ধোয়ার নেশা পর্ব ২১

#ধোয়ার-নেশা

#রোকসানা-রাহমান

পর্ব (২১)

অন্ত্রীশা উপুত হয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে আছে,বালিশের উপর থুতনি দিয়ে সামনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। এ জানালাটা সে খুব একটা খুলেনা,শুধু খুব খুশির সময় নাহয় খুব মন খারাপ হলেই খোলে। এটাও দক্ষিন সাইডে থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে উঠা শীতল মৃদু বাতাস ছুয়ে দিচ্ছে অন্ত্রীশাকে। বাতাসের সাথে সাথে বৃষ্টির গুড়িগুড়ি ফোটারাও অন্ত্রীশাকে ছুয়ে দিচ্ছে। বিছানার অনেকাংশই ভিজে উঠেছে। বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে নিজের চোখের পানিও ফেলছে।

“” পত্রীকন্যা!””

হঠাৎ কারো কন্ঠ পেয়ে অন্ত্রীশা ভয় পেয়ে পেছনে ঘুরতেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। মুখে দিয়ে শব্দ করে বেড়িয়ে যেতে চাইলো ‘আপনি’ সম্বোধনটা। কিন্তু না বের হয়নি।

পালক বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে গেছে,মাথার চুলগুলো সুন্দর করে মাথার চারপাশে গোলাকারে ঘুমিয়ে পড়েছে মনে হচ্ছে। সামনের চুলগুলো ভিজে কপালের সাথে ল্যাপ্টে গিয়ে ব্রুগুলোকে ছুই ছুই অবস্থা। চুল থেকে এখনো পানি টপটপ করে পালকের নাকে এসে পড়ছে। জামাকাপড়ের অবস্থাও খুবই বাজে। গায়ের সাথে এমনভাবে মিশে আছে যেন,শরীর আর জামার সাথে দোস্তের সম্পর্ক! চোখের নিচের পাতার দিকে ভেতরের সাদা ধারের অংশটা অনেকটাই লাল হয়ে আসছে!

অন্ত্রীশা পালককে ভালো করে দেখে নিয়ে নিজের আগের অবস্থানে ফিরে শুয়ে পড়েছে। এমন একটা ভাব যেন শুধু শুধুই ভয় পেয়েছিলো!

অন্ত্রীশার এমন স্বাভাবিক আচরনে পালক আরো বেশি চমকিত। এখানে অন্ত্রীশার হয় তার কাছে ছুটে এসে বলা উচিত ছিলো,স্বামী তুমি এসেছো? আমি জানতাম তুমি আমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবেনা। যেহেতু এটা বলেনি তাহলে অন্য কিছু করা উচিত ছিলো,যেমনঃ খুব রেগে গিয়ে বাড়িশুদ্ধ মানুষকে উথালপাথাল করে দেওয়া,কতগুলো আজেবাজে বকাবকি করা,থাপ্পড়ও দিতে পারতো। কিন্তু পালকের ভাবনাকৃত দুটো চরিত্রের সাথে একটাতেও সামিল হয়নি অন্ত্রীশা। কিন্তু কেন?? তাহলে কি ও বুঝতেই পারছেনা আমি সত্যিই এসেছি,আমাকে দেখতে পাচ্ছেনা?? নাকি অভিমানটা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে প্রকাশ করতে পারছেনা??

পালক এতোটাই ভিজে এসেছে যে,তার শরীর থেকে বেয়ে বেয়ে পড়া পানিগুলো তার দাড়ানরত জায়গাটাকে ভিজিয়ে আশেপাশে ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। পালক ভেজা শরীরসহ পা’টা নিয়ে ধীরগতিতে অন্ত্রীশার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চোখে তার এখনো বিস্ময় আর ভয় কাজ করছে। এটা ঝড়ের পুর্বে পরিবেশ নিয়িয়ে যাওয়া নয়তো??

অন্ত্রীশার কাছে এসে বিছানায় উঠে এসেছে পালক। চুপচাপ একপাশ থেকে অন্ত্রীশার পিঠের কাছটাতে নিজের মাথা রেখে ডান হাতটা দিয়ে অন্ত্রীশাকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,,

“” তুমি কেন বলোনি,তুমি আমার পত্রীকন্যা?””

অন্ত্রীশা তখনো চুপচাপ,পালকের উপস্থিতি,পালকের ছোয়া,পালকের কথা কিছুই যেন তার কাছে পৌছায়নি। সে এখনো জানালার দিকে তাকিয়ে। বাইরের বৃষ্টির সাথে মিশে যাওয়া বাতাসের ধমকা হাওয়াকে উপভোগ করছে।

পালক অন্ত্রীশাকে আরেকটু গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,,,

“” কিছু বলছো না কেন? রাগ করেছো? সরি তো!””

অন্ত্রীশা এতক্ষনে যেন সম্ভিত পেয়েছে। কিন্তু উত্তেজিত হয়নি,স্বাভাবিক ও যথেষ্ট নরম গলায় বললো,,

“” আপনি আমাকে এবং আমার বিছানাকে ভিজিয়ে ফেলছেন।””
“”আমি যে বৃষ্টিতে ভিজে আছি,সেটা তোমার চোখে পড়ছেনা? বিছানা ভিজা নিয়ে পড়ে আছো?””
“” সরুন!””
“” না,আমি সরবোনা। আগে বলো ক্ষমা করেছো আমায়।””
“” আমি সরতে বলছি।””
“” বলছিতো সরবোনা। আমি আমার পত্রীকন্যাকে কেন ছাড়বো? হুম? আমার এতো সাধনার ফল তুমি!””

অন্ত্রীশা আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারছেনা। রাগে,ক্ষোভে কি করবে বুঝতে পারছেনা৷ মানুষ যত রেগে যায় তত চিৎকার করে কথা বলে,যদিও তার বিপরীত মানুষটা কাছেই থাকে,তাহলে কেন চিৎকার করে?? তখন কি তার এমন মনে হয় যে তার বিপরীত মানুষটা অনেক দুরে অবস্থান করছে?? চিৎকার করে না বললে শুনতে পারবেনা??? অন্ত্রীশাও এবার চিৎকার করে উঠলো,,,

“” তোরে সরতে বলছি তুই সরবি,এতো বেশি কথা বলিস কেন?? আর কে তোর পত্রীকন্যা? তোর পত্রীকন্যা মরে গেছে,আমি কোনো পত্রীফত্রী না। সর আমার কাছ থেকে!””

পালক অন্ত্রীশার এমন আচরনে এতোটাই হতাহতিতো যে অন্ত্রীশা হালকা করে ধাক্কা দিতেই পালক ধুপ করে মেঝেতে পড়ে গেলো।

অন্ত্রীশা শোয়া থেকে উঠে পড়েছে। পালকের দিকে তাকাতে পারছেনা। রাগের পরিমানটা এতোটাই বেড়ে যাচ্ছে যে,সে চুপটি করেও বসে থাকতে পারছেনা,জোরে জোরে স্বাস প্রস্বাসের সাথে সাথে হাত দুটো কচলানো শুরু করে দিয়েছে।

অন্ত্রীশাকে এমন রুপে দেখে পালকের দম যায় যায় অবস্থা। এতো ঠান্ডা মেজাজের মেয়ে এতো গরম কি করে হতে পারে?? এর তো ভাষাও চেন্জ,আপনি থেকে সরাসরি তুই????

পালক অন্ত্রীশার কাছে যেতেও ভয় পাচ্ছে,মনে হচ্ছে অন্ত্রীশার উপর কোনো খারাপ ভুতের ছায়া পড়েছে। এখন ওকে ছুতে গেলেই খারাপ ভুতটা জেগে যাবে,আর জেগে যাওয়া মানেই রেগে গিয়ে তার গলা টিপে ধরা।

পালক ঢুক গিলে শুকনো গলা ভেজানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ভিজছেনা,ভিজবে কিভাবে? এখন তো শুধু তার গলাটাই শুকোয়নি,গলার সাথে সাথে তার শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে,এই যে একটু আগে ভিজে চুপচুপা হয়েছিলো সেই পানিও গায়েব!

অন্ত্রীশা চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার জন্য কয়েকটা সুরা পড়ে নিচ্ছে। বেশ কয়েকটা সুরা শেষ করে নিজের বুকে নিজেই কয়েকটা ফু দিয়ে,ঠান্ডা মেজাজে পালকের দিকে তাকিয়ে বললো,,,

“” কি বলতে চেয়েছিলেন বলুন!””

হঠাৎ করেই অন্ত্রীশার এমন ঠান্ডা কন্ঠটাও পালকের ভেতরের ভয়কে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা। খুবই ক্ষীনস্বরে বললো,,,

“” সরি,পত্রীকন্যা!””
“” কেন?””
“” আমি ভুল করে অন্য কাউকে পত্রীকন্যা ভেবেছিলাম,কিন্তু তুমিই যে আমার পত্রীকন্যা বুঝতে পারিনি,তাই সরি!””

পালক কথার তালে তালে অন্ত্রীশার দিকে এগুতেই অন্ত্রীশা কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,,,

“”নিজের অবস্থান থেকে এক ইঞ্চিও নড়াচড়া করলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে। আপনার যা বলার আপনি ওখান থেকেই বলুন!””

পালক আগের মতো বসে বললো,,

“” একটু কাছে আসি,তোমাকে ছুবোনা প্রমিস!””
“” না,আপনি ওখানেই থাকবেন।””

পালক অনুনয় স্বরে বললো,,,

“” এমন করছো কেন? আমি তো নিজের ভুল সুদরিয়ে তোমার কাছেই এসেছি,তোমাকে খুজে বেরও করেছি। ক্ষমা করে দাওনা। তুমি তো লক্ষীপাখি!””

অন্ত্রীশা এবার পালকের কাছে এসেছে,খুব কাছে,পালকের মুখোমুখি হয়ে বসে,ওর চোখে চোখ রেখে বললো,,,

“” একটা ভুলের ক্ষমা হয়,দুটো ভুলেরও ক্ষমা হয়,কিন্তু তিনটা ভুলের নয়। আপনি পরপর তিনটা ভুল করেছেন!””
“” তিনটা! কই আমি তো দুজনকেই ভুল করে পত্রীকন্যা ভেবেছি,তিননাম্বারটা কিভাবে পাইলা?? বিয়েতো হয়নি!””

পালকের ডান হাতটা অন্ত্রীশা নিজের কোলের উপর রেখে বৃদ্ধ আর কেনি আঙুলটা হাতের ভেতর সাইডে ভাজ করে নিয়েছে। বাকি তিনটা আঙুল পালকের দিকে এগিয়ে দিয়ে একটা আঙুল ভাজ করে বললো,,

“” নাম্বার ওয়ান,,আপনি আমার আপুকে পত্রীকন্যা ভেবে ভালোবেসেছেন,এক বছর প্রেম করেছেন, এটা আপনার সব থেকে বড় ভুল ছিলো,কেননা এই ভুলের প্রেক্ষিতেই আপনাকে বাকি দুটো ভুল করতে হয়েছিলো।
নাম্বার টু,,এক ভুল শেষ হতে না হতেই আরেক ভুলে পা। আবার সেই অন্য একটা মেয়েকেই আপনি পত্রীকন্যা ভেবেছেন,এবার প্রেম নয় সরাসরি বিয়েতে চলে গিয়েছেন।
নাম্বার থ্রি,,,আপনি অন্ত্রীশার প্রেমে পড়েছেন,যেটাতে পড়া আপনার উচিত হয়নি!””

অন্ত্রীশা পালকের হাতের সবগুলো আঙুল ভাজ করে ফেলেছে,ভেতরের রাগগুলোও এখন ঘুমিয়ে পড়েছে,মনে হয় না তারা জাগবে,তবে অভিমান?? অভিমানরা কি ঘুৃমাবেনা? এদের কি ঘুম পায়না? এদেরও যে এখন বড্ড ঘুমানো উচিত।

অন্ত্রীশা পালকের কাছ থেকে উঠে যেতে নিলেই বলে উঠলো,,,

“” ভুল কি আমি একাই করেছি তুৃমি করোনি?””

অন্ত্রীশা পালকের দিকে ঘুরে বললো,,

“” হুম,করেছিলাম তো! আপনাকে ভালোবেসে,মনের কথা চিঠিতে প্রকাশ করে। যদি চিঠিতে না লিখতাম তাহলে হয়তো আমরা আজ জজ আর আসামীর কাঠগড়ায় দাড়াতাম না।””

পালক বসা থেকে উঠে অত্রীশার কাছে আসতেই অনতি কঠিন গলায় বললো,,,

“”চলে যান এখান থেকে। এখনি!””
“” পত্রীকন্যা,প্লিজ! এমন করে ফিরিয়ে দিওনা। আমি সইতে পারবোনা। “”

অন্ত্রীশা নিজের রুমের জানালা বন্ধ করতে করতে বললো,,

“” বাইরে বৃষ্টি পড়ছে,মনে হয় ঝড় হবে। আজ রাতটা এখানে থেকে,কাল সকালেই চলে যাবেন। আমি ঘুম থেকে উঠে আপনাকে যেন দেখতে না পাই।””

অন্ত্রীশা আর পালকের দিকে তাকাইনি,সোজা বিছানায় শুয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে। কষ্ট হচ্ছে, না? কতটা কষ্ট হচ্ছে আপনার? আমার থেকেও বেশি?? ইশ! যদি কষ্ট মাপার একটা যন্ত্র থাকতো,তাহলে আজ মেপে দেখা যেতো কষ্টতে কে জিতেছে,পত্রীকন্যা নাকি পত্র পুরুষ!

অন্ত্রীশা কাথা দিয়ে পুরো মুখ ঢেকে শুয়েছে নাহলে তার অতৃপ্ত চোখটা বার বার যে তার পত্র পুরুষকে দেখতে চাইবে। নিশ্চয় মুখটাকে কালো মেঘে ঢেকে রেখেছে,হয়তো চোখে পানিও নিয়ে এসেছে,মনে মনে হাজারও রঙবেরঙের বকা দিয়ে যাচ্ছে নিজেকে,হয়তো জ্বলছে অনুতপ্ততার আগুনে। কিন্তু এতো কিছু সে কেন দেখবে? সেও তো ভোগেছে,আজ কত বছর ধরে ভুগে এসেছে,সেগুলোর কাছে উনারটা কিছুই নয়৷ কিছুইনা। আমি কিছু দেখবোনা। আমি তো আজকে আরাম করে ঘুমাবো,আজ তো আমি একা নয় আমার সাথে আরেকজনও কষ্টে বুক ভাসাচ্ছে!

সকালের ভোরের ফুটফুটে স্নিগ্ধ আলো এসে পড়েছে অন্ত্রীশার কাথার উপর। কিছুটা আলো কাথা ভেদ করে অন্ত্রীশার চোখে পড়েছে হয়তো। তাই রোদের মিস্টি গন্ধে নাকের ঘুম চলে গিয়ে চোখের ঘুমও ভেঙে গেছে। অন্ত্রীশা কাথাটা মেলে প্রথমেই চোখ মেলেনি। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ শব্দ পাচ্ছে। ভালোবাসারমন বলছে চোখ খোলেই যেন তার পত্র পুরুষটাকে দেখতে পায় কিন্তু অভিমনি মন বলছে,না এই চোখে সে পত্রপুরুষকে দেখবেনা।

অন্ত্রীশা পিটপিট করে চোখ মেলতেই বুঝতে পারলো তার অভিমানি মনটাই জিতে গিয়েছে। পত্রপুরুষ নেই,চলে গিয়েছে।

অন্ত্রীশা উঠে বসতেই মুখটা ভার হয়ে এসেছে। লোকটা আমাকে বুঝলোইনা,সত্যি সত্যিই চলে গেলো??? অন্ত্রীশা কিছুক্ষন গাল হাত দিয়ে বসে থাকলো। বসা থেকে উঠতেই নিজের পড়ার টেবিলে একটা কাগজ দেখতে পাচ্ছে,কাগজটার উপরে একটা চেইন,সাথে লকেটও আছে। চেইনটা হাতে নিতেই বুঝতে পারছে এটা তার ব্যবহৃত সেই চেইনটা যেটা কিছুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এটা এখানে কি করে এলো???

অন্ত্রীশা চেইনটা পাশে রেখে দিয়ে কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করেছে,,,

****আমার অপেক্ষার রানী পত্রীকন্যা,

কি ভেবেছো? তোমার কড়া কড়া দুটো কথাতেই আমি সব ভুলে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো? কখনোই না৷ যাকে কখনো পাবো কিনা তার গ্যারান্টিই ছিলো তবুও তাকে খুজে খুজে আমার অর্ধেক যৌবন ফুরিয়ে ফেলেছি। আমার সেই অর্ধেক যৌবন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও তোমাকে আমার কাছে আসতে হবে। এতোদিন শব্দে রাঙা মেয়েটাকে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছি কিন্তু এখন? এখন হাত,পা,চোখ,মুখ,নাক,ঠোট,মাথা,চুলসহ একটি পরিপুর্ন কিশোরী মেয়ের জন্য অপেক্ষা করবো। যার শরীরের আন্তিকে প্রতিটি শিরী উপশিরা,এক অঙ্গ থেকে আরেক অঙ্গে বহমান রক্তে, বাহ্যিকে প্রতিটি পশমে,নিশ্বাস-প্রশ্বাস এমন কি চুলের ঘ্রানেও রয়েছে আমার প্রতি ভালোবাসা। আমি তার অপেক্ষায় থাকবো,দরকার হলে আমি আমার বাকি অর্ধেকটা যৌবন তাকে পাওয়ার ভাবনায় দান করবো। তবুও আমার তাকেই চাই।

প্রথম আর দ্বিতীয় ভুলটা আমি স্বীকার করছি,কিন্তু তৃতীয় ভুলটা স্বীকার করবোনা। কারন ওটা ভুল ছিলোনা। কেননা পত্রীকন্যা আর অন্ত্রীশা শুধু নাম দুটোই ভিন্ন কিন্তু তাদের শরীর,আচার ব্যবহার,পাগলামী,কথাবার্তা,চালচলন সব তো একটাই তাইনা??? আমি তো তোমার নামের প্রেমে পড়িনি। চিঠিতে আমি আমার পত্রীকন্যার অনুভূতির প্রেমে পড়েছিলাম আর সেই অনুভূতিগুলো তো আমার বউ অন্ত্রীশার মধ্যেই বিচরন করছিলো। তাহলে আমি কি করে নিজেকে আটকে রাখতে পারতাম বলো??

তোমার কাছে পৌছানোর দায়িত্ব কি আমার একার ছিলো? তোমার ছিলোনা?? তুমি কি একবারও আমাকে খুজতে চেয়েচিলে? আমি জানি তুমি চাওনি,কেন চাওনি? ভালো তো তুমিও আমাকে বেসেছিলে তাহলে সেটা শুধু অভিমানেই কেন আটকে রাখলে?? কেন সেদিন আমার সামনা সামনি এসেও আমাকে বলোনি তুমি আমার পত্রীকন্যা,অনিকশা নয়। তার উপর তোমার লেখা যাতে বুঝতে না পারি তার জন্য তুমি চিঠিগুলোতে লেখার ধরন চেন্জ করেছিলে! কেন করেছিলে আমাকে কষ্টে থাকতে দেখতে?? লাস্ট চিঠিটা তুমি পত্রীকন্যা হয়ে লিখেছো,আমি এটা সিউর তুমি ইচ্ছে করে ওভাবে লেখনি,ভুল করে লিখে ফেলেছিলে। আর তোমার ভুলটা ও ধরতে আমার লেট হয়েছিলো। আমি তখন স্নিগ্ধাকে বিয়ে করার জন্য এতোটাই উত্তেজিত ছিলাম যে তোমার লেখার প্রতি আমার কোনো খেয়াল ছিলোনা। কিন্তু দেখো পরে তোমার এই ভুলটাই আমাকে তোমার কাছে এনেছে। সব ভুল খারাপের জন্য হয়না,কিছু কিছু ভুল ভালোর জন্যও হয়। আমার টা কেমন ভুল হয়েছে আমি জানিনা। কিন্তু আমি তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য ছটফট করছি। আমি জানি তুমি আমার এই ছটফট কমাতে আমার কাছে আসবে। আমি চাই তুমি আসো। সবসময় আমি কেন তোমার কাছে ছুটে যাবো। এবার নাহয় তুমি ছুটে এসে আমাদের অপেক্ষার ইতি টানলে!

ইতি

তোমার ছটফট পত্র পুরুষ

অন্ত্রীশা চিঠিটা রেখে চেইনটা আবার হাতে নিয়েছে। চেইনের মধ্যে থাকা লকেটটা খুলতেই সেখানে একপাশে পালকের হাসি হাসি মুখটা দেখতে পাচ্ছে আর অপর পাশটা এখনো খালি।

ভর দুপুরের মাথার উপরে উঠে যাওয়া সূর্যটার নিচে হাটুগেড়ে দাড়িয়ে আছে পালক। সুর্যের দিকে মুখ করে চোখটা বন্ধ করে রাখা। হাতদুটো পেছনে ভাজ করা। এমন একটা ভাব যেন তাকে কোনো সামরিকবাহিনীরা শাস্তি দিচ্ছে বর্ডার পার করে অন্যত্র সীমানায় যাওয়ার জন্য।

অন্য সবসময়ের মতো আজো সে সূর্যের তীব্র রশ্নিতে নিজের কষ্ট ধুয়ে নিবে। খুব বেশি কষ্ট,যেটাতে বুকের ভেতরের রগগুলো ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে ব্যথা অনুভব হয়,সেই কষ্টে সুর্যের নিচে দাড়িয়ে থাকতে আরামবোধ করে পালক।

পত্রীকন্যাকে পেয়েও পাওয়া হলোনা,ছুয়েও ছুয়া হলোনা,দেখেও দেখা হলোনা এমন একটা রোগে ভুগছে পালক। কিছুই ভালো লাগছেনা তার। মনের অজান্তেই বিড়বিড় করছে সে,হ্যা পত্রীকন্যা তুমি ঠিক ধরেছো,আমি সত্যি সত্যিই আমার বউ অন্ত্রীশার প্রেমে পড়েছিলাম। আমি যখন কলম ফেলে উঠে গিয়েছিলাম তখন তোমার প্রেমে পড়েই উঠে গিয়েছিলাম। ঐ কলমটা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো আমি আমার বউয়ের প্রেমে পড়ে গিয়েছি,আমি আমার অন্ত্রীশার প্রেমে পড়ে গিয়েছি। কিন্তু সেটা ঠিকঠাক উপলব্ধি করার আগেই পত্রীকন্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। আমি তোমার কাছে ছুটে গিয়েছিলাম শুধু পত্রীকন্যাকে পাওয়ার জন্য নয়,আমারতো অন্ত্রীশাকেও পাওয়ার ছিলো।

পালকের বিড়বিড় শেষ হওয়ার আগেই মুখে আঠালো জাতীয় কিছু এসে লাগে। পালক চোখ মেলতেই দেখে অন্ত্রীশা ওর মুখে টেপ লাগিয়ে পুরো মাথা ঘুরিয়ে আনছে। পালক অন্ত্রীশাকে আটকাতে নিলেই অন্ত্রীশা অগৃনিদৃষ্টি ছুড়ে দিয়েছে। তাতে পালক দমে গিয়ে চুপচাপ অন্ত্রীশাকে দেখে যাচ্ছে।

পালকের পাশে অন্ত্রীশাও হাটুগেড়ে বসে একটা সিগারেট নিজের মুখে পুড়ে নিয়েছে। ম্যাচ জ্বালিয়ে সিগারেটের মাথায় আগুন ধরিয়েছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here