না চাইলেও তুই আমার পর্ব ৫

#না চাইলেও তুই আমার (Villan Love’s)
#বৃষ্টি আক্তার (Dr’s Queen)
#পার্ট:৫

– কেনো তোমার কি মনে হয়!
– আমার তো মানুষ মনে হয় না আপনাকে।মানুষ হলে আমার উপর এতো অত্যাচার করতে পারতেন না।
– ওকে তাহলে আমি মানুষ না।খুশি তো। এখন কথা না বাড়িয়ে ফুসকা গুলো শেষ করো।
– আমি আর খেতে পারবো না।অনেক ঝাল(অসহায় ভাবে)

উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,ওকে চলো।
এই বলে উনি ওয়েটারকে ডেকে বিল পরিশোধ করে আমাকে নিয়ে গাড়িতে বসালেন।তারপর গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলেন।এইদিকে আমি ঝালের জন্য কথা বলতে পারছি না।এমন নির্দয় মানুষ আমি একটাও দেখিনি।

তোর কখনো ভালো হবে না দেখিস।তোর বউয়ের কুড়ি টা বাচ্চা হবে আর সব গুলো এসে তোকে অনেক জ্বালাবে হুম😤( মনে মনে)

কথা গুলো বলতে বলতে কখন যে বাসায় চলে আসলাম বুঝতে পারিনি।
উনি গাড়ি থেকে নেমে আমাকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে গিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারলেন।

– বারবার না করার পরেও কেনো ছেলেদের সাথে কথা বললি,ঘুরতে গেলি ( রেগে চিল্লিয়ে)
– ,,,,,,
– কথা বলছিস না কেনো ( পাশে থাকা চেয়ারে জোরে লাথি মেরে)
– আ আ আর ক কখনো কথা বলবো না।( কাঁপা কাঁপা গলায়)
– আমি যখন কোনো প্রশ্ন করি তখন সাথে সাথে উত্তর দিস না কেনো( ধমক দিয়ে)
– আ আ আর হবে না এমন ( আবারো কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম)

একতো ঝালে মুখ জ্বলে যাচ্ছে অপরদিকে ওনার ভয়ার্ত চেহারা দুটো মিলিয়ে মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোচ্ছে না আমার।
আচমকা উনি আমার হাতে ধরে টান দিয়ে আমাকে দাঁড় করিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে আমার ঠোঁটের সাথে ওনার ঠোঁট মিশিয়ে দিলেন।
ঘটনাটি খুব দ্রুত ঘটে যাওয়ায় সব আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।কিছুই বুঝতে পারলাম না। প্রায় অনেক্ষন পর উনি আমাকে ছাড়লেন।আমি হাঁপাচ্ছি।কিন্তু ওনার আজকের ছোয়া টা আগের মতো রূঢ় ছিলো না ,অন্যরকম ছিলো।এই ছোয়ায় না ছিলো কোনো জেদ আর না ছিলো কোনো রাগ।কেমন জানি একটা অদ্ভুত রকমের অনুভূতি ছিলো।কিন্তু সেটা কেমন অনুভূতি!
ওনার কোথায় ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম।।।

– ঝাল কমেছে?
ওনার এহেম কথায় আমি বোকা বনে গেলাম।
– কি হলো বলো!
– হুম।( মাথা নিচু করে)
– আমার এই কথা শুনে ভেবো না যে আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি।তোমার শাস্তি এখনো বাকি আছে আর সেটি হলো আগামীকাল থেকে তোমার কলেজে যাওয়া বন্ধ।
কথা টা বলেই উনি হনহন করে রুম থেকে চলে গেলেন।আর আমি সেইখানেই বসে পরলাম,,,
ওনার সাথে প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল সেদিনের কথা খুব মনে পড়ছে আজ,,,কেনো যে ওনার সাথে আমার দেখা হলো,,কথা গুলো ভাবতে ভাবতে অতীতে ডুব দিলাম।

অতীত,,,,,

আজ আমার কলেজের প্রথমদিন।ঘুম থেকে উঠতে আজ একটু দেরি হয়ে গেছে। কোনো রকম তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হয়ে গেলাম কলেজের উদ্দেশ্যে।অবশ্য মামা অনেকবার পেছন থেকে ডেকেছে আমায় খেয়ে যাওয়ার জন্য । প্রথম দিন আজ,কোনো ভাবেই লেট করা যাবে না তাই বের হয়ে গেলাম।রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছি।যেদিনই খুব তাড়া থাকে সেদিনই রিক্সাওলা মামাদের কোনো খবর থাকে না। একতো লেট হচ্ছে অপরদিকে কোনো রিক্সাও পাচ্ছি না।কি করবো ভেবে না পেয়ে হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটার মাঝে আমি এতোটাই মগ্ন হয়ে ছিলাম যে আমার দিকে আসা গাড়ী টাকে খেয়াল করিনি।হঠাৎ করেই ঝড়ের বেগে কেউ আমার হাত হেঁচকা টান দেয়।টাল সামলাতে না পেরে আমি ওই ব্যাক্তিটির বুকের উপর গিয়ে পরলাম। লক্ষ্য করলাম লোকটি আমাকে খুব শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।আমি এবার আমাকে লোকটার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি।লোকটি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলে –

– চোখ কি হাতে নিয়ে হাঁটো।দেখে চলতে পারো না।এখনি তো গাড়িটার সাথে ধাক্কা খেতে।(ধমকের সুরে)
– আসলে তাড়াহুরোয় খেঁয়াল করিনি।
– ঠিক আছে।পরেরবার থেকে দেখে চলবে।
– জি আচ্ছা।
– তোমার নাম কি?
– কেনো আমার নাম জেনে আপনি কি করবেন🤨
– এমনি জানতে চেয়েছি ।বলতে অসুবিধে থাকলে বলতে হবে না।
– আমার নাম নিধি হাসান।
– নিধু( আস্তে করে )
– কিছু বললেন?
– নাতো কি বলবো🙄
– ওহ্।আচ্ছা আমাকে সেভ করার জন্য ধন্যবাদ।আসি।

এই বলে আমি চলে গেলাম।

প্রথম দিন কলেজে খুব ভালোই কেটেছে আমার। এভাবেই কিছুদিন কেটে যায়।এর মাঝে আমার প্রায় মনে হতো আমি কলেজে যাওয়ার সময় কেউ আমাকে ফলো করে।রাতে ঘুমানোর পর কেউ আমাকে খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।কিন্তু কাউকে দেখতে পেতাম না।একসময় এটা আমার হ্যালুসিনেশন ভেবে আর পাত্তা দেই নি।

একদিন আমি আমার কিছু ফ্রেন্ডদের সাথে বসে বসে গল্প করছিলাম। ফ্রেন্ডদের মধ্যে কিছু ছেলে ফ্রেন্ডও ছিলো।সবাই মিলে মজা করছিলাম। হুট করে কোথা থেকে উনি আমার সামনে দাঁড়ালেন।আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমাকে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন।আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি আর বলছি –

– কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়? ছাড়ুন আমাকে।আমার হাতে লাগছে আহ্ ছাড়ুন।

উনি আমার কোনো কথারই জবাব দিলেন না।একপর্যায়ে আমি জোরপূর্বক আমার হাতটা ছাড়াই এবং খুব জোড়ে ওনাকে একটা থাপ্পড় মেরে বসি।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।ওনার চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে এই মুহুর্তেই উনি আমাকে মেরে দাফন করে ফেলতে পারবেন।আমি ওনার এই চাহনি দেখে ভয় পাই আর মনে মনে আল্লাহর নাম জব করতে থাকি।ভয়টা ওনার সামনে প্রকাশ না করে সাহস করে বলতে লাগলাম –

– আমার হাত ধরার সাহস আপনি কোথ থেকে পেলেন। চিনিনা জানিনা হুট করে এসে আমার হাত ধরে টানাটানি করা শুরু করে দিয়েছেন।সমস্যা কি আপনার😠

উনি আমার কথার কোনো প্রতিক্রয়া না করে চলে গেলেন।আমিও ঠাঁই ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কে জানতো ওনাকে থাপ্পড় মারাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।

সেদিন আর ক্লাস করিনি।বাসায় চলে এলাম।মাথা টা কেমন জানি খুব ব্যাথা করছে।সারাদিন আর রুম থেকে বের হলাম না। সন্ধ্যায় রুম থেকে বের হয়ে মামীর কাছে গেলাম।মামী আমাকে বললেন –
– তোকে কাল দেখতে আসবে।সুন্দর করে রেডি হয়ে থাকিস আর কালকে তোর কলেজে যেতে হবে না।
– কিন্তু মামী আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই না ।
– আমি তোর কোনো চাওয়া বা ইচ্ছে শুনতে চাইনি।আমি যেটা বলছি সেটাই হবে।

রাগে দুঃখে নিজের রুমে চলে আসলাম। আজ বাবা মা বেঁচে থাকলে আমার চাওয়া পাওয়া ইচ্ছের অনেক মূল্য দিতো।এগুলা ভাবতে ভাবতে অনেক কান্না করলাম।
রাতে আর রুম থেকে বের হইনি। মামা অনেকবার খাবার খাওয়ার জন্য ডেকেছে তাও যাইনি।কেন জানিনা আজ নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।নিজের আপন বলতে কেউ নেই যে কিনা আমাকে বুঝবে।আমার ইচ্ছে গুলোকে প্রাধান্য দিবে।কথা গুলো নিজে নিজে বলতে বলতে ঘুমিয়ে পরলাম।পরেরদিন সকালে মামী আমার রুমে এসে একটা শাড়ি দিয়ে বললেন –

– নিধি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়।ওনারা কিছুক্ষণ পর চলে আসবেন।

এই বলে মামী চলে গেলেন।আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম।
নীল শাড়ি,নীল চুড়ি, কালো একটা ছোটো টিপ,খোলা চুল,ঠোঁটে হালকা অরেঞ্জ কালার লিপস্টিক।
মামী এসে আমাকে নিয়ে গেলেন।ওনাদের আমাকে দেখে পছন্দ হয়েছে।যখন বিয়ের কথা পাকা করতে যাবে ঠিক সে সময় নিহান চৌধুরীর আগমন ঘটলো।
আমি ওনাকে দেখে বসা থেকে দাড়িয়ে পরলাম।উনি এসে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসলেন।আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি ছেলে পক্ষদের উদ্দেশ্য করে বলেন

– আপনারা এখন থেকে চলে জান। অন্য কোথাও গিয়ে আপনাদের ছেলের জন্য মেয়ে দেখেন।নিধুর বিয়ে হয়ে গেছে।আপনারা আসতে পারেন ।

ওনারা যাওয়ার সময় আমার মামীকে কথা শুনিয়ে চলে গেলেন।মামী রেগে আমাকে মারতে যাবেন তখন উনি মামীর হাত ধরে ফেললেন।আর বললেন –

– নিধুর গায়ে হাত তোলার সাহস টা করবেন না।
এই বলে উনি মামীর হাত ছেড়ে আমার কাছে গেলেন।

মামা আর মামীকে উদ্দেশ্য করে উনি বললেন

– আমি নিহান চৌধুরী।নাম শুনেছেন হয়তো।যাই হোক আপনাদের কিছু কথা বলতে চাই। আপনারা এতোদিন নিধুর খেয়াল রেখেছেন তার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ । নিধুকে আমি ভালোবাসি আর ও আজ থেকে আমার সাথেই থাকবে।
মামা: কিন্তু বাবা বিয়ে ছাড়া ও তোমার সাথে থাকবে বিষয়টা সমাজের কাছে খুব খারাপ।
নিহান: চিন্তা করবেন না।আমি ওকে বিয়ে করেই আমার কাছে রাখবো।

এতক্ষণ আমি নির্বাক দর্শকের মতো কথা গুলো শুনে যাচ্ছিলাম।আচমকা উনি এসে আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন।এইবার আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।ওনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি আর কান্না করতে করতে মামাকে বলছি

– মামা আমাকে বাঁচাও।আমি এই লোকটার সাথে যাবো না।প্লিজ মামা তুমি কিছু করো।

মামা চুপ করে দাড়িয়ে রইলেন।ওনার ক্ষমতার জন্য মামা কিছুই বলতে পারলেন না।

উনি আমাকে ওনার বাসায় এসে সোফার উপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলতে লাগলেন

– সেদিন সবার সামনে আমায় থাপ্পড় মেরে ছিলি তাইনা।আজ থেকে তুই আমার কাছেই থাকবি আর এটাই হলো তোর শাস্তি।নে এই পেপার টাতে সাইন কর ( পেপারটা আমার দিকে দিয়ে)
– কিসের পেপার এটা? আর আপনি আমাকে এভাবে জোর করে আপনার কাছে রাখতে পারেন না।
– চুপ একদম চুপ।আমি সব পারি বুঝলি।এখন কথা না বাড়িয়ে পেপার টাতে সাইন কর।
– না আমি সাইন করবো না।( কান্না করতে করতে)
– তুই চাস তোর মামা মামীকে পথে বসতে।
– মানে!
– তুই যদি সাইন না করিস তাহলে আমি তোর মামার ইনকামের সব পথ বন্ধ করে দিবো। After all নিহান চৌধুরী সব করতে পারে।
– না আপনি এমন করবেন না প্লিজ।
– তাহলে সাইন কর।
– কিন্তু এটা কিসের পেপার?
– সেটা তোর না জানলেও চলবে।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে সাইন করে দিলাম।উনি যা বলে তাই করে ফেলে।আমি চাইনা আমার জন্য আমার মামা সহ তার পরিবারের কোনো ক্ষতি হোক।
সেদিনের পর থেকে আমি অনিচ্ছা সর্তেও তার কাছে তার বন্ধিনি হয়ে গেলাম।এর মধ্যে অনেকবারই পালানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু বারবারই ধরা পড়ে যাই আর তার দেওয়া শাস্তি ভোগ করতে হয়।

বর্তমান,,,,
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে এলো বুঝতেই পারলাম না।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here