দহন পর্ব ২১এবং শেষ

#দহন
#পর্ব_২১
#লেখা_মিম

দেড় বছর পর…

-তুমি ডিভোর্স লেটারে সাইন করো। আমাকে মুক্তি দাও প্লিজ।”
– নীলা ঠান্ডা মাথায় আরেকবার চিন্তা করো প্লিজ। আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করো।
– কি বুঝবো? কি বুঝার আর বাকি আছে?
– এখানে তো আমার দোষ না। আমি তো আর সেধে সেধে বাচ্চা হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট করিনি।
– শোনো, আমার এত কথা শোনার কোনো প্রয়োজন নেই। তোমাকে সাইন করতে বলেছি তুমি সাইন করবে ব্যস।
– কেনো প্রয়োজন নেই হ্যা? আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে তাই না? তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়ে অন্যের হাত ধরে চলে গেছো। ফের যখন তুমি আমার কাছে ফিরে আসতে চেয়েছো তখন তো আমি তোমকে ঠিকই এক্সেপ্ট করেছি। তখন অলরেডি আমার বিয়ে অন্য কারো সাথে হয়ে গেছে তবুও তাকে বাদ দিয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। আর সেই তুমি কিনা এখন আমাকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছো?
-” আমি অতশত বুঝি না। আমি আমার বাচ্চা চাই। তোমার কাছে থাকলে কখনোই সেটা সম্ভব না।
– বাচ্চা তো আমরা adopt করতে পারি।
– বাচ্চা adopt কেনো করবো আমি? সমস্যা তোমার, আমার না। প্রয়োজনে তুমি বাচ্চা adopt করো। আমি করবো না।
– মূল কথা কি জানো? তুমি আমাকে ভালোই বাসো না। যদি বাসতে তাহলে আমার অক্ষমতা সহই আমাকে এক্সেপ্ট করতে। এসব বাচ্চার দোহাই দিয়ে আমাকে তালাক্ব দিতে না। আসল কথা হচ্ছে সেদিন শিমুলের সাথে আমাকে দেখে তোমার সহ্য হয়নি। তুমি হিংসায় জ্বলে পুড়ে আমাকে আবার আপন করে পেতে চেয়েছো। তোমার চোখের পানি, তোমার সুইসাইড এটেম্পট সবকিছু ছিলো তোমার হিংসা। ভুল আমারই হয়েছে। শিমুলকে ছাড়া আমার মোটেও উচিত হয়নি। আজ যদি তোমার জায়গায় ও থাকতো তাহলে কখনোই আমাকে ছেড়ে যাবার নাম নিতো না। এই দেড় বছরে বহু কষ্ট দিয়েছো তুমি আমাকে। তবু আমি কিছু মনে করিনি। কেনো জানো? কারন আমি তোমাকে মন থেকে ভালোবেসেছি তাই। তুমি এমন সত্যিকারের ভালোবাসার যোগ্যই না। সত্যিকারের ভালোবাসা পাবার যোগ্যতা শুধুমাত্র শিমুলের মতো মানুষের প্রাপ্য। ভুল করেছি আমি। চরম ভুল…….।
-” হ্যা তো যাও শিমুলের কাছে। তোমাকে বেঁধে রেখেছে কে? আমাকে ডিভোর্স দিয়ে শিমুলের কোলে উঠে বসে থাকো যেয়ে।
– হ্যা তাই করবো আমি। ওর কাছেই ফিরে যাবো। নিজের ভুলের শাস্তি মাথা পেতে নিবো।
অনিম ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে। ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে অনিম নীলার। অকারনে অন্যকে কষ্ট দেয়ার পরিনামগুলো বোধহয় এমনই হয়। অভিশাপ গুলো কখনো মিথ্যে হয়না। তীরের মতো যেয়ে বিঁধে যায় অপরাধীর ভাগ্যে। এটা সেই ঘর যে ঘরে ভালোবাসার জোয়ার বইতো। আজ গোটা ঘরে অন্ধকার দেয়ালে দেয়ালে লেপ্টে আছে। অন্ধকারটা একটু একটু করে গ্রাস করছে অনিমকে। সহ্য হচ্ছে না তার। দম আটকে যাবার উপক্রম হচ্ছে। কি ভয়াবহ অনুভুতি! এক্ষুনি একটু আলোর প্রয়োজন। শিমুল…. হ্যা শিমুলের কাছে গেলে আলোর খোঁজ পাওয়া যাবে। ঘরের মেইন ডোর খোলা রেখেই ছুটে যাচ্ছে অনিম শিমুলের কাছে।
কলিংবেল বাজছে শিমুলের বাসার দরজায়। লাগাতার বেজেই যাচ্ছে। কেউ একজন বাহির থেকে ক্রমাগত বেল বাজিয়েই যাচ্ছে। আফসানা আর বৃষ্টি বেশ বিরক্ত হয়েই যার যার রুম থেকে বেরিয়ে এলো গেইট খুলতে। আফসানা এগিয়ে যেয়ে গেইট খুলে যাকে দেখলো তাতে তার চোখ বিস্ফোরিত হওয়ার উপক্রম। বৃষ্টিরও প্রায় একই অবস্থা। অনিমের কথায় ঘোর ভাঙলো দুজনের। শিমুলের খোঁজে এসেছে সে। দাঁত কিটমিট করছে দুজনই অনিমের কথা শুনে। আফসানা খানিকটা তেড়ে অনিমের দিকে এগিয়ে এসে বললো
– সাহস কত্ত তোর! তুই বাসা পর্যন্ত চলে আসছিস?
-” হ্যা এসেছি। সরেন এখান থেকে। আমি শিমুলের সাথে দেখা করবো।
– কোন শিমুলের কথা বলছিস তুই? যাকে তুই হসপিটালে মরার জন্য রেখে এসেছিলি তার কথা বলছিস?
– দেখেন ভাবি যা বলার পরে বলেন। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।শিমুলের সাথে একবার দেখা করতে দিন প্লিজ।
ঘরে এই মূহূর্তে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। বৃষ্টি বুঝতেই পারছে অনিমকে বেশিক্ষন ঠেকানো যাবেনা। সে ঘরে ঢুকবেই। তাই সে দিগ্বিদিক না পেয়ে চুলার পাশ থেকে গরম খুন্তি নিয়ে এসেছে। অনিমের দিকে এগিয়ে যেয়ে খুন্তিটা অনিমের গালের বেশ কাছাকাছি রেখে বললো
– তুই কি যাবি এখান থেকে? নাকি তোর গালে গরম খুন্তির দাগ বসাবো বল?
চেঁচামেচি শুনে পাশের ফ্ল্যাট থেকে লোকজন বেরিয়ে এসেছে। এরা অনিমকে চিনে। আড়াই বছর আগে প্রতিবেশি মেয়েটার সাথে কি অন্যায় এই লোকটা করেছিলো সে পুরো ঘটনাই তাদের জানা। তারা উপরতলা নিচতলা থেকে আরও লোকজন এনে জমা করেছে এখানে। সবাই মিলে খানিকটা শায়েস্তা করে বাড়ির বাইরে ধাক্কা মেরে বের করে দিয়েছে। রাস্তার লোকজন ঘুরে ঘুরে অনিমকে দেখছে। ইতিমধ্যে এলাকার ছোটভাই গুলো মুহিবকে ঘটনাটা জানিয়ে দিয়েছে। মুহিবের বিন্দুমাত্র কষ্ট লাগছে না। বরং সুক্ষ্ম আনন্দ পাচ্ছে সে। এই বুঝি অনিমের ভোগার পালা শুরু হলো। ফোনটা কেটে দিয়ে মনের সুখে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে সে।

রাত সাড়ে তিনটা বাজে। পুরো ঘর জুড়ে অন্ধকার। কপালে হাত রেখে ফ্লোরে শুয়ে আছে অনিম। দুচোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে তার। জীবনটা বড় বেশি বিষাদময় হয়ে উঠেছে। জীবনের মোড়টা খুবই বাজেভাবে ঘুরে গিয়েছে তার যেটা সে কল্পনাও করতে পারেনি। এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না। জীবনটা তো অসম্ভব রকমের সুন্দর হওয়ার কথা ছিলো শিমুলের সাথে। একটা সিদ্ধান্ত…. শুধুমাত্র একটা সিদ্ধান্তর জন্য এতখানি ভুগতে হচ্ছে। প্রথমে ভুগেছে শিমুল আর এখন অনিম। সাথে ভুগেছে শিমুলের সাথে জড়িত থাকা মানুষগুলোও। আজ আর বন্ধুমহলে অনিমের সেই স্থানটা নেই। হারিয়ে ফেলেছে আড়াই বছর আগেই। আর মুহিব? সেদিন চিঠিটা দিয়ে চলে আসার পর আর কখনও তাদের মাঝে কথা হয়নি। অনিম চেষ্টা করেছিলো তিন চারবার কথা বলতে। মুহিবই কথা বলেনি। শিমুলের ফোন নম্বরে কিছুক্ষন পর পর সেই কখন থেকে ট্রাই করছে অনিম। কিন্তু নম্বরটা বন্ধ। তবু মনের মধ্যে সুক্ষ্ম আশা নিয়ে চেষ্টা করেই যাচ্ছে শিমুলের নম্বরে। হুট করে মাথায় আসলো শিমুলকে ফেইসবুকে নক দেয়া যেতে পারে। সাথে সাথে ফেইসবুকে লগ ইন করে শিমুলের প্রোফাইলে আসলো অনিম। এসে যা দেখলো তার জন্য অনিম মোটেই প্রস্তুত ছিলো না। শিমুল এই দেশে আর থাকে না। সে তো বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে। প্রোফাইল পিকচারে ভার্সিটি প্রাঙ্গনে তোলা ছবি, কভার ফটো তে ব্রিজের রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়ানো ছবিগুলো দেখে সে বুঝে গেলো শিমুল এখানে আর থাকে না। প্রোফাইল ঘেটেঘুটে আরো ছবি দেখতে পেলো সে। খালাতো ভাই বোন, বিদেশি বন্ধুবান্ধব, নতুন ভার্সিটি, নতুন পরিবেশ সব মিলিয়ে দারুন আছে সে। শিমুলটা আগের চেয়ে আরও বেশি সুন্দর হয়েছে। দেখলে বুঝার উপায় নেই যে এই মেয়েটার উপর এতবড় ঝড় বয়ে গেছে। শিমুলকে এতখানি হাসিখুশি দেখে অনিমের কলিজায় খানিকটা মোচড় কাটছে। সে কি অনিমকে ভুলে গেছে? নতুন কাউকে কি সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছে? না, না। এমনটা হতে পারে না। শিমুলকে দিয়ে এসব সম্ভব না। ও বড্ড সহজ সরল আর নরম মনের। সহজ সরল মানুষেরা যাকে একবার ভালোবাসে তাকে হাজার অপরাধ করলেও ফেলে দিতে পারে না। শিমুলও এমন করবে না। সাত পাঁচ না ভেবে শিমুলের মেসেন্জারে নক দিচ্ছে অনিম। ফোনটা শিমুলের হাতেই ছিলো। চ্যাট করছে সে মুহিবের সাথে। দেখতে পেলো একটা মেসেজ রিকুয়েস্ট এসে জমা হয়েছে। ওপেন করতেই চেহারার রং পাল্টে গেলো শিমুলের। এই মানুষটা? কেনো? এত ঘটনার পরও? শিমুল মুহিবকে টেক্সট করলো,
-‘ মুহিব ভাই, অনিম মেসেজ পাঠাচ্ছে মেসেন্জারে।”
-” কি লিখেছে মেসেজে?”
-” ও ওর ভুল বুঝতে পেরেছে। পাপের শাস্তি পেয়েছে। আমি যেনো ওকে ক্ষমাকরে দিই। ওকে ফের আপন করে নেই। খুব কষ্ট পাচ্ছে ও। আচ্ছা মুহিব ভাই ও আমাকে এসব বলছে কেনো? নীলার সাথে কি কিছু হয়েছে?”
-” অনিম কখনো বাবা হতে পারবে না। নীলা ওকে ফেলে চলে গেছে। আজ সন্ধ্যায় তোমার বাসায় যেয়ে অনেক ঝামেলা করেছে তোমার সাথে দেখা করার জন্য। তোমার দুই ভাবি আর পাশের বাসার লোকেরা মিলে ওকে অপমান করে তাড়িয়েছে।”
-” ভাবিরা তো আমাকে কিছু বলেনি। তাছাড়া আপনিও তো কিছু বললেন না। কেনো?”
-” আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তোমাকে এই ব্যাপারে জানাবো না। পুরোনো ক্ষতটা তাজা করতে চাইনি। শুধুশুধু ওর কথা বলে তোমাকে কাঁটা ঘায়ে নূনের ছিটা মারতে চাইনি।
-” ঘা তো সেই কবেই শুকিয়ে গেছে মুহিব ভাই। তাই নুনের ছিটায় জ্বলবে না। কথাটা আগে জানালেই পারেন। যাই, অনিমকে ওর উত্তর গুলো দিয়ে আসি।”
শিমুল অনিমের উত্তর দেয়ার জন্য টেক্সট করছে সে
– ভাইয়া আমি কি আপনাকে চিনি?
-কি বলো এগুলা? আমি অনিম। ভুলে গেছো আমাকে?
– আমি তো আপনাকে চিনিই না। তাহলে এখানে ভুলে যাওয়ার প্রশ্ন আসছে কেনো?
– এভাবে বলো না প্লিজ। শিমুল আমি ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি কষ্ট পাচ্ছি শিমুল। প্লিজ শিমুল……
– ভাইয়া প্লিজ আপনি বোধহয় ভুল কাউকে টেক্সট করেছেন।
– না। আমি ভুল করিনি। আমি আমার বউকে চিনতে ভুল করিনি।
– কে আপনার বউ? আমি অন্য কারো বউ। আপনার না।
– মোটেই না। তুমি আমার বউ।
– ছিঃ ভাইয়া, অন্যের বউকে নিজের বলে দাবী করতে নেই। এটা ঘোর অন্যায়। তাছাড়া আমারও পছন্দ না এই ব্যাপারটা। আমি মুহিবের বউ। আর এই বউ কথাটা আমি শুধুমাত্র ওর মুখে শুনতেই পছন্দ করি। প্লিজ ভাইয়া আর বিরক্ত করতে আসবেন না। হাজবেন্ডের সাথে ফোনে রোমান্স করার সময় হয়েছে। সারাদিন তো পড়ার চাপে রোমান্স টা হয়ে উঠে না তাই দিন শেষে রাতের বেলায় রোমান্সটা জমে ভালো। বিয়ের পর হাজবেন্ড ওয়াইফ এত দূরে থাকাটা কত কষ্টের তা তো বুঝেনই। প্লিজ ভাইয়া আমাদের রোমান্সে ব্যাঘাত ঘটাতে আসবেন না।
শিমুলের মেসেজটা দেখে অনিমের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এটা কি লিখলো শিমুল?
– শিমুল, তুমি আর মুহিব?
– জ্বি মুহিব আমার হাজবেন্ড। পাগলটা বড্ড ভালোবাসে আমাকে। জানেন আড়াই বছর আগে আমি যাকে পাগলের মতো ভালোবাসতাম সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। সে আমার ভালোবাসার মূল্য দেয়নি। তখন মুহিব এসে আমার হাতটা ধরেছে। আমাকে ফের ভাল করে বাঁচতে শিখিয়েছে। এমন একটা মানুষকে কি করে হাতছাড়া করি বলেন তো? যেদিন মাথায় এই কথাটা ঢুকেছে যে এই পাগলটাকে আমি আমার করে সারাজবনের জন্য পেতে চাই, তাকে ছাড়া আমি অচল। ঠিক তখনই তাকে ফোন করে প্রপোজ করি। মানুষটা সেদিনই আমাকে বিয়ে করে নিয়েছে। আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে তো তাই একদিনও দেরী করেনি। সেদিনই বিয়ে করে নিয়েছে আমাকে।
-তুমি কি সত্যি বলছো?
– আরে ভাই, বিয়ে নিয়ে কেউ মিথ্যা বলে নাকি?

অনিমের মাথার দুপাশের রগ ফেটে যাচ্ছে। রাগে ফাটছে নাকি কষ্টে সেটা সে বুঝতে পারছে না। শেষমেষ তারই বেস্টফ্রেন্ডকে শিমুল বিয়ে করলো? মোবাইলটা দেয়ালে ছুঁড়ে মারলো অনিম। নিজের চুল নিজেই টেনে ছিঁড়ছে সে। এবার সে মুহিবের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। মুহিব কেনো এই কাজটা করলো সেটার উত্তর চাইতে। অনিমের কাছ থেকে আরকোনো টেক্সট না পেয়ে মুহিবকে ফোন করলো শিমুল।
– হ্যাঁ শিমুল, অনিমের সাথে কথা হয়েছে?
– হ্যাঁ হয়েছে। কিন্তু মুহিব ভাই আমি তো একটা ঝামেলা পাকিয়েছি।
– কি করেছো?
– রাগ করবেন না তো?
– নাহ্ বলো।
– অনিমকে বলেছি আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আমি আপনার বউ।
শিমুলের মুখে বউ কথাটা শোনার পর কলিজায় ধুক করে উঠলো মুহিবের। চুপ করে আছে মুহিব। ওপাশ থেকে শিমুল কোনো সাড়া না পেয়ে বললো,
– আপনি কি রাগ করেছেন?
– হুমম….. না করিনি।
-সত্যি তো?
-হ্যাঁ।
– মুহিব ভাই আপনাদের ওখানে তো ভোর হয়ে আসছে। ঘুমিয়ে পড়ুন।
– হুম। ভালো থেকো।
-আল্লাহ হাফেজ।
বাসার বাহির থেকে খুব শোরগোলশোনা যাচ্ছে। দারোয়ান কারো সাথে খুব চেঁচামেচি করছে। জানালা দিয়ে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো,
-কার সাথে ঝগড়া করছেন রাশেদ ভাই?
– একটা লোক আইছে। কইতাছে আপনার বন্ধু। অনিম নাম।
অনিমের নাম শোনা মাত্র দৌড়ে নিচে নেমে এলো মুহিব। কলাপসেবল গেইট টা খুলে বাহিরে বেরিয়ে এলো সে। অনিম তেড়ে এলো মুহিবের দিকে।
-তুই শিমুলকে বিয়ে করেছিস?
– হ্যাঁ।
– তুই এই কাজটা করতে পারলি?
– তুই যদি শিমুল থাকা সত্ত্বেও নীলাকে বিয়ে করতে পারিস তাহলে আমি কেনো পারবো না। তাছাড়া শিমুলের সাথে তোর কোনো সম্পর্কই তুই রাখিস নি। এমন যদি হতো তোর সাথে সম্পর্ক চলাকালিন অবস্থায় ওকে বিয়ে করতাম বা প্রেম করতাম সেটা অন্যায় হতো।
– এসব যুক্তি দেখিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করিস না মুহিব। শিমুল আর তুই তোরা দুজনই গাদ্দারি করেছিস।
– আর তুই যেটা করেছিলি সেটা কি ছিলো?
– ভুলবশত সেটা হয়ে গিয়েছিলো।
– তুই করলে ভুল আর আমরা করলে গাদ্দারি তাই না? মেয়েটাকে তো মরার জন্যরেখে গিয়েছিলি। একবারও তো খোঁজ নিতে আসিস নি বেঁচে আছে না মরে গেছে। কি হাল হয়েছিলো জানিস ওর? জানিস না। তুই জানার কোনো প্রয়োজনই মনে করিসনি। ঐ মূহূর্তে ওর হাতটা ধরা খুব প্রয়োজন ছিলো তাই ধরেছি।
– হাত ধরতে যেয়ে বিয়েও করে নিয়েছিস তাই না?
– হ্যাঁ করেছি। বিয়ে পবিত্র সম্পর্ক। আমি পবিত্র সম্পর্ক জুড়েছি ওর সাথে। তোর আর নীলার মতো বিয়ের আগে নষ্টামি করিনি।
– শিমুল আমার বউ। ওর শরীরের প্রতিটা অংশে আমার স্পর্শ আছে এতটুকু মাথায় রাখিস। তুই ওর গায়ে হাত দেয়ার আগেই আমি……..।
– তুই থাম। কি বললি তুই? শিমুল তোর বউ? শিমুল তোর না আমার বউ। আর শিমুলের শরীর থেকে আমার স্পর্শে তোর স্পর্শগুলো মুছে গেছে। অতএব যতই চেষ্টা করিস না কেনো এই ধরনের চিপ মাইন্ডেড কথা বলে আমার সংসারে আগুন লাগানোর কোনো লাভ হবে না। আর শোন, শিমুল যদি আমাকে ভালো নাও বাসে তবু আমার কিছু আসবে যাবে না। ওকে আমি যতটুক ভালোবাসি ততটুকু তে আমাদের সংসার সুখে শান্তিতে চলার জন্য যথেষ্ট। এখন যা এখান থেকে। তোর মুখ যেনো অত্র এলাকায় না দেখি। আর আমার বউকে রাত বিরাতে বিরক্ত করা বন্ধ কর। আর নয়তো পরিনাম ভয়াবহ হবে।
– কি করবি তুই?
– আমি কি করতে পারি আর না পারি সেটা তোর চেয়ে আর কে ভালো জানে রে অনিম?
অনিম আর কথা বাড়ালো না। সে তার মতো এখান থেকে চলে যাচ্ছে। অনিম ভালোই জানে পরিনাম সত্যিই ভয়াবহ হবে। তাই এখানে আর না থাকাটাই সে শ্রেয় মনে করলো।
দেড় বছর পর………
সেই ঘটনার একমাস পর অনিম বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে। আশেপাশের লোকজনেরা বলতো সে নাকি খানিকটা পাগলাটে হয়ে গেছে। কখন কি বলে তার কোনো ঠিক নেই। একাই বিড়বিড় করে। বাসা পাল্টে সে কোথায় গেছে এ ব্যাপারে কেউ জানে না। বেঁচে আছে না মরে গেছে এ কথাও কেউ জানে না। সত্যি কথা বলতে এই ধরনের মানুষদের খবর কেউ রাখেও না। আজ সকালে শিমুলের ফাইনাল ইয়ার এক্সাম শেষ হয়েছে। আজকের ফ্লাইটেই সে বাংলাদেশে রওয়ানা হবে। টিকিট সে আগেই কেটে রেখেছিলো। আজকাল বড্ড বেশি মন ছটফট করছে দেশে যাওয়ার জন্য। আসলে ছটফটটা দেশের জন্য না, কোনো একজন মানুষের জন্য। মানুষটাকে কিছু ববলার আছে। ফোনে বলা যাবে না, একদম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলতে হবে। প্লেনে উঠে বসেছে সে। আর দশ মিনিট পরই প্লেন টেক অফ করবে। কেউ জানেনা শিমুল দেশে ফিরছে। না জানানোর উদ্দেশ্যটা হচ্ছে মানুষটাকে সারপ্রাইজ দেয়া। এতদূর পাড়ি জমিয়ে দেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যটাও সেই মানুষটাই।।

একদিন পর……….
রাত দেড়টা বাজে। মুহিব মোবাইলে গেমস খেলছে। দুদিন আগে শিমুলের মেসেজ এসেছিলো। এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। ভাবছে শিমুলকে একটা নক দিবে। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো মুহিবের। একটা আননোন গ্রামীন নম্বর। রিসিভ করা মাত্রই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো,
– মুহিব ভাই, আপনার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। একটু নিচে আসবেন প্লিজ?
– শিমুল তুমি? দেশে আসলা কখন?
– উফফ নিচে আসেন তো।
মুহিব দৌড়ে নিচে নেমে আসলো। এতরাতে শিমুলকে দেখে মুখ নড়ছে না তার। ট্যাক্সির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে শিমুল।
– সোজা এয়ারপোর্ট থেকে আপনার কাছে এসেছি। এখনও বাসায় যাইনি। আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছি।
– ি কথা?
– মুহিব ভাই আমাকে কি আগের মতই ভালোবাসেন?
– হুম।
– বিয়ে করবেন আমাকে আগামীকাল সন্ধ্যায়?
– তুমি কি সত্যিই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো?
মুহিবের পায়ে সজোরে পাড়া দিয়ে বললো
– সত্যিই দাঁড়িয়ে আছি।। এখন বলেন করবেন কি না?
– করবো। তবে বিয়েটা কাল সকালে করলে হয়না?
গাড়িতে উঠতে উঠতে শিমুল বললো
-অবশ্যই হয়। ঠিক এগারোটায় এসে পড়বেন ফ্যামিলি নিয়ে। আমি অপেক্ষা করবো আপনার জন্য মুহিব ভাই।
গাড়ি চলে যাচ্ছে। মুহিব চিৎকার করে শিমুলকে ডেকে বললো
– শিমুল….. আমাকে ভাই না ডাকলে হয় না?
গাড়ির জানালা দিয়ে শিমুল মুখ বের করে বললো,
– কাল দুপুর থেকে শুধু মুহিব বলে ডাকবো।
শিমুলের গাড়িটা চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত চেয়ে ছিলো মুহিব গাড়িটার দিকে। এখন শুধু কাল সকাল হওয়ার পালা……

~সমাপ্ত~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here