো সাহস দেখে বাবা বুঝে গিয়েছিলেন
আমিই পারবো বাবার ছেলে হতে। সেদিন থেকেই আমার
জিবন বদলে গেল। পড়াশুনা, স্পোর্টস, সব কিছুতেই আমি
ছেলেদের থেকে অনেক খানি এগিয়ে ছিলাম। আর
মেজাজ ও ছিল ছেলেদের মতই কড়া। পড়াশুনা শেষে
বাবার বিজনেস জয়েন করলাম। অফিসের সকল স্টাফরা
ভয়ে কাপতো! ম্যেডাম নয় স্যার বলে ডাকতো আমায়!
আমাদের দিন গুলা খুব ভালোই কাটছিল। তখনই বাবার
পুরোনো শত্রু মিঃ আশ্রাফ খান হঠাৎ করে আমাদের
জিবনে আগমন করেন। কৌশলে তারা আমাদের অনেক
টাকার লোকশান করায়, একটা ফরেন ডিল যা পুরোপুরি
আমাদের হাতের মুঠোয় ছিল সেটা তারা ছিনিয়ে নেয়।
ব্যবসার অবস্থা একটু ভালো করার জন্য আমরা বৈদেশিক
ব্যাংক
থেকে লোন নেই। তারা শর্ত দেয় আমরা যদি নিদিষ্ট সময়
লোন পরিশোধ করতে না পারি তাহলে আমাদের অফিস
ওদের দখলে চলে যাবে। আশ্রাফ খানের একমাত্র বোন
আমার বাবা কে ভালোবাসত। কিন্তু বাবা মা কে
ভালোবাসত তাই মা কে বিয়ে করার পর আশ্রাফ খানের
বোন সুইসাইড এটেম্প করে। ভাগ্যক্রমে বেচে গেলেও
উনি এখন মানসিক ভারসাম্যহীন। কাউকে চিনেনা, কথা
বলেনা, একা একা হুইলচেয়ারে বসে থাকে।তাই বোনের
প্রতিশোধ নিতেই ওরা নতুন এক প্লেন করে। এদিকে ১ বছর
প্রায় শেষের দিকে, বাবা আর আমি খুব চিন্তায় আছি
৩কোটি টাকার মধ্যে এখন মাত্র ১ কোটি টাকা আমাদের
কাছে আছে বাকি দুকোটি কোথায় পাব আমরা। বাবা
সিডান্ত নিলেন আমাদের ফ্ল্যেট টা বিক্রি করবেন
কিন্ত আমি জানি বাবা মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছেন কারন
এই ফ্ল্যটে আমার মায়ের অনেক স্মতৃি জড়িয়ে আছে। মা
নিজ হাতে সাজিয়েছেন ঘরের প্রত্যকটি কোনা। কি করব
ভেবে পাচ্ছিনা। রুমে এসে ল্যেপটপ এ কিছু দরকারি
ফাইল খুজছিলাম। তখনই একটা আন নোন নাম্বার থেকে
কল আসল। আমি রিছিভ করতেই,
,
:– হ্যালো মিস চৌঃ!
,
:– জি কে বলছেন??
,
:– রুপাঞ্জন খান!
,
:–how dare you to call me!
,
:– ওয়েট রিলেক্স!! ভাঙ্গবে কিন্ত মচকাবেনা তাইনা??
,
:– just shut up! আমি আপনার ফালতু বকবক শুনতে আগ্রহি
নই!
,
:- আগে আমার কথা শেষ করতে দাও তারপর ডিসাইড
করবে এটা ফাল্টু নাকি কাজের!
,
:- কি বলতে চান আপনি??
,
:– ওয়েল তোমার জন্য একটা অফার আছে! যদি বলো
তো,…..
,
:– কেমন অফার???
,
:– আমি তোমাদের যাবতীয় লোন শোধ করে দেবো
বিনিময়……
,
:– বিনিময় কি??
,
:– you have to marry me!!!
,
:– what?? r u drunk?? আপনি জানেন আপনি কার সাথে
কথা বলছেন?
,
:– হুম, আমি এখন এক ব্যের্থ বিজনেসউমেন এর সাথে কথা
বলছি যে তার সব হারাতে বসেছে। তুমি নিশ্চই চাইবেনা
তোমার মায়ের শেষ স্মৃতি (প্রত্যাশা কানন) ফ্ল্যেট টা
বিক্রি করে তোমার বাবা দুকে দুকে মরুক। তাই চয়েজ ইজ
ইউরস!!!
,
লাইন কেটে দিল। ইদানিং বাবার উপর অনেক মানসিক
চাপ পড়ছে এর মধ্যে ফ্ল্যেট টা বিক্রি করে দিলে বাবা
আরো উইক হয়ে যাবেন। আমি কি করতে পারি, এরমধ্যে
বাবা আমায় ডেকে পাঠালেন,
,
:– কিছু বলবে বাবা??
,
:– আশ্রাফ খানের সাহস কত আমার মেয়ের দিকে চোখ
দেয়, তুই জানিস……
,
:– জানি বাবা, মিঃ রুপাঞ্জন আমায় সব বলেছে। আমায়
একটু ভাবতে সময় দাও।
,
:- কি বলছিস কি তুই? তোর মাথা খারাপ হয়েছে ওরা
আমাদের শত্রু, ওই হারামি তোকে ঘরের বউ করতে চাচ্ছে
এরমধ্যে নিশ্চই ওদের কোনো ষড়যন্ত্র আছে। আমি জেনে
শুনে কি করে তোকে শত্রুর ঘরে পাঠাই মা??
,
:– এতো ভেবোনা বাবা, আমাদের লোন শোধ করাও
জরুরি।
,
:– না না তাই বলে আমি তোকে বলি দিতে পারবোনা।
,
:– বাবা তুমি আমাকে তোমার ছেলে বলো তাইনা?, এইটুকু
বিশাস রাখো তোমার ছেলে যখন কোনো সিডান্ত
নিয়েছে ভেবেই নিয়েছে। একবার আমাদের লোন শোধ
হতে দাও, আমি ওই পশু কে ডিবোর্স দিয়ে দেব।
বাবা আর কিছু বললেন না। কাঁদতে লাগলেন, আমি বাবার
সব কান্নার আর আমায় মায়ের খুনি কে খুজে বের করে
কঠিনতম শাস্তি দেব।
এই ভাবনায় একটা ঘোরের মধ্যেই আমার বিয়েটা হয়ে
গেল।
,
বাথরুমের দরজা দাক্কানোর আওয়াজে বাস্তবে
ফিরলাম।
আমি বুঝতে পারছি আমি ভুল করে ওই পশু টার রুমেই ডুকে
পড়েছি। কি করবো এখন ভেজা টাওয়াল নিয়ে বের হবো
কি করে? বাথ্রুমে রাখা শেল্ফ থেকে ইচ্ছা না থাকা
সত্তেও ওই জানোওয়ারের একটা শার্ট আর ট্রাউজার
পরে বের হলাম।
দেখলাম পশু টা হা করে তাকিয়ে আছে।…………………………
,
,
,