শুধু তুমি পর্ব ১০ এবং শেষ

#শুধু_তুমি
#পর্ব-১০
#Nirzana(Tanima_Anam)
অবশেষে বিয়েটা সম্পূর্ন হয়েই গেলো।শরিয়তের মতে বিয়েটা সম্পূর্ন হলেও কাগজে কলমে এখনো হয় নি।
একরাশ অভিমান নিয়ে দুবার কবুল বলার পর তিনবারের বেলায় গলা আটকে আসে সরবের।দম নিতে কষ্ট হচ্ছে।ইচ্ছে করছে এই আসর এখানেই সমাপ্ত করে দিতে।কিন্তু কোথা থেকে অভিমানের একরাশ মেঘ এসে আবার সরবের মনের আকাশ ঘিরে ধরে।
গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে সমস্ত নিয়ম নূহী বলে বলে ধরে বেঁধে করিয়েছে সরবকে দিয়ে।যেটা সরব একেবারে মানতে পারে নি।কি করে মানবে….
যেই প্রিয়তমাকে পাওয়ার নেশায় একসময় সাত সাগড় তেরো নদী পাড় করে ছুটে এসেছিলো,যাকে ঘিরে হাজার জোছনা বিলাস নিয়ে কেটেছিলো সেই প্রিয়তমায় নিজে থেকে বাঁধন আলগা করে পালিয়ে গেছে।
এতো মানা যায় না…. পৃথিবীর কোনো প্রেমিক পুরুষই হয়তো মানতে পারবে না।

সরব ডান হাতটা মুষ্টি বদ্ধ করে গড় গড় করে আবারো তিন তিনবার কবুল এক নাগাড়ে বলে ফেলে।সেখানে উপস্থিত সকলেই এক বিষ্ময়ের হাসি হাসে।
নিয়ম অনুযায়ী যেখানে তিনবার কবুল বলার কথা সরব বাবাজি সেখানে পাঁচবার বলে ফেলেছে।
ভাবা যায়……হয়তো বউ পাওয়া আনন্দে মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

কথাটা তৎক্ষনাৎ অন্দরমহলে চলে যায়।সেই হিসেবে নুসরাতের মায়ের কানেও যায়।তিনি তখন নিজের ঘরের বিছানায় এলোমেলো ভাবে বসে স্বামীর নাম জব করছিলেন।
বিয়ের পরপরই স্বামী হারান তিনি।প্রথম বিধবা হওয়ার শোক অন্য রকম। বিয়ের দশ দিনের মাথায় যখন নূহীর বাবাও মারা যায় তখন তিনি দ্বিতীয় বার বিধবা হন।
সেবার তার অবস্থা ছিলো ঠিক বলতে গেলে
“অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর”

বাপের বাড়ি শ্বশুড় বাড়ি পাড়া প্রতিবেশী সবার অভিযোগ ছিলো এই মহিলা স্বামী খেকো মহিলা।স্বামী সংসার ওর কপালে নেই।ওনি যখন এসব অতীত বর্তমান ভবিষ্যতের অংক কষতে ব্যস্ত তখন কেউ একজন তার কাছে এসে সরবের পাঁচবার কবুল বলার কাহিনি তুলে ধরে।

কিন্তু এতে নাফিসা বেগমের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।তিনি ব্যস্ত অংক কষতে।অংকটা মিলে গেছে যেহেতু তার কপালে স্বামী সংসার কিছুই ছিলো না একইভাবে তার মেয়েও আজ সব কিছু থেকে বঞ্চিত হলো।
নাফিসা বেগম মনে মনে বলতে থাকে….
“সরব কি জানে তার বিয়েটা ঠিক কার সাথে হচ্ছে??হয়তো কাজির মুখে নামটা শুনেই খুশির চোটে পাঁচবার কবুল বলে ফেলেছে।সম্ভব হলে হয়তো আরো পাঁচশ বার বলতো।কিন্তু আমার মেয়ে। তার কি হবে কোথায় খুজবো তাকে??আদোও কি কোনো দিনও খুজে পাবো??”

কথাগুলো বির বির করে বলেই কাঁদতে শুরু করেন ওনি।

এদিকে বিয়ের কার্যক্রম চলছে।আইনি কর্যক্রম ও ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়ে গেলো।সরব সইটাও করে দিয়েছে বিনা দিধায়।
অবশেষে বিয়েটা সম্পূর্ন হয়।সরবকে বিয়ের আসরে নিয়ে যাওয়া হয়।খুব ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হলেও আয়োজনের কোনো ত্রুটি নেই।
সরব আসরে বসে আছে।এদিকে তার সাথে আসা বরযাত্রীদের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছে।কিছু একটা নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে বেশ আলোচনা সমালোচনার ঝুড়ি খুলে বসে আছে।
সে সব সরবের কানে গেলেও সে দিকে সরবের মনোযোগ নেই।সরবের দুচোখ খুজছে তার প্রিয়োতমাকে।

কোই সে,সে কি একবারও আসবে না।
না আসবে না।এতোকাল যখন সে নিজে থেকে আসেনি আজও আসবে না।হয়তো আর কখনো আসবে না।হয়তো কেন সত্যিই সত্যি সে আর আসবে না।তার মুখে ভালোবাসি শব্দটা শোনার ইচ্ছে টা সারা জীবন ইচ্ছে হয়েই থেকে যাবে

“ভালোবেসে পুড়ে ছারখার তবু ভালোবাসি বলবার নয়”

সরবের চোখ থেকে কয়েকফোটা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে।সরব হাতের উল্টো পাশ দিয়ে মুছে নেয়।
কথায় আছে পুরুষমানুষদের কাঁদতে নাই।কাঁদলে নাকি তাদের জাত যায়।কিন্তু বেদনার আরেক রূপই তো চোখের জল……..

সরব মাথা নিচু করে বসে আছে।
হটাৎ সদূর থেকে নুপুরের ছম ছম আওয়াজ আসছে।সরবের এই শব্দটা খুব চেনা-অচেনা।
সরব আস্তে ধীরে চোখ তুলে তাকায়।
এক জোড়া আলতা দেওয়া পা।পায়ে এক জোড়া নুপুর।পা দুটো দেখে সরবের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে।
সরব চোখ তুলে তাকায়।একটা বউ লালটুকটুকে বউ….

নূহী। হ্যা এটাতো নূহী।পড়লে লাল বেনারসি। এই বেনারসি টাই তো সরব নূহীকে দেয়েছিলো যদিও শেষ মেষ পড়া হয় উঠে নি কিন্তু….
সরব অবাক হওয়ার চরম সীমায়।
এক লাফে উঠে দাড়ায় সে….
নূহীর দিক থেকে যেন তার চোখ ফিরছে না।
নূহীর ঠোটের কোনে হালকা হাসি।

কয়েকজন মহিলা এসে নূহীকে ধরে সরবের পাশে বসিয়ে দেয়।এই আসরে তারাই তো বর বউ।

[তখন যখন নুসরাতের মা নূহীকে ধরে অতীত ইতিহাস শুনাচ্ছিলে তখন পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে নুসরাতও বেশ মনোযোগ দিয়ে মায়ের কথাগুলো শুনছিলো।যদিও মায়ের মুখে এই কথাগুলো আগেও শুনেছিলো তবুও আজ যেন এই কথাগুলো সোজা নুসরাতের বুকে তীরের মতো লাগে।জন্মের পরই মা কে হারায়।তারপর বাবা।মা যে নূহীকে কখনো নিজের মেয়ে বলে মানে নি তা ও নুসরাতের অজানা নয়।নূহীর সাথে সরবের বেশ আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো তবুও তিনি নূহীকে জোড় করে অঙ্কনের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় যেটা সে মানতে পারে নি আর আজ মায়ের কথায় নিজের ভালোবাসাকে পেয়েও…. নাহ্ নুসরাতের এতোকাল ঘুমিয়ে থাকা বিবেকটা হটাৎই জেগে উঠে।সে সিদ্ধান্ত নেয় ঠিক বিয়ের আগ মুহূর্তে নূহীকে বউ সাজিয়ে সে পালিয়ে যাবে।সে তাই করেছে।নুসরাত বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।দূরে অনেক দূরে]

নূহী কথাটা আগে থেকে জানলেও সরবকে এ নিয়ে কিছুই বলেনি।বললে হয়তো সরবের অন্ধকার মুখে এই আলো দেখতে পেতো না।

সেদিন প্রথমবারের মতো নূহী নিজে থেকে সরবের হাতটা শক্ত করে ধরে।সরবও নূহী আবদ্ধ করে নেয় নিজের বাহুডোরে।যেন হাজার চেষ্টা করেও সে ছুটতে না পারে….

সরব নূহীকে বাড়িতে নিয়ে গেলে সাফিয়া বেগম রাগে আগুন হয়ে যান।তিনি না তখন নূহীকে মানতে পেরেছে না এখন।তাতে কি সরব নূহী বেশ আছে।ছোট একটা ঘর,একটা সংসার আর সেই ঘর ভর্তি ভালোবাসা।দিব্যি আছে তারা।মাঝে মাঝে শ্বাশুড়ির কটু কথায় তার একটুও কষ্ট হয় না।বরং হেসে উড়িয়ে দেয়….
“শ্বাশুড়ি তো মায়ের মতোই হয়।মা বকা দিলে তে ভালোই লাগে”

মাঝে মাঝে নূহীর নুসরাতের কথা মনে পড়ে।মনে পড়ে তার অতীতের কথা তবে সে এগুলো নিয়ে ঘাটতে চায় না অতীত তো অতীতই হয়।অতীত নিয়ে কষ্ট পেয়ে কি লাভ।মানুষকে বর্তমান নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হয়……

সমাপ্ত…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here