তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -৪০

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৪০.

বেলা আর সাঁঝের ভিতরে ঢুকে এক পাশে হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর ঠিক তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সামাদ সাহেব তিনি তার হাতের থেকে প্লেট গুলো পাশে দাঁড়ানো একজন সারভেন্ট এর হাতে দিয়ে বেলার দিকে এগিয়ে যায়। ওদের থেকে কিছু দূরে আগুন চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দোলা মির্জা আর দিশা। ওদের চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি ভষ্ম করে দেবে বেলাকে। সামাদ সাহেব সামনে আসতেই বেলা মাথা তুলে একবার তাকিয়ে আবারো পাশে দাঁড়ানো সাঁঝের দিকে দেখে ।

-“বেলা আমার ড্যাড মিস্টার সামাদ রওশন। আর এই বেলা আমার স্ত্রী। সাঁঝ তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-” আস্সালামু আলাইকুম বাপি বেলা সালাম দিয়ে বলে ওঠে।

পার্টিতে দেখা হয়েছে দু একবার তবে কথা হয়নি সারাটা সময়ে সাঁঝ তাকে ছোটো বাচ্চার মত হাত ধরে নিয়ে ঘুরেছে আর এখন কথা বলতে গিয়ে বেলার কিছুটা অদ্ভূত লাগছে। সামাদ সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

-” আমার ছেলের যে বিয়ে হয়ে গিয়েছে সেটাই আমি জানতাম না। তোমার মত এত মিষ্টি একটা মেয়েকে বিয়ে করে এতদিন দূরে রেখেছিলো আমাদের থেকে। সামাদ সাহেব মৃদু হেসে বলে ওঠে।

-” ড্যাড ওদের বিয়ের খবর আমরাও জানতাম না তোমার ছেলে পুরো চুপি চুপি বিয়ে করে রেখেছিলো। সারা পিছন থেকে এসে বলে ওঠে।

-” হুম তাইতো এখন দেখতে পাচ্ছি পাঁচ বছর হয়ে যেতেই বিয়ের খবর সবার সামনে নিয়ে এলো। সামাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠে।

সামাদ সাহেবের কথার মধ্যে স্পষ্ট হতাশার ছাপ লুকিয়ে আছে বেলা একবার তার পাশে দাঁড়ানো সাঁঝের দিকে তাকিয়ে দেখে সে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে তার দৃষ্টি ফোনের দিকে এমন মনে হচ্ছে যেনো এখানে কি কথা হচ্ছে সে কিছুই শোনেনি।

-“আসলে বাপি আপনি কষ্ট পাবেন না আমাদের বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেছিলো আর তারপরেই আমি বাইরে চলে গেছিলাম পড়াশোনার জন্যে আর তাছাড়া আমি তখনও প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি তাই বিয়েটাও পাবলিক করা যায়নি আর আমি নিজেও প্রতিষ্ঠিত হতে চাইছিলাম তাই আর কাউকে জানানো হয়নি। বেলা মৃদু স্বরে বলে ওঠে।

বেলার কথা শুনে সাঁঝ কোনা চোখে বেলার দিকে তাকায় সে স্পষ্ট বোঝে সম্পূর্ণ কথা গুলো বেলা বলছেনা তার করা অপমান আর ব্যবহার সব কিছুই এড়িয়ে গেছে তার বউ টা যে বয়সের সাথে অনেক বুঝদারও হয়েছে সে যতো রাগী আর অভিমান নিয়ে থাকুক না কেনো তার কথা কিছুই সামনে আসতে দেইনি সে পার্টিতেও আর এই এখনও।

-“যা কষ্ট ছিল তোমার মত মিষ্টি একটা মেয়ে পেয়ে সেটাও দূর হয়ে গেছে। সামাদ সাহেব মৃদু হেসে বলে ওঠেন।

-” আচ্ছা অনেক কথা হয়েছে আর সাথে অনেক রাতও হয়েছে তাই এখন আর কোনো কথা নয় এবার ড্যাড তুমি রুমে যাও আর বাকিরাও আর এই যে বেলা তুইও চল ।সারা কথা গুলো বলে সাঁঝের পাশের থেকে বেলাকে নিয়ে সেকেন্ডের মধ্যে উধাও।

সাঁঝ তার বোনের কারসাজি দেখে মনে মনে হেসে ফেলে। সামাদ সাহেব সাঁঝের কাঁধে হাত রেখে তিনিও রুমে চলে যান সাঁঝ দূরে দাঁড়ানো দুই শকুন অর্থাৎ দোলা মির্জা আর দিশা মির্জার দিকে তাকিয়ে সেও ওখান থেকে চলে যায়।

———–
বেলাকে টেনে সাঁঝের রুমে নিয়ে আসে সারা, বেলা রুমের মধ্যে ঢুকে দেখে বাকিরাও এখানে বেলা ওদের দেখে কিছুটা ভ্রু কুঁচকে নেয় সবাই মিলে যে কিছু ঘট পাকিয়েছে সেটা বুঝতে বাকি নেই আর বেলা এবার চোখ ঘুরিয়ে রুমের চারদিকে দেখতে থাকে পুরো রুমটা ফুল আর ক্যান্ডেল দিয়ে খুব সুন্দর করে ডেকরেট করেছে।

-“কি নতুন বউ কেমন হয়েছে সেটাতো বল? শান্তা খোঁচা দিয়ে বলে ওঠে।

-” এই শোন তোর সাথে আমার ভাইয়ার বিয়ে হলেও আগে তুই আমার বান্ধবী পরে ভাবি তাই আমি এইসব কোনো ভাবি টাবি ডাকতে পারবো না তোকে বলে দিলাম। সারা বলে ওঠে।

-“আমি কিন্তু তোমাকে মিষ্টি ভাবিই ডাকবো। জাকিয়া বলে ওঠে।

-“মিষ্টি কেনো শুনি? ওম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” আরে বেলা এমনিতেই খুব মিষ্টি দেখতে তাই ভাবীর সাথে মিষ্টি এড করে দিয়েছি সিম্পল। জাকিয়া বলে ওঠে।

-” দেখ তোদের জন্যে না বলতেই রুম সাজিয়ে দিয়েছি একটু তো তারিফ কর। নিশান বলে ওঠে।

-” এটা তোদের কাজ তাই রুম সাজিয়ে দিয়েছিস তাছাড়া আমিতো তোদের বলেনি আর না বলেছে সাঁঝ তোরা নিজেরা সাজিয়েছিস আর এমন ভাবে বলছিস যেনো এর জন্যে কোনো পাওনা নিবিনা, একটু পরেই তো তোদের আসল রূপ দেখা যাবে। বেলা বিছানায় বসে বলে ওঠে।

সারা পার্টিতে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে বেলার পা ধরে গেছে তাই ওদের তোয়াক্কা না করেই বেলা বিছানায় বসে পড়ে আর এদিকে বাকিরা ভ্রু কুঁচকে বেলার দিকে তাকিয়ে নিয়ে একে অপরের দিকে তাকায়। বেলা যে তাদের কাজের মেইন ব্যাপার ধরে ফেলেছে সেটা বুঝতে তাদেরও বাকি নেই। সারিফ ওদের সবার অবস্থা দেখে হেসে ফেলে কেমন মুখ লটকে দাঁড়িয়ে আছে সব কটা।

এরই মধ্যে সাঁঝের আসার আওয়াজ পেতেই সব কটা একবার বেলাকে দেখে নিয়ে দরজা গার্ড করে দাঁড়িয়ে পড়ে সাঁঝ ফোনে কথা বলতে বলতে আসছিল হঠাৎ করেই সামনে এমন ভূতের মতো সবাইকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখেই ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে পড়ে ফোন কেটে দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে দেখে নেয় একবার, সাঁঝকে নিজেদের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাতে দেখে সবাই মনে মনে বেশ ভয় পেয়ে যায় তবে তারপরেও দাড়িয়ে থাকে।

-“কি চাই সবাই এইভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-” রুমে ঢুকতে গেলে যে পাওনা দিতে হয় জানো না। সারা বলে ওঠে।

-“রুম আমার তো পাওনা কিসের জন্যে দেবো? আর তাছাড়াও কিসের পাওনা? সাঁঝ সবার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে ওঠে।

-” আমরা জানি তোমার রুম কিন্তু এখন তোমার রুমে তোমার বউ আছে তাইনা তাই তার কাছে যেতে গেলেতো আমাদের কিছু পাওনা দিতে হবে তাইনা। সারিফ বলে ওঠে।

সাঁঝ ওদের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তারপরেই পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে ওদের সামনে ধরে সারা কার্ডটা নিতে গেলে সাঁঝ চোখের ইশারায় আগে রুম থেকে সব কয়টা কে বেরিয়ে যেতে বলে সাথে সুড় সুড় করে সবাই বাইরে বেরিয়ে যায় সাঁঝ সারার হাতে কার্ড ধরিয়ে দিয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। বাইরে দাঁড়ানো বাকিরা দরজা বন্ধ হতে দেখেই বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে এতক্ষণ যেনো দম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিলো তারা।

————–

-“সাঁঝের সাথে বেলার কি করে বিয়ে হয়েছে আর কবে হলো? দোলা মির্জা বলে ওঠে।

-” মানে বিয়ে ওদের বিয়ে হয়েছে নাকি? ফোনের ওপারের ব্যাক্তি বলে ওঠে।

-“আজকে পার্টিতে নিজের বিয়ে অ্যানাউন্স করেছে সাঁঝ তাও আবার বেলার সাথে। দোলা মির্জা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে ওঠে।

-” বেলার সাথে সাঁঝের বিয়ে কিভাবে হতে পারে বেলাকেতো আমরা সরিয়ে দিয়েছিলাম তাহলে বেলা আবার আসবে কোথায় থেকে? ফোনের ওপারে ব্যাক্তি বলে ওঠে।

-“আমি কিছুই জানি নয় বেলাকে সরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তোমার ছিল তাহলে বেলা সাঁঝের জীবনে এলো কিভাবে? দোলা মির্জা রেগে বলে ওঠেন।

-” আরে আমি ম্যাডিকে তো বেলার জন্যে কাজে লাগিয়ে ছিলাম ম্যাডিই তো বললো বেলাকে নাকি সে নিজের শিকার বানিয়ে নিয়েছে। ফোনের ওপারে ব্যাক্তিও রেগে বলে ওঠে।

-” এই বেলাকে আমি কিছুতেই বাঁচিয়ে রাখবো না আমার এত বছরের সব প্ল্যানে পানি ঢেলে দিয়েছে ওকেতো এবার মরতেই হবে এবার আমিও দেখি আমার হাতে থেকে কিভাবে পালিয়ে বাঁচে। দোলা মির্জা রেগে বলে ওঠে।

চলবে….?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here