দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ পর্ব ১৬

#দুষ্টু_মিষ্টি_প্রেমকথণ
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃফারজানা_তাবাসসুম

!!

নীরার দুই গালে ঠাশ্ ঠাশ্ করে দুটি চড় বসিয়ে দিলাম।নীরা ছিটকে পড়লো রোদ্দুরকে ছেড়ে। আমি রোদ্দুরকে ধরে নিলাম। দেখেই মনে হচ্ছে রোদ্দুর হুশে নেই। রোদ্দুরকে এক জায়গায় নিয়ে বসিয়ে দিলাম।

″তোমার সাহস কি করে হয় কায়নাত? আমাকে চড় মারার। ″

নীরার কথা কানে বাজতেই আমি ওর দিকে ঘুরে বলা শুরু করলামঃ

চুপ একদম চুপ।বেয়াদব মেয়ে,,তোমার লজ্জা করে না? অন্যের স্বামীর সাথে এইভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতে। আর কাকে সাহস এর বানী দিচ্ছো তুমি? তোমার সাহস কি করে হয়?? আমার রোদ্দুরকে স্পর্শ করার। মনে তো চায় দেই আরেকটা ঠাটিয়ে চড়,,,কায়নাতের উপর হাত তুলতে নিয়েও নামিয়ে নিলাম। কিন্তু আমি তোমার মতো এতো নিচ না নীরা যে তোমাকে মেরে আমি আমার হাত নোংরা করবো।

নীরা কায়নাতের কথা শুনে শুধু রাগে ফুসছে। না ও কিছু বলতে পারছে আর নাই কিছু করতে পারছে।

″কিন্তু যা করার তা তো আমি করেই ফেলেছি কায়নাত″

শুনে রাখো কায়নাত, রোদ্দুরকে আমি ভালোবাসি তুমি আসার আগে থেকেই ওকে আমি ভালোবাসি। আর আমার এই ভালোবাসার মাঝে তুমি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছো।তাই সরতে তোমাকেই হবে। কথাগুলো বলে বাকা হাসলো নীরা। যা আমার একটুখানিও ভালো ঠেকলো না। নীরা আর কিছু না বলে, চলে গেলো। আমিও আর ঐদিকে ভ্রুক্ষেপ করলাম না। বাসায় গিয়ে যা করার করবো এখানে সিনক্রিয়েট করে লাভ নেই। পেছনে ঘুরে দেখলাম রোদ্দুরের কোনো হেলদোল নেই, চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুঝে আছে। কাছে গেলাম তার, একা ধরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না আমার পক্ষে, ড্রাইভার চাচাকে ডাক দিলাম। উনাকে ধরে রিসোর্টের ভেতরের একটা রুমে নিয়ে গেলাম।ড্রাইভার চাচাকে বললাম বাসায় এই বিষয়ে কিছু বলতে না।রোদ্দুরকে বেডে শুইয়ে দিলাম। গভীর ঘুমে আছে এখন। ঐ পাজি নীরা নিশ্চই রোদ্দুরকে কিছু একটা খাইয়ে এইভাবে বেহুস করেছে।

………

আমিও ফ্রেশ হয়ে এসে রোদ্দুরের পাশে বসলাম। আজ রোদ্দুর আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য কতো কিছু করেছেন। কিন্তু উনি যখন জানতে পারবেন ওনার পরিকল্পনা মোতাবেক কিছুই হয়নি, নির্ঘাত ওনার অনেক খারাপ লাগবে আর নীরার যে কি অবস্থা হবে তা আমার কল্পনারও অতীত।

উফফ্,,,

একটা ক্ষীন শব্দ কানে আসতে আমি রোদ্দুরের দিকে তাকালাম। সে একটু নড়াচড়া করছেন মাথায় হাত দিয়ে। আসতে আসতে মাথায় হাত দিয়ে উঠেই বসলেন উনি।আমি ওনাকে ধরে একটু ধীর গলায় বললামঃ

″বেশী মাথা ব্যাথা করছে আপনার?″উনি শুধু মাথায় হাত দিয়ে রেখেছেন কোনো কিছু বলছেন না। কিছুক্ষন পর উনিই বলে উঠলেনঃ

কায়ু তুমি এখানে? আর আমার সাথে কি হয়েছিলো? আমার কিছুই মনে পরছে না। মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে। আমি রোদ্দুর দু গালে হাত রেখে শান্ত স্বরে বললামঃ

কিচ্ছু হয়নি, রোদ্দুর। আমি কিচ্ছুটি হতে দেইনি। তুমি এতো চিন্তা করো না এখন ঠিক আছে? নাহলে মাথায় আরো বেশী ব্যাথা করবে। রোদ্দুর একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো,,পরোক্ষনেই ঠোঁট টিপে হাসতে লাগলো,,তা দেখে আমার ভ্রুজোড়া কিঞ্চিৎ কুচকে গেলো,

″হাসছো কেনো? ″কথাটা শেষ করতে না করতেই রোদ্দুর আমাকে এক হেচকা টানে তার কাছে নিয়ে আসলো।আমিতো বোকা বনে গেলাম।″ কি হলো এটা?″

রোদ্দুর আমার নাকে নাক ঘেষে বললোঃ

তোতাপাখিটা আমার। আপনি যে আমাকে তুমি বলে ডাকছেন সেদিকে হুশ্ আছে কি?

রোদ্দুরের মুখ থেকে এই শব্দগুচ্ছ কানে যেতেই আমি চোখ নিচে নামিয়ে নিলাম। ইশ্ কিভাবে যে বলে ফেললাম নিজেও বুঝতে পারিনি।

″এইটা সত্যি নিজের মানুষটাকে হারানোর ভয় মনে আসলে তখন অধিকারবোধ টা একটু বেশী জাগ্রত হয়″
যেমনটা এখন আমার হলো। আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলেই ফেললামঃ

কেনো আমি তুমি করে বলতে পারি না বুঝি? আমি আপনার স্ত্রী আপনার উপর সব অধিকার শুধু আমার একান্তই আমার বুঝলেন।হুহ্

তুমিটাই তো ঠিক ছিলো।এখন আবার তাহলে আপনিতে ফিরে গেলে কেন!!!

আমার ইচ্ছা আমি যাই করি!!হুহ্

বাব্বাহ্!!! আমার বউ নাকি এইটা? আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না। একদিন এ এতো পরিবর্তন?!
কথাগুলো বলেই আমাকে আরেকটু গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলো। আমিও তাকে আরো হাজারো কথা শুনাতে লাগলাম। সেও তার দুষ্টু মিষ্টি কথার জালে আমাকে আরো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো।

________________________________________________________________________________

রোদ্দুরকে নীরার বেপারে সব খুলে বললাম। রোদ্দুরের চোখ মুখ মুহুর্তেই শক্ত করে ফেললেন।

এইটা কিভাবে সম্ভব? তাহলে তখন নীরা আমাকে অচেতন করে এইসব করতে চেয়েছে? ছিঃ ও এতোটা নিচে নামবে আমি ভাবতেও পারিনি। মেয়েটা কতো ভালো সেজে থাকে কিন্তু তার মনে এইসব ছিলো!!!!

″সব ভালোতেই ভালো থাকে না″ রোদ্দুদ।রোদ্দুর আমার দুই হাত তার বাহুডরে চেপে ধরে বললোঃ

কায়ু! তুমি আমাকে ভুল বুঝোনি তো?? জানোত আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। আর আজকের এইসব আয়োজনে তো শুধু একজনের নামেই ছিলো।

আমি হাল্কা হেসে বললামঃ

হুম রোদ্দুর আমি জানি তুমি কতোখানি ভালোবাসো। আর আমার রোদ্দুর কখনো তার তোতাপাখিকে ধোকা দিবে না, সেটাও খুব ভালো মতোই জানি। আমার ভালোবাসা এতো ঠুনকো নয় যে এতো সহজেই আমি আমার ভালোবাসার মানুষটি কে ভুল বুঝবো।

রোদ্দুর ঝাপটে ধরলো আমায়। চোখে মুখে পাগলের মতো চুমু খেলো আর বললোঃ

খুব ভালোবাসি তোতাপাখি। তোমায় এত্তোটা ভালোবাসি। আমি জানি আমার তোতাপাখিটা আমাকে ভুল বুঝতেই পারে না।

হুম,,তোমার তোতাপাখিটাও তোমাকে খুব ভালোবাসে। ভুল বুঝবে না কখনোই। রোদ্দুর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললোঃ

চিন্তা করোনা কায়ু কায়নাতকে আমি তার শাস্তি দেবই।

″হুম″

!!

সকালে রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে পড়লাম আমি আর রোদ্দুর। বাসায় পৌছতে ৯ টা বেজে গেলো।বাসার ভিতরে ঢুকেই দেখলাম,,, বাড়ির সবাই বসার ঘরে উপস্থিত। আমি দেখে একটু অবাক হলাম। কারন এই সময়ে সকালের খাবার খেয়ে যে যার কাজে মগ্ন থাকে,, একসাথে কেউই বসে না, তাহলে আজ? আজ কি এমন হলো!!! রোদ্দুর আর আমি বসার ঘর দিয়ে যেতে নিলে, দেখলাম নীরাও সেখানে দাঁড়িয়ে। আমার দিকে কেমন অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে হাসছে।

″দাড়াও রোদ্দুর″ দিদুনের কথা শুনে আমি আর রোদ্দুর দু’জনেই দাঁড়িয়ে গেলাম।

হুম দিদুন! কিছু বলবে? হাসিমুখেই উত্তর দিলো রোদ্দুর। কিন্তু তারপর দিদুন যা করলো তাতে সবাই প্রায় অবাকের চরম সীমায় পৌছে গেছে।

রোদ্দুর তার বাম গালে হাত রেখে দিদুনের দিকে করুন দৃষ্টি তাক করে বললোঃ

দিদুন? তুমি আমাকে? আমাকে মারলে?

……….

আমিও দিদুনকে উদ্দেশ্য করে বললামঃ

কি হয়েছে দিদুন, তুমি রোদ্দুরকে মারলে কেনো? আমি আরও কিছু বলতে নিবো তার আগেই দিদুন আমাকে থামিয়ে বললোঃ

কায়নাত আমি তোমার সাথে পড়ে কথা বলছি। আর রোদ্দুর তোমাকে কি আমি এইরকম নিচু শিক্ষা দিয়েছি? কোনো মেয়ে মান সম্মানে আঘাত করা শিখিয়েছি তোমায়?? নাহ্ আমার জানামতে আমি এইসব নোংরা জিনিস তোমাকে শিখাইনি। তাহলে?? কিভাবে পারলে তুমি অন্যএকটা মেয়ে সম্মানে হাত দিতে?

কি বলছো তুমি দিদুন? আমি কি এমন করেছি?

কি করেছো? জানোনা তুমি? দাড়াও দেখাচ্ছি তুমি কি! কি! করেছো।

………

আমি এক পা পিছিয়ে গেলাম, রিফা আমাকে ধরে নিলো। এ কি দেখাচ্ছে দিদুন আমাদের? নীরা আর রোদ্দুরের এইরকম ঘনিষ্ঠ ছবি। রাগে আমার হাত শক্ত হয়ে এলো। মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে গিয়ে নীরাকে ঠাটিয়ে কয়টা চড় মারি। একটা মেয়ে কতোটা নোংরা হতে পারে?? এতোটা নিচে নেমে গেছে ও যে নিজের মান সম্মান নিয়েও একটিবার ভাবলো না।

দিদুন এইসব মিথ্যা। তুমি বিশ্বাস করো আমি এমন কিছুই করিনি। নীরা মিথ্যা বলেছে এইসব।

দিদুন কিছুটা জোরগলায় বলে উঠলেনঃ

আহ্,,,চুপ করো রোদ্দুর। আমি তোমার কোনো কথাই আর বিশ্বাস করি না। ভুল যখন করেছো শাস্তি তোমাকেই পেতে হবে। দিদুন নীরাকে কাছে আসতে বললেন। নীরা কাচুমাচু হয়ে ধীর পায়ে আসতে নিলো। এখন এমন ভাব করছে যেনো ও ভাজা মাছটাও উলটে খেতে পারেনা। কিছুই করেনি ও। নীরা এসে দিদুনের পাশে দাড়ালো।

দিদুন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ

আমি একটা সিধান্ত নিয়েছি আর আজ আমার সিধান্তের উপর আমি কারো মতামত শুনতে চাই না।

আমরা সবাই দিদুনের দিকে কৌতুহলী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছি তার সিধান্ত শোনার জন্য। তখনি দিদুন বললোঃ

″নীরার সম্মান রক্ষার্থে রোদ্দুরকে বিয়ে করতে হবে নীরাকে।″

এই শব্দগুচ্ছ কানে বাজতেই কিছু চোখ চকচক করে উঠলো জয়ের উল্লাসে আর কিছু চোখে নেমে এলো ঘন কালো মেঘ।

( রোদ্দুরের সাথে কি নীরার বিয়ে দিয়ে দিবো?🤭পরে কায়নাত আর নেহালের সেটিং করে দিবো? যা বলবে পাঠক/পাঠিকারা তাই হবে!!😇)

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে_____🤍🖤

#_Farju_💙

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here