#নীলাম্বরীর_প্রেমে
#Tuhina pakira
পর্ব : ৮
পাক্কা দশ মিনিট হয়ে গেলেও স্পর্শ কিচ্ছুটি বলে নি। আয়ুর দিকে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে রয়েছে। যেনো সে সবার ভাবনায় ভাবিত কেউ। এদিকে আয়ু দেওয়ালে হেলান দিয়ে ঘন ঘন হাই তুলছে। বেচারির প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে। মাঝে মাঝে ঢুলে পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিচ্ছে। আয়ু পরপর তিন বার হাই তুলে বললো,
-” স্পর্শ দা তুমি আদৌ কী কিছু বলবে না আমি চলে যাবো? আমার কিন্তু এবার ভীষন ঘুম পেয়েছে। ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি অনেকক্ষণ ধরে আমাকে ডাকছে। শুধু তোমার জন্য যেতে পারছি না।
আয়ুর প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে স্পর্শ কিছুই বললো না। গোলগোল চোখে আয়ুর দিকে তাকিয়ে রইল। দুজনেরই বারান্দার লাইট বন্ধ কিন্তু রাস্তার পোস্টের নিয়ন আলোয় ও আয়ুকে আলো আঁধারির মাঝে ঠিকই দেখতে পাচ্ছে। বরং মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। আরও পাঁচ মিনিটের মাথায় স্পর্শ বললো ,
-” তুই ঠিক মতো পড়াশোনা করছিস তো ? ”
আয়ু স্পর্শের দিকে তাকিয়ে থেকে দেওয়ালে হালকা করে মাথা ঠুকে বললো ,
-” এই কথাটা বলার জন্যে তুমি আমাকে এখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছো।”
-” যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দে। পড়াশোনা কেমন হচ্ছে?”
আয়ু মুখে হাত দিয়ে হাই তুলে বললো ,
– ” ভালোই। ”
-” ভালো করলেই ভালো। দেখে শুনে রাস্তায় চলবি। যা দিনকাল পড়েছে বাপরে। সারাদিন লাফালাফি একটু কমা। তুই প্রচুর হুড়োহুড়ি করিস। তারমধ্যে তুই বাইরের আবোল তাবোল খাওয়া দাওয়া করিস। আমি যেনো না শুনি এগুলো করতে।”
-” তুমি কি কোথাও যাচ্ছো?”
-” তোর হঠাৎ এটা মনে হলো কেনো?”
-” না মানে তুমি তো কোথাও গেলে এই ডায়লগ গুলো দাও। তাই মনে হলো। ”
স্পর্শ কথা ঘুরিয়ে বললো ,
-” কোন কলেজে পরার ইচ্ছে তোর?”
আয়ু হেসে বলল ,
-” মানুষের ঘুমানোর সময়ে কী আবোল তাবোল প্রশ্ন করছো বলোতো। আমার কলেজে ভর্তি হতে এখনও 2 বছর বাকি। তবে ইচ্ছা আছে পাপার কলেজে মানে তুমি যেই কলেজ থেকে এবারে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করলে সেই কলেজ। ”
-” বাবা এত পছন্দ।”
-” বলতে পারো। বলছি স্পর্শ দা তুমি কি ব্যাঙ্গালোর যাবেই?”
-” কেরিয়ারের জন্যে তো যেতেই হবে। কিছুই করার নেই।”
আয়ুর মনটা খানিক খারাপ হয়ে গেলো।
-” যখন যাবে তার এক সপ্তাহ আগে আমাকে বলবে আমরা একসঙ্গে অনেক মজা করে নেবো। ”
– ” আমি তোকে বলবোনা কি করবি? ”
আয়ু প্রথমে রেগে কিছু বলতে গিয়েও থেমে বললো ,
-” তোমাকে বলতে হবে না যাও। আমি মিমির থেকে জেনে নেবো। ”
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ করে রইলো। স্পর্শ অনেক কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না। ঠোঁটের আগায় কথা গুলো এসে ভিড় করলেও তা শব্দ বাইরে আসছে না। আয়ু নীরবতা ভেঙে বললো,
– ” আর কিছু বলবে?”
স্পর্শ নিজের মনে বিড়বিড় করে বললো ,
– ” বলতে তো চাই কিন্তু তুই বুঝবিনা। আমার নীরবতার কথাও তুই বুঝবি না। আসলে তুই তো অবুঝ। ”
-” কেনো ঘুমে কি আর থাকতে পারছিস না?”
আয়ু ঘাড় নেড়ে বললো,
-” না ।”
-” ঘরে যাবি?”
-” হ্যাঁ।”
-” তবে যা। গুড নাইট , সুইট ড্রিম।
আয়ু আস্তে আস্তে ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ভীষন ঘুম পেয়েছে ওর । এবার ও ঘুমের দেশে হারিয়ে যাবে।
অপরদিকে স্পর্শ ঘরে গিয়ে বিছানার উপুড় হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো , নীল বসনা কোনো এক নীলিমা। এটাই যে স্পর্শের নীলাম্বরী। স্পর্শের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
♣
বিছানায় এইদিক ওইদিক করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে আয়ুর মা। কিন্তু ঘুম আসছে না। পাশেই আয়ুর বাবা ঘুমিয়ে রয়েছে। হঠাৎ করেই আয়ুর মা উঠে বসলো। কী মনে করে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠে মাঝের হলটার একদিকে আয়ানের ঘর আর পাশের ঘরটা ফাঁকাই থাকে। আয়ানের ঘরের সামনের ঘরটা আয়ুর আর তার পাশে থাকে দ্রুতি।
তিনি প্রথমে আয়ানের ঘরে গেলেন। কিছু একটার সঙ্গে পা জড়িয়ে পড়তে গিয়েও বেঁচে গেলো । আয়ানের ঘুম খুব গাঢ় আলো জ্বালালে যে সে উঠবে না তা তিনি জানেন। আলো জ্বালাতেই তার মাথায় হাত। এই ছেলে আবার ঘর নোংরা করে রেখেছে। স্পর্শদের বাড়ি থেকে ফিরে এসে গায়ের জামাটা মেঝেতে ফেলে রেখেছে। একদিকে নিজের রিমোট কন্ট্রোল গাড়িটার সব পার্ট খুলে আর তা মেরামত করতে না পারার দরুন তার স্থান হয়েছে মেঝের এক কোণায়। পড়ার টেবিলের বই গুলো অগোছালো হয়ে রয়েছে। তিনি আয়ানের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর মাথার পাশে বসে তিনি হাত বুলিয়ে বলল ,” দুষ্টু। ”
দ্রুতি ঘরের আলো জ্বালিয়ে ঘুমোচ্ছে। আয়ুর মা দ্রুতির গায়ে ভালো করে চাদরটা দিয়ে মাথায় একটা চুমু খেল।
আয়ুর ঘরে ঢোকার আগেই দেখলো জয় ওর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
-” তুমি কখন এলে?”
জয় হাসি দিয়ে আয়ুর ঘরের দরজা টা খুলে দিয়ে ইশারায় ভিতরে যেতে বলল।
♣
-” সারাদিন ছেলে মেয়েগুলো কে বকে তুমি রাতের বেলা আসো ভালোবাসতে তাইনা। ”
আয়ুর বাবার কথা শুনে আয়ুর মা নালিশ করতে আরম্ভ করলো ।
-” সাধে বকি নাকি। তোমার ছেলে এটা নয় ওটা ভাঙছে । ভেঙে আবার ঠিক করবে কেনো না সে ইঞ্জিনিয়ার হবে। কথা যা আমার একটু শোনে দ্রুতি। আর তোমার মেয়ে , সারাদিন তার দুষ্টুমি। কখনও ওকে শান্ত হয়ে বসতে দেখেছো। ওর বয়সে আমি ছিলাম শান্ত। ওকে কেউ বলবে ও আমার মেয়ে।”
আয়ুর বাবা হাহা করে হেসে উঠলো।
-” আমার মেয়ে তো ঠিকই আছে। তবে তুমি শান্ত কোথায় ছিলে? ”
-” কেনো আমাকে কোথায় তোমার দুরন্ত মনে হয়েছিল?”
-” মনে নেই শিশিরের বিয়েতে কী করেছিলে? ”
আয়ুর মা নীচে নামতে নামতে বললো,
-” বেশ করেছিলাম। অচেনা একটা মেয়েকে তুমি গিয়ে যদি বিয়ের কথা কথা বলো সে কি তোমার তালে তাল মিলিয়ে নাচবে। আর এমনিতেও আমার বাপু ভয় লেগেছিল। তাই তো বাবাকে গিয়ে তোমার কথা বলে দিয়েছিলাম। ”
-” আর তোমার কথা শুনে তোমার বাপ যে সারা বিয়ে বাড়িতে আমাকে খুঁজে ছিল সেটা মনে আছে। আমিতো ভয়ে বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম।”
আয়ুর মা হাসতে হাসতে বলল,
-” বেশ হয়েছিল।”
♣♣
সকাল 6,15 টা ।
আয়ু তখন নিজের ঘরে চুল বাঁধছিল। রূপা ওকে ডাকলেই ও বেরিয়ে পড়বে বাড়ি থেকে। কালকে দেরি করে ঘুমানোর জন্যে বেচারি হাই তুলে চলেছে।
কিছুক্ষণ পরে নীচ থেকে রূপার গলার আওয়াজ পেতেই আয়ু বারণ্ডায় চলে গেলো।
-” আয়ু তাড়াতাড়ি আয়।”
-” দাঁড়া 2 মিনিট। ”
কথাটা বলে সামনে চোখ যেতেই দেখলো হাই তুলতে তুলতে স্পর্শ বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। আয়ুর দিকে চোখ যেতেই বললো ,
-” পড়তে?”
-” হ্যাঁ।”
-” ভালো করে চোখে জল দিয়ে আয় আগে। নাহলে পড়তে গিয়ে পড়া কম ঘুম বেশি হবে। ”
কথাটা যে স্পর্শ ওকে রাগানোর জন্যে বলেছে তা আয়ু জানে। কিন্তু এই মুহূর্তে ওর সঙ্গে গল্প করার মতো সময় ওর কাছে নেই। তাই কিছু না বলে মুখ বেঁকিয়ে চলে যাচ্ছিল। তখনই পিছন থেকে স্পর্শ বললো ,
-” গুড মর্নিং আয়ু বুড়ি। ”
-” গুড মর্নিং স্পর্শ বুড়ো। টাটা , বাই।
-” ওই তুই আমাকে বুড়ো বলিস কোন সাহসে? ”
স্পর্শের প্রশ্নে আয়ু কোনো উত্তর না দিয়ে চলে গেলো। তাড়াতাড়ি পড়তে যেতে হবে ওকে।
(চলবে )
{ বিঃ : ত্রুটি ক্ষমা করবেন । ভালো কিংবা খারাপ কেমন হয়েছে জানাবেন । হ্যাপি রিডিং }