#তোর আসক্ত❤
#পর্ব – ১৪
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
🍁
রাইসা রুমে এসে শোয়ে ফোন টা হাতে নেয়। সারা দিন একবারও এফবিতে আসেনি তাই আইডিটা লগইন করে।
আয়ান – রাইসা কী রাগ করে আছে কোনো কারনে?
আয়ানের মা – কই না তো।
রুপসা – ওর খাওয়া হয়ে গেছে তাই হয়তো উঠে চলে গেলো।
আয়ান – আমার তো মনে হচ্ছে রাগ করে আছে কোনো কারনে আমার সাথেও কথা বললো না।
আয়ানের মা – তুই ওতো কথা বলিস নি। কেমন দুলাভাই তুই?
আয়ান – ওকে ওকে কাল আসার সময় আমার শালিকার জন্য চকলেট নিয়ে আসবো নি। মেয়েদের তো এই একটা জিনিস প্রাণের চেয়েও প্রিয় (রুপসার দিকে তাকিয়ে)
রুপসা আয়ানের কথায় মুচকি হাসে।
এদিকে রাইসা নিজের রুমে একা একা থাকতে থাকতে বোরিং ফিল করছে। ভেবেছিলো রুপসার সাথে আড্ডা দিবে তা আর হলো কই।
বেচারির অপক্ষার অবসান ঘটিয়ে
কিছুক্ষণ পর রুপসা আসে।
রুপসা – কিরে ঘুমাস নি?
রাইসা – আমি এতো জলদি ঘুমাই না তুমি জানো না? নাকি বিয়ে হয়েছে বলে আমার সবই ভুলে গেলে (অভিমানী সুরে)
রুপসা – এ মা! এ আবার কেমন কথা?
রাইসা – এমন কথাই হুহহহ।
— আমিও কি জয়েন হতে পারি আপনাদেট আড্ডায়?
রুপসা পেছন ফিরে আয়ান কে দেখে মুচকি হাসে।
রুপসা – হ্যাঁ। আসুন না।
রাইসা – দুলাভাইয়ের সাথে তো আড়ি।
আয়ান – সে কি! কেনো শালিকা?
রাইসা – আপনি আমার সাথে এক বারও কথা বলেন নি। (মুখ ঘুরিয়ে)
আয়ান – সেই জন্যই তো এখন আড্ডা দিতে আসলাম।
রাইসা – ভাইয়া কাল আপুকে আর আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন প্লিজ।
আয়ান একবার নিজের চারপাশ টা দেখে নেয়।
আয়ান – ভাইয়া টা কে? (ভ্রু কুঁচকে)
রাইসা – আরেহহ আপনাকেই তো বললাম।
আয়ান – ও ওকে। বাট শালিকা কাল তো অফিসে অনেকটা চাপে থাকতে হবে। মনে হয় তোমাদের নিয়ে যেতে পারবো না।
তবে তোমরা যদি বলো উপায় বের করতেই পারি।
রাইসা – কী উপায়?
আয়ান – আমান নিয়ে যাক। যদি তোমাদের কোনো প্রবলেম না থাকে।
রাইসা – নাআআআ! ঐ ফাজিল টার স….
রাইসা কিছু বলার আগেই রুপসা রাইসার মুখ চেঁপে ধরে….
আয়ান ভ্রু কুঁচকে দু’জনের দিকে তাকায়।
আয়ান – কী হলো?
রুপসা – ক কই কিছু না তো!
আয়ান – ওকে না বলতে চাইলে বলো না।
আচ্ছা শালিকা এখন ঘুমাউ অনেক রাত হলো। কাল না হয় একটা উপায় বের করা যাবে তোমার ঘুরাঘুরি নিয়ে। কেমন?
রাইসা – ওকে৷ কিন্তু আমি তো চাইছিলাম আজকে আপুর সাথে থাকতে। (অসহায় ভাবে)
আয়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না।
আয়ান – আচ্ছা ঠিক আছে।
রাইসা আয়ানের কথা শুনে তার মুখের দিকে তাকায়। বেচারার মুখটা দেখার মতো হয়ছে।
রাইসা – না না থাক। আমি আবার কারো সাথে বেড শেয়ার করতে পারিনা। আমার ঘুমই হয়না।
আয়ান রাইসার কথা শুনে হাসি দেয়। রাইসা বুঝতে পারে আয়ানের খুশি হওয়ার কারন।
রুপসা চলে আসে। রুমে আসতেই আয়ান বলে…
আয়ান – রুপ…রাইসা ঐ সময় কী বলতে চাইছিলো?
রুপসা – ক কই… কিছুনা তো। আপনিও ওর কথায় কান দিলেন। ও তো এমনিই কতো কথা বলে।
আয়ান – নাহ। আমি বুঝতে পেরেছি কিছু একটা হয়েছে। তার জন্যই হয়তো রাইসা ডিনারের সময় না খেয়েই চলে গেলো।
রুপসা – আরেহহ ছাড়ুন না ওসব।
আয়ান রুপসার দুই বাহু ধরে নিজের দিকে ফিরায়…
আয়ান – বলো…
রুপসা উপায় না পেয়ে আয়ান কে সব বলে দেয়… রুপসার কথা শুনে আয়ান হাসতে হাসতে শেষ।
আয়ান – আমার কি মনে হই বলো তো… আমান বোধহয় আমার শালিকার প্রেমে পড়েছে।
রুপসা – কিহহ!
আয়ান – এতো অবাক হওয়ার কী আছে শুনি? আমার ভাইটা কি দেখতে কোনো দিক দিয়ে কম নাকি হ্যাঁ?
রুপসা – ধুর! কি সব বলছেন।
আয়ান – আমার কিন্তু কোনো আপত্তি নেই।
রুপসা – কিসে? (ভ্রু কুঁচকে)
আয়ান – আমার শালিকা কে ভাইয়ের বউ বানাতে। (চোখ মেরে)
রুপসা – আমার ইতো ঠিক নেই কোনো। যেকোনো সময় এ বাড়ি ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে হবে আবার আমার বোন!
রুপসার কথার মানে আয়ান বুঝতে পারে। রুপসা চলে যেতে নিলে আয়ান রুপসার হাত টা চেঁপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
আয়ান – আগের কথা কি ভুলা যায় না?
রুপসা আয়ানের কথায় অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকায়…
রুপসা – ম মানে?
আয়ান – মানে আমার বাবা মা আমার জন্য বেস্ট কাউকেই বেছে নিয়েছিলো। আমিই হয়তো চিনতে পারি নি। কিন্তু এখন আর কোনো দু টানা নেই।
ভুল মানুষ কে আমার জীবনসঙ্গী করি নি। এটা ঠিক… সবাই এক না।
আয়ানের কথা শুনে রুপসার চোখে পানি চলে আসে। একদৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়ান রুপসার দু গালে হাত রেখে কপালে চুমু দেয়।
আয়ান – চলো ঘুমাবে।
আয়ান রুপসাকে ছাড়তে চাইলেই রুপসা আচমকা আয়ানকে জড়িয়ে ধরে।
আয়ানও মুচকি হেসে রুপসাকে জড়িয়ে ধরে।
সকালে…
আয়ানের অফিসের জন্য রেডি হয়ে আমানের রুমে যায়…
আয়ান – আমান… ঘুমাচ্ছিস?
আমান – না ভাইয়া আসো।
আয়ান – আজ ফ্রি আছিস।
আমান – হ্যাঁ। আমি তো অলটাইম ফ্রি। কেনো কোনো কাজ আছে?
আয়ান – না তেমন কিছু না। আসলে আমি অফিসে কিছুদিন যাবৎ চাপে আছি। কাল রাইসা বললো ও আর রুপসাকে নিয়ে ঘুরতে যে….
আমান – ভাইয়া আমিও যাবো প্লিজ….
আয়ান বাকিটা বলার আগেই আমান হুট করে বলে বসে।
আয়ান ভ্রু কুঁচকে আমানের দিকে তাকায়৷ আমান কিছুটা আমতা আমতা করে বলে…
আমান – ইয়ে মানে… অনেকদিন তো কোথাও যাওয়া হয়নি তাই আরকি।
আয়ান – হ্যাঁ যাবি। ইভেন তোকেই নিয়ে যেতে হবে। আমি পারবো না অফিসে কাজ আছে।
আয়ানের কথা শুনে আমান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এ তো মেঘ না চাইতেই জল!
আমান – ওকে ভাইয়া আমি রাজি!
আয়ান মুচকি হেসে চলে যায়।
বিকেলে…
রাইসা একা একাই ছাঁদে চলে আসছে। আয়ানদের ছাঁদ টাও বেশ সুন্দর। রাইসা ছাদের একপাশে গিয়ে গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে…
— এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে? যাবে না নাকি?
হটাৎ কারো কন্ঠ শুনে রাইসা পেছন ফিরে তাকায়…
রাইসা – আপনি?
আমান – জ্বী ম্যাম।
রাইসা – আপনি কী আমাকে ফলো করা শুরু করলেন নাকি? আপনি কিভাবে জানলেন আমি ছাঁদে?
আমান – বলতে পারে ফলো করি। এবার যাও রেডি হয়ে যাও।
রাইসা – কেনো?
আমান – ঘুরতে যাবে না?
রাইসা – হ্যাঁ। ভাইয়ার সাথে যাবো। আপনার সাথে না হুহহ।
আমান – ভাইয়ার কাজ আছে বুঝলেন তাই আমার সাথেই চলুন।
রাইসা – কখনো না।
আমান – বেশি কথা না বলে গিয়ে রেডি হয়ে নাও। (কিছুটা রেগে)
আমান চলে যায়। রাইসা তখনো দাড়িয়ে থেকে আমানের বলা কথা গুলো ভাবছে। আচমকাই রাইসার মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠে।
নিচে গিয়ে রাইসা রেডি হয়ে রুপসার রুমে আসে।
রাইসা – আপু…. তুমি রেডি তো?
রুপসা – হ্যা। আয়।
রাইসা – ওকে তাহলে চলো।
রুপসা – হুম।
আমান ওরা দুইবোন কে নিয়ে ঘুরাঘুরি করে একেবারে ডিনার করে ফিরবে বলে ঠিক করে রেখেছে।
আমান বার বার মুচকি হেসে রাইসার দিকে তাকায় যা রুপসার চোখ এড়ায়নি।
আমান – রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার করে যাবো। আমি বরং ভাইয়াকে ফোন করে বলি চলে আসতে কি বলো ভাবি?
রুপসা – ঠিক আছে দেখো উনার কাজ হলো কিনা?
আমান – হুম ফোন করছি।
আমান আয়ান কে ফোন করে আয়ান কিছুক্ষন পর আসবে বলে। রুপসা, রাইসা আর আমান রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে বসে।
আমান – ম্যাম.. কি অর্ডার করবেন? (রাইসা কে উদ্দেশ্য করে)
রুপসা আমানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়…
রুপসা – আমরা কি ভেসে ভেসে আসলাম?
রাইসা এমন অবস্থায় পরে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে। আমান কিছু না বলে নিচে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
এর মধ্যেই আয়ান চলে আসে।
আয়ান – সরি ফর লেট। তোমাদের অনেক অপেক্ষা করতে হলো।
আমান – এইতো ভাইয়া চলে আসছে। লেট না ভাইয়া মাত্রই তো এলাম।
আয়ান – তো অর্ডার করো নি কিছু?
আমান – না ভাইয়া। তুমি করো।
রাইসা – আমি কিছুই খাবো না। শুধু আইসক্রিম।
আমান – হোয়াট? ডিনারে কেউ আইসক্রিম খায়?
রাইসা – সব সময় খাইনা। আজই শুধু।
আমান – এ কেমন কথা?
আয়ান – বাবাহ! তোর তো দেখছি অনেক চিন্তা।
আমান আয়ানের কথা শুনে চুপ করে যায়।
ভাইয়া কি ভাববে এখন ইশশশ!
ডিনার শেষে সবাই একসাথে বাড়ি ফিরে।
আয়ানের মা – এই আসার সময় হলো তোদের?
আয়ান – থাক না মা একদিন ই তো। আর ডিনার করে ফিরেছি তাই লেট হলো।
আয়ানের মা – আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে নে।
আয়ান – ওকে মা। তোমরা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
আয়ানের মা – আচ্ছা ঠিক আছে যা তোরা।
আয়ান রুপসা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে।
সকালে…
সবাই ফ্রেশ হয়ে এসে ব্রেকফাস্ট করতে বসে। আমান ও আসে।
আয়ান খেয়াল করে আমানের কিছু একটা হয়েছে। কেমন চুপ মেরে আছে বেচারা।
আয়ান – আমান… কিছু হয়েছে কি? মন খারাপ তোর।
আমান – ভাইয়া আসলে আমার আবার চলে যেতে হবে। একটা কোর্স বাকি আছে ৬ মাসের।
আয়ান – তুই তো আগে বলিস নি।
আমান – আসলে ভাইয়া কাল রাতে আমার সাথের একজন ইনর্ফম করলো তাই।
আয়ান – কখন যেতে হবে?
আমান – সামনের সপ্তাহে।
আয়ান আর কিছু বলে না। তবে আমান মনমরা হয়ে আছে সেটা বুঝার বাকি নেই আয়ানের।
আমান একবার রাইসার দিকে তাকায়। আমানের খবর টায় রাইসা ও যে খুশি হয়নি তা তার মুখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে!
চলবে…