#তোর_শহরে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-৬
তানিমের বাহুতে অনুকে সযত্নে আগলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তানিম। তন্ময় আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানিমের দিকে। তন্ময় কিছু বলবে তার আগেই তানিম বললো, তোর সাথে আমি পরে কথা বলছি আগে এই মেয়েটাকে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। তানিম ড্রাইভার নিয়ে আসেনি। নিজেই ড্রাইভ করে এসেছে। তানিম গাড়ির চাবিটা তন্ময়ের হাতে দিয়ে বলে, যা গাড়ীটা নিয়ে আয়। আমি ওকে আগলে দাঁড়াই।
তন্ময়ের ভীষণ রাগ হচ্ছে ইচ্ছে করছে অনুকে কসিয়ে এক থাপ্পড় দিতে। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিয়ে নিজের রাগ সংবরণ করছে । তানিমের জায়গায় অন্য কেউ হলে এখন হয়তো তন্ময় তাকে ভস্ম করে দিত।কিছু না বলে, তন্ময় গাড়ী আনতে চলে গেলো।
তানিম এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে অনুর মুখশ্রীর পাণে। ঘন কালো পাপড়ি যুক্ত চোখ দুটো বন্ধ। কি মায়াবী চেহারা। এক হাতে অনুকে আগলে নিয়ে অপর হাতে অনুর এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিলো।
তন্ময় গাড়ী নিয়ে আসতেই তানিম অনুকে গাড়ীতে নিয়ে বসালো নিজে অনুর পাশে বসবে তার আগেই অপর পাশ দিয়ে তন্ময় এসে অনুর মাথা তার কাঁধে নিয়ে বসলো।
অজানা কারণেই তানিমের বুকে চিন চিন ব্যাথা অনুভব হলে। মূহুর্তে তানিমের চেহারা কালো মেঘে ছেয়ে গেলো। ড্রাইভিং সিটে বসে লুকিং গ্লাসে বার কয়েক লক্ষ্য করলো অনুর দিকে। দ্রুত গতিতে গাড়ী চালিয়ে কাছেই গ্রীন ডেলটা হসপিটালে গেলো।
মাহি কখন থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে অনুর অপেক্ষায়। এখনো আসছে না দেখে বেশ চিন্তিত মাহি। দরিদ্র ঘরের মেয় মাহি বাবা নেই ভাইয়ের টাকায় চলতে হয়।মাহি আর অনুর বাসা একি গ্রামে। অনেক সময় দাঁড়িয়ে থেকে মাহি তিন তলায় বাড়িওয়ালাদের বাসায় গেলো। কলিং বেল বাজাতেই সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দিলে। ভিতরে ঢুকে আশেপাশে মিফতাকে দেখতে না পেয়ে সার্ভেন্ট কে জিজ্ঞেস করলে।
সার্ভেন্ট বললো আপনি বসুন আমি ডেকে নিয়ে আসছি!
মিফতা এসে বলে,আরে মাহি তুমি! কোন দরকার ছিলো বুঝি!
– ভাবি সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো এখনো অনুর কোন খোঁজ নেই।
– ওহহ এই কথা আমি এখনি ইরা আন্টিকে কল করে জিজ্ঞেস করছি।
ইরার ফোন বেজেই চলেছে, ইরা ফোন রিসিভ করে বলে,হ্যালো মিফতা।
-আসসালামু আলাইকুম, আন্টি।
– জ্বি মা বলো।
– অনাহিতা আপনার বাসায় পড়াতে গেলো এখনো আসলো না। ও কি এখনো পড়াচ্ছে!
– ইরা বেগম বললেন, আজকে বাসায় একটু ঘরোয়া অনুষ্ঠান আছে তাই মেয়েটাকে যেতে দেইনি!
– ও তো রাস্তা ঠিক মতো চেনেনা। রাতে তাহলে কি ভাবে আসবে?
– তুমি চিন্তা করো না মিফতা, আমি ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়ে দেবো। ঠিক আছে এখন রাখি পরে কথা হবে।
ফোন রেখে ইরা বেগম বললেন, ভাবি মিথ্যে তো বলে দিলাম।যদি মেয়াটা সুস্থ না হয় তাহলে?
-দোয়া কর যাতে সুস্থ হয়ে যায়।
– সেটাই তো চাইছি। আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি ভাবি আজ আনহা, আয়ানের কঠিন বিচার হতে হবে! দিন দিন সাহস বেড়েই চলেছে। এখন যদি এদের শাসন করে ঠিক না করি!বড় হয়ে ডা*কা*ত হবে।
– ওদেরকে শাসন নয় বুঝিয়ে বলতে হবে।কারণ বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলা যাবে না। বড়দের গায়ে হাত তোলা যায় বচ্চাদের নয়। তোর কিছু করতে হবে না আমি বুঝিয়ে বলবো।
– মেয়েটার জন্য চিন্তা হচ্ছে! কি না কি ভাবছে মেয়েটা কে জানে।
আয়ান এসে বলে, ছোট আম্মু জুস খাবো।
ইরা বেগমের ইচ্ছে করছে ঠাসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিতে আয়ানের গালে। তবে সায়লা বেগমের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সংযত করে বলে যাও আনহাকে ডেকে নিয়ে আসো। আমি মিল্ক সেক আর ফল নিয়ে আসছি।
আজ আর আয়ান বায়না করলো না তার জুসই চাই।
চুপচাপ বললো জ্বি ছোট আম্মু আমি ডেকে নিয়ে আসছি।
সায়লা বেগম, ইরা বেগমকে বললো,তোকে কোনদিন
নিজের ঝা মনে হয়নি ইরা। মনে হয় তুই আমার ছোট বোন।জীবনে তোর মতো ছোট বোন পেয়েছি এতো আমি ভিষণ খুশি।
– তোমাকেও আমার বড় বোন মনে হয়। তুমি প্রথম থেকেই আমাকে এতো ভালোবাসা দিয়েছো যে কোনদিন তোমাকে হিংসে করার কথা মনে আসতেই দাওনি। নিজের কথা ভাবার আগে আমার কথা ভেবেছো। আমার জীবনটা এতো গুছিয়ে দেওয়ার জন্য তোমার কাছে কৃতজ্ঞ ভাবি।
– কিরে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পর করে দিচ্ছিস। তোর আর আমার মাঝে ফর্মালিটির কোন জায়গা নেই! তোর আর আমার মাঝে আমার, তোমার বলতে কিছু নেই! যা আছে সব আমাদের। এবার তুই কিচেনে যা আমি সারাকে বলি, আয়মানের জন্য ওর বিয়ের কথা আগে বাড়াতে চাই।
– ঠিক বলেছো ভাবি, তোমাকেই বোঝাতে হবে আমার কথা তো আর শুনবে না। এক কাজ করো মেয়েটাও তুমি নিয়ে যাও।
– তোর বলার আগেই মেয়েটা আমার। এবার দেখি মেয়ে রাজী হয় নাকি!
সারা,ভিষণ পড়ুয়া মেয়ে, দুনিয়ার সব একদিকে তার পড়ালেখা একদিকে। এখন বসে বসে এ্যাসাইনমেন্ট করছে।
সায়লা বেগম সারার রুমে এসে বলে, কি করছে আমার লক্ষী আম্মুটা।
– লেখা বন্ধ করে সারা বলে, বড় আম্মু তুমি! আসো বসো। সায়লা বেগম সারার পাশে বসে বলে, আমার মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে। আজ বাদে কাল মেয়েটাকে অন্যের বাড়িতে পাঠাতে হবে।
সারা সায়লা বেগমের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,বড় আম্মু তোমরা এতো তাড়াতাড়ি আমাকে পর করে দিতে চাইছো?
– পর করবো কেনো মা,তোকে আরো কয়েকজন ভালোবাসার মানুষ ঠিক করে দিতে চাইছি। একজন সাথী ঠিক করে দিতে চাইছি যে সব সময় তোর পাশে থাকবে।
– আমার, তোমরা আছো আর কাউকে লাগবে না। এসব বিয়ে টিয়ে আমি করবো না।
– সে কি কথা বিয়ে তো করতেই হবে। একটা মেয়ের কত স্বপ্ন থাকে বিয়ে নিয়ে । হ্যাঁরে তোর নিজের কোন পছন্দ আছে?
– কি যে বলো বড় আম্মু আমার আবার পছন্দ! তবে বর্তমানে আমার একটাই পছন্দ সেটা হলো আমার পড়া লেখা আপাতত তার সাথে রিলেশনে আছি। তুমি বরং বিয়েটা তার সাথেই দিয়ে দাও।
– আমি বলছিলাম কি মিফতার দেবর আয়মানকে আমাদের মেয়ের জামাই বানিয়ে দাও।
– কে মানা করছে বড় আম্মু আমাদের আনহাকে বিয়ে দিয়ে দাও।
– দূর পাজি মেয়ে। সে তো অনেক বড় তাই তোমাকে দিয়ে ইচ্ছেটা পূর্ণ করতে চাইছি!
– আম্মু প্লিজ আমি এখন বিয়ে করতে চাইছি না। পড়াটা শেষ করতে দাও! তারপর ভেবে দেখছি।
– তারমানে এখন সিরিয়াসলি মানা করছো।
– হুম। সায়লা বেগম সারাকে ধরে বললো,আজকে চিন্তা করে আগামীকাল বলো।আগামীকাল তোমার কথাই শেষ কথা।
অনুকে যে ডাক্টার দেখছেন তার নাম মেঘলা মাহমুদ।
মেঘলা বললো, আপনারা পেশেন্টের কি হন!
তন্ময়, তানিমের দিকে তাকিয়ে আছে, তানিম তন্ময়ের দিকে।
তন্ময় ওয়াইফ বলবে, তার আগেই তানিম বলে কাজিন।
মেঘলা বললো,ভাগ্য ভালো ঠিক সময় ওনার চোখে পানি দেয়া হয়েছে। তবে এরকম যেনো আর না হয়। এই ঔষধ গুলো ঠিক মতো খাওয়াবেন। আর এই ড্রপটা চোখে দেবেন। এখন দিনে চারবার। আর দু’দিন পর থেকে একবার। আর হ্যাঁ পেশেন্ট শারীরিক ভাবে দূর্বল তাই তাকে হেলদি খাবার খাওয়াবেন।
ডাক্টর সামনের দিকে তাকিয়ে প্রেসক্রিপশন দেয়ার সময় বললো,তানিম তুমি!
– আরে মেঘা তুমি! অবশেষে ডক্টর হয়েছো?
– হুম, তোমার কি অবস্থা।
– এইতো নিজেদের ব্যবসা সামলাচ্ছি।
– তা পেশেন্ট সত্যি তোমার কাজিন নাকি ওয়াইফ।ছাত্র জীবনের মতো লজ্জা পেয়ে বউকে কাজিন বলছো।
– না তেমন কিছু না। এখনো বিয়ে করিনি।
– তোমার পাশের ছেলেটা কে? দেখে মনে হচ্ছে কেউ থাকে বেঁধে বেধম পি*ঠি*য়ে*ছে বলেই হেসে ফেললো।
তানিম বললো, আমার ছোট ভাই তন্ময়। তানিম তন্ময়কে বললো,তন্ময় এ হচ্ছে মেঘলা আমার কলেজ ফ্রেন্ড।
তন্ময়ের চেহারায় বিরক্তির চাপ। তবুও কৃত্রিম হেসে বললো হ্যায়।
– মেঘা বললো হ্যালো। কেমন আছেন?
– তন্ময় রুখ গলায় বললো, আমরা এখানে রুগী নিয়ে এসেছি সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে নয়! বলেই বেরিয়ে গেলো।
তানিম বললো কিছু মনে করনা ও একটু একরোখা স্বাভাবের।
– না কিছু মনে করি নি। তুমি তো জানো এসব মনে টনে আমি খুব কম করি। আচ্ছা তানিম তুমি দিন দিন হ্যান্ডসাম হয়ে যাচ্ছ। এর রহস্য কি?
– তুমিও আগের চেয়ে সুন্দরী হয়েছো। এখনো কি সিঙ্গেল?
– হ্যাঁ সিঙ্গেল আছি তোমাদের মতো হ্যান্ডসাম খুঁজে পাচ্ছি না তো তাই। এই তোমার ভাই তোমার কত বছরের ছোট?
– এইতো তিন বছরের। কেনো বলো তো।
– না এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
– আচ্ছা আমরা অনাহিতাকে বাসায় কখন নিয়ে যেতে পারবো।
-এই তো স্যালাইন শেষ হলেই নিয়ে যেতে পারবে।
– ধন্যবাদ মেঘা।
– ধন্যবাদ না দিয়ে ফোন নাম্বার দাও।
তানিম নাম্বার বলবে তার আগেই কারো চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেলো।
#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
আর নায়ক তো সেই হবে যে অনুর জামাই হবে। তাই বিয়ে পর্যন্ত ওয়েট করুন 🤭
হ্যাপি রিডিং 🥰