#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৬.
-” মিস রুহি এখন আপনি কোথায় পালাবেন আমার হৃদয় চুরি করে? সারিফ মৃদু কন্ঠে বলে ওঠে।
রুহি দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে লজ্জায় তার গালে রক্তিম আভা ছাড়িয়ে পড়েছে চোখ শরমে ঝুঁকে আছে আর ঠিক তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সারিফ তার চোখে মুখে খেলা করছে দুষ্টু হাসি সে প্রায় রুহির শরীরের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে একহাত রুহির মাথার কাছের দেওয়ালে রেখে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে মুখটা নিচু করে রুহির দিকে।
-“আপনাকে তো রীতিমতো আমার হৃদয় চুরি করার জন্যে গ্রেপ্তার করা উচিত ভাবা যায় সারিফ রওশনের হৃদয় কিনা এক রমণী চুরি করে নিলো এটা কি মানা যায়। সারিফ ফিচেল কন্ঠে বলে ওঠে।
-” ম মা মানে!রুহি কোনোরকম ভাবে বলে ওঠে।
-“বাহ্! আপনি দেখছি মানে টাও জানেন না হৃদয় চুরি করে নিলেন আর এখন বলছেন মানে? সারিফ দুষ্টু হেসে বলে ওঠে।
সারিফের কথা শুনে রুহি আরো বেশি কুকড়ে যায় কোনো রকমে মাথা তুলে সারিফের চোখে চোখ রাখে ভ্রু কুঁচকে। সারিফ রুহির তাকানো দেখে আরো একটু ঝুঁকে যায়।
-” হৃদয় চুরি মানে বোঝেন? আমার হৃদয় মন এখন কোনোটাই আমার আয়ত্তে নেই সবটাই আপনি চুরি করে নিয়ে আপনার দখলে করে নিয়েছেন। সারিফ ফিসফিসয়ে বলে ওঠে।
সারিফের এমন অবলীলায় বলে ফেলা কথাটা শুনেই চকিতে ঝুঁকে থাকা মাথা তুলে সারিফের চোখে চোখ রাখে দেখে তার দিকেই তাকিয়ে ঘোর লাগা চোখে তার চোখে সে নিজের জন্যে একরাশ ভালোবাসা মুগ্ধতা খুঁজে পায়। দুজনেই একই ভাবে তাকিয়ে আছে।
-“আপনি জানেন আপনার এই চুরির অপরাধের শাস্তি কি! আপনার শাস্তি হলো সারাজীবনের জন্যে আমার হৃদয়কে নিজের কাছে রাখতে হবে সারাজীবনের আমার হৃদয়ের রানী থাকতে হবে। বলুন শাস্তি মনজুর? সারিফ মৃদু হেসে বলে ওঠে।
সারিফের কথা শুনে ঝট করে রুহি মাথা নামিয়ে দেয় আগের তুলনায় মুখটা আরো বেশি রাঙা হয়ে ওঠে কোনো কথা না বলে সারিফকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে রুমে থেকে পালিয়ে যায়, সারিফ দেওয়ালে হেলান দিয়ে বুকে হাত বেঁধে মৃদু হেসে তাকিয়ে থাকে রুহির চলে যাওয়ার দিকে।
————–
বেলা ইয়ারফোন এর সাহায্যে lফোনে কথা বলতে হাতে ফাইল নিয়ে চেক করতে করতে সাঁঝের কেবিনে কোনো রকম নক না করেই ভিতরে পা বাড়ায় আসলেই বেলা কথা বলায় ব্যস্ত ছিল সাথে সাঁঝের কেবিনে আসার জন্যে তাকে আগেই নক না করে দিয়েছে তাই আজ আর নক করার ঝামেলা করতে যায়নি ভিতরে পা বাড়ায় । হঠাৎ কোনো আওয়াজে কথা বলতে বলতে ভিতরে ঢুকে বেলা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে তার কথা আটকে যায় স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে সামনের দিকে।
দিশা মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছে ঠোঁটের কোন বেয়ে রক্তের রেখা দেখা দিচ্ছে আসলেই বেলা যখনই রুমের ভিতরে পা তখনই সজরে দিশার গালে কষে থাপ্পড় পড়ে। বেলা চোখ ফিরিয়ে সোজা তাকাতেই দেখে সাঁঝ রাগে চোখ মুখ লাল করে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই মুহূর্তে সাঁঝকে ভীষণ হিংস্র দেখাচ্ছে কোনো ভাবেই নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারছেনা, সাঁঝকে এই অবস্থায় দেখে বেলা বুঝতে পারে সাঁঝ ভীষণ রেগে গেছে নিশ্চয় এমন কিছু ঘটেছে যে সাঁঝের রাগ ব্ল্যাস্ট করে গেছে আর বর্হিপ্রকাশ হিসাবে সেটা পড়েছে দিশার উপরে। বেলা এখনও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে কোনো কথা না বলে,সাঁঝ সামনে তাকাতেই দেখে বেলা তার দিকে তাকিয়ে আছে।
-“আকাশ! আকাশ । সাঁঝ জোরে জোরে চিৎকার ডেকে ওঠে।
-” ইয়েস স্যার। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে রুমে ঢোকে আকাশ।
আকাশ একবার ফ্লোরে পড়ে থাকা দিশার দিকে তাকিয়ে তার পাশে দাঁড়ানো বেলার দিকে তাকিয়ে নিয়ে সোজা তার বসের দিকে তাকায়, তার আর বুঝতে বাকি নেই যে নিশ্চয় এমন কিছু ঘটিয়েছে যে তার স্যার এমন হিংস্র হয়ে উঠেছে।
-” ওকে যেনো আমি আর কখনো এই অফিসে না দেখতে পাই, ওর সাথে কোম্পানির যতো গুলো কন্ট্রাক্টড আছে সব গুলোই এখুনি ক্যান্সেল করে দাও,ওর সাথে আমাদের সমস্ত এগ্রিমেন্ট ক্যান্সেল করো ফাস্ট। সাঁঝ রুক্ষ ভাবে বলে ওঠে।
-” ইয়েস স্যার। বলে আকাশ রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
দিশা এতক্ষণ ফ্লোরে বসে বসে চুপচাপ ফুফিয়ে যাচ্ছিলো গালে হাত রেখে আর সাঁঝের সব কাজ দেখছিল তবে সাঁঝের শেষ কথাটা শুনে একটু জোরে কেঁদে ওঠে।
-” হে ইউ গেট আউট। আউট। এই রুম থেকে এই অফিস ছেড়ে নিজের জিনিষ গুটিয়ে এখুনি বেরিয়ে যাও, আর কখনো এই মুখ এই অফিসে না দেখি। আউট। হুঙ্কার দিয়ে বলে ওঠে সাঁঝ।
দিশা একবার সাঁঝের দিকে তাকিয়ে ভয়ে কেঁপে উঠে কান্না করতে করতে কোনো রকমে উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় এতক্ষণ ভয় না পেলেও এইমাত্র সাঁঝের কন্ঠস্বর শুনেই ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আসে। দিশা রুম ছেড়ে যেতেই সাঁঝ একহাত কোমরে রেখে নিজের কপালে স্লাইড করছে তার ভিতরে রাগ এখনও বিন্দুমাত্র কমেনি।
বেলা সাঁঝের দিকে এগিয়ে যায়, এই মুহূর্তে সাঁঝের রাগ কমাতে হবে না হলে কোথায় কি করে বসে ঠিক নেই। হাতে থাকা ফাইল টেবিলের উপরে রেখে সাঁঝের পাশে দাঁড়িয়ে সাঁঝের বাহুতে হাত রাখে, সাঁঝ কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করায় সাঁঝ বেলার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে হুট করে একটানে নিজের বুকের ভিতরে জড়িয়ে মিশিয়ে নেয় বেলাকে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে নিজের সাথে বেলাও হাত উঠিয়ে সাঁঝের পিঠে আর কোমরে শক্ত করে ধরে। কোনো কথা না বলে বেলাকে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখে নিজেকে শান্ত করতে থাকে নিজের ভিতরে হিংস্র রাগটাকে শান্ত করতে থাকে, বেলার স্পর্শে আসতে আসতে করে যেনো রাগটা শান্ত হতে থাকে। বেলাও কোনো কথা বলে সাঁঝের বুকের মধ্যে মিশে থাকে তার মাধ্যমে সাঁঝকে শান্ত করানোর চেষ্টা করে, বেলা ক্রমাগত সাঁঝের পিঠের উপরে বুলিয়ে যায় বেলার কাছে সাঁঝের এই রাগ নতুন নয় তাই বেলার জানা আছে সাঁঝের রাগ ভয়ংকর হুট করে যেমন রাগে না তেমনি একবার রেগে গেলে আর তখন থামিয়ে রাখা খুব মুস্কিল। তবে বেলার মনে এখন চলছে প্রশ্নের ঝড় কি এমন হয়েছিলো যার জন্যে সাঁঝের এমন ভয়ংকর ভাবে রেগে গেলো, বেলা তার ভাবনার মাঝে অনুভব করে সাঁঝ কাঁধে নিজের মুখ ঘষতে থাকে অনবরত বেলা সাঁঝের বুকের মধ্যে মিশে থেকে হালকা কেঁপে ওঠে, আলতো করে সাঁঝ তার অধর ছুয়ে দেয় বেলার ঘাড় গলায় বেলার শ্বাস প্রশ্বাসের গতি দ্রুত বেড়ে যায় সাঁঝ বেলার অস্থিরতা অনুভব করে মাথা উঠিয়ে বেলাকে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে বেলার কপালে নিজের অধর ছুয়ে গভীর স্পর্শ করে। বেলাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে চেয়ার টেনে নিজে বসে বেলাকে টেনে নিজের কোলের উপরে বসিয়ে নেয় এক হাত দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে সামনে রাখা ল্যাপটপ টা নিজের দিকে টেনে নেয় দ্রুত পুরো ফুটেজ সিস্টেম থেকে কেবিনের ফুটেজ টা অন করে কিছুক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া মুহূর্ত প্লে করে দেয়, বেলা সাঁঝের মুখের দিকে তাকালে সাঁঝ বেলার অধরের টুপ আলতো করে চুমু বসিয়ে ল্যাপটপ দেখতে ইশারা করে। বেলা সাঁঝের কথা মতো সামনের দিকে তাকায় সাথে সাথে তার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে যায় চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।
বেলা কেবিনে আসার কিছুক্ষণ আগেই দিশা কেবিনে ঢোকে তবে কোনও কথা ছাড়াই সাঁঝের কাছে গিয়ে পিছন দিকে থেকে সাঁঝকে জড়িয়ে ধরে সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় তবে দিশা কিছুটা সরে গিয়েও আবারো আগ্রাসী হয়ে সাঁঝের ঠোঁটের উপর আক্রমণ করতে যায় আর সাথে সাথে দিশার গালে কষে থাপ্পড় মারে সাঁঝের এমন থাপ্পড় সহ্য করতে না পেরে দিশা ফ্লোরে পড়ে যায় আর বাকিটা তো বেলা নিজের চোখে দেখেছে।
বেলা চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে দেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে একভাবে, সাঁঝের দিকে তাকাতেই বেলার মাথায় আসে তার মনের কথাও কিভাবে বুঝে যায় এই লোকটা একটু আগেই সে ভাব ছিল কি এমন ঘটেছে আর সেটা বেলার কোনো কিছু বলা বা জিজ্ঞেস করার আগেই দেখিয়ে দিলো বেলা একভাবে তাকিয়ে থাকে সাঁঝের দিকে তার মধ্যে থাকা রাগ টা মুহূর্তেই হাওয়া হয়ে গেছে।
চলবে….?
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।
(❤️)