#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ০৫
অর্নীল আর সিয়া একমনে একে ওপরের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনেই যেনো বর্তমানে কোন এক ঘোরের মাঝে রয়েছে। দুজনেই চুপ, কোন কথা নেই। এভাবেই বেশ সময় চলে যায়। কিন্তু অর্নীল যখন খেয়াল করলো যে সিয়া কিছুই বলছে না তখন অর্নীল নিজেই বলে ওঠে…..
অর্নীল;; সিয়াজান!!
সিয়া;; _________________
অর্নীল;; সিয়া!
এবার অর্নীল একটু গলা পরিষ্কার করে স্পষ্ট ভাবে ডাক দেয়। সিয়ার ধ্যান ভেঙে যায়। সিয়া বারবার চোখের পলক ফেলছে। তড়িঘড়ি করে সে একবার অর্নীলের দিকে আরেক বার তার হাতের দিকে তাকায়। যে হাত গুলো অর্নীলের হাতের ভাজে আবদ্ধ। সিয়া মূহুর্তেই ফট করে নিজের হাত দুটো সরিয়ে ফেলে। সিয়া বড়ো বড়ো চোখ করে অর্নীলের দিকে তাকিয়ে কয়েক শুকনো ঢোক গিলে। তারপর কোনরকম কোন কথা না বলে সেখান থেকে দ্রুত পায়ে এসে পরতে নিলে অর্নীল সিয়ার হাত পেছন থেকে ধরে ফেলে।
অর্নীল;; সিয়া প্লিজ এভাবে কিছু না বলে যেও না।
সিয়া;; ___________________
অর্নীল;; সিয়া!
সিয়া;; হাত ছাড়ুন।
অর্নীল;; স…..
সিয়া;; অর্নীল প্লিজ হাত ছাড়ুন।
এবার অর্নীল সিয়ার হাত ধরে নিজের দিকে দেয় এক হেচকা টান, এতে সিয়া হকচকিয়ে একদম অর্নীলের সামনে এসে পরে। অর্নীল কপাল কুচকে সিয়া কে বলে ওঠে……
অর্নীল;; কথা কি কানে যায় না! কিছু বলছি।
সিয়া এবার অর্নীলের হাত ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।
সিয়া;; কি বলবো আমি। অর্নীল আপনি পাগল হয়ে গেছেন? কি বলছেন কিছু কি খেয়াল আছে আপনার। নাকি উল্টা-পাল্টা কিছু খেয়েছেন। কোথায় আমি আর কোথায় আপনি। আর আমাদের দেখা হয়েছে পুরো পুরি একদিনও হয় নি। আর এখনই কিনা ভালোবাসি। ভালোবাসা কোন ফাজলামি না ওকে। যে বললাম আর হয়ে গেলো। হয়তো আপনি কনফিউজড আছেন বা কিছুক্ষণের ভালোলাগা মাত্র আমি আপনার এর থেকে বেশি কিছুই না। আরে আ……..
অর্নীল;; শেষ? হয়েছে? নাকি আরো আছে! ব্লা ব্লা ব্লা। হয়েছে জ্ঞান দেওয়া? আমি জানতাম এগুলোই বলবে তুমি এর জন্য আগে থেকেই ধারণা কিছুটা ছিলো এন্ড লুক আমি ঠিক ধরেছি। দেখো সিয়া ছোট বাচ্চা তো নই আমি যে এগুলো বলে আমাকে বুঝাতে হবে। একদিন হোক বা এক হাজার বছর আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি। আর রইলো এক দিনের কথা তো ভালোবাসা হওয়ার জন্য একদিন অনেক বেশি,, এক মিনিটেই হয়ে যায়। এমন ভাবে আচড় কেটেছো তুমি যে এখন তোমার পরে কাউকে চিন্তাও করতে পারবো না।
সিয়া;; আপনার মাথায় সমস্যা আছে।
এই বলেই সিয়া সেখান থেকে রেগে চলে আসতে ধরে তবে অর্নীল শয়তানি করে নিজের পা টা সিয়ার সামনে এগিয়ে দিয়ে থাকে। অর্নীলের পায়ে সিয়ার পা বেধে পরে যেতে ধরলে অর্নীল সিয়াকে ধরে ফেলে। আচমকা এমন হওয়াতে অর্নীল সোজা নিজের হাত টা সিয়ার পেটের মাঝ বরাবর রাখে। হাত টা আপনা আপনিই সিয়াকে ধরে ফেলে। কেননা সিয়া একদম উপুড় হয়ে পরে যেতে ধরেছিলো। সিয়া তার দুই হাত দিয়ে অর্নীলের পরনের শার্ট টা খামছে ধরে ফেলে। আর অর্নীলের মুখে ঝুলছে শয়তানি হাসি।
অর্নীল;; আগে ঠিক ভাবে হাটতে তো শিখো সিয়াজান। দেখলে জীবনে চলার পথে সবসময় আমাকে লাগবে তোমার।
সিয়া;; একদম লাগবে না যদি আপনি আপনার পা টাকে সামলিয়ে রাখেন তো!
অর্নীল;; আমি রাখবো না।
সিয়া আর কথা না বাড়িয়ে নিচে নিজের রুমে চলে আসে৷ এসেই দেখে আদিবা বসে বসে খাচ্ছে। তা দেখে তো সিয়ার রাগ উঠে পরে। সিয়া গিয়ে সোজা আদিবার মাথায় এক গাট্টা মারে।
আদিবা;; আহহহহ, মারোস ক্যা?
সিয়া;; এই তুই খাইতাছোস হারামি, তরে না দেইক্ষা গেলাম তুই ঘুমাস!
আদিবা;; ঘুম ভাইঙা গেছে,, ভাঙতেই দেখি খিদা লাগছে তাই বইসা পরছি বিরিয়ানি খাইতে।
সিয়া;; আমারে প্লেট দে দেহি।
সিয়া এক প্রকার খামছা দিয়েই আদিবার হাত থেকে বিরিয়ানির প্লেট টা নিয়ে নেয়। এতে আদিবা চিল্লিয়ে উঠে। তবে চিল্লানি দেওয়ার সাথে সাথে সিয়া চামচে কিছুটা বিরিয়ানি তুলে আদিবার মুখে পুড়ে দেয়। আদিবা চুপ। সিয়া দুই পা বিছানার ওপর তুলে ভাজ করে বসে বসে খেতে লাগে।
আদিবা;; আচ্ছা তুই বাইরে থেকে আসলি যে কোথায় গিয়েছিলি?
সিয়া;; ছাদে।
আদিবা;; এতো রাতে?
সিয়া;; হ্যাঁ সাদা বিড়ালের সাথে প্রেম করতে।
আদিবা;; কি?
সিয়া;; এই তর না বিয়া, যা কাম কর এতো কথা কস ক্যা।
তখনই তাদের রুমে সিয়ার মা দোলা আসে।
দোলা;; কিরে কবুতরের জোড়া কি করিস?
সিয়া;; এখন আর কবুতরের জোড়া বলা লাগবে না। ১ দিন পরেই এক কবুতর শশুড় বাড়ি।
আদিবা;; সিয়া 😒
সিয়া;; হাহাহাহা।
দোলা;; আচ্ছা যে কারণে আসা সবাই নিচে চল। কাজ আছে। মানে তোরা এখানে একা একা বসে থেকে আর কি করবি চল নিচে চল। আর পোলাপান রা সবাই সেখানে বসে বসে কি যেনো একটা গেইম খেলবে নাকি তাই তোদের ডাকছে চল।
সিয়া;; চলো।
সিয়া আর আদিবা দোলার সাথে চলে যায়। তারা নিচে যেতেই দেখে সিয়া আর আদিবার বাকি সব কাজিন রা আর ফ্রেন্ডরা মিলে গোল হয়ে বসে আছে। তাদের মাঝ থেকে একজন সিয়া কে দেখেই টেনে নিয়ে আসে। সেই সময়ে অর্নীলও নিজের শার্টের হাত ফোল্ড করতে করতে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো আর তখনই দোলার নজরে পরে।
দোলা;; আরে আরে অর্নীল না!
অর্নীল;; জ্বি আন্টি, কেমন আছেন?
দোলা;; এইতো বাবা ভালো। তা তুমি এখানে যে আদিবা কে চিনো?
অর্নীল;; জ্বি আসলে…
দোলা;; ওহহ আদিবা তো আমার দেবরের মেয়ে হয়। তা অনেক ভালোই হয়েছে এসেছো। এখানে কি করছো একা একা আরে ওখানে সবার সাথে যাও।
অর্নীল কে বাকিরা দেখতেই তাকেও এনে বসিয়ে দেয়। সিয়া এতোক্ষন হেসে হেসে কথা বলছিলো কিন্তু নিজের সামনে তাকিয়ে দেখে অর্নীল বসে আছে তা দেখেই সিয়ার হাওয়া ফুস। সে একদম গুটিসুটি মেরে বসে পরে। সবাই গোল হয়ে বসে আছে, তাদের একদম মাঝখানে নিভু নিভু ভাবে আগুন জ্বলছে। সিয়া একদিকে আর অর্নীলই একদিকে অর্থাৎ সামনা সামনি। তারা ট্রুথ আর ডেয়ার খেলছে। একটা কাচের গোল আকারের পাত্রে বেশ কিছু ছোট ছোট চিরকুট রাখা আছে আর তাতে সবারই নাম লিখা আছে। একজন চিরকুট নিবে তাতে যার নাম উঠবে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে যে ট্রুথ নিবে নাকি ডেয়ার। এভাবেই সবার ভাগ্যেই এক এক করে পরছে। আদিবার এক ফ্রেন্ডের ভাগ্যে পরে, ওস্তাদি দেখিয়ে উনি নিয়েছিলেন ডেয়ার৷ তো তাকে দেওয়া হয়েছে যে সেভেন আপ খেয়ে তাকে মাতলামো করতে হবে। বাধ্য হয়ে সে তাই করে৷ সবার সে কি হাসি। তারপর পরে আদিবার ভাগ্যে। আদিবাও ডেয়ার নেয়। আর আদিবা কে দেওয়া হয় সবার জন্য কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আসা। বউ হয়ে কাজ করবে কিন্তু উপায় নেই। আদিবা তাই করে।এরপর আদিবার আরো একটা কাজিনের ভাগ্যে পরে। সে ট্রুথ নেই। তাকে তার জীবনের এক চরম সত্য বলতে বলে। আর সত্য টা ছিলো সে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত বিছানাতে হিসু করতো। সবাই হাসতে হাসতে লুটপাট,, দেখতে দেখতেই এক সময় অর্নীলের টার্ন আসে। সবাই তাতে কিছুটা চিল্লিয়ে ওঠে। অর্নীল ইচ্ছে করে ডেয়ার নেয়। আর অর্নীল কে ডেয়ার দেওয়া হয় তাকে সবার মাঝে গান গাইতে হবে। এটা শুনেই অর্নীল কিছুটা অবাক হয়। এখন গান! অর্নীল কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিবা গিটার নিয়ে এসে অর্নীলের হাতে ধরিয়ে দেয়।
আদিবা;; আরে অর্নীল ভাইয়া শুরু করুন তো জলদি।
অর্নীল;; ওকে।
অর্নীল এক নজর সিয়ার দিকে তাকায় আর সিয়া নিজের চোখ নামিয়ে ফেলে। গিটারে প্রথমে কয়েকটা টুংটাং শব্দ তুলে তারপর অর্নীল ছাড়া গলায় গান ধরে।
~~তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম
কি দোষ দিবি তাতে
বন্ধু তোরে খুঁজে বেড়াই
সকাল_দুপুর_রাতে**
“তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম
কি দোষ দিবি তাতে
বন্ধু তোরে খুঁজে বেড়াই
সকাল_দুপুর_রাতে•••
`~আগুন জ্বেলেও পুড়লাম আমি, দিলাম তাতে ঝাপ
তোর_আমার প্রেম ছিলো রে বন্ধু, ছিলো পুরোটাই পাপ
`~আগুন জ্বেলেও পুড়লাম আমি, দিলাম তাতে ঝাপ
তোর_আমার প্রেম ছিলো রে বন্ধু, ছিলো পুরোটাই পাপ
~~তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম
কি দোষ দিবি তাতে
বন্ধু তোরে খুঁজে বেড়াই
সকাল_দুপুর_রাতে**
•••তোর কারণে ভুললাম আমি
গোত্র, জাতি, কূল
কাঁটার সাথে করলাম সন্ধি
পায়ে পিষে ফুল~`~
•••তোর কারণে ভুললাম আমি
গোত্র, জাতি, কূল
কাঁটার সাথে করলাম সন্ধি
পায়ে পিষে ফুল~`~
“কেমন করে সইবো আমি, প্রেম আগুনের তাপ
তোর আমার প্রেম ছিলো রে বন্ধু, ছিলো পুরোটাই পাপ
“কেমন করে সইবো আমি, প্রেম আগুনের তাপ
তোর আমার প্রেম ছিলো রে বন্ধু, ছিলো পুরোটাই পাপ
′°°পথ হারানো পথিক হলাম
সব হারিয়ে নিঃস্ব
তোর আমার এই প্রেমের
কি দাম দিবে বিশ্ব~
′°°পথ হারানো পথিক হলাম
সব হারিয়ে নিঃস্ব
তোর আমার এই প্রেমের
কি দাম দিবে বিশ্ব~
`°প্রেমের নামে কিনলাম আমি, নিঠুর অভিশাপ
তোর আমার প্রেম ছিলো রে বন্ধু, ছিলো পুরোটাই পাপ
`°প্রেমের নামে কিনলাম আমি, নিঠুর অভিশাপ
তোর আমার প্রেম ছিলো রে বন্ধু, ছিলো পুরোটাই পাপ
~•*তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম
কি দোষ দিবি তাতে
বন্ধু তোরে খুঁজে বেড়াই
সকাল_দুপুর_রাতে.,.,.,.,.,.,.
~•*তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম
কি দোষ দিবি তাতে
বন্ধু তোরে খুঁজে বেড়াই
সকাল_দুপুর_রাতে~.~.~.~.~ ❤️🥀
গিটারের শেষ ধ্বনি টা তুলেই অর্নীল তার গানের ইতি টানে। সবাই ওওওওওওওওওও করে তালি দিয়ে ওঠে। অর্নীল যদি একটা সেকেন্ডের জন্যও সিয়ার থেকে নিজের দুইচোখ সরিয়েছে তো। যেনো সিয়াকেই বলে যাচ্ছে কথা গুলো ব্যাপার টা এমন ছিলো। সিয়া মাঝে মাঝে অর্নীলের দিকে তাকাচ্ছিলো কিন্তু যেই দেখতো যে উল্টো অর্নীলই সিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে তখন সে চোখ নামিয়ে নিতো। সবার মুখে এখন একই কথা “‘অর্নীল ভাই আপনি এতো ভালো গান গাইতে পারেন, আগে জানতাম না তো”‘।
আদিবা;; ভাইয়া এতো বিরহ মাখা গান টা আসলে ছিলো কার জন্য হ্যাঁ??
অর্নীল;; কিছু তো শুরুই হলো না আগেই বিরহ!
আদিবা;; ওমা তার মানে আসলেই কেউ আছে নাকি!!
অর্নীল;; হ্যাঁ আছে একজন (সিয়ার দিকে তাকিয়ে)
দিয়া অন্য পাশে নিজের নাথা ঘুড়িয়ে ফেলে। কিছুক্ষন পর চিরকুটে সিয়ার নাম ওঠে। সিয়া ট্রুথ নেয়।
আদিবা;; তো বল কাউকে ভালোবাসিস কিনা?
সিয়া;; আম……
আদিবা;; এই দেখ ট্রুথ নিয়েছিস কিন্তু একদম সত্যি বলবি।
সিয়ার মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি এসে নাড়া দেয়।
তাই সে ঝট করেই বলে ফেলে….
সিয়া;; হ্যাঁ।
আদিবা;; কি সত্যি!
সিয়া;; হ্যাঁ।
আদিবা;; এই কেরে কেরে নাম কি?
সিয়া;; এটা কিন্তু চিটিং শুধু জিজ্ঞেস কিরেছিস যে ভালোবাসি কিনা আমি বলেছি হ্যাঁ ব্যাস শেষ। নাম কি, কে? এতো গুলো প্রশ্ন কেনো?
আদিবা;; আচ্ছা বাদ দিলাম যা কিন্তু তুই তো ছুপা রুস্তাম বের হলি রে।
সিয়া;; চুপ কর।
সিয়া আদিবার সাথে এক প্রকার মারামারি বাধিয়ে দেয়। তারপর হাসতে হাসতে সামনে তাকায়। তাকিয়ে দেখে অর্নীল রেগে ফুসছে। সিয়া মেকি একটা হাসি দিয়ে অন্য পাশে চোখ ঘুড়িয়ে ফেলে। তারপর আবার অর্নীলের দিকে তাকালে অর্নীল রেগে কপাল কুচকে তাকায়। এবার আর সিয়া বসে থাকতে না পেরে সোজা উঠে চলেই যায় সেখান থেকে। সিয়া দ্রুত পায়ে চলে আসে। তার ভয় লাগছে। তার ভয় লাগছে এই ভেবে যে যদি অর্নীল তাকে ধরে। মানে সিয়া তো আসলে মজা করে বলেছে সে যদি জানতো যে এইটা বলার জন্য অর্নীল তাকে এমন রিয়েকশন দিবে তাহলে সে বলতোই না। সিয়া বাগানের সাইড দিয়ে দ্রুত আসছে আর বারবার পেছনে ফিরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। দ্রুত পায়ে যেতে যেতে সিয়া হুট করে ভারি কোন কিছুর সাথে ধাক্কা খায়। ধাক্কা খেয়েই খানিক চিল্লিয়ে ওঠে। সামনে তাকাতেই দেখে অর্নীল দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়া;; ওহহ আল্লাহ গো, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। (মনে মনে)
সিয়া অর্নীলের দিকে তাকায়। অর্নীল তার এক ভ্রু উঁচু করে সিয়ার দিকে তাকিয়ে খানিক ভ্রু নাচায়। সিয়া হিহিহি করে মেকি হাসি হাসে। এবার হঠাৎ করেই অর্নীল সিয়ার দিকে এক পা এক পা করে এগোতে থাকে।
অর্নীল;; কি যেনো বলেছিলে সিয়াজান? ভালোবাসো? তা কাকে বাসো শুনি একটু!
সিয়া;; না মানে আসলে আমি তো এমনি, এমনি বলছিলাম।
অর্নীল;; এমনি তাই না, এমনি।
সিয়া;; আরে না না সত্যি মিথ্যে কথা বলেছি আমি। কাউকে ভালোবাসি না সত্যি।
অর্নীল;; তাহলে বললে কেনো?
সিয়া;; আব… আসলে আপনাকে চেতানোর জন্য বলেছিলাম আর কি।
অর্নীল;; আর আমি তো চেতে গেছি এখন ফল ভোগ করো।
সিয়া;; মানে?
অর্নীল;; চলো।
সিয়া;; কিন্তু কোথায়?
অর্নীল;; জাস্ট কাম উইথ মি।
অর্নীল সিয়াকে নিজের সাথে নিয়ে যায়। তার হাত ধরে টেনে নিয়ে কিছুটা দূরে চলে যায়। টেনে নিয়ে যেতে যেতে একটা সময় থেমে যায়। এখানে মাঝারি আকারের একটা সুইমিং পুলও রয়েছে। এবার সিয়া কিছুটা রাগ হয়েই অর্নীল কে বলে ওঠে….
সিয়া;; আমরা এখানে কেনো এলাম?
অর্নীল;; কানে ধরতে।
সিয়া;; কি?
অর্নীল;; হ্যাঁ, কানে ধরো।
সিয়া;; কিন্তু কেনো?
অর্নীল;; আজাইরা কথা বলে আমাকে চেতানোর জন্য। জলদি কানে ধরো সিয়াজান।
সিয়া;; ধরবো না আমি।
অর্নীল;; ধরবে না?
সিয়া;; না।
অর্নীল;; ধরবে না?
সিয়া;; বললাম তো না।
অর্নীল;; তাহলে কি তুমি আমায় তোমাকে এই পানিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে বলছো?!
অর্নীলের কথায় সিয়া তার চোখ পাকিয়ে দিয়ে তার দিকে তাকায়। সিয়া একবার অর্নীলের দিকে আরেকবার পুলের দিকে তাকায়। যা বুঝলো সিয়া যদি সে এবার কানে না ধরে তাহলে অর্নীল তাকে এই রাতের বেলা ঠান্ডা ঠান্ডা সুইমিং পুলের পানিতে নাকানি-চুবানি দিবে।
অর্নীল;; এই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতো কি ভাবো? যা করার জলদি করো। হয়তো কানে ধরে উঠ-বোস করবে নয়তো পানিতে পরবে, নাও চয়েস ইস ইউর”স।
সিয়া;; 😒
অর্নীল;; কি হলো?
সিয়া;; ধরছি তো।
এই বলেই সিয়া কাচুমাচু করতে করতে নিজের দুইহাত দিয়ে কানে ধরে। সিয়া লাস্ট কানে ধরেছিলো স্কুল জীবনে সেই ক্লাস সেভেনে পড়া কালীন। এর মাঝে আর না। শেষে কিনা এই বুইড়া বয়সে কলেজে উঠে তাকে কানে ধরতে হচ্ছে। এটা ভেবেই যেনো সিয়ার নাজেহাল দশা। তখনই অর্নীলের ডাক…
অর্নীল;; কি হলো? কানে ধরে তো এচাবে দাঁড়িয়ে থাকতে বলি নি। উঠ-বোস করতে হবে সিয়াজান। জলদি করো।
সিয়া আর কোন পথ খোলা না পেয়ে বাধ্য হয়েই উঠ-বোস করতে থাকে। বিশ বার কানে ধরে উঠ-বোস করার এক পর্যায়ে সিয়া ধপ করে নিচে ঘাসের ওপর বসে পরে। আর অর্নীল নিজের দুইহাত ভাজ করে সিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়া;; আমি আর পারবো না। হাপিয়ে গেছি আমি। আর পারবো না।
অর্নীল;; এই টুকু তেই শেষ!
সিয়া;; আমি তো আর আপনার মতো কসাই না।
অর্নীল;; কি?
সিয়া;; কিছু না কিছু না।
সিয়া কোন রকমে উঠে দাড়াতে চায় কিন্তু ধিরিম করে আবার পরে যায়। এবার অর্নীল কোন কথা না বলেই সিয়া কে সোজা নিজের পাজাকোলে তুলে নেয়।
সিয়া;; আরে, আরে এই কি করছেন টা কি। ছাড়ুন। নিচে নামান আমাকে। কত্তো মানুষ এখানে কেউ দেখে ফেললে ইলাহি কান্ড বেধে যাবে। অর্নীল ছাড়ুন, অর্নীল নামান আমাকে।
অর্নীল;; এই চুপ করো তো বড্ড বেশি বকবক করো তুমি।
সিয়া;; কিন্তু আপনি…..
অর্নীল;; এই চুপ।
অর্নীল এবার সিয়া কে নিয়ে ওপরে রুমে চলে যায়। তারপর বিছানার ওপর বসিয়ে দেয়।
সিয়া;; নিচে হলরুমে কেউ নেই। সব গেলো কই?
অর্নীল;; সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত। আর সব গুলো তো বাইরে।
সিয়া;; আচ্ছা গিয়েছে। এবার আপনি যান এখান থেকে।
অর্নীল;; চাইলে কিন্তু এখানেই থেকে যেতে পারি।
সিয়া;; দেখুন প্লিজ যান এখান থেকে কেউ দেখলে ভুল ভাববে।
অর্নীল;; আমি না হয় চলে গেলাম কিন্তু তুমি, তুমি কোন ছেলের দিকে তাকাবে না বুঝলে। কথাও বলবে না।
এই বলেই অর্নীল চলে যায়। আর সিয়ার পা ব্যাথা ব্যাথা হয়ে গেছে কানে ধরে উঠ-বোস করতে করতে।
এভাবেই রাত টুকু কেটে যায়। পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠে পরে,, ভোরের আলোয় আলোকিত চারিদিক। আর বাড়ির বড়োদের তো ঘুম এক প্রকার হারামই। আদিবা সকালের দিকে একটু ঘুমিয়েছিলো তাও সিয়া ডেকে তুলে দিয়েছে। সবকিছু রেডি করা হচ্ছে। বিয়ে টা দ্রুত সেরে ফেলতে চাচ্ছে। এর মাঝেও অর্নীলের সাথে সিয়ার হাজার বার দেখাদেখি হয়েছে। সিয়া তার মতো করে থাকলেও অর্নীল যেনো তাকে জ্বালিয়ে মারছে।
ওপরের রুমে আদিবা রেডি হচ্ছিলো আর সিয়া তাকে হেল্প করছে,, সিয়া কি যেনো একটা ভেবে নিচে চলে আসে। আর নিচে নামতেই দেখে অর্নীল সিয়ার মায়ের সাথে কথা বলছে। তা দেখে তো সিয়ার চোখ কপালে। এই অর্নীল আবার সিয়ার আম্মুর সাথে কি কথা বলে?!
সিয়া দ্রুত পায়ে তার আম্মুর কাছে যায়।
দোলা;; আরে সিয়া এই দেখ অর্নীল,, ওইদিন যে আমাদের এখানে নিয়ে এলো। দেখ না সবাই এক বাড়িতেই আসলাম কিন্তু জানতামই না।
সিয়া;; হ্যাঁ ভালো করেছো। এখন চলো।
দোলা;; আরে কিন্তু।
সিয়া;; আরে চলো তো চলো চলো।
সিয়া অর্নীলের কাছ থেকে টেনে তার মা কে নিয়ে এসে পরে।
দোলা;; আচ্ছা সমস্যা কি তোর তুই এভাবে নিয়ে এলি কেনো? ছেলেটা কি যে ভালো জানিস!
সিয়া;; রাখো তোমার ভালো। ভালো দিয়ে আমি কি করবো।
দোলা;; আচ্ছা আদিবা রেডি হয়েছে কি গিয়ে দেখ তো।
সিয়া;; হ্যাঁ ও রেডি।
সিয়া ওপরে আদিবার কাছে চলে যায়। আস্তে আস্তে মানুষের সমাগমও বাড়তে লাগে বাড়িতে। ছেলেপক্ষ এসে পরেছে। আদিবা কে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। কাজিও এসে পরেছে। অতঃপর তিন বার কবুল বলে আদিবা আর জাবেদ অর্থাৎ আদিবার হবু বরের বিয়ে হয়ে যায়। যখন বিয়ে হচ্ছিলো তখন আদিবার থেকে কিছুটা দূরে সিয়া দাঁড়িয়ে ছিলো। সিয়া খেয়ালই করে নি যে অর্নীল তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হুট করে অর্নীল সিয়া কে বলে…..
অর্নীল;; আচ্ছা সিয়াজান যদি আমাদের বিয়ে টাও এভাবেই হয়ে যায় তাহলে কেমন হবে বলো তো।
এই কথা শুনেই সিয়া কপাল কুচকে অর্নীলের দিকে তাকায়। সময় চলে যায়। এবার আসে বিদায়ের পালা। আদিবার সে কি কান্না। সিয়ারও মন টা খারাপ ছিলো কিন্তু নিজেকে সামলায়। আদিবা চলে যায় নিজের শশুড় বাড়ি। আদিবার চলে যাওয়ার দিকে সিয়া বেশ সময় তাকিয়ে থাকে। সিয়ার মা হঠাৎ সিয়ার কাছে এগিয়ে আসে……
দোলা;; কিরে কি দেখিস?
সিয়া;; আচ্ছা সব মেয়েদেরই কি শশুড় বাড়ি যেতে হয়?
দোলা;; একটা সময় তো হয়ই।
সিয়া ফট করে তার মায়ের দিকে তাকায়।
সিয়া;; আমি কিন্তু যাবো না বলে দিলাম।
দোলা;; আচ্ছা হয়েছে বুঝলাম।
সিয়া আর তার মা এসে পরে। আদিবার বাবা বেশ কান্নাকাটি করে একমাত্র মেয়ে বাড়ি থেকে বিদায় নিলো এই ভেবেই। কিন্তু আগামীকাল আবার রিসেপশন আছে। তাই কাজ থেকেই যায়। সিয়া নিজের রুমে চলে যায়। আস্তে আস্তে নিজের চুড়ি, ঝুমকা এইসব খুলছে আর কি যেনো একটা ভাবনাতে মগ্ন। তখনই সিয়ার রুমে দোলা আসে। বিছানার ওপর বসে পরে। দোলা খেয়াল করে দেখে যে সিয়ার মুখ টা কেমন লটকিয়ে আছে।
দোলা;; কিরে মন খারাপ?
সিয়া;; না।
দোলা;; আদিবার কথা মনে পরছে বুঝি?
সিয়া;; তা না, মা।
দোলা;; তাহলে মুখ টাকে এমন বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেনো।
সিয়া এবার তার মায়ের দিকে ঘুড়ে কিছুটা সিরিয়াস মুডে বলে ওঠে…….
সিয়া;; আচ্ছা মা, যদি আমি বলি যে আমি কাউকে ভালোবাসি তাহলে?
দোলা;; ছেলে, ছেলের পরিবার যদি ভালো হয় তাহলে অবশ্যই হ্যাঁ। আমি ওইসব মায়ের মধ্যে পরি না যে নিজের মেয়ের বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য একটা ছেলের গলায় তাকে ঝুলিয়ে দিবো। তুই বড়ো হয়েছিস। পছন্দ অপছন্দ আছে,, থাকতেই পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে ছেলে কে অবশ্যই ভালো হতে হবে। এমন হতে হবে যে আমার মেয়ে যেনো হ্যাপি থাকে। তবেই আমি হ্যাঁ করবো।
সিয়া;; হুমম, না মানে আমি বাসি না কাউকে কিন্তু তবুও জিজ্ঞেস করলাম তোমায়।
দোলা;; আহা, একদম না। কাউকে নিয়ে হয়তো একটু হলেও তোর মনে ভালোলাগা কাজ করেছে তাই এমন বললি। নয়তো হুট করে এমন কথা।
সিয়া;; আরে মা তেমন না।
দোলা;; তোর বাবা মারা গেছে। সেই ছোট থেকে তোকে আমার এই এক হাতে মানুষ করা। সবই আমি জানি। আর আমি এও জানি যে তুই ভূল কোন সিদ্ধান্ত নিবি না।
সিয়া;; শোন আমি কাউকেই ভালোবাসি না বুঝলে। তুমি যা বলবে তাই। আদিবা আপুর তো লাভ ম্যারেজ হলো তাই আমিও…..
দোলা;; হ্যাঁ তাই এখন তুমিও ভাবলে যে প্রেম করে বিয়ে করো তাই তো?
সিয়া;; আরে না 😅। ধুর, আচ্ছা তুমি যাও তো বুড়ির কাছে যাও।
দোলা;; তোর বুড়ি ঘুমায়।
সিয়া;; নানু আজ এতো জলদি ঘুমিয়ে গেলো।
দোলা;; ক্লান্ত তো অনেক তাই। আচ্ছা থাক তাহলে আমিও যাই।
সিয়া;; আচ্ছা, গুড নাইট।
দোলা;; গুড নাইট।
দোলার চলে যেতেই সিয়া এক এক করে সব অর্নামেন্ট”স গুলো খুলে ফেলে। চুল গুলো উঁচু করে খোপা করে বেধেছিলো তা খুলে দেয়। ঝরঝর করে সব চুল গুলো পিঠের ওপর ছড়িয়ে পরে সিয়ার। হঠাৎ করে বাইরের আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায়। বিদুৎ চমক দিয়ে ওঠে। বাইরে থেকে এক দমকা বাতাস এসেই সিয়ার গায়ে লাগে। বাইরের তীব্র বাতাসে বারবার জানালাতে কটকট শব্দ হচ্ছে। তাই সিয়া সেটা লাগিয়ে দিতে যায়। তবে কাছে যেতেই সিয়া অন্ধকারে একটা অবয়ব দেখতে পায়। সিয়া আরো কয়েক কদম এগিয়ে যায়। এবার হুট করেই সেই অবয়ব টা একদম সিয়ার সামনে চলে আসে। সিয়া ভয়ে চিৎকার দিতে যাবে তখনই একটা হাত এসে তার মুখ চেপে ধরে,, পেছাতে পেছাতে নিয়ে গিয়ে দেওয়ালের সাথে অবয়ব টা সিয়াকে একদম চেপে ধরে।
।
।
।
।
চলবে~~