এক শহর ভালোবাসা পর্ব ৪১+৪২

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৪১
#সুরাইয়া_নাজিফা

এইমাত্রই গাড়িটা এসে পৌঁছেছে শানদের বাড়ির সামনে। আমি একবার বাহিরের দিকে তাকালাম কিছুদিনের ব্যবধানে বাড়িটা যেন নতুন নতুন লাগছে। চারপাশে আলোর রোশনাই চোখ ধাঁধিয়ে যাবার উপক্রম। একটা বাড়ি অন্ধকার করে দিয়ে অন্যবাড়িকে আলোয় আলোকিত করে সাজানোকেই হয়তো মেয়ে বলে। আমি চোখটা নামিয়ে নিলাম। বাড়ির ভিতর থেকে সবাই দৌঁড়ে এলো আমাদের নিয়ে যাবার জন্য। যদিও সবাই আমার পরিচিত তাও সবকিছু নতুন নতুন লাগছিল। আমি বের হওয়ার আগে শান বের হয়ে আমার সামনে হাত বারিয়ে দিল,

“ওয়েলকাম টু মাই হাউস ফর দ্যা সেকেন্ড টাইম সুইটহার্ট। ”

আমি শানের দিকে এক নজর তাকিয়ে মুচকি হেসে শানের হাতে হাত রেখে বেরিয়ে এলাম। আমাকে দেখেই শানের ফুফাতো বোন সানিয়া দৌঁড়ে এলো। আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ওয়েলকাম মেজ বৌমনি। ”
আমি মিষ্টি হেসে বললাম,
“ধন্যবাদ কিউটি। ”

তারপর ও আপুর কাছে গিয়ে একই রকমভাবে ওয়েলকাম জানালো। আমাদের সবাই ফুলের পাঁপড়ি ছড়াতে ছাড়াতে বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত নিয়ে এলো। দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম শ্বাশুড়ী মা দাঁড়িয়ে আছে। মাকে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি খেলে গেল। পাশেই ফুফু শ্বাশুড়ী দাঁড়িয়ে। এই মহিলার মুখে আজও হাসি নেই মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আজও পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না যে এই মহিলার আমাকে নিয়ে এতো কি সমস্যা। যাইহোক ওনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম। প্রথমে আমি আর শান গিয়ে বাড়ির প্রত্যেক গুরুজনকে সালাম করলাম। সবাই আমাদের মাথায় হাত দিয়ে মন ভরে দোয়া করলেন। এরপর স্মৃতি আপু আর আরশ ভাইয়া সবাইকে সালাম করার জন্য এগিয়ে এলো। শান সহ সবাইকে সালাম করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আমি আঁতকে উঠে বললাম,

“আরে এসব কি করছো তোমরা আমি কেন?”

ফুফু শ্বাশুড়ী মুখ গোমড়া করেই বললেন,
“সম্পর্কে তুমি ওদের বড়ই হও তাই তোমাকে সালাম করবে এটাই স্বাভাবিক এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?কি হলো আরশ তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন দ্রুত এই পর্ব শেষ কর আরো কাজ আছে। ”
আরশ ভাইয়া আর আপু আবারও এগিয়ে আসতে আমি পিছিয়ে গিয়ে বললাম,
“সম্পর্ক তো আমাদের শুধু একটা না তাই না আরো একটা সম্পর্ক আছে আমার যেখানে আমি সবার ছোটই হই তাই আমি চাই না আমি এমন একটা অস্বস্থি কর পরিস্থিতিতে পড়ি।”

ফুফু শ্বাশুড়ী আমার দিকে কটমট চোখে তাকালো শ্বাশুড়ী মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আচ্ছা ও যখন চাইছে না তখন থাকুক না।করতেই হবে এমন তো কোনো কথা নেই। ”

আমার মুখে হাসি ফুঁটে উঠল।আমি জানতাম কেউ না বুঝলেও মা ঠিক আমাকে বুঝবে।
আমি হেসে আরশ ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
“তবে আজকে তোমার কাছে আমার কিছু চাওয়ার আছে ভাইয়া।”
আরশ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“যা খুশি চাইতে পারো তোমার অধিকার আছে। আমার সামর্থ্য থাকলে সেটা অবশ্যই দিবো। ”
“কথা দিচ্ছো তো?”
“দিলাম। ”

আমি আপুর হাত আরশ ভাইয়ার হাতে দিয়ে দিলাম।শান সহ সবাই বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

আমি বললাম,
“বড়ভাবী বা ছোট বোন হিসেবে আজকে তোমার কাছে ছোট্ট একটা জিনিস চাইবো সেটা তুমি আদেশ বা অনুরোধ যেটাই ভাবো আজকে থেকে আমার বোনের যে হাতটা ধরেছো সেই হাত যত ঝড়, বাঁধা,বিপত্তি যাই আসুক না কেন কখনো ছাড়বে না। কখনো যেন আমার বোনের চোখ থেকে একফোঁটা পানি না পড়ে সব সময় এভাবেই সব পরিস্থিতিতে ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে কি থাকবে তো?”

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওদের দিকে আরশ সহ সবাই পুরো স্পিচলেস হয়ে গেছে। আমি এমন একটা কথা বলবো সেটা হয়তো উপস্থিত কেউই ভাবতে পারেনি।

আরশ একটা লম্বাশ্বাস ফেলে বললো,
“তুমি যখন কিছু চাইবে বলেছিলে আমি ভেবেছিলাম তোমার জন্য কিছু চাইবে কিন্তু তুৃমি তো প্রথম থেকেই আমাকে ঋণী করে রেখেছো আজ আরো বেশী করে ফেললে।তোমার মনটা অনেক বড় ভাবীজান। তুমি তোমার জন্য কিছু চাইলে সেটা হয়তো আমার দেওয়ার সামর্থ্য ছিল কিন্তু যা চাইলে সেটা জানিনা আমি ঠিকভাবে পালন করতে পারবো কিনা তবে কথা দিচ্ছি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তোমার কথা রাখার চেষ্টা করবো। ”

স্মৃতি চোখে পানি নিয়ে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে। যেই মেয়েটাকে ও এখন পর্যন্ত ছোটই ভেবে এসেছে সে কেমন জানি চোখের সামনে হঠাৎ একজন দায়িত্ববান মানুষ হয়ে গেল। যে বড় বোনের মতো ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর মাথার উপর।

আমি আপুর চোখের পানি মুছে দিয়ে হেসে বললাম,
“ধন্যবাদ ভাইয়া। ”
“উহুম ধন্যবাদ নয় এত বড় মনের পরিচয় দিয়েছো তাই বড়ভাবী হিসেবে একটা সালাম তো তোমার প্রাপ্য কি বলো?”
“না না লাগবে না। ”
“লাগবে এটা আমার ইচ্ছা স্মৃতি না করুক আমি তো করতেই পারি। ”

আমি লজ্জা পেয়ে নিজের মুখ ডেকে নিলাম। শান কানে কানে বললো,
“হায় মেরী জান এমন এমন কাজ করো মাঝে মাঝে আমি কনফিউশনেই পড়ে যাই যে এটা আমার সেই পিচ্ছি বউটা তো সবাইকে ইমোশনাল করে দিলে। ”

আমি শানের দিকে তাকালাম। শান ঠোঁটে একটু দুষ্টমির হাসি ফুঁটিয়ে তুলে বললো,
“কথাবার্তা শুনে তো মনে হচ্ছে বড় হয়ে গেছ তাহলে আজকে আর ছাড়াছাড়ি হবে না কোন কি বলো?”

উনার কথা শুনে আমার হিচকি উঠে গেল আর চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম। কি সর্বনাশা কথা! শান হেসে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল।


আমি আমাদের রুমে বসে আছি লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে। শানের জন্য অপেক্ষা করছি। চারপাশে মোমের হালকা আলো আর ফুলের ঘ্রাণে ঘরটা মোহনীয় লাগছে। জানালার সাদা পাতলা পর্দা গুলো ফুরফুর করে উড়ছে। বাহিরে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। আমার কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। বুকের ভিতরে হৃদপিন্ডের লাফালাফিটা যেন দ্বিগুন হয়ে গেছে।বসে থাকতেই অস্বস্থি হচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না।তারউপর শান তখন যেই কথা বললো এতে তো ভয় আরো বেশী লাগছে। নিজের ভাবনায় নিজেই নিজের মাথায় একটা গাট্টা মারলাম এতগুলো দিন হয়ে গেছে এটলিষ্ট সম্পর্কটা এখন তো স্বাভাবিক করা প্রয়োজন। ভাবতেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। একটা লম্বাশ্বাস ফেলে নিজেকে তৈরী করতে থাকলাম শানের জন্য।

অনেকক্ষন ধরে বসে আছি কিন্তু শানের আসার কোনো খবর নেই। আমি বিরক্ত হয়ে ঘোমটাটা খুলে ফেললাম। বিছানা থেকে নামার জন্য এক পা নিচে দিতে যাবো তখনই দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করল শান। শানকে দেখেই আবার দ্রুত বিছানার উপর ঘুটিশুটি মেরে ঘোমটাটা টেনে দিলাম। শান এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে আর আমার হৃৎপিন্ডের ধুকপুক শব্দটা যেন আরো বেড়ে যাচ্ছে। আমি নিজের শাড়ী খাঁমছে চোখ মুখ খিঁচে বসে রইলাম। শান এসে আমার সামনে বসলো। তারপর আমার ঘোমটাটা ফেলে দিলেন আমি কেঁপে উঠলাম।

শান আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উপরে তুলে বললো,
“বি নরমাল সুইটহার্ট এমন রোবটের মতো হয়ে আছো কেন? ”
আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলাম,
“কি ব্যাপার কথা বলবে তো? এমন বিহেভ করছ যেন এটা আমাদের প্রথম দেখা। ”

শান হাসলো। আমার গলা যেন বসে গেছে কথা না বলতে বলতে আমি গলাটা পরিষ্কার করে বললাম,
“আসতে এতটা সময় লাগলো? ”
শান আমার একটু কাছে এগিয়ে এসে বললো,
“অপেক্ষা করছিলে বুঝি? ”
আমি একটু পিছিয়ে গিয়ে বললাম,
“আজকে রাতে তো এমনটাই কথা ছিল। ”
শান আমাকে টেনে উনার কাছে নিয়ে আসলো চোখে মুখে দুষ্টমির রেখা ফুটিয়ে তুলে বললো,
“আজকে রাতে তো আরো অনেক কিছুরই কথা আছে তাহলে সেসবও হবে বলছো। ”
আমি চোখ নিচু করে বললাম,
“জানি না। ”

শান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সোহার মুখের দিকে। তারপর বললো,
“আচ্ছা গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেও। ”

কথাটা বলে শান সরে গেল। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমি আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে এগোতে নেবো তখনই শান বললো,
“দাঁড়াও তোমার চেন্জ করতে সময় লাগবে আগে আমি চেন্জ করেনি তারপর তুৃমি। ”

কথাটা বলেই শান নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। আমি ভাবলাম যতক্ষন শান আসবে ততক্ষনে গয়না গুলো খুলে রাখি। আমি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম আস্তে আস্তে সব গয়না গুলো খুলতে শুরু করলাম প্রায় খোলা শেষ সব কিন্তু নেকলেসে গিয়ে আটকে গেছি। শান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বেডে এসে বসল। আমি শুধু নেকলেসটা নিয়ে টানাটানি করছিলাম। কিন্তু অনেকক্ষন ধরে টানাটানি করেও কোনো লাভ হলো না।

“কি হয়েছে?”
আমি শানের দিকে ঘুরে বললাম,
“জানি না এটা খুলছেনা। ”
“দেখি আমি খুলে দিচ্ছি। ”
“না থাক আমি ট্রাই করে দেখি। ”
“এতক্ষন তো ট্রাই করলে হয়েছে কিছু তাহলে সারারাত করলেও হবে না দেখি ঘুরো পিছনে। ”

কোনো উপায় না পেয়ে আমি আয়নার দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। শান এসে আমার পিছনে দাঁড়ালো। শানের হাত আমার ঘাড়ে লাগতেই আমি শিউরে উঠলাম শান খোলার ট্রাই করতে লাগল। কিছুক্ষন পর আমি ধীর কন্ঠে বললাম,
“হয়েছে? ”
“কিভাবে প্যাঁচিয়ে ফেলেছো god knows ওয়েট। ”

কথাটা বলেই উনি আমার ঘাড়ের দিকে ঝুকলেন হঠাৎ উনার ঠোঁটের স্পর্শ লাগতেই আমি পুরো জমে গেলাম নিজের শাড়ী শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে রইলাম। বুকের মধ্যে সব ইনস্ট্রুমেন্টস যেন একসাথে বাজছে। খুব দ্রুত নিঃশ্বাস পড়ছিলো। নড়াচড়া বাদ দিয়ে পুরো স্থির হয়ে রইলাম

“ওকে হয়ে গেছে। ”

শান আমার গলা থেকে নেকলেসটা খুলে দিলো আমি নেকলেসটা হাতে নিয়ে রেখে দিলাম আর শানের সামনে থেকে দৌঁড়ে সরে চলে গেলাম একটা থ্রীপিস নিয়ে ওয়াশরুমে। শাড়ী চেন্জ করে থ্রীপিসটা পড়ে নিলাম। তারপর হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। উফ এতক্ষন কি ভার ভার লাগছিলো শরীর এখন হালকা লাগছে।কিছুক্ষন ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। কেন যেন ভয় লাগছে প্রচুর। যতই ফ্রী হওয়ার ট্রাই করছি তত বেশী ভয় লাগছে। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে নিজের বুকের মাঝে হাত রেখে একটা লম্বাশ্বাস নিলাম। তারপর দরজা খুলে বের হয়ে আস্তে আস্তে রুমের ভিতরে এগিয়ে আসলাম কিন্তু কিছুটা এগোতেই পা যেন আর সামনে যেতেই চাচ্ছে না। শানের সাথে চোখাচোখি হতেই লজ্জা লাগছে প্রচুর।

“দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

হঠাৎ শানের কন্ঠ শুনতেই ঘাবড়ে গেলাম তুতলিয়ে বললাম,
“ন না ম মানে ঐ আমার একটা জিনিস পড়েছে এখানে সেটাই খুঁজছিলাম।”

কথাটা বলেই আমি এদিক ওদিক খোঁজার অভিনয় করতে লাগলাম শান আমার সামনে এসে দাঁড়ালো আর কিছু না বলেই আমায় কোলে তুলে নিলো আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“ক কি করছেন? ”
“তোমার না মানে ঐ নামে যাই হারিয়েছে সেটা কাল খুঁজো এখন এই মৃদু আলোতে খুঁজে পাবে না। ”

শান এনে আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। শান আমার পাশে বসে আমার একগালে হাত রেখে আমার অনেকটা কাছে চলে এলো।শানের শীতল হাতের স্পর্শে আমি কেঁপে উঠলাম। ভয়ে প্রচুর পরিমাণে ঘামতে লাগলাম আমি।

“কি ব্যাপার সুইটহার্ট গরম লাগছে কি তোমার? ”
উনার কথা শুনে চমকে উঠে বললাম,
“মানে? ”
“মানে যেই হারে ঘামছো আই থিংক তোমার অনেক গরম লাগছে। ”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“না ঠিক আছি। ”
শান উনার একহাত দিয়ে আমার একপাশে হাত রাখতেই আমি বিছানার চাদরটা শক্ত কর চেপে ধরলাম শান ফিসফিস করে বললো,
“আমার তো মনে হচ্ছে না। ”

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম।
“এসিটা আরেকটু বাড়িয়ে দেবো। ”

আমি “হ্যাঁ সূচক ” মাথা নাড়ালাম শান হেসে পাশ থেকে রিমোট নিয়ে এসিটা বাড়িয়ে দিলো।
“এখন ঠান্ডা লাগছে। ”
“হুম। ”
“তো এখন কি করবে?”

উনার কথা শুনে আমার হিচকি উঠে গেল কি অদ্ভুত প্রশ্ন করছে বুঝলাম না? আমি বললাম,
“পানি খাবো। ”

শান কিছুক্ষন ড্যাবড্যাব চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল তারপর মুচকি হেসে উঠে গিয়ে আমার জন্য পানি নিয়ে আসলো উনি পানি আনতেই আমি এক নিঃশ্বাসে পানিটা খেয়ে নিলাম। তারপর গ্লাসটা উনাকে দিয়ে দিলাম উনি গ্লাসটা পাশে রেখে আবারও আমার পাশে আধশোয়া হয়ে বসল। আমি এখনো ওভাবেই মূর্তির মতো বসে। উনি আমার চুলে হাত বুলিয়ে চুল নিয়ে খেলা করছিলো।

হঠাৎ বলে উঠলো,
“তোমার কি এখনো গরম লাগছে। ”
“কেন? ”
“এখনও ঘামছো তুমি অনেক তাই বললাম।”

আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম অদ্ভুত উনি কি বুঝতে পারছে না কিছু শুধু শুধু এভাবে খোঁচা মেরে আমাকে লজ্জায় ফেলার কারণ কি হনুমান একটা।

“বেশী গরম লাগলে ওড়নাটা খুলে রাখো। ”

উনার কথা শুনে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম কি বলেন উনি এসব? আমি দ্রুত বলে উঠলাম,
“না লাগবে না ঠিক আছি আমি। ”
“আচ্ছা তাহলে বসে আছো কেন শুয়ে পড়ো। ”
“হুম। ”

আমি আস্তে আস্তে ওনার থেকে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে শুয়ে পড়লাম শান রাগান্বিত হয়ে বললো,
“এতো দূরে গিয়ে শুয়েছো কেন? মাঝে যাদের জন্য জায়গা রেখেছো তারা এখনো পৃথিবীতে আসেনি তাই আমার কাছে এসো। ”

উনার কথা শুনে লজ্জায় আমার কান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে আরে মুখে তো কোনো লাগামই নেই উনার। আমি এখনও ওখানেই শুয়ে ছিলাম।উনি আমাকে টেনে উনার কাছে নিয়ে আসলেন। তারপর আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ঘুমাও। ”

বলেই উনি আমার চুলের মধ্যে মুখ গুজে শুয়ে পড়লেন। কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। উনার গরম নিঃশ্বাস আমার গলা ঘাড় জুড়ে পড়ছে যার ফলে চাইলেও চোখ বন্ধ করতে পারছি না।

শান মুখ তুলে বললো,
“কি হলো ঘুমাচ্ছো না কেন?”
“ঘুম আসছে না। ”
উনি ভ্রু কুচকে বললে,
“কেন?”
“আরে এতদিন আপনার সাথে রাত জেগে কথা বলতে বলতে তো রাত জাগার অভ্যাস হয়ে গেছে তাই হয়তো। ”

শান উঠে বসল আমি বললাম,
“কি হলো উঠে গেলেন যে? ”
“তুমিই তো বললে ঘুম আসছে না। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“সেটা তো আমার আসছে না আপনার কি?”
“আমারই তো সব আমার সুইটহার্ট একা রাত জাগবে আর আমি ঘুমাবো সেটা হতে পারে নাকি।”

তারপর কিছুক্ষনই দুজনে চুপচাপ বসে রইলাম। রাত বাড়ছে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুজনেরই হার্টবিট। কারো মুখে কোনো কথা নেই। শুধু চোখে চোখে মনের কথা গুলো আদান – প্রদান করা হচ্ছে।

শান বুঝতে পারছে সোহা আনইজি ফিল করছে তাই সোহাকে ফ্রী করার জন্য বললো,
“এভাবে চুপচাপ বসে থেকে তো কোনো লাভ নেই আই থিংক আমরা কিছু করতে পারি। ”
আমি তুতলিয়ে বললাম,
“ক কি ক করতে পারি?”
শান হেসে বললো,
“এইতো গল্প করতে পারি বা যেকোনো খেলাও খেলতে পারি। ”
শানের কথা শুনে আমার চোখ চকচক করে উঠলো আমি একটু উত্তেজিত হয়ে বললাম,
“গুড আইডিয়া বাট গল্প করব না খেলবো। ”
“ফাইন কি খেলবে?”
“লুডু। ”

শান নিজের কপালে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকালো আর মনে মনে বিরবির করে বললো,
“হায়রে কি ভাগ্য আজকের রাতেও বসে বসে লুডু খেলতে হচ্ছে। ”
আমি কপাল কুচকে বললাম,
“কিছু বললেন?”
শান হেসে বললো,
“না। ”

তারপর শান নিজের ফোন থেকে লুডু বের করলো। আমরা দুজনেই বসে বসে লুডু খেলতে লাগলাম। আমার আগে ছয় পড়লো। পরপর আমি ভালো খেলছিলাম। আমার একটা ঘুটি ছিলো শানের তিনটা।আমি কিছুটা ভাব নিয়ে বললাম,
“এইবার হারবেন আপনি।”
শান একদৃষ্টিতে কোটের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“আচ্ছা সেটা তো পরেই বুঝা যাবে কে হারে আর কে জিতে।”
” বুঝাই তো যাচ্ছে। ”
“রিলাক্স সুইটহার্ট এতো উতলা হওয়ার কিছু নেই খেলা এখনো বাকি আছে। ”

আমি মুখ ভেঙিয়ে আবার খেলায় মনোযোগ দিলাম। বাট হঠাৎ করেই কি হলো শান পরপর পর তিনটা ঘুটি দিয়ে আমার একটা ঘুটি ঘিরে ধরল। আমি ঘুটি তুলছিলাম আর উনি ঘুটিটা শুধু খেয়েই যাচ্ছিলো। শেষবার যখন খেলো আর উঠলোই না ফলস্বরূপ উনি জিতে গেল। উনার মুখে বিশ্বজয়ী একটা হাসি ফুটে উঠলো। আমি মুখ গোমড়া করে রইলাম।

“বলেছিলাম না খেলা এখনো বাকি আছে দেখেছো তো আমি জিতে গেছি। ”
আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“আচ্ছা ভালো হয়েছে তবে। ”

শান হেসে ঘড়ির দিকে তাকালো রাত আড়াইটা বাজে।
“আচ্ছা অনেক রাত হয়ে গেছে এবার ঘুমিয়ে পড়ো। ”
আমি চোখ পিটপিট করে বললাম,
“ঘুমাবো?”
“নাহলে আর কি করতে চাও তুমি?”

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললাম,
“অদ্ভুত লোক সারাদিন কত কথা বললো আর এখন ঘুমাচ্ছে? ”

হঠাৎ শান আমার কাছে এসে আমার চুল একপাশে সরিয়ে আমার ঘাড়ে একটা ডিপ কিস করলো আমি নিজের চোখ বন্ধ করে রইলাম। শান আমার গালে হাত দিয়ে আমার মুখটা উনার দিকে ফেরালো,
“তুমি চাইলে ঘুমাবো না অন্য কিছু করতে পারি তবে তুমি কি চাও আমি কিছু করি?”

কথাটা বলে উনার মুখটা আমার দিকে এগিয়ে আনতে লাগলেন আমি লজ্জা পেয়ে দুই হাত দিয়ে আমার মুখটা ডেকে নিলাম। শান আমার কোমড়ে হাত দিয়ে আমাকে উনার কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
“হায়রে এতো লজ্জা পেলে তো আমার বংশ আর আগেই যাবে না। ”

উনার কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম।উনি আর কখনো শুদ্রাবেন না। উনার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম আর আমিও উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।
.#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৪২
#সুরাইয়া_নাজিফা

আজকের সকালটা একদম আলাদা অন্যদিনের চেয়ে অন্যরকম ছিল। আমার সব স্বপ্ন, আশা, ইচ্ছা, ভালোবাসা আর সাথে ভালোবাসার মানুষটা যা পূর্ণ হয়েছে। আজ আমার জীবনের একটা নতুন সকাল। এতো বাধা বিপত্তি পেরিয়ে শানের সাথে আমার সম্পর্কের আরেক ধাপ সামনে এগিয়ে যাওয়ার খুশি। শানের ভালোবাসায় আজ নিজেকে পরিপূর্ণ নারী বলে মনে হচ্ছে। আজ আর জীবনে কোনো অভাব নেই শানকে জীবনে পেয়ে আমি পরিপূর্ণ।

ঘুম ভাঙতেই শানের দুই শক্ত সবল বাহুর মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। মাথা হালকা উচু করে শানের দিকে তাকালাম কি সুন্দর আমার বরটা সাথে অসাধরণ ব্যক্তিত্ব। কখনো কি ভেবেছিলাম উনাকে নিজের ভালোবাসার কথা জানাতে পারবো না এটা ভেবেছিলাম যে উনি আমাকে কখনো এতটা ভালোবাসবে সারাদিন যে ঝগড়া করত ভাবতেই হাসি চলে এলো। একবার নিজের দিকে চোখ পড়তেই লজ্জায় কুকড়ে গেলাম। যাক ভালোই হয়েছে উনি ঘুমে নাহলে লজ্জায় তো আমি মরেই যেতাম। উনি উঠার আগে দ্রুত উঠে রেডি হয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

তারপর আমি আস্তে আস্তে উনার হাতটা সরিয়ে উঠে গেলাম। অনেকটা সময় লেগেছে উনার হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে। আমি কাবার্ড থেকে নিজের একটা শাড়ী নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম। ফ্রেস হয়ে এসে দেখি শান এখনো ঘুমাচ্ছে। আমি আয়নার সামনে এসে চুলটা একটু ঝেড়ে নিলাম।

হঠাৎ বৃষ্টির মতো পানি এসে শানের চোখে মুখে পড়তেই শানের ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে পাশে তাকাতেই সোহাকে না দেখতে পেয়ে দ্রুত উঠে বসল। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে বামে তাকাতেই দেখল একটা মিষ্টি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিছন ফিরে। কি অপরূপা লাগছে এই নীল শাড়ীটাতে। একদম নীলপরী। শান আস্তে আস্তে সোহার দিকে এগিয়ে গেল।

হঠাৎ কেউ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা ডিপ কিস করল আমি নিজের চোখ বন্ধ করে নিলাম। বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা শান। আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,

“আপ আপনি ক কখন উ উঠলেন? ”
“মাত্রই উঠলাম একটা নীলপরীর ভেজা চুলের সৌরভ পেয়ে। ”

কথাটা বলেই উনি আমার চুলে নিজের মুখ ডুবালেন। আমি উনাকে একটু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজে ওনার থেকে খানিকটা দূরে সরে গেলাম।উনার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।

নিচু কন্ঠে বললাম,
“এখন ছোবেন না আমায় আমি এইমাত্র ফ্রেস হয়ে এসেছি। ”
শান অবাক হয়ে বললো,
“সিরিয়াসলি ছোঁয়া যাবে না? ”
“তো আপনার কি মনে হয় মজা করছি আপনার সাথে? ”
“আমাকে ডাকো নি কেন?”
“আপনি ঘুমাচ্ছিলেন এজন্যই ডাকিনি। ”
শান আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,
“সারারাত আমার সাথে কাঁটিয়ে এখন একা একা গোসল করে এসেছো দিস ইজ নট ফেয়ার সুইটহার্ট। ”
আমি পিছাতে পিছাতে সরু চোখে তাকিয়ে বললাম,
“এখানে আবার ফেয়ার আনফেয়ারের কি আছে গোসল করতে কি দোকলা প্রয়োজন হয় নাকি। ”
শান নিজের ঠোঁট কামড়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
“লাগে তো আমার লাগে। আমাকে ফেলে গোসল করার শাস্তি তো তুমি পাবেই। ”

পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সঙ্গে পিঠ ঠেঁকে গেল আমার শান এসে আমার দুই পাশে হাত রাখল ।

আমি তুতলিয়ে বললাম,
“শ শা শাস্তি মানে?কিসের শাস্তি?”
উনি নিজের মাথাটা আমার দিকে এগিয়ে এনে বললো,
“ওমা দোষ করেছো আর শাস্তি পাবে না সেটা হয় নাকি। ”

উনি একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে উনার চোখের ভাষা অন্যকিছু বলছে আমাকে। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।উনি কিছু বুঝার আগেই হুট করে নিচে বসে উনার হাতের নিচ থেকে বেরিয়ে এলাম। আর দৌঁড়ে বেডের অন্যপাশে চলে গেলাম।

“আমি কোনো দোষ করিনি বুঝেছেন যে শাস্তি পাবো।”
“যে দোষ করে সে থুরি না কখনো স্বীকার করে সুইটহার্ট। এবার কথা না বাড়িয়ে দ্রুত আমার কাছে এসো। ”
“খেঁপেছেন আমি কি পাগল যে এখন আপনার কাছে আসবো। ”
শান রেগে বললো,
“সোহা কাম ক্লোজার টু মি নাহলে খুব খারাপ হবে। ”
আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“এখন না পরে। ”

শান আমার দিকে আসতেই আমি অন্যপাশে চলে গেলাম। উনি রেগে আমার দিকে তাকালো আমি ফিক করে একটু হেসে দিলাম হঠাৎ কেন জানি উনাকে নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুরাতে বেশ মজাই লাগছে। উনি আবার এগিয়ে আসতেই আমি আবার সরে গেলাম,

শান গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“সোহা ওয়েট। ”
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
“না। ”
“দাঁড়াও বলছি। ”
“বললাম তো না। ”

আমি হেসে সরে গেলাম। আমরা দুজনেই পুরো ঘর জুড়ে দৌঁড়াতে লাগলাম। আমি দৌঁড়ানোর মধ্যে এতটাই ব্যাস্ত ছিলাম যে শান কখন আমার পিছন থেকে সরে গেছে খেয়ালই করিনি। হঠাৎ দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে কারো উন্মুক্ত বুকের সাথে ধাক্কা খেলাম। মাথা তুলে উপরে তাকাতে দেখলাম শান দাঁড়িয়ে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। শান আমার কোমড় জড়িয়ে বললো,

“এবার পালাবে কই? ”
“আপনি না পিছনে ছিলেন সামনে এলেন কিভাবে?”
“এমন গাধার মতো আগে পিছে না দেখে দৌঁড়ালে বুঝবে কি করেন স্টুপিড একটা। ”
আমি কপাল কুচকে বললাম,
“ছাড়ুন আমাকে। ”
“আগেই বলেছিলাম আমি ধরলে খারাপ হবে এইবার তুমি দেখো তোমার সাথে কি কি হয়। ”

কথাটা বলেই উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি হাত পা ছুড়তে লাগলাম। উনি আরো শক্ত করে ধরে রইলেন। নিজের কাজের জন্য এখন নিজের উপরেই রাগ লাগছে। ইচ্ছা করছে নিজের গালে নিজেই থাপ্পর মারি কয়েকটা কি দরকার ছিলো উনাকে রাগানোর এখন আমার কি হবে?


সকালের মিষ্টি রোদটা এসে স্মৃতির চোখে পড়তেই আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো। পাশে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি ফুঁটে উঠলো ওর মুখে। আজ ওদের এতো বছরের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো একটা হালাল সম্পর্কে যার নাম আছে। যেটা আগে কখনো কাউকে বলতে পারতো না ভয়ে এখন সেটা সবাইকে বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে। এখন আর আগের মতো লুকিয়ে দেখা বা কথা বলতে হবে না। মন যখন চাইবে তখনই দেখতে পারবে কথা বলতে পারবে তাও আবার পূর্ণ অধিকার নিয়ে। তবে আগের দিন গুলো খুব মিস করবে রাত জেগে কথা বলা, সবার চোখের আড়ালে লুকিয়ে দেখা করা, এক নজর দেখার জন্য ছটফট করা সেই অনুভুতি গুলোও অনেক সুন্দর ছিলো। স্মৃতি আরশের চুলের মধ্যে নিজের হাত বুলিয়ে দিলো। আরশ একটু নড়েচড়ে আবার স্মৃতির বুকে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

স্মৃতি কয়টা বাজে দেখার জন্য ঘড়ির দিকে তাকালো আর তাকিয়েই চোখ উপরে উঠার উপক্রম আটটা বিশ বাজে। সোহা বলেছিল আটটার মাঝে উঠে যেতে। এই বাড়ির সবাই সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট সারে। কথাটা মনে পড়তেই স্মৃতি কপালে হাত দিলো। সর্বনাশ নতুন বউ প্রথম দিনই লেইট হলে মানুষ কি বলবে। স্মৃতি আরশের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ব্যস্ত কন্ঠে বললো,

“ছাড় আমাকে আরশ। ”

আরশ কোনো রেসপন্স করল না। স্মৃতি আবারও ডাকলো আরশকে।

আরশ ঘুম ঘুম চোখে বললো,
“ওহ সকাল সকাল এমন করছো কেন ঘুমাতে দেও প্লিজ। ”
“হ্যাঁ তো তুমি ঘুমাও আমাকে ছাড়।”
আরশ মাথা তুলে বললো,
“আমি একা ঘুমাবো নাকি তুমিও ঘুমাবে আমার সাথে। ”
“আহা কি সুন্দর কথা তারপর কথা শুনলে তো আমি শুনবো তোমার কি তোমাকে তো আর কেউ কিছু বলবে না। ”
আরশ কপাল কুচকে বললো,
“কথা শুনবে কেন?”
স্মৃতি খানিকটা ছাড়া পেয়ে উঠে বসে বললো,
“কেন আবার কয়টা বাজে দেখেছো নতুন বউ প্রথম দিনই লেইট সোহা বলেছিল আটটার ভিতর উঠে সাড়ে আটটার মধ্যে নিচে থাকতে। ”
আরশ স্মৃতিকে টান দিয়ে আবার শুইয়ে দিলো আর নিজেও স্মৃতির পাশে আধশোয়া হয়ে বললো,
“তাই বুঝি তো সোহা তো আমাকেও একটা দায়িত্ব দিয়েছে কখনো তোমাকে চোখের আড়াল না করার আর খুব ভালোবাসার এখন সেই দায়িত্বে অবহেলা কি করে করি আমি বলোতো আমি তো পারবো না। ”

কথাটা বলেই আরশ স্মৃতির পুরো মুখে ভালোবাসার পরশ দিতে লাগলো।স্মৃতি একটু হাসলো আরশের পাগলামি দেখে নিজেও দুই হাতে আরশকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“প্লিজ আরশ ছাড় এতো পাগল হলে কবে তুমি?”
আরশ স্মৃতির কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেঁকিয়ে বললো,
“তোমার প্রেমে পাগল তো আগেই ছিলাম নতুন করে পাগল হওয়ার কি প্রয়োজন? ”
“আচ্ছা।”স্মৃতি হাসল

স্মৃতি একটু চুপ হয়ে গেলো। তারপর আবার বললো,
“আমি শুনেছি বিয়ের পর প্রেমিকরা অনেক পরিবর্তন হয়ে যায় তখন তারা স্বামী হয়ে যায় আগের মতো ভালোবাসাটা থাকে না তুমিও কি চেন্জ হয়ে যাবে আরশ? ”

আরশ ফ্যালফ্যাল চোখে স্মৃতির দিকে তাকালো তারপর হেসে বললো,
“তোমার কি মনে হয়? ”
স্মৃতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আমার তো মনে হয় তুমি চেন্জ হবে। ”
“তাই? ”
স্মৃতি” হ্যাঁ সূচক “মাথা নাড়ালো।

আরশ স্মৃতির দিকে তাকিয়েই বললো,
“আসলে কি বলোতো বিয়ের আগে ছেলেদের জীবনটা একরকম থাকে আর বিয়ের পরে অন্যরকম। বিয়ের আগে শুধুই নিজের চিন্তা যেটা এতোটা প্রভাব ফেলে না মোটামোটি আড্ডা, মজা, ক্লাব, পার্টি এসব দিয়ে জীবনটা কাঁটলেই হলো এমন একটা মনোভাব।কোনো টেনশন থাকে না। কিন্তু বিয়ের পর জীবনটা যখন আরেকটা মানুষের সাথে জুড়ে যায়,তার ভালো থাকা খারাপ থাকার দায়িত্ব এসে পড়ে তখনই জীবনের আসল মানেটা বুঝা যায়। তখন সেই মানুষটা আমার সাথে যুক্ত থাকে তাই তার সবকিছুর দিকে খেয়াল রাখতে হয়। এতো এতো দায়িত্ব,কর্তব্য সংসারের চাপের মধ্যে মানুষের ব্যস্ততাটা বেড়ে যায় এটাই স্বাভাবিক। এজন্য একজন স্বামী আর প্রেমিকের মধ্যে পার্থক্য তো থাকবেই তাই না।”

আরশ একটু থেমে আবার বললো,
“আমাকেই দেখো তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগেও বাউণ্ডুলে টাইপ ছিলাম। কখনো আমাদের বিজন্যাসের ব্যাপারে কিছুর খবরই রাখতাম না। সব বাবা আর ভাইয়ারা মিলে সামলাতো। বাবা এজন্য কতো বকা দিতো কিন্তু কখনো চেন্জ হয়নি। যখন তোমার সাথে দেখা হলো তোমাকে ভালোবাসলাম তোমাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখলাম তখনই নিজেকে আস্তে আস্তে গুছিয়ে নিতে লাগলাম কারণ কোনো বেকার ছেলের হাতে তো কেউ মেয়ে দেবে না। বাবাকে বলে বিজন্যাসের কাজে জয়েন দিলাম। কেন শুধু তোমার জন্য। এটা ছিল জীবনে প্রথম পরিবর্তন। এখন বিয়ে হয়ে গেছে চাপটা তো আরেকটু বাড়বে। এখন দুজন আছি কিছুদিন পর তিনজন হবো।তোমাকে ভালো রাখা আমাদের সন্তানদের একটু ভালো লাইফ দেওয়া সেই মতো প্রস্তুতি নিতে হলে তো আরো ব্যস্ত হয়েই পড়ব।কাজের প্রেসার বাড়বে। হয়তো তোমাকে আগের মতো ঘন্টার পর ঘন্টা সময় দিতে পারবো না বা যখন তখন চাইলেই হুট করে কোথাও বেরিয়ে যেতে পারবো না। কিন্তু দিনশেষে আমার পুরোটা সময় কিন্তু তোমারই থাকবে।আগের মতো প্রতিদিন না যাই সপ্তাহে বা মাসে একবার ঘুরে আসবো কোথাও গিয়ে মন খুলে। এটা তো তোমাকে মানিয়ে নিতেই হবে। এজন্য কখনো ভেবো না যে আমি চেন্জ হয়ে গেছি বা ভালোবাসা কমে গেছে কারণ তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনো কমবে না। আমি তোমার আছি আর সারাজীবন তোমারই থাকবো বুঝেছো। ”

স্মৃতি মুগ্ধ হয়ে আরশের কথা গুলো শুনলো। আগের আর এই আরশের মধ্যে কতো পার্থক্য। স্মৃতি আগে আরশকে সবসময় বলতো লাইফে একটু সিরিয়াস হও নাহলে জীবন চলবে কি করে। মজা করেই বলতো এমন খাপ ছাড়া জীবন যাপন করলে বাবা কিন্তু তোমার হাতে আমাকে দেবে না। তখন আরশ হেসে বলতো তুমি শুধু একবার আমার লাইফে চলে আসো দেখবে আমি কতটা সিরিয়াস হয়ে গেছি। আজ কথাগুলো খুব মনে পড়ছে। আসলেই মানুষ সত্যিই বলে ছেলেদের কখনো দায়িত্ববোধ শেখাতে হয়না তারা এমনিতেই দায়িত্ববান হয়।

স্মৃতি আরশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“বাবা সবেতোমাত্র আমাদের বিয়ে হলো আর তুমি বেবী পর্যন্ত চলে গেছো।”
আরশ হেসে বললো,
“অবশ্যই আমি তো ভাবছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুজন থেকে তিনজন হয়ে যাবো। ”
স্মৃতি চোখ বড় বড় করে বললো,
“এতো তাড়াতাড়ি?”
আরশ কপাল কুচকে বললো,
“কিসের তাড়াতাড়ি?তোমার পড়াশোনা কমপ্লিট আমার লাইফ স্যাটেল।কোনো পিছুটান নেই তাহলে বেবী সম্পর্কে ভাবাই যায়। এবার কি বুড়ো হয়ে তারপর বাচ্চা নেবো পরে বাচ্চারা বাবা না ডেকে অন্যকিছু ডাকবে আমি সেই রিস্ক নিতে পারবো না।

স্মৃতি লজ্জা পেয়ে আরশের বুকে মুখ লুকিয়ে হাসলো।অদ্ভুত কথা বলে এই আরশটাও মাঝেমাঝে এরপর আর কিছু বলারই থাকে না।

ওদের এই সুন্দর ভালোবাসার মধ্যে হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ হলো।স্মৃতি ভয় পেয়ে গেলো। এতক্ষন যেটা ভাবছিলো সেটাই হলো আরশ বিরক্ত হয়ে বললো,

“এই সকাল সকাল কে চলে এলো আমার রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজাতে। ”

স্মৃতি ঠেলে আরশকে উঠিয়ে দিলো,
“দেখলে তো আমি বলেছিলাম দেরী হয়ে গেছে হয়তো কেউ ডাকতে এসেছে এখন কি করব আমি সব তোমার জন্য হয়েছে। ”

আরশ স্মৃতিকে শান্ত করে বললো,
“ওকে এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই। তুমি গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেও আমি দেখছি কে?”

স্মৃতি কোনোরকম উঠে দৌঁড়ে চলে গেল ওয়াশরুমের দিকে। আরশ রুমের সব কিছু ঠিকঠাক করে একটা শার্ট গায়ে দিয়ে এগিয়ে গেলো দরজার কাছে দরজা খুলতেই দেখতে পেলো ভূমিকা দাঁড়িয়ে।

আরশ চোখের ইশারা করে বললো,
“কি ব্যাপার সুন্দরী এতো জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছো কেন?”
“এই ফাজিল কে সুন্দরী হুম তোর সুন্দরী তোর রুমে আছে আর কখনো এইসব ভুলভাল নামে ডাকবি না। ”
“নো ওটা আমার এক নম্বর সুন্দরী তুমি আমার দুই নম্বর সুন্দরী তাই কাউকেই ছাড়তে পারবো না। ”
ভূমিকা রেগে বললো,
“এটা গিয়ে বলবো আমি স্মৃতিকে তারপর দেখ কি হাল হয় তোর। ”
“কিছুই হবে না এটা আমি স্মৃতিকে আগেই বলেছি। ”

ভূমিকা হাসল। আসলে ভূমিকা বিয়ে হয়ে এই বাড়িতে আসার পর থেকেই আরশ ওকে এই উদ্ভট নামেই ডাকে। বাড়ির সবার ছোট আর একটু দুষ্ট প্রকৃতির বলে কেউ কখনো কিছু বলেনি তবে ওদের সম্পর্কটা একদম বন্ধুর মতো।

ভূমিকা একটু অভিমান নিয়ে বললো,
“হুম শুধু নামেই বন্ধু বলিস তুই কিন্তু বন্ধু ভাবিস না ভাবলে এটলিস্ট স্মৃতির সাথে প্রেম করছিস সেটা আমাকে জানাতি।”

আরশ জিভ কেঁটে বললো,
“সর্বনাশ এটা তোমাকে কে বললো?সোহা বুঝি?”

ভূমিকা মুখ ভেঙিয়ে বললো,
“বলতে হবে কেন? আমি সব খবর রাখি। ”

“হুম বুঝলাম । একদিন আমার দুই ভাবী মিলেই আমাকে মারবে। ”

ভূমিকা একটু বিরক্ত হয়ে বললো,
“ধ্যাত ফালতু কথা রেখে নিচে আয় জলদি। ”

আরশ মন খারাপ করে বললো,
“সুন্দরী এভাবে সকাল সকাল আমাকে ডিসটার্ভ না করলে চলছিলো না তোমার। আরেকটু পরে নিচে গেলে কি হবে? ”

ভূমিকা ভ্রু কুচকে বললো,
“এটা সকাল? প্রায় নয়টা বেজে যাচ্ছে। নিচে সবাই তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।আর বলে সকাল। দ্রুত ফ্রেস হয়ে নিচে আয়। ”

কথাটা বলে ভূমিকা নিচে চলে গেল।শানদের আর বিরক্ত করেনি কারণ সোহা যেহেতু এই বাড়ি সম্পর্কে সব জানে তাই ঠিক সময়েই নিচে চলে আসবে সে। ভূমিকা যেতেই আরশ দরজা আটকে নিচে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকলো।


ওয়াসরুম থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলাম আর মনে মনে শানকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে লাগলাম। এতো করে বারণ করলাম কিন্তু কথাই শুনলো না। ফালতু লোক আবার গোসল করিয়েছে আমাকে। এতো রাগ লাগছে বলার বাহিরে।

শান স্লো ভয়েসে বললো,
“রাগ হচ্ছে?”
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। শান আমার গালে উনার একহাত দিয়ে স্লাইড করে বললো,
“এতো রাগ করার কি আমিই তো ছিলাম। ”

আমি উনার হাতটা গাল থেকে সরিয়ে রেগে চুল মুছতে লাগলাম।

শান হেসে বললো,
“সুইটহার্ট এভাবে কে চুল মুছে? সব চুল উঠে যাবে তো। ”
আমি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“আপনার কি তাতে?”
শান আমার নাক টেনে বললো,
“আমারই তো সব কারণ তোমার এই চুল গুলো আমার খুব প্রিয়।আমাকে মাতাল করতে যথেষ্ঠ এই চুলগুলো যার ফলে আমি বারবার হারিয়ে যাই তোমার মাঝে।”

আমি কটমট চোখে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম,
“অসভ্য লোক একটা।”
শান আমাকে টেনে জড়িয়ে ধরে বললো,
“এখন অসভ্যতামি করব না তো কখন করব এখনই তো সময় সুইটহার্ট। ”

বলেই ঠোঁটে ছোট্ট একটা ভালোবাসার পরশ দিলো আমি উনাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলাম,
“একদম দূরে থাকেন সুযোগ পেলেই শুরু হয়ে যায় অদ্ভুত লোক একটা। ”
“এমন সুন্দরী বউ কারো হলে কে দূরে থাকতে চাইবে?”

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। তারপর আবার গাল ফুলিয়ে বললাম,
“উফ কতটা লেইট হয়ে গেছে নিচে গেলে সবাই কি বলবে। ”
“কি বলবে কালকে আমাদের ফার্স্ট নাইট ছিল লেইট হতেই পারে সেটা কি মানুষ বুঝে না। ”
“হুম সবাই আপনার মতো বেহায়া না। সরুন যাবো আমি।”

কথাটা বলেই আমি উনাকে পাশ কাঁটিয়ে!যেতে নেবো তখনই শান আমার হাত ধরে আবার আটকে দিলো।

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“আবার কি হলো?”
“বিয়ের পর থেকে একটা জিনিসই বুঝি আসছি তাও মাথায় যায় না এই অবস্থায় নিচে যাবে তুমি?”

আমি নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললাম,
“কি অবস্থায়? ”

উনি আমাকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন,
“লুক তোমার শাড়ীর কি অবস্থা চুলের পানিতে ভিজে একাকার। নিজের শরীর অন্যকে দেখানোর তো কোনো প্রয়োজন নেই। দেখাতে হলে আমার সামনেই থাকো এভাবে আমি মন ভরে দেখি। ”

“ছি কখনো তো নিজের মুখটা কন্ট্রোলে রাখেন যা মুখে আসে বলাটা জরুরী নয়। ”

“আগে তুমি তোমার চলাফেরায় কন্ট্রোল আনো পরে আমারও মুখে কন্ট্রোল চলে আসবে। ”

তারপর শান আমাকে বসিয়ে চুল গুলো মুছে দিলো ভালো করো। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাড়ী চেন্জ করার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। আরেকটা শাড়ী নিয়ে চেন্জ করার উদ্দেশ্যে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই শান আবারও আটকে দিলো,

“কোথায় যাচ্ছো। ”
“চোখে দেখতে পান না আপনি শাড়ী চেন্জ করতে যাচ্ছি। ”
“তো ওয়াশরুমে যাওয়ার কি প্রয়োজন এখানে করো। ”
আমার চোখ স্বাভাবিকের তুলনায় বড় করে বললাম,
“মানে?”
“মানে এখানেই চেন্জ করো। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“আপনার সামনে?”
শান স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
“হুম।”
আমি মাথানিচু করে বললাম,
“মাথা খারাপ পারবো না আমি। ”
শান আমার মুখটা এক আঙ্গুল দিয়ে উপরে তুলে বললো,
“সিরিয়াসলি লজ্জা পাচ্ছো তুমি? এতকিছুর পরেও এতো লজ্জা আসে কিভাবে?”

আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।
“ওয়েট তোমার বাকি যেটুকু লজ্জা আছে সেটাও ভেঙে দিচ্ছি এখনি। ”
আমি তুতলিয়ে বললাম,
“ম মা মানে?”
“এখনই দেখতে পাবে। ”

কথাটা বলেই উনি আমার শাড়ীর আঁচলে হাত দিতেই আমি নিজের চোখ বন্ধ করে নিলাম।


আমি আর শান নিচে নেমে এলাম।ড্রয়িংরুমে সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো। আমরা গিয়ে সবাইকে সালাম করলাম।

আমি মা কে বললাম,
“ব্রেকফাস্ট তৈরী করা শেষ? ”
মা বললো,
“হুম ভূমিকা আর আমি মিলে করে দিয়েছি। ”
আমি মন খারাপ করে বললাম,
“স্যরি। ”
মা হেসে বললো,
“কোনো ব্যাপার না এক কাজ কর তুই আর স্মৃতি মিলে মিষ্টি কিছু একটা বানিয়ে দে। যেহেতু স্মৃতির আজকে প্রথম দিন এই বাড়িতে। ”

আমি “হ্যাঁ সূচক”মাথা নাড়িয়ে বললাম,
“ওকে। ”

তারপর আপুকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলাম ভাবলাম ক্ষীর বানিয়ে দেই। আপুকে বললাম সবকিছু এগিয়ে দিতে। আমি রান্না শুরু করলাম। আপু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

“তুই তো রান্নার “র” ও জানতিস না এখন এসব করছিস কি করে?”

“আগে জানতাম না এখন পারি সব। ”

“আর কত অবাক হবো বলতো এই পিচ্ছি মেয়েটা এমন পাক্কা রাঁধুনি হয়ে গেলো।এভাবে সংসার সামলাচ্ছে। ভাবতেই পারছি না। জাস্ট বিয়ের কয়েকমাসে এতো চেন্জ? ”

আমি কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসলাম। তারপর রান্না শেষ করে আমাদের ডিশটা টেবিলে সাজিয়ে দিলাম। সবাইকে বসিয়ে দিয়ে আমি, আপু আর ভূমিকা আপু সবাইকে সার্ভ করে দিচ্ছিলাম।

হঠাৎ মা বলে উঠলো,
“আজ জীবনের সব আশা পূরণ হলো। আমার সংসারের সব শূন্য স্থান গুলো পূরণ হলো। তিন ছেলের বউকে দেখে নিলাম।এবার সব তাদের হাতে তুলে দিয়ে এখন থেকে এই সংসারের ঝামেলা থেকে আমি মুক্ত। ”

মা উঠে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালো তারপর আমাদের তিনজনের হাত একত্র করে মায়ের আঁচল থেকে খুলে একটা চাবি আমাদের হাতে তুলে দিল। আমরা তিনজন একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম।

মা বললো,
“আজ থেকে আমার এই সংসারের দায়িত্ব তোদের। আশা করি তোরা আমার এই সংসারকে আমার মতোই বুকে আগলে রাখবি।আমি জানি যোগ্য মানুষদের হাতেই তুলে দিচ্ছি সবকিছু। ”

আমি একটু ইতস্তত করে বললাম,
“না মা এটা আপনিই রাখুন আপনার আঁচলেই ভালো মানায়। ”
ভূমিকা আপু আর স্মৃতি আপুও আমার কথায় সায় দিলো।

মা বললো,
“উহুম আমি আর কয়দিন এরপর তো সবকিছু তোদেরই সামলাতে হবে তাই এখন থেকে সব বুঝে নেওয়া ভালো। ”

মায়ের এমন কথা শুনে আমরা তিনজনই মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
“এসব কি বলছো মা। তুমি সবসময় আমাদের সাথেই থাকবে আমাদের মাথার উপর ছায়া হয়ে। আর কখনো এমন কথা বলবে না তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে। ”

মা হেসে আমাদের তিনজনের কপালেই চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরল। কতো সুন্দর একটা দৃশ্য উপস্থিত সবার চোখে পানি চলে এলো। শান নিজের মোবাইলে এই সুন্দর মূহূর্তের কিছু দৃশ্য আবদ্ধ করে নিলো। কারণ জীবনের একসময়ে গিয়ে এইসব পুরোনো স্মৃতিগুলোই অনেক অমূল্য হবে।যা অনেক সুন্দর মুহূর্তের কথা আমাদের মনে করাবে।বেঁচে থাকার অবলম্বন হবে।
.
.
চলবে
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here