দেয়াল পর্ব ৩

#দেয়াল
পর্ব – ৩
লেখকঃ Ramim_Istiaq
.
রামিম দরজা খুলে দেয়। অবাক হয়ে দেখে মেয়েটা খাবার প্লেট আর পানির গ্লাস হাতে বাইরে দাড়িয়ে আছে। মায়া কাজ করে এই মেয়েটার ওপর, প্রুচর মায়া কাজ করে রামিমের।
মুখ ফসকে রামিম বলেই ফেলে,

– তোকে এত সুন্দর কেনো লাগছে আজকে?

তিন্নি মাথা নিচু করে রুমে ঢুকে। উত্তর দেয়না রামিমের প্রশ্নের।
ইশারায় ডাকে – আয় বস।
রামিম আস্তে হাটে। দু কদম এগুলেই বিছানা এই দু কদমই যেনো দু কিলোমিটার পথ এমন মনে হয় রামিমের।
শরীরে ভিষন ব্যাথা যে!

তিন্নি রামিমকে বলে,
– বাবা তোকে খুব মেরেছে তাইনা?
– তুই মারিসনি?
– হু মারছি তবে তোর ভালোর জন্যই।
– কি এমন ভালো হলো আমার?
– জানিনা তবে তুই যেটা বলেছিস সেটা সম্ভবনা, হাজার হোক আমরা ভাইবোন রামিম। একটু বুঝার চেষ্টা কর।
– তুই চাইলেই সব সম্ভব। শুধু একবার বল।
– আমি নিজেই চাইনা।
– সত্যি চাসনা তুই?
– আয় ভাত খেয়ে ঔষুধ খাবি, ব্যাথা কমবেনা নইলে।

রামিম উত্তর পায়না। তিন্নি খাইয়ে দেয়,রামিম খায়।
আলাদা একটা স্বাদ তিন্নির হাতে।
নিজ হাতে ঔষুধ খাইয়ে দিয়ে রুমে ঢুকে তিন্নি।

রুমে ঢুকে রীতিমতো চমকে উঠে তিন্নি।
কামরুল সাহেব বসে আছে তার রুমে। এতরাতে হঠাৎ রুমে দেখে থমকে দাড়ায় তিন্নি।
কামরুল সাহেব হাসিমুখে প্রশ্ন করে,

– রামিম খেয়েছে?
– হ্যা।
– মেডিসিন?
– হুমম।
– আচ্ছা ঘুমা। আমি যাই তাহলে।

কামরুল সাহেবের এরুপ ব্যবহারে তিন্নি অবাক না হয়ে পারেনা। সে ভেবেছিলো হয়তো জিজ্ঞাসাবাদ করবে নয়তো বকবে।
কিছু না করেই চলে গেলো যে।

সকাল হয়েছে। বাড়ির সবাই আজ ঘুমে।
খুব ভোরে ঘুম ভেঙেছে রোস্তম মিয়ার।
এত ভোরে ঘুম কখনো ভাঙেনা তার, আজ কোনো এক অদ্ভুত কারনে জেগে গেছে সে।
পাশে টুনি( তার মেয়ে ) আর বউ।
মেয়েটার দিকে তাকায় রোস্তম মিয়া।
মেয়েটা একদম মায়ের মত হয়েছে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার নাম গন্ধও নেই।

রহিমার দিকে তাকিয়ে রোস্তম মিয়া ভাব,
যৌবনকালে বড় সুন্দরী ছিলো মেয়েটা,এখন বয়সের ছাপ পড়ে গেছে সৌন্দর্য কিছুটা কমেছে বটে তবে এখনো বেশ সুন্দরী।

প্রেমের শুরুটা কতই না ভালো ছিলো।
রোস্তম মিয়া সেদিন গাড়ি করে নিয়ে আসে নাজনীন বেগমকে।
সাথে ছোটখাটো, ফর্সা আর লজ্জাবতী একটা মেয়ে।
রোস্তম মিয়া গাড়ির আয়নায় আড়চোখে কয়েকবার দেখে রাস্তায়।
মেয়েটা তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
তারপর কাজ করতে করতে কথা হয় একসময় প্রেম।
এখন আর আগের মতো এত চিন্তা ভাবনা আসেনা।
আগে বহুত কিছু ভাবতো এই করবে সেই করবে।
এখন অনেকদিন হয়ে গেছে, পাশাপাশি শুয়েও সেই ইচ্ছা আর করেনা।

তবে বউ বাচ্চা নিয়ে বেশ ভালোই আছে।
মেয়েটা সারাদিন দৌড়ায়।
রামিমকে খুব পছন্দ করে মেয়েটা।
কাছে কাছে থাকে সবসময় তবে রামিম অসুস্থ থাকলে কাছে যায়না।
শুধু রামিম না কেউ অসুস্থ থাকলে তার পাশে গেলে সেও নাকি অসুস্থ হয়ে যাবে এমনটাই ভাবে সে।
রামিম যখন টুনি বলে ডাকে মেয়েটা হাসতে হাসতে পারলে গড়িয়ে পড়ে।
পেটে হাত দিয়ে হাসে মেয়েটা।
এত যে খুশি মেয়েটার, এত হাসি কোথায় রাখে?

রোস্তম মিয়া বাইরে বেরোয়।
বাহ খুব ভোরে উঠলে সকালটা ভালোই কাঁটে।
রোস্তম মিয়া খালি পায়ে হাটে।
হাটতে হাটতে চোখ পড়ে দোতলায়।
রামিমের জানালায় একটা কিছু ঝুলছে।
কুঁয়াশা কাটেনি এখনো। আবছা কিছু বোঝা যায়না,
ওদিকে খুব একটা মনোযোগ দেয়না।
তার এখন উদ্দেশ্য হলো পুরো বাড়ির চারপাশটা ঘুরে দেখা।
রহিম মিয়া আশ্চর্যজনক জিনিস দেখেন।
তিন্নির রুমের জানালায় ও কিছু একটা ঝুলছে।
মোটা সুতার মতো কিছু একটা।
চোখ ঢলে আবার তাকায় – নাহ কিছু নেই।
ঘুম কাটেনি হয়তো।
চোখে ভুল দেখছে সে।

রোস্তম মিয়া ভাবে দুইজনরে মিলায়া দিবো নাকি!
না না ছি ছি, লোকে কি বলবে? ভাইবোনের বিয়ে।
কল্পনাও করা যায়না।

কোথায় ভাইবোন?
রক্তের সম্পর্ক আছে? পালিত বোন?
তাও তো না শুধুমাত্র বন্ধুর মেয়েকে তার ছেলের সাথে একসাথে বড় করেছেন।

মানুষের মন বড় আজব জিনিস।
একই সময় কয়েকরকমের চিন্তাভাবনা করে শেষমেষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।

ব্যাথা কমেছে অনেকটাই।
হাটতে আর এখন অসুবিধা হচ্ছেনা।
বাবার প্রতি কোনোরকম রাগ নেই রামিমের।
ছোটবেলা থেকেই বাবা বেশ গম্ভীর তার সাথে।
বুদ্ধি হওয়ার পর, সবকিছু বুঝতে ও মনে রাখতে শিখার পর থেকে কখনো সে দেখেনি বাবা অফিস থেকে ফিরে তাকে কোলে তুলে কপালে একটা চুমু দিয়েছেন।
অথচ প্রতিদিনই তিন্নির জন্য চকলেট আনতো।
তিন্নি তার চকলেটের ভাগ রামিমকে দিতো।
প্রথম প্রথম মন খারাপ করতো রামিম কিন্তু পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়।
বাবার সাথে ছেলের সম্পর্ক নাকি বন্ধুর মতো হয় রামিম কখনো বাবার সাথে দরকারি কথা ছাড়া তেমন কিছু বলেনি।

সেই বাবা মারলেও রাগ করার কিছু নেই। বাবা যে তাকে পছন্দ করেনা সেটা অনেক আগেই বুঝে গেছিলো রামিম।

ব্রাশ হাতে বেলকনিতে দাড়িয়ে রামিম ভাবে এখান থেকে নিচে লাফ দিলে কেমন হয়?
এত যন্ত্রনার অবসান ঘটে যেতো তাইনা?

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here