#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২০
‘ড্যাড আরভীক বিয়ে করে ফেলেছে তাও আবার তার পিএকে। কবে,কেমনে,কখন করেছে!’
শ্রেয়ার রাগান্বিত প্রশ্নের জবাবে নিরব রইল জাফর সাহেব। তিনি রাতেই টিভিতে নিউজ দেখে ছিল। সেখানে রিপোর্টার সায়াজ রিপোর্টিং হিসেবে পাওয়ারফুল নিউজ দিল যে, আরভীক ফাওয়াজ ইজ ম্যারেড নাউ। হার ওয়াইফ’স নেইম ইজ আনজুমা আবান।
সংক্ষিপ্ত পরিসরের খবরটি যে পুরু দেশে হৈচৈ মাতিয়ে দিয়েছে। কিছুসংখ্যক মেয়ে ঈর্ষায় ছারখার হচ্ছে, তবে শ্রেয়ার বিষয় ভিন্ন! সে না ঈর্ষায় জ্বলছে, না পুড়ছে। বরং তার কণ্ঠধার, চলন স্বাভাবিক, নিবিড়। যেন ঝড় আসার পূর্ব উৎকণ্ঠা প্রকাশ মাত্র। জাফর সাহেব গাড়ি পার্ক করে মেয়েকে নিয়ে নেমে পড়ছিল ফাওয়াজ ম্যানশনে প্রবেশের উদ্দেশ্য। অথচ সিড়ির নিকট এসে থমকে যায় শ্রেয়ার কদম। জাফর সাহেব ঢোক গিলল। তিনি স্বচক্ষে দেখছে বাড়ির সাজসজ্জা কোনো বিয়ের বাড়ি থেকে কম লাগছে না। তাজ্জব ব্যাপার পুরু একদিনে ম্যানশনটা রঞ্জিত হয়েছে ঝলমলে। লিয়াকত সাহেব সবেই আসল। তাদের মত সেও নির্বোধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
আরভীক করিডোর দিয়ে অতীব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে তার অতিথিদের জন্য। ইতিমধ্যে অঞ্জয় কল দেয়। সে ব্লুটুথ বাটন প্রেস করে।
‘স্যার তারা চলে এসেছে!’
‘তাদের অপেক্ষায় তো আমি কাহিল ছিলাম। নিয়ে আসো।’
ব্লুটুথ বাটন প্রেস করে অফ করে দেয়। লিয়াকত সাহেব তার বাহু দিয়ে খোঁচা দেয় জাফর সাহেবের কোমরে। তিনি ইতস্তত নয়নে ইশারায় ‘কি’ বোঝায়। লিয়াকত সাহেব তার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
‘ঐ বেডা কি সত্যি বিয়া কইরা নিছে!’
‘কেমন আছেন হবু না হওয়া শ্বশুর,আঙ্কেল ও অভাগী বউ!’
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে শ্রেয়া। আরভীক এর কলার চেপে টেনে হিঁচড়ে চেঁচানি দিয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘হাউ ডেয়ার ইউ! তুমি আমাকে ছেড়ে ঐ দু’টাকার ফকিন্নির বাচ্চাকে বিয়ে করলে। কি নেই আমার এসির মেয়ে আমি। টাকার জমিনে সাতার কাটতে পারব। তুমি সেই আমাকে রিজেক্ট করে ঐ ফকিন্নিকে আগলে নিলে। কেন ঐ কি বেশি সে** সুখ দেয় তোমায়!’
জাফর সাহেব ও লিয়াকত সাহেব মেয়ের মুখের কথায় ভর্য়াত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। মেয়ে তাদের ভুল মানুষের সামনে রাগের প্রলয় দেখিয়েছে। সেই সঙ্গে শ্লীলতাহীন বাক্য দ্বারা তারই পরম স্ত্রীর নামে বলায় আশঙ্কায় ভীতিগ্রস্থ হয়ে আছে তারা। শান্তশিষ্ঠ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলেও আরভীক এর মনমেজাজে অগ্নিকুণ্ড ফুটছে। ঠোঁট কামড়ে এপারওপার চেয়ে দেখে। কেউ নেই শুধু অঞ্জয় বিহীন! মাথার চুলগুলো শুদ্ধ,শক্তপোক্তভাবে টেনে সপাটে এক চ’ড় লাগায় শ্রেয়ার গালে। তবুও সে থামেনি। চ’ড়ের ধাক্কায় শ্রেয়া পড়তে গিয়েও পড়েনি। কেননা আরভীক বেশ জোরালোভাবে তার বাহু চেপে ধরে রেখেছে। চ’ড়ের দাগ একগালে স্পষ্ট হতেই আরেক গালে তীব্র শক্তি সঞ্চয় করে পুনরায় লাগায়। জাফর সাহেব তিক্ত হয়ে আরভীককে থামায়। সেও বিনা সংকোচ,জড়তাহীন সরে গেল। লিয়াকত সাহেব চোরা চোখে জাফর সাহেবের মেয়ের দিকে তাকায়। দু’গালে সেজে আসার যে চিহ্ন,সৌন্দয্যের গোলাপী রঙ মেখে ছিল তা মুছে গিয়ে পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট ভেসে উঠেছে, ওষ্ঠের কোণা ও নাক থেকে মাত্রাতিরিক্ত র’ক্ত বইয়ে পড়ছে। মা’ই’র সাধ্যের বেশি খেয়ে ফেলায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে শ্রেয়া। জাফর সাহেব মেয়ের হুঁশ নেই দেখে লিয়াকত কে ডাকে।
তারা মিলে মেয়েকে উঠিয়ে গাড়িতে বসায়। তবে জাফর সাহেব গাড়ির ইঞ্জিন চালু করার পূর্বে আরভীক এর মুখোমুখি এসে শাঁসায়।
‘তোকে আমি দেখে নেবো আরভীক ফাওয়াজ! আমাকে তুই চিনিসনি এখনো।’
‘ব্যস ব্যস তোকে না চিনলে তো আর কাউরেও চিনা লাগবে না আমার। তুই যে কে, কি কাজ করিস, চার বছর আগে মাউন্টেন ব্রিজে কার খুন করছিলি সব তথ্য তোর ব্যাকসাইড থেকে বের করে রাখছি হেহেহে। এবার তুই গিয়ে কমোডে বসে ব্যাকসাইড থেকে যত মূত্র আসে বের কর গিয়ে। মরার পর মূত্র বের করার সুযোগ পাবি না।’
অপমান,তিরস্কারে দমে গেল জাফর সাহেব। মেয়েকে বাঁচানোর সময় কম। না হলে সে এ ছেলের মুখ তালাবদ্ধ করে দিতো। বাক্যহীন মুখ নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
তবুও নজর যেন তিক্ষ্ণ করে আরভীককে দেখছে। সেও হাত নাড়িয়ে বিদায় জানানোর বাহানা করে উচ্চস্বরে বলে,
‘বাই বাই বা’স্টা’র্ড!’
অঞ্জয় চোখ পিটপিটিয়ে দেখছে। কি কথোপকথন হলো! তার মাথার উপর দিয়ে গেল। চারবছর আগে মাউন্টেন ব্রিজের কথা কেনো তার বস বলল বুঝতে পারছে না সে! আমতা ভাব নিয়ে সে বসের সামনে দাঁড়ায়। বিব্রতপূর্ণ দৃষ্টি নুয়ে বলে,
‘স্যার চারবছর আগে কি হয়েছিল ! আপনি কার খুনের কথা বলছেন।’
তার প্রশ্নে অনড় আরভীক জাগ্রত অবস্থায় চোখের পলকে চারবছর পূর্বে ঘুরে এলো। সেই খুনের দৃশ্যপট,কোমায় যাওয়া,ক্ষতপূর্ণ শরীরে বাঁচার অসম্ভাবনা! চোখের পলক ফেলে পাপড়ি ঝাপ্টায়। ফলে সে না জানার ভান করে বলে,
‘কোন চারবছর! তুই কি চারবছর আগে জম্মালি। তুই কচি খোকা, কচি খোকা হয়ে থাকবি। তুই কেন আগ্রাবাগ্রা প্রশ্ন করে মাথার গিলু খাবি।’
থতমত খেয়ে যায় অঞ্জয়। মাথা ডানেবামে নুয়ে ‘সরি’ বলে। আরভীক শুনে ম্যানশনের ভেতর হাঁটা ধরে অঞ্জয়ও পিছু নেই। মুচকি হেসে আরভীক একঝলক বেলকনির দিকে তাকায়। সঙ্গেই এক অবয়ব উধাও হয়ে যায়। বাঁকা হেসে অতিথিগণের চোখ ফাঁকি দিয়ে সে তার বেডরুমে এলো। দরজা খোলা ছিল বিধেয় সে স্বল্প ভিড়িয়ে চোরা দৃষ্টিতে উঁকি দেয়। আনজুমাকে গোলাপি রঙের জরজেট শাড়িতে বেশ রুপদেবী লাগছে, চোখের কাজলটানা হরিণের নয়নডগা,নরম তুলতুলে গালে মাখামাখি গোলাপী রঙের শ্যাডো! ইশ! খেয়ে ফেলতে মন চাইছে তার। টেস্ট করেই দেখি!
দুষ্টু হেসে কুবুদ্ধি নিয়ে রুমের মধ্যে অনড় রুপে প্রবেশ করে দরজা আঁটকে দেয় আরভীক। আশফি তার দাদুর কাছে আছে। জামাই-বউ পেয়েছে তাদের দুষ্টু মিষ্টি কাহিনী রচানোর সময়। ভেবেই আরভীক এর মনে খুঁতখুঁতুনি শুরু হয়ে গেছে। আনজুমা বেলকনির মধ্যে পায়চারী করে চলেছে। সে সুস্পষ্ট কানে শুনেছে, আরভীক চারবছর আগে মাউন্টেন ব্রিজে খুন হওয়ার কথা বলছে! এর অর্থ কি! সে কি জানে কোন কথা ঐ এসির সামনে টেনেছে। নতুবা ঐ এসিও বা কেনো এত ঘাবড়াল। আনজুমার মনে হিসেব মিলিয়েও কুল পাচ্ছে না। কখনো মনে হচ্ছে আরভীকই সুয়াইব! আবার মস্তিষ্ক বলছে, আরভীক এর মত রহস্যঘেরা মানুষের ফাঁদে না পড়তে।
কার কথা শুনবে সে! মন নাকি মস্তিষ্ক। দোটানায় পড়ল সে। আল্লাহর কাছে জবাব থাকবে ফলে সময় বিলম্ব না করে নামাজরত হওয়ার পণ নেই। যেই না পিছু যাবে সেই সময়ে তার কোমর টেনে দেওয়ালের সঙ্গে চেপে তার গলায় মুখ গুজে দেয় আরভীক। আকস্মিক কার্যে সম্পূর্ণ ভীতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে আনজুমা। কি হলো, সে অনুভূতির কাছে পুনরায় বন্দি হয়ে গেল নাকি! আরভীক আনজুমার গলা থেকে সুঘ্রাণ শুকে নিচ্ছে! সদ্য গোসল সেরে আসা রমণী তার। গরম,আগুনে জ্বলছে যাওয়া তপ্ত শ্বাস নিচ্ছে তার গলায় মুখ গুজে। লেপ্টে আছে দুজনে, শরীরের মাঝে এক ইঞ্চি ফাঁক নেই। দূরত্ব আরভীক মানে না। বউ ছিল না তখন দূরত্ব বজায় রেখেছিল। বউ আছে তো দূরত্ব রাখার মত ছেলে সে নয়। মৃদু ওষ্ঠ চেপে দেয় বউয়ের গলায়। অনুরাগে মৃদু কেঁপে চলছে আনজুমা, ওষ্ঠদ্বয় বুজে ব্যর্থের ন্যায় শ্বাসকার্য সম্পূর্ণ করছে! কেননা আফিমের ন্যায় এ পুরুষের ধারপ্রান্তে এলে রক্ষে নেই তার। হাতজোড়া নড়চড়ে করে ছুটে পালানোর চেষ্টা করছে। আরভীক ছুটে যাওয়া মোটেও পছন্দ করে না। ফলে বউয়ের দুহাতের গোড়ালি আকঁড়ে উপর করে রাখে। বন্দের বন্দিনী হলো। চোখদ্বয় নিলীপিত করার জোঁ নেই আনজুমার। আরভীক থুতনী তুলে ঘোর দৃষ্টিতে তার পানে চাই। নজরে চৌদ্দ বছরের কিশোরীকে লক্ষ করছে। যার রুপ ফুটেছে যুবতীর ন্যায়! সে তার শ্রেষ্ঠ বউকেই বিয়ে করেছে! পরিণতি এটা হওয়ারই ছিল। আনজুমার বুজে থাকা পাপড়ির মধ্যে ওষ্ঠদ্বয়ের ছোঁয়া দিয়ে ফিসফিস করে বলে,
‘লজ্জায় গাল রাঙালে আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসব বউ! তুমি তো জানোই বিয়ের আগে তোমার জন্য কতশত পাগলামি করতাম। এখন তো….।’
ঠোঁট কামড়ে দুষ্টুমিপূর্ণ দৃষ্টিকোণে আনজুমার দিকে চেয়ে রইল। বেচারীর শরীর কেঁপে মরণ প্রান্তে যাওয়ার উপক্রম। তার ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁকা করে সেখানে লুকিয়ে যেতে। এ বদ’মায়েসী কথার আড়াল হতে পারলে যেন বাঁচে সে। মৃদু কণ্ঠে আওড়ায়।
‘আই নিড টাইম প্লিজ!’
‘কিসের টাইম! নিজের জামাইকে চিনে না গর্দভ বউ একখান। এখন যদি বলতাম আমিই সুয়া…।’
দাঁত চেপে মুখ বন্ধ করে নেই আরভীক। চট করে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকায় আনজুমা। তার লাজুক দৃষ্টি সরে প্রশ্নাতীত দৃষ্টি দেখে তৎক্ষণাৎ ভড়কে যাওয়া ভাব সরিয়ে নিল আরভীক। হাসার চেষ্টা করে বলে,
‘ইউ নিড টাইম ওকে ইউ হেভ মেনি টাইম। নাউ আই উইল ডু মাই জব।’
কথাটি হু’ম’কি ছিল নাকি উদ্দেশ্য হাসিলের তৃষ্ণা বুঝে পেল না আনজুমা। মুখ খুলে প্রশ্নের ভীড় জমানোর পূর্বেই ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে দেয় আরভীক। বৈধ ! পুনরায় সেই বৈধ স্পর্শের সমাগম হলো তাদের মাঝে। আনজুমার শ্বাস আঁটকে এলো। এতদিন যাও গালে ছোঁয়া পেতো! আজ সরাসরি ওষ্ঠে হওয়ায় আনজুমার নিয়ন্ত্রণ বেসামাল হয়ে পড়ছে। দোটানার মায়ায় সে নুয়ে যাচ্ছে। বারংবার মনের কথা শুনতে ইচ্ছে করছে তার। এই তার সুয়াইব, তার প্রাণরাজ। আরভীক এর মত শক্তপোক্ত শরীরের ব্যক্তিকে ঠেলে দূর করতে চাইছে। অথচ বিন্দুমাত্র স্থান হতে সরেনি বে’শরম ব্যক্তিটা।
সায়াজ,ফাহাদ জরুরি তলব করার সুবাদে গুরুগম্ভীর পায়ে কদম ফেলে আরভীক এর রুমে প্রবেশ করে। দরজা তালাবদ্ধ না হওয়ায় বিবেকহীন রুমে প্রবেশ করে। সামনে তাকিয়ে থ হয়ে যায়। লাজুকতায় মেয়েদের মত তাদের গাল রক্তিম হয়ে গেল। চোখজোড়া সরিয়ে নেয়। গলা ঝেড়ে তাদের অবস্থান জাহির করে। আনজুমা ফট করে চোখ খুলে দরজার দিকে দৃষ্টি ফেলে। দেবর দুজনকে দেখে জোরালোভাবে শক্তি প্রয়োগ করে ঠেলতে লাগল। আরভীক তার মিষ্টি খাওয়ার মধ্যে ঠেলাঠেলি পেয়ে বিরক্তিতে বউয়ের কোমর সটান করে টেনে লেপ্টে নিয়ে দেওয়ালে মিশে যায়। বেচারী আনজুমা শরমে ওষ্ঠ চেপে রাখা অবস্থায় আরভীককে শুধায়।
‘ফা ফাহাদ, সায়াজ ভাই আসছে।’
‘আসছে তবে চলেও যাবে।’
শরমহীন আরভীক চোখ বুজে মিষ্টি খেয়েই চলল। অমৃত সুধা পেয়ে ছাড়ার পাত্র নাকি সে! ফাহাদ,সায়াজ বুঝে নিল তাদের বন্ধুর মুড রোমান্সে আঁটকে আছে! অসময়ে কথা বললেও বন্ধুর মুখ থেকে গা-পিত্তি জ্বলনের বাক্য বের হবে। ফলে তারা স্বেচ্ছায় বেরিয়ে যায়। ফাহাদ সায়াজকে ধরে বলে,
‘ভালো করছি চলে আসছি। সে এলে এমন ভান ধরব যেন কিছুই দেখি নাই।’
‘ইয়েস ডুড। না হলে আমি সিঙ্গেল, তুই মিঙ্গেল হয়েও সিঙ্গেল থেকে চুমাচাটি না করার দুঃখে কাটাঁ গায়ে নুনের সিটে মারতে শুরু করবে।’
তাদের দুঃখ বোঝার কেউ নেই। ফাহাদের রাগ হচ্ছে সাইবার উপরে। মেয়েটা আগে ফাহাদ, ফাহাদ করে চুমাচাটি করার জন্য মরে যেতো। এখন যখন সে স্বেচ্ছায় চুমু দিতে আসে তখন ‘ধুর ধুর’ করে তাড়িয়ে দেয় মেয়েটা। বলে, চুমু খেলে নাকি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবে! আজগুবে কথা শুনে ক্ষোভে মাঝমধ্যে দু তিনবার চুমু সে খেয়ে নিয়েছে। ফলে তার অভিমানী হবু বউ রেগে পাঁচ-ছয়দিনের ব্রেকআপ করে ফেলে। এখন তো ব্রেকআপ শুনলেও মনে হয় কিসের ব্রেকআপ! মুখে নেয় অথচ করার সময় খালি পেজআপ আর পেজআপ মারে। ছেহ্ঃ কপাল পুড়ছে তার!
সায়াজ এর ধাক্কায় হুঁশ ফিরল ফাহাদের। দুজনে বউভাতের অনুষ্ঠানে আরাজ সাহেবের কাছে চলে যায়।
গতকাল বিয়ে হলেও আজ বিশাল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকলের মাঝে প্রচার করা হচ্ছে আরভীক এর বিয়ের কথা।
৩৯.
মেডিক্যালে রাগে,হিংস্রতায় ফোঁসছে এসি সাহেব অর্থাৎ জাফর সাহেব। তার মেয়েকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে। ডক্টরের মত আক্ষেপে বলে,
‘পেশেন্টের এক গাল বাকাঁ হয়েছে, ঠিক হতে মাসখানেক সময় লাগবে। এবং খাওয়ানোর সময় সর্তকতা অবলম্বন করে খাওয়াতে হবে। কারণ তার দুপাশ থেকে দু দাঁত ঝরে পড়ছে। অসুস্থ ও দূর্বল থাকবে তার শরীর। বেশি কথাও যেমন বলতে পারবে না তেমন বেশি নড়চড়ও করতে পারবে না।’
মেয়ের করুণ অবস্থার কযা শুনে আতঁকে উঠে দুজনে। লিয়াকত সাহেব ভাবে আরভীক এর চ’ড়ের মধ্যে এত শক্তি। যে এক মেয়ের দু চ’ড়ের মধ্যেই বেদনাদায়ক মরণ দশা করে দিয়েছে। জাফর সাহেব তখন থেকে মেয়ের পাশে শায়িত আছে। লিয়াকত সাহেব মুখ ভেটকিয়ে ভাবে।
‘এই আরভীক পোলাডা আসলে কেডা! এই কি ছোট সাহেবই নাকি অন্য কেউ।’
তার বন্ধু জাফরের ডাক শুনে তৎক্ষণাৎ কেবিনের ভেতর গেল সে। জাফর কাতর গলায় শুধায়।
‘যাহ্ তো রাজিবকে কল করে ডেকে আন।’
লিয়াকত সাহেব মাথা নেড়ে ফোন বের করে রাজিবকে কল দেয়।
অন্যথায় রাজিব ক্লাবে বসে ক্যারাম খেলছে। তার সঙ্গে বিদেশী কয়েকজন সঙ্গ আছে। মেয়েরা রাজিবের সৌন্দর্য্যে, কাহিল কড়া নজরে ঘায়েল প্রায়। তার পাশ ঘেঁষতে চেয়েও পারছে না। কেননা রাজিব ওয়ার্ন করেছে কাছে এলে একটারও হাত আস্ত রাখবে না! ভয়ে তারাও অন্য সঙ্গদের সঙ্গিনী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্যারামের নীল গুটি দিয়ে লাল গুটিকে টার্গেট করে যেই না গুটি চালাবে এর পূর্বে তার ফোনে কল এলো। সে খেলা অন্য এক ছেলেকে দিয়ে উঠে পড়ে। ফোন ধরে বলে,
‘ইয়েস মিস্টার রাজিব স্পিকিং!’
‘রাজিব জলদি…(নাম)..মেডিক্যালে চলে আয়।’
চমকে গেল সে। কি হলো আবার! প্রশ্নের জোঁস নিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করতে পারল না। তৎক্ষণাৎ ফোন কেটে দেয় অপরপ্রান্তের ব্যক্তি। দিগিদ্বিক হারিয়ে প্রস্থান করে। মেডিক্যাল এসে শ্রেয়ার অবস্থা দেখে শঙ্কায় জর্জরিত হলো। কাঁপা কাঁপা হাতে তার গাল স্পর্শ করে। নিবিড় রইল শ্রেয়া চোখজোড়া উম্মুক্ত, তবে কণ্ঠে নেই সেই রাগ প্রকাশের ধারালো চিৎকার! ব্যাপারটা মাত্রাতিরিক্ত হলেও বেশ সন্তুষ্ট হলো রাজিব। তার কার্যসিদ্ধি সম্পূর্ণ করার শ্রেষ্ঠ উপায় পেয়েছে। জাফর সাহেব কেবিনে ছিল না ফলে রাজিব উম্মুক্ত নয়নের রমণীর মুখোমুখি হলো। শ্রেয়ার গালে স্লাইড করে ওষ্ঠজোড়ায় মৃদু স্পর্শ দেয়। হাত নাড়িয়ে কেঁপে উঠার বহিঃপ্রকাশ করে শ্রেয়া। ঝুঁকে থাকা থেকে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে যায় রাজিব। ইতিমধ্যে সে ডক্টরের থেকে ঘটনার প্রতিহার সম্পর্কে জেনেছে। যেমন জাফর সাহেবকে বলে ছিল তেমন রাজিবকেও বলল। শুনে খুশিতে যেন তার মন নাচছে। দুদিন পর জাফর সাহেব কাজের উসিলায় জর্ডান যাবে। মোক্ষম সুবর্ণ সুযোগ লুপে নেওয়ার সময় তার ঘনিয়ে আসছে। সে অন্য কোনো রমণীকে ঘনিষ্ঠ হৃদয়ের প্রলকিতে চাইনি। অথচ শ্রেয়াকে সে প্রতিটা মুহুর্তে চাই! আর এই চাওয়া অবশ্যই সে দুদিন পরই পূরণ করবে। এখন তার একটাই উদ্দেশ্য এবং কাজ। জাফর সাহেবের সামনে তার নিজেকে ভালো বডিগার্ড রুপে পেশ করা। এতে সে রোগীর খেয়াল রাখার দায়িত্ব পাবে।
শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয়। শ্রেয়ার কেনো জানি রাজিবের নজরপাত বেশ ভয়াবহ লাগছে। তবুও সে জানে তার বডিগার্ড হলেও বন্ধু সে! খারাপ কিছু করবে না। ভেবেই চোখ বুজে নেই।
রাজিব কে শ্রেয়ার কেবিনে পেয়ে জাফর সাহেব বলে,
‘যাক তুই আসলি। আমি তোকে বলতে চেয়ে ছিলাম জর্ডানে জরুরি কাজ পড়ে গেছে আমার। আজকে পাসপোর্ট,ভিসা পেয়েছি। কাল ব্যাগ প্যাকিং করে ফেলব। পরেরদিন রাত নয়টায় রওনা দেব এয়ারপোর্টে। তোর থেকে আমার মেয়ের খেয়াল রাখতে হবে। বেশিদিন নয় দুমাস খানেকের জন্য যাবো।’
জাফর সাহেবের কথায় দ্বিরুক্তি না করে বরং হাস্যজ্জ্বল মুখ নিয়ে রাজিব কথার প্রেক্ষিতে সায় দেয়। জাফর সাহেব চিন্তামুক্ত হলো। তিনি জর্ডান থেকে এসে মেয়ের করুণ হালের জন্য শোধ নেবে। আপাতত বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে সে ও লিয়াকত প্রস্তুত হবে যাবার জন্য। লিয়াকতকে দেখে বলে,
‘রাজিব আছে সে সামলে নেবে।’
‘ওকে চল ভিসার অফিসে যায়। আমার ভিসা মাত্রই আসল বলছে।’
‘চল তাহলে।’
৪০.
সৌহাদ্য অনুষ্ঠানে আসায় বেশ খুশি হলো আরভীক। গলা মিলিয়ে আপয়্যনের মধ্যে কোনো কমতি রাখেনি। সঙ্গে স্ত্রীকে ক্ষণে ক্ষণে লজ্জায় ফেলতে ভুলেনি। যেখানে আনজুমা যায়,পিছুপিছু সেও তার কানের কাছে গিয়ে লাজহীন কথা শুনিয়ে উধাও হয়ে যায়। তখন আনজুমা ক্ষেপে বাঘিনীর রুপে পরিণত হতে পারেনা। অতিথি আছে বলে সেও ছাড় দিচ্ছে। ইশ! এখন তার ঠোঁট জ্বলছে। মনে মনে ভয়ানক গা’লি দিয়ে বলে,
‘বদ’মায়ে’সী তোর নাক দিয়ে ছুটাব। উফ ঠোঁট ফেটে ফেলছে একদমে। শা’লার বলদ! উফ আল্লাহ এই কারে আমার কপালে জড়ায় বসালে।’
‘কে আবার তোমার পরম সোয়ামী আমাকে দেবে না তো! আর কাকে দেবে। গাছের ডালে বসা শাকচুন্নাকে তো আর দেবে না হে।’
‘দেখুন চুপ করুন কথার পৃষ্ঠে বাক্য বলতে আসবেন না।’
‘এটা বাকস্বাধীনতা হরণকারী বাক্য।’
‘কি!’
‘এটা প্রশ্নসূচক বাক্য!’
‘এসব কি বলছেন হতচ্ছাড়া ছেলে।’
‘এটা অভ্রান্তমূলক বাক্য।’
‘আমি কিন্তু আব্বুকে বলব!’
‘এটা অভিযোগমূলক বাক্য।’
‘আপনি কিন্তু বেশি বেশিই করছেন!’
‘এটা বিনা দ্বিধায় কাজ করা মূলক বাক্য।’
‘আপনাকে খুন করে দেব।’
‘এটা হত্যাচার মূলক বাক্য।’
‘আপনাকে তো আমি।’
চেঁচিয়ে গলা চেপে ধরার মত হাত উঁচিয়েও অতিথির সামনে হাতজোড়া নামিয়ে নেয় আনজুমা। আরভীক ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু কণ্ঠে বলে,
‘এটা বউয়ের চুম্বনমূলক বাক্য।’
ব্যস আর কিছু শুনা লাগল না আনজুমা কান চেপে ‘আশফি আশফি’ বলে তার বাচ্চাকে ডেকে ছুটে পালায়। আরভীক চেঁচানো গলায় তবুও শুধায়।
‘এটা চুম্বন থেকে রক্ষার্থমূলক বাক্য।’
তার কথা শুনে ফাহাদ,সায়াজ ও অঞ্জয় হেসে গড়াগড়ি খেয়ে যেন একে অপরের উপর ঢলে পড়ছে। আরভীক গম্ভীর চোখে তাকিয়ে এগিয়ে গেল। হামি দিয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘কারা জানি আমার রুমে আসছিল!’
আতঙ্কে আমতা রুপ ফুটে উঠে তাদের মাঝে। অঞ্জয় ভ্রু কুঁচকে ভাবে সে কবে তার বসের রুমে গেল! ফাহাদ সায়াজকে তাড়া দিয়ে বলে,
‘আরে ডুড তুই থাক আমরা আসছি।’
কিন্তু কে শুনে কার কথা! আরভীক তার মহাবাক্য বলা আরম্ভ করে দেয়।
‘কেন রে অন্য দম্পতির চুমাচুমি দেখিস! নিজের বেলায় তো তাও পাস না। তাই বলে হিংসে হয় হে! জানি তো দুটাই হুদাইয়ের মিঙ্গেল হয়ে আছিস। বিয়েশাদি তোদের করাই লাগবে না। তোরা খালি গরুর মত খাটতে থাক। আমি ঘাস,পানি সব খেয়ে নিয়ে তোদের দশ-বিশটা ছেলেমেয়ের চাচাগণ বানিয়ে দেব।’
ফাহাদ-সায়াজ হা হয়ে যায়। নির্বোধ কান্নামাখা চেহারা করে সাইবার দিকে তাকায় ফাহাদ। সে ফাহাদের চাহনী দেখে মিটমিটিয়ে হাসি দেয়। যা আগুনে ঘি ঢালছে। ফোঁস ফোঁস করে সাইবার দিকে ছুটে গেল সে। সাইবা ফাহাদকে আসতে দেখে পালানোর জন্য দৌড় লাগায়। সায়াজ বেচারা বউয়ের জন্য অপেক্ষায় মিছামিছি চোখের পানি মুছার ভান করে চুপিসারে কেটে পড়ে। আরভীক ও অঞ্জয় দেখে ভূবন ভুলানো হাসি দেয়।#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২১
জাফর সাহেব জর্ডান যাওয়ায় বাসা পুরু ফাঁকফাঁকা হয়ে গেল। অন্যত্রে শ্রেয়া রোগীর ন্যায় বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে আছে। তার চোখ হতে জল উপচে পড়ছে। আজকের নিশিরাত্রিটি তার জন্য কাল হবে বুঝতে পেরেছে সে!
পরণে তার পরীবৎ সবুজ রঙের জামদানি শাড়ি। কিঞ্চিৎ পূর্বে সে তিন কবুলের অপরিস্ফুট কণ্ঠের দ্বারা মনের থেকে হাতে কলমে সাক্ষর করে সদ্য স্ত্রী হয়েছে রাজিবের। জাফর সাহেব যাওয়ার পর সময় বিলম্ব করেনি সে। কোনো রুপ বনিতা,ক্রোধহীন কাজ সেরেছে! তার পরিচিত বন্ধু ও বান্ধবীকে নিয়ে এসেছিল বিয়ের সাক্ষীস্বরুপ। কাবিননামায় শ্রেয়ার হাতের উপর হাত রেখে কলম দিয়ে সাক্ষর নিয়েছে। বিনিময়ে প্রতিবাদ করার বিন্দুমাত্র সুযোগ পায়নি শ্রেয়া। অসহায়,নিরব নড়বড়ে মন নিয়ে চেয়ে ছিল রাজিবের দিকে। আজ থেকে সে রাজিবের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত হবে! আরভীককে চাওয়া মানে পরপুরুষের পিছনে কুকুরের মত ধুলচাটা। নেহাৎ সে অসুস্থ! নতুবা রাজিবকে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়তো। গটগট করে কারো সচল পায়ের শব্দ শুনে কেঁপে উঠে শ্রেয়ার শরীর। মন যেন তার নিয়ন্ত্রণহীন হলো! রাজিব হাস্যমুখশ্রী নিয়ে শ্রেয়ার রুমে ঢুকে দরজা শুদ্ধভাবে আঁটকে দেয়। তার পাশ ঘেঁষে শায়িত করে নিজ দেহকে। ঢোক গিলে শ্রেয়া। চোখ দিয়ে সে বহু কথা বুঝিয়ে দিতে চাইছে। তবুও রাজিবের নয়নে কোনো রুপ কথন বাক্যের ধারা দৃষ্টপাত হচ্ছে না। বরঞ্চ সে নেশার ঘোরে চেয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে। পুরু রমণীকে আগুনের ন্যায় উজ্জ্বল আবেদনময়ী লাগছে!
তাকে ধরে হেলান দেওয়ায় কাঠের সঙ্গে। গাল বাকাঁ হলে কি হবে শরীরটাও অবশ তার। রাজিব তার হাত ধরে হাতের পিঠে গভীর চু’মু একেঁ নেশামগ্ন কণ্ঠে শুধায়।
‘তুমি এখন থেকে আমার বউ। আরভীকের নামও যেন তোমার মুখে না শুনি। তাহলে কিন্তু তুমি আমার ভয়ানক রুপ দেখতে পাবে। তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি কত খেলা খেলেছি সেটা শুধু আমিই জানি। চিন্তে করো না তোমার বাবা মারা যাওয়ার পর তুমি সুস্থবল হয়ে উঠবে। ততদিন তুমি আমার কাছে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকবে। তোমাকে সেই মেডিসিন দেব যেটা খেলে তোমার শরীর অবশ থাকবে কিন্তু তোমার ক্ষতি হবে না। লাভ ইউ ডেয়ার।’
রাজিবের কথা শুনে শ্রেয়ার চোখ কপালে উঠার মত উপক্রম। ঠোঁট কামড়ে কিছু বলার অবকাশ প্রকাশ করছে। কিন্তু রাজিব তার মনের উৎফুল্লতায় বিরাজিত। ফলে পাত্তা দিল না শ্রেয়ার মনের কথা। সে জড়তাহীন, বৈধতার সাপেক্ষে শ্রেয়ার ওষ্ঠদ্বয়ে তার পরম প্রণয়স্পর্শী ওষ্ঠ মিলিয়ে দেয়। শ্রেয়া চোখ বুজে নেয়। সে ব্যর্থ মনের প্রচেষ্টায় নেতিয়ে রইল রাজিবের সম্মুখে। অন্যথায় রাজিব স্বেচ্ছায় শ্রেয়ার সন্নিকটে গিয়ে পরণের শার্ট খুলে উম্মুক্ত করে দেয় তার লোমশ বুক। শ্রেয়ার সবুজ শাড়ির আঁচল সরিয়ে দেয়। রাজিব তার নিজের বুকের মধ্যিখানে শ্রেয়াকে আগলে বিয়ের প্রথম মধুররাত্রিতে আদিম খেলায় মেতেঁ উঠে। অনিচ্ছার সত্ত্বেও শ্রেয়া চোখ বুজে বাড়ন্ত রাত্রির মাঝে তার সতিত্ব বিসর্জন দেয় স্বামীর নিকট। রাজিব তার স্ত্রীর নেশায় উম্মাদের মত মগ্ন রইল।
৪১.
আশফি আজ পুরুটা দিন আরভীক এর সঙ্গে কথা বলেনি। কেননা আরভীক তাকে না বলে অফিসে গিয়েছে। ফলে তার আশফির অভিমান ভাঙ্গতে বেশ কাঠখোড় পুড়াতে হয়েছে। আশফি বিনিময়ে খিলখিল করে হেসে প্রমিজ করিয়েছে যে আজ সেও অফিসে যাবে। অতঃপর অঞ্জয় আশফিকে নিয়ে তার কেবিনে খেলছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
তবুও অফিসে বসে কাজ করে শান্তি পাচ্ছে না আরভীক। চোখে চোখে হারায় তার বউপাখিকে। অথচ গর্দভ বউ সাংসারিক মেয়ের মত বাসায় বসে খালি ফোন টিপে।
ফোন দিলে কড়া ভাষণ শুনায়! একটু মিষ্টিমুখ করে কথাও বলে না। এ নিয়ে ভীষণ বিরক্ত সে। ভাবনার জগৎ এ ভাবার পরিবর্তেও সে কম্পিউটারে হাত চালাচ্ছে। লেটেস্ট কারর্স ডিজাইন অঙ্কন করে সংরক্ষণ করে রেখে ছিল। এর ফাইল জরুরি ভিত্তিতে জমা দেবে সুইজারল্যান্ডের কারর্স কোম্পানির নিউ ক্লাইন্টের নিকট। তাদের ভাষ্যমতে আরভীক এর কোম্পানির সঙ্গে ডিল করার অর্থ হলো লাভবান হওয়া। বিধেয় ক্লাইন্টস হাতচ্ছাড়া করেনি। অঞ্জয়ের কোলে জড়ে আছে আশফি। ঠোঁট চেপে মুখ ফুলিয়ে চেয়ে আছে তার আরভীক বাবাইয়ের দিকে। সে আদু আদু কণ্ঠে আরভীককে ‘বাবাই’ ডাকে। শুনতে বেশ লাগে তার। তবে আনজুমাকে ‘মাম্মা’ ডেকেই অভ্যস্ত আশফি। ঠোঁটে আঙুল রেখে চুষতে থাকে। যার লাভা অঞ্জয়ের শার্টের কলারে মাখামাখি হয়ে আছে। বেচারা বাচ্চা না পেলে বড় হয়েছে, এখন বাচ্চা পালতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে।
ভেজা জুবুথুবু মনে হচ্ছে তার নিজেকে। শার্টের কলার ভেজে পুরু গলায় আঠালো ভাব ছড়িয়েছে। আমতা আমতা কণ্ঠে তার বসের দিকে চেয়ে বলে,
‘স্যার আশফি বাবুকে সোফায় রাখি।’
‘না তোর কোলে রাখ। দেখিসনি ক্লাইন্টর্স সোফায় বসে টসে ঘষেঁ মেজে জীবাণু করে ফেলছে। আশফিকে রেখে ওর শরীরে জীবাণু ঢুকলে তোর খবর আছে।’
ব্যস অঞ্জয়ের মুখ হা থেকে বন্ধ হয়ে গেল। নিশ্চুপে দাঁড়ানো থেকে বসে যায় চেয়ারে। আশফি আঙুল চুষে চুষে তার বাবাইয়ের ডেস্ক থেকে পেন্সিল,কলম ধরে আকাঁবুকিঁ করে। অঞ্জয় টেবিলের সাইডে আশফিকে বসায়। কেননা তার ফোনে কল এসেছে। আড়চোখে কলে থাকা ব্যক্তির নাম খেয়াল করে আরভীক। ‘আনজুমা ভাবী’ লিখা দেখে নিবিড় রইল। অঞ্জয় ফোন রিসিভ করলে অপরপ্রান্ত হতে আনজুমা ফিসফিসিয়ে বলে,
‘দেবরজী আপনার খচ্চর বস কি করছে!’
অঞ্জয় ঢোক গিলে বাঁকা চোখে তার বসের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি নুয়ে নেয়। তার ভাবীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘বস কাজ করছে এবং আশফি আমার কাছে খেলছে।’
‘গুড আশফি বাবাকে একটু বাসায় এনে দাও না দেবরজী।’
নিরবধি চাহনী নিয়ে বসের দিকে তাকায়। ততক্ষণে আরভীক এর কাজ সম্পূর্ণ হওয়ায় সে থুতনীর উপর হাত রেখে তার দিকেই চেয়ে ছিল। বসের গাম্ভীর্য চাহনী দেখে থতমত খেল অঞ্জয়। অপরপ্রান্ত থেকে বিনয়,অনুনয়ের কণ্ঠে সে ভেবে ছিল আশফিকে দিয়ে আসবে! এখন সেটাও মন থেকে জোরসরো করে মুছে ফেলল। কেননা বসের শান্ত চাহনীর মধ্যে অপরপ্রান্তের ব্যক্তির জন্য নেতিবাচক উত্তর অপেক্ষা করছে। ইতিমধ্যে হলোও তাই আরভীক ঠেসমার্কা গলায় শুধায়।
‘চ্যাম্প তখন যাবে,যখন আমি চাইবো ইজ দ্যাট ক্লিয়ার!’
কথাটি শুনে অঞ্জয় বিতৃষ্ণর্তার নয়নে চেয়ে আশফির সঙ্গে খেলায় মেতেঁ রইল। কল কাট করে দেয় আনজুমা।
ক্ষুধার্ত হওয়ায় অঞ্জয়ের পেটে ইঁদুর দৌড়ছে। আরভীক হাতের কাজ সেরে আশফিকে কোলে উঠিয়ে নিল। অঞ্জয়কে ইশারায় খেতে যেতে বলে। ছাড়া পেয়ে ভৌ দৌড়ে চলে যায় সে। আনমনে হেসে দেয় আরভীক। আশফি মুখ ফুলিয়ে আদু বুলিতে আওড়ায়।
‘বাবাই মাম্মা যায়।’
‘না তোমার ঐ পচাঁ মাম্মা তার বাবাইয়ের কথা শুনে না।’
‘খাবো।’
‘খাবো’ শব্দটি শুনে আরভীক ফটাফট হা করে তাকায়। একদম তার মত হয়েছে আশফি। বাবা যেমন খাদক আশফিও তেমন খাদকের ছেলে আহা জিও আরভীক জিও! সে চিন্তামুক্ত টিফিন বক্স খুলে। পূর্বেই আশফির জন্য খাবার নিয়ে এসে ছিল। বাপ-ছেলে বসে আড্ডার সহিত খাবার খাচ্ছে। আশফিকে খাওয়ানো শেষ হলে হুরমুড়িয়ে কেবিনে প্রবেশ করে আনজুমা। মুখের মধ্যে ঘামের ন্যায় লালাক্ত আভা ফুটে উঠেছে, ধরধর করে শ্বাস ফেলছে সে। ‘মাম্মা’ কে দেখে আশফি হাত নাড়িয়ে ‘মাম্মা মাম্মা’ বলে চেঁচিয়ে উঠে। আরভীক খেয়াল করলেও প্রথমত না দেখার ভান করে ছিল।
আশফি দেখে নেওয়ায় মজার দৃশ্যটি চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেল না। আনজুমা প্রশান্তির চোখে বাবা-ছেলের খাওয়ার দৃশ্য দেখে খুশি হলো। তবে ইতস্ততঃ বোধ করছে টিফিন ব্রেকে হঠাৎ চলে আসায়।
আরভীক গলা ঝেড়ে তার উপস্থিতি জানান দেয়।
‘মিসেস ফাওয়াজ কে আজ খুব হ’ট লাগছে।’
‘আপনার মুন্ড লাগছে।’
‘আমার মুন্ডর ভেতরে কিন্তু হ’ট হ’ট কথাবার্তাও থাকে। যাহার খবরও তোমার নেই রমণী।’
‘ওহ প্লিজ জানতেও চাইনা। আপনার ফাজলামি অসহনীয়।’
‘মিসেস ফাওয়াজ আই অর্ডারিং ইউ। প্লিজ টেক মাই ওয়ার্ডস ইন ইউর মাইন্ড এন্ড হার্ট। সবসময় ফাজলামি সহ্য করা শিখে নাও। না হলে আমি ফাজিল হয়ে যাব হেহেহে।’
কথাটি বলে আরভীক চওড়া হেসে টুপ করে ওষ্ঠের ছোঁয়া একেঁ দেয় আনজুমার গালে। সটান হয়ে দাঁড়িয়ে জেন্টালম্যান হওয়ার ভান করে। গালে হাত রেখে আনজুমা হা করে তাকায়। রাগান্বিত রুপে চেঁচিয়ে বলে,
‘আর ডেয়ার ইউ টু কিস মি!’
কথাটি পছন্দ হলো না আরভীক এর। অতিষ্ঠ ভরা চোখে চেয়ে কপাল চাপড়ে বলে,
‘তোমাকে কিস না করলে কি পাশের কলিগ কাজলকে কিস করব!’
‘ছিহ্ পরকীয়া পুরুষগিরির লক্ষণ দেখাবেন আরকি।’
‘পরকীয়া কয় করলাম! আমার শখ নেই তোমাকে ছাড়া অন্য মেয়ের ধারপ্রান্তে ঘেঁষাঘেঁষি করার। তুমি হলেই হবে প্রণয়োণী।’
‘সুয়াইব।’
‘ইয়েস!’
আতঙ্কিত উত্তেজনাপ্রবণ দৃষ্টিতে তার স্বামীর দিকে তাকায় আনজুমা। সে ‘সুয়াইব’ বলে ডেকেছে যার প্রত্যত্তুরে আরভীকও সায় দিল। আরভীক নিজেই যখন খেয়াল করল। তখন আমতা আমতা করে মাথা নেড়ে বলে,
‘আই মিন হু ইজ সুয়াইব! তোমার হাজবেন্ড ঐ। সে কেনো আমি হতে যাবো। আমি তো আমিই, সে তো সেই।’
‘কেনো যেন লাগছে আপনিই সেই।’
খাবার মুখে পুরে নেয় আরভীক। তখনি তার গলায় মাছের কাটা আঁটকে যায়। কাশতে আরম্ভ করে। গলা চেপে বেসিনের সামনে গিয়ে গড়গড়ে মাছের কাটা মুখ থেকে বের করে। আনজুমা আকস্মিক কাশির ঝংকারে চিন্তিত হয়ে এগিয়ে যায় তার স্বামীর নিকট। তার পিঠে আলতো স্পর্শ দিয়ে মালিশ করে দেয়। যেন ব্যথিত না হয়। আরভীক কাটা বের করে দীর্ঘ শ্বাস নেই। খাবার আর খাবে না ভেবে নেয়। আড়চোখে তার প্রণয়োণীর দিকে অপলকে চেয়ে থাকে। তার খুব করে বলতে ইচ্ছে করে, সেই যে তার প্রণয়রাজ। তার এককালীন স্বামী ছিল,যার নতুন চেহারার বিনিময়ে নতুন রুপে হাজির হয়েছে। অন্যথায় সে বলতে পারছে না। বাধ্য সে, কেননা কার্য অসম্পূর্ণ রেখে রহস্যের সমাপ্তি ঘটাতে পারবে না। গলায় গুরুগম্ভীরতা ফুটিয়ে এনেছে সে। আনজুমার বাহু ধরে অনড় উপায়ে চেয়ারে বসায়। সে হাটুগেরে বসে হাতজোড়া আঁকড়ে কিঞ্চিৎ সময় অপরুপী শ্যার্মেরাঙা নারীর দিকে চেয়ে বলে,
‘যদি কখনো জানতে পারো আমিই সুয়াইব তখন!’
কথাটি সংক্ষিপ্ত হলেও এর পরিধি আকাশসম আনজুমার কাছে। হৃদপিন্ডের ভাঙন তাজা হলো! ক্ষতবিক্ষত হওয়া সম্পর্কের ইতি টানেনি কখনো সে। অথচ মরণ টেনে নিয়ে ছিল তার স্বামীকে। বিধেয় সে অনুরাগে ভরা নয়নে বলে,
‘তাহলে আমি আপনাকে খুন করে দেব। সত্য চুপিয়ে রেখে সামনে এলে।’
‘ওহ আর যদি পুরু ঘটনার তদন্ত করে এলে, তখন কি করবে!’
‘ক্ষমার মত মাফ চেয়ে নিলে, ক্ষমা করে বুকের বাঁ পাশে মধ্যে আবদ্ধ করে নেব।’
‘তাও যদি না বলি এবং তুমি অন্য কারো কাছ থেকে জানতে পারলে তবে।’
অপ্রত্যাশিত সত্যতার কারণে উত্তেজনা ভরা দৃষ্টিতে আনজুমার উত্তরের অপেক্ষায় কেঁপে উঠছে আরভীক। তার গলা ধরে এসেছে। কান্নারা কি এই হৃদয় নিঙানো পুরুষের চোখ বেয়ে পড়বে! নাকি পাখির অনু মেলে মুক্ত হয়ে অবয়বে মান্য হবে। আনজুমার প্রতি আরভীক এর অপেক্ষার মান দীর্ঘ হওয়ায় খেয়াল নেই তাদের একটি বিষয়ে। ছোট অবুঝ আশফি যার হাসিতে পুরু রুম মুখরচিত হয়। তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে আছে আলিশান রুমের মধ্যে থেকে। আনজুমা তার কাপাঁন্বিত ওষ্ঠদ্বয়ের মধ্যিখান হতে শব্দের বাক্যধার বের হবার পূর্বেই দরজায় কটকটিয়ে শব্দের কড়াঘাত হলো। ধ্যান ফেরে দুজনের মনের থেকে। আরভীক হাটু মোড়া থেকে দাঁড়িয়ে যায়। শুদ্ধি, পরিস্ফুট মনে আনজুমার দিকে চেয়ে ‘কামিং’ বলে।
ফাহাদ তার বন্ধুর অফিসের রিসেপশনিস্টের
কাছ থেকে শুনে নিয়ে ছিল। আরভীক তার রুমে স্ত্রীর সঙ্গে আছে।
ফলে গত বউরাতের অনুষ্ঠানে লজ্জাজনক ব্যাপার ঘটায় শরমের ঠেলায় বন্ধুর মুখোমুখি হতে বিবেক দিয়ে ভাবে। তবে ফাহাদ কোনো মজাঠাট্টা করতে আসেনি। সে এসেছে জরুরি তলব আদায় করার তাগিদে। ইতিমধ্যে কে যেনো ফাঁস করেছে ইনসার্চ কলিগের মৃত্যু পা পিছলে ক্রংক্রিটের উপর পড়ে হয়নি। বরঞ্চ কথাটি ছিল বিন্যস্ত এক অভিনয় মাত্র। এর মূল প্রেক্ষাপটের রচয়িতা সম্পর্কে অবগত করতে আরভীক এর সঙ্গে তলব করতে এসেছে। আনজুমা উঠে মাথার হিজাব টেনে আশফিকে কোলে নেওয়ার জন্য এগোয় টেবিলের দিকে। যেখানে বসে আশফি খেলছিল। কিন্তু টেবিলের কোণায় আশফিকে না দেখে চিৎকার করে ‘আশফি’ বলে ডেকে উঠে। সবেই পানি পান করতে গ্লাসটি হাতে নিয়ে ছিল আরভীক। আচমকা আনজুমার চিৎকারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে লেপ্টে জড়ে নেই তাকে। তার গালে হাত রেখে পুরু রুমে শঙ্কিত নয়নে দৃষ্টি বুলায়। না, নেই তার আশফি! কই গেলো সে।
আনজুমা ভাবমূর্তি হয়ে আরভীক এর গলা আকঁড়ে ধরে অনুরোধময় গলায় শুধায়।
‘আশ আশফি কোথায় দেখুন না প্লিজ!’
কথাগুলো দলা পাঁকিয়ে আসছে আনজুমার কণ্ঠনালী হতে। আরভীক তার মুখশ্রী হাতের আদলে নিয়ে আশ্বস্ত করে সে আশফিকে খোঁজে বের করবে। উচ্চস্বরে ‘অঞ্জয়’ বলে ডাক দেয়। সঙ্গেই উপস্থিত হলো সে। কেননা আশফি হারানোর খবর ছড়িয়ে গিয়েছে অফিসে। ফাহাদ এসে নিশ্চুপে বিষয়টি লক্ষ করে তৎক্ষণাৎ অফিসের ম্যানেজারকে ব্যবস্থা নিতে বলে। এ্যালার্ম বেল বেজেছে, মাইকে এনাউন্সমেন্ট করা হচ্ছে,
‘আরভীক স্যারের ছেলে নিখোঁজ। সবাই অনুগ্রহ করে খোঁজ লাগান।’
আরভীক মাইকের এনাউন্সমেন্টে কোমল,শান্ত কণ্ঠে শুনে চোখ বুজে দহনময় শ্বাস নিল। সে গিয়ে তার মাইক স্পিকার অন করে তিক্ষ্ণ কণ্ঠনালী ধারা বয়ান করে।
‘যে আমার সন্তানকে কুড়িয়ে নিয়েছেন, ভালোই ভালোই হাতের নাগালে এনে দেন। না হলে সব কটাকে আস্ত রাখব না।’
ভয়ানক কথাগুলো আওড়ে স্পিকার বন্ধ করে দেয়। আনজুমা ঠাইঁ দাঁড়িয়ে রইল। অঞ্জয়কে নিচু গলায় ফিসফিসিয়ে বলে,
‘তোর ভাবীকে বাসায় পৌঁছে দেয়! আপাত ড্যাডকে আশফি নিখোঁজের কথা জানাস না। বারণ করছি। নেহাৎ তিনি শ্বাসকষ্টের রোগী। না হলে আশফির খবর খুঁজে বের করা কোনো ব্যাপারই না তার পক্ষেও।’
অঞ্জয় বসের কথা অনুযায়ী আনজুমাকে আলতো করে ধরে গাড়িতে বসায়। ফাহাদ শঙ্কাময়ী কণ্ঠে শুধায়।
‘ইনসার্চের মৃত্যু ক্রংক্রিটে পড়ার কারণে হয়নি ডুড! তাকে খুন করা হয়েছে। তার পোস্টমোটার্ম রিপোর্ট পেয়েছি। সেখানে স্পষ্ট ভাবে লেখা আছে দিস ইজ এ মার্ডার। এক্সিডেন্টের কোনো লক্ষণ নেই। অথচ ফাস্ট ডক্টর চেক করে স্ফট এক্সিডেন্ট ডেড বলে ছিল।’
কপাল চুলকে শান্তভাবে পায়চারী করে আরভীক। আশফি নিখোঁজ , ইনসার্চ কলিগের মৃত্যু রহস্য। যার বিন্দুমাত্র আঁচটুকু নেই ফাহাদের। সে চিন্তায় দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত চিন্তার লক্ষণ হলো নখ খাওয়া। ওয়াক্ ওয়াক্ করে মুখে থাকা নখগুলো ডাস্টে ফেলে। আরভীক কি ভেবে যেন ফোনটা হাতে নিয়ে কিঞ্চিৎ সময় ব্যয় করে ফোনের দিকে দৃষ্টপাত রাখে।
মুহুর্তের অবিলম্বে হঠাৎ আননোন নাম্বর থেকে কল এলো। শ্লেষ্মাহীন মনে ফোনটি রিসিভ করে। দুপ্রান্তের মানব জড়ত্বে মন্থর,মৌনতা পালন করে। আরভীক আগ বাড়িয়ে বলার মত মানুষ নই। সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কল কাটতে নিলে অপরপ্রান্তের ব্যক্তি বলে,
‘আশফি আমার কাছে!’
সূচালো পুরুষের কণ্ঠনালী কানে বাজতে লাগে আরভীক এর। কাঠিন্য দৃষ্টিতে ফ্রেমে বন্দি আশফির ছবির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘ওহ আচ্ছা তারপর।’
‘এককোটি লাগবে !’
‘ওয়াট এককোটি জীবনে বাপের ঘরেও দেখেছিস। আমি নিজেই কোম্পানিতে চাকরী করে হাজারখানেক টাকা পাই। আর তোর কিনা বা’লের কোটি টাকা লাগবে বলিস।’
অপরপ্রান্তের ব্যক্তি হকচিয়ে উঠে। ক্ষণিক তিক্ষ্ণ কণ্ঠে শুধায়।
‘টাকা না পেলে তোর ছেলেকে বেছে দেব।’
আরভীক বাঁকা হেসে ত্যাড়া দাঁতের ভাব নিয়ে চুল ধরে শক্তপোক্তভাবে টান লাগায়। ব্যথা না পেয়েও মৃদু আর্তনাদ করে উঠে। ‘আউচ’ শব্দ করে বলে,
‘চব্বিশ ঘণ্টা সময় দিলাম তোকে। যদি আমার ছেলেকে বেছে দেখাতে পারিস। তবে তোকে ছাড় দেব। আর যদি আমি তোকে খুঁজে পায়। বিশ্বাস কর জ্যান্ত রেহাই পাবি না। গট ইট ইন ইউর মাইন্ড লুজার বয়।’
ফোন কেটে শয়তানি চেহারায় ফাহাদের দিকে তাকায়। সে হতবুদ্ধির ন্যায় তার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে তার বন্ধুর মাথার তার ছেঁড়া। কি’ডনা’পারকে চব্বিশ ঘণ্টা সময় দিল সে। তাও আবার আশফিকে বিক্রি করতে পারলে তাকে নাকি ছাড় দেবে! কথাগুলো বদ’হজম’শীল। সে নিজেও ধারণা করে কুল পাচ্ছে না আশফি কোথায়, কার কাছে! সেখানে আরভীক এর স্বতঃস্ফূর্ত, স্বাভাবিক ব্যবহার যেন চিন্তায় ফেলছে ফাহাদকে।
চলবে….
চলবে…..