দহন পর্ব ১২

#দহন
#পর্ব_১২
#লেখা_মিম

-” কখনোই না। অনিম যদি আপনার মেয়েকে ভালোই বেসে থাকে তাহলে শিমুলের সাথে সম্পর্ক কেনো রেখেছে সেটা বলেন তো?”
-“………………….”
-” বোকার রাজ্যে বাস করা বন্ধ করেন আন্টি। আপনার মেয়ের ভবিষৎ নষ্ট হচ্ছে। আর আপনি সেটা হতে দিচ্ছেন। আমি আপনাকে আবারও বলছি সমাজে কখনোই অনিম নীলার সম্পর্কটা ভালো নজরে দেখবে না। শিমুল যথেষ্ট ভালো মেয়ে। ওর মাঝে খুঁত পাওয়াটা বলতে গেলে অসম্ভব। সেই জায়গায় এমন একটা মেয়েকে ফেলে অনিম আপনার মেয়ের সাথে সম্পর্ক জুড়াবে সেটাতে সম্পূর্ন দোষ আপনার মেয়ের উপরই যাবে। সবাই আপনার মেয়েকে রাস্তার বে…..। থাক আপনি মুরুব্বি মানুষ। আপনার সামনে এসব বাজে ভাষা ব্যবহার না করাটাই ভালো। আন্টি সমাজে কিন্তু সব দোষ মেয়েদের উপরই পড়ে। ছেলেদের কিছু আসে যায় না। তাছাড়া অনিম যে আপনার মেয়েকে বিয়ে করবে তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই। আপনার মেয়ে ওর সাথে একবার cheat করেছে। সেই ছেলেই আবার আপনার মেয়ের সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়েছে ব্যাপারটা কেমন সন্দেহজনক হয়ে গেলো নাহ্? এমনও তো হতে পারে আপনার মেয়েকে ইউজ করে ও ছেড়ে দিবে। তখন আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে কি করবেন? তখনও বদনাম শুধুমাত্র আপনার মেয়েরই হবে। অনিমের কিছুই আসবে যাবে না। ও শিমুলকে নিয়ে ভালোভাবেই সংসার করে যাবে।”
-” তুমি আমার মেয়েকে এতকিছু জানা সত্ত্বেও বিয়ে করতে চাইছো কেনো?”
-” ওকে ভালোবেসে ফেলেছি আন্টি। হ্যা আমি জানি ও অন্য কারো সাথে physically involved আছে। তবুও ভালোবেসে ফেলেছি। ভালোবাসা তো আর এত কিছু দেখে হয়না।”
-” তোমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়ে থেকে থাকে তাহলে আমি অনিমের ভালোবাসাকে মিথ্যা বলে ধরে নিবো কেনো? অনিম তো বহুকাল আগে থেকেই আমার মেয়েকে ভালোবাসে। বরং তোমার ভালোবাসা, বিয়ের প্রস্তাব এসবের উপর আমার কড়া সন্দেহ হচ্ছে। তুমি হুট করে এসে এসব কথা বলে আমার মাথা খারাপ করার চেষ্টা করবে আর আমিও খারাপ করবো তাই না?”
– ” মাথা খারাপ করতে আসিনি। আপনার ইজ্জত বাঁচাতে এসেছি। অনিম আপনার মেয়েকে ভালোবেসে থাকলে শিমুলের লেজ এখনও ধরে রেখেছে কেনো? আপনার মেয়েকে এখনও পূর্ন মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলছে না কেনো? শিমুলকে কেনো অনিম সসম্মানে ওর ঘরে জায়গা দিয়ে রেখেছে? কই ওদের মধ্যে তো আমি কোনো দ্বন্দও হতে শুনিনা। ওদের বাসার আশেপাশের মানুষদের যেয়ে জিজ্ঞেস করেন। তাহলেই খবর পাবেন ওদের দুজনের হাসির আওয়াজ ওদের বাসা থেকে রাত একটা দেড়টা পর্যন্ত পাওয়া যায়। যদি শিমুলের সাথে ওর সম্পর্ক খারাপই থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই এত রাতে ওদের হাসির আওয়াজ আশেপাশের বিল্ডিং পর্যন্ত পৌঁছাতো না।’
-“………………….”
-” আন্টি আমার ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ করার কোনো কারন নেই। কারন আমি আপনার মেয়ের সাথে প্রেম করতে আসিনি।ওকে বিয়ে করতে এসেছি। বিয়ে মানে বুঝেন তো? সারাজীবনের জন্য ওর দায়িত্ব নিতে এসেছি আমি। আমার মনে খারাপ কিছু নেই আন্টি। দেখেন আন্টি, আমি একটা অবিবাহিত ছেলে। আমার ফ্যামিলি স্ট্যাটাস, এডুকেশন, পাওয়ার সবকিছুই আপনার জানা আছে।আমার পিছনে মেয়ের বাপ মা রা লাইন লাগিয়ে রাখে। সেখানে আমি নিজে এসে আপনার কাছে ধরা দিয়েছি। আপনার মেয়ে আমার কাছে টোটালি সিকিউরড থাকবে। আংকেল তো মারা গেছে বোধহয় তিন চারবছর হয়ে গেছে। আপনার পরের দুই মেয়ের কথাও ভাবেন। ওদের বিয়ের দায়িত্ব নিজ কাঁধে কেউ নিবে এমন একজনও তো দরকার। সেই দায়িত্বটাও আমি ওদের বড় ভাই হিসেবে পালন করবো। আর আমার এতবড় বাড়িতে আপনি একা একজন মানুষ অনায়াসে দিন কাটাতে পারবেন। অনিম নীলাকে বিয়ে করুক আর না করুক দুদিক থেকেই আপনার মেয়ে বদনামের ভাগীদার হবে। আর আমার সাথে বিয়ে দিলে শুধু নীলাই না, আপনারা সবাই একটা সিকিউরড লাইফ লিড করতে পারবেন। এখন আপনি চিন্তা করে দেখুন কার পাল্লাটা আপনার কাছে বেশি ভারী মনে হচ্ছে। অনিমের নাকি আমার?”
-” আমাকে কিছু সময় দাও চিন্তা করার জন্য।”
-” No problem আন্টি। আমি আপনার মোবাইলে আমার নম্বরটা সেভ করে দিয়ে যাচ্ছি। আপনি ধীরে সুস্থে আমাকে জানান।”
নীলার মা সেদিন সন্ধ্যায়ই মুহিবকে ফোন দিয়ে হ্যাঁ জানিয়ে দেয়। মুহিব তাকে জানায় সে তিনদিন পর আসবে নীলাকে আংটি পড়াতে।কিন্তু সে নীলাদের বাসায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত যাতে নীলাকে কিছুই না জানানো হয়।
মুহিব অনিম শিমুলকে গাড়িতে নিয়ে রওয়ানা হলো। গাড়িতে উঠেই অনিম জিজ্ঞেস করলো,
-” কিরে আংকেল আন্টি যাবে না?”
-” না আব্বা আম্মাকে পরে নিয়ে যাবো। আম্মা বলেছে মেয়ের সাথে কথায় বনিবনা হলে যেনো আজই আংটি পড়িয়ে আসি। পরে গিয়ে আব্বা আম্মা ডেট ফিক্স করে আসবে।”
-” তোর বিয়ে হচ্ছে এ কথা মনে হতেই ইচ্ছে করে তোকে নিয়ে কতক্ষন নাচি।”
-” নাচবি না মানে? তুই না নাচতে চাইলেও তোকে আমি নাচাবো। এমন নাচানো নাচাবো যে আজীবন মনে রাখবি মুহিব তোকে একদিন নাচিয়েছিলো।”
-” তারমানে তুইও নাচবি? ”
-” ওমা তোকে নাচাতে গেলে তো আমার একটু হলেও নাচতে হবে।”
-” তোর বিয়েতে তুই নাচবি তোর লজ্জা করবে না?
-” আজকালকার মানুষের মধ্যে লাজ লজ্জা আছে নাকি? ”
-” তা অবশ্য ঠিক বলেছিস। এখনকার মানুষের লজ্জা কমে গেছে।”
মুহিব নিজের মনেই হাসলো অনিমের কথা শুনে। যে মানুষটা নিজেই লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে বসেছে সে কিনা লজ্জার কথা বলছে। গাড়িতে বসে বেশ ফুর্তিতেই ছিলো অনিম। যেই নীলাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে মুহিব অনিমকে বললো গাড়ি থেকে নামত, এ বাড়িতেই মেয়ে দেখতে এসেছে সাথেসাথে অনিমের চেহারার রঙ উড়ে গেলো। তার মনে তখন একটা কথাই ঘুরছে যদি নীলা দেখে ফেলে শিমুলকে নিয়ে সে বেরিয়েছে তখন তো সারারাতেও নীলার কাছে জবাবদিহি শেষ হবে না।

-” কখনোই না। অনিম যদি আপনার মেয়েকে ভালোই বেসে থাকে তাহলে শিমুলের সাথে সম্পর্ক কেনো রেখেছে সেটা বলেন তো?”
-“………………….”
-” বোকার রাজ্যে বাস করা বন্ধ করেন আন্টি। আপনার মেয়ের ভবিষৎ নষ্ট হচ্ছে। আর আপনি সেটা হতে দিচ্ছেন। আমি আপনাকে আবারও বলছি সমাজে কখনোই অনিম নীলার সম্পর্কটা ভালো নজরে দেখবে না। শিমুল যথেষ্ট ভালো মেয়ে। ওর মাঝে খুঁত পাওয়াটা বলতে গেলে অসম্ভব। সেই জায়গায় এমন একটা মেয়েকে ফেলে অনিম আপনার মেয়ের সাথে সম্পর্ক জুড়াবে সেটাতে সম্পূর্ন দোষ আপনার মেয়ের উপরই যাবে। সবাই আপনার মেয়েকে রাস্তার বে…..। থাক আপনি মুরুব্বি মানুষ। আপনার সামনে এসব বাজে ভাষা ব্যবহার না করাটাই ভালো। আন্টি সমাজে কিন্তু সব দোষ মেয়েদের উপরই পড়ে। ছেলেদের কিছু আসে যায় না। তাছাড়া অনিম যে আপনার মেয়েকে বিয়ে করবে তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই। আপনার মেয়ে ওর সাথে একবার cheat করেছে। সেই ছেলেই আবার আপনার মেয়ের সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়েছে ব্যাপারটা কেমন সন্দেহজনক হয়ে গেলো নাহ্? এমনও তো হতে পারে আপনার মেয়েকে ইউজ করে ও ছেড়ে দিবে। তখন আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে কি করবেন? তখনও বদনাম শুধুমাত্র আপনার মেয়েরই হবে। অনিমের কিছুই আসবে যাবে না। ও শিমুলকে নিয়ে ভালোভাবেই সংসার করে যাবে।”
-” তুমি আমার মেয়েকে এতকিছু জানা সত্ত্বেও বিয়ে করতে চাইছো কেনো?”
-” ওকে ভালোবেসে ফেলেছি আন্টি। হ্যা আমি জানি ও অন্য কারো সাথে physically involved আছে। তবুও ভালোবেসে ফেলেছি। ভালোবাসা তো আর এত কিছু দেখে হয়না।”
-” তোমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়ে থেকে থাকে তাহলে আমি অনিমের ভালোবাসাকে মিথ্যা বলে ধরে নিবো কেনো? অনিম তো বহুকাল আগে থেকেই আমার মেয়েকে ভালোবাসে। বরং তোমার ভালোবাসা, বিয়ের প্রস্তাব এসবের উপর আমার কড়া সন্দেহ হচ্ছে। তুমি হুট করে এসে এসব কথা বলে আমার মাথা খারাপ করার চেষ্টা করবে আর আমিও খারাপ করবো তাই না?”
– ” মাথা খারাপ করতে আসিনি। আপনার ইজ্জত বাঁচাতে এসেছি। অনিম আপনার মেয়েকে ভালোবেসে থাকলে শিমুলের লেজ এখনও ধরে রেখেছে কেনো? আপনার মেয়েকে এখনও পূর্ন মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলছে না কেনো? শিমুলকে কেনো অনিম সসম্মানে ওর ঘরে জায়গা দিয়ে রেখেছে? কই ওদের মধ্যে তো আমি কোনো দ্বন্দও হতে শুনিনা। ওদের বাসার আশেপাশের মানুষদের যেয়ে জিজ্ঞেস করেন। তাহলেই খবর পাবেন ওদের দুজনের হাসির আওয়াজ ওদের বাসা থেকে রাত একটা দেড়টা পর্যন্ত পাওয়া যায়। যদি শিমুলের সাথে ওর সম্পর্ক খারাপই থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই এত রাতে ওদের হাসির আওয়াজ আশেপাশের বিল্ডিং পর্যন্ত পৌঁছাতো না।’
-“………………….”
-” আন্টি আমার ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ করার কোনো কারন নেই। কারন আমি আপনার মেয়ের সাথে প্রেম করতে আসিনি।ওকে বিয়ে করতে এসেছি। বিয়ে মানে বুঝেন তো? সারাজীবনের জন্য ওর দায়িত্ব নিতে এসেছি আমি। আমার মনে খারাপ কিছু নেই আন্টি। দেখেন আন্টি, আমি একটা অবিবাহিত ছেলে। আমার ফ্যামিলি স্ট্যাটাস, এডুকেশন, পাওয়ার সবকিছুই আপনার জানা আছে।আমার পিছনে মেয়ের বাপ মা রা লাইন লাগিয়ে রাখে। সেখানে আমি নিজে এসে আপনার কাছে ধরা দিয়েছি। আপনার মেয়ে আমার কাছে টোটালি সিকিউরড থাকবে। আংকেল তো মারা গেছে বোধহয় তিন চারবছর হয়ে গেছে। আপনার পরের দুই মেয়ের কথাও ভাবেন। ওদের বিয়ের দায়িত্ব নিজ কাঁধে কেউ নিবে এমন একজনও তো দরকার। সেই দায়িত্বটাও আমি ওদের বড় ভাই হিসেবে পালন করবো। আর আমার এতবড় বাড়িতে আপনি একা একজন মানুষ অনায়াসে দিন কাটাতে পারবেন। অনিম নীলাকে বিয়ে করুক আর না করুক দুদিক থেকেই আপনার মেয়ে বদনামের ভাগীদার হবে। আর আমার সাথে বিয়ে দিলে শুধু নীলাই না, আপনারা সবাই একটা সিকিউরড লাইফ লিড করতে পারবেন। এখন আপনি চিন্তা করে দেখুন কার পাল্লাটা আপনার কাছে বেশি ভারী মনে হচ্ছে। অনিমের নাকি আমার?”
-” আমাকে কিছু সময় দাও চিন্তা করার জন্য।”
-” No problem আন্টি। আমি আপনার মোবাইলে আমার নম্বরটা সেভ করে দিয়ে যাচ্ছি। আপনি ধীরে সুস্থে আমাকে জানান।”
নীলার মা সেদিন সন্ধ্যায়ই মুহিবকে ফোন দিয়ে হ্যাঁ জানিয়ে দেয়। মুহিব তাকে জানায় সে তিনদিন পর আসবে নীলাকে আংটি পড়াতে।কিন্তু সে নীলাদের বাসায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত যাতে নীলাকে কিছুই না জানানো হয়।
মুহিব অনিম শিমুলকে গাড়িতে নিয়ে রওয়ানা হলো। গাড়িতে উঠেই অনিম জিজ্ঞেস করলো,
-” কিরে আংকেল আন্টি যাবে না?”
-” না আব্বা আম্মাকে পরে নিয়ে যাবো। আম্মা বলেছে মেয়ের সাথে কথায় বনিবনা হলে যেনো আজই আংটি পড়িয়ে আসি। পরে গিয়ে আব্বা আম্মা ডেট ফিক্স করে আসবে।”
-” তোর বিয়ে হচ্ছে এ কথা মনে হতেই ইচ্ছে করে তোকে নিয়ে কতক্ষন নাচি।”
-” নাচবি না মানে? তুই না নাচতে চাইলেও তোকে আমি নাচাবো। এমন নাচানো নাচাবো যে আজীবন মনে রাখবি মুহিব তোকে একদিন নাচিয়েছিলো।”
-” তারমানে তুইও নাচবি? ”
-” ওমা তোকে নাচাতে গেলে তো আমার একটু হলেও নাচতে হবে।”
-” তোর বিয়েতে তুই নাচবি তোর লজ্জা করবে না?
-” আজকালকার মানুষের মধ্যে লাজ লজ্জা আছে নাকি? ”
-” তা অবশ্য ঠিক বলেছিস। এখনকার মানুষের লজ্জা কমে গেছে।”
মুহিব নিজের মনেই হাসলো অনিমের কথা শুনে। যে মানুষটা নিজেই লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে বসেছে সে কিনা লজ্জার কথা বলছে। গাড়িতে বসে বেশ ফুর্তিতেই ছিলো অনিম। যেই নীলাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে মুহিব অনিমকে বললো গাড়ি থেকে নামত, এ বাড়িতেই মেয়ে দেখতে এসেছে সাথেসাথে অনিমের চেহারার রঙ উড়ে গেলো। তার মনে তখন একটা কথাই ঘুরছে যদি নীলা দেখে ফেলে শিমুলকে নিয়ে সে বেরিয়েছে তখন তো সারারাতেও নীলার কাছে জবাবদিহি শেষ হবে না।

যতই সিঁড়ি বেয়ে উঠছে ততই অনিমের হার্টবিট বেড়ে চলেছে। শেষমেষ মুহিব নীলাদের বাসার বেল চাপার সাথেসাথেই অনিমের হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এই বাসায় ঢুকছে কেনো মুহিব? কাকে দেখতে এসেছে সে? পাত্রী কে?
নীলার মা এসে দরজা খুললেন। খুব হাসিখুশি দেখাচ্ছে উনাকে। উনি সব কথা শিমুল আর মুহিবের সাথেই বলে যাচ্ছেন। অনিমের সাথে একটা কথাও বলছেন না। অনিমও মুখ ফ্যাকাশে করে চুপচাপ ওদের কথা শুনেই যাচ্ছে। শিমুল অনিমের এই অবস্থাটা খেয়াল করলো।
অনিমের কানে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো
-” কি ব্যাপার? কোনো সমস্যা?”
-” হ্যাঁ……. কই না….. না তো।”
-” তাহলে চেহারার এই হাল করে রেখেছো কেনো? অপরিচিত একটা বাসায় এসে এমন ফ্যাকাশে মুখ করে চুপচাপ বসে থাকাটা একটা অভদ্র আচরন। কথা বলো আন্টির সাথে।”
অনিমের এবার ঘাম ছুটে যাচ্ছে। সে কি এখানে বসে থাকবে নাকি দৌড়ে পালাবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। নীলাকে ফেলে ওর ছোট বোনকেই বা বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে কেনো নীলার মা? তাও আবার মুহিবের সাথে! নীলার মা চা নাস্তা এনে ওদের সামনে সাজাচ্ছেন। শিমুল মুহিবকে বললো,
-” মুহিব ভাই, পাত্রী কোথায়? আধাঘন্টা হয়ে যাচ্ছে। মেয়েকে সামনে আনতে বলেন।”
-” শিমুল আমি আগে মেয়ের সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে চাই।”
-” হ্যা তো বলেন। আন্টিকে কি আমি বলবো পাত্রীর সাথে যেনো আপনার আলাদা কথা বলার ব্যবস্থা করে?”
-” না আমিই বলছি। ইয়ে…. আন্টি নীলা কোথায়?”
-” নীলা তো অফিস থেকে এসেছে তোমরা আসার ঘন্টাখানেক আগে। খুব সম্ভবত ও তৈরী হচ্ছে ওর রুমে।”
-” যদি আপনি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি একটু ওর সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে চাই। আসলে বিয়ের ব্যাপারটা তো সারাজীবনের। বিয়েটা তো আর আমি একা করছি না। নীলাও করছে। ওর ও তো কিছু নিজস্ব মতামত আছে। তাই চাচ্ছিলাম আংটি পড়ানোর আগে ওর সাথে একটু কথা বলে নিতে।”
-” আমি নীলার সাথে ও অফিস থেকে আসার পর সব কথা বুঝিয়ে বলেছি। তুমি যেভাবে আমাকে বুঝিয়েছো ঠিক সেভাবেই ওকেও বুঝিয়েছি। ও রাজি আছে। তুমি আজই আংটি পড়াও।”
এবার যেনো অনিমের মাথায় বাজ পড়লো। কি শুনছে সে এটা? পাত্রী তো নীলার ছোট বোন না। নীলা নিজেই পাত্রী।এটা কি করে সম্ভব? নীলা মুহিবকে কেনো বিয়ে করবে? অনিমের চোখ জোড়া ভীষন রকমের লাল হয়ে উঠছে। মুহিবের দিকে বেশ ক্রদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-” তুই নীলাকে বিয়ে করছিস মুহিব?”
-” হ্যা।”
-” মুহিব ভাইয়ের সাথে তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো অনিম?”
-” কথা আমার আর মুহিবের মধ্যে হচ্ছে। তুমি এরমধ্যে আসবা না। তুই নীলাকে বিয়ে করছিস কেনো?”
-” ওকে ভালো লেগেছে। ওকে বউ হিসেবে পারফেক্ট মনে হয়েছে তাই।”
এবার অনিম মুহিবের শার্টের কলার চেপে ধরলো। শিমুলের মনে হচ্ছে গলায় কথা আটকে গেছে। এগুলো কি করছে অনিম? কে এই নীলা যার জন্য অনিম মুহিব ভাইয়ের শার্টের কলারটা চেপে ধরতে দ্বিতীয়বার ভাবেনি?
-” তুই এসব ইচ্ছে করে করছিস তাই না?”
-” এই ছেলে তুমি মুহিবের কলার ছাড়ো। ছাড়ো বলছি……”
-” ভালোই তো খেল শুরু করেছেন দেখা যায় মা মেয়ে মিলে? মেয়েকে আমার কাছে এই কয়দিন দিয়ে রেখেছেন আর আজকে আমার বন্ধুর কাছে দিচ্ছেন?”
-” মুখ সামলে কথা বল অনিম। নীলা আমার হবু বউ।”
-” বউ? কিসের বউ হ্যা? ওকে তুই বিয়ে করতি পারবি না।”
-” আমার মেয়ে যাকে খুশি বিয়ে করবে। তুমি না করার কে শুনি?”
-” আমি কে তাইনা? এখন আমাকে কিছু মনেহয়না? সেদিন যখন আমার হাতে পায়ে ধরে মেয়ের জীবন ভিক্ষা চেয়ে ছিলেন তখন তো আমাকে ফেরেশতা মনে হয়েছিলো। আর এখন আমি কে? আপনার মেয়ে কোথায়? ডেকে আনুন ওকে।”
শিমুল স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি শুনছে সে এসব? সত্যি শুনছে তো? আচ্ছা এটা কি বাস্তব নাকি কোনো দুঃস্বপ্ন? কথাগুলো অনিমই বলছে তো? নাকি অনিমের বেশধারী অন্য কেউ? নীলার মা নীলাকে ডাকার জন্য ওর রুমের দিকে পা বাড়াতেই দেখলেন নীলা নিজেই বেরিয়ে এসেছে চেঁচামেচি শুনে। অনিমের দিকে এগিয়ে খুব ঠান্ডাগলায় বললো,
-” কলারটা ছাড়ো অনিম।”
-” কেনো খুব গায়ে লাগছে বুঝি? হবু বরের কলার চেপে ধরেছি গায়ে তো লাগবেই তাইনা?”
-” হ্যা ঠিক তাই।”
কথাটা বলে নীলা নিজেই খানিকটা ধস্তাধস্তি করে অনিমের হাত কলার থেকে ছাড়লো।
-” সব ভালোবাসা শেষ নীলা? কয়দিন আগেই না তুমি মরতে বসেছিলে আমার জন্য। কোথায় গেলো ভালোবাসা?”
-” মরীচিকার পেছনে ছুটেছি অনিম।”
-” কাকে মরীচিকা বলছো তুমি? আমাকে?”
-” হ্যা তোমাকে।”
-” কোন হিসেবে মরীচিকক বলছো তুমি আমাকে?”
-” আমি মিথ্যা ভালোবাসার পিছনে ছুটেছি। তুমি আমাকে ভালোইবাসো না। একতরফা তোমাকে ভালোবেসেই যাচ্ছি। যখন তখন নিজেকে সঁপে দিচ্ছি তোমার হাতে আমি। আর তুমি…..”
-” আমি কি?”
-” আমাকে ভালোবাসার নামে ব্যবহার করছো। কিছুদিন পর ছুঁড়ে ফেলে দিবে তুমি আমাকে। বহুবছর আগে একটা অন্যায় করেছিলাম তোমার সাথে। সেটার শাস্তি দেয়ার জন্য এমনটা করছো।”
-” এত অবিশ্বাস আমার প্রতি তোমার? কেনো নীলা? আমি শিমুলকে ফেলে তোমার কাছে ছুটে আসি তবুও তুমি আমাকে এটা বলছো?”
-” শিমুলকে চিরতরে তো আর ফেলে দাওনি। দিনশেষে ওর বুকে মুখ গুঁজেই তো ঘুমাও।তোমার স্ত্রীর মর্যাদাটা তো ওকে দিয়ে রেখেছো। সমাজে সসম্মানে ও ওর নিজেকে তোমার বউ বলে দাবী করতে পারে। আমি নিজেকে তোমার কে বলে দাবী করবো সমাজে?”
-” এটা তো কোনো যুক্তি না নীলা। শিমুলের সাথে বিয়ের ছয়মাসও হয়নি। ওকে তো আমি এখনই ছাড়তে পারিনা।”
-” কোনোদিন পারবেও না। শিমুল যতদিন তোমার সাথে আছে আমি তোমার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবো না। যেদিন শিমুলকে ছাড়বে সেদিন আমাকে ডেকো। দুনিয়ার যে প্রান্তেই থাকিনা কেনো তোমার কাছে এসে ঠিক ধরা দিবো।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here