#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৯.
দূর আকাশে টিম টিম করে তারা জ্বলে আছে আর তার মাঝে অর্ধ চাঁদ মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে,চারিদিকে অন্ধকারে ঘিরে আছে দূরে বিল্ডিং গুলোর থেকে সামান্য পরিমাণ আলো দেখা যাচ্ছে। গার্ডেনের আলোয় চারিদিকে আলোকিত। বারান্দার পর্দা গুলো বাইরের মৃদু হাওয়ায় উড়ছে, বারান্দার কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে বেলা, মৃদু হাওয়ায় তার চুল গুলো মুখের উপরে খেলে বেড়াচ্ছে। তবে বেলার এদিকে কোনো লক্ষ নেই সে এক দৃষ্টিতে দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, এই মুহূর্তে বেলাকে দেখে মনে হচ্ছে সে কোনো গভীর ভাবনায় ডুবে আছে।
আসলেই তাই বেলা এখন সাঁঝের ভাবনার মাঝে ডুবে আছে। সে একমনে আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো মনে করছে কি থেকে কি হয়ে গেলো বেশ তো ছিল কেনো আবার ফিরে এসেছে তার জীবনে এটাই বুঝতে পারছেনা বেলা। কেনো সাঁঝ তাকে মায়াতে বেঁধে নিচ্ছে বেশ তো ছিলো তাহলে আর আজকে কৌশলে তার থেকে রেজিস্ট্রেশন ও করিয়ে নিলো কি চায় সাঁঝ? বেলা একে একে আজকের ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা মুহূর্ত ভাবছে সাঁঝের তার কাছে আসা সে না চাইতেও কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিলো সাঁঝের ওই চোখে তাকালে বেলা আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা আর সাঁঝের বলা শেষের কথা গুলো কি ছিলো? কি বোঝাতে চাইছিল তখন? না বেলা আর ভাবতে পারছেনা। সে যতো এইসব ভাববে ততোই জড়িয়ে যাবে কিন্তু বেলা সেটা চায়না আর কিছুতেই সে দুর্বল হতে চায় না আর কোনো ভাবেই সাঁঝের মায়ায় নিজেকে আবদ্ধ করতে চায়না কিছুতেই না। বেলা আর কিছুতেই তার পিছনে ফেলে আসা কোনো কিছুতেই জড়িত হতে চায়না সে এখন ভালো আছে খুব ভালো আর এই ভাবেই থাকবে। তারা শুধুমাত্র কাজের জন্যে একসাথে হয়েছে এর থেকে বেশি কিছু না। একসাথে কাজ করবে আবার নিজের নীড়ে ফিরে আসবে সাঁঝের থেকে দূরেই থাকবে তাহলেই আর কোনো ঝামেলা হবে না। বেলা নিজের চিন্তা ভাবনা কে সাইটে রেখে রুমে ঢুকে গ্লাস টেনে দেয়। তার এখন একটু ঘুম দরকার কালকে থেকে তাকে অনেক কিছুই সহ্য করতে হবে তার জন্যে তার ঘুম প্রয়োজন। বেলা আর কোনো দিকে না গিয়ে বিছানায় বডি ফেলে দেয়।
—————
-“দিশা ঠিক হয়ে দাঁড়াও! না না আরেকটু সাইট! পজ হ্যাঁ হ্যাঁ একদম ঠিক আছে। ফটোগ্রাফার একভাবে কমেন্ট দিয়ে যাচ্ছে।
-” আরে ইয়ার তুমি কি বিয়ে বাড়ি যাচ্ছো নাকি এত গয়না কেনো পরেছ? রাহি প্লিজ নেকলেসটা খোল ইয়ার। সিমি বলে ওঠে।
-“ওহ ইয়ার প্লিজ স্টপ তোমরা তোমাদের মুখ বন্ধ রাখো আমি জানি কি ভাবে কি করতে আর কিভাবে পোজ দিতে হয়। আমি এমনি এমনি আর এস.আর গ্রুপের মডেল হয়নি ঠিক আছে। আর তাছাড়া এই লুক এর সাথে এই নেকলেসটা ভালো যাচ্ছে তাই পরেছি একদম আমার মুখে মুখে কথা বলবে না। দিশা চিৎকার করে বলে ওঠে।
ফটোগ্রাফার আর ডিজাইনার একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেদের কাজ করতে থাকে আর মনে মনে দিশাকে গালি দিতে থাকে। দিশা নিজের মন মত শুট করে যাচ্ছে কারোর কোনো কথা কানে না নিয়ে।
-“এখানে কি হচ্ছে!
গম্ভীর স্বরে কথা কানে আসতে ফটোগ্রাফার আর সিমি পিছনে তাকিয়ে দেখে সাঁঝ দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত গুঁজে। দিশা সাঁঝ কে দেখতেই নিজের শুট ফেলে সাঁঝের দিকে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে যায় তবে দিশার জড়িয়ে ধরার আগেই সাঁঝ হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয় তবে দিশা কি থামার মেয়ে নাকি? জড়িয়ে ধরতে না পারলেও সাঁঝের কাছে ঘেঁষে দাঁড়ায়। সাঁঝ দিশার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে সিমি আর ফটোগ্রাফারের দিকে তাকায় দেখে তারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
-“কি হয়েছে? এখানে কি চলছে? সাঁঝ কঠিন কন্ঠে বলে ওঠে।
ফটোগ্রাফার আর সিমি কোনো কথা না বলে একবার দিশার দিকে তাকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে ফটোগ্রাফার সাঁঝের দিকে ক্যামেরা এগিয়ে দেয়। সাঁঝ ফটো চেক করার পর দিশার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় তবে দিশার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই সে এখন সাঁঝের একহাত জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
-“দিশা এটা কি ওয়েডিং শুট চলছে? তুমি এত হেবি জুয়েলারি কেনো পরেছো। আর তোমার এই ককটেল ড্রেসের জুয়েলারি কিভাবে যায়? সাঁঝ কঠিন কন্ঠে বলে ওঠে।
-” না মানে সাঁঝ এই ড্রেসের সাথে এই জুয়েলারি ভালোই মানিয়েছে তাহলে অসুবিধা কোথায়?
-“তুমি কি ডিজাইনার? তুমি ঠিক করবে কিসে তোমাকে ভালো লাগছে আর কিসে নয়? সাঁঝ তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।
-“সাঁঝ! দিশা কিছুটা নাকে কেঁদে বলে ওঠে।
-” সিমি চেঞ্জ করে দাও। সাঁঝ বলে ওঠে।
-” ওকে এস.আর। সিমি বলে ওঠে।
এদিকে বেলা ওম বেদ নিশান রুহি একসাথে এস.আর গ্রুপে ঢোকে। ফোর্থ ফ্লোরে আসতেই বেলা দেখতে তার থেকে কিছুটা সামনে সাঁঝের হাত ধরে দিশা দাঁড়িয়ে আছে। এটা দেখতেই বেলার পা কিছুক্ষণের জন্যে থমকে যায়। বেলার দাঁড়িয়ে যেতে দেখে ওম বেদ নিশান রুহি বেলার মুখের দিকে তাকায়,দেখে বেলা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে ওরা সবাই বেলার দৃষ্টি অনুসরন করে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় সাঁঝ দাঁড়িয়ে কথা বলছে কয়েকজনের সাথে। বেলা কিছুক্ষণের জন্যে দাঁড়িয়ে গেলেও আবার নিজেকে সামলে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। সাঁঝের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আকাশ বেলাকে আসতে দেখে নেয় সে গুটি গুটি পায়ে সাঁঝের দিকে এগিয়ে গিয়ে ফিসফিসয়ে ওঠে।
-“স্যার সামনে ম্যাডাম।
আকাশের কথা শুনে সাঁঝ সিমি ও ফটোগ্রাফারদের সাথে কথা বলা রেখে বেলার দিকে তাকায় দেখে বেলার মুখে ফুটে আছে তাচ্ছিল্য ভরা হাসি আর দৃষ্টি কঠিন। সাঁঝ বেলার এমন এক্সপ্রেশন দেখে নিজের দিকে দেখে তার এক হাত দিশা জড়িয়ে রেখে আছে। এবার বুঝতে পারে বেলার এমন এক্সপ্রেশনের কারণ কেনো বেলার মুখের এমন অবস্থা। সাঁঝের এবার নিজের উপরে রাগ উঠে যায়। কেনো সে আবালের মত দিশার হাত ধরতে দিয়েছে বুঝতে পারেনা। সে নিজেই মেয়েদের থেকে দূরে থাকে আর এই মেয়ে সব সময়ে তার কাছে চিপকে থাকে অসহ্য এই মেয়েকে সহ্য করা শুধুমাত্র তার কাজ হাসিল করার জন্যে এখনও এই মেয়ে কে সহ্য করে যাচ্ছে নাহলে একে এক থাপ্পড় মেরে সোজা করে দিতো। দিশার হাত নিজের হাতের থেকে সরিয়ে দিয়ে আকাশকে ওদের কেবিনে আসতে বলে বেলার চোখের দিকে তাকিয়ে নিজের কেবিনের দিকে চলে যায়।
-“ম্যাম চলুন আপনারা স্যার কেবিনে গেছে। আকাশ বলে ওঠে।
বেলা একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে কোনও কথা না বলে সাঁঝের কেবিনের দিকে চলে যায়। তবে এখানে ওম বেদ নিশান রুহি অবাক থেকে যায় হঠাৎ করে বেলার কি হলো সেটাই তারা বুঝতে পারেনা। বেলাতো একটু আগেও পর্যন্ত ঠিক ছিল তাহলে হঠাৎ কেনো গম্ভীর হয়ে গেলো? আর সাঁঝের দিকে এইভাবে তাকানোর মানে কি? তারা এতক্ষণ চুপচাপ বেলার দৃষ্টি অনুসরন করে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলো তবে তাদের কাছে কোনো কিছুই স্বাভাবিক বলে মনে হলোনা। এমন কি কারণ থাকতে পারে যে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে হাসি খুশি মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো? আর ওই মেয়েটা দিশার দিকেও বা কেনো ওমন কঠিন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিল? বেলা সামনে এগিয়ে গেলেই চারজন নিজেদের মধ্যে এই নিয়ে গবেষণা করতে থাকে তারা ছোটো থেকে বেলাকে চেনে তাই তার প্রত্যেকটা মুভমেন্ট তারা খুব ভালো করেই জানে তাই বেলা যে এখন কিছুটা রেগে আছে সেটাও বুঝতে পারছে তবে এই রাগের কারণটা তাদের জানা নেই।
চলবে…..?