এখানে আকাশটা ভালোবাসার পর্ব ১

#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ১
.
“তুমি কি আমার চায়ের কাপের আয়েশী চুমুক দেওয়া সঙ্গী হবে?
ভালবাসার দুপুরে হারিয়ে যাওয়ার কারণ হবে?
ভালবাসি তোমায়”

নিশিকা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফোনের স্ক্রিনের মেসেজটার দিকে। সে বুঝতে পারছে না কে এই টা? আর কেন এভাবে পরিচয় না দিয়ে শুধু ভালবাসার কথা বলছে। সেই কবে থেকে মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে, নিশিকা যদিও পাত্তা দিতে চাইছেনা, কিন্তু মেসেজ গুলো অদ্ভুদভাবে টানে তাকে৷ প্রত্যেকটা মেসেজের শেষ দুটো শব্দ “ভালবাসি তোমায়” কিযেন এক মায়া!
“এসব কি ভাবছি আমি!” এক মনেই বলে ওঠে নিশিকা।
সুন্দরী মেয়ে নিশিকা, লম্বা চুল আর চোখের লম্বা পাপড়ি গুলো যেন সেই সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে চলেছে, শান্ত চোখের চঞ্চল চাহনি, ঠোঁটের পাশের তিল আর ভুবনভুলানো হাসি যেন মিষ্টি মেয়ে নিশিকাকে আরো সুন্দরী করে তুলেছে।
ইংলিশে অনার্স করছে নিশিকা, ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে…
এরই মাঝে বাবা মা অনেক বার বিয়ের কথা বললেও গুরুত্ব দেইনি নিশিকা…
তার মনে হয়েছে বিয়ের জন্য সে তৈরি না।
কিন্তু এতকাল কোনো ছেলে যা পারেনি আজ এই এক ছেলের সামান্য মেসেজ তাকে ঘায়েল করে দিচ্ছে!
ভাবতেই অবাক লাগছে তার!!!
এসব কিছুতেই ভাবব না আমি!
নিজের মনে আওড়াতে থাকে কথা গুলো কিন্তু যতই ভাবছে সে যেন ভাবনার আরো গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে
নাহ কাউকে বলতে হবে, কাকে বলা যায়! ভাবতেই নওশির কথা মনে হলো নিশিকার।
নওশি নিশিকার বোন…
অসম্ভব বুদ্ধিমতী মেয়ে নওশি, পিঠাপিঠি দুই বোন নিশিকা নওশি।
নিশিকার থেকে ৫ বছরের ছোট নওশি অনেক ম্যাচিউর মেয়ে। অনেক বুঝে সে। ওকে মাঝে মাঝে আদর করে মায়াবতী বলে ডাকে বাসার সবাই।
চেহারার দিক থেকে নিশিকার মতো অতটা নজরকাড়া সুন্দরী না হলেও বাকপটুতা আর ওর মায়াবি চোখের চঞ্চলতা দেখলে যে কোনো ছেলেই প্রেমে পড়ে যাবে। আর….
:”আপু কি ভাবছিস রে তুই?”
নওশির কথাতে ভাবনার ছেদ পড়ল নিশিকার।
“কিছু না রে”
“আপু জানিস ভাইয়া আমার জন্য এক বক্স চকলেট এনেছে”
“ও”
“শুধু ও? ঠিক আছিস তুই? কি হয়েছে রে তোর আপু? অসুস্থ? বাবাকে বলব?”
বোনের দিকে তাকিয়ে কেমন অন্যমনস্ক মনে হচ্ছে নওশির, এক দমে কথা গুলো বলে থামল সে।
“নওশি শোন না, দেখ না গত এক মাস ধরে কে যেন আমাকে মেসেজ করছে। মনে হয় একটা ছেলে”
বোনের কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল নওশি। হাসতে হাসতেই বলল…
“আপু এটা নিয়ে ভাবছিস তুই??? তোর মতো শ্রীদেবী কে ছেলেরা মেসেজ করবেই, তুই এটা নিয়ে ভাবছিস? হাসাইলিরে বোইন হাহাহা!”

“না মানে সেরকম কিছু না, মেসেজ গুলো না খুব সুন্দর, ভালই লাগে পড়তে…”

“কিরে আপুউউউউউউ!!! তোর কথাতে কেমন প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি…
‘মেসেজের ভাষাগুলো তার কত জানি সুন্দর
নয়ন দিয়া না দেখিয়া দিলাম তারে অন্তর’
বলেই হাসতে লাগল নওশি

“উফ, নওশি যাহ তোকে আর কিছু বলব না”

“এই না না না, আপু বল, আর মজা করব না।”

“না বলব না”

“আমার আপুনি সোনা আপু রাগ করিস না, বল”
নওশির মুখ দেখতে খুব ভাল লাগছে নিশিকার, এত মায়াবি কেন ওর মুখটা! এই মুখ দেখে রাগ অভিমান করে থাকা যায় না, বিশেষ করে ওর চোখের চাহনি, খুব ভালবাসে নিশিকা ওর বোনকে। শুধু নিশিকা নয় বাকি ভাইবোনেরাও খুব ভালবাসে নওশিকে।

“কি হলো রে আপু তোর? আবার কোথায় হারিয়ে গেলি!!”

“শোন না, ছেলেটাকে একটা ফোন দিব? আচ্ছা ছেলে তো?”

“আচ্ছা আপু তুইকি পাগল, কোনো মেয়ের এত জ্বালা নেই যে তোকে প্রেমের মেসেজ করবে, সবাই এখন বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকে।”

“তা ঠিক বলেছিস।”

“আচ্ছা ফোন দে, দেখি কি বলে তোর লাভগুরু!”

“উফফফফ নাশু!!!”

“আচ্ছা নে নে ডায়াল কর…”

“হুম দিয়েছি…
এই রিসিভ করেছে”, ফিসফিস করে বলল নিশিকা।

“তো কথা বল…”

রিসিভ করতেই ওপাশে ঘুমঘুম কন্ঠে কেউ সালাম দিল।
নিশিকা সালামের উত্তর দিতেই
ওপাশে থেকে থতমত খেয়ে ছেলেটা ফোন কেটে দিল।
তারপরই একটা মেসেজ আসলো..
“সরি রাতপরী আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, তাই চিনতে পারিনি। আর এখন আমার সময় নেই কথা বলতে পারছি না, আচ্ছা তোমার কাছে একটা কথা জানতে ইচ্ছে করে…. রাতপরী তুমি কি রাতে ঘুমাও না? যদি ঘুমাও তাহলে আমার স্বপ্নে কি করো?”

রাগ হয়ে গেল নিশিকার, যেন নিশিকার ঠেকা পড়েছে কথা বলার।
নওশি মেসেজ টা পড়েই হেসে বললো “আপুরে তোর স্বপ্নকুমার মনে হচ্ছে খুব চালাক ছেলে তোকে চিনে আপু”
নওশির হাসি দেখে আরো রাগ হলো নিশিকার,
“নাশু!!!”
হাসতে হাসতেই নওশি বলল…
“আপু দাঁড়া রেগে যাস না, ছেলেটা তোকে চিনে দাঁড়া দেখি কিভাবে ছেলেটার পরিচয় বের করা যায়”
নওশির কথা না শুনে রেগেমেগে আজ প্রথমবার রিপ্লাই দিল সে
“কি রাতপরী রাতপরী করছেন, আমার কি ঠেকা পড়েছে আপনার সাথে কথা বলার জন্য! হুম? এত্ত মেসেজ দিতে থাকেন কেন? কে আপনি? কি দরকার আপনার? কি চান? কেন চান? আর কেন মেসেজ করেন? আর আমি রাতপরী না, আমি নিশিকা”

মেসেজ টা সেন্ড করার পরই বুঝলো ভুল করে নিজের নামটাই বলে দিয়েছে সে, অথচ ছেলেটা সম্পর্কে কিচ্ছুই জানেনা সে উফ সে এত বোকা কেন!

বেশ হয়েছে, নাম ও বলেছিস, রিপ্লাই ও দিয়েছিস… নে তোর স্বপ্নকুমার আবার রিপ্লাই দিবে দেখ!
রাগ করতে গিয়েও হাসিমুখে কথা গুলো বলল নওশি…
উঠে চলে যেতে যেতে নওশি বলল…
আপু আমি যাই, রোশনির সাথে চকলেট নিয়ে একটু ঝগড়া করি, বেচারা আমার চকলেট গুলো নেবে তাই বসে আছে,
নওশির কথা শুনে হাসতে লাগল নিশিকা।

নওশি, খুব সুন্দর গুছিয়ে কথা বলার ক্ষমতা আছে তার… সে যেখানে থাকে নিজের চারপাশটা আলোকিত করে রাখে। নওশির গুণের কথা বলে শেষ করা যাবেনা। খুব ভাল আর্ট করতে পারে সে, রান্না, বা সব শৈল্পিক কাজে খুব দক্ষতা তার। তার বাবা আর মায়ের সব গুণগুলো নিয়ে জন্মেছে যেন সে…
আর উজ্জ্বল শ্যামলা বর্নের নওশি যখন হাসে তখন তার দিকে তাকালে টোল পড়া গাল আর মায়াবি চোখের চাহনিটাই চোখ ফেরাতে দেয়না…।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here