#নষ্ট_গলি
পর্ব-২৯
লেখা-মিম
সালমানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রতন আর শামীম গেছে বাহির থেকে খাবার আনতে। সালমান নিজের রুমে বসে কথা বলছে শিমুর সাথে। গুনে গুনে পুরো দুঘন্টা পার হয়ে গেলো। মায়ার হাজার ডাকের পরও দরজা খুললো না সোহান। এমনকি ভিতর থেকে একটু আওয়াজ করলো না৷ এই দুঘন্টায় তিনটা সিগারেট শেষ করেছে সোহান৷ বাহিরে দরজায় মাথা ঠেকিয়ে বসে ফ্লোরে বসে আছে মায়া। মাথাটা প্রচন্ড রকমে ঘুরাচ্ছে ওর। সকাল থেকে না খেয়ে আছে। তারউপর সকাল থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। আপাতত ওর আর কান্না পাচ্ছে না। চোখের সামনে ধীরে ধীরে সব ঘোলাটে হয়ে আসছে। বসে থাকার ক্ষমতাটা শেষ হয়ে আসছে ওর। গলা শুকিয়ে আসছে প্রচন্ড রকমে। পানি খাওয়া দরকার। ফ্লোর ছেড়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গেলো মায়া। নূন্যতম জোর পাচ্ছে না শরীরে। হাত পা কাঁপছে ওর। পানির গ্লাসটা হাতে নিতেই চোখের সামনে সমস্ত কিছু অন্ধকার হয়ে গেলো। হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে ভেঙে গেলো। ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো মায়া। ভাঙা কাঁচের উপর বাম হাতটা পড়লো। কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত চারটা কাঁচের টুকরা ঢুকেছে। গ্লাস ভাঙার আওয়াজ পেয়ে ফোন কানে নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে এলো সালমান। মায়াকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে ফোন ফেলে মায়ার কাছে ছুটে এলো সালমান। বাহির থেকে সজোরে চিৎকার করলো সে।
– ভাইয়া, জলদি বের হও। মায়া সেন্সলেস হয়ে গেছে।
সালমানের চিৎকার শুনে বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠলো সোহান। রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে মায়াকে কোলে তুলে নিয়েছে সালমান। মায়ার রুমের দিকে যাচ্ছে সে। সালমানের পিছু পিছু সোহানও যাচ্ছে। চেহারা থেকে মূহূর্ত্বে রাগটা সরে গিয়ে দুশ্চিন্তার ছাপ ভেসে উঠেছে। মায়াকে খাটে শুইয়ে দিলো সালমান। মায়ার পাশে হেলান দিয়ে বসেছে। সোহান। একহাতে মায়ার কপালে হাত দিয়ে অন্য হাতে মায়ার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে সোহান। মায়ার বাম হাতটা বিছানার সাথে লেগে আছে। হালকা গোলাপী রঙের চাদরটায় লাল রক্ত লেপ্টে যাচ্ছে। রক্ত দেখে আৎকে উঠলো সোহান। মেয়েটা আবার রগ কাটলো না তো। বাম হাতটা ওর হাতে নিয়ে ভালোভাবে দেখছে সোহান।
নাহ, রগ কাটেনি। কাঁচ বিঁধেছে।
– সালমান, এক গ্লাস পানি আন। আর স্বপন ভাইয়ের নাম্বারটা আছে না?
– হ্যাঁ।
– উনাকে কল করে বল সোহান ভাইয়ের ওয়াইফ সেন্সলেস হয়ে গেছে৷ হাতে কাঁচের টুকরাও ঢুকেছে। এখনি বাসায় আসতে বল।
– যাচ্ছি।
– পানিটা আগে দিয়ে যা।
– হুম হুম৷ দিচ্ছি।
রুমের এসি ছেড়ে দিলো সোহান। ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে এক জগ পানি আর গ্লাস দিয়ে গেলো সালমান। জগ থেকে একটু একটু পানি নিয়ে মায়ার মুখে ছিটাচ্ছে সোহান। তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। মুখের উপর ছিটিয়ে থাকা পানিগুলো টিস্যু দিয়ে মুছে দিচ্ছে সোহান। মায়া চোখ খুলছে না৷ মনে হচ্ছে যেনো কলিজায় কামড় লেগে আছে৷ দুশ্চিন্তায় কপালের মাঝে ভাঁজ পড়ে গেছে সোহানের।
– ভাইয়া, স্বপন ভাইকে ফোন করেছিলাম।
– কি বললো?
– দুই তিন মিনিট লাগবে আসতে।
– উনি চেম্বারে না?
– ছিলো। আমাদের বাসার সামনে দিয়েই উনার বাসায় ফিরছিলো। আমাদের গলিতেই আছে। চলে আসবে।
– মায়া তো চোখ খুলছে না।
– টেনশন নিও না। আসলে ও তোমার রাগ দেখে অভ্যস্ত না তো। তাই বেশি ভয় পেয়েছে। ঠিক হয়ে যাবে।
– হাত থেকে তো ব্লিডিং হচ্ছে। কাঁচগুলো কি বের করবো?
– না। ওয়েট করো। স্বপন ভাই আসুক।
বাসার কলিংবেল বাজছে। খুব দ্রুতগতিতে সালমান যেয়ে দরজা খুললো। স্বপন ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– সোহান বিয়ে করেছে? সিরিয়াসলি?
– হ্যাঁ।
– শুনলাম না তো কিছু।
– আমরা সামনে অনুষ্ঠান করবো। তাই এখন কাওকে জানাইনি।
– কোন রুমে?
– ঐ যে। ঐটাতে।
স্বপন দেখা মাত্রই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সোহান। মায়ার পাশে বসার জায়গা করে দিলো স্বপনকে। মায়ার মুখের দিকে একনজর তাকালো স্বপন। এরপর নজর গেলো হাতের দিকে। ফোনে সালমান বলেছিলে হাতে কাঁচ ঢুকেছে। কাঁচগুলো আগে বের করতে হবে। মায়ার হাতটা ঘেটেঘুটে দেখছে স্বপন। তিনটা ছোট কাঁচের টুকরা আর একটা মাঝারি সাইজের টুকরা আছে। মোটামুটি বড় একটা অংশ কেঁটেছে কিন্তু সেখানে কাঁচ নেই।
– সালমান?
– জ্বি?
– নিচে যাও। আমার গাড়িতে সার্জারি কিট আছে। আর মেডিসিনের নাম লিখে দিচ্ছি। ফার্মেসি থেকে নিয়ে আসো৷
– আচ্ছা।
কাগজে ঔষধের নাম লিখে দিলো স্বপন। সালমান নিচে গিয়েছে মেডিসিন আর সার্জারী কিট আনতে। সোহানকে পাশে বসতে বললো স্বপন। ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে বসার টুল টেনে এনে স্বপনের মুখোমুখি বসলো সোহান।
– বিয়ে করেছো কবে?
– এইতো ৪ মাস হয়ে যাচ্ছে।
– তোমার সাথে গত সপ্তাহেও দেখা হয়েছে। কই কিছু বললে না তো?
– মনে ছিলো না।
– মেয়েকে দেখে তো মনে হচ্ছে বয়স একদম কম।
– হ্যাঁ। ১৮ বছর।
– এতটুকুন একটা মেয়েকে এভাবে কেও মারে সোহান?
স্বপনের মুখের দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে আছে সোহান।
– মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে দেখো তো। দুগালে হাতের আঙুলের ছাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। ছয়মাসও হয়নি বিয়ে করেছো। এখনই এভাবে মারামারি শুরু করে দিয়েছো। হাতে কাঁচ ঢুকলো কিভাবে? গ্লাস টাইপ কিছু দিয়ে মেরেছো?
– না৷ ভাঙা কাঁচের উপর পড়ে গিয়েছিলো।
– পড়ে গিয়েছে নাকি ধাক্কা দিয়েছো?
– না না। ধাক্কা দেইনি। পড়ে গিয়েছে।
– বয়স বাড়ছে তোমার। এখনও নাকের ডগায় রাগ চড়ে থাকে তোমার। এগুলো কোনো কথা? মেয়েকে যদি এভাবে মারো তাহলে কি ও তোমার সংসার করবে?
– বাসা থেকে চলে গিয়েছিল। এজন্যই মেরেছি।
– তাই বলে এভাবে মারবে? দেখো তো মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গেছে।
– আমি আসলে বুঝিনি এমন কিছু ঘটে যাবে।
– রাগটা কমাও সোহান। আর কত? বিয়ে শাদী করেছো। এখন নিজের উপর কন্ট্রোল আনো। এত ছোট বউ পেলে তো কোলে বসিয়ে রাখতাম সারাক্ষণ। আর তুমি কিনা এভাবে মারলে।
চোখ পিটপিট করছে মায়ার। স্বপন দেখতে পেয়ে উঠে দাঁড়ালো। সোহানকে ইশারা দিলো মায়ার পাশে বসার জন্য। রুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। তার মতে এই মূহুর্তে চোখ মেলে সোহানকে চোখের কাছে দেখাটা মায়ার জন্য খুব জরুরী।
(চলবে)