এক শহর ভালোবাসা পর্ব ১৮

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_১৮
#সুরাইয়া_নাজিফা

বিছানা উপর থেকে সবে মাত্র ফোনটা হাতে নিলাম তখনই কেউ আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে সপাটে আমার গালে চড় মেরে দিলো।ঘটনার আকষ্মিকতায় আমি পুরা হতভম্ভ হয়ে গেলাম।গালের একপাশে শিরশির করছে যেন কোনো সার পাচ্ছিনা। অবশ হয়ে গেলে যেমন হয় তেমন মনে হচ্ছে। এমন হঠাৎ আক্রমণে কেমন প্রতিক্রিয়া দিতে হয় সেটা যেন আমি ভুলেই গেছি। আমি স্থির হয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি সামনের মানুষটার দিকে।আর সামনের মানুষটা আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে।

তখনই আমার মুখের উপর আমার রুমালটা ছুড়ে মেরে বললো,
“তোমাকে কিছু বলি না মানে যা মনে আসে তাই করছো। কি পেয়েছো আমাকে? আমারই ভুল হয়েছিল তোমাকে বিশ্বাস করে তোমার দেওয়া জিনিস নেওয়া।তোমার থেকে কিছু আশা করা। সবসময় আমাকে ছোট করার কথাই মাথায় ঘুরঘুর করে।সেলফিস মেয়ে একটা সবসময় নিজেকে ছাড়া আর কারো কথা ভাবাবতেই পারো না। এরপর থেকে তুমি একদম আমার থেকে দূরে থাকবে ।জাস্ট স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মি স্টুপিড। ”

কথাটা বলেই শান হনহনিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে ছাঁদে চলে গেলো। রাগে শরীর ফেঁটে যাচ্ছে শানের। নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে। পাশের দেওয়ালে শান নিজের হাত দিয়ে সজরে একটা ঘুশি মারল। হাতটা পুরো লাল বর্ণ ধারণ করলো। শান একবার নিজের হাতের দিকে তাকালো এইহাত, এইহাত দিয়ে আজ ও ওর পরীকে মেরেছে। ভাবতেই বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে।কেন যে ও ওর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারেনা জানা নেই। শান ছাঁদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন আগের কথাই ভেবে যাচ্ছে।

আজকে শানের নতুন অর্ডারের কাজটা শুরু করার কথা ছিল।এজন্যই জরুরী একটা মিটিংও ছিল। অফিসের গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা আছে তারাসহ ঐশীদের কম্পানির থেকেও সব স্টাফরা উপস্থিত ছিল। ঐশী নেই সব শানকে সামলাতে হবে এজন্যই শান আজকে অন্যদিনের তুলনায় তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেছিল। এই কাজটা কমপ্লিট হলে অনেক প্রফিট হবে সবারই। শান অনেক খুশি ছিল তারউপর সকালে সোহার দেওয়া উপহার যেটা ওর খুশিটাকে দ্বিগুন করে দিয়েছিল।

অফিসে পৌছাতেই তিমির বললো,
“কি ভাই আজকে এতো খুশি খুশি লাগছে কি ব্যাপার? ”

শান তিমিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
“খুশি তো হতেই হবে আজকে কত ভালো একটা দিন বল। যাইহোক ঐদিকের সব কিছু রেডি তো? ”
তিমির হাত দেখিয়ে বললো,
“সব একদম ফার্স্ট ক্লাস আছে। ”

তখনই শানের পি.এ এসে বললো,
“স্যার সবাই চলে এসেছে মিটিং রুমে সবাই আপনার জন্য ওয়েট করছে চলুন। ”

শান মাথা নেড়ে সায় দিলো। তারপর ওরা তিনজনই এগিয়ে গেল মিটিং রুমের দিকে। শান সবার সাথে খানিকটা কুশল বিনিময় করে স্লাইডে চলে গেল। খুব সুন্দর করে স্লাইডটা সবাইকে বুঝিয়ে দিল কিভাবে কি হবে?কে কোন কাজ করবে? কে কোনটার দায়িত্বে থাকবে সবকিছু।স্লাইড শেষ হওয়ার পর শান সবাইকে বললো,

“আশা করি আপনারা সবাই বুঝে গেছেন কিভাবে কি করতে হবে। আমি চাই প্রজেক্টটায় কোনো ভুল ত্রুটি না হয়। একদম পারফেক্ট ভাবে কাজটা শেষ করবো আমরা। আশা রাখছি আপনারা সবাই আমাকে প্রজেক্টটা সাকসেসফুল করতে সাহায্য করবেন। ”

শান কথাটা শেষ করতেই সবাই একসাথে বললো,
“ওকে স্যার। ”

কাজ শেষে শান এসে নিজের চেয়ারে বসল। ম্যানেজার বাকি কাজটুকুও সবাইকে বুঝিয়ে দিল। শান কিছু বলবে তাই সবাই শানের দিকে মনোযোগ দিল। তখনই তিমির শানকে নিচু স্বরে বললো,
“শান তোর গালে মার্কারের লাল কালি লেগেছে এটা মুছে ফেল। ”

তিমিরের কথা শুনে শানের মনে পড়ল তখন স্লাইড বুঝাচ্ছিল সেই কালি হয়তো।শানও নিচু স্বরে বললো,
“বেশী লেগেছে?”
“না হালকা। একটা টিস্যু নিয়ে মুছে নে হয়ে যাবে। ”

শান পাশে রাখা টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিতে যাবে তখনই মনে হলো সোহার রুমালের কথা। সোহা বারবার বলেছে সেটা যেন ইউজ করে। এই প্রথম সোহা মন থেকে শানকে কিছু দিয়েছে তাও নিজের ওড়না দিয়ে শান সেটা ইউজ করবে না এটা কখনোই হতে পারেনা। তাই শান পকেট থেকে রুমালটা বের করে নিলো।রুমালটার দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হলো। এতো ভাজ করা কেন বুঝতে পারছে না শান। সকালেও সোহা যখন দিয়েছিল শান খেয়াল করেছিল তবে সময় ছিল না দেখে জিজ্ঞেস করা হয়নি। হঠাৎ তিমির বললো,

“ভাই রে ভাই এটা যে ভাবী উপহার দিয়েছে সেটা তোর মুখের হাসি দেখেই বুঝা যাচ্ছে।কতো ভালোবাসা। ”
তিমির হাসল কিছুটা সাথে শানও তারপর আবার বললো,
“এবার রুমাল নিয়ে জল্পনাকল্পনা শেষ হলে এইবার মুছে বাকি কাজটাও কম্প্লিট করে মিটিংটা শেষ কর। সবাই ওয়েট করছে। ”

তিমিরের কথা শুনেই শান নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। রুমালের ভাজ খুলে সেখানে হালকা একটু পানি নিয়ে মুখটা মুছে নিলো। তারপর আবার বলা শুরু করলো। উপস্থিত সবাই শানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাথে একে অপরের সাথে কানাঘুষা তো আছেই।অনেকে মিটিমিটি হাসছেও। তিমির পুরা স্পিচলেস হয়ে গেছে শানকে দেখে। সবার হঠাৎ এমন ব্যবহারে শান প্রচন্ড বিরক্ত হলো।

শান বিরক্তি নিয়ে বললো,
“হোয়াট হ্যাপেন? কি হয়েছে সবার?এভাবে আমার দিকে কি দেখছেন। কাজে মনোযোগ দিন। ”

শানের ধমক শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। কেউ মুখ খুলছে না। তখনই তিমির শানকে বললো,
“উঠ এখান থেকে চল আমার সাথে।”

তিমিরের কথা শুনে শান অবাক হলো,
“মিটিং মাঝ পথে রেখে কোথায় যাবো? ”

তিমির আর কোনো কথা না বলে শানের হাত ধরে টানতে টানতে মিটিং রুমের বাহিরে নিয়ে এলো।
“তিমির এটা কেমন ব্যবহার করছিস? কি হয়েছে বলবি তো? ”

“এখনি দেখতে পাবি চল আমার সাথে। ”

তিমির শানকে ওয়াশরুমে নিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।শানের চোখ আয়নার দিকে পড়তেই পুরা শকড হয়ে গেল। পুরো মুখে কালি লেগে আছে। তিমির বললো,
“কালি কোথা থেকে লাগলো। নিজেকে নিজেই হাসির পাত্র না বানালে চলছিলো না।দেখে ইউজ করবি তো।”

শান নিজেও বুঝতে পারছে না কালি গুলো কি করে লাগলো। শান পুরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। শান তিমিরকে বললো,
“তুই যা এখান থেকে আর মিটিংটা ক্লোজ কর। আমি পরে কথা বলে নেবো। ”
“বাট শান…..।”
শান হাত দেখিয়ে তিমিরকে থামিয়ে দিলো,
“গো তিমির। আর কথা বলিস না। ”

শানের কথা শেষ হতেই তিমির চলে গেল।শানের আর বুখতে অসুবিধা হলো না এটা সোহারই কাজ।কিন্তু মনটা মানতে চাইছে না। কেন করবে সোহা এমনটা। তারপরও একটা পরীক্ষা করার জন্য শান তাড়াতাড়ি নিজের পকেট থেকে রুমালটা বের করে পানির কলটা ছেড়ে তার নিচে রুমালটা ভেজাতেই কালো কালো কালি বের হতে থাকলো।শান নিজের চোখটা বন্ধ করে নিলো। রাগে শানের পুরো শরীরটা কাঁপছিলো। এজন্য না যে সবাই ওর উপরে হেসেছে। কষ্টটা এইজন্য হচ্ছিলো ও আজকে সোহার কাছে প্রথম উপহার পেয়ে যে খুশিটা হয়েছে সেটা একমুহূর্তে শেষ হয়ে গেল।শান ভেবেছিল হয়তো সোহার মনে ওর জন্য একটু একটু ভালো লাগা তৈরী হচ্ছে। কত আশা করেছিল এভার হয়তো ওদের সম্পর্কটা আর পাঁচটা স্বামী স্ত্রীর মতো হবে কিন্তু এক নিমিষেই মনটা ভেঙে খান খান হয়ে গেল। কষ্টটা সেখানেই লাগছে। খুশির জায়গায় সোহার উপরে কিছু অভিমান, রাগ, ক্ষোভ জমা হয়ে গেল। ফলস্বরূপ এই ঘটনা। এসব ভেবেই শানের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

আমি এখনো ওখানে ওভাবেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার গালে শানের হাতের পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট পরে গেছে। এতক্ষনে আমার চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরতে লাগলো। আমি সেলফিস? কি এমন করলাম সেলফিসের।আমি তো জাস্ট ওনাকে ফিল করাতে চেয়েছিলাম ঐদিন যখন উনি আমার সাথে এমনটা করেছিল তখন আমার কেমন লেগেছে। শানের কথা গুলো আমার হৃদয়ের এফোড় ওফোড় করে গেছে। না থাকবো না আমি আর উনার সাথে চলে যাবো ওনার থেকে অনেক দূরে। কথাটা বলেই আমি দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।



চারদিক মৃদু বাতাস বইছে তাতেও যেন হাড় কাঁপানো শীত লাগছে শানের। ছাদে যখন এসেছিল তখন সূর্যটা একদম মাথার উপরে ছিল। আর এখন সূর্যটাকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা বললেই চলে।সময় কত দ্রুত চলে যায়। চারদিকে কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। হাতের ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখল সন্ধ্যা ৬টা বাজে। দেখে শান অবাক হলো এতটা সময় ও ছাঁদে ছিল। হঠাৎ শানের সোহার কথা মনে হতেই শান উঠে দাঁড়ালো। দ্রুত ছাঁদ থেকে নেমে রুমে চলে আসলো।কিন্তু রুমের কোথাও সোহা ছিল না। একদম যা ভেবেছিল তাই। কোথায় গেছে এতো রাতে। শান রুমের সব জায়গায় খুজলো। তারপর ওর মায়ের ঘরেও গেল। আশ্চর্যের বিষয় শানের মা রুমে ছিলই না।

শান দ্রুত নিচে নেমে এলো। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো,
“রহিমা আন্টি। ও রহিমা আন্টি। ”

দুইবার ডাক দেওয়ার পরই রহিমা রান্নাঘর থেকে নেমে ছুটে এলো,
“জে মেঝো বাবা। কিছু কইবেন? ”
শান রহিমার সামনে এসে বললো,
“আম্মা কই ঘরে দেখলাম না। ”
“বড় ম্যাডাম তো সকালেই সোহা বউমনির বাপের বাড়ি গেছে। এহনো আসে নাই। ”

শান কথাটা শুনে অবাক হলো সোহাদের বাড়ি গেছে কই মা আমাকে তো বলে নাই।শান আবার বললো,
“আচ্ছা সোহাকে দেখেছো? বাড়ি বাহিরে গিয়েছে নাকি বাড়িতেই আছে। ”
“তা কইতে পারিনা । আমি রান্নাঘরে আছিলাম। ”

কথাটা শুনেই শান হতাশ হলো। শানের চিন্তাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। ঐ মেয়ের যে অভিমান একটা অঘটন ঘটিয়ে বসবে না তো। উফ কেন যে তখন মাথাটা এতো গরম করতে গেলাম। ও তো জানেই সোহা এমনই। তারপরও কেন মাথাটা চট করে গরম হয়ে গেল।শান পুরো বাড়ির প্রত্যেকটা রুম আরেকবার খুজে নিলো।কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না। মাথা ধরে যাচ্ছে কোথায় যেতে পারে? আচ্ছা সোহা নিজের বাবার বাড়ি যায়নি তো?ভাবতেই পকেট থেকে শান নিজের ফোনটা বের করলো। শান নিজের মায়ের নাম্বার ডায়েল করে কল দিল। সাথে সাথে ফোন রিসিভড হলো।

শান চিন্তিত কন্ঠে বললে,
“আম্মা সোহা কি তোমার সাথে ওই বাড়িতে আছে? ”
“এই বাড়িতে থাকবে কেন?আমি তো একাই আসছি।”
শান মন খারাপ করে বললো,
“ওহ। ”
মায়মুনা (শানের মা) চিন্তিত কন্ঠে বললো,
“কেন কি হইছে সোহা কি বাড়িতে নাই?তোর কন্ঠ এমন লাগছে কেন? ”
“কই কেমন লাগছে আসলে আমি এখনও অফিসে সকালে সোহা বলছিল তুমি নাকি ওদের বাড়ি যাবে তাই ভাবলাম ও তোমার সাথে গেল কিনা। এজন্যই জিজ্ঞাস করলাম। ”
মায়মুনা বেগম একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেন,
“তুই যেভাবে বলেছিলি আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম। তো তোর আজকে এতো লেইট কেন? ”
“ওই অফিসে একটা জরুরী কাজ ছিল তাই। আচ্ছা আম্মা এখন রাখি বাড়ি ফিরে কথা হবে। ”
“আচ্ছা। ”

মায়ের সাথে কথা বলে আরো চিন্তা বেড়ে গেল। অদ্ভুত বাড়িতে নাই, বাবার বাড়ি যায় নাই তাহলে গেল কই। শান নিজের মাথায় হাত দিলো। সোহাকে দেখতে না পেয়ে যেন নিজের কাছে নিজেকেই পাগল পাগল লাগছে। শান দৌড়ে গেল গেটের কাছে।গিয়ে দাঁড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করলো,

“সোহাকে যেতে দেখেছো বাহিরে?”
দাঁড়োয়ান জবাব দিলো,
“না স্যার ম্যাডাম বাহিরে যায়নি। ”
শান এইবার রেগেই বলে উঠল,
“অদ্ভুত! একটা মানুষ কি তাহলে উদাও হয়ে যাবে নাকি বাড়ি থেকে।”

শানের চিৎকার শুনে দাঁড়োয়ান প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। শান কি করছে ও নিজেও জানে না। নিজের হুশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। শানের চিৎকার শুনে মালি দৌঁড়ে এলো,
“কি হইছে বাবা? কিছু লাগবো? ”
শানের কান্না আসছে। ধরা গলায় বললো,
“চাচা সোহা কই দেখছেন ওরে। ”
“হয়। সেই সকাল থাইকা বাগানে বইয়া রইছে। ”

কথাটা শেষ হতে না হতেই শান পাগলের মতো ছুটল বাগানের দিকে।

অনেকক্ষন ধরে বাগানে বসে আছি। কান্না করতে করতে আমার চোখ ফুলে গেছে এখন তাকাতেও কষ্ট হচ্ছে সাথে মাথা ব্যাথা। ঠান্ডা হাওয়া লাগছে গায়ে। কিন্তু এখন শরীরের কষ্টের চেয়ে মনের কষ্টটা বেশী লাগছে। আমার বাবা মা কখনো আমার গায়ে হাত তোলেনি আর উনি…..। হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে বাট পারছিনা। মা যদি আমাদের বাড়িতে না যেত তাহলে হয়তো আমি আমার বাড়িতে চলে যেতাম বাট এখন আমার সেই রাস্তাটাও বন্ধ।

শান বাগানে এসে দেখল সোহা বাগানের বেঞ্চিতে দুই হাটুতে মুখ গুজে মাথা নিচু করে দিয়ে বসে আছে। শান আস্তে আস্তে সোহার কাছে এগিয়ে গেল। নিজের গায়ের ব্লেজারটা খুলে সোহার গায়ের উপর দিয়ে দিলো।

হঠাৎ গায়ের উপর গরম কাপড়ের মতো কিছু অনুভব হতেই আমি দ্রুত মাথা তুলে তাকালাম। মাথা তুলে তাকিয়ে শানকে দেখেই আমার ভিতর থেকে কান্নাগুলো ঠেলে আসতে চাইছে। আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম,

শান আমার পাশে বসে বললো,
“চলো অনেক ঠান্ডা পরেছে। বেশীক্ষণ বসলে অসুস্থ হয়ে যাবে।রুমে চলো। ”

আমি শানের পাশ থেকে উঠে একটু দূরে সরে দাঁড়ালাম। একটা কথাও বললাম না উনার সাথে। শান বেঞ্চ থেকে উঠে আমার সামনে এসে আমার হাত ধরে বললো,
“চলো। ”

শান আমার হাত ধরতেই আমি ওনার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“হাত ছাড়ুন। ”
শান হেসে বললো,
“ছাড়ব না। ”
আমি আরো গম্ভীর কন্ঠে বললাম,
“হাত ছাড়ুন বলছি।”
“না ছাড়ব না। পারলে তুমি ছাড়িয়ে নেও। ”

কথাটা বলতেই আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে এক ঝাটকা মেরে আমার হাত উনার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলাম। আর রেগে বললাম,
“একদম আমার হাত ধরবেন না। আমার যা খুশি হোক আপনি কে বলার। কোনো অধিকার নেই আপনার আমার উপর। ”

আমি যেতে নেবো তখনই শান আমার কোমড় ধরে হেচকা টান দিয়ে উনার সাথে মিশিয়ে নিলেন।
আমি কটমট করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“কি হচ্ছে বললাম না ছাড়ুন আমাকে। ”

আমি যতো ছোটাছুটি করছিলাম উনি আমাকে ততো শক্ত করে চেপে ধরলেন উনার সাথে। আমি উনার চোখের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আর উনি আমার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ উনি আমার সামনে আসা চুল গুলো কানের পিছনে গুছে দিয়ে বললো,

“ছাড়ব না তোমাকে। এভাবেই শক্ত করে জড়িয়ে রাখব তোমাকে।কারণ তুমি আমার স্ত্রী।তোমাকে সব ভাবে টাচ করার অধিকার আমার আছে। তুমি চাইলেও সেটা কেড়ে নিতে পারবেনা। তোমার সব কিছুর উপর আমার অধিকার আছে। ইনফেক্ট তোমার উপর আমার অধিকার সব চাইতে বেশী।তোমার কিসে ভালো হবে কিসে মন্দ হবে সেটাও দেখার অধিকার আমার আছে। তাই এই অধিকারের প্রশ্নটা কখনো আমাকে করো না ওকে। চলো রুমে। ”

আমি পূর্বের ন্যায় কঠোর গলায় বললাম,
“যাবো না আমি কোথাও। ছাড়ুন আমাকে। ”
“আমি আগেই তো বলেছি ছাড়ব না। ”
“ছাড়বেন না তাই তো। ”
শান মাথা নেড়ে বললো,
“হুম। ”

উনার তখনের চড়টা মনে হতে আমার এতো রাগ উঠলো আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য উনার বাহুতে নিজের সমস্ত রাগ নিয়ে জোরে একটা কামড় দিলাম। কামড় দিতেই উনি কুকিয়ে উঠে আমাকে ছেড়ে দিলেন।উনি ছাড়তে আমি উনার থেকে দূরে সরতে নেবো তখনই আবার উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তবে এবার পিছন থেকে। উনার এক হাত আমার পেটে আর একহাত দিয়ে আমার দুইহাত শক্ত কটে ধরে গলার কাছে নিয়ে রেখেছে। উনি আমার কানের কানে মুখ নিয়ে বললো,

“উফ এভাবে কেউ কাউকে কামড় দেয়। বুঝলাম যে লাভ বাইট দিচ্ছো তাই বলে এতো জোরে। আমি যদি দিতে শুরু করিনা পুরো শরীর দাঁগ হয়ে যাবে মনে রেখ তখন কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবেন।”

উনার এসব কথা শুনে আমার রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমি উনার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“তখন আমাকে এতো জোরে চড় মেরেও আপনার মনের শান্তি হয়নি এখন নাটক করছেন। কি করতে এসেছেন এখানে?”

শান আমার ঘাড়ে একটা চুমু দিয়ে বললো,
“ভালোবাসতে এসেছি। একটু শান্ত হয়ে আমার কথাটা শোনো। ”

আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,
“শুনবো না আপনার কথা। আপনার কথা আপনার প্রেমিকাকে গিয়ে শুনান। ছাড়ুন আমাকে। ”

আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছোটাছুটি করতে লাগলাম। কিন্তু উনার মধ্যে আমাকে ছাড়ার কোনো হেলদোলই দেখতে পেলাম না। এতক্ষন ধরে উনার সাথে ধস্তাধস্তি করতে করতে আমার যেটুকু শক্তি ছিল সব ফুরিয়ে গেল। যতোই হোক উনার শক্তির কাছে আমি কিছুই না। আমি ক্লান্ত হয়ে ছোটাছুটি করা বন্ধ করে দিলাম,

“শক্তি শেষ সোনা। নাকি আরো দেখানো বাকি আছে। কেন শুধু শুধু এই ছোট্ট শরীর নিয়ে আমার সাথে লাগতে আসো। জানোই যখন আমার কাছে তোমার হার সুনিশ্চিত। ”
উনার কথাটা শুনেই এতক্ষনের রাগ অভিমান গুলো আমার চোখে কান্না হয়ে বৃষ্টির ধারার মতো বইতে লাগলো। উনি এভার আমাকে ছেড়ে পিছন থেকে সামনে ঘুরালেন। আমি তখনও ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছিলাম। উনি আমার চোখের পানি দুই হাত দিয়ে মুছে ধীর কন্ঠে বললো,

“ডোন্ট ক্রাই পাখি। কেন কাঁদছো। দেখো মুখ চোখ ফুলে কি হয়েছে। আর কেঁদো না।স্যরি তো সোনা। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আমার রাগটা কন্ট্রোল করতে পারিনি তাই এমনটা করে ফেলেছি। প্রমিজ আর কখনো এমন হবে না। ”

আমার কান্না তখনও বন্ধ হয়নি। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে।শান আবার বললো,
“প্লিজ কান্না বন্ধ করো না ময়নাপাখি।”

আমি এভার ফুফাতে ফুফাতে বললাম,
“আমি আজকে যেই কাজটা করেছি তাতে আপনার ঠিক যতটা খারাপ লেগেছে আমারও সেদিন আপনার কাজে ঠিক একই রকম খারাপ লেগেছিল। এটা বুঝাতেই আমি কাজটা এক প্রকার মজা করেই করেছি। এজন্য দুঃখিত। বাট আপনি আমাকে শুধু শুধু ব্লেম করেছেন। আমি সেলফিস না। আমি কখনো কারো খারাপ চাইনি।আপনি কি করে আমাকে এতো খারাপ ভাবলেন। ”

কথাগুলো বলতে বলতে আমার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেল। সত্যি বলতে উনি আমাকে চড় মেরেছে খারাপটা আমার সেখানে লাগেনি। খারাপটা লেগেছে উনার কথা গুলোতে।

শান আমার দুই গালে হাত দিয়ে বললো,
“ওকে ওকে সোনা স্যরি বলছি তো আমি। আমি জানি তুমি কেমন? তাহলে কেন কষ্ট পাচ্ছো। আর যদি সেদিন তোমার সাথে যেটা করেছি সেটার কথা বলো তাহলে আমি বলবো আমার কাছে কারণ ছিল জান।”

আমি অবাক হয়ে বললাম,
“কি কারণ? ”
উনি ধীর কন্ঠে বললো,
“তোমাকে সেদিন এতো সুন্দর লাগছিলো যে আমি নিজেই তোমার থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। আমি চাইনি আমার বউয়ের দিকে আমি ছাড়া অন্য কেউ তাকাক তাই আমি ওরোকমটা করেছি।আর এটা করার জন্য আমি একটুও অনুতপ্ত নই আর না এটাতে কোনো ভুল আছে। ”

উনার এমন দৃঢ় কন্ঠে শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।উনি আর আমি এখন খুব কাছাকাছি বসে আছি বড়জোর হলে এক ইঞ্চি দূর হবে আমাদের। উনি আমার গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।অনুতপ্ত হয়ে বললেন,

“খুব লেগেছে না। উফ কতটা ফুলে গেছে। তুমি আমাকে যে শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নেবো। বিশ্বাস করো আমি এমনটা করতে চাইনি সুইটহার্ট। ওকে অপরাধ যখন আমি করেছি তার ক্ষতিপূরণও আমি দিবো।”

আমি মুগ্ধ হয়ে ওনার কথা শুনছিলাম। আমার চারপাশে যেন এক মুগ্ধতা ছেয়ে আছে। আমি এখনও তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। ক্ষতিপূরণ মানে? কেমন ক্ষতিপূরণ?

হঠাৎ আমার গালে উনার ঠোঁটের ছোয়া পেতেই আমি শিউরে উঠলাম।উনি আমার যে গালে থাপ্পর মেরেছিলেন সেই গালেই বারবার উনার ঠোঁট ছুয়ে দিচ্ছিলেন। আমার বুকের মধ্যে যেন একসাথে সব ধরণের বাদ্যযন্ত্র বাজছিলো। আবেশে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল তারপরও আমি নিজেকে কন্ট্রোল করে উনার থেকে দূরে সরে যেতে নিতেই উনি আমাকে আবার উনার কাছে টেনে নিলেন আর ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন,
“উহুম। আজ আর দূরে যাওয়া নয় শুধু কাছে আসা। ”
.
.#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_১৯
#সুরাইয়া_নাজিফা

আমি আর শান মাথানিচু করে বসে আমাদের সামনে শ্বাশুড়ী মা রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। হঠাৎ উনি আমার হাত ধরে টেনে তুলে দিলেন শানের পাশ থেকে আর আমাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,

“চল আজকে থেকে তুই আমার সাথে থাকবি। এই ছেলেটার সাথে আর থাকার দরকার নেই। ”

শ্বাশুড়ী মায়ের কথা শুনে আমি পুরো হতভম্ভ হয়ে গেলাম। মানে ঠিক শুনলাম তো কানে।এই খারুচের সাথে আর থাকতে হবে না। শানের মনে হলো ও আসমান থেকে সোজা জমিনে পড়ল। নিজের মাথা উচু করে আশ্চর্য হয়ে চোখ বড় বড় করে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার সাথে থাকবে মানে?”

শ্বাশুড়ী মা কটমট করে তাকিয়ে বললো,
“তাহলে কি তোর সাথে থাকবে? ”

শান বিরবির করে বললো,
“আমার সাথেই তো থাকার কথা। ”
“কেন? যাতে এভাবেই মেয়েটাকে আবার মারতে পারিস এজন্য থাকবে?”

শান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আমার এতো খুশি লাগছিলো। মনে মনে বলছিলাম বকো মা ভালো করে বকা দেও। ফাজিল লোক আমার এতো সুন্দর গালটা একদম লাল করে দিয়েছে।ব্যাথা করছে এতো। কতো শক্তি গায়ে। আমার গালটা এখনও পর্যন্ত জ্বলছে।

শান গোমড়া মুখে বললো,
“ভুল হয়ে গেছে মা। এইজন্য আমি ওকে স্যরি বলেছি। তুমি তো জানো আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না তাই…।”

শানের কথা শেষ হওয়ার আগেই শ্বাশুড়ী মা তেঁতে বলে উঠলেন,
“তাই ওর ওপরে তোমার রাগ ঝেড়েছো। এটা বলতে চাও। লজ্জা করেনা শান। আমরা তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছিলাম।নিজের বউয়ের গায়ে কি করে হাত তুলেছো তুমি এতো সাহস পাও কিভাবে। কখনো দেখেছো আমাদের পরিবারের কেউ নিজের বউয়ের গায়ে হাত তুলতে। আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না।তুমি তো জানো সোহা একটা বাচ্চা মেয়ে। যদি ও কোনো ভুল করে তোমার উচিত ছিল বুঝাপড়ার মাধ্যমে বিষয়টা সমাধান করে নেওয়া।ওকে ঠিক ভুলের পার্থক্য বুঝানো নাকি এভাবে মারপিট করা। তুমি তো যথেষ্ঠ ম্যাচিউর শান।এটলিষ্ট আমরা সবাই তো তাই জানতাম। এটা কেমন ম্যাচিউরিটি হলো। আরশ পালিয়ে যাওয়ার পর সোহাকে যখন তোমার হাতে তুলে দিয়েছিলাম তখন আমাদের সবার গর্ব হতো যে একজন ঠিক মানুষের হাতে সোহাকে তুলে দিয়েছি।সোহা তোমার সাথে ভালো থাকবে। এটা কি ভালো থাকার নমুনা? তুমি তো আমাদের সবার ধারণাকে মিথ্যা করে দিলে।”

আমার নিজেরও এখন অনেক খারাপ লাগছে। আমার নিজেরও তো দোষ ছিল তাই তো উনি এমন একটা কাজ করেছে তাহলে বকা উনি একা খাবে কেন? মাকে আমি শান, আরশ আর সাম্য ভাইয়াদের কখনো তুমি বলতে শুনিনি। এখন যখন বলছে নিশ্চয়ই অনেক রেগে আছে। মাকে দেখলেই বুঝা যায় শান এতো রাগ মায়ের থেকেই পেয়েছে এমন হুটহাট রেগে যাওয়া। এই এতো ভালো আর এই এতো রাগি।শান চুপচাপ শুনে যাচ্ছে। একটা কথারও প্রতিবাদ করছে না। বললেই তো হয় আমি ওনার সাথে কি করেছি।

উনি কিছু বলছে না দেখে আমি মাকে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“থাক না মা দোষ শুধু ওনার একার না আমারও আছে। ”

মা আমার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,
“হুম দোষ আছে তো। তোর দোষটাই বেশী। কেন তুই আমাকে বলিসনি শান তোকে মেরেছে আবার চুপচাপ ঘরে বসে ছিলি।নিজের স্বামীর দোষের উপর পর্দা দিচ্ছিলি। কে বলেছে তোকে এতো উদার মনের হতে। আমাকে কি তোর নিজের মা মনে হয় না। তাহলে কেন নিজের সুবিধা অসুবিধার কথা বলিস না। ”

আমি কান্না মাখা কন্ঠে বললাম,
“এভাবে বলছো কেন মা। তুমিই তো আমার মা।আমিতো…।”

আমার পুরা কথা শেষ হওয়ার আগেই মা বললো,
“আর একটা কথাও বলবি না তুই।ছেলেরা কি ভাবে ওরা বিয়ে করে নিয়েছে বলে কি মেয়েদের নিজেদের স্বাধীনতাও তারা নিয়ে নিয়েছে। যখন তখন গায়ে হাত তোলার পারমিশন পেয়ে গেছে। আজকে এর একটা হেস্তনেস্ত আমি করেই ছাড়ব। ”

তখন কান্না করতে করতে আমার গলার স্বর বসে গেছে। ঠিক ভাবে কথাও বলতে পারছিনা। তাই আমি আর কথা না বলে মায়ের কথা গুলোই শুনে গেলাম। শান এভার মুখ ফুটে বললো,

“স্যরি বলছি তো মা। ভুল হয়ে গেছে।আর হবে না। ”
“ভুল যখন হয়েছে ভুলের মাশুলও তো তোমাকে দিতে হবে। তাই আজ থেকে সোহা আমার সাথে থাকবে।তুৃমি সোহাকে ডিজার্ভ করো না। চল সোহা আমার সাথে। ”

কথাটা বলেই মা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তখনই শান পিছন থেকে অসহায় ভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“মা শোনো না আমার কথা। ”
মা পিছনে ফিরে বললো,
“একদম চুপ। সবকথা শেষ আর কোনো কথা নেই। ”

মা আবারও আমাকে নিয়ে চললো। আমার খুব ইচ্ছা হলো একবার শানের মুখটা দেখতে। তাই ঘাড়টা একটু ঘুরিয়ে দেখলাম শান মুখ গোমড়া করে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। উনাকে দেখে কেন জানি আমার এতো হাসি পাচ্ছে। আহারে বেঁচারা দেখে মনে হচ্ছে বিধবা হয়ে গেছে। স্যরি ছেলেদের তো বিধবা বলে না বিপত্নীক। ভাবতেই আমার পেট ফেঁটে হাসি আসছে।



আমি বিছানার উপর বসে আছি আর মা আমার গালে বরফ ঘসে দিচ্ছে। থাপ্পরটা খুব ভালো ভাবেই পড়েছে গালে। গালের একপাশটা ফুলে গেছে। মা গালে কিছুক্ষন বরফ ঘসে দিয়ে বললো,
“এখনও ব্যাথা করছে? ”
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
“না ঠিক আছে। ”
মা আমার গালে হাত বুলিয়ে বললো,
“ইশ গালটা কতটা ফুলে গেছে।চিন্তা করিস না কমে যাবে ব্যাথা কিছুক্ষন পর। আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না শান এমনটা করেছে। ”

আমি এবার ভয়ে ভয়ে বললাম,
“মা একটা কথা বলি? রাগ করবে না তো? ”
“বল না কি বলবি। ”
“আসলে দোষটা আমারই প্রথম ছিল। ”

তারপর আমি মাকে সবটা খুলে বললাম। কথাগুলো বলে আমি মাথানিচু করে ফেললাম। না জানি এরপর মা কি বলবে। যদি আমাকেও বকে। এতো ভয় লাগছিলো। তখনই খিলখিল করে হাসির শব্দ শুনে আমি পুরো বিষ্মিত হয়ে গেলাম। আমি মাথা তুলে তাকাতেই দেখালাম মা হাসছে। আমি ফ্যালফ্যাল করে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মা হাসি থামিয়ে বললো,

“তোদের নিয়ে আর পারিনা।হাসতে হাসতে পেট ফেঁটে যাওয়ার উপক্রম। একদম যা করেছিস খুব ভালো করেছিস।শানও তো সেম কাজ করেছে তোর সাথে। তবে একটা কথা এরপর থেকে অফিসে যাওয়ার সময় এমনটা করিস না। বাসায় থাকলে ইচ্ছামতো পিছনে লাগবি বুঝলিতো। ”

মায়ের কথা শুনে আমিও হেসে দিলাম। হায় আমার শ্বাশুড়ী মায়ের দিকে কারো নজর না লাগে। এমন শ্বাশুড়ী থাকলে জীবন তো পুরাই ফুরফুরা হয়ে যাবে। মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমিও হাসলাম তারপর হাসি থামিয়ে বললাম,
“না আর উনার পিছনে লাগবো না। অনেক শিক্ষা হয়ে গেছে আমার।”
মা বললো,
“এজন্যই তো শানকেও একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার। কয়েকদিন এখানেই থাক।ছেলেরা চাইলেই হাতের কাছে সব পয়ে যায় তো তাই মেয়েদের কদর করতে জানে না। এবার বুঝবে বউ ছাড়া ঘর কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। ”

রাতে আর নিচে গিয়ে খাইনি। রহিমা আন্টি ঘরেই আমার খাবার দিয়ে গেছিল। মায়ের কড়া আদেশ যেন শানের সামনে না যাই। শান একটু ছটফট করুক আমাকে না দেখে।তাই খেয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানার একপাশে আর মা অন্যপাশে।

শান বিছানায় শুয়ে আছে। যখন শুয়েছিল তখন রাত দশটা আর এখন একটা বেজে গেছে অদ্ভুত এখনো ঘুম আসছে না। শুধু এপাশ ওপাশ করছে। বিছানার ওইপাশে তাকালেই মনটা আনচান আনচান করছে। অন্যদিন চোখ খুললেই সোহার মুখটা দেখতে পেতো। ঘুমন্ত মুখ কি স্নিগ্ধ লাগতো। প্রতিদিন রাতে সোহা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর অনেকটা সময় নিয়ে শান সোহাকে দেখে তারপর ঘুমায়। হয়তো সম্পর্কটা এতো গভীর ছিলনা কিন্তু প্রিয় মানুষটাকে সবসময় চোখের সামনে দেখলেও মনে শান্তি লাগে।কিন্তু আজকে সেই শান্তিটাই মনে পাচ্ছে মা যে চোখটা বুজবে। বিছানার ওইপাশটাও কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। প্রতিদিনের মতো যেমন কোলবালিশ দেওয়া থাকে আজও তেমন ভাবেই কোলবালিশ দিয়ে একপাশে সুয়েছে শান।

“উফ আগে যদি জানতাম একটা থাপ্পর মারার কারণে নিজের বউয়ের থেকেই দূরে থাকতে হবে তাহলে এই থাপ্পরটা হয়তো আমি নিজেই নিজের গালে মারতাম। এভাবে কি করে থাকবো সোহাকে ছাড়া। ”

শান বেশ বুঝতে পারল আজকে আর ঘুমাতে পারবেনা তাই উঠে বসল।একনজর সোহাকে দেখতেই হবে।

শান রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ল।ঘুটিঘুটি পায়ে পৌঁছেও গেল রুমের দরজার কাছে। দরজাটা হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। রুমের মধ্যে আবছা আলোতে শান স্পষ্ট দেখতে পেল সোহাকে।কি শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায়ও আবছা আলোতে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।ঘুমের মাঝেও ঠোঁটের কিনারে এক চিলতে হাসি লেগে আছে। শানের কেন জানি খুব হিংসা হলো। ওখানে ও ঘুমাতে পারছে না আর এখানে উনি তো খুব মজাতেই ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ শানের খেয়াল হলো বিছানার এককোনে এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে সোহা ।একবার ঘুরলেই সোজা বিছানা থেকে পড়ে যাবে। শান ভাবল ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে আসবে। ভেবেই এক পা বাড়াতেই পিছন থেকে কেউ শানের কাঁধে হাত রাখল। শান পিছনে ঘুরেই চমকে গেল। খানিকটা তুতলিয়ে বললো,

“ম মা তুমি?ঘুমাওনি?”
“কেন বাবা তুমি দেখতে পাওনি বুঝি আমি সোহার পাশে নেই। চোখটা শুধু একদিকে স্থির না রেখে চারপাশে ঘুরালেই তো বুঝতে পারতে।
মায়ের কথা শুনে শান লজ্জায় পড়ে গেল। মাথানিচু করে বললো,
” না মানে…।
মায়মুনা চোখের ইশারা করে বললো,
“কি মানে মানে করছো বাবা। এতরাতে এখানে কি চাই?”
হঠাৎ প্রশ্ন করাতে শান থতমত খেয়ে গেল কি বলবে বুঝতেছে না হঠাৎ মুখ ফসকে বলে দিলো,
“ঐ জগিং করতে এসেছিলাম। ”
কথাটা বলেই শান নিজেই নিজের জিভ কেঁটে কপালে হাত দিলো সর্বনাশ। একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“মানে ঘুম আসছিলো না তাই হাঁটছিলাম। ”
মায়মুনা কিছুটা টোন কেঁটেই বললো,
“ওহ জগিং আজকাল মানুষ রাত একটা বাজেও করে জানতাম না তো। তা জগিং হাঁটাহাঁটি সব শেষ? ”
শান ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও মাথা নেড়ে বললো,
“হুম। ”
মায়মুনা খানিকটা হেসে বললো,
“তাহলে এইবার গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ”
কথাটা বলতেই শান রুমের ভিতর পা বাড়ালো। শানের মা চিৎকার করে বললো,
“কি ওদিকে কই যাচ্ছো বাপ আমার?”
শান একদম ইনোসেন্ট একটা লুক নিয়ে বললো,
“তুমি তো বললে ঘুমাতে যেতে তাই যাচ্ছি। ”
মায়মুনা সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“তোমার রুমে ঘুমাতে যেতে বলেছি। এটা কি তোমার রুম?”
শান হাসার চেষ্টা করে বললো,
“এটা আমার রুম না তাই না। ভুলে গেছিলাম। ”
মায়মুনা দুইহাত বুকে ভাজ করে বেঁধে বললে,
“হুম আজকাল সবকিছুই ভুলে যাচ্ছো। যাও এবার নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাও। ”
শান অসহায় ভাবে বললো,
“ঘুম আসেনা তো।”
“ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ”
শান নিজের মনেই বললো,
“ঘুমের ঔষুধ তো এখানে রেখে যাচ্ছি ঘুম আসবে কেমনে। ”

তারপরও মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল সাথে মায়মুনাও। যদিও যেতে ইচ্ছা করছে না তাও চুপচাপ চলে গেল। শান যেতেই ছেলের এসব কান্ড মনে করে মায়মুনা খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।



সকালে আজকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম। কারণ আমাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে। দশটায় ক্লাস আছে। তাই আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে উঠে বসলাম।হঠাৎ রুমের দিকে চোখ যেতেই আমার চোখ পুরা ছানা বড়া হয়ে গেল।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম সবদিকে। এসব কে করেছে?

আমি দ্রুত মাকে ডেকে তুললাম,
“মা ও মা দেখোনা পুরো ঘরের কি অবস্থা। ”
আমার ডাক শুনে মা ধরফরিয়ে উঠে বসল,
“কি হয়েছে। সকাল সকাল চেঁচাচ্ছিস কেন?”

আমি মাকে চোখের ইশারায় বললাম ঘরের দিকে তাকাতে। আমার চোখ অনুসরন করে মাও পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে থ মেরে বসে রইল।উনি একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার রুমের দিকে ওনাকে দেখেও মনে হচ্ছে উনিও আমার মতো শকড হয়ে গেছে। না হওয়ার কি আছে পুরো ঘরের ভিতরে রঙিন কাগজে বিভিন্ন কালারের রং দিয়ে লিখা,

“স্যরি ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো হবে না। এইবার তো মাফ করে দেও। ”

সেটাও আবার পুরো রুমের দেওয়ালে দেওয়ালে লাগিয়ে রেখেছে। বিছানার উপরে আমাদের কোলের মধ্যে মাথার পাশে অনেক গুলো টেডিবিয়ার যার মধ্যেও লিখা,
“স্যরি মাফ করে দেও প্লিজ ”

শুধু তাই নয় মেঝেতেও রং আর জরি দিয়ে বড় করে লিখা “দুঃখিত”

আর তারপাশেই শান হাটু গেড়ে দুই কানে হাত দিয়ে কাচুমাচু মুখ করে বসে।

আমি দুই তিনবার চোখ ডলে তারপর আবার তাকালাম। আমার কেন জানি বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এসব স্বপ্ন দেখছি। সকাল সকাল এতো বড় সারপ্রাইজ যেন হজমই করতে পারছি না। আমি মাকে বললাম,

“মা এসব কি সব সত্যি নাকি আমি ভুল দেখছি। ”
মাও আমার মতো অবাক হয়ে বললো,
“তাই তো দেখছি রে। ”

তখনই শান অসহায় ভাবে বলে উঠলো,
“প্লিজ লেডিসরা বাংলা ইংলিশ দুইভাবেই মাফ চেয়ে নিয়েছি এইবার তো মাফ করে দেও। ”

শানের কথা শুনে আমার এতো হাসি পেলো কিন্তু আমি নিজের হাসি আটকে চুপচাপ বসে রইলাম।
মা আমাকে বললো,
“চল তো সোহা আমাদের অনেক কাজ আছে। এবাবে বসে থাকলে হবে না।তুই তো আবার ভার্সিটিতেও যাবি যা যা রেডি হয়ে নে। ”
আমিও মায়ের কথায় সায় দিয়ে বললাম,
“হুম মা ঠিক বলেছো। কারো মতো আমাদের তো আর এক্সট্রা সময় নাই যে বসে বসে ডং দেখবো।”

আমি আর মা শানের পাশ কাঁটিয়ে চলে আসলাম। যেন আমরা শানকে দেখতেই পাইনি। শান আমাদের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। রুমের বাহিরে এসে আমি আর মা হেসে দিলাম। মা বললো,

“ভালো জব্দ হয়েছে। আরেকটু নাচাতে হবে। এতো তাড়াতাড়ি গলা যাবে না বুঝলিতো। দেখি তোকে পাওয়ার জন্য আর কি কি করে। ”

তারপর ফ্রেস হয়ে নিলাম।আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলাম না গালে এখন আর থাপ্পরের দাগটা দেখা যাচ্ছেনা। আর বরফ দেওয়ার কারণে ফোলাটাও কমে গেছে। মা রুম থেকে আমার জন্য একটা জামা এনে দিলো কিন্তু আমাকে যেতে দেয় নি। মা তো পুরো কোমড় বেঁধে নেমেছে। এমন করে হয়তো উনাকে আমিও শাস্তি দিতে পারতাম না। আমার প্রচুর মজা লাগছে এসব দেখে। ভার্সিটিতে যাবো তাই একেবারে রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে এলাম।আজকে দেখালাম শান আমাদের আগে এসে বসে আছে। আমরা দেখেও না দেখার মতো করে টেবিলে বসে পড়লাম। একটা কথাও বললাম না শানের সাথে। তবে বেচারার মুখ দেখে আমার বড্ড মায়া লাগছিলো। একরাতের মধ্যে মুখ চোখ শুকিয়ে একাকার অবস্থা। মনে হচ্ছে সারারাত না ঘুমিয়েই কাঁটিয়েছে।আমি উনার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। মা আর আমি টেবিলে বসে প্লেট উল্টাতে সেখানে খেয়াল করলাম প্লেটের মাঝেও “স্যরি” লিখা। কালকে থেকে আজকে পর্যন্ত শানের এতোটা যত্ন, আমার এতো কদর করা দেখে আমার ইচ্ছা হচ্ছিল না ওনাকে এমন করে ছটফট করাতে বাট মায়ের উপর কিছু বলতেও পারবো না। আমি মায়ের দিকে তাকাতেই মা মুখ টিপে খানিকটা হাসল যেন শান না দেখে। তারপর বললো,

“রহিমা এখানে নতুন প্লেট নিয়ে আয়। আজকাল খাবারের প্লেটটাকেও মানুষ নিজের ফাইল মনে করে আঁকাআঁকি করে। ”
মায়ের কথা শুনে শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো এতো কিছু করছে তারপরও এদের মন গলাতে পারছে না।এতো কঠিন কেন মেয়েদের মন। আর কি করলে যে এরা স্বাভাবিক হবে আল্লাহ জানে।

রহিমা আন্টি আবার নতুন প্লেট এনে দিলো। আমি মা আর আমার প্লেটে খাবার বেড়ে দিলাম। শানের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে যাবো তখনই মা আমার হাত ধরে বললো,
“তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। তোর যেতে হবে যারটা পারলে সে বেড়ে খাবে নাহলে খাওয়ার দরকার নেই। ”

কথাটা শুনে আমি বাটিটা নিচে রেখে দিলাম। শান যে কষ্ট পেয়েছে সেটা উনার মুখ দেখেই আমি বেশ বুঝতে পারছি। শানের প্লেটে রহিমা আন্টি খাবার বেড়ে দিলেন। শান প্লেটে খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলো কিন্তু একটুও মুখে তোলেনি। একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি প্লেটের মধ্যে হাত ঘুরাচ্ছিলাম আর আড়চোখে উনাকেই দেখছিলাম কেন জানি আমারও খেতে মন চাইছে না। হঠাৎ আমার পায়ের উপর কারো পায়ের ছোঁয়া পেতেই আমি আতকে উঠলাম। শানের দিকে তাকাতেই দেখালাম শান ঠোঁটের ইশারায় “স্যরি” বলছে। আমি আমার পা সরিয়ে আবার নিচের দিকে তাকালাম। কিছুক্ষন পর আবার শান নিজের পা দিয়ে আমার পায়ে শুরশুরি দিলো।আমি নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। বারবার উনার স্পর্শে আমি শিউরে উঠছিলাম। তাই পা টা সরিয়ে নিলাম। আমি জানি উনি আবারও একই কাজ করবে তাই আমি আস্তে আস্তে আমার পা গুলো উপরে তুলে নিলাম।

মাত্র একটু রুটি ছিড়ে মুখে দিলাম তখনই মা চিৎকার করে উঠল,
“পায়ের মধ্যে এমন বিরবির করে কিসে? ”

মায়ের কথা শুনে আর বুঝতে বাকি রইল না যে এটা শানেরই কাজ। আমি মুখ চেপে হাহা করে হেসে দিলাম আর হাসতে হাসতে বললাম,
“মা তোমার টেবিলের নিচে মস্ত বড় একটা বিড়াল হানা দিয়েছে এখানে আর বসা সেফ না যেকোনো সময় আছড়ে দিতে পারে। ”

মা আমার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি আরো জোরে জোরে হেসে দিলাম। শান আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তারপরও আমার হাসি থামাতে পারলাম না। শান রাগ করে উঠে চলে গেল খাবার টেবিল থেকে। এরপর আমি ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বের হবো কিন্তু শানকে আর দেখিনি। মা রফিক আঙ্কেলকেই বললো আমাকে স্টেশন অব্দি ছেড়ে দিতে। আমিও উনার সাথেই চলে গেলাম।

ক্লাস শেষ করে ডিপার্টমেন্টের বাহিরে আসতেই হঠাৎ কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে বলে উঠল,
“সোহা। ”
ডাকটা শুনে পিছনে তাকাতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। এই মাথাব্যথা এখানে কি করে।
.
.
চলবে

বিঃদ্রঃ উফ বেচারা কতবার কতভাবে মাফ চাইল এইবার আপনারই বলুন শানকে কি মাফ করবো না শ্বাশুড়ী মায়ের থিওরি ইউজ করব 🤣😜জানাতে ভুলবেন না।
চলবে

পর্বঃ১৭-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here