#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ৩৭
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
অন্ধকার ঘর। খোলা জানালা দিয়ে বাহিরের আলো পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিছানার এক কোণে গুটিশুটি মেরে বসে আছে জান্নাত। কিছুক্ষণ ফুঁপিয়ে কেঁদে জানালার গ্রিল চেপে ধরল সে। গলা বসে গিয়েছে। ভাঙা গলা নিয়েই সে বলল,
‘তুমি খুব হিংস্র হয়ে গেছ জিসান। ছোট বেলায় তো তুমি এমন ছিলে না! আমি একটু পড়ে গেলে বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে, যেটা দ্বারা ব্যথা পেতাম তুমি সেটাকে মেরে দিতে। কিন্তু এখন তুমি নিজেই আমাকে মারো। কষ্ট দাও। ব্যথা দাও শুধু। আমার ভালো লাগে না এটা। বুক ফেটে কান্না পায়। মেনে নিতে পারি না আমি। আমাকে ব্যথা দিয়ে তুমি খুব খুশি হও তাইনা? তোমার কাছে আমি এতটাই খারাপ?’
আবারও কান্নায় ভেঙে পড়ে জান্নাত। দু হাটুর ভাজে মুখ লুকিয়ে কাঁদছিল জান্নাত। এমতাবস্থায় কারো গলা খাঁকারির শব্দে মাথা তুলে তাকায় সে। অন্ধকারে মুখ অস্পষ্ট হলেও জিসানকে চিনতে জান্নাতের একটুও অসুবিধা হয়নি। জান্নাত ভয়ে গুটিয়ে গেল। গলা শুকিয়ে এলো, সাথে ঘামতেও লাগলো। জিসান বেডসাইড ড্রয়ারের উপরে থাকা ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিতেই ভয়ে কাঁপ ধরে গেল জান্নাতের শরীরে। একেবারে দেয়ালের সাথে গিয়ে ঠেকলো জান্নাত। জিসান বিছানার উপরে গিয়ে বসতে বসতে বলল,
‘ভয় পাসনা। আমি তোকে মারতে আসিনি। এদিকে আয়।’
জান্নাতের মন থেকে ভয় যেন কাটছেই না। বরং জিসানের শান্ত-শীতল গলা শুনে ভয়ের আকার যেন কয়েক ধাপ তীব্র হলো। জান্নাতের থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে জিসান আবারও বলল,
‘আমি এখানে আসতে বলেছি না! আচ্ছা আসতে হবে না। আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি খেয়ে নে।’
জান্নাত খেয়াল করলো জিসানের হাতে খাবারের ট্রে। জিসান ট্রেটা একটু এগিয়ে জান্নাতের কাছে নিয়ে গেল। জান্নাত কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘আ-মার খি-দে নেই।’
‘খিদে নেই মানে? তুই কি পেয়েছিস? বাবা-মার কাছে বকা শোনাতে চাস আমায়? সারাদিন কাজ করে এসে এসব নাটক দেখতে মন চায়না কিন্তু! তোর জন্য খামখা কতগুলো কথা শুনতে হলো বাবার থেকে। মা খাবারের কথা বলতে এসে ফিরে কেন গিয়েছিল? কি সমস্যা তোর হুম?’
গলা তুলে বলে ফেলে জিসান। ফলে জান্নাতের মনে হলো জিসান আবারও ওকে মারতে পারে। তাই ভয়ে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। জিসান তা দেখে নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করলো। তারপর বলল, ‘স্যরি, তুই আমার রাগ না তুলে খেয়ে নে জলদি। তাহলে আর ধমক দেব না।’
জান্নাত নিজ খেয়ালেই আছে। জিসানের কথা কানে নিল না সে। এবার জিসান বেশ রেগে মেগে জান্নাতের কাছে চলে যায়। তারপর জান্নাতের ডান হাত জাগিয়ে বলল, ‘কি বলেছি শুনিসনি? খেতে বলেছি আমি।’ বলে চাপ দিল জান্নাতের হাতে। জান্নাতকে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠতে দেখে জিসান জান্নাতের হাতের দিকে খেয়াল করলো। হাতের তালুতে শুকনো রক্তের দাগ। দুহাতে ওড়না পেচানো। পরমুহূর্তেই জিসানের মনে পড়ে গেল জান্নাতকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার বিষয়টা। জিসান জান্নাতের একহাতের ওড়না হেঁচকা টানে খুলে ফেলতেই জমাট বাঁধা শুকনো রক্তের টানে কেটে যাওয়া কাঁচা স্থান থেকে আবারও ব্লিডিং হতে শুরু করে দিল। জান্নাত পুনরায় ব্যথা পেয়ে আঁতকে উঠল। জিসান এক মুহুর্ত দেড়ি না করে পুরো রুমের লাইট অন করে নিল। তারপর ফ্রাস্ট্রেড বক্স এনে জান্নাতের হাত ড্রেসিং করে দিল। জিসান ধিরে ধিরে ড্রেসিং করলো যাতে জান্নাত ব্যথা না পায়। এরপর হাত ধুয়ে খাবারের লোকমা ধরে জান্নাতের সামনে। জান্নাত হা হয়ে তাকিয়ে আছে জিসানের দিকে। জান্নাত এতক্ষণ জিসানের কাজগুলো অবাক চোখে দেখলেও এখন যেন জান্নাত তার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না কোনো ভাবে।
‘এভাবে হা হয়ে তাকিয়ে থাকার কিছু নেই। হাত ড্রেসিং করিয়ে দিয়েছি কারণ মা অথবা বাবা দেখে ফেললে আমার জন্য বিপদ হয়ে যাবে। আর তোর হাত যেহেতু ব্যান্ডেজ করা, সেহেতু হাত দিয়ে খেতে পারবি না তুই। তাই আমি খাইয়ে দিচ্ছি। জাস্ট এটাই। নইলে আমার ঠ্যাকা পড়েনি যে তোকে নিয়ে ভাববো।’
জান্নাত অস্ফুটে বলল, ‘আমি জানি সেটা।’
‘জানা ভালো। এবার হা কর। আমার তোকে নিয়ে পড়ে থাকার সময় নেই। প্রচুর কাজের চাপ। খুব টায়ার্ডও। ঘুম পাচ্ছে আমার। সো ডু ফাস্ট।’
জান্নাতের খুব খুদা লেগেছিল বলে মানা না করে বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নিল।
____________________________
রিমি রুমে ঢোকা মাত্রই আহসান বলে ওঠে,
‘এতক্ষণ কোথায় ছিলে রিমি?’
‘তিসুর কিছু কাজে সাহায্য করছিলাম। একা পারছিলনা। তাই ভাবলাম করে দেই আমি।’
‘এতকিছু তো আমি জানতে চাইনি! তিয়াসার সাথে ছিলে এটা বললেই হতো।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। একটা বললেই হলো। তোমার কাজ কি শেষ হয়েছে?’
‘না,কেন?’
‘এখনো শেষ হয়নি? আজকে বসেছো ল্যাপটপ নিয়ে?’
‘তুমি কিছু বলবে নাকি? আর এটা তো কথা ছিলনা রিমি! তুমি বলেছো এখানে নিয়ে আসতে, আমি নিয়ে এসেছি। আমি তো বলিনি কাজ করবো না।’
‘না তেমন কিছু না। আসলে, তোমার ফোনটা একটু লাগতো। আমি তিসুর,,,,’
রিমি ওর পুরো কথাটা শেষ করার আগেই আহসান ওর ফোন এগিয়ে দিল। তারপর বলল,
‘নাও।’
‘থ্যাঙ্ক ইউ। তুমি কত ভালো গো। তুমি নিশ্চিন্তে কাজ করো, আমি তিসুর রুম থেকে এক্ষুনি আসছি।’
রিমি আহসানের হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে ভোঁ দৌড় দিল।
তিয়াসা দরজা খুলেই ঘুমিয়ে গিয়েছে। রিমি তিয়াসাকে ঘুমিয়ে যেতে দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারলো না।
‘এই মেয়েটার সাথে ঘুমানোর কম্পিটিশন করলে দুনিয়ার কেউ-ই ওকে হারাতে পারবে না হুহ! মাত্রই তো ওকে সজাগ দেখে গেলাম। ওর নাকি আবার চিন্তা! এত চিন্তার মধ্যেও শান্তিতে ঘুমিয়ে যেতে পারে কেউ? এটা শুধু তিসুর দ্বারাই সম্ভব। হিহিহি।’
কথাগুলো বলে রিমি আহসানের ফোনে মনোযোগ দিল। ওয়ালপেপারে ওর আর আহসানের বিয়ের ছবিটা দেখে মুচকি হাসে রিমি। পরক্ষণেই ওর মনে হলো এখানে আসার মূল কারণ। তারপর ফোন ঘেটে কাউকে কল দিয়ে ফোন কানে ধরল। সাথে সাথে রিমি ওপাশ থেকে শুনতে পেল।
‘হোয়াট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ! তুই আমাকে মনে করলি আহসান? আমি তো তোকে নিয়েই ভাবছিলাম। কিন্তু তুই কিভাবে বুঝলি বলতো?’
#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ৩৮
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
‘আমি মিসেস আহসান বলছিলাম মিস স্রুতি।’
লাইনের ওপাশ থেকে আহসানের বিপরীতে রিমির কন্ঠ শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল স্রুতি।
স্রুতি কর্কশ শব্দে বলল, ‘ওহ, তাহলে তুমি?’
‘হুম আমি। কেন আশা করোনি?’
‘কি চাই? কি করতে ফোন দিলে আমায়?’
‘মুহুর্তেই গলার স্বর পাল্টে গেল! অদ্ভুত তো তুমি।’
‘গলার স্বর পাল্টানোই কি স্বাভাবিক নয়? আহসানের ফোন তোমার হাতে কেন?’
রিমি হাসলো। এক প্রকার হেসেই চলেছে। যা স্রুতির মোটেও ভালো ঠেকলো না। স্রুতির কপালে রাগের ভাজ পড়লো। সে গলায় রাগী ভাব আরো স্পষ্ট করে বলে উঠল, ‘তোমার হাসতে হলে তুমি কল কেটে হাসো রিমি।’
রিমি হাসি থামিয়ে কৌতুক করে বলল,
‘প্রথমত, আমার হাসবেন্ডের ফোন আমার হাতে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর দ্বিতীয়ত, আমার কাছে আজাইরা সময় নেই যে তোমাকে কল দেব। তবে না চাইতেও বাধ্য হলাম আমি।’
‘কি এমন দরকার পড়ল তোমার যে আমার শরণাপন্ন হতে হলো?’
‘তোমার মতো নোংরা মনের মেয়ের ছায়া পাড়াবারও কোনো কুরুচি নেই আমার। তুমি আমার বোনকে বিরক্ত কেন করো তাই বলো।’
‘মানে!’
‘আকাশ থেকে পড়লে যেন? বুঝতে পারোনি নাকি?’
‘তুমি কি বলতে চাইছো?’
‘এটাই যে আমার ছোট বোন তিয়াসাকে ইদানীং তুমি বিরক্ত কেন করছো? ওতো ছোট মানুষ। কিন্ত তুমিতো বড়!’
‘ওহ, তাহলে জেনে গেছ। এটা যখন জেনেছো তাহলে জিসানের বিষয় টাও নিশ্চয়ই জেনে গেছ।’
‘হুম জানতে পারলাম আজ। তুমি তোমার ভাইকে সামলাও। তাকে বোঝাও তার স্ত্রী আছে।’
‘আশ্চর্য! আমার ভাইকে আমি কেন সামলাবো?’
‘তুমি জানো না কেন সামলাবে?’
‘অফকোর্স জানি না। ওতো ভুল কিছুই করেনি। ভালবাসা কি ভুল?’
‘ভুল নয়। কিন্তু তার বিয়ে হয়ে গেছে।’
‘বিয়ে হয়েছে মানলাম। কিন্তু জিসান তো ইচ্ছে করে জান্নাতকে বিয়ে করেনি। ওকে ব্ল্যাকমেইল করে জোর করে বিয়ে করানো হয়েছে। তুমি তো সবই জানো রিমি।’
‘তাই বলে আমার বোনকে বিরক্ত করবে তোমরা ভাই-বোন মিলে?’
‘কথাটা বিরক্তির নয়। তুমি বিচার করে দেখ আমার ভাইয়ের সাথে পুরোপুরি অন্যায় করা হয়েছে। ওর মতের বিরুদ্ধে সব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ওর উপর। তুমি নিশ্চয়ই নির্বোধ নও।’
‘আমি নির্বোধ নই মানলাম। কিন্তু বড়দের সিদ্ধান্তের উপর কথা বলা মানে বেয়াদবি। সেটা নিয়ে আমি কিছুই বলতে চাইনা।’
‘উচিত কথা এড়িয়ে যাচ্ছো তাইনা?’
রিমি এতক্ষণ শান্ত গলায় কথা বললেও এখন যেন আর তা পারলো না। প্রচন্ড আকারে রাগ চড়ে গেল রিমির মাথায়। রিমি বলল,
‘তোমার উচিত কথা মানে নিজের স্বার্থ। আপন স্বার্থে এতটাই মগ্ন হয়ে গেলে যে নিজের আপন ভাইকে বলি দিতে নেমে গেলে?’
‘মুখ সামলে রিমি!’
‘এখন খারাপ লাগছে কেন? তুমি বুকে হাত রেখে বলো এতে তোমার কোনো স্বার্থ নেই।’
‘তুমি কি ইঙ্গিত করছো বলোতো?’
‘সেটা তুমি আমার থেকেও ভালো জানো। অত কথা বাদ। আমি যেটা বলতে ফোন দেওয়া। তুমি আর আমার বোনের ত্রিসীমানায় ঘেঁষবে না বলে দিলাম।’
‘আমি আমার ভাইয়ের জন্য সব করতে পারবো। তার জন্য অবশ্যই আমাকে তোমার বোনের কাছে ঘেঁষতে হবে।’
‘আমার বোন কিন্তু এসব নিতে পারছে না। হাসি মজায় মেতে থাকা মেয়েটা ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছে প্রায়। সব কিছুর জন্য তুমি দায়ী শুধু।’
‘আমি বললাম না আমি আমার ভাইয়ের জন্য সব করতে পারি।’
‘তুমি তাহলে মানবে না। আচ্ছা ঠিক আছে। আমিও তিয়াসাকে বলবো সবাইকে সব বলে দেওয়ার জন্য। তারপর তোমার আর তোমার ভাইয়ের কি হাল হবে ভেবেছো?’
‘তুমি এটা কেন করবে?’
‘এছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না আমি। তবে এতেও কাজ না হলে পুলিশ আছে কি করতে?’
‘তুমি কি আমাকে থ্রেট দিচ্ছো?’
‘না, তবে এটা মুশকিল থেকে বের হওয়ার মুখ্য সলিউশন বলা যায়।’
‘তুমি সোজা বিষয় টা এত গোল গোল ঘোরাচ্ছো কেন রিমি?’
‘আমি ঠিকই করছি। এবার তুমি ভেবে বলো কি করবে?’
‘আমি তোমার থ্রেটে ভয় পাইনি বুঝেছো?’
‘ওকে, ঠিক আছে আমিও আহসানকে বলবো এসব শর্ত টর্ত যাতে না মানে।’
‘মানে?’
‘তুমি যে আহসানকে শর্ত দিয়েছিলে সেটার কথা বললাম।’
‘আহসান কেন মেনে নিবে তোমার কথা?’
‘বাধ্য থাকিবে। কারণ সবাই যদি জিসান আর তিয়াসার বিষয় টার সাথে তুমি এতদিন যা যা করেছো তার সবটাই জেনে যায় তাহলে আমার দাদি শ্বাশুড়ি কিছু না কিছু উপায় ঠিক বের করবেন। তখন জিসান আর জান্নাতকে আলাদা করা তো যাবেই না তার সাথে তুমিও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না।’
স্রুতি ভয়ে ঘামতে শুরু করলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল যেন। সে কোনমতে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল, ‘তুমি এটা করতে পারো না রিমি।’
‘আমার এটা করার কোনো ইচ্ছে নেই বিশ্বাস করো। কারণ এটা করলে জিসানের উপর আরও জোরজবরদস্তি করা হবে। কিছুটা অপমান, বকাঝকা সহ্য করতে হবে ওকে। তোমার আপন বাবা-মাও তোমার আর জিসানের বিরুদ্ধে থাকবে তখন। কেউ তোমাদের পাশে থাকবে না। কারণ ভুল তো ভুলই হয়। মনমালিন্য তৈরি হবে। এক কথায় বিশাল এক ঝামেলার সৃষ্টি হবে।’
‘তাহলে এসব কেন বলছো অযথা?’
‘অযথা নয় মিস স্রুতি। আমি এটাই করবো যদি তুমি আমার বোনকে বিরক্ত করা ছেড়ে না দাও তবে।’
‘ঠিক আছে,তাই হবে। আমি আর তোমার বোনের সামনে যাব না।’
‘এইতো লাইনে এসেছো। আর নিজেকে ভালো করার চেষ্টা করো দয়া করে। জোর করে ধন-দৌলত পাওয়া গেলেও ভালবাসা পাওয়া যায়না।’
‘তাহলে আমার ভাইয়ের উপর জোর কেন খাটানো হলো?’
‘এটা অন্যায় হয়েছে ঠিক। তাই বলে আমার বোনের সাথে অন্যায় কেন হবে? যাই হোক তোমার শর্ত মোতাবেক ৩মাস দেখি কি হয়। তারপর যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সব বুঝে শুনেই নেওয়া হবে। তোমার ভাই যদি তখনও জান্নাতকে মেনে না নেয়, তাহলে মুক্তি পেয়ে যাবে।’
‘ওকে তাই হোক। অপেক্ষায় থাকবো সেই দিনের। তবে আমার বিশ্বাস, জিসান জান্নাতকে কখনোই মনে জায়গা দেবে না।’
‘সে ভাগ্য বলবে। তুমি আমি আজগুবি কিছু বললেই তা সত্যি হয়ে যাবে না।’
বলেই রিমি কল কেটে দিল।
_________________
ঘুম থেকে জেগেই জান্নাত চোখ কচলাতে কচলাতে নড়েচড়ে বসলো। জিসান জান্নাতকে উঠতে দেখে কয়েক কদম এগিয়ে এসে বলল,
‘ঘুমিয়ে থাক। এখন সবে ৬টা বাজে।’
‘আমার ঘুম নেই আর৷’ ধির গলায় বলে জান্নাত।’
‘ও, তাহলে ফ্রেশ হয়ে নে গিয়ে। আমি নিচে গিয়ে বলছি তোর ব্রেকফাস্ট দিয়ে যাবে।’
জান্নাত এক দিকে মাথা কাত করে বিছানা ছেড়ে উঠে গেল। এক পা বাড়াতেই কেন যেন মাথা ঘুরে গেল জান্নাতের। জান্নাত পুনরায় বিছানায় বসে পড়ে মাথা চেপে।
জিসান ভয় ও অবাক চোখে জিজ্ঞেস করল, ‘কি হয়েছে?’
জান্নাত ব্যথাতুর কন্ঠে উত্তর দিল, ‘মাথা চক্কর দিল কেন জানি।’
‘মনে হচ্ছে দুর্বল হয়ে গিয়েছিস। আচ্ছা আমাকে ধরে হাঁট।’
জান্নাতের চোখ বড় হয়ে এলো জিসানের কথায়। তা দেখে জিসান বলল, ‘এভাবে তাকানোর কিছুই নেই। এটা শুধুই মানবতা। বাবা অথবা মা তোকে এই অবস্থায় দেখার আগেই তোকে সুস্থ হতে হবে যেভাবেই হোক।’
জান্নাত আস্তে বলল, ‘ওহ।’
তারপর জান্নাত জিসানের কাঁধে ভর দিয়ে ওয়াশরুম অবধি গেল। জান্নাত বেরিয়ে আসলে বিছানার উপর নাস্তার প্লেট দেখলো। জিসান ধীরেসুস্থে জান্নাতকে খাইয়ে পেইন কিলারের মেডিসিন দিল। জান্নাত খেয়াল করল জিসান কোনো বিরক্ত বা রাগ ছাড়াই ওর সেবা করছে। জান্নাত জিসানের প্রতিটি কাজে দায়িত্বশীলতার পরিদর্শন পেয়েছে। যদিও জিসান শুধুই মানবতার খাতিরে বা নিজেকে বাঁচানোর জন্য এসব করছে। তবুও জান্নাতের কাছে এটাই যেন স্বামীর ভালবাসা। ও ঠিক এই জিসানকেই চায়।’
#চলবে,