দখিনা_প্রেম পর্ব ২০+২১

#দখিনা_প্রেম
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ২০ ||

—“জোহরার কী হইসে রে? ঘর থেকে বাইর হয় না ক্যা? কতো কাম আছে দেহে না?”

—“আম্মা হের অসুখ তাই আইতে পারবো না। তুমরা যা করার করো!”

বলেই কবির বাহিরে চলে গেলো। কবিবের ভাব-ভঙ্গি সা’দের কেমন সন্দেহ হলো। সা’দ রুবাইকে ডেকে কিছু বুঝিয়ে বললো। রুবাই সেসব বুঝতে পেরে মাথা নাড়িয়ে জোহরার ঘরে চলে গেলো। বাকিরা কবিরের দিকে নজর না দিয়ে যে যার কাজে লেগে পরলো। আজ আবিদের বড়ো বোন আদিবা তার স্বামী রাজিব এবং সন্তানদের নিয়ে আসছে। এখানেই তারা এবার ইদ করবে। আদিবার দুই মেয়ে। বড়ো মেয়ে লাবনী ৮ম শ্রেণির ছাত্রী আর ছোট মেয়ের নাম কলি যার বয়স মাত্র ৪। এই খবর শুনতেই সকলে তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত। সেহের তার বাবার হিংস্র চেহারা দেখে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে। কেউ তার হিংস্রতা বুঝতে না পারলেও সেহের ঠিকই বুঝেছে কারণ সেহের অনেকবার কবিরের এই হিংস্রতার খপ্পরে পড়েছে, তাই কবিরের এই হিংস্র চেহারা সেহের অনেক বেশি চেনা। রুবাই কিছুক্ষণ বাদে রুম থেকে বেরিয়ে সা’দের কাছে গেলো।

—“মেরে একেবারে আধমরা করে ফেলেছে। সারা শরীরে তার মারের চিহ্ন।”

রুবাইয়ের কথায় সা’দের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে মিনমিন করে বলে,

—“এই অমানুষ কখনো শুধরাবে না! এর কিছু একটা ব্যবস্থা নিতেই হবে।”

বলেই সা’দ বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। আর রুবাই, সে তো আগা-মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। সে চুপচাপ তার মায়েদের সাথে কাজে সাহায্য করতে লাগলো, সেহেরও যোগ দিলো। তপা এখনো বাড়ি ফিরেনি, সেদিকে কারো খেয়াল নেই।

সা’দ এক ক্ষেত পেরুতেই ঘন্টাখানেক আগের সেই লোকটাকে কবিরের সাথে দেখলো৷ কবির কিছু একটা নিয়ে যেন তাকে বোঝাতে চেষ্টা করছে। সা’দ খুবই সাবধানে তাদের দিকে এগিয়ে আড়ালে তাদের কথা শুনতে শুরু করলো।

—“আর তো মাত্র কয়টা দিন ভাই! দয়া কইরা উল্টা পাল্টা কিছু কইরেন না। আপনার তো ঘরে বউ আছে আর আমার ঘরে এতোগুলা মানুষ, তাই যা করার সবই গোপনে করা লাগবো। কাইল ইদ তাই কিছুদিন পর সব পরিকল্পনা মাফিক হইবো দেইহেন!”

—“আবার কোনো চিটারি করবি না তো!”

—“আল্লাহ’র কসম আমি কোনো চিটারি করি নাই বিশ্বাস করেন। আপনে খালি আমার ট্যাকাডার কথা ঠিক রাইহেন তইলেই সব হইয়া যাইবো। সেহেরকে আপনের লগেই বিয়া দিমু যা কেউ জানতে পারবো না।”

—“আইচ্ছা যা তোরে আরেকবার সুযোগ দিলাম। এহন যদি তুই কোনো গোলমাল করোছ রে কবির, তোরে যে কি করুম তুই ভাবতেও পারবি না এই কামাইল্লা কী কী করতে পারে।”

—“আপনে চিন্তা কইরেন না কইলাম তো। যাহোক এহন আমরা যাই কেউ হুইন্না ফেললে বিপদ।”

—“আইচ্ছা যা তুই আমিও যাই আশরাবরে খুঁজতে। কুত্তাডায় কই যাইয়া মরসে আল্লাহ মালুম।”

বলেই কালাম সেই স্থান ত্যাগ করলো। কালাম চলে যেতেই কবির একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সেও সেই জায়গা প্রস্থান করলো। ওরা চলে যেতেই সা’দ মানজুর মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফেললো। যখন সা’দ আড়ি পেতে শুনছিলো মানজু তাকে দেখে সা’দকে কিছু বলার আগেই সা’দ মানজুর মুখ চেপে ছিলো। ভাগ্যিস সা’দ মানজুকে চুপ করিয়ে দিয়েছিলো নয়তো ধরা দু’জন ভালো করেই পরতো। সা’দের সাথে সেও সবটা শুনে চোখ বড়ো করে ফেললো। সা’দ এবং মানজু উভয়ই ওদের পরিকল্পনা শুনেছে। মানজু অবাক হয়ে চেঁচিয়ে বললো,

—“এই লুইচ্চা বেডায় কিনা সেহেরকে বিয়া করবে? এতো সখ আইয়ে কইত্তে এই বেডার! আর কবিররা! এই বাল কেমন বাপ! সামান্য কিছু টাকার লোভে ফুলের জীবনটা নষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে! ফুল কি খেলার পুতুল যে যা ইচ্ছা তাই করবে!”

বলে আরও গালমন্দ করতে থাকলো মানজু। মানজু এক মুহূর্তের জন্য ভুলে গেলো সে সা’দের সামনে। এদিকে সা’দের বুকটা ধুকধুক করছে। বারবার মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে ফেলবে। নাহ সা’দ কিছু ভাবতে পারছে না। তাকে যা করার ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। ভেবেই সা’দ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

—“তোমার বান্ধুবীকে সাহায্য করত্র চাও তো?”

—“বুঝলাম না, কেমন সাহায্য?”

—“এই বদ লোকের খপ্পর থেকে বাঁচানোর?”

—“হ্যাঁ, অবশ্যই।”

—“তাহলে আমি যা যা বলছি তা করবা। তার আগে এটা বলো আবিদ এখন কোথায়?”

—“বাজারের দিকে থাকবে মনে হয়, নয়তো ব্রিজের দিকে। চিন্তা করবেন না, ব্রিজ দিয়েই বাজারে যেতে হয়, যদি ব্রিজে না পান বাজারে অবশ্যই পাবেন।”

—“ঠিক আছে, তুমি এখন বাসায় যাও বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি!”

বলেই সা’দ চলে গেলো। সা’দের দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো মানজু। সেহেরের প্রতি সা’দের ভাবনা দেখে মানজুর মনে আনন্দ কিছুটা দলা পাকালো৷ সে খুশিমনে নিজের বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো। তবে মনের মধ্যে ওই কামালকে নিয়ে তার একটা থেকেই গেছে।

—“কামাল কে আবিদ?”

—“কোন কামাল ভাই?”

—“ওইযে সকালে এসেছিলো?”

—“ওহ ওই ফন ব্যবসায়ী?”

—“হ্যাঁ। ওর সম্পর্কে যা যা জানো সব আমায় ক্লিয়ার করো।”

—“ওর ব্যাপারে আর কী ক্লিয়ার করবো। হালারপো বিশ্বসেরা লুইচ্চা! কতো মহিলা, বোনদের দিকে কুনজর দিয়েছে! ফালতু লোক পুরা! আর কামালের বড় পোলার কথা কী বলবো, সারাদিন জুয়া, বিড়ি, গাঁজা নিয়া পরে থাকে। কিন্তু ভাই আপনি তার ব্যাপারে জেনে কী করবেন!”

—“সত্যটা তোমাকে জানাতে চাইছিলাম না কিন্তু আগাম বিপদের জন্য তোমার সাহায্য বেশি প্রয়োজন, তাহলে শুনো….”

বলেই সা’দ বিয়ের থেকে শুরু করে একে একে কামালের ঘটনাসহ সবটা খুলে বললো। এদিকে আবিদ বিয়ের কথা শুনে নির্বাক হয়ে তাকালেও শেষে কামাল এবং কবিরের পরিকল্পনা শুনে তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। আবিদ হুংকার ছেড়ে বললো,

—“ওই কুত্তার বাচ্চারে আমি এখনই মেরে পুঁতে রাখবো, শালা নিম্নহারামী! আমার বোনের জীবন নষ্ট করতে এরা উঠেপড়ে লাগসে!”

—“দেখো আবিদ কান্ট্রোল ইওরসেল্ফ। সেহেরকে বাঁচাতে হলে আমাদেরও কঠিন প্ল্যান করতে হবে তাই শান্ত হও। রাগ কখনো কোনোকিছুর সমাধান হয় না, এই রাগ হচ্ছে শয়তানের কুমন্ত্রণা যার ফলে রাগের মাথায় আমার ভুলপথে চলে যাই! তাই রাগ বর্জন করো। ঠান্ডা মাথা পরিকল্পনা করে ওদের উচিত শিক্ষা দিবো। তার আগে তোমার বোনকে প্রতিবাদ করাতে শিখতে হবে।”

—“ও কীভাবে শিখবে ভাই, ফুল তো কোনোদিনও ওদের মুখফুটে কিছু বলেনি, এখন বলবে কীভাবে?”

—“সেটা নাহয় আমার হাতে ছেড়ে দাও। আর প্রবাদ শুনেছো তো, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজন সমান অপরাধী’। এই প্রবাদটা তোমার বোনের মাথায় ভালোভাবে ঢুকাতে পারলেই ব্যাস! খেল খতম!”

আবিদ মুগ্ধ হয়ে সা’দের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ পর অনুনয় সুরে বলতে লাগলো,

—“বিশ্বাস করেন ভাইয়া, আপনাকে যেদিন থেকে চিনেছি সেদিন থেকে আপনাকে যেন চিনেই চলেছি এবং জীবনের নানান ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারছি। আপনার বিষয়ে যেন আমার জানার শেষ নেই, তবে আপনাকে যতটুকু চিনেছি এবং বুঝেছি আপনি খুবই নরম এবং সৎ মানুষ। এতো বড় মাপের মানুষ হয়েও আমাদের ফুলকে মেনে নিলেন। আসলেই আমাদের ফুলের কপাল ফুলের মতোই। আমার বিশ্বাস ছিলো আল্লাহ আমাদের ফুলের কষ্টের সমাপ্তি একজন ভালো মানুষ দ্বারাই করাবেন। দেখেন আমার বিশ্বাসটা কীভাবে মিলে যাচ্ছে। সেই অনাকাঙ্ক্ষিত সময় বেশি দূরে নয়।”

সা’দ আবিদের কাঁধে হাত দিয়ে বাঁকা হেসে বলে,

—“চিন্তা করিও না, রিলেক্স। তোমার বোনকে আমি ইনশাল্লাহ স-সম্মানে আমার ঘরে তুলবো। আমার রাজ্যের রাণী হবে সে, কথা দিলাম।”

—“আপনাকে আমি বিশ্বাস করি ভাই। আমি জানি আপনি কখনো আমার বোনকে কষ্টে রাখবেন না। এখন চলুন আপনার কী কী পরিকল্পনা সেসব অনুযায়ী কাজ তো করতে হবে!” সা’দ মাথা নাড়ালো।

বিকালের দিকে আদিবা আসলো। আদিবা সেহেরকে সুস্থ দেখে ভিষণ খুশি। আদিবা সেহেরকে অনেক ভালোবাসে একদম নিজের বোনের মতো। সেহেরের কষ্ট সহ্য হয় না দেখে সে খুবই কম আসতো বাবার বাড়িতে কিন্তু আজ সেহেরকে সহ পরিবারকে একসাথে দেখে সে ভিষণ খুশি। আদিবা এবং রুবাই সমবয়সী তাই দুজনে কথোপকথনে ব্যস্ত হয়ে পরলো। রিমন, কলি খেলছে আর তাদের পাহারা দিচ্ছে লাবণ্য। মাঝেমধ্যে সেও তাদের খেলায় যোগ দেয়। রাজীব এবং তানজীল টুকটাক আলোচনা করছে। তখনই তপা বাসায় ফিরলো। তপা ক্লান্ত থাকায় সোজা নিজের মায়ের ঘরে গেলো কারণ, এই কয়েকটা দিন সে সেখানেই থাকে। ঘরে গিয়ে জোহরাকে খেয়াল না করেই সে বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে পরলো। জোহরা মেয়ের এই অবহেলা নিতে পারলেন না, আঁচলে মুখ চেপে কাঁদছে সে। এদিকে সেহের নিজের রুমে বসে আছে। মাগরিবের নামাজ শেষ করে উঠতেই দেখলো সা’দ দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সা’দকে দেখে সেহের জায়নামাজ ভাঁজ করতে করতে ইতস্তত হয়ে বললো,

—“কিছু বলবেন?”

—“হ্যাঁ। বলছি ছাদের চাবীটা আনতে পারবে?”

—“কেন?” চোখ বড় বড় করে বললো সেহের।

—“না মানে আজ তো চাঁদরাত। আকাশে সুন্দর চাঁদ উঠেছে। ছাদ থেকে পরিবেশ নিশ্চয়ই মনোমুগ্ধকর হবে।”

—“ও আচ্ছা। চাবীর দরকার নেই আপনি যেতে পারেন, ছাদ খোলাই আছে।”

—“ওহ তাহলে চলো!”

—“চলবো মানে? আমি আবার কোথায় যাবো?”

—“কেন ছাদে? বউ থাকলে একা কেন চাঁদবিলাস করবো? তুমিও যাবা।”

বলেই সেহেরের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। কেউই তাদের একসাথে দেখতে পেলো না কারণ, উপরে কেউ নেই তারা দুজন ছাড়া। সা’দ যেন সব বুঝে শুনেই মাঠে নেমেছে। এদিকে সেহের বারবার সা’দের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু সা’দও নাছোড়বান্দা। ছাদে এসে রেলিংয়ে হাত রেখে দুজন চাঁদ দেখছে। চাঁদের আলো খুবই স্বল্প। কিছুক্ষণ পর পর শীতল হাওয়া গাঁ ছুঁয়ে যেতেই কেঁপে উঠে সেহের। পরিবেশটা ভালোই লাগছে সেহেরের তবে তার চেয়েও বেশি অস্বস্তি লাগছে সা’দ পাশে দাঁড়ানোর কারণে। সা’দ বিষয়টা বেশ উপলব্ধি করছে। তাদের মধ্যে কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো। নিরবতা ভেঙ্গে সা’দ বলে উঠলো,

—“কী জন্যে তুমি তোমার সৎমা আর বাবার অত্যাচার সহ্য করো?”

সেহের অপ্রস্তুত হয়ে সা’দের দিকে তাকালো। অতঃপর আমতা আমতা করে বললো,

—“মানে কারণ কই থেকে আসবে?”

—“কারণ তো নিশ্চয়ই আছে নয়তো তুমি এতোকিছু চুপচাপ সহ্য করতে না, অবশ্যই পরতিবাদ করতে!” সা’দের কথায় সেহের চুপ করে মাথা নিচু করে রইলো। সেহেরের মাথানত করতে দেখে সা’দ সেহেরকে নিজের দিকে ফেরালো অতঃপর সেহেরের থুঁতনি ছুঁয়ে মাথা উঁচু করে দিয়ে মাদকতা চাহনী দিয়ে বললো,

—“সা’দ বিন সাবরানের বউ কোনো কিছুতেই মাথা নত করবে না। তার দৃষ্টি থাকবে সামনে, নিচে তাকানোর অধিকার আমি তাকে দেইনি!”

সেহের মুগ্ধ হয়ে সা’দের ঘোরলাগা চাহনীর দিকে তাকিয়ে রইলো। সেহেরের অজান্তেই তার চোখের কোণা বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো। সা’দ সেহেরের দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে চোখের জল মুছে দিয়ে আবেগীসুরে বললো,

—“এই বউ কাঁদছো কেন?”

—“ভালোবাসেন আমাকে?” সা’দের চোখের দিকে তাকিয়েই কাঁপা গলায় বলে উঠলো সেহের। সা’দ মুচকি হেসে সেহেরের কপালে নিজের কপাল ঠেকালো। এতে যেন সেহেরের দম উড়ে যাওয়ার মতো। সা’দের উষ্ণ নিঃশ্বাস তার মুখে পরছে। সা’দের প্রতিটা নিঃশ্বাস শুনতে পারছে সেহের। সা’দ মৃদ্যু মাথা নেড়ে বলে,

—“হ্যাঁ মায়াবীনি। ভালোবাসি তোমাকে, অনেক বেশি ভালোবাসি! তুমি কী জানো তোমার এই ডাগরআঁখি জোড়া আমায় কেমন মাতাল করে দিয়েছিলো? তোমার এই ভয়ংকর মায়ার জ্বালে সেই কবেই ফেঁসেছি, সেই ফেঁসে যাওয়ার পর আর ফিরতে পারিনি। ডুবে গেছি তোমার মায়ার গভীর সাগরে। হাতটা ধরে উঠাতে সাহায্য করবে না?”

সা’দের এমন উত্তর একদমই আশা করেনি সেহের। সা’দের উত্তরের বিপরীতে সে কী বলবে, তার বাকশক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছে সা’দের কথার মাঝে। সা’দ সেহেরের অস্বস্তি বুঝতে পেরে কথা ঘুরিয়ে বলে,

—“দেখো সেহের তোমায় আমার মনের কথা অলরেডি বলে ফেলেছি। এখন যদি রিমন, দাদীমা এবং আমার কষ্ট দেখতে না চাও তাহলে প্লিজ সবটা খুলে বলো আমি জানতে চাই। আমি সহ্য করতে পারছি না তোমার এই কষ্টগুলো।”

সা’দের আবেগীমাখা কথাগুলো শুনে সেহের নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না। সে সা’দের বুকে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো। সা’দ পরম আবেশে তার প্রেয়সীকে জড়িয়ে ধরে সেহেরকে শান্ত হওয়ার সময় দিলো। সেহের কিছুক্ষণ কেঁদে থেমে থেমে বলতে লাগলো,

—“আমার মা ওয়াদা দিয়েছে আমাকে যেন আমি কখনো এই বাড়ি, এই সংসার ছেড়ে না যাই। আমি পারিনি আমার মায়ের শেষ ওয়াদার খেলাপ করতে। তাই আজ অবধি কখনো তাদের কিছু বলতে পারিনি।”

সা’দের এতক্ষণে সবটা ক্লিয়ার হলো। কিন্তু তার মনে খটকা লাগলো। সেদিন তার দাদীমার থেকে সব অতীত জেনেছিলো৷ এবং দাদীমা সা’দকে এও বলেছিলো সেহেরের মা সেহেরকে নিয়ে আলাদা এবং কবির আলাদা থাকতো, তাহলে সেহেরের মা কবিরের হাতে খুন হলো কী করে আর সেহেরের মা খুন হওয়ার কী করেই বা সেহেরকে এই নরকে থাকতে বললো। কোনো এক জায়গায় একটা প্যাঁচ তো নিশ্চয়ই আছে, তাই মনে হলো সা’দের। সেহেরকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে সেহের ভ্রু কুচকে বলে,

—“তোমার মা কী নিজের মুখে তোমাকে ওয়াদা দিয়ে গেছিলো?” সেহের মাথা নাড়ায় যার অর্থ “না”।

—“না। সৎমা আমাকে বলেছে।”

এবার যেন সা’দের সকল হিসাব মিলে গেলো। এই পরিবারটা যেমন খুনও করতে পারে তেমনই ছলনায় অভিজ্ঞ। আর সেহেরও সেই ছলনার ফাঁদে পা দিয়ে এসেছে বারংবার।
#দখিনা_প্রেম
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ২১ ||

ইদের দিন সকালে সা’দ পাঞ্জাবির বোতাম লাগাতে লাগাতে ভুলবশত রুবাইয়ের ঘরের জায়গায় তপার ঘরে ঢুকে পরে। কিছু বলতে সা’দ সামনে তাকাতেই দেখলো সেহের কী সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত মুখে যেন আরও দশগুণ মায়াবী লাগছে। সা’দ জানে না এই মেয়েটিকে উপরওয়ালা এতো নিখুঁত সৌন্দর্য কীভাবে দিলো? যেমন রূপ তেমনই তার সৌন্দর্য। একদম চোখ ধাঁধানো। সা’দ যেন নেতিয়ে পরলো সেহেরের রূপে। কেমন ঘোর লেগে আসছে তার। তখনই নিচে ডাকাডাকির শব্দ শোনা গেলো আর সা’দের ঘোর কেটে গেলো। সেহেরকে একপলক দেখে সে নিচে চলে গেলো। অতঃপর সকল ছেলেরা ইদের জামাতের জন্য বেরিয়ে গেলো।

—“দাদী, পান খাচ্ছো?”

—“হ নায়ক, খাইতাসি। তবে এবারের পানগুলা কেমন জানি, এই কবিররায় ভালা পান কী পায় না ধুর ধুর!”

—“দাদী কিছু কথা জানার ছিলো!”

—“বল তুই নায়ক কী কবি?”

—“আসলে দাদীমা সেদিন বললে না সেহেরের মাকে ছোট চাচা মেরেছে। কাহীনি কী বলবে?” মুহূর্তেই দাদীমার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা মলীন হয়ে গেলো। ধীরে ধীরে পান চিবুতে চিবুতে বলা শুরু করলো,

—“ফুলের জম্মের পর সুফিয়া ওরে নিয়া আলাদা সংসার করতো। তার কারণ আমি প্রথমে না জানলেও পরে জানসি যে আমার বইনের মাইয়া জোহরার লগে কবির পরকিয়ায় লিপ্ত। অথচ মাইয়াটা কখনো আমারে এই কথা জানায় নাই। সুফিয়ার বাপ-মা ছিলো না তাই সে পাশের গ্রামে সুফিয়ার এক কাকার বাড়িত থাকতো, একদিন ফুলরে কবির ধইরা নিজের কাছে আইন্না রাখসিলো। সুফিয়া খবর পাইয়া কবিরের কাছে গেছিলো। হেইদিন আমি ছিলাম আমার বড় পুঁতের বাড়ি। কবির আর সুফিয়ার ভিত্রে কথা কাটাকাটি হইতে হইতে একসময় কবির রাইজ্ঞা মাইডারে থ্রাপাইয়া হুতাইয়া লাইসে। তারপর গলায় পারা দিয়া!”

বলেই দাদীমা হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। সা’দ চুপ করে বসে রইলো কিছু বলার মতো অবস্থা তার নেই। দাদীমা কিছুক্ষণ পর আবার বলে উঠে,

—“সুফিয়ার খুন আবিদ নিজ চোক্ষে দেখসে। দেইখা আমারে যাইয়া বলসে। আমি এইসব হুইন্না তহনই ছুইট্টা গেছি কিন্তু কবির বা সুফিয়ারে কোনোহানে পাইলাম না। রাইতে পুলিশরে খবর দিতেই আমাগো দীঘিতে সুফিয়ারে ভাইসসা থাকতে দেখসে। পুলিশরে সব ঘটনা খুইলা বললেও তারা কয় প্রমাণ ছাড়া কিছুই করতে পারবো না। তাই কিছুই হইলো না, সবাই ধইরা নিলো সুফিয়া নিজে মরসে। দুঃখের কথা আর কী কমু নাতনি! হেই থেইকা আমার ফুলডা কতো অত্যাচারিত হইসে। জম্মের পর থেইকা বহুত কষ্ট সইসে আমার ফুল। আমার ফুলরে আল্লাহ’য় কবে সুখ দিবো! ওর সুখ না দেখলে য্র মইরাও শান্তি পামু না।”

—“আজ যে তোমার ফুলের আরেক বিপদ দাদী, কিন্তু আফসোস তোমাদের বলতে পারলাম না। কিন্তু চিন্তা করিও না, তোমার ফুল আবার সুখী হবে, অনেক অনেক সুখী হবে। এখন শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।”

এদিকে সেহের বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। সেদিনের সা’দের সাথে কাটানো মুহূর্তটুকু সেহের এক মুহূর্তের জন্যেও ভুলতেও পারছে না। সা’দ সেদিন সেহেরকে অনেক কিছু বুঝিয়েছে এবং সেহেএ বুঝেছেও৷ কারণ, তার মা তাকে কথা দিয়েছে এই বলে সে ততোদিন ওদের কিছু বলতে পারবে না যতোদিন না সেহেরের বিয়ে হচ্ছে। সেহের তো বিয়ে করেছে তার মানে সে নিশ্চয়ই তার মায়ের ওয়াদাভঙ্গ করবে না। এই কয়েকদিনে সেহের ভেতরে ভেতরে নিজেকে শক্ত করেছে এবং নিজের মনে সাহসও জুগিয়েছে। সেহের এখন আর অন্যায় সহ্য করবে না, সবার আগে প্রয়োজন নিজেকে ভালোবাসা, অন্যের স্বার্থে নিজেকে বিসর্জন দেয়ার মতো মেয়ে সেহের নয়। তাই এখন থেকে অন্যায় দেখলেই তার মুখ চলবে৷ ভেবেই সেহের একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো৷

—“আরে তপা যে!”

তপার রাস্তা আটকিয়ে কথাটা বললো মানজু। তপা বেশ বিরক্ত হলো মানজুকে দেখে। তপার বিরক্তিমাখা মুখ দেখে মানজু মনে মনে হাসলো। অতঃপর নিজেকে সামলে বললো,

—“কই যাওয়া হচ্ছে হু?”

—“তোমাকে বলবো কেন? আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাবো!”

—“নিজের বাড়ির খবর রাখো?”

—“মানে?” ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো তপা। মানজু হাত দিয়ে ইশারা করে তপাকে কাছে ডাকলো৷ তপা মানজুর দিকে এগিয়ে যেতেই মানজু ফিসফিস করে কিছু বললো। এতে তপার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।

—“সত্যি?”

—“হ্যাঁ।”

—“কিন্তু মা যে বললো সা’দের সাথে আমার বিয়ে হবে?”

—“আরে মূর্খ মেয়ে, তোমার মা আর বাবা তো ফুলকে তাড়ানোর জন্য এসব করছে। এখন তুমি ভেবে দেখো তো ফুলের ইয়া বড় বাড়িতে থাকবে কিন্তু তুমি সাধারণ কাঠের বাড়িতে থাকবে৷ এটা কী কোনোদিন সম্ভব বলো? কই তুমি আর কই ফুল। ওর মতো মেয়ের যোগ্যতা আছে নাকি এতো বড়ো বাড়িতে থাকার? জলদি বাসায় যাও আর খেয়াল রাখো!”

—“তোমার কথায় যে বিশ্বাস করবো এটা তুমি ভাবলে কী করে?”

—“বিশ্বাস হলে নিজে গিয়ে দেখো। বিকালে শুনেছি সকলে আদিবা আপুর শ্বশুরবাড়িতে যাবে তখন সকলের ফাঁকে এসব করবে!”

—“না আমি কিছুতেই হতে দিবো না। মা আমার সাথে এতোবড়ো প্রতারণা করবো, এর ফল তো তাদের ভোগ করতেই হবে!”

বলেই তপা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে উল্টো দিকে হাঁটা দিলো। তপা চলে যেতেই মানজু ফিক করে হেসে দিলো। অতঃপর মানজু ফোনে কারো নাম্বার ডায়াল করে বললো,

—“কাজ হয়ে গেছে, এখন ফাইনাল খেলার পালা।”

জোহরা যেন রাগে ফুঁসেই চলেছে। এই কয়েকটা দিন অনেক অত্যাচার করেছে কবির তার উপর। জোহরা কবিরের দিক চিন্তা না করে সেহেরকে সবকিছুর জন্য দোষারোপ করছে। সে নিশ্চিত যে সেহেরই এসব করছে। বাড়িভর্তি মানুষের জন্য সেহেরকে না পারছে গিলতে, না পারছে ফেলে দিতে। ঘাড়ের উপর উঠে লাফাচ্ছে যেন। এই অপয়াকে যতো তাড়াতাড়ি তাড়ানো যায় ততোই মঙ্গল। তখনই কবির এসে জোহরাকে তার অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদটি জানালো। এতে জোহরা যেন মেঘ না চাইতেও জল পেয়ে গেলো। কবির জোহরাকে কিছু শপিং ব্যাগ দিয়ে বেরিয়ে গেলো। জোহরা প্যাকেটের জামা-কাপড় দেখতে দেখতে পৈশাচিক হাসি দিলো। এবার সেহেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া যাবে।
তপা বাড়ি ফিরে চুপচাপ তার মায়ের উপর নজর রাখতে শুরু করলো। যতক্ষণ না প্রমাণ পাচ্ছে ততক্ষণে সে মুখ খুলবে না। বিকালে সকলে রেডি হলো, সেহেরের খাবারে কিছু মিশিয়ে দেয় যার ফলে সে ভিষণ ক্লান্তি এবং অসুস্থতা অনুভব করছে। এই অবস্থায় সেহের যেতে পারবে না বলে দিয়েছে। যেহেতু কবিরের পরিবার আগে থেকেই যাবে না তাই দাদীমার এই বাড়িতে একা সেহেরকে রেখে যেতে মন সায় দিলো না। তপাকে জিজ্ঞেস করলে সেও যাবে না বলে জানালো। দাদীমা থাকতে চাইলে সা’দ আবিদ মিলে তাকে জোর করে নিয়ে গেলো। দাদীমা যেতেই জোহরা এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তপা উপর থেকে মায়ের ভাব-গতি লক্ষ করে নিজের ঘরে চলে গেলো। অতঃপর জোহরা নিজের ঘর থেকে বেনারসিটা নিয়ে সেহেরের ঘরে চলে গেলো। সেহের তখন কিছুটা সুস্থবোধ করছিলো দেখে উঠে দাঁড়াবে এমন সময়ই জোহরা হাসিমুখে সেহেরের ঘরে হাজির হয়। সেহের কিছুটা ভ্রু কুচকালো।

—“কিছু বলবে মা?”

জোহরা হাসিমুখে বেনারসিটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
—“এটা পরে তৈরি হয়ে নে মা!”

—“তৈরি হবো মানে!”

—“মানে আজ তোর বিয়ে। এখন কথা না বাড়িয়ে জলদি তৈরি হ, বরপক্ষ কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে!”

জোহরার কথায় সেহেরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরলো। সেহের সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো আর চোখমুখে হালকা রাগ ফুটিয়ে তুলে বলে,

—“আমি বিয়ে করবো না, আপনি কী করে আমার অনুমতি ছাড়া আমার বিয়ে ঠিক করলেন? আমি কী একবারও বিয়ের কথা বলেছি!”

সেহেরের তেজি কথায় জোহরা চোখ গরম করে সেহেরের উদ্দশ্যে বলে,
—“এতো তেজ বাপরে! তাহলে তুইও শুইনা রাখা আজ তোরে আমি বিয়া দিমুই! তোর জন্য আমার সংসারে যতো অশান্তি। ভালোয় ভালোয় রাজি হ নয়তো তোরে যে কি করমু তুই ভাইবাও পাবি না। আমি চাই না এখন তোরে মার দিতে!”

—“আপনার চাওয়া না চাওয়ার মধ্যে কী আসে যায়? আমাকে কী খেলার পুতুল পেয়েছেন আপনারা? মানুষ মনে করেন না আমাকে? আমারও ইচ্ছা আছে, আমিও ভালো থাকতে চাই! এতোদিন কিছু বলিনি দেখে কোনোদিন বলবো না এমন কিছু ভুলেও মাথায় আনবেন না। আমার মাকে তো মেরেছেনই এখন আবার আমা…”

—“ওই বিয়াদপ মেয়ে চুপ! একদম চুপ। আর একটা কথা কইলে তোরে থাপ্রাইয়া কান লাল করে দিমু। যতো বড়ো মুখ নয় ততো বড় কথা! বিয়া হইবো মানে হইবোই৷ এই জোহরা কী জিনিস এখনো তুই বুঝোস নাউ! জলদি তৈরি হ! তোর মায়ের ওয়াদা কী ভুলে গেছোস!”

—“আমি জানি আপনি মাকে নিয়ে মিথ্যা বলছেন। আমার মা কোনো ওয়াদাই করেনি! কেন মিথায় বলে গেছেন এতোগুলা দিন?”

—“হা হা জেনে গেছিস যাক ভালো। তাহলে শুন, আমি শুধু চেয়েছি এখানের রানী হিয়ে বসবাস করতে। কিন্তু সংসার তো সামলাতে হবে? তাই সেই সংসার চালানোর ভয়ে আমি তোকে আমার কাছে রেখে দিয়েছি মিথ্যা ওয়াদার কথা বলে বলে আমার কাজ করিয়েছি তোকে। আর কিছু শুনতে চাস?”

বলেই বেনারসিটা সেহেরের হাতে ধরয়ে দিতেই সেহের সেটা জোহরার মুখে ছুঁড়ে মারলো। আজ কেন জানি না সেহের নিজের মধ্যে নেই, এদের প্রতি তার এতোটাই রাগ এবং ঘৃণা জমে আছে যা সেহের চিন্তাও করতে পারে না। সেহের তো অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়েছিলো মাত্র! সেখানে এতো বড় প্রতারণা তাও নিজের মৃত মাকে নিয়ে, সেহেরের যেন বুক ফেটে কান্না আসছে। কী করে পারলো সব বিবেচনা না করে সৎ মায়ের কথা শুনে। তার তো বোঝা উচিত ছিলো যারা তার মাকে খুন করতে পারে তারা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সব করতে পারে সব!
সেহেরের এহেম কান্ডে জোহরা তো তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। “সেহের” বলে চিৎকার দিয়ে সেহেরের গায়ে হাত তোলার আগেই সেহের তার হাত ধরে ফেলে।

—“এতোদিন আমার ভালো রূপ দেখেছেন এখন দেখবেন আমার নতুন রূপ! আমি কী জিনিস এখন আপনি বুঝবেন তাই ভুল করেও আমাকে থাপ্পড় কারার স্পর্ধা দেখাতে আসবেন না!”
জোহরা আরও দ্বিগুণ রেগে অকথ্য ভাষায় একটা গালি দিয়ে তার অপর হাত দিয়ে সেহেরের চুলের মুঠি ধরে দেয়ালে ধাক্কা দিলো যার ফলে অনেক জোরে সেহের কপালে আঘাত পেলো। সেহের আর্তচিৎকার দিয়ে কপালে হাত চেপে ধরলো৷ তরল কিছু অনুভব হতেই সেহের নিজের হাত কপাল থেকে সরিয়ে চোখের সামনে ধরে দেখলো, রক্ত! জোহরা বিশ্রী ভাষায় গালাগাল করে ঘর থেকে হনহন করে বেরিয়ে এলো। এদিকে কিছুক্ষণ পর সেহেরের মাথা কেমন ভার হয়ে আসছে। কপালে হাত রেখেও রক্ত পড়া বন্ধ করতে পারছে না। আস্তে আস্তে তার শরীরটা নিস্তেজ হয়ে আসছে৷ চারপাশটা কেমন ঝাপসা লাগছে। জ্ঞান হারানোর আগে তপাকে সে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। এরপর সেহেরের আর কিছু মনে নেই। এদিকে জোহরা রেগে বক্সার ঘরে আসতেই দেখলো কবির কালাম এবং কাজীসাহেব কে নিয়ে আসছে। ওদের দেখে জোহরার এতক্ষণে হুঁশ ফিরলো, সেহেরকে তো সে রাগের মাথায় মেরে এসেছে এখন কী জবাব দিবে তাদের? ভাবতেই জোহরার গাঁয়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। ঝামেলা হলে তো কবির তাকে আস্ত রাখবে না। ভাবতেইভতার গলা শুকিয়ে আসলো।
কামাল নতুন বরের মতো মুখে রুমাল দিয়ে বসে আছে যেন জীবনে বিয়ে করেনি। কবির হাসিমুখে তাদের আপ্যায়ন করে জোহরার কাছে এসে বলে,

—“সব ঠিকাঠাক তো?”

জোহরা ভয়ের চোটে আনমনে মাথা নাড়ালো যার উত্তর “হ্যাঁ”। কবির এতে তৃপ্তির হাসি দিলো। হেসেই বললো,

—” তাহলে যাও ওরে লইয়া আইয়ো, কাজী কইসে দেরী করতে পারবো না!”

জোহরা এবার ভয়ে কুঁকড়ে উঠে। সেহের নিশ্চয়ই অচেতন হয়ে পরে আছে। এখন কী করবে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। জোহরা রীতিমতো ঘেমে একাকার। জোহরাকে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কবির দিলো এক ধমক। ধমক শুনে সে উল্টো দিকে হাঁটা ধরতেই দেখলো সেহের বেনারসি পরিধান করে এক হাত ঘোমটা টেনে তাদের দিকেই আসছে। সেহেরকে এভাবে দেখে জোহরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। এর মানে সেহের জ্ঞান হারায়নি। ভাগ্যিস ঘোমটা টেনেছে নয়তো সেহেরের মাথার আঘাতটা দৃশ্যমান হতো। জোহরা জলদি সেহেরকে ধরে এনে কামালের পাশে বসিয়ে দিলো। সেহেরকে বসানোর পর জোহরা বিয়ের জন্য তাড়া দিতে থাকলো। যখন সেহেরকে কবুল বলতে বলা হলো তখন সেহের নড়েচড়ে উঠলো এবং কাজীকে হাত দিয়ে ইশারা করলো। কাজী সেহেরের ইশারায় কিছুটা এগিয়ে যেতেই সেহের কাজীর কানে কানে কবুল বললো। কাজী সেহেরের কবুলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠে। বিয়ে সম্পন্ন হতেই কামালের দুই ছেলে, বউ, চেয়ারম্যান রতম চাচা এবং গ্রামের প্রায় কিছু মুরব্বিরা এসে হাজির হলো। আশরাব তার বাবাকে সদ্য বরের পোশাকে এবং তার পাশে আরেকটি মেয়েকে দেখে চটে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে হুংকার ছেড়ে বললো,

—“তপা! তুমি এতোটা নিচ যে আমার সাথে এক বিছানায় কাটিয়ে শেষ অবধি আমার বাবাকে বিয়ে করলে ছিঃ!!”

আশরাবের এমন কথায় কামালসহ সকলে হকচকিয়ে সদর দরজায় তাকালো। পরিচিত কন্ঠে তপা ঘোমটা খুলে সদর দরজায় একবার তো আরেকবার নিজের পাশের মানুষটাকে দেখে ভয়ংকরভাবে চমকে উঠলো।

চলবে!!!

বিঃদ্রঃ গতকাল বইয়ের কিছু কাজের জন্য গল্প দিতে পারিনি তার জন্য দুঃখিত। আজ প্রায় ১৮০০+ শব্দের দিয়েছি তাও দয়া করে কেউ বলবেন না আমি ছোট লিখেছি!🙂 লিখতে কতোটা কষ্ট এবং সময় ব্যয় করতে হয় সেটা আমি জানি। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম, আসসালামু আলাইকুম।
চলবে!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here