এক শহর ভালোবাসা পর্ব ১৯+২০

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_১৯
#সুরাইয়া_নাজিফা

আমি আর শান মাথানিচু করে বসে আমাদের সামনে শ্বাশুড়ী মা রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। হঠাৎ উনি আমার হাত ধরে টেনে তুলে দিলেন শানের পাশ থেকে আর আমাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,

“চল আজকে থেকে তুই আমার সাথে থাকবি। এই ছেলেটার সাথে আর থাকার দরকার নেই। ”

শ্বাশুড়ী মায়ের কথা শুনে আমি পুরো হতভম্ভ হয়ে গেলাম। মানে ঠিক শুনলাম তো কানে।এই খারুচের সাথে আর থাকতে হবে না। শানের মনে হলো ও আসমান থেকে সোজা জমিনে পড়ল। নিজের মাথা উচু করে আশ্চর্য হয়ে চোখ বড় বড় করে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার সাথে থাকবে মানে?”

শ্বাশুড়ী মা কটমট করে তাকিয়ে বললো,
“তাহলে কি তোর সাথে থাকবে? ”

শান বিরবির করে বললো,
“আমার সাথেই তো থাকার কথা। ”
“কেন? যাতে এভাবেই মেয়েটাকে আবার মারতে পারিস এজন্য থাকবে?”

শান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আমার এতো খুশি লাগছিলো। মনে মনে বলছিলাম বকো মা ভালো করে বকা দেও। ফাজিল লোক আমার এতো সুন্দর গালটা একদম লাল করে দিয়েছে।ব্যাথা করছে এতো। কতো শক্তি গায়ে। আমার গালটা এখনও পর্যন্ত জ্বলছে।

শান গোমড়া মুখে বললো,
“ভুল হয়ে গেছে মা। এইজন্য আমি ওকে স্যরি বলেছি। তুমি তো জানো আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না তাই…।”

শানের কথা শেষ হওয়ার আগেই শ্বাশুড়ী মা তেঁতে বলে উঠলেন,
“তাই ওর ওপরে তোমার রাগ ঝেড়েছো। এটা বলতে চাও। লজ্জা করেনা শান। আমরা তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছিলাম।নিজের বউয়ের গায়ে কি করে হাত তুলেছো তুমি এতো সাহস পাও কিভাবে। কখনো দেখেছো আমাদের পরিবারের কেউ নিজের বউয়ের গায়ে হাত তুলতে। আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না।তুমি তো জানো সোহা একটা বাচ্চা মেয়ে। যদি ও কোনো ভুল করে তোমার উচিত ছিল বুঝাপড়ার মাধ্যমে বিষয়টা সমাধান করে নেওয়া।ওকে ঠিক ভুলের পার্থক্য বুঝানো নাকি এভাবে মারপিট করা। তুমি তো যথেষ্ঠ ম্যাচিউর শান।এটলিষ্ট আমরা সবাই তো তাই জানতাম। এটা কেমন ম্যাচিউরিটি হলো। আরশ পালিয়ে যাওয়ার পর সোহাকে যখন তোমার হাতে তুলে দিয়েছিলাম তখন আমাদের সবার গর্ব হতো যে একজন ঠিক মানুষের হাতে সোহাকে তুলে দিয়েছি।সোহা তোমার সাথে ভালো থাকবে। এটা কি ভালো থাকার নমুনা? তুমি তো আমাদের সবার ধারণাকে মিথ্যা করে দিলে।”

আমার নিজেরও এখন অনেক খারাপ লাগছে। আমার নিজেরও তো দোষ ছিল তাই তো উনি এমন একটা কাজ করেছে তাহলে বকা উনি একা খাবে কেন? মাকে আমি শান, আরশ আর সাম্য ভাইয়াদের কখনো তুমি বলতে শুনিনি। এখন যখন বলছে নিশ্চয়ই অনেক রেগে আছে। মাকে দেখলেই বুঝা যায় শান এতো রাগ মায়ের থেকেই পেয়েছে এমন হুটহাট রেগে যাওয়া। এই এতো ভালো আর এই এতো রাগি।শান চুপচাপ শুনে যাচ্ছে। একটা কথারও প্রতিবাদ করছে না। বললেই তো হয় আমি ওনার সাথে কি করেছি।

উনি কিছু বলছে না দেখে আমি মাকে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“থাক না মা দোষ শুধু ওনার একার না আমারও আছে। ”

মা আমার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,
“হুম দোষ আছে তো। তোর দোষটাই বেশী। কেন তুই আমাকে বলিসনি শান তোকে মেরেছে আবার চুপচাপ ঘরে বসে ছিলি।নিজের স্বামীর দোষের উপর পর্দা দিচ্ছিলি। কে বলেছে তোকে এতো উদার মনের হতে। আমাকে কি তোর নিজের মা মনে হয় না। তাহলে কেন নিজের সুবিধা অসুবিধার কথা বলিস না। ”

আমি কান্না মাখা কন্ঠে বললাম,
“এভাবে বলছো কেন মা। তুমিই তো আমার মা।আমিতো…।”

আমার পুরা কথা শেষ হওয়ার আগেই মা বললো,
“আর একটা কথাও বলবি না তুই।ছেলেরা কি ভাবে ওরা বিয়ে করে নিয়েছে বলে কি মেয়েদের নিজেদের স্বাধীনতাও তারা নিয়ে নিয়েছে। যখন তখন গায়ে হাত তোলার পারমিশন পেয়ে গেছে। আজকে এর একটা হেস্তনেস্ত আমি করেই ছাড়ব। ”

তখন কান্না করতে করতে আমার গলার স্বর বসে গেছে। ঠিক ভাবে কথাও বলতে পারছিনা। তাই আমি আর কথা না বলে মায়ের কথা গুলোই শুনে গেলাম। শান এভার মুখ ফুটে বললো,

“স্যরি বলছি তো মা। ভুল হয়ে গেছে।আর হবে না। ”
“ভুল যখন হয়েছে ভুলের মাশুলও তো তোমাকে দিতে হবে। তাই আজ থেকে সোহা আমার সাথে থাকবে।তুৃমি সোহাকে ডিজার্ভ করো না। চল সোহা আমার সাথে। ”

কথাটা বলেই মা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তখনই শান পিছন থেকে অসহায় ভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“মা শোনো না আমার কথা। ”
মা পিছনে ফিরে বললো,
“একদম চুপ। সবকথা শেষ আর কোনো কথা নেই। ”

মা আবারও আমাকে নিয়ে চললো। আমার খুব ইচ্ছা হলো একবার শানের মুখটা দেখতে। তাই ঘাড়টা একটু ঘুরিয়ে দেখলাম শান মুখ গোমড়া করে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। উনাকে দেখে কেন জানি আমার এতো হাসি পাচ্ছে। আহারে বেঁচারা দেখে মনে হচ্ছে বিধবা হয়ে গেছে। স্যরি ছেলেদের তো বিধবা বলে না বিপত্নীক। ভাবতেই আমার পেট ফেঁটে হাসি আসছে।



আমি বিছানার উপর বসে আছি আর মা আমার গালে বরফ ঘসে দিচ্ছে। থাপ্পরটা খুব ভালো ভাবেই পড়েছে গালে। গালের একপাশটা ফুলে গেছে। মা গালে কিছুক্ষন বরফ ঘসে দিয়ে বললো,
“এখনও ব্যাথা করছে? ”
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
“না ঠিক আছে। ”
মা আমার গালে হাত বুলিয়ে বললো,
“ইশ গালটা কতটা ফুলে গেছে।চিন্তা করিস না কমে যাবে ব্যাথা কিছুক্ষন পর। আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না শান এমনটা করেছে। ”

আমি এবার ভয়ে ভয়ে বললাম,
“মা একটা কথা বলি? রাগ করবে না তো? ”
“বল না কি বলবি। ”
“আসলে দোষটা আমারই প্রথম ছিল। ”

তারপর আমি মাকে সবটা খুলে বললাম। কথাগুলো বলে আমি মাথানিচু করে ফেললাম। না জানি এরপর মা কি বলবে। যদি আমাকেও বকে। এতো ভয় লাগছিলো। তখনই খিলখিল করে হাসির শব্দ শুনে আমি পুরো বিষ্মিত হয়ে গেলাম। আমি মাথা তুলে তাকাতেই দেখালাম মা হাসছে। আমি ফ্যালফ্যাল করে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মা হাসি থামিয়ে বললো,

“তোদের নিয়ে আর পারিনা।হাসতে হাসতে পেট ফেঁটে যাওয়ার উপক্রম। একদম যা করেছিস খুব ভালো করেছিস।শানও তো সেম কাজ করেছে তোর সাথে। তবে একটা কথা এরপর থেকে অফিসে যাওয়ার সময় এমনটা করিস না। বাসায় থাকলে ইচ্ছামতো পিছনে লাগবি বুঝলিতো। ”

মায়ের কথা শুনে আমিও হেসে দিলাম। হায় আমার শ্বাশুড়ী মায়ের দিকে কারো নজর না লাগে। এমন শ্বাশুড়ী থাকলে জীবন তো পুরাই ফুরফুরা হয়ে যাবে। মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমিও হাসলাম তারপর হাসি থামিয়ে বললাম,
“না আর উনার পিছনে লাগবো না। অনেক শিক্ষা হয়ে গেছে আমার।”
মা বললো,
“এজন্যই তো শানকেও একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার। কয়েকদিন এখানেই থাক।ছেলেরা চাইলেই হাতের কাছে সব পয়ে যায় তো তাই মেয়েদের কদর করতে জানে না। এবার বুঝবে বউ ছাড়া ঘর কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। ”

রাতে আর নিচে গিয়ে খাইনি। রহিমা আন্টি ঘরেই আমার খাবার দিয়ে গেছিল। মায়ের কড়া আদেশ যেন শানের সামনে না যাই। শান একটু ছটফট করুক আমাকে না দেখে।তাই খেয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানার একপাশে আর মা অন্যপাশে।

শান বিছানায় শুয়ে আছে। যখন শুয়েছিল তখন রাত দশটা আর এখন একটা বেজে গেছে অদ্ভুত এখনো ঘুম আসছে না। শুধু এপাশ ওপাশ করছে। বিছানার ওইপাশে তাকালেই মনটা আনচান আনচান করছে। অন্যদিন চোখ খুললেই সোহার মুখটা দেখতে পেতো। ঘুমন্ত মুখ কি স্নিগ্ধ লাগতো। প্রতিদিন রাতে সোহা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর অনেকটা সময় নিয়ে শান সোহাকে দেখে তারপর ঘুমায়। হয়তো সম্পর্কটা এতো গভীর ছিলনা কিন্তু প্রিয় মানুষটাকে সবসময় চোখের সামনে দেখলেও মনে শান্তি লাগে।কিন্তু আজকে সেই শান্তিটাই মনে পাচ্ছে মা যে চোখটা বুজবে। বিছানার ওইপাশটাও কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। প্রতিদিনের মতো যেমন কোলবালিশ দেওয়া থাকে আজও তেমন ভাবেই কোলবালিশ দিয়ে একপাশে সুয়েছে শান।

“উফ আগে যদি জানতাম একটা থাপ্পর মারার কারণে নিজের বউয়ের থেকেই দূরে থাকতে হবে তাহলে এই থাপ্পরটা হয়তো আমি নিজেই নিজের গালে মারতাম। এভাবে কি করে থাকবো সোহাকে ছাড়া। ”

শান বেশ বুঝতে পারল আজকে আর ঘুমাতে পারবেনা তাই উঠে বসল।একনজর সোহাকে দেখতেই হবে।

শান রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ল।ঘুটিঘুটি পায়ে পৌঁছেও গেল রুমের দরজার কাছে। দরজাটা হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। রুমের মধ্যে আবছা আলোতে শান স্পষ্ট দেখতে পেল সোহাকে।কি শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায়ও আবছা আলোতে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।ঘুমের মাঝেও ঠোঁটের কিনারে এক চিলতে হাসি লেগে আছে। শানের কেন জানি খুব হিংসা হলো। ওখানে ও ঘুমাতে পারছে না আর এখানে উনি তো খুব মজাতেই ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ শানের খেয়াল হলো বিছানার এককোনে এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে সোহা ।একবার ঘুরলেই সোজা বিছানা থেকে পড়ে যাবে। শান ভাবল ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে আসবে। ভেবেই এক পা বাড়াতেই পিছন থেকে কেউ শানের কাঁধে হাত রাখল। শান পিছনে ঘুরেই চমকে গেল। খানিকটা তুতলিয়ে বললো,

“ম মা তুমি?ঘুমাওনি?”
“কেন বাবা তুমি দেখতে পাওনি বুঝি আমি সোহার পাশে নেই। চোখটা শুধু একদিকে স্থির না রেখে চারপাশে ঘুরালেই তো বুঝতে পারতে।
মায়ের কথা শুনে শান লজ্জায় পড়ে গেল। মাথানিচু করে বললো,
” না মানে…।
মায়মুনা চোখের ইশারা করে বললো,
“কি মানে মানে করছো বাবা। এতরাতে এখানে কি চাই?”
হঠাৎ প্রশ্ন করাতে শান থতমত খেয়ে গেল কি বলবে বুঝতেছে না হঠাৎ মুখ ফসকে বলে দিলো,
“ঐ জগিং করতে এসেছিলাম। ”
কথাটা বলেই শান নিজেই নিজের জিভ কেঁটে কপালে হাত দিলো সর্বনাশ। একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“মানে ঘুম আসছিলো না তাই হাঁটছিলাম। ”
মায়মুনা কিছুটা টোন কেঁটেই বললো,
“ওহ জগিং আজকাল মানুষ রাত একটা বাজেও করে জানতাম না তো। তা জগিং হাঁটাহাঁটি সব শেষ? ”
শান ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও মাথা নেড়ে বললো,
“হুম। ”
মায়মুনা খানিকটা হেসে বললো,
“তাহলে এইবার গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ”
কথাটা বলতেই শান রুমের ভিতর পা বাড়ালো। শানের মা চিৎকার করে বললো,
“কি ওদিকে কই যাচ্ছো বাপ আমার?”
শান একদম ইনোসেন্ট একটা লুক নিয়ে বললো,
“তুমি তো বললে ঘুমাতে যেতে তাই যাচ্ছি। ”
মায়মুনা সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“তোমার রুমে ঘুমাতে যেতে বলেছি। এটা কি তোমার রুম?”
শান হাসার চেষ্টা করে বললো,
“এটা আমার রুম না তাই না। ভুলে গেছিলাম। ”
মায়মুনা দুইহাত বুকে ভাজ করে বেঁধে বললে,
“হুম আজকাল সবকিছুই ভুলে যাচ্ছো। যাও এবার নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাও। ”
শান অসহায় ভাবে বললো,
“ঘুম আসেনা তো।”
“ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ”
শান নিজের মনেই বললো,
“ঘুমের ঔষুধ তো এখানে রেখে যাচ্ছি ঘুম আসবে কেমনে। ”

তারপরও মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল সাথে মায়মুনাও। যদিও যেতে ইচ্ছা করছে না তাও চুপচাপ চলে গেল। শান যেতেই ছেলের এসব কান্ড মনে করে মায়মুনা খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।



সকালে আজকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম। কারণ আমাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে। দশটায় ক্লাস আছে। তাই আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে উঠে বসলাম।হঠাৎ রুমের দিকে চোখ যেতেই আমার চোখ পুরা ছানা বড়া হয়ে গেল।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম সবদিকে। এসব কে করেছে?

আমি দ্রুত মাকে ডেকে তুললাম,
“মা ও মা দেখোনা পুরো ঘরের কি অবস্থা। ”
আমার ডাক শুনে মা ধরফরিয়ে উঠে বসল,
“কি হয়েছে। সকাল সকাল চেঁচাচ্ছিস কেন?”

আমি মাকে চোখের ইশারায় বললাম ঘরের দিকে তাকাতে। আমার চোখ অনুসরন করে মাও পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে থ মেরে বসে রইল।উনি একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার রুমের দিকে ওনাকে দেখেও মনে হচ্ছে উনিও আমার মতো শকড হয়ে গেছে। না হওয়ার কি আছে পুরো ঘরের ভিতরে রঙিন কাগজে বিভিন্ন কালারের রং দিয়ে লিখা,

“স্যরি ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো হবে না। এইবার তো মাফ করে দেও। ”

সেটাও আবার পুরো রুমের দেওয়ালে দেওয়ালে লাগিয়ে রেখেছে। বিছানার উপরে আমাদের কোলের মধ্যে মাথার পাশে অনেক গুলো টেডিবিয়ার যার মধ্যেও লিখা,
“স্যরি মাফ করে দেও প্লিজ ”

শুধু তাই নয় মেঝেতেও রং আর জরি দিয়ে বড় করে লিখা “দুঃখিত”

আর তারপাশেই শান হাটু গেড়ে দুই কানে হাত দিয়ে কাচুমাচু মুখ করে বসে।

আমি দুই তিনবার চোখ ডলে তারপর আবার তাকালাম। আমার কেন জানি বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এসব স্বপ্ন দেখছি। সকাল সকাল এতো বড় সারপ্রাইজ যেন হজমই করতে পারছি না। আমি মাকে বললাম,

“মা এসব কি সব সত্যি নাকি আমি ভুল দেখছি। ”
মাও আমার মতো অবাক হয়ে বললো,
“তাই তো দেখছি রে। ”

তখনই শান অসহায় ভাবে বলে উঠলো,
“প্লিজ লেডিসরা বাংলা ইংলিশ দুইভাবেই মাফ চেয়ে নিয়েছি এইবার তো মাফ করে দেও। ”

শানের কথা শুনে আমার এতো হাসি পেলো কিন্তু আমি নিজের হাসি আটকে চুপচাপ বসে রইলাম।
মা আমাকে বললো,
“চল তো সোহা আমাদের অনেক কাজ আছে। এবাবে বসে থাকলে হবে না।তুই তো আবার ভার্সিটিতেও যাবি যা যা রেডি হয়ে নে। ”
আমিও মায়ের কথায় সায় দিয়ে বললাম,
“হুম মা ঠিক বলেছো। কারো মতো আমাদের তো আর এক্সট্রা সময় নাই যে বসে বসে ডং দেখবো।”

আমি আর মা শানের পাশ কাঁটিয়ে চলে আসলাম। যেন আমরা শানকে দেখতেই পাইনি। শান আমাদের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। রুমের বাহিরে এসে আমি আর মা হেসে দিলাম। মা বললো,

“ভালো জব্দ হয়েছে। আরেকটু নাচাতে হবে। এতো তাড়াতাড়ি গলা যাবে না বুঝলিতো। দেখি তোকে পাওয়ার জন্য আর কি কি করে। ”

তারপর ফ্রেস হয়ে নিলাম।আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলাম না গালে এখন আর থাপ্পরের দাগটা দেখা যাচ্ছেনা। আর বরফ দেওয়ার কারণে ফোলাটাও কমে গেছে। মা রুম থেকে আমার জন্য একটা জামা এনে দিলো কিন্তু আমাকে যেতে দেয় নি। মা তো পুরো কোমড় বেঁধে নেমেছে। এমন করে হয়তো উনাকে আমিও শাস্তি দিতে পারতাম না। আমার প্রচুর মজা লাগছে এসব দেখে। ভার্সিটিতে যাবো তাই একেবারে রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে এলাম।আজকে দেখালাম শান আমাদের আগে এসে বসে আছে। আমরা দেখেও না দেখার মতো করে টেবিলে বসে পড়লাম। একটা কথাও বললাম না শানের সাথে। তবে বেচারার মুখ দেখে আমার বড্ড মায়া লাগছিলো। একরাতের মধ্যে মুখ চোখ শুকিয়ে একাকার অবস্থা। মনে হচ্ছে সারারাত না ঘুমিয়েই কাঁটিয়েছে।আমি উনার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। মা আর আমি টেবিলে বসে প্লেট উল্টাতে সেখানে খেয়াল করলাম প্লেটের মাঝেও “স্যরি” লিখা। কালকে থেকে আজকে পর্যন্ত শানের এতোটা যত্ন, আমার এতো কদর করা দেখে আমার ইচ্ছা হচ্ছিল না ওনাকে এমন করে ছটফট করাতে বাট মায়ের উপর কিছু বলতেও পারবো না। আমি মায়ের দিকে তাকাতেই মা মুখ টিপে খানিকটা হাসল যেন শান না দেখে। তারপর বললো,

“রহিমা এখানে নতুন প্লেট নিয়ে আয়। আজকাল খাবারের প্লেটটাকেও মানুষ নিজের ফাইল মনে করে আঁকাআঁকি করে। ”
মায়ের কথা শুনে শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো এতো কিছু করছে তারপরও এদের মন গলাতে পারছে না।এতো কঠিন কেন মেয়েদের মন। আর কি করলে যে এরা স্বাভাবিক হবে আল্লাহ জানে।

রহিমা আন্টি আবার নতুন প্লেট এনে দিলো। আমি মা আর আমার প্লেটে খাবার বেড়ে দিলাম। শানের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে যাবো তখনই মা আমার হাত ধরে বললো,
“তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। তোর যেতে হবে যারটা পারলে সে বেড়ে খাবে নাহলে খাওয়ার দরকার নেই। ”

কথাটা শুনে আমি বাটিটা নিচে রেখে দিলাম। শান যে কষ্ট পেয়েছে সেটা উনার মুখ দেখেই আমি বেশ বুঝতে পারছি। শানের প্লেটে রহিমা আন্টি খাবার বেড়ে দিলেন। শান প্লেটে খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলো কিন্তু একটুও মুখে তোলেনি। একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি প্লেটের মধ্যে হাত ঘুরাচ্ছিলাম আর আড়চোখে উনাকেই দেখছিলাম কেন জানি আমারও খেতে মন চাইছে না। হঠাৎ আমার পায়ের উপর কারো পায়ের ছোঁয়া পেতেই আমি আতকে উঠলাম। শানের দিকে তাকাতেই দেখালাম শান ঠোঁটের ইশারায় “স্যরি” বলছে। আমি আমার পা সরিয়ে আবার নিচের দিকে তাকালাম। কিছুক্ষন পর আবার শান নিজের পা দিয়ে আমার পায়ে শুরশুরি দিলো।আমি নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। বারবার উনার স্পর্শে আমি শিউরে উঠছিলাম। তাই পা টা সরিয়ে নিলাম। আমি জানি উনি আবারও একই কাজ করবে তাই আমি আস্তে আস্তে আমার পা গুলো উপরে তুলে নিলাম।

মাত্র একটু রুটি ছিড়ে মুখে দিলাম তখনই মা চিৎকার করে উঠল,
“পায়ের মধ্যে এমন বিরবির করে কিসে? ”

মায়ের কথা শুনে আর বুঝতে বাকি রইল না যে এটা শানেরই কাজ। আমি মুখ চেপে হাহা করে হেসে দিলাম আর হাসতে হাসতে বললাম,
“মা তোমার টেবিলের নিচে মস্ত বড় একটা বিড়াল হানা দিয়েছে এখানে আর বসা সেফ না যেকোনো সময় আছড়ে দিতে পারে। ”

মা আমার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি আরো জোরে জোরে হেসে দিলাম। শান আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তারপরও আমার হাসি থামাতে পারলাম না। শান রাগ করে উঠে চলে গেল খাবার টেবিল থেকে। এরপর আমি ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বের হবো কিন্তু শানকে আর দেখিনি। মা রফিক আঙ্কেলকেই বললো আমাকে স্টেশন অব্দি ছেড়ে দিতে। আমিও উনার সাথেই চলে গেলাম।

ক্লাস শেষ করে ডিপার্টমেন্টের বাহিরে আসতেই হঠাৎ কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে বলে উঠল,
“সোহা। ”
ডাকটা শুনে পিছনে তাকাতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। এই মাথাব্যথা এখানে কি করে।
.
.#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২০
#সুরাইয়া_নাজিফা

রায়ান ভাই আমার দিকে দৌঁড়ে আসছে।আমি পুরা স্ট্যচু হয়ে গেলাম। পালাবো না দাঁড়িয়ে থাকব বুঝতেছি না।সারাদিন কানের কাছে উনার ভালোবাসার প্যানপ্যান শুনতে শুনতে মাথাব্যথা উঠে যায় আমার।কলেজ লাইফ থেকে আমার পিছনে হাত ধুয়ে পড়ে আছে। পাগল এক নম্বরের। আমার চার বছরের সিনিয়র। দেখতে শুনতে মোটামোটি ভালোই। জানি না কোন কুক্ষণে কলেজের একটা অনুষ্ঠানে উনার সাথে কথা হয়ে ছিল। কথা বলেছিলাম একজন ফ্রেন্ডের ভাই হিসেবে ও পরিচয় করিয়েছিল। সেই থেকে আমার সাথে ঝোঁকের মতো লেগে আছে।কলেজে গেলে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত,প্রাইভেটে গেলে সেখানেও থাকত বাসা থেকে বের হতে পারতাম না।আমি নানুর বাসায় থেকে পরতাম। তাই উনার জন্য ঐ বাসা থেকেও চলে আসলাম। এর জ্বালায় একবার তো আমি কলেজে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলাম।সবসময় আমার পিছনে পড়ে থাকতো। পরে তানিশার বুদ্ধিতে উনাকে মিথ্যে বলেছিলাম আমার বিয়ে হয়েগেছে। সেই কথা বলার পর ছয়মাসের মতো উনাকে আর আমার আশেপাশেও দেখিনি শান্তিতে ছিলাম।কিন্তু এতোদিন পর উনি এখানে কি করে? মাথায় আসছে না।

রায়ান ভাইয়া দৌঁড়ে এসে আমার সামনে হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন,
“তুমি এখানে? আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। কলেজ শেষ হওয়ার পর কত খুঁজেছি তোমায় কোথায় চলে গেছিলে?চবিতে চান্স পেয়েছো না ঘুরতে এসেছো? ”

আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম,
“এখানে দেখছেন যখন এখানেই চান্স পেয়েছি। ”
রায়ান ভাই খুশি হয়ে বললো,
“ও মাই গড হোয়াট আ কো-এক্সিডেন্স। আমিও এখানেই পড়ি ফরেস্ট্রিতে।”
আমি বিরবির করে বললাম,
“কেন বাংলাদেশে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাব ছিলো যে আপনাকেও চবিতেই পড়তে হলো। ”
রায়ান ভাইয়া আমার বিরবির করা শুনে বললেন,
“কিছু বললে?”

আমি বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও হেসে বললাম,
“কিছু না। তো ফরেস্ট্রির জিনিস সোশাল-সাইন্স ফ্যাকাল্টিতে কি করেন?”
“এখানে এসেছিলাম একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে। ও আইআর ডিপার্টমেন্টে। ভাগ্যিস এসেছিলাম নাহলে তো তোমার সাথে দেখাই হতো না। কতো খুঁজেছি তোমাকে জানো।”
আমি খানিক হেসে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
“কেন? আমাকেই কেন খুজেছেন। দেশে কি মেয়ের অভাব পড়ছে যেকোনো একজনকে খুঁজে নিলেই তো হতো। ”
রায়ান ভাই হেসে বললো,
“কি বলো যে কাউকে খুঁজে নেওয়া আর তোমাকে খোঁজা কি এক হলো। সবাইকে তো আর আমি ভালোবাসি না। ”
আমি মনে মনে ভাবলাম,
“আবার শুরু হলো উফ। না এখানে আর বেশীক্ষন থাকা যাবেনা। এখনি না পালালে মাথাটা খারাপ করে ছাড়বে। ”
আমি রায়ান ভাইয়াকে বললাম,
“আচ্ছা ভাইয়া আমার বাসায় যেতে হবে। লেইট হচ্ছে পরে কথা হবে।”
বলেই যেতে নিবো তখনই রায়ান ভাইয়া আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।হঠাৎ উনি সামনে আসাতে আমি থমকে দাঁড়ালাম। আমি উনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। রায়ান ভাইয়া বললো,

“আরে এতো তাড়ার কি আছে। এতোদিন পর দেখা একটু সুখ দুঃখের কথা বলো। জানো তো তোমার নামের সাথে তোমার চরিত্রেরও যথেষ্ট মিল আছে। ”

আমি উনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলাম। নামের সাথে চরিত্র মিল আছে মানে?
রায়ান আবার বললো,
“বুঝলে না তো?”

আমি” না সূচক ” মাথা নাড়ালাম। রায়ান ভাইয়া হেসে বললো,
“এই যে তোমার নাম সোহা। সোহা নামের অর্থ কি জানো? সোহা নামের অর্থ ছোট গ্রহ বা ছোট তারা। এটি এমন একটি গ্রহ বা তারা যার আলো আকাশে সহজে দেখা যায় না।তুমিও সেম তোমাকেও সহজে দেখা যায় না। এই ছয় মাস পাগলের মতো খুঁজেছি। বাট তোমার কোনো দেখা নাই। বাসা তো চেন্জ করেছো।এটলিষ্ট রিদিমার সাথে তো যোগাযোগ রাখতে তাতে হলেও তোমাকে খুঁজে পেতাম কতো মিস করেছি তোমাকে। ”

উনার এইসব বকবক শুনতে শুনতে মাথার পোকা নড়ে যাচ্ছে। উফ আমার এখন হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে মন চাইছে। আরে এর থেকে তো শান ঢের ভালো আছে।এরে দেখে আমি মাঝে মাঝে বুঝতেই পারিনা ছেলেরা এতো বাঁচাল কেমনে হয়।

রায়ান ভাইয়া আমার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,
“কি ভাবছো। আচ্ছা কখন থেকে আমিই বকবক করছি তুমিও কিছু বলো?”

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“হুম বলবো তো আচ্ছা আমি এখন যাই। ”

যেতে নিবো উনি আবার আটকে নিলো।
“আরে এতো যাই যাই করছো কেন? দুই মিনিট আমার সাথে কথা বলো না। ”

আমি কান্না কান্না মুখ করে বললাম,
“কি বলবো?”
উনি মুচকি হেসে বললো,
“তোমার যা ইচ্ছা। ”
আমি বিরক্ত নিয়ে বললাম,
“আচ্ছা আমি এই ছয়মাস কই ছিলেন?”

রায়ান বললো,
“ওহ মিস করছিলে বুঝি। কোথায় আর থাকবো তোমার বিয়ের কথা শুনে আমি তো পুরা ডিপ্রেশনেই চলে গেছিলাম। তারপর মাইন্ড ফ্রেস করে ঘুরতে চলে গেলাম।কিন্তু তাও তোমাকে ভুলতে পারছিলাম না। তারপর একটু দেশের বাহিরেও যেতে হয়েছে বাবাকে নিয়ে। এইসব করতে করতে আর তোমার খোঁজ নেওয়া হয়নি। পরে দেশে ফিরেই মনে হলো তোমার কথাটা একটু যাচাই করা দরকার পরে রিদিমাকে জিজ্ঞেস করে দেখলাম ও বললো যে তুমি বিবাহিত না। তবে ততদিনে তুমি আমার থেকে অনেকটা দূরে চলে গেছো। কিন্তু আজকে আমি আবার তোমায় খুঁজে পেলাম। আমি কতো ভাগ্যবান। ”

আমি মুখ গোমড়া করে বললাম,
“আপনার কাছে শুধু সারাংশ জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি তো পুরা ইতিহাস শুনিয়ে দিলেন। ”

রায়ান হেসে বললো,
“এতো দিনের না বলা কথা তো। আরো অনেক কথা বলার আছে। এখন কই থাকো?”

আমার মুখে হাসি ফুটল।উফ এতক্ষনে ঠিকঠাক প্রশ্ন করেছে। আমি হেসে বললাম,
“শ্বশুরবাড়ী থাকি। ”

রায়ান ভাইয়া হেসে আমার কথাটা উড়িয়ে দিয়ে বললো,
“বারবার এক মিথ্যা কথা বলে আমাকে এড়াতে পারবেনা। এর আগেরবারও মিথ্যা বলেছো। পরে আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি তোমার বিয়ে হয়নি তাই প্লিজ আর বলোনা। বুকের বামপাশে ছোট্ট হার্টটা নিতে পারবেনা। ”

“এইবার মিথ্যা না সত্যি বলছি আমি বিবাহিত। এই মাস খানিক হলো বিয়ের। ”

“মিথ্যা কথা আমি আর বিশ্বাস করছি না।তোমাকে দেখে মনেই হয়না বিয়ে হয়েছে। ”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“কেন বিয়ে হলে কি মানুষের একটা হাত বেশি হয় না পা বুঝা যাবেনা কেন? আর বুঝা না গেলেও এটাই সত্যি আমি বিবাহিত। ”

“মিথ্যা কথা বলছো তুমি আর নাহলে মজা করছো।”

আমি বিরবির করে বললাম,
“আরে অদ্ভুত যখন মিথ্যা বলেছি তখন বিশ্বাস করেছে আর এখন যখন সত্যি বলছি তখন অবিশ্বাস করছে। এটা তো ওই রাখালের মতো হয়ে গেল প্রতিদিন বাঘ এসেছে বলে প্রাঙ্ক করতে গিয়ে যেদিন সত্যি বাঘ এলো সেদিন আর কেউ বিশ্বাস করেনা আমার অবস্থাও একই। এখন একে কে বিশ্বাস করাবে আমি বিবাহিত। ”

তখনই পিছন থেকে কেউ বলে উঠল,
“ওহ রোমিও ও বলছে তো ও বিবাহিত তারপরও কেন বিশ্বাস হয়না? ও কি তোমার ভাবি না শালী যে মজা করবে?”

কথাটা শুনেই আমি পিছনে ফিরে তাকালাম। শান দাঁড়িয়ে আছে। আমার চোখে মুখে খুশির রেখা ফুঁটে উঠল।উনাকে দেখে এতো খুশি আমি জীবনেই কখনো হয়নি যতটা আজকে হয়েছি। একদম রাইট টাইমে এন্ট্রি নিয়েছে।

শান আমাদের দিকে এগিয়ে এসে আমার পাশে দাঁড়ালো। রায়ান আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এই মিস্টার আমার ছোট্ট তারার থেকে দূরে সরে দাঁড়ান। আপনি কে?আমাদের মধ্যে কেন কথা বলছেন? ”

শান হেসে বললো,
“আমি তোমার দুলাভাই। ”
শানের কথায় রায়ান রেগে বললো,
“কি আজেবাজে কথা বলছেন? ”
“আজেবাজে না ভাই।সোহা তোমার বোন আর আমি যেহেতু সোহার হাজবেন্ড তাই তোমার দুলাভাই। এইবার বিশ্বাস হয়েছে তো যে ও বিবাহিত। ”

রায়ান পুরা হা হয়ে গেছে। ও অবাক চোখে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না। শান আবার বললো,
“নেক্সট টাইম যেন তোমাকে সোহার আশেপাশেও না দেখি। চলো সোহা। ”

কথাটা বলেই শান আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো। আমি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। উফ আরেকটু হলে আমি হয়তো মেন্টাল হসপিটালেই থাকতাম।

শান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কে ছেলেটা? ”
“আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আমার সিনিয়র। ”
“এতো কথা কিসের? ”
আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম,
“আপনাকে বলবে কেন? যেই হোক আপনার কি?আপনার সাথে তো আমার কথা বলা বারণ। ”

শানের প্রচন্ড রাগ হলো সোহার কথা শুনে। তারপরও নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো,
“চলো আমার সাথে।”
“কোথায় যাবো? ”
“কেন বাসায় যাবে না? ”
“হুম যাবো তো। তবে আপনার সাথে না আমার গাড়িতে। আপনার সাথে দেখলে মা রাগ করবে।”
“তুমি আমার সাথেই যাবে। ”
বলে উনি গাড়িতে উঠতে যাবে তখনই আমি বলে উঠলাম,
“না। ”

আমার কথা শুনেই শান আমার দিকে তেড়ে আসে আমাকে টেনে গাড়ির সাথে চেপে ধরল আর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“কালকে থেকে এক জিনিস সহ্য করে আছি। কি পেয়েছো আমাকে? বুঝলাম মা রাগ করেছে মাকে আমি যেভাবে হোক মানিয়ে নিতাম কিন্তু সাথে তুমিও কেন তালে তাল মিলাচ্ছো?”

আমি পুরা ভয় পেয়ে গেলাম আমার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল। সেদিনের মতো মেরে বসবে না তো। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
“কি করছেন এসব পাবলিক প্লেসে। মানুষ দেখছে ছাড়ুন আমাকে। ”

কথাটা বলতেই শান চারদিকে তাকিয়ে একটু শান্ত হয়ে আমাকে ছেড়ে দিলো। তারপর আমাকে টেনে একটু আড়ালে নিয়ে গেল। উনার দুই হাতে আমার দুইগালের দুইপাশে হাত রেখে নিচু কন্ঠে বললো,

“কেন এমন করছো বলোতো। এতোবার তো মাফ চাইলাম এবার তো মাফ করে দেওয়া উচিত। এখন কি তোমার পায়ে ধরব। ”

উনার কথা শুনে আঁতকে উঠে বললাম,
“ছি ছি এসব কি বলছেন। আমি সেটা কখন বললাম। আপনি আমার বড় আপনি কেন পায়ে ধরবেন।এসব কথা বললেও আমার পাপ হবে। ”

শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“তাহলে কি করবো বলো না।এতোক্ষন ধরে কি বুঝালাম মাথায় ঢুকেনি কিছু। লিসেন এতক্ষন ভালো ভাবে বলেছি এজন্য গায়ে লাগেনি তো। আজকেই যদি তুমি রুমে না আসো তাহলে এমন টর্চার করবো যে সেটা না কাউকে বলতে পারবে না কাউকে দেখাতে পারবে। কথাটা মাথায় ডুকিয়ে নেও মাইন্ড ইট। ”

উনার কথা শুনে আমার হিচকি উঠে গেল কি সর্বনাশা কথা বার্তা ছি ছি! লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছে নাকি আল্লাহ জানে। শান বললো,
“এইবার কোনো বাক্যব্যয় না করে গাড়িতে উঠে বসো। ”

আমি কিছু বলবো তার আগেই শান আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকাতেই আমার বুলি বন্ধ হয়ে গেল শান গাড়ির দরজা খুলে দিতেই আমি চুপচাপ উঠে গেলাম। শান গাড়ি চালাতে লাগলো কিন্তু একটা কথাও বললোনা আমার সাথে। আমিও কথা না বলে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।


গাড়ি বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই আমি গাড়ি থেকে নামতে যাবো তখনই শান বলে উঠলো,
“যেটা বললাম মাথায় থাকে যেন। ”

কথাটা বললেন ঠিকই নাট একবারও আমার দিকে তাকালো। আমি বাড়ির ভিতরে চলে গেলাম। সাথে শানও। ভিতরে যেতেই দেখলাম বাবা চলে এসেছে। আমি দৌঁড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম,

“কেমন আছো বাবা। কতো মিস করছিলাম তোমাকে। ঢাকা গিয়ে তো আমাকে ভুলেই গেছো। এত লেইট করে ফিরলে।”

বাবা হেসে বললো,
“শোনো মেয়ের কথা মাকে কি কেউ বলে। এক মায়ের কাছে গেলে অন্য মা এতো অভিমান করে।ভূমিকাও এই কথাই বলছিল। তোরা দুজনেই আমার কাছে এক বুঝলি। তোকেও আমি অনেক মিস করেছি তাই তো ছুটে চলে এসেছি। ”

“বাবা পুষ্প কেমন আছে?”

“ভালো আছে। পুষ্প তো বায়না ধরেছিল আমার সাথে আসবে তোকে দেখবে কোনো রকমে বুঝিয়ে শুনিয়ে রেখে আসলাম। কিন্তু তোকে যেতে বলেছে তাড়াতাড়ি ঢাকা। ”

পুষ্পর কথা শুনে আমার মনটাও খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটার সাথে প্রতিদিন ফোনে কথা বলি তখনও বায়না করে। আমারও যে ওকে দেখতে মন চায় না তেমন তো নয় কিন্তু সময় কোথায়। আমার ভিতর থেকে একটা চাঁপা নিশ্বাস বেরিয়ে এলো।

শান গাড়ি পার্ক করে এসে ভিতরে দেখতেই চমকে গেল। শানের মুখে মস্ত বড় একটা হাসি ফুঁটে উঠল।যেন কতো প্রতিক্ষিত বস্তু চোখে পড়েছে। এইবার মনে হচ্ছে ওর পাল্লাটা ভারী হবে। শান এগিয়ে গেল বাবার দিকে। গিয়েই সালাম করে শক্ত জড়িয়ে ধরল,

“আব্বাজান এতো বড় সারপ্রাইজ। তুমি ভাবতেই পারবেনা আমি কতো খুশি হইছি। আল্লাহ আমার দিকে মুখ তুলে তাকাইলো। ”

শানের এতো খুশি দেখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম আমি। মানে এতো খুশি হওয়ার কি আছে ভাই বুঝলাম না। শানকে ভিতরে আসতে দেখেই শ্বাশুড়ী মা বললেন,

“যা সোহা রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে। আমার রুমে তোর জন্য জামা রাখা আছে। ”

মায়ের কথা শুনে বাবা চমকে গিয়ে বলে উঠল,
“সোহার জামা তোমার রুমে কেন? ”
মা বললো,
“কারণ সোহা আর শানের সাথে থাকেনা। ”

কথাটা শুনে মনে হলো বাবা আকাশ থেকে পড়লেন। বাবা একবার একবার আমাদের সবার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন,
“থাকে মা মানে?”
“মানে তোমার গুনধর ছেলে কি করেছে জানো বউয়ের সাথে ঝগড়া করেছে। তাই সোহাকে আমি আমার কাছে এনে রেখেছি।

মা আসল ব্যাপারটা চেঁপে গেলেন কারণ এই বিষয়টা যদি বাবা জানতো তাহলে আরো বেশী হার্ট হতো। বাবা খিলখিলিয়ে হেসে বললো,
“ওহ এই ব্যাপার তাই বলো তোমরা সবাই তো আমাকে ভয় পাইয়েই দিয়েছিলে। আচ্ছা মা এমন একটু একটু হয় বুঝেছিস এখন নিজের রুমে ফিরে যা আর সব মান অভিমান মিটিয়ে নে। ”

এতক্ষনে শান বলে উঠল,
“ঠিক বাবা আমিও কালকে থেকে এই মা মেয়েকে একই কথা বুঝাচ্ছি বাট এরা তো আমার কথাই শুনছে না তুমি একটু বুঝাও। ”
মা তেঁতে বললো,
“কি বুঝাবে হাঁ কিছু বুখাবুঝি নাই সোহা তুই যা। ”

আমি মাকে ইতস্তত করে বললাম,
“মা বলছিলাম যে। ”

আমাকে কথা বলতে না দিয়ে মা বললো,
“কিছু বলতে হবে না যা তুই। ”
এইবার বাবা মাকে বললো,
“আচ্ছা যা হয়েছে হয়েছে ছেড়ে দেও না বাচ্চা মানুষ।”
“তুমি তোমার ছেলেকে সাপোর্ট করছো?”
বাবা কিছুটা ভাব নিয়ে বললো,
“এখন তুমি যদি তোমার মেয়েকে সাপোর্ট করো আমাকেও তো আমার ছেলেকে সাপোর্ট করতে হবে। ”
মা ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,
“আচ্ছা ব্যাপার না থাকো তোমার ছেলের সাথে আমার রুমে তোমার প্রবেশ নিষেধ। চল সোহা এরা থাকুক বাপ বেটা। ”

মা বলেই আমাকে নিয়ে চলে আসলো।মানে কিছু সময়ের মধ্যে কি হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। এক ক্যাঁচাল সামলাতে গিয়ে এখানে তো আরেক বাওয়াল শুরু হয়ে গেল এবার কি হবে। দুই মহিলা হনহনিয়ে চলে গেলো আর দুজন পুরুষ গালে হাত দিয়ে তাদের যাওয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।


রাতের দিকে দুই বাপ বেটা গালে হাত দিয়ে বসে আছে আর মশা তাড়াচ্ছে। দুজনেই গেমড়া মুখে বসে। আজকে দুজনেরই বউ চলে গেছে। মিস্টার ইমতিয়াজ ইমরান তো ভাবতেই পারছে না শেষ পর্যন্ত এই বয়সে এসে বউ ছেড়ে থাকতে হবে ভাবতেই ওনার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে।

শান বসে থেকে থেকে বরিং হয়ে গেছে তাই উঠে দাঁড়ালো,

“কি ভাবছো বলোতো? এভাবে গালে হাত দিয়ে বসে থাকলে চলবে?ওইদিকে আমার বউ চলে যাচ্ছে। ”

বাবা অসহায় ভাবে তাকিয়ে বললো,
“কি ভাববো আমার ভাবনা তো সব নিয়ে চলে গেছে। আরে এই পঁচিশ বছরের বিবাহিত জীবনে একদিনও আলাদা থাকিনি। আজকে শুধু তোর জন্য আমাকে বউ ছাড়া হতে হলো সেটা তো একবারও বলছিা না।”

শান কান্না কান্না মুখ কটে বললো,
“বাবা তোমারটা পুরান আমারটা নতুন তোমার থেকে আমাট কষ্ট বেশী হচ্ছে। ”

“পুরান দেখেই তো আমার কষ্ট বেশী হচ্ছে বেটা তোর থেকে সেটা তুই বুঝবি না আগে এতো গুলো বছর পেরো বিয়ের তারপর বুঝবি।”

“আমি কিছু জানি না। তুমি যেমনে পারো তোমার বউকে বুঝাও। বউ তোমার তাই কন্ট্রোল করার দায়িত্বও তোমার। ”

“মাথা খারাপ এখন রুম থেকে বের করেছে পরে বাড়ি থেকে বের করবে এরচেয়ে এটাই ঢের ভালো। ”

শান রেগে বললো,
“হুম বসে থাকোনা তাহলে এখানে এভাবে গালে হাত দিয়ে। ”

ইমতিয়াজ সাহেব একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
“বুঝলি তো মেয়েদের সাথে রাগ করে থাকা মানে নিজেরই লস হওয়া। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় প্রেম ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে নেওয়া। ”

“কালকে থেকে অনেক ক্ষমা চেয়েছি আমি আর নাই এইবার তোমার পালা। ”

ইমতিয়াজ সাহেব হেসে বললো,
“শেষে হারিকাটে মাথাটা আমাকেই দিতে বললি কেমন ছেলেরে।যাই হোক কপালে যখন আছে তবে তাই সই। ”

বলেই দুই বাপ বেটা চললো সোহাদের রুমে।


অনেকক্ষন ধরে রুমের সামনে ঘুরাঘুরি করছে বাট কারো দেখাই পেলো না।হঠাৎ শান বলে উঠল,
“বাবা তুমি কি ভয় পাচ্ছো?”
ইমতিয়াজ সাহেব বললেন,
“তাহলে রুমে ঢুকো এভাবে ভুতের মতো দরজার সামনে ঘুরঘর করলে তো হবেনা। ”
ইমতিয়াজ সাহেব নিজের পাঞ্জাবি ঠিক করতে করতে গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,
“হুম যাচ্ছি যাচ্ছি এতো ধাক্কাধাক্কি করার তো কিছু নেই এতো পারলে তুই যা। ”
শান কটমট করে তাকিয়ে বললো,
“সোজা বলো না আমি ভয় পাচ্ছি তুই যা। তোমার দৌঁড় আমার জানা হয়ে গেছে। ”

ইমতিয়াজ সাহেব মুখটা কাচুমাচু করে ফেললেন ইশ ছেলের সামনে প্রেস্টিজটা এভাবে পাঞ্চার হবে ভাবেনি। শান আবার বললো,
“ভিতরে আমি যাবো বাট যা বলার তুমি বলবে ওকে?”
“ওকে আগে যা তো। ”

শান একবার চারদিকে তাকিয়ে দরজায় নক করার জন্য যেই না হাত বাড়ালো তখনই দরজাটা খুলে গেলো আর শান তাল সামলাতে না পেরে ধপাস করে পরল মেঝেতে।

শানকে এবাবে মেঝেতে গড়াগড়ি করতে দেখে আমি হা হয়ে গেলাম। ইশ ব্যাথা পায়নি তো আমি তুলতে যাবো তার আগেই শান মেঝে থেকে উঠে নিজের শরীর ঝাঁড়তে লাগলো।

মা বললো,
“তোমরা মেঝেতে কি করছিলে?”
শান কিছু বলার আগেই ইমতিয়াজ সাহেব বলে উঠলেন,
“আমরা মেঝে পরিষ্কার করছিলাম। ”

আমি আমার কৌতুহল আটকাতে না পেরে বললাম,
“এবাবে শুয়ে শুয়ে কে মেঝে পরিষ্কার করে। ”

আমার কথা শুনেই মা ফিক করে হেঁসে দিলো।
বাবা মিনমিনিয়ে বললেন,
“না মানে ওই ভালো করে পরিক্ষা করছিলাম মেঝে ঝকঝকে হয়েছে কিনা। ”
মা বললো,
“বাবা পঁচিশ বছরেও তো দেখলাম না নিজের একটা জামা ধুয়েছো আর মেঝে পরিষ্কার করা হচ্ছে ভাবা যায়।যাইহোক তোমাদের পেয়ে গেছি ভালোই হয়েছে আমরাও তোমাদের কাছেই যাচ্ছিলাম একটা ইম্পরট্যান্ট কথা বলতে। ”

শান দ্রুত বলে উঠল,
“যে যার রুমে ফিরে যাচ্ছে তাই তো। ওকে ওকে আমরা মেনে নিয়েছি তোমরা একটু বেশী করেছো তাই মাফ করে দিলাম। বাবা যাও তোমার রুমে সোহা চলো। ”

আমি চোখ পিটপিট করে কয়েকবার ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আপনি তো একাই বলে যাচ্ছেন আমাদেরকেও সুযোগ দেন বলার। ”
“কি সুযোগ দেবো। এটাতো বলবে মা। তাই তো বলো মা। ”
মা বললো,
“আজ্ঞে না মশাই আমি এটাই বলছিলাম যে আজকে তোমাদের জন্য আমরা রান্না করিনি। ”

কথাটা শুনেই বাপ ছেলে দুজনেই স্ট্যচু হয়ে গেল। একে অপরের মুখ দেখাদেখি কটে এলসাথেই বলে উঠলো,
“তাহলে আমরা খাবো কি?”

আমি বললাম,
“সেটা আমরা কি জানি। খেতে হলে রান্না করে খান। ”

কথাটা বলেই আমরা আবার তাদের মুখের উপর দরজাটা আটকে দিলাম। শানের ইচ্ছা করছে নিজের মাথাটা এখন নিজেই দেওয়ালে মারে।
“এখন কি হবে আজকে কি না খেয়ে থাকবো আমি কিন্তু রাঁধতে জানি না? ”
“আমিও জানি না। ”
“তাহলে উপায়? ”

ইমতিয়াজ সাহেবের এবার রাগ চেঁপে গেল,
“ধুর চিন্তা করিস না হয়তো পারিনা তবে চেষ্টা করলে কিছু না কিছু একটা হয়ে যাবে।তারপরও মেয়েদের কাছে হারা যাবে না। আমরাও পুরুষসিংহ।”

বলেই দুজনে চললো রান্না ঘরের উদ্দশ্যে।

অনেকক্ষন পরেও যখন দরজার বাহিরে কারো কথা শুনলাম না তখন আস্তে আস্তে আমরা দরজা খুলে বের হলাম। একবার উকি দিয়ে দেখলাম নেই ওরা। আমি মাকে বললাম,
“মা চলো গিয়ে দেখি কি করছে ওরা। ”
“হুম চল। ”

এরপর আমরা দুজনেই বেরিয়ে গেলাম। আমরা রান্নাঘরে দরজা লাগোয়া ভাবে দাঁড়ালাম এখান থেকে আমরা দেখবো বাট ওরা দেখবে না।

বাবা হাতে একটা মাছ নিলো। ওনার মুখ চোখ কুঁচকে আছে। বাবা মাছটা তাড়াতাড়ি শানকে পাশ করে দিয়ে বললো,
“তুই কর আমার গন্ধে বমি চলে আসতেছে। ”
শান নাক সিটকে বললো,
“নো আমি পারবো না তুমি করো। উফ এই রহিমা আন্টিকেও আজকেই বাড়ি যেতে হলো অদ্ভুত। ”
ইমতিয়াজ সাহেব রেগে বললো,
“তুই খাবি না তাহলে আমি একা কেন করব? তুই কর। ”
“ওকে ওকে দুজনেই করবো একসাথে। ”

কথাটা শুনেই মা আর আমার পেঁট ফেঁটে হাসি আসল।
“মা কি বলে এরা একটা মাছ দুজনে মিলে কাঁটবে। ”
“কথা বলিস না দেখতে থাক কি হয়। তবে তোর বাবার এতো কষ্ট দেখতে পারছি না। ”
“বাবা তোমার তো দেখছি শ্বশুর বাবার জন্য পরাণ পড়ছে তাহলে গিয়ে রান্না করে দিয়ে আসো। ”
আমার কথা শুনে মা মুচকি মুচকি হাসলো।আমি আবারও ঐদিকে মন দিলাম।

বাবা ছুড়ি চাল্লাছে আর শান মাছটাকে ধরে ময়লা ছাড়াচ্ছে। দুজনেই মুখটাকে উত্তর দক্ষিনে ঘুরিয়ে রেখেছে। অনেক কষ্টে বাবা ছেলে মিলে কোনো রকম মাছটা কাটা কাটি করলো। শান ধুম করে নিচে বসে পড়ল। বাবা বললো,
“কি হলো?”
“কিছু না অনেক টায়ার্ড লাগছে। তুমি মাছটা ভেজে ফেলো আমি পেয়াজ মরিচ কাঁটছি। ”

বলেই আবার ওরা কাজ শুধু করলো। পেয়াজ কাঁটতে গিয়ে শানের চোখের জ্বলে নাকের জ্বলে অবস্থা। আর বাবা মাছ তেলের মধ্যে দিচ্ছে না যেন লাফালাফি করছে। আমার হাসতে হাসতে পেঁটে খিল ধরে যাচ্ছে।এমন করে রান্না করার জন্য তো উনাদের নোবেল দেওয়া উচিত। হঠাৎ “আহ” করে একটা আওয়াজ হতেই আমার হাসি আটকে গেল। আপনাতেই হাত মুখে চলে গেল। শানের হাত থেকে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। আমি আর দাঁড়াতে পারলাম না,

“ব্যাস মা অনেক হয়েছে। আমার মনে হয় এইবার আমার ফিরে যাওয়া উচিত। নাউ গেইম ইজ ওভার। ”

বলেই আমি দৌঁড়ে এলাম সাথে মা ও। আমি শানের কাছে গিয়ে অস্থির হয়ে বললাম,
” দেখি আমাকে দেখান কি হয়েছে। ”

আমাকে দেখেই শান আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকালো। আমার হাত ঝাঁড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো উনার হাত থেকে। দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো,

“এখন খুশি হয়েছো তো?”

কথাটা বলেই উনি হনহনিয়ে উপরে চলে গেল। আমি পুরো স্পিচলেস হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
.
চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here