#নিস্বার্থ ভালোবাসা
#পর্ব:১৭
#লেখিকা:তাসনিম জাহান রিয়া
রাইহান ডক্টরকে ফোন দেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই ডক্টর চলে আসে। ডক্টর এসে শুভ্রতাকে চেকআপ করে মুখটা গম্ভীর করে ফেলে।
রিদ: ডক্টর আংকেল আমার শুভ্রতার কী হয়েছে?
রাইহান: আনোয়ার তুই চুপ করে আছিস কেনো?
ডক্টর: শুভ্রতা সারাদিন ধরে না খেয়ে থাকার ফলে অঙ্গান হয়ে গেছে আর
রিদ: আর কী ডক্টর আংকেল?
ডক্টর: শুভ্রতা প্যাগনেন্ট। এই অবস্থায় না খেয়ে থাকা ঠিক নয়। এই সময় বেশি বেশি খেতে হয়।
রিদ: এটা কী করে সম্ভব? ডক্টর তো বলেছিল শুভ্রতা কোনো দিন মা হতে পারে না।
ডক্টর: আমি ২২ বছর ধরে এই পেশায় আছি। কোনোদিন এই ভুল হয়নি আজকে হবে।
রিদ: কিন্তু আংকেল।
ডক্টর: রিদ তুমি আমাকে ঐ রিপোর্টটা দেখাতে পারবে?
রিদ: অবশ্যই।
রিদ শুভ্রতার রিপোর্টটা ডক্টরের কাছে দেয়। ডক্টর কতক্ষণ ওল্টে পাল্টে দেখে।
ডক্টর: এটা তো ফেইক রিপোর্ট। আমার হসপিটালে এসব ২ নাম্বারি কাজ চলে অথচ আমি জানি না। রিদ শুভ্রতাকে কোন ডক্টর দেখিয়েছিলে?
রিদ: আমি জানি না এটা শুভ্রতা জানে।
ডক্টর: শুভ্রতার কিছুক্ষণের মাঝেই ঙ্গান ফিরে আসবে। তখন শুভ্রতার কাছ থেকে জেনে আমাকে বলে দিও।
রিদ: ওকে।
ডক্টর: তাহলে আজকে আমি আসি।
রাইহান: হুম চল।
কিছুক্ষণ পরে শুভ্রতার ঙ্গান ফিরে। সবাই শুভ্রতার সাথে কথা বলে আস্তে আস্তে রিদের রুম ত্যাগ করে। রিদ একটু আগে রুম থেকে বের হয়েছিল। এখনো আসেনি।
শুভ্রতা: আমি তো ছাদে ছিলাম তাহলে এখানে আসলাম কী করে? রিদ নিয়ে এসেছে। তাহলে রিদ কোথায়? রিদ কী আমার সাথে একটি বারের জন্যও কথা বলবে না। রিদের সাথে আমার কথা বলতেই হবে।
শুভ্রতা বেড থেকে নামতে যাবে তখনি রিদ খাবারের ট্রে নিয়ে রুমে ঢুকে। শুভ্রতাকে বেড থেকে নামতে দেখে রিদের মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে।
রিদ: বেড থেকে এক পা নামলে। পা কেটে বেডে বসিয়ে রাখবো।
শুভ্রতা: কিন্তু……
রিদ: নো মোর ওয়ার্ড।
শুভ্রতা চুপচাপ লক্ষী মেয়ের মতো বেডের ওপর পা গুটিয়ে বসে পড়ে। রিদ শুভ্রতার সামনে বসে ট্রে থেকে একটা প্লেট হাতে নেয়। ভাত মেখে এক লোকমা শুভ্রতার মুখের সামনে ধরে।
শুভ্রতা: রিদ আমার কথাটা শুনো।
রিদ: কী শুনবো? আমাকে ডিবোর্স দিতে চাও এটায়। আচ্ছা একটা কথা বলো তো এই প্রবলেম যদি আমার থাকতো তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলতে।
শুভ্রতা: নিশ্চুপ।
রিদ: কী হলো কথা বলছো না কেনো? আমার প্রশ্নের উত্তর দেও।
শুভ্রতা রিদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
শুভ্রতা: আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমি আর কোনো দিন তোমাকে ডিবোর্স দেওয়ার কথা বলবো না। তুমি ডিবোর্স দিতে চায়লেও আমি ডিবোর্স দিবো না। মৃত্যু ব্যতিত তোমাকে ছেড়ে যাবো না।
শুভ্রতা নাক টেনে টেনে কাঁদছে। শুভ্রতা রিদের শার্টে নিজের নাক মুচে দেয়। ( শুভ্রতা যখনি কান্না করে তখনি রিদের শার্ট বা টি-শার্টে নাক মুচে।) রিদ মুচকি হাসে।
রিদ: নাও হা করো।
শুভ্রতাও চুপচাপ খেতে থাকে।
শুভ্রতা: আর ভাত খাবো না।
রিদ: নাও এই ফলগুলো খাও।
শুভ্রতা কয়েক টুকরো ফল খেয়ে না করে আর খাবে না।
রিদ: এই দুধের গ্লাসটা ফাঁকা করো।
শুভ্রতা: না আমি দুধ খাবো না। দুধ আমার খেতে ভালো লাগে না। আর আজকে দুধ দেখে আমার বমি আসছে।
রিদ: দুধ তো তোমাকে খেতেই হবে।
রিদ কিছু না বলে দুধটা নিজে খেতে শুরু করে।
শুভ্রতা: এই তো গুড বয়। সবটা শেষ করো।
রিদ আচমকা শুভ্রতার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিয়ে শুভ্রতাকে নিজের সাথে চেপে ধরে তারপর নিজের মুখের দুধটুকু শুভ্রতার মুখে চালান করে দেয়। শুভ্রতা এমন কান্ডের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। দুধটুকু খাওয়ার আগ পর্যন্ত রিদ শুভ্রতাকে একটুও নড়তে দেয়নি। শুভ্রতার দুধ খাওয়া শেষ হলে রিদ শুভ্রতাকে ছাড়ে। শুভ্রতা রেগে ফায়ার।
শুভ্রতা: এটা কী করলে তুমি?
রিদ: কী করলাম? ( ইনোসেন্ট ফেইস করে)
শুভ্রতা: তুমি আমাকে দুধ খাওয়ালে কেনো?
রিদ: তোমার কী বমি পাচ্ছে?
শুভ্রতা: না।
ফুল: ভাবি, ভাবি, ভাবি।
ফুল চিৎকার করে শুভ্রতাকে ডাকতে ডাকতে রিদের রুমে প্রবেশ করে।
রিদ: এভাবে ষাড়ের মতো চিৎকার করছিস কেনো?
ফুল: আমি ষাড় না। তুই ষাড় তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী ষাড়।
রিদ: আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর মাঝে তুইও পরিস।
ফুল: যা ভাগ তোর সাথে কোনো কথা নাই। কংগ্রেস ভাবি।
শুভ্রতা: কেনো?
ফুল: এমা তুমি জানো না। ভাইয়া তুই ভাবিকে এখনো বলিস নি।
শুভ্রতা: রিদ কী বলবো?
রিদ ফুলকে চোখের ইশারায় কিছু বলতে না করে।
ফুল: ভাবি আমি অনেক টায়ার্ড আমি আসছি তুমি রেস্ট নাও।
ফুল শুভ্রতাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে দ্রুত পায়ে রুম ত্যাগ করে। ফুল চলে যেতেই রিদ গিয়ে রুমের দরজা লক করে শুভ্রতার পাশে বসে। শুভ্রতার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।
রিদ: শুভ্রতা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
#নিস্বার্থ ভালোবাসা
#পর্ব:১৮
#লেখিকা:তাসনিম জাহান রিয়া
ফুল শুভ্রতাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে দ্রুত পায়ে রুম ত্যাগ করে। ফুল চলে যেতেই রিদ গিয়ে রুমের দরজা লক করে শুভ্রতার পাশে বসে। শুভ্রতার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।
রিদ: শুভ্রতা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
শুভ্রতা: হুম বলো।
রিদ: তুমি যদি এখন জানতে পারো তুমি মা হতে চলছো তাহলে তুমি কী করবে?
শুভ্রতা: প্লিজ রিদ মিথ্যা স্বপ্ন দেখিও না। তুমিও জানো আর আমিও জানি এটা কখনো পসিবল না।
রিদ: যদি বলি এটা পসিবল।
শুভ্রতা: প্লিজ রিদ এই টপিকটা বাদ দেও।
রিদ: কেনো বাদ দিবো? এই টপিকটা নিয়েই তো আমাদের মাঝে বেশি কথা হবে।
শুভ্রতা: কেনো?
রিদ: কারণ তুমি সত্যিই মা হতে চলেছে।
শুভ্রতা: ফাইজলামো করো না রিদ।
রিদ: আমি সত্যি বলছি শুভ্রতা।
শুভ্রতা: কিন্তু এটা কী করে সম্ভব? তাহলে কী ঐ রিপোর্ট ভুল ছিল?
রিদ: না ।
শুভ্রতা: তাহলে …..
রিদ: ঐ রিপোর্টটা ফেইক ছিল।
শুভ্রতা রিদকে জড়িয়ে ধরে হো হো হো করে কেঁদে দেয়
শুভ্রতা: রিদ এটা সত্যি। আমার সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে।
রিদ: এটা কোনো স্বপ্ন না এটা সত্যি। আমাদের একটা ছোট প্রিন্সেস আসতে চলেছে। আচ্ছা এই রিপোর্টটা তোমাকে কোনো ডক্টরে দিয়েছিল।
শুভ্রতা: ডক্টর আয়না। কিন্তু উনি আমাকে ফেইক রিপোর্ট কেনো দিবে?
রিদ: সেটাই তো ভাবনার বিষয়। তুমি একটু বসো আমি আসছি।
শুভ্রতা: কোথায় যাবে।
রিদ: ডক্টর আংকেলকে ফোন করে ডক্টরের নামটা বলে আসি। তুমি শুয়
শুভ্রতা: আচ্ছা।
শুভ্রতা বাধ্য মেয়ের মতো বিছানার একসাইডে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পড়ে রিদ ফোনে কথা বলা শেষ করে রুমে আসে। রুমের লাইট অফ করে শুভ্রতাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। শুভ্রতা রিদের বুকে মাথা রাখে। রিদ শুভ্রতার মাথায় বিলি কেটে দিতে থাকে।
রিদ: জানো শুভ্রতা আজকে আমি অনেক খুশি আমাদের একটা ছোট প্রিন্সেস আসবে।
শুভ্রতা: হুম।
রিদ: আদো আদো গলায় আমাকে বাবা বলে ডাকবে।
শুভ্রতা: হুম।
রিদ: ছোট ছোট হাত দিয়ে আমার আঙুল ধরে হাঁটবে।
শুভ্রতা: হুম।
রিদ: সারা বাড়ি হেসে খেলে বেড়াবে।
শুভ্রতা: হুম।
রিদ: কী তখন থেকে হুম হুম করে যাচ্ছো?
শুভ্রতা: না কিছু না। একটা কথা ভাবছিলাম।
রিদ: কী কথা?
শুভ্রতা: আমাদের একটা প্রিন্সেস হলে তো তুমি আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসবে না।
রিদ: হুম তা ঠিক।
শুভ্রতা: যাও তোমার সাথে কোনো কথা নাই।
রিদ: আরে বোকা মেয়ে আমি তো মজা করছিলাম।
শুভ্রতা: রিদ একটা গান শুনাবে।
রিদ: না এখন নাহ। এখন তুমি ঘুমিয়ে পড়ো নাহলে শরীর খারাপ করবে।
শুভ্রতা: প্লিজ প্লিজ একটা গান শুনাও। তোমার গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যাবো।
রিদ: আচ্ছা।
রিদ শুভ্রতাকে নিজের বুকের সাথে একেবারে মিশিয়ে নিলো। শুভ্রতার মাথায় বিলি কাটতে কাটতে গাইতে শুরু করলো,
ভালোবেসে এইবার আয় কাছে তুই
সব ভুলে একবার আয় তোকে ছুঁই
ভালোবেসে দুজনে ডুবেছি অতল
আয় তবে এইবার ভালোবাসি চল
কে আছে বল…..
তোরি মতো এমন…
কে বুঝে বল
বুঝে আমার এই মন..
ভালোবেসে এইবার আয় কাছে তুই
সব ভুলে একবার আয় তোকে ছুঁই
ভালোবেসে দুজনে ডুবেছি অতল
আয় তবে এইবার ভালোবাসি চল
কে আছে বল…..
তোরি মতো এমন…
কে বুঝে বল
বুঝে আমার এই মন..(২বার)
রিদ ঘুমন্ত শুভ্রতার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। শুভ্রতাকে আরেকটু টাইট করে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায়।
✴✴
রাত: উপ মেয়েটাও না। এতো তাড়াতাড়ি কেউ ঘুমিয়ে পড়ে।
ফুল রাতের হাতে ধরে টান দিয়ে বেডে ফেলে দেয়। সবকিছু এতো দ্রুত ঘটলো যে রাত কিছুই বুঝতে পারলো না।
রাত: তুমি এতক্ষণ ধরে জেগে ছিলে।
ফুল: জ্বী।
রাত: তাহলে ঘুমের অভিনয় করলে কেনো?
ফুল: আমার ইচ্ছা।
ফুল: একদম আমার ঘাড়ে কামড় দিবা না।
রাত: কেনো তোমার কথা শুনবো? এখন যা হবে তা আমার ইচ্ছা। তোমার ঘাড়ে ৫ টা কামড় দিব। কারণ তুমি আমাকে ৫ মিনিট ওয়েট করিয়েছো।
———————————————————
রিদ: শুভ্রতা প্লিজ বাচ্চাদের মতো জেদ করো না। প্লিজ খাবারটা খেয়ে নাও।
শুভ্রতা: আমি এসব পঁচা খাবার খাবো না। আমি ফুচকা খাবো।
রিদ: দেখো শুভি এসময় এমন অসস্থাকর খাবার খাওয়া ঠিক না। এগুলো খেয়ে নাও প্লিজ। (আদুরে গলায়)
শুভ্রতা: না খাবো না।
রিদ: তুমি যদি এখন এই এক প্লেট ফ্রুটস কমপ্লিট করতে পারো। তাহলে তোমাকে আজকে আমি আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যাব।
শুভ্রতা: সত্যি।
রিদ: হুম।
শুভ্রতা: প্রমিস।
রিদ: হুম প্রমিস।
রিদের ফোন বেঁজে ওঠে। রিদ ফোনটা হাতে নেয়।
শুভ্রতা: কে ফোন করছে?
রিদ: ডক্টর আংকেল।
রিদ ফোনটা রিসিভ করে। একটু পরে ফোনটা ঠাস করে কেটে দেয়। রিদের চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে যায়। চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি ঝরছে। মনে হচ্ছে এই আগুনে যে কাউকে জ্বালিয়ে দিবে। প্রচন্ড রাগের ফলে মুখের রং অগ্নি বর্ণ ধারণ করেছে। যা দেখে শুভ্রতাও ভয় পেয়ে যায়।
চলবে…….
চলবে…….