‘নয়নতারা’
লিখা- ফারিয়া নোভা
(পর্ব-১৩)(শেষপর্ব)
অল্পকিছুক্ষণ পরেই নয়নতারার জ্ঞান ফেরে।
সে উঠে বসে দেখতে পায়, নানাজান তার মুখে পানি ছিটাচ্ছিলো।
নয়নতারা- নানাজান!
ইব্রাহীম শেখ- আমি তো তোমাকে যথেষ্ট সাহসী ভেবেছিলাম, তাহলে আমায় ওভাবে দেখে কাত হয়ে নিজের সাহস দেখিয়ে দিলে?
নয়নতারা ভীষণ লজ্জা পায়।
নয়নতারা – ওভাবে তো কখনো আপনাকে দেখি নি।
ইব্রাহীম শেখ- তোমার নানাজানের যে কিছু ক্ষমতা আছে, তা তো বিশ্বাস করো, তবে?
তুমি যে হুট করে নক না করে চলে আসবে আমি বুঝি নি।
নয়নতারা- আপনাকে কিন্তু হাসলে ভালোই লাগে।
ইব্রাহীম শেখ- তাই বুঝি এমন চিৎপটাং হয়ে গেলে?
নয়নতারা, ইব্রাহীম শেখ দু’জনেই হাসছেন। অনেকদিন পর প্রাণখোলা হাসি।
ইব্রাহীম শেখ- তোমার চপলতা আমার বেশ লাগে। মনে হয় চোখের সামনে নিয়তিকেই দেখছি।
এবার দেখা যাক তোমার বুদ্ধির জোর কত….
নয়নতারা – তার মানে আপনি জেনে গেছেন?
ইব্রাহীম শেখ আর কিছু বলেন নি। শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।
নয়নতারা খুশি মনে নিজের রুমে ফিরে এলো। অনেকদিন পর মনটা হালকা লাগছে।
সে মনে মনে বলছে-
‘আমি জানি তুমি আমার সাথেই আছো, তুমিই যে আমার মনোবল টগর। সারাজীবন এভাবেই পাশে চাই…..’
দুপুরে খাওয়া শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিচ্ছে নয়নতারা।
ইব্রাহীম শেখ- তরী!
নয়নতারা রুম থেকে বাইরে বেড়িয়ে আসে,
নয়নতারা- জ্বী, নানাজান।
ইব্রাহীম শেখ- পুতুলটা সঙ্গে নিয়ে নিয়ো। কাজে লাগবে।
নয়নতারা- জ্বী, আচ্ছা।
দুপুরের রোদ পড়ে এসেছে , নয়নতারা নানাজান কে নিয়ে আশ্রমের দিকে রওনা দিচ্ছে।
নয়নতারা কে দেখে বাচ্চাকাচ্চাদের সে কি আনন্দ। কিন্তু এই বৃদ্ধ লোকটিকে দেখে তারা কেউই কাছে যাচ্ছে নাহ।
ইব্রাহীম শেখ কিছু চকোলেট বের করে তাদের দিতে চাইলেন, তখনি তাকে ঘিরে পিচ্ছিরা কোলাহল শুরু করে দিলো।
ফাদার ও এসে উপস্থিত।
নয়নতারা- কেমন আছেন, ফাদার?
ফাদার- মাই সুইট গার্ল, তুমি কেমন আছো? আমাদের তো ভুলেই গেছো।
নয়নতারা- ভুলি নি, আসলে নিজের সাথে নিজের সমঝোতা করে নিতে একটু সময় লেগে গেলো।
ফাদার নয়নতারার কথার মর্মার্থ বুঝতে পারেন নি।
নয়নতারা – একটা রিকুয়েস্ট করবো?
ফাদার – অফকোর্স মাই চাইল্ড, বলো।
নয়নতারা – আজ রাতটা সবার সাথে মিলে কাটাই? বড্ড একা লাগছে। রাত পোহালেই আমার জন্মদিন। বাবাও আর নেই…..
ফাদার- দুঃখ পেয়ো না মাই চাইল্ড, আমরা সবাই আছি তো। একদম ঠিক কাজ করেছো।
এতোক্ষণে ফাদারের ইব্রাহীম শেখের উপর চোখ পড়েছে।
ফাদার – উনি?
নয়নতারা – উনি আমার দুঃসম্পর্কের দাদাজান।।আমাকে দেখতে এসেছিলেন। তাই বাসায় একা রেখে আসার সাহস পাই নি।
এছাড়া তিনুদের গল্প শুনে উনিও সবাইকে দেখতে চেয়েছিলেন।
ইব্রাহীম শেখ তখনো পিচ্ছিদের নিয়ে ব্যস্ত।
ফাদার – তাহলে তো খুবই ভালো করেছো। আজ সবাই মিলে অনেক আনন্দ করবো।
নয়নতারা – জ্বী, অবশ্যই।
এই বলে ফাদার প্রস্থান করলেন। নয়নতারা নানাজানের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলেন, কাজ হয়ে গেছে।
ইব্রাহীম শেখ ও প্রতিউত্তরে পরিতৃপ্তির হাসি হাসলেন।
সন্ধ্যা হয়নি তখনো। নয়নতারা নানাজানকে পুরো আশ্রম ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে।
একটা রুমের সামনে এসে নানাজান বলেন-
ইব্রাহীম শেখ- এটাই তাহলে ফাদারের রুম?
নয়নতারা – আপনি কি করে আগেই বুঝে যান, আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না।
ইব্রাহীম শেখ- চলো, এগুনো যাক।
আশ্রমের শেষের দিকটায় এসে ওরা একটা পরিত্যাক্ত রুম দেখতে পায়।
ইব্রাহীম শেখ- থামো, তরী।
নয়নতারা- কিন্তু কেনো?
ইব্রাহীম শেখ- এ রুমেই আজ ধ্যানে বসতে হবে। পরিত্যাক্ত রুম, কেউ টের পাবেনা।
নয়নতারাও সম্মতি জানায়। যদিও সে আগে কখনোই ওই রুমে যায় নি।
ইব্রাহীম শেখ- চলো এখন তাড়াতাড়ি যাওয়া যাক। কেউ দেখে ফেললে সন্দেহ করতে পারে।
নয়নতারা ইব্রাহীম শেখের হুইলচেয়ার টেনে বাচ্চাদের হলরুমের দিকে এগুচ্ছে। ফাদারের রুমের সামনে দিয়ে যাবার সময় ফাদারের সাথে দেখা। ফাদার ইব্রাহীম শেখের দিকে করমর্দনের জন্য হাত বাড়ায়। দুজনেই দুজন কে ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করছে।
ফাদার – আপনার সাথে দেখা করতে পেরে ভালো লাগছে।
ইব্রাহীম শেখ- আমারো। আশ্রমের এতো মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, সত্যি অতুলনীয়।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, সবাই হলরুমে বসে আছে। আজ বাচ্চাকাচ্চাদের পড়ালেখার ছুটি।
এদিকে ফাদার নয়নতারার জন্য বার্থডে কেক নিয়ে এসেছেন।
সবাই দেখে তো মহাখুশি।
যেহেতু বাচ্চাকাচ্চারা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে, সেহেতু ১২ টা বাজার আগেই সবাই মিলে হৈ হৈ করে কেক কাটে।
রাতের খাবার দাবার শেষে সবাই কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়।
এবার ঘুমোতে যাবার পালা।
ফাদার সবাইকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে যান।
ফাদার- গুড নাইট মা, হ্যাভ এ সুইট ড্রিম।
নয়নতারা- ইউ টু ফাদার। প্রে ফর মি।
চারিদিকে শুনশান নীরবতা। শুধু দেয়ালঘড়ির কাঁটার টক টক শব্দ শুনা যাচ্ছে।
অন্ধকার হলরুমে নয়নতারা বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে।
তখনি ও নিজের মাথায় কারো হাতের পরশ পায়-
‘ শুভ জন্মদিন তরী মা’
নয়নতারা ভয় পেয়ে যায়, বড্ড শীতল ছিলো সে স্পর্শ।
নয়নতারা- নানাজান, এসেছেন?
ইব্রাহীম শেখ- সময় হয়ে গেলো, আমাদের যে ধ্যানে বসতে হবে।
নয়নতারা আর ইব্রাহীম শেখ সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওই পরিত্যাক্ত রুমে যায়।
রুম টা বেশ ময়লা।
তাও এককোণে কিছুটা পরিষ্কার করে ওরা মোমবাতি জ্বালিয়ে নেয়।
নানাজান তার ব্যাগ থেকে সেদিনের মতো অদ্ভুত সব জিনিস বের করে সামনে রাখছেন। দুজন দুজনের মুখোমুখি বসে আছে।
নয়নতারার এই পরিবেশে গা ছমছম করছে।
ইব্রাহীম শেখ- পুতুলটা এনেছো তো?
নয়নতারা- এইযে, নানাজান।
ইব্রাহীম শেখ- মন কে স্থির করো। তুমি এ ঘরে আজ এমন কিছু দেখতে যাচ্ছো, এমন কিছু অনুভব করতে যাচ্ছো যা সাধারণ কিছু হবে না। মনোবল রাখতে হবে।
নয়নতারা শুধু মাথা নাড়ায়।
ইব্রাহীম শেখ- ধ্যানের সময় তুমি কোনো প্রশ্ন করতে পারবেনা। তুমি আজ আমার এমন রুপ দর্শন করবে, যা আগে কেউ কখনো দেখে নি।
নয়নতারার আত্মা হিম হয়ে যাবার মতো অবস্থা। ইব্রাহীম শেখ তখন নিজের কাজে মনোযোগ দিয়েছেন।
নয়নতারা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে স্থির হয়ে বসে আছে।
এদিকে ইব্রাহীম শেখ পুতুলটা মানুষের খুলির উপর রেখে মনে মনে বুলি আওড়াচ্ছেন।
নয়নতারা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ওর নানাজানের দেহের আদল পরিবর্তিত হচ্ছে। কালো আলখেল্লা পড়ে এক মাঝবয়সী যুবক যেনো তার সামনে বসে আছে। শরীর টিকরে যেনো আভা বেরুচ্ছে, যেমনটা সে স্বপ্নে নিয়তিকে দেখেছিলো।
চোখের সামনে নানাজানের দেহটা বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হচ্ছে। নয়নতারা ভয়ে টু শব্দটাও করছে না।
পুরো দেয়াল জুড়ে যেনো বিভিন্ন অবয়ব ছুটাছুটি করছে।
মোমিবাতির আলোতে সে দৃশ্য রোমহর্ষক হয়ে উঠেছে……
ভয়ে নয়নতারার মাথা ঝিমঝিম করছে।
ইব্রাহীম শেখ পুতুলটায় আগুন লাগিয়ে দিলেন।
ইব্রাহীম শেখ- চোখ বন্ধ করো তরী। নিয়তি আসছে….
নয়নতারা চোখ বন্ধ করে ফেলে। রুমজুড়ে তখন পিনপতন নীরবতা।
হঠাৎ এই নয়নতারার কানে ভেসে এলো হট্টগোল।
চোখের পাতায় ভেসে উঠলো দৃশ্যপট-
প্রথম প্রথম কিছুই বুঝতে পারছিলো না কি নিয়ে এই হট্টগোল। তখনি মাঝখান থেকে একটা লোক এক ফুটফুটে শিশু কোলে নিয়ে বের হয়।
নয়নতারার দেহ কেঁপে উঠে ।
ছোট্ট নিয়তি তখনো প্রচণ্ড কাঁদছিলো। দারোয়ান আশ্রমের ভেতর ফাদারের কোলে বাচ্চাটিকে দিয়ে বলেন-
‘ বাচ্চাডারে কেডা ফালায়া রাইখা গেছে গা।’
ফাদারের মুখে তখন বাঁকা হাসির রোল। তিনি পরম আদরে বাচ্চাটিকে নিয়ে হলরুমের দিকে পা বাড়ান।
এই হলো নিয়তি, সেদিন থেকে সেও আশ্রমের এক সদস্য হয়ে উঠে।
দিনদিন ছোট্ট ছোট্ট পায়ে মুখরিত করে আশ্রমের কোণা কোণা।
বাচ্চাগুলোর মনে ছিলো না কোনো কালিমা, না ছিলো কষ্ট। তবু হঠাৎ তাদের সমবয়সী কাউকে বাবা-মার হাত ধরে থাকতে দেখলে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠতো।
অনাথ শিশুগুলোকে তখন ফাদার পরম আদরে বুঝাতেন, তাদের নিয়ে খেলতেন, যেনো শিশুগুলোর কষ্ট কিছুটা গুছে।
ছোট বাচ্চাগুলো ফাদার কেই নিজেদের আপনজনের জায়গা দিয়েছিলো।
সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো। কিন্তু আশ্রমের রাতগুলো যেনো অন্যরকম ছিলো।
নয়নতারা বুঝার চেষ্টা করেও বুঝতে পারছেনা সমস্যাটা ঠিক কোথায়।
সে আবার দৃশ্যপটে মন দেয়-
নিয়তির খুব কাছের বান্ধবী ছিলো রানু, সে একদিন প্রচুর কান্নাকাটি শুরু করে। কেউই বুঝতে পারেনি রানুর কি হয়েছে।
নিয়তির তখন ৭ বছর। ওর হাতে সেই রিং। ও রানুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। রানুর কান্না থামে। ও অভিমানের সুরে বলে-
‘ আমার আব্বু – আম্মু লাগবে রে নিয়তি…. ‘
ফাদার দূর থেকে সব দেখছিলেন। রানুর এই কথায় নিয়তির ভেতরটায় ও এক অচেনা হাহাকারের জন্ম নেয়।
ফাদার – তোমার সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে অনাদরে সৃষ্টি। তার কাছে তোমরা এতোই তুচ্ছ ছিলে, তোমাদের না দিয়েছে পরিবার, না দিয়েছে সুখ।
মুখ গম্ভীর করে ফাদার কথাগুলো বলে যান। ছোট বাচ্চাগুলো ফাদারের কথা কিছু না বুঝতে পারলেও ভয়ে ভয়ে ফাদারের দিকে তাকায়। শুধু নিয়তির চোখে বিস্ময়।
সে রাতে সবাই ঘুমোনোর পর ফাদার হলরুমে আসেন। সবার মাথায় ছুঁয়ে দেন কালো কাপড়।
গভীর রাতেও বাচ্চাগুলো নিঃশব্দে উঠে বসে।
ফাদারের হাতের ইশারায় চলে যায় ফাদারের সেই অন্ধকার রুমে।
বাচ্চাগুলোর চোখে ছিলো অসম্ভব এক ঘোর, শুধু নিয়তির চোখে ছিলো ভয়।
মনে হচ্ছিলো ওকে যেনো ফাদার বশে আনতে পারে নি।
সেদিন থেকে শুরু হয় ওদের জীবনের অন্য এক অধ্যায়।
শিশুগুলো নিজের অজান্তেই শুরু করে প্রেতপুজো। একমাত্র নিয়তি সব বুঝেও বশে আসার ভান করতো।
ও মনেপ্রাণে নিজের রবকেই বিশ্বাস করে, ওর ছিলো না লোভ।
ও ধীরে ধীরে ওর সহপাঠীদের মধ্যেও সেই বোধ টা জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলো।
দিনের বেলায় ফাদার যেমন সবাইকে নিজের বাহুডোরে স্নেহের মায়ায় জড়িয়ে রাখতেন, রাতের অন্ধকারে তাদের দিয়েই নিজের কাজ হাসিল করতেন।
নিয়তিদের আশ্রমের পাশেই তখন ছোট এপার্টমেন্ট গড়ে উঠে , নতুন সব পরিবার বসতির জন্য আসে।
খুব কাছের এক এপার্টমেন্টে একটা পরিবার উঠে, যাদের ছিলো ছোট্ট যমজ দুই ছেলে, টগর আর তারেক।
টগর আর তারেকের খুব অল্প সময়েই আশ্রমের বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। তারা প্রায়ই আশ্রমের মাঠে খেলতে আসতো।
তখনি একদিন টগরের চোখ পড়ে আশ্রমের বারান্দায়।
এক শুভ্র সাদা জামা পড়নে একটা মেয়ে বসে গল্পের বই পড়ে শুনাচ্ছে ছোটদের।
টগর যেনো সেই চোখের মায়ায় হারিয়ে যায়, কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো মনে নেই। তার হুশ আসে তারেকের কটুক্তিতে –
‘কিরে মনে ধরেছে বুঝি?’
নিয়তি ওদের দিকে তাকাতেই দুজন দৌডে পালিয়ে যায়।
নিয়তি বুঝতো টগরের দুর্বলতার কথা, কিন্তু ওর মধ্যে সেই অনুভূতি কখনোই জাগে নি।
কিন্তু টগর ওকে পাগলের মতো ভালোবাসতো।
এদিকে আশ্রমে সেবছর রানু মারা যায়।
নিয়তি সব দেখেও নিঃশব্দে কেঁদে যায়, তার হাত পা যে বাধা। শুধু রানুর লাশের দিকে তাকিয়ে নিয়তি প্রতিজ্ঞা করেছিলো, নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও আর কাউকে মরতে দেবো না।
তারপর থেকে আর কখনো ফাদার প্রেতপূজা সম্পন্ন করতে পারতেন নাহ, বাধা আসতোই।
বছর বছর পার হচ্ছে ফাদারের শরীর ভাঙ্গচে বয়সের ভারে।
কিন্তু উনি কখনোই সমস্যাটা কোথায় বুঝতে পারেন নি।
ততদিনে নিয়তি কলেজে উঠেছে, আজকাল আগের মতো মনমরা হয়ে থাকতে হয় না। সে নিজে ফাদারের সব চাল নষ্ট করে দেয়ার ক্ষমতা সে রাখে।
কলেজেই ওর রোদিকের সাথে পরিচয় হয়। যখন শুনতে পারে রোদিকও অনাথ, ওর জন্য আলাদা একটা টান জন্মায় নিয়তির। সেটাই কবে ভালোবাসায় পরিণত হয়েছিলো তাদের জানা নেই।
এদিকে টগর ও নিয়তির সাথে রোদিকের সম্পর্কের কথা জেনে যায়।
সেদিন ও নিয়তির পথ আটকে বলেছিলো-
‘তোমার ভালো থাকাতেই আমার ভালোবাসা স্বার্থকতা পাবে…..’
নিয়তি সেদিন দু’ফোটা চোখের জল ফেলেছিলো। টগরের জন্য এর মায়া হয়, কিন্তু ভালোবাসা নেই….
সবকিছু ভালোই চলছিলো, কিন্তু বিপত্তিটা ঘটে সেদিন রাতে।
সেদিন রাতে নিয়তির চোখ লেগে যায়, এদিকে ফাদার এসেছেন সবাইকে বশ করে প্রেত পূজোয় নিয়োজিত করতে।
সবাই যাওয়ার পর ফাদার হলরুমের দরজা বন্ধ করতে যাবেন, তখনি নিয়তির বিছানার দিকে চোখ যায়।
একি ও যে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে!
তাহলে কি ফাদারের বশীকরণ শক্তি ওর উপর কাজে দিতো না? এতোদিনে ফাদারের মনের খটকা সত্যি হয়েছে।
নিয়তির যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন সে নিজেকে একটা টেবিলের উপর বাধা আবিষ্কার করে, প্রথম প্রথম না বুঝলেও সে মনে করতে পারে এই সেই জায়গা, যেখানে রানুর জীবনীশক্তি শুষে নিয়েছিলো মুখোশধারী স্পার্কি।
নিয়তি আজ অসহায়, ওর সাথের সকলকে বশ করা হয়েছে। কেউ বাঁচাতে আসবে না। কেউ নাহ।
স্পার্কির মুখে বিভৎস হাসি, নিয়তি যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাচ্ছে।
আর কিছুক্ষণ, তারপর হয়ত জীবনবাতি ফুরিয়ে যাবে।
নিয়তি মনে মনে বলে-
‘ আমি কথা রেখেছি রানু, আমি কথা রেখেছি।
রোদিক আমায় মাফ করে দিয়ো……’
এদিকে টগর বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে, এমন একটা বাজে স্বপ্ন সে দেখলো যার কোনো ব্যাখা নাই। মনটা বড্ড কু ডাকছে।
শেষমেশ নিজের ঘরের মধ্যে থাকতে না পেরে আশ্রমের গেইটে এসে সে নিয়তির নাম ধরে ডাকছে।
তখনো পুরো কাজ সম্পন্ন হয়নি ফাদারের, ফাদাররুপী স্পার্কি ধরা পড়ে যাবার ভয়ে সেদিনের মতো সব কিছু ধামাচাপা দিয়ে দেন।
নাহ নিয়তির জীবনটা এখনো আছে, সে জানে সে আর বেশিদিন বাঁচবে নাহ। দুর্বলতা যেনো প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে নিয়তির।
ফাদার সেদিন রাতে টগরকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এদিকে নিয়তি শুয়ে শুয়ে টগরের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছে ওকে বাঁচানোর জন্য।
টগর সকাল থেকে নিয়তির জন্য আশ্রমের সামনে অপেক্ষা করছে, কখন নিয়তি আসবে , কখন একটু দেখে শান্তি পাবে।
এদিকে নিয়তি আজ কলেজ যায় নি বলে রোদিকের ও চিন্তা হচ্ছিলো। সে ছুটে চলে আসে আশ্রমে। এসে দেখতে পায় নিয়তির কি বেহাল দশা।
প্রচন্ড কষ্ট পায় নিয়তিকে দেখে। এদিকে ফাদার বেশ বুঝেছেন রোদিক নিয়তিকে ভালোবাসে।
সে মনে মনে ভাবে এইতো সুযোগ, নিয়তিকে সরাতে পারলে আশ্রম থেকে, তাহলেই আর ব্যাঘাত ঘটবে না।
উনি তো পৃথিবী থেকেই ওকে সরাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কপালগুনে বেঁচে গেছে এবা
ফাদার ই রোদিক কে বিয়ের প্রস্তাব দেন সেদিন। এদিকে রোদিক তো কবে থেকেই এই দিনটার অপেক্ষা করছিলো।
আর আজ নিয়তির এই হাল দেখে আরো বেশি করে নিজের কাছে যত্নে রাখতে চাইছিলো সে।
রোদিক এককথায় সম্মতি দিয়ে দেয়।
বাধা দেয় নিয়তি, নিজের জীবনের অন্তিমপর্যায়ে এসে সে কাউকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতে পারবে না। রোদিক কেও নাহ। যাকে ভালোবাসে তাকে রেখে দূর দেশে চলে যাবার আঘাত সে কোনোভাবেই দিতে পারবে নাহ।
কিন্তু রোদিকের একাকীত্ব, ওর মায়াভরা চোখের আকুতির কাছে নিয়তি না করতে পারে নি।
আশ্রমে বিয়ের রোল পড়ে যায়, বিয়ের দিন টগর নিয়তিকে একটা ফুলের তোড়া দিয়ে যায়।
সেখানে ছোট্ট করে লিখা ছিলো-
‘ অনেক ভালো থেকো ভালোবাসা…’
নিয়তি মুচকি হাসে। কেউই জানে না নিয়তির জীবনচক্র খতম হতে চলেছে। এ জীবনে ভালো থাকা বোধহয় আর হলো না (দীর্ঘশ্বাস)
বিয়ের পর রোদিক যতটা না খুশি ছিলো তার চেয়ে অনেক বেশি মুষড়ে পড়েছিলো নিয়তি।
সে তো রোদিকের একাকীত্ব কে গুছাতে নয় বরং আঘাতটাকে আরো ক্ষতবিক্ষত করতে এসেছে।
নাহ কিছু একটা করতে হবে, যেনো ও বাঁচার প্রেরণা খুঁজে পায়। কিন্তু কি এমন করবে সে?
দিনে দিনে নিয়তির শারীরিক অবস্থা আরো বেহাল দশায় পরিণত হচ্ছিলো।
রোদিক যখন অফিসে, তখন সকলের চোখের আড়ালে নিয়তি আশ্রমে যায়। আজ তাকে ফাদারের মুখোমুখি হতেই হবে।
নিয়তি- আর কত জীবন নিয়ে খেলবেন আপনি? রোদিক কি ক্ষতি করেছিলো আপনার।
ফাদার- করেছিলে তো তুমি, তার শাস্তি ভোগ করবে রোদিক।
নিয়তি- শাস্তি? আমার জীবনীশক্তি কেড়ে নিয়েও শান্তি হয় নি?
ফাদার- পুরোটা আর নিতে পারলাম কই? তুমি এখনো আরো ১ বছর বাঁচবে।
নিয়তির এই লোকটাকে প্রচুর ঘৃণা হচ্ছে, অনাথ শিশুদের নিয়ে কি
জঘন্য খেলায় নেমেছেন তিনি।
নিয়তি- আমি এতোদিন চুপ করে ছিলাম, আর থাকবো না। আপনার ভালোমানুষি রুপ টা টেনে ছিড়ে দেবো সবার সামনে।
ফাদার খিল খিল করে হেসে উঠে।
ফাদার- এই কথা বলার আগে ভয় হলো না? তোমার জিহবা টা যে আমি এখনি টেনে ছিঁড়ে ফেলতে পারি তা খেয়াল আছে?
নিয়তি- তাই নাকি?
এই বলে ও ওর রিং টা ফাদারের চোখের সামনে ধরে। ফাদার হঠাৎ করেই টলিয়ে পড়ে।
নিয়তি কালো কাপড়ে ওর চোখ বেধে দেয়।
হাত পা গুলো ভালোভাবে চেয়ারের সাথে বাঁধে। এর পর ফাদারের চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।
ফাদার যেনো কাতরাচ্ছে, নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
নিয়তি- কি আপনার শক্তি কাজ করছেনা?
ফাদার- একবার ছাড়া পাই, দেখ কি করি আমি তোর (রাগে ফুঁসছেন)
তুই কি মনে করেছিস আজীবন আমাকে আটকে রাখতে পারবি?
নিয়তি- আটকে রাখতে চাইবো কেনো? আমার একটা কাজ করে দিতে হবে আপনার, তাহলেই ছেড়ে দেবো।
ফাদার- তোমার জীবনীশক্তি ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব না আমার পক্ষে।
নিয়তি- নাহ আমার অন্য কিছু চাই।
ফাদার- কথা দিচ্ছি যা চাও তাই দেবো। আমি যে অনন্য শক্তির অধিকারী।
নিয়তি ফাদারের বাধন খুলে দেয়।
নিয়তি- আমার কন্যাসন্তান চাই যে হবে হুবহু আমার মতো দেখতে।
ফাদার- কিন্তু তুমি তো মা হতে পারবেনা, তোমার জীবনীশক্তিই ফুরিয়ে এসেছে।
নিয়তি- এই আপনার অনন্য শক্তি? আপনি কিন্তু কথা দিয়েছেন।
ফাদার- আমার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ? উপায় আছে, তবে সে সহজসাধ্য হবে না।
নিয়তি- কি সেই উপায়?
ফাদার- বিশোর্দ্ধ কোনো যুবকের রক্তে স্নান করে তোমায় যজ্ঞ করতে হবে টানা ৬ ঘন্টা। তাহলেই শুধুমাত্র সম্ভব।
নিয়তি এসব শুনে হাল ছেড়ে দিয়েছে। আশ্রম থেকে বের হয়ে শূণ্য দৃষ্টিতে পথ চলছে । সামনে প্রচন্ড দ্রুত বেগে ট্রাক ছুটে আসছে, নিয়তির সেদিকে খেয়াল নেই।
ঠিক সে সময় টগর এসে নিয়তিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়, নাহলে হয়ত ট্রাকটাই পিষে ফেলতো নিয়তিকে।
টগর- কি করছো এসব? জানের মায়া নেই?
নিয়তি উদ্ভ্রান্তের মতো হাসে। টগর এইপ্রথম নিয়তির চোখে হাহাকার দেখেছে, সব হারাবার বেদনা দেখেছে।
টগর – কি হয়েছে আমাকে বলো, বিশ্বাস রাখতে পারো।
নিয়তি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। সব খুলে বলে টগর কে। মেয়েটা এতো কিছু সহ্য করেছে দেখে বুঝাই যেতো না।
নিজের জীবন টাও বিপন্ন করে দিয়েছে অনাথ শিশুদের জন্য।
টগরের চোখ বেয়ে জল গড়ায়।
টগর- এতো ভাবছো কেনো? আমি আছি তো।
নিয়তি বিস্ময়ের চোখে টগরের দিকে তাকায়।
নিয়তি- মানে?
টগর – আমার রক্তে স্নান করেই নাহয় তোমার পূণর্জন্ম হবে ।
শুধু কথা দাও সেই তরী আমায় একটু ভালোবাসবে…
টগরের গলা ধরে এসেছে। নিয়তি অঝোরে কাঁদছে।
টগর – বাড়ি যাও, আমি না শুনতে চাই না। তোমার ভালোবাসা পেতে আমি নিজের জীবন ও দিতে পারি।
এই বলে টগর উঠে যায়। নিয়তিও বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
নিয়তি রোদিক কে এসবের কিছুই জানায় নি, ও এসব সহ্য করতে পারতো না। এদিকে রোদিক কে অফিসের কাজে বিদেশ যেতে হয়। নিয়তি সেই সময়ের এই যজ্ঞ সেরে ফেলতে চায়।
সেই অমাবস্যাতিথিতে নিয়তি আর টগর যায় ফাদারের কাছে।
ফাদার- তোমরা প্রস্তুত?
নিয়তি ভয় ভয় চোখে টগরের দিকে তাকায়। টগরের মুখে মলিন হাসি।
টগর- হু, প্রস্তুত।
টগর নিয়তির দিকে তাকিয়ে বলে-
‘ আমি ফিরে আসবো ভালোবাসার টানে,
অপেক্ষা করো আমার….’
নিয়তির চোখে সেদিন টগরের জন্য ভালোবাসা ছিলো নাকি নেহাতি কষ্ট বুঝা যায় নি।
টগর কে সিলিং এর সাথে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে । আর নিয়তি বসেছে ঠিক ওর নিচে ফ্লোরে।
টগর হাসতে হাসতে ওর গলায় ছুড়ি চালিয়ে দেয়, গড়িয়ে গড়িয়ে নিয়তির সারা দেহে রক্তের ফোটা পড়ছে।
নিয়তি যেনো প্রত্যেক রক্তবিন্দুর স্পর্শে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে।
নিয়তি আজ ৬ মাসের অন্তঃস্বত্তা। জানালের পাশে টেবিল পেতে সে চিঠি লিখছে।
নয়নতারাকে লিখা শেষ চিঠি।
শেষসময়টায় চিঠির দিকে তাকিয়ে নিয়তির চোখমুখে প্রশান্তির ঝিলিক ফুটে উঠে-
‘তুই বদলা নিবি মা, তুই বদলা নিবি……’
নাহ আর কিছুই দেখতে পারছেনা নয়নতারা। চোখ খুলে সে। একটা মানুষের ছোট্ট জীবনজুড়ে এতো ঝড় বয়ে গেছে ভাবতেই শরীর কাটা দিয়ে উঠে। একটা পাপীর জন্য কত জীবন বিপন্ন হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তাকে শাস্তি না দিলে নয়নতারা যে মরেও শান্তি পাবে না, যেমনটা তার মা, টগর কেউই পায় নি…
চিন্তার বাধ ভাঙ্গে যখন ঘরজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। নানাজান তখনো চোখ বন্ধ করে ছিলেন।
বদ্ধ ঘরের দরজা কে যেনো সজোরে ভেঙ্গে ফেলতে চাইছে।
নয়নতারার ভয়ে আত্মা হিম হয়ে যাচ্ছে।
তখনি দরজা ভেঙ্গে ঢুকে ফাদার। কিন্তু তার শারীরিক গঠনে অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। পাহাড় সমান লম্বা, মুখ দিয়ে লম্বা দাঁত বেড়িয়ে রয়েছে, সারা শরীর জুড়ে লোম।
‘আমায় শাস্তি দিবি? আমায়? ‘
এই বলে পিশাচ টা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। নানাজান ওর দিকে আগুনের কণা ছিটিয়ে দেয়।
তাতে পিশাচটার কিছু লোম পুড়ে যায়, রোমজুড়ে ভ্যাপ্সা গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
‘ভেবেছিলাম তোর কিছু করবো না, কিন্তু জাত শত্রু বাঁচিয়ে রাখা যে কতবড় ভুল তা আজ টের পেলাম’
এই বলে পিশাচ টা নয়নতারার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। পেছন থেকে ইব্রাহীম শেখ এক বড় কুড়াল দিয়ে পিঠে দেয় এক কোপ। দ্বিখন্ডিত হয়ে যায় ফাদাররুপী স্পার্কির শরীর।
ইব্রাহীম শেখ, নয়নতারা দুজনেই যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে।
কিন্তু মুহূর্তেই স্পাার্কির শরীর জোড়া লাগতে শুরু করে।
উঠে দাঁড়িয়েই ইব্রাহীম শেখকে দেয়ালে আছাড় মারে স্পার্কি।
আর নয়নতারা কে নিয়ে যায় নিজের বদ্ধ কুটুরিতে।
ইব্রাহীম শেখ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এভাবে কতক্ষণ ছিলেন মনে নেই। কারো কোমল আওয়াজে ইব্রাহীম শেখের ঘুম ভাঙ্গে।
‘ উঠুন, দয়া করে আপনি। আমাদের তরীকে বাঁচাতেইই হবে যে করেই হোক…’
ইব্রাহীম শেখ অস্ফুট স্বরে বলে উঠেন-
টগর?
টগর- জ্বী, আমি। উঠুন দয়া করে।
ইব্রাহীম শেখ খুব কষ্টে উঠে বসেন।
ইব্রাহীম শেখ- আমার শক্তি নেই, ওর সাথে লড়ার। কিন্তু তোমাদের আছে। আমি শুধু সাহায্য করতে পারি।
টগর- বলুন, আমায় কি করতে হবে?
ইব্রাহীম শেখ- আজ ভোর হবার আগেই ও তরী কে ওর প্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করবে।
তবে এর আগে নিজের তিন অনুচর কে বলি দিয়ে সেই রক্তে স্নান করাবে তরীকে।
তুমি সেই অনুচর বেশে প্রবেশ করবে ওর বদ্ধ কুটুরিতে, এবং যখন তোমাদের বলি দিতে আসবে তখন তুমি ঐ দুইজনের মুন্ডু কেটে ওদের রক্ত স্পার্কির শরীরে ছিটিয়ে দেবে।
এতে ও কিছুক্ষণের জন্য জ্ঞান হারাবে। তখনি তরীকে ওর রুমে কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা দুটো ছবিতে আগুন লাগাতে হবে।
এতেই স্পার্কি রিকভিয়ার শক্তি এবং এদের অস্তিত্বের বিলীন হবে, তুমি পাবে মুক্তি।
কিন্তু মনে রেখো এসব কিছুর জন্য তোমার হাতে সময় মাত্র এক ঘন্টা, তুমি এই এক ঘন্টার জন্য নিজের দেহ ফিরে পাবে….
টগর – আমি প্রস্তুত।
ইব্রাহীম শেখ নিজের ক্ষমতাগুনে টগর কে ওর দেহ ফিরিয়ে দেন, অনুচর দের মতো করে সাজান।
এদিকে স্পার্কি তখন মহানন্দে যজ্ঞের ব্যবস্থা করছেন, সাথে তার হাজারো ভক্ত।
নয়নতারা তখনো অজ্ঞান হয়ে আছে। ইব্রাহিম শেখ তার নিজের শেষ শক্তি দিয়ে টগর কে স্পার্কির বদ্ধ কুটুরিতে পাঠান।
টগর অনুচরদের একজন কে ইব্রাহীম শেখের শেখানো মায়াজালে বন্দি করে নিজে যায় সেই যজ্ঞস্থলে।
গিয়ে দেখে তরীকে বেঁধে রাখা হয়েছে।
তখনি স্পার্কি এসে উপস্থিত হয় বলি দেয়ার স্থানে।
সে নিজের হাতে আজ অনুচরদের বলি দেবে তাদের মুন্ডু কেটে।
স্পার্কি কিছু করার আগেই টগর তলোয়ার বের করে সামনের দুজন অনুচরের মুন্ডু কেটে দেয়। ওদের লাশ গিয়ে পড়ে স্পার্কির উপর।
ওদের রক্তের ছোঁয়ায় স্পার্কি জ্ঞান হারায়।
টগর দৌড়ে গিয়ে তরীর মুখে পানি ছিটায়, তরীর জ্ঞান ফিরে। চোখের সামনে টগর কে দেখে ও কিছু বুঝতে পারছেনা এটা স্বপ্ন নাকি বাস্তব…
টগর তরীকে হেচকা টানে নিয়ে অন্ধকার কুটুরিতে ছবিগুলো খুঁজতে থাকে, অনেক খোঁজাখুঁজির পর ছবিগুলো পেয়েও যায়।
এদিক দিয়ে স্পার্কির ঘুঙানির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।
ছবিগুলো নামিয়ে খুব শীঘ্রই আগুন ধরিয়ে দেয় তরী। ভয়ংকর আত্মচিৎকারে বদ্ধ কুটুরি নরকে পরিণত হয়।
টগর তরীকে কোলে করে বাইরে বেড়িয়ে আসে, বদ্ধ কুঠুরি থেকে হাজারো আত্মচিৎকার ভেসে আসছে।
তরী টগরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, এই জীবনে প্রথমবার ভালোবাসার মানুষকে প্রাণভরে দেখতে পাচ্ছে….
নয়নতারা- আমি তোমাকে আর আড়াল হতে দেবো না…
টগর- কিন্তু তুমি যে আমায় মুক্ত করে দিয়েছো….
নয়নতারা- কি বলছো এসব?
টগর- আমি এতোদিন স্পার্কির কাছে বন্দি ছিলাম, ওর বিনাশের সাথে তুমি যে আমায় ও মুক্ত করে দিয়েছো। আর ৫ মিনিট বাকি।
আমায় যে এ দেহ ত্যাগ করে যেতে হবে যে এবার…..
নয়নতারা – এটা হতে পারে না, কিছুতেই নাহ।
টগর – ভাগ্য তো তোমায় মানতেই হবে, আমি তো তোমার ভালোবাসা চেয়েছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি তুমি আমায় দিয়েছো। এবার যে আমার যাবার পালা…
নয়নতারা নির্বাক। চোখের সামনে টগরের দেহটা বিলীন হয়ে যায়।
শুধু পড়ে থাকে টগরের তরীর হাহাকার।
অনেকগুলো বছর কেটে গেছে । নয়নতারাই এখন আশ্রমটা চালায় তার নানাজানের সাথে।
নতুন করে এই বাচ্চাদের নিয়ে জীবন শুরু করে, তাদের আনন্দেই ওর বেঁচে থাকা। নানাজানের অনুরোধ রাখতেই আবার ভার্সিটিতে ভর্তি হয়।
আজ ভার্সিটিতে ওর প্রথম দিন। ভয় ভয় লাগছে না জানি কেমন হবে সব কিছু।
তখনি পেছন থেকে কেউ বলে উঠে,
‘এক্সকিউজ মি, ফিজিক্স ডিপার্টমপন্ট টা কোনদিকে বলতে পারবেন প্লিজ? ‘
কণ্ঠস্বর শুনে নয়নতারার সারা শরীরে অচেনা শিহরণ বয়ে যায় । সে পেছন ফিরে তাকিয়ে হতবাক…..
অস্ফষ্ট স্বরে বলে- ‘টগর ‘
(সমাপ্ত)