#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ৩৫
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
এক সপ্তাহ কেটে গেল। আহসানদের বাড়ি থেকে সকল আত্মীয়-স্বজনেরা এক এক করে চলে গিয়েছে। বাড়ি পুরো ফাঁকা। অর্থাৎ বাড়ির সদস্যরাই রয়েছে শুধু। রিমি গতকাল রাতে ওর আর আহসানের জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখেছে। আহসান তাড়াতাড়ি চলে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হসপিটালে গিয়েছে। এখন প্রায় বিকেল। এখনো আসার নাম গন্ধ নেই যেন। রিমি বাধ্য হয়ে কল দিল আহসানকে। কিন্তু বারবার রিং বেজে কেটে যাচ্ছে। রিমির রাগ প্রায় সাত আসমানের কাছাকাছি গিয়ে জমাট বেঁধেছে। কল রিসিভ না হওয়ায় রিমি এতটাই রেগে গেল যে চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিল। হেঁচকি তুলে তুলে কাঁদছে রিমি। আহসান পেছন থেকে এসে রিমির চোখ দুটো দুহাতের আড়ালে আবদ্ধ করে ফেলল। রিমির চোখের পানিতে আহসানের হাত ভিজে আসায় তড়িঘড়ি করে হাত সরিয়ে ফেলল আহসান। রিমি তুমুল রাগ নিয়ে আহসানের দিকে তাকাল। আর আহসান কৌতুহলী সুরে রিমির গালে হাত ছুঁইয়ে বলল,
‘তোমার কি হয়েছে রিমি?’
‘একটাও কথা বলবে না বলে দিলাম।’
আহসান বুঝতে পারে রিমির কান্নার কারণ। আহসান কিছু না বলে কান ধরে রিমির সামনে হাটু মুড়ে বসলো। তারপর বেবি ফেস করে বলল,
‘স্যরি,আমি ফোন সাইলেন্ট করে রাখায় তোমার কল রিসিভ করতে পারিনি। একটু বিজি ছিলাম। কিন্তু এখন আমি ফ্রি। সব কাজ শেষ করে এসেছি। বিয়ের পর প্রথম জামাই আদর খেতে যাচ্ছি। কাজের প্রেসার নিয়ে কেন যাব বলো?’
‘হয়েছে আর ন্যাকামি করতে হবে না। আমি সব মানলান,কিন্তু ফোন চেক করার পর কেন আমাকে কলব্যাক করোনি তুমি? সেটার সময়ও কি হয়নি?’
‘ভাবলাম বাড়িতে গিয়েই কথা হবে। তাই আরকি।’
‘এখন কি এভাবে কানে ধরে বসে থাকবে নাকি বেরোবেও?’
‘ওহ স্যরি। কিন্তু এইভাবে গেলে নির্ঘাত আমার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি ভাববে আমি তাদের মেয়েকে মারধর করি।’
‘হু?’
‘হু আবার কি? নিজের মুখ দেখেছো? কান্না করে চোখ ফুলিয়ে লাল করে রেখেছো। একটু কল ধরলাম না তাতেই কেঁদে কেটে একাকার। যদি সারাজীবনের জন্য হারিয়ে যাই,তখন কি করবে?’
‘চুপ করো হুম! কোথায় যাবে তুমি? আমি তো তোমাকে হারাতে দেব না।’
‘তাই?’
‘হুম তাই। আর কখনো যেন এসব না শুনি।’
‘এত রাগ বাবাহ!’
‘রাগ নয়,বউয়ের শাসন বলো।’
‘ওকে!! তাইতো বলি এত অধিকার কোথ থেকে সাপ্লাই হচ্ছে!’
‘আরও অনেক ভয়ংকর রূপ দেখতে পারবে যদি দূরে চলে যাওয়ার কথা বলো তো।’
আহসান রিমির হাতের ভাজে নিজের হাত ডুবিয়ে বলল, ‘কখনো বলব না। এইতো তোমার হাতে হাত রেখে প্রমিজ করলাম।’
‘মনে থাকে যেন সেটা।’
‘অবশ্যই থাকবে। এবার রেডি হও ঝটপট। আমাদের রওনা দিতে হবে।’
‘আমি রেডিই আছি সেই দুপুর বেলা থেকে। শুধু আমার নাক মুখে পানির ছিটে দিলেই হয়ে যাবে। তুমি যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।’
‘ওকে বউবতী।’
_________________________
বেশ ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল জিসান। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। জান্নাত ধির পায়ে এগিয়ে আসলো। হাতে পানি ভর্তি গ্লাস। এক হাতে পানির গ্লাস নিয়ে অন্যহাত দিয়ে জিসানের পায়ের জুতো খুলবে কি লাফ দিয়ে উঠে বসে জিসান। সে গরম চক্ষু জান্নাতের দিকে তাক করে বলে,
‘কি চাই তোর?’
জান্নাত কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
‘তুউউউউউমি হাঁআয়াপাচ্ছো তাই পায়ায়ানি নিয়ে আসলাম।’
‘ওহ পানি! দে তাহলে।’
জান্নাত পানির গ্লাস জিসানের হাতে দিতেই জিসান সবটা পানি জান্নাতের মুখে ছিটিয়ে দেয়। আকস্মিক ও অপ্রস্তুত ঘটনায় গুরুতর ভাবে চমকে ওঠে জান্নাত। জান্নাত দ্বিগুণ চমকে গেল জিসান গ্লাসটা দেয়ালে ছুড়ে মারায়। গ্লাস ভেঙে কাঁচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে যত্রতত্র।
‘আরও পানি দিতে আসবি আমায়?’
জান্নাত ভয় ভয় চোখে চেয়ে রইলো শুধু। কিছুই বলল না। তা দেখে জিসান তৃতীয় বারের মতো বলল, ‘তোর মুখ দেখলে আমার শরীর দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। রাগ মাথায় চড়ে যায়। সামনে আসিস না তুই আমার।’
জান্নাত ভেজা চোখে বলে, ‘আমি না আসলে কে আসবে তোমার কাছে? আমি তোমার স্ত্রী।’
‘স্ত্রী! কে মানে? আমি তো মানি না।’
‘তুমি না মানলেও এটাই সত্যি।’
‘আমি এই সত্যিটাই মানি না।’
‘আমার বিশ্বাস তুমি একদিন ঠিক আমাকে মেনে নেবে।’
‘অন্ধবিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাক তুই। আমি শুধু তিয়াসাকে ভালবাসি। আর ওকেই ভালবাসবো শুধু।’
‘কাউকে ভালবাসা অন্যায় না। কখনো কখনো মনের আবেগ সাইডে রেখে অন্যকিছুতে আবেগ ও বাস্তবতা খুঁজে বেরানোর চেষ্টা করো, দেখবে নতুনত্বের ছোঁয়ায় মোহনীয় এক আদলের খোঁজ পাবে।’
‘আমি তোর থেকে জ্ঞান নিতে চাইনা। লিভ মি।’
‘আমি মরে গেলেও তোমার পিছু ছাড়বো না জিসান। আমি যে তোমাতে মিশে গিয়েছি।’
‘আরেকবার বলতো!’
‘আমি তোমাতে মিশে গিয়েছি।’
জিসান কৌতুক করে বলল,
‘উহু, এটা না। তার আগে।’
‘তুমি কি শুনতে চাইছো?’
‘তুইযে মরে যাওয়ার কথাটা বলবি, সেটা আবার বল। ওয়ান্স মোর।’
‘আমি মরে গেলেও তোমার পিছু ছাড়বো না।’
জান্নাত কথাটা বলতে দেড়ি জিসান জান্নাতের ঘাড় ধরে ধাক্কা দিতে দেড়ি করলো না। জিসান ইচ্ছে করে ভাঙা কাঁচের টুকরো গুলোর উপর জান্নাতকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। জান্নাত চিৎকার দিয়ে ওঠে। উবুড় হয়ে পড়ায় হাতের তালু,কবজি,কনুইয়ের মধ্যে কাঁচ ঢুকে যায়। সাথে সাথে রক্তের স্রোত বইতে থাকে জান্নাতের হাত বেয়ে। তা দেখে জান্নাত শব্দ করে কেঁদে দিল।
তবে জিসানের একটুও মায়া হলো না জান্নাতকে দেখে। বরং সে বলল,
‘মরলে আমার পিছু ছাড়বি তো? তাই হবে। তোকে এখন থেকে তিলে তিলে শেষ করবো আমি। তারপরও তোকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়া তো দূরের কথা, এক চুল সমানও সহানুভূতি প্রদর্শন করবো না।’
জিসান ওয়াশরুমে চলে গেলে জান্নাত তার দুহাতে দুটো ওড়না পেচিয়ে বিছানার এক কোণে গিয়ে শুয়ে পড়ে মুখ লুকিয়ে।
আহসান রিমিকে নিয়ে পৌঁছে গেল তার শ্বশুড়বাড়িতে। ওদের যেতে যেতে রাত প্রায় ৮টা বেজে গেল।
#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ৩৬
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
রাতের বেলা,,,
আহসানের হাতে কফির মগ ধরিয়ে রিমি তিয়াসার রুমে গেল। রিমি আর তিয়াসা যেই রুমটা শেয়ার করে থাকতো সেখানে আহসান ও রিমি থাকবে বলে তিয়াসা অন্য আরেকটা রুম পরিষ্কার করে নিয়েছে। তিয়াসা ওর বইপত্র গোছাচ্ছিল তখন রিমি গিয়ে বলল,
‘কেমন ভেজা ভেজা গন্ধ ভেসে বেরাচ্ছে এই রুমটায়। তুই থাকতে পারবি তো এখানে?’
তিয়াসা রিমির দিকে তাকিয়ে আবারও কাজে মন দিল। বলল, ‘আমার সমস্যা হবে না আপু।’
‘তোকে কত করে বললাম আমাদের সাথে শোয়ার জন্য। তুইতো শুনলিই না। আমি মাঝে থাকতাম তোর আর আহসানের।’
‘তুইও না আপু! সেটা হয়না। আমি এখানেই ঘুমাবো। তুই চিন্তা করিস নাতো।’
‘আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। বিছানায় চাদর বিছাসনি কেন?’
প্রতুত্তরে তিয়াসা বলল,
‘কয়টা করবো বলতো? হাত তো আমার দুটোই।’
‘তাও ঠিক। আচ্ছা আমি বিছিয়ে দিচ্ছি।’
বলে চাদরটা নিয়ে বিছাতে লাগলো রিমি। রিমির কাজ হয়ে গেলে তিয়াসা রিমির কাছে যেয়ে বলে,
‘তুই এখন যা আপু। ভাইয়া একা বসে আছেন।’
‘তোর ভাইয়া সাথে করে ল্যাপটপ নিয়ে এসেছে। রাত ৩টা বাজাবে কাজ শেষ করতে। তাহলে একা কিসের?’
‘তাও এটা কেমন দেখায় বল?’
‘কোনটা কেমন দেখায়?’ পাল্টা প্রশ্ন করে রিমি।
‘কোনটা আবার! ভাইয়াকে রেখে এখানে বসে আছিস, এটা কেমন দেখায়?’
‘সমস্যা নেই। আমি ওকে বলেই এসেছি। দরকার পড়লে ডাকবে নাহয়।’
‘ওও।’
‘হুম, তো পড়াশোনা কেমন চলছে তোর?’
তিয়াসা মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে বলল, ‘আর পড়াশোনা! বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি আমি।’
‘বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিস? খুব বেশি প্রেসার দিচ্ছে নাকি কলেজ থেকে?’
‘না তেমন কিছু নারে।’
‘তাহলে ওভারে কেন বললি তুই?’
‘কিছু হয়নি আপু!’ বেশ আওয়াজ উঁচিয়ে বলল তিয়াসা।’
‘তুই এত রেগে যাচ্ছিস কেন বলতো?’
‘স্যরি, আসলে মন মেজাজ ভালো নেই আমার। তাই ভালো কথা শুনলেও রেগে যাচ্ছি।’
‘আব্বু আম্মুও তাই বলল। তুই নাকি কদিন ধরে তাদের সাথে ঝারি মেরে কথা বলছিস। তাও আবার কারণে অকারণে। এখন আমার সাথেও একই ব্যবহার। কিন্তু কেন? বড়দের সাথে কেউ এমন আচরণ করে?’
‘আমি জানি না আমি এমন কেন করছি। তবে আমার কিছু সহ্য হচ্ছে না। আমি ইচ্ছে করে এসব করছি না। হয়ে যাচ্ছে শুধু।’
‘এর কারণ কি?’
তিয়াসা অস্ফুটে বলল, ‘জানি নারে আপু।’
‘কারণ ছাড়া কোনো শান্তশিষ্ট মেয়ের মেজাজ খিটখিটে মেজাজে পরিবর্তন হয়না। এটা আমি হলে মানায়। কিন্তু তোকে না। কি হয়েছে বল আমায়।’
‘তুই যে কি আপু? বললাম তো আমার কিছুই হয়নি।’
রিমি তিয়াসার হাত ধরে টেনে বিছানায় বসালো। তারপর তিয়াসার গালে এক হাত রেখে বলল,
‘আমি বিয়ের সময়টায় তোর দিকে তেমন খেয়াল করিনি। কিন্তু তোর ভাইয়া ঠিকই খেয়াল করেছিল। ওর থেকে শুনলাম তুই আমাদের বিয়ের দিন মনমরা হয়ে ছিলি নাকি।’
তিয়াসা তার গাল থেকে রিমির হাত সরিয়ে বলল, ‘কি যে বলিস না আপু! ভাইয়া নিশ্চয়ই ভুল ভেবেছে।’
‘ভুল ভেবেছে? ওকি বাচ্চা শিশু যে ভুল ভাববে?’
‘আমি দিব্বি ছিলাম তোদের বিয়ের দিন।’
‘মিথ্যে কেন বলছিস? তোকে কি আজ থেকে চিনি আমি?’
‘আপু আসলে আমি কিছু বলে তোকে বা কাউকে চিন্তায় ফেলতে চাইনা।’
‘ঠিক ধরেছি কিছু একটা হয়েছে তোর। আরে বাবা তুই এত বড় হয়ে যাসনি যে সমস্যা লুকিয়ে একা একা সমাধান বের করতে পারবি।’
‘আমি সত্যিই কোনো সমাধান বের করতে পারছি না আপু। কোনভাবে শান্তিও পাচ্ছি না।’
‘শান্তির মাকে বনবাসে রেখে শান্তির খোঁজ করছিস তুই?’
‘আপু এটা খুব সিরিয়াস বিষয় ওকে?’
‘সেটাই বল। শুনি তোর কি এমন সিরিয়াস বিষয়, যার জন্য তোর মুখ চোখের রঙ বদলে গিয়েছে।’
‘তুই কি সত্যি শুনতে চাস?’
‘সত্যি না কি তাহলে মিথ্যে শুনবো আমি?’
‘তাহলে শোন। তোকে যখন প্রথম জিসানের কথা বলেছিলাম,তখন তুই আমাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছিলি। মনে আছে তো ভাইয়াদের পরিবার থেকে তোকে দেখতে আসার দিনটার কথা?’
‘কি হয়েছে তাতে? আর জিসান কোত্থেকে এলো এখানে?’
‘তাকে ঘিরেই সব। তার জন্যই এত টেনশনে আমি।’
‘কি যা তা বলছিস তিসু?’
‘আমি ঠিকই বলেছি আপু।’
‘তুই সেই ব্যাপারটা নিয়ে এখনো পড়ে আছিস!’
‘আমি তো ভুলেই যেতাম। কিন্তু জিসান আর তার বোন মিলে যা শুরু করেছে না, তাতে ভুলে থাকা অসম্ভব।’
রিমি জিসানের কথায় প্রথমে আশ্চর্য না হলেও, পরবর্তীতে জিসানের বোনের কথা শুনে আশ্চর্য হতে বাধ্য হলো এক প্রকার।
রিমি ওর মুখশ্রীতে চিন্তার রেখা টেনে বলল,
‘জিসানের বোন? মানে তুই স্রুতির কথা বলছিস?’
‘আর কোন বোন আছে জিসানের? তুই জানিস না উনি একজন অসভ্য মহিলা, ঘাড়ত্যাড়া, নির্বোধ এক প্রাণী। সাথে তার ভাইও।’
‘এভাবে কাউকে বলতে হয়না। তারা তোর থেকে বয়সে বড়। কিন্তু তোর সাথে কি এমন করেছে স্রুতি আর জিসান? বুঝলাম না ঠিক।’
তিয়াসা এক এক করে সব বলল ওর সাথে এইকয়দিন যা যা ঘটেছে। সব শুনে রিমির মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে।
রিমি বলল, ‘এত কিছু হলো আর তুই আমাকে একটাবার জানালি না অবধি?’
‘আমি সেই অবস্থায় ছিলাম না আপু। আমার এখন কলেজে যেতেই মন চায়না একদম। রোজ রোজ ওই মহিলা এসে তার ভাইকে বিয়ে করার কথা বলে। বলতে গেলে জোরজবরদস্তি করে।’
‘এটা তো খুব খারাপ কাজ সাথে অন্যায়ও বলা যায়। স্রুতি আর জিসান দুইজনই কি তোকে বিরক্ত করে?’
‘জিসানকে তোদের বিয়ের দিন মানা করেছিলাম। মুখে যা এসেছে তাই বলে ফেলেছিলাম। মেবি তার জন্যই আমার সামনে আসে না। আর এইজন্যই তার বোনকে পাঠায় বুঝলাম। উনি আসলে তো পাবলিক প্লেসে মার খাবে, তাই হয়তো এই উপায় খাটিয়েছে।’
‘হুম হয়তো।’
‘এখন আমি কি করবো আপু?’
‘তোকে কিছু করতে হবে না। এখন যা করার আমি করবো। আর তুই কিন্ত আহসানকে ভুলেও এই কথাটা বলবি না। জান্নাতকে নিয়ে এমনিতেই ও খুব চিন্তায় থাকে। এসব জানলে কি জানি তোকে নিয়ে কি ভাবে না ভাবে।’
‘আমি কি করেছি যে ভাইয়া আমাকে খারাপ ভাববে?’
‘খারাপ ভাবা নয় তিসু। দেখ, আহসান চায় ওর বোন জিসানের সাথে ভালো থাকুক। আর জিসান তোকে ভালবাসে বলে জান্নাতকে মন থেকে মেনে নিতে পারছে না। সেক্ষেত্রে জান্নাত ও জিসানের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিস তুই। তোর জন্য জিসান জান্নাতকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারছে না। প্রাকটিকালি ভাবলে এটাই হয়। কিন্তু রিয়ালিটি তা বলে না। কারণ তুই জিসানকে বলিসনি তোকে ভালবাসতে বা জান্নাতকে দূরে ঠেলে দিতে।’
‘তাহলে দোষ কার আপু?’
‘দোষ স্রুতির। একমাত্র স্রুতির। ও ইচ্ছে করে এসব করছে যাতে জিসান জান্নাতকে আলাদা করতে পারে।’
‘ওও, কিন্তু এতে তার কি লাভ আপু?’
‘কি আবার, আমার আর আহসানের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করা। আমি বেশ বুঝতে পারছি স্রুতি তোকে জিসানের সাথে মেলাতে চায় কারণ তোকে আহসানের চোখে খারাপ করবে বলে।’
‘আপু তুই এসব কি বলছিস? আমি স্রুতি আপুর কি ক্ষতি করেছি?’
‘তুই না আমি করেছি।’
‘তুই করেছিস মানে? ক্লেয়ার করে বল আপু।’
‘স্রুতির কাছে সেটা মনে হয় আরকি। কারণ ওতো আহসানকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার জন্য পারেনি। কারণ আহসান তো আমাকে ভালবাসে।’
‘এইবার বুঝলাম আমি। স্রুতি আপু আমাকে দিয়ে জান্নাত ও জিসানকে আলাদা করতে চায়। তাইতো আমার পিছে পড়ে আছে সে। আর যদি আমি তার কথায় রাজী হয়ে জিসানকে এক্সেপ্ট করি, তাহলে আহসান ভাইয়া ভাববে আমি জান্নাতের থেকে সব কেড়ে নিয়েছি। এই ভেবে তোর সাথে ঝামেলা করবে। ফলে ভাইয়া আমার সাথে সাথে তোকেও ঘৃণা করবে।’
‘হুম, এটাই ওর মূল উদ্দেশ্য।’
‘ছি! আসলেই সে একজন খারাপ মহিলা। যত বলবো ততই কম পড়বে। আমি তাকে যতটা না খারাপ ভেবেছি, উনি তার থেকেও আরও বেশি খারাপ।’
‘এখন সব কিছু তোর হাতে তিসু। তুই কি করবি ভাব।’
‘আমি আগে থেকেই না করে এসেছি। সামনেও তাই করবো। তুই চিন্তা করিস না আপু। আমি ওই দুষ্টু মহিলার ফাঁদে কখনোই পা বাড়াবো না।’
‘হুম তাই যেন করিস। দেখিস আবার মন বদলে ফেলিসনা যেন।’
‘মন বদলে যাবে কেন আপু? সেটা কখনোই পসিবল না।’
‘এটা মুখে বলা ভারী দুষ্কর রে। মানুষের মন মানসিকতা কখন কিভাবে পাল্টে যায় তা বলা যায়না। বিশেষ করে মেয়েদের মনের ক্ষেত্রে তো না-ই। আমাকে দিয়েই বলি। আমি প্রথমে আহসানকে না দেখেই বিয়ের স্বপ্ন দেখে ফেলেছিলাম। কিন্তু ও সামনে আসার পর আর সেটা চাইনি। তবে আবারও মন বদলে গেল আমার। তবে পার্থক্য হলো আগে আমি আহসানের বাড়ি গাড়ি চাইতাম। আর এখন আহসানকে। কতটা বদল ঘটেছে দেখেছিস!’
‘কিন্ত আপু আমার ক্ষেত্রে তো তা হয়নি। আমি তো জিসানকে নিয়ে কোনো স্বপ্নই দেখিনি। বরং আমার খুব অসহ্য লাগে তাকে। হাত ধরে টানাটানি করে বলে আরও ভালো লাগে না।’
‘আমি যে কি বলবো এখন? আসলে এখানে আমি জিসানের কোনো দোষ দেখছি না। একেক জন একেক ভাবে ভালবাসে। কেউ জোর খাটিয়ে ভালবাসা চায়, আবার কেউ মুক্ত ও স্বাধীন ভাবে চায়। আর রইলো অহ্য ও অসহ্যর ব্যাপার! দেখা যায় আজ যাকে অসহ্য লাগছে, আগামীকাল সেই তাকেই মনে ধরে যায়। তুইতো এখনো আবেগের রাস্তা দিয়ে হাঁটিসনি। তাই প্রেম,ভালবাসা তোর বোঝার কাম্য নয়। কিন্তু যেদিন বুঝবি সেদিন আজকের এই তুইটাকে চিনতে পারবি না।’
‘সেসব বুঝতে অনেক দেড়ি আছে আমার। আমি এখন ওসব বুঝতে চাইনা আপু।’
রিমি হাসলো। বেশ শব্দ করেই হাসলো তিয়াসার কথায়। তা দেখে তিয়াসা বেকুবের মতো তাকিয়ে রইলো রিমির দিকে। ঠিক তার পরমুহূর্তেই বলে ওঠে, ‘হাসছিস কেন আপু?’
‘তুই আসলেই অবুঝ। কিছু বিষয়ে তোর মাথা পরিপক্ক হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরিপক্ক। আবেগের দিক দিয়ে তোর থেকে ৭ম শ্রেণির মেয়ে এগিয়ে। কিছু মেয়েরা ৫ম শ্রেণিতেই বুঝে যায়। তবে সবাই না। তবে তুই একাদশ শ্রেণির মেয়ে হয়েও আবেগের আ-ও বুঝিস না।’
‘হুম বুঝিনা। তো? এখানে আবেগ বোঝা না বোঝার কথা কেন আসলো?’
‘ওরে তিসু রে।’ বলেই রিমি তিয়াসার নাক টেনে দিল। তারপর আবারও বলল, ‘প্রেম,ভালবাসা আবেগেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। একে অপরের পরিপূরকও বলা যায়। এটা বুঝতে দেড়ি আছে, এই কথাটা মানায় নারে। তুই বুঝতেও পারবি না কখন কিভাবে মনে আবেগ নামক বাসা এসে দখল করে নেবে। তবে দেড়িতে বোঝাই ভালো এসব। কারণ দেড়িতে বুঝলে জীবনটা স্বাধীন ও সুন্দর হয়। বিবেক বুদ্ধি বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে পড়াশোনায় বাজে প্রভাব বা ব্যাঘাত ঘটে না।’
তিয়াসা বলল, ‘তাহলে আমি ভালো কাজই করছি বল?’
‘হুম তবে তুই সর্বদা এরকমই থাকলে হয়। আমি চাই তুই সবসময় এমনই থাকিস। তোর বয়সী মেয়েরা পড়াশোনায় মন দিলেই শ্রেয় বলে মনে করি। তবে বাস্তবতা খুব জটিল। তাছাড়া দিক প্রতিকূলতা ভালোকে খারাপ আর খারাপকে ভালো বানাতে বেশি সময় লাগায় না।’
‘আপু তুই কিচ্ছু ভাবিস না। আমি আমার বেস্ট দিয়ে নিজেকে ভালো রাখবো। ভুল পথে যাব ন।’
‘সেটাই যেন হয়। আমি আমার তিসুকে ভালো করেই চিনি৷ আমি জানি তুই আমার কথা রাখবি। কোনভাবেই জিসানকে মনে জায়গা দিবি না। যদি দিস, তাহলে তুই সামনে খুব ভয়াবহ কিছু একটার সম্মুখীন হবি। শুধু তুই একা না। তিনটে পরিবারের সকলেই এর জন্য সাফার করবে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে পরিবারের প্রতিটি মানুষ। সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাবে। তবুও আমি আশাবাদী। বিশ্বাস করলাম তোকে। এখন আমি দেখি শ্রুতির কোনো ব্যবস্থা করতে পারি কিনা।’
#চলবে,
#চলবে,