#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা-রাহমান
পর্ব (২০)
সবার অপেক্ষার প্রহর শেষ করে কাদির কাজী নিয়ে হাজির হয়েছে। কাজী তার মতো কাজ শেষ করে স্নিগ্ধার দিকে কলম এগিয়ে দিলেন সাইন করার জন্য। স্নিগ্ধা ঝটপট সাইন করে দিতেই পালকের দিকে পেপার আর কলম এগিয়ে ধরলেন কাজী সাহেব।পালক রেজিস্ট্রী পেপারটা নিজের দিকে নিতেই চোখ পড়েছে স্নিগ্ধা সিথি নামটার উপর। মিস্টি একটা হাসি নিয়ে নিজেও সাইন করার জন্য কলমটা আঙুল দিয়ে চেপে ধরেছে।
কলম চেপে ধরেছে তো ধরেছেই তা থেকে আর কালি বের করতে পারছেনা। মনে হচ্ছে কলমটা আজ তার সাথে বিরহ করেছে সে তার ডাকে সারা দিয়ে কিছু লিখতে চাইছেনা,চাইছেনা কারো অধীনে গিয়ে নিজের ভেতরে জমে থাকা কালির বিসর্জন দিক।
পালকের হাতেও কাপুনি উঠেছে,তবে তা বাহ্যিক নয়,আন্তিক। বার বার অন্ত্রীশার কথা মনে পড়ছে। এমনি এক কাগজ কলমের সাইনের জোরেই তো সে অন্ত্রীশাকে এ বাড়িতে এনেছিলো। ঠিক এমনি আরেকটি সাইনের জোরে সে আজ অন্য একজনকে এ বাড়িতে বাধতে বসেছে। পার্থক্য এতটুকুই সেদিন তার নামের পাশের জায়গায় ছিলো অন্ত্রীশা আর আজ রয়েছে স্নিগ্ধা।
পালক হঠাৎ করেই কলম ফেলে দিয়ে উঠে পড়ে,,,
“” আমি সাইন করতে পারবোনা,আমি! আমি বিয়ে করতে পারবোনা,আমি! আমি কবুলও বলতে পারবোনা। উফ! আমি কিছু পারবোনা,কিচ্ছুনা!””
পালকের এমন আকস্মিক কান্ডে সকলেই হতভম্ব। সবার দৃষ্টি পালকের উপর।
স্নিগ্ধাও এতক্ষনে উঠে দাড়িয়েছে। পালকের কাছটাতে এসে অগ্নিদৃষ্টি ছুড়ে বলছে,
“” বিয়ে করবেনা মানে? কি বলছো এসব? তোমার মাথা টাথা সব ঠিক আছে তো পালক??””
পালক চোখ বন্ধ করে বললো,,
“” আমার কিছু সময়ের প্রয়োজন স্নিগ্ধা,না অনেক সময়ের প্রয়োজন। আমি এখন কিছু করতে পারবোনা। আমি! আমি মনে হয় লিখতে ভুলে গিয়েছি!””
স্নিগ্ধার রাগ ক্রমশই উর্ধ্বগতিতে উঠছে। এতোটা পথ এসে কিনা বলে আর হাঁটতে পারবেনা?? ইচ্ছে হচ্ছে পালককে ঠাটিয়ে দুটো চড় মেরে সাইন করাতে। কিন্তু পালকের মতিগতি ঠিক বুঝতে না পারায় রাগটাকে সংযত করে নিলো স্নিগ্ধা। ধূরগতিতে পালকের বুকে নিজের মাথাটা রেখে আদুরী আর কান্না মিশ্রিত সুরে বললো,,
“” এমন করছো কেন,পালক? তবে কি তোমার আমাকে পছন্দ হয়নি?? আমি কি দেখতে খুব খারাপ?? তোমার আমার চিঠিপ্রেমের কাছে আমার রুপটা মানাচ্ছেনা?? তাহলে কি প্রেম মানেই রুপ-সৌন্দর্য! আমাকে কি তুমি ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছো?? আমাদের এতোবছরের চাওয়াপাওয়াকে পায়ের তলায় পিষে দিতে চাচ্ছো? সব মিথ্যে করে দিতে চাচ্ছো পালক??””
পালক স্নিগ্ধাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,,
“” তুমি আমাকে ছোবেনা,ছোবেনা তুমি আমাকে!””
“” কেন?””
পালক স্নিগ্ধাকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গিয়েছে। স্নিগ্ধার থেকে মনোযোগ সরিয়ে রেজিস্ট্রি পেপারটা দ্রুততার সাথে নিয়ে চেক করছে। স্নিগ্ধা সিথি নামটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,,
“” তুমি আমার পত্রীকন্যা নও।””
পালকের এমন কথায় হকচকিয়ে যায় স্নিগ্ধা। কিছুটা জড়োতা আর ভয়ার্ত নিয়েই পালকের কাছে এসে বললো,,,
“” আমিই তোমার পত্রীকন্যা,পালক। তুমি আমাকে চিনতে পারছোনা??””
পালক আর স্নিগ্ধার মাঝে এবার কাদিরও এগিয়ে আসে৷ পালকের কাধে হাত রেখে বললো,,
“” পালক,তুই এসব কি বলছিস? তুই ই তো বললি ও তোর পত্রীকন্যা,তোর কথাতেই আমরা তোকে সঙ্গ দিচ্ছি। আন্টি আর পাপড়িরা যেমন তোর সুখে থাকা নিয়ে চুপ করে নিয়েছে আমিও তোর ভালোবাসার প্রাপ্তিতে চুপ করে ছিলাম। কিন্তু এখন আর চুপ থাকতে পারছিনা। সবকিছু ঠিকঠাক,এখন বলছিস বিয়ে করবিনা,ও তোর পত্রীকন্যা নয়?? তুই আসলে কি চাস বলতো? সবকিছুতে ছেলেমানুষি?? এই পত্রীকন্যা তো তোকে অসুস্থ মানিয়ে দিচ্ছে!””
পালক অস্থিরতা নিয়ে রেজিস্ট্রী পেপারটা কাদিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,,
“” এইটা আমার পত্রীকন্যার হাতের লেখা নয় রে,কাদির। এটা অন্যকারো লেখা। ও আমার পত্রীকন্যা হতে পারেনা।””
স্নিগ্ধা পালককে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,,
“” তখন আমি ছোট ছিলাম,এখন বড় হয়েছি লেখাতো চেন্জ হবেই,তুমি একটা লেখা দেখে বুঝে গেলে আমি পত্রীকন্যা নই? একটা লেখার কাছে আমাকে নগন্য বানিয়ে দিচ্ছো,পালক??””
পালক স্নিগ্ধার থেকে মুখ ঘুরিয়ে আবার কাদিরের দিকে চেয়ে চিৎকার করে বললো,,
“” ও আমাকে বার বার পালক বলে ডাকছে কেন?? আমার পত্রীকন্যা তো আমাকে কখনোই পালক বলে ডাকেনি,সবসময় পত্র পুরুষ,কলংকিত পুরুষ,নাহয় শুদ্ধ পুরুষ বলে ডাকতো। ও আমার পত্রীকন্যা কিছুতেই হতে পারেনা। কিছুতেই না!””
পালক চিৎকার করতে করতে ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়েছে,গরম লাগছে খুব,বুকের ভেতরে আবার শুন্যতা অনুভব করছে,আরেকবার ঠকে গেছে সে। পত্রীকন্যার বেলায় কেন তাকে এতো ঠকতে হয়? কেন?? কেন??? কেন বারবার ওর কাছে যেতে চেয়ে অন্য কারো কাছে চলে যাচ্ছি?? তবে কি আমি কখনোই আমার পত্রীকন্যার কাছে পৌছোবনা???
স্নিগ্ধা পালকের কপালের ঘাম মুছে দিতে দিতে বললো,,
“” তুমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছো,মাথায় বেশি চাপ পড়ে গিয়েছে তাই এমন আবোলতাবোল বকছো,আচ্ছা আমরা নাহয় একটু পড়ে বিয়ে করবো কেমন??””
স্নিগ্ধা পালকের দিকে ঝুকে থাকায় গলার চেইনের মধ্যে গেথে থাকা লাভ শেপের মধ্যে ছোটছোট মুক্তো দানায় ঘেরা লকেটটা শুন্যে ভাসছে।
এটাতো সেই লকেট যেটা সে পত্রীকন্যাকে ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে দিয়েছিলো। ও যদি পত্রীকন্যা নাহয় এই লকেটটাও ওর হওয়ার কথা না।
পালক ছোপ মেরে লকেটটা টান দিতেই স্নিগ্ধার গলায় চেইনটা ছিড়ে পালকের হাতে চলে গিয়েছে।
ওটা খুলতেই একপাশে ভেতরে পালকের ছোট্ট ছবি দেখা যাচ্ছে,আর অপরপাশটা খালি। পালক চেয়ার ছেড়ে উঠে স্নিগ্ধার দিকে রুক্ষকন্ঠে বললো,,
“” এইটাতে আমার পত্রীকন্যার ছবি নাই কেন? কেন দাওনি ওকে? বলো কেন দাওনি??? তুমি আমার পত্রীকন্যার সাথে বেইমানী করেছো আমার সাথেও বেইবানী করেছো। ও তোমাকে কতটা বিশ্বাস করে আমার কাছে পাঠিয়েছিলো আর তুমি সেই বিশ্বাসকে এভাবে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে দিলে??? তোমাকে আমি….””
পালক যে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে কাদির ওকে আটকিয়ে ফেলে। এতক্ষনে তারও মনে হচ্ছে পালক সত্যি বলছে। পালককে পিছনে রেখে সামনের দিকে এসে দাড়িয়েছে কাদির। যা করার এখন তাকেই করতে হবে,নাহলে ঘটনা অন্যদিকে চলে যাবে।
কাদির স্নিগ্ধার উদ্দেশ্যে কিছুটা কঠিন গলায় বললো,,
“” তুমি যদি পত্রীকন্যা না হও তাহলে পত্রীকন্যা কে??””
“”……””
“” আর তুমিইবা কেন হঠাৎ করে পত্রীকন্যা সেজে ওকে বিয়ে করতে চাইছো? ওর চিঠি,লকেট তোমার কাছে কি করে এলো??? এগুলো তো পত্রীকন্যার কাছে থাকার কথা। এতো বড় মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে তুমি কেন ওর কাছে এসেছো?? বলো কেন এসেছো?? আজ তুমি সত্যি কথা না বলে এখান থেকে এক পা ও নড়তে পারবেনা।””
কাদিরের প্রত্যেকটা ধমকানিতে স্নিগ্ধা কেপে কেপে উঠছে। ভয়ের চুড়ান্ত পর্যায়ে এসে ঠেকেছে সে। চোখের চাহনি এক জায়গায় স্থির করতে পারছেনা। কপালের ঘামগুলো গাল বেয়ে নিচে এসে পড়ছে। গলার স্বরটাও কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
স্নিগ্ধা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,,,
“” আমি পালককে ভালোবাসি!””
“” ভালোবাসো মানে? তুমি ওকে আগে থেকেই ভালোবাসতে??””
কাদিরের প্রশ্নে স্নিগ্ধা মাথা নাড়িয়ে না বুঝাতেই কাদির আবার পাল্টা প্রশ্ন করে,,,,
“” তাহলে?””
“” পানি খাবো!””
পাপড়ি গ্লাসে করে পানি এগিয়ে ধরেছে স্নিগ্ধার দিকে। পাপড়ির হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে একঢোক পানি খেয়ে আবার বলতে শুরু করেছে স্নিগ্ধা,,,
“” উনি যখন আমার হাত দিয়ে চিঠি পাঠানো শুরু করেন তখন আমার খুব ইচ্ছে হতো এটার ভেতর উনি কি এমন লিখেছেন তা দেখার জন্য। প্রথম প্রথম ইচ্ছেটাকে প্রশ্রয় না দিলেও একদিন হুট করেই উনার চিঠিটা খুলে ফেলি। এতো সুন্দর,সহজ,সরল আর সাবলীল ভাষায় উনার ভালোবাসার কথা লিখেছিলো যে আমার তখনি মনটা আনন্দে ভরে গেলো। তারপর মাঝে মাঝেই উনার চিঠি খুলে পড়তে লাগলাম। মাঝে মাঝে উনার ছোটখাটো দুষ্টুমীর কথাগুলো আমাকে এতোটাই আকর্ষন করতে থাকে যে আমি উনার প্রতি মোহিত হতে লাগলাম। তার মধ্যে এটা,ওটা নানান নানান গিফট ও পাঠাতে লাগলেন,আমার তখন ওগুলোর প্রতি লোভ জন্মাতে থাকে,একসময় মনে হতে থাকে ইশ! কেন এগুলো আমার জন্য নয়,কেন উনি আমাকে চিঠি লিখেননি! আর তখনি উনি একটা চিঠিতে লিখেন উনি পত্রীকন্যার সাথে দেখা করতে চায়। ঐ সময় আমি উনার দিওয়ানা হয়ে গিয়েছি। আমি ঠিক করেছিলাম আমিই উনার পত্রীকন্যা হয়ে দেখা করবো তাই ঐ চিঠিটা আমার কাছেই রেখে দিয়েছিলাম,আর আমি যেহেতু পত্রীকন্যা নয় তাই আমি চিঠিও লিখতে পারছিলাম না,মনে ভয় ছিলো যদি ধরা পড়ে যায়। ভয়টা খুব বেশিই আকড়ে ধরেছিলো যে,উনার সাথে দেখা করার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দিলাম। আমি ভেবেছিলাম যার চিঠি তাকেই দিয়ে দিবো। কিন্তু আমি চিঠি পৌছোনোর আগেই উনি অন্য কাউকে প্রপোস করে বসে। অন্য কাউকে পত্রীকন্যা ভেবে ভালেবাসতে শুরু করেন।””
স্নিগ্ধা পানির গ্লাস থেকে পানি খেয়ে আরেকটু গলা ভিজিয়ে বললো,,,
“” তারপর উনার সাথে আমার আর দেখা হয়নি,কোনো চিঠিও আদান-প্রদান হয়নি। আমি সব ভুলেই যাচ্ছিলাম,এর মধ্যেই একদিন উনাকে রেষ্টুরেন্টে দেখতে পাই,আমি ঠিক উনার পেছনের টেবিলটাই বসে ছিলাম। ওখান থেকেই জানতে পারি উনি এখনো উনার পত্রীকন্যার দেখা পাননি,আর সাথে সাথে আমার মনটা আবার লোভী হয়ে পড়ে। উনার প্রতি আবার ভালো লাগা কাজ করে,উনার ভালোবাসাকে নিতে ইচ্ছে করছিলো তাই আমি আমার একটা ফ্রেন্ডকে দিয়েই সব প্লেন করে উনাকে আমাদের বাসায় আনি,আর প্রমান করার চেষ্টা করি আমি উনার পত্রীকন্যা। উনিও আমার ফাদে পা ফেলে। আমি জানতাম অভিনয় করে আমি বেশিদিন উনাকে আটকে রাখতে পারবোন,তাই বিয়ের কথা বলি!””
স্নিগ্ধার কথা সকলেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিলো। সবাইকে সম্ভিতিতে আনতেই কাদির প্রশ্ন করে বসলো,,,
“” তুমিও যদি পত্রীকন্যা না হও তাহলে পত্রীকন্যা কে? কোথায় আছে সে??””
“” আমি জানিনা।””
“” জানিনা মানে? পত্রীকন্যার চিঠিতো তুমিই নিয়ে এসে পালককে দিতে।””
কাদির আর স্নিগ্ধার কথোপকথনের মাঝখানেই পালক উঠে দাড়িয়েছে। হন্তদন্ত হয়ে নিজের রুমের দিকে ছুটছে। কাদির আর পাপড়িও পালকের পিছু নিয়েছে।
পালক অস্থিরতার সাথে নিজের বিছানা উল্টাপাল্টা করে কিছু খুজে যাচ্ছে। সবকিছু লন্ডভন্ড করে নিচে তাকাতেই একটা কাগজ কুড়িয়ে পেলো। ওটাতে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিয়েই নিজের সব জামাকাপড় বের করতে থাকে। শার্টের পকেটগুলো হাতড়াতে আরেকটা কাগজ খুজে পেয়েছে। কাগজ দুটোতে চুমু খেয়ে উজ্জলতরভাবে হেসে বললো,,
“” আমি পেয়েছি,আমার পত্রীকন্যাকে!””
কাদির ব্রু কুচকে বললো,,
“” মানে?””
পালক ঠোটের রেখা বড় করে বেড়িয়ে যেতে গিয়েও আবার থমকে যায়। ওয়াশরুমের দরজায় আটকে থাকা আরেকটা কাগজ নিয়ে নিলো।
“” পালক তুই আবার ভুল করছিস নাতো?””
পালক বের হতে হতে বললো,,
“” না,এবার আর কোনো ভুল করছিনা। ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে যাচ্ছি,আমার পত্রীকন্যার রাগ ভাঙাতে যাচ্ছি!””
অফিস শেষে বের হতেই বাইরের ঝমঝমা বৃষ্টি দেখতে পাচ্ছে আতিশ। ইশ! এখনি বৃষ্টির আসতে হলো? এই চাকরীর জ্বালায় তো আমি পাপড়িকে হারিয়ে ফেলছি। পালকের দ্বিতীয় বিয়েতেও যেতে পারলামনা,বিয়ে দেখি আর না দেখি পাপড়িকে তো দেখতে পেতাম। কতদিন হলো মেয়েটাকে দেখিনা,ওর অভিমানি,ওর ফুপিয়ে কান্নাগুলোকে এতো বেশি মিস করছি যে আর একমুহুর্তও ওকে ছাড়া থাকতে পারছিনা। পালক তার ভালোবাসার মানুষটাকে পেলে আমি কেন পাবোনা? আমারও চাই আমার ভালোবাসার ছোট্ট নারীটাকে,বাচ্চা নারীটাকে!
বৃষ্টির মধ্যেই আতিশ পাপড়িদের বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছে।
দরজায় নক পড়তেই ভেতর থেকে পাপড়ি চিল্লিয়ে বললো,,
“” কে?””
পাপড়ির কন্ঠ শুনেই আতিশের মনটা জুড়িয়ে যাচ্ছে। ঠোটের কোনে হাসিও ফুটে উঠেছে,মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষটার সুন্দর কন্ঠিই যথেষ্ট মন ভালো করার জন্য,সকল ক্লান্তি দুর করার জন্য!
“” আমি!””
“” আমি কে?””
“” আমি কে মানে? তুই কি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিস? আমার কন্ঠ চিনতে পারছিস না? এখন কি তোকে আমার পুরো বায়োডাটা দিতে হবে?””
“” অবশ্যই,বায়োডাটা না নিয়ে দরজা খুলবো কেন?””
“” পাপড়ি,তুই কিন্তু মাইর খাবি আমার হাতে,আমার সাথে ফাজলামী শুরু করেছিস? দিনে দিনে এতো বেদামড়ি হচ্ছিস কিভাবে?””
“” কি চাই আপনার?””
“” তুই দরজা খুলবি নাকি আমি ভেঙে ফেলবো?””
“” অবশ্যই খুলবো,কেন খুলবোনা বলুন? আপনি বললেই তো হয় কাকে চায়? কেন এসেছেন?””
আতিশ নিজের রাগ কিছুতেই দমে রাখতে পারছেনা। কিন্তু এখন সে চায়না রাগ করতে,সে তো এসেছে পাপড়ির রাগ ভাঙাতে!
আতিশ নরম সুরেই বললো,,
“” পালকের বিয়ে দেখতে এসেছি!””
“” বিয়ে তো হয়নি!””
“” হয়নি মানে?””
“” হয়নি মানে হয়নি!””
“”তুই দরজা খোল আমি পালকের কাছে যাবো।””
“” ভাইয়া বাসায় নেই!””
“” তুই এভাবে দরজা বন্ধ করে কথা বলছিস কেন? খুললে কি সমস্যা?””
“” অনেক সমস্যা,বাসায় কেউ নাই। খালি বাসায় ছেলে মানুষ ঢুকানো যাবেনা।””
“” আমি ছেলে?””
“” তোহ কি মেয়ে?””
আতিশ রাগ সামলাতে গিয়ে এসব কি বলছে? গলা পরিষ্কারের বাহানায় গলা খাকিয়ে আবার বললো,,
“” খালি বাসায়ও তোকে আমি অসংখ্যবার পড়িয়ে গিয়েছি,পাপড়ি!””
“” তখন তো আপনি আমার টিউটর ছিলেন,এখন এক্স টিউটর হয়ে গেছেন,আর এক্স টিউটরের জন্য খালি বাসা বরাদ্দ নয়।””
“” এক্স টিউটর?””
“” হুম,বয়ফ্রেন্ড চেন্জ হলে যদি এক্স বয়ফ্রেন্ড হয় তাহলে টিউটর চেন্জ হলেও এক্স টিউটর হয়।””
“” তোকে এগুলো কে শিখিয়েছে?””
“” আমার নতুন টিউটর। আপনি যান তো আমি এখন বিজি!””
“” খালি বাসায় কি নিয়ে বিজি?””
“” আমার নতুন টিউটরকে নিয়ে বিজি। উনি আমায় আজকে নতুন জিনিস শিখাবেন!””
আতিশ রাগে দাত চিবিয়ে বললো,,
“” খালি বাসায় নতুন টিউটর কি করছে? দরজা খোল বলছি।”
“” না,এখন খোলা যাবেনা,আমরা এখন সিকরেট কাজে ব্যস্ত””
“” সিকরেট?””
“” হুম,টপ সিকরেট! আপনি যানতো,আমাকে উনি ডাকছেন,আর বিরক্ত করবেননা।””
বৃষ্টির শব্দগুলো অন্ত্রীশাকে ডাকছে,তারা খুব করে চাইছে তাদেরকে নিয়ে অন্ত্রীশা খেলুক। কিন্তু অন্ত্রীশা আজ খেলবেনা। সেতো বড্ড অভিমানে বালিশ ভেজানো কাজে ব্যস্ত। আজ তার কাছে আকাশ ভেঙে পড়া পানির ফোটা থেকেও চোখ ভেঙে আসা পানির ফোটা বেশি পছন্দ হচ্ছে। আজ সে কাদবে,মন ভরে কাদবে,কাদতে কাদতে চেখের পানি দিয়ে নিজেকে ভাসিয়ে ফেলবে,তবুও কাঁদবে,কষ্টকে যদি ফিল করতে না পারে তাহলে কষ্ট পেয়ে কি লাভ? সে কষ্টের মধ্যেও আনন্দ খুজে নিবে।
অন্ত্রীশা উপুত হয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে আছে,বালিশের উপর থুতনি দিয়ে সামনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। এ জানালাটা সে খুব একটা খুলেনা,শুধু খুব খুশির সময় নাহয় খুব মন খারাপ হলেই খোলে। এটাও দক্ষিন সাইডে থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে উঠা শীতল মৃদু বাতাস ছুয়ে দিচ্ছে অন্ত্রীশাকে। বাতাসের সাথে সাথে বৃষ্টির গুড়িগুড়ি ফোটারাও অন্ত্রীশাকে ছুয়ে দিচ্ছে। বিছানার অনেকাংশই ভিজে উঠেছে। বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে নিজের চোখের পানিও ফেলছে।
“” পত্রীকন্যা!””
হঠাৎ কারো কন্ঠ পেয়ে অন্ত্রীশা ভয় পেয়ে পেছনে ঘুরতেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো।
চলবে