এখানে আকাশটা ভালোবাসার পর্ব ৩৩

#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ৩৩
.
নওশির বলা কথা গুলো এখনো কানে বাজছে রিদিমার।
এভাবে কখনো ভাবেইনি সে।
ভেবেছে কিন্তু এভাবে নয়!
নওশির সাথে গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসেছিল রিদিমা।
বসতেই নওশি বলে,
“তোমাকে কিছু কথা বলি, ছোট হয়েও বলি কিছু মনে করো না”
“বলো”
“ভাবি তুমি কি কাজ টা ঠিক করেছিলে অনিক বা রাফসানার সাথে?”
“আমি আমার ভুলের জন্য খুব বেশি অনুতপ্ত নওশি”
এবারে হেসে ফেলে নওশি।
“হাসছ যে!” অবাক হয়ে যায় রিদিমা।
“ভাবি তোমার এই ভুলে রাফসানার জীবন উল্টোপাল্টা হয়ে গেছে, কিন্তু তোমার এই অনুতপ্ত হওয়া রাফসানার জীবনের কোনো পরিবর্তন করতে পারবে না!”
একটু থেমে নওশি আবার বলতে শুরু করে,
“ভাবি এই সমাজ ব্রোকেন ফ্যামিলির ছেলেমেয়েদের দিকে এখনো বাঁকা চোখে তাকায়, কেউ তাদের মনে রাখে।
তাদের কষ্টের কথা মানুষের কাছে একঘেয়েমি আর আনরোমান্টিক শোনায়।
এই সমাজ তাদের সঠিক অধিকার দিতে পারেনি তাতে সমাজের কোনো অনুতপ্ততা নেই, কিন্তু প্রতিনিয়ত সেই না পাওয়া ব্যথাগুলো মনে করিয়ে দিতে এই সমাজ কোনো দ্বিধা করে না”
চুপচাপ কথা গুলো শুনতে লাগল রিদিমা।
“আসলে কি জানো ভাবি দুঃখের কথা কেউ শুনতে চায় না”
বলেই বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে নওশি।
তারপর মুখ ফিরিয়ে আবার বলে,
“রাফসানাকে আমি বা ওর পরিবারের সবাই ওকে আদরের মাঝে রাখে,
তবুও ওর মায়ের জায়গা এখনো খালি পড়ে আছে,
আর পরেও খালি পড়ে থাকবে,
তুমি এলেও সে শূন্য পড়ে থাকবে।
কেন জানো ভাবি?
মাতৃত্ব বা পিতৃত্ব থেকে মা বা বাবাকে সন্তানরা জন্মগত ভাবেই মা অথবা বাবা হিসেবে চিনে। নতুন করে অচেনা মানুষের মতো পরিচয় দিয়ে,
দামি দামি গিফট দিয়ে মা হওয়া যায় না।
মা হতে গেলে মন লাগে, মাতৃত্ব দিয়ে মা হতে হয়!”
শেষ কথা গুলো বেশ কঠিন স্বরে বলল নওশি।
মাথা নিচু করে রইল রিদিমা।
নওশি বলল,
“মায়ার কাছে তোমার সম্পর্কে কোনো নেগেটিভ কথা আমরা বলিনি, তুমি দেখাই যখন করলে তখন নেগেটিভ কথা কেন বললে? শুধু মাতৃত্ব থেকে দেখা কেন করলে না?”
রিদিমার মনে হলো আসলেই সে অনেক ভুল করেছে।
“ভাবি ভাইয়া বিয়ে করেছে, আর সেটা কিছুদিন আগে, প্রধানত মায়ার জন্য”
রীতিমতো চমকে উঠে রিদিমা।
সে এটা স্বপ্নেও আশা করেনি।
রিদিমা কিছুই বলল না।
নওশি খুব শান্ত ভাবে অল্প কথায় অথচ তার জীবনের ভুল গুলো আজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো!
ধীরে ধীরে উঠে চলে গেল।
যেন সে যুদ্ধক্ষেত্রের পরাজিত এক সৈনিক।
.
সেদিনের পর কেটে গেছে অনেকটা সময়।
মায়াকে আজ হাসপাতালে এসেছে।
টুকটাক অসুস্থতা মায়ার লেগেই আছে গত কয়েকমাস থেকেই।
সেদিনের পর থেকে মায়া আস্তে আস্তে মেন্টালি ঠিক হয়ে গেলেও ফিজিক্যালি অসুস্থ হতে থাকে।
ছোট ছোট অসুস্থতা বলে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। ছোট খাট টেস্টেও কিছু ধরা পড়েনি।
কিন্তু শেষে মায়ার প্রায়ই জ্বর, বমি লেগেই আছে।
টেস্ট করার পর রিপোর্ট নিতে
রায়ান নিয়ে এসেছে মায়াকে।
বিভিন্ন টেস্ট করার পর ডক্টর যা বললেন তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না রায়ান।
এক মূহুর্তে চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল সে!
হতবিহ্বল হয়ে বসে রইল কিছুক্ষণ।
ইদানীং মায়ার ঘন ঘন অসুস্থ হওয়া দেখেই ডক্টরের কাছে এনেছিল রায়ান।
সায়ান দেশের বাইরে গেছে কিছুদিনের জন্য।
কিন্তু এখন কি উত্তর দেবে বাকি সবাইকে!
রায়ানের কোনো কিছু মাথায় আসছে না।
সানজানাকে কল করলো কিন্তু সানজানা ফোন তুললো না।
আরো কিছুক্ষণ আড়ষ্ট হয়ে বসে রইল।
“ডক্টর, কোনোভাবেই কি..!” কথা শেষ করতে পারল না রায়ান।
“দেখুন মিঃ রায়ান আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাব, কিন্তু….!”
হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে রায়ানের।
‘নওশি’
ফোন রিসিভ করে রায়ান।
“ভাইয়া মায়ার টেস্টের রিপোর্ট দিয়েছে?”
“বাবু..”
“কি ভাইয়া?” ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে চমকে গেল নওশি।
“বাবু একবার হসপিটালে আসবি?”
“এক্ষুনি আসছি আমি, কিন্তু মায়া কোথায়? কি হয়েছে ওর?”
রায়ান কোনো উত্তর দেয় না।
নওশি ফোন রেখে হসপিটালে আসার জন্য তৈরি হতে থাকে।
আর রায়ান ডক্টরের সাথে কথা বলে মায়াকে ভর্তি করিয়ে দেয়।
আরজুকে কোনো রকম শাশুড়ির কাছে রেখে ঈশানকে নিয়ে বের হয় নওশি।
“ভাইয়া কি হয়েছে মায়ার?”
“বাবু.. মায়ার লিউকেমিয়া”
কথা শেষ করতে পারে না।
“কিহ!”
“আসলে মায়া একেবারে লাস্ট স্টেজে, হয়তো!”
“কি বললে তুমি! কোথায় ছিলে তোমরা এতদিন! চোখের সামনে মেয়েটা এভাবে শেষ হয়ে যাবে!” চিৎকার করে উঠে নওশি।
“শান্ত হও নওশি” ঈশান বলে।
এতে আরো দ্বিগুণ রেগে যায় নওশি,
“আমার মায়া এভাবে শেষ হয়ে যাবে আর আমি! আমি পারব না…….”
রাগ করতে কেঁদে ফেলে নওশি।
ঈশান আর রায়ান সান্ত্বনা দিতে গিয়ে তাদের চোখের কোনা দিয়েও কয়েকফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
ধীরে ধীরে নওশি নিজেকে শান্ত করে।
পা বাড়ায় মায়ার কেবিনে।
কয়েকমাস বাবার বাড়িতে যাইনি।
আরজু স্কুলে ভর্তি হয়েছে বলেই ব্যস্ততা বেড়েছে।
আর মায়ার সামনে পরীক্ষা আর এখন তানহা আছে তাই আগের মতো বাবার বাড়িতে যাওয়া হয়নি নওশির।
নওশি মায়ার কেবিনে গিয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে!
একি হাল হয়েছে মায়ার।
মুখটা রক্তশূন্য ফ্যাকাশে, যেন একফোঁটা রক্ত নেই মুখে।
নওশির মনে হলো সে দাঁড়াতে পারছে না।
মাথা ঘুরে পড়ে যেতে গেলে পিছন থেকে ধরে ঈশান।
আস্তে আস্তে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
“নওশি একটু শক্ত হও, দেখ মায়ার কিচ্ছু হয়নি, ইনশাআল্লাহ কিচ্ছু হবে না”
নওশি কিছুই বলে না।
“দেখো, দরকার হলে আমরা অনেক বড় ডক্টর দেখাবো, দেশের বাইরে নিয়ে যাব, কিচ্ছু হবে না মায়ার”
নওশি বিভ্রান্ত কণ্ঠে বলে,
“রাফসানার মুখের দিকে আমি তাকাতে পারছি না ঈশান!”
“তুমি ভেঙে পড়লে বাকিদের কে সামলাবে নওশি, শক্ত হও নওশি”
নওশি আর কিছুই বলল না।
শুধু তার একটা কথাই মনে হল,
‘জানিনা কেন আল্লাহ তাদেরই বেশি কষ্ট দেন যারা কষ্ট পেতে থাকে বারবার’
“ঈশান আমি একটু ডক্টরের সাথে কথা বলব”
“না তোমার যেতে হবে না”
“কেন?”
“তুমি কান্নাকাটি করবে, খারাপ লাগবে গিয়ে কাজ নেই তোমার। আমি আর রায়ান যাচ্ছি”
“আমি যাব” জেদের সাথে বলে নওশি।
নওশিকে আটকানো যাবে না বুঝতে পেরে ঈশান বলল,
“বেশ চলো”
ডক্টরের চেম্বারের সামনে এসে নিজেকে শক্ত করে নেয় নওশি।
কঠিন কিছু শোনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়।
“ডক্টর আমরা রাফসানা সায়ান এর অভিভাবক, কি অবস্থা ওর? একটু বিস্তারিত বলবেন” ক্লান্ত কণ্ঠে বলল নওশি।
“দেখুন, মায়ার লিউকেমিয়া হয়েছে।
আর শেষের দিকে।
সত্যি বলতে হাতে সময় খুব কম। ভাল চিকিৎসার মাধ্যমে এর প্রতিকার করা যায়। একুশ দিন পর পর ব্লাড চেঞ্জ করতে হয়। কিন্তু মায়ার অনেক দেরি হয়ে গেছে।
খুব দ্রুত ওর ব্লাড সেল গুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
নতুন কোনো ব্লাড সেল ফর্ম করছে না।”
“ইয়ার্কি পেয়েছেন আপনি! দুইদিনের বাচ্চার এত কিছু হয়ে গেল!”
চিৎকার করে উঠে নওশি।
ঈশান তাড়াতাড়ি বলল,
“চুপ করো নওশি কি হচ্ছে এসব!”
বলে দ্রুত নওশিকে বাইরে নিয়ে গেল।
“ডক্টর প্লিজ আমার বোনের কথায় কিছু মনে করবেন না।
বুঝতেই পারছেন ওর মনের অবস্থা”
বিব্রতভাবে জবাবদিহিতা করল রায়ান।
“ইটস ওকে, আমাদের এমন পরিস্থিতিতে মাঝে মাঝেই পড়তে হয় । টেক কেয়ার অফ হার” বলেই ডক্টর উঠে পড়লেন।
বাইরে বসে আছে নওশি।
“কেন এত ভাবছ আমরা বাইরে নিয়ে যাব মায়াকে।” ঈশানের কথাতে মুখ তুলে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে বসে রইল।
তখনই একজন নার্স খবর দিলো,
রাফসানা সায়ান ঘুম থেকে উঠেছে।
নিজেকে খুব দ্রুত সামলে নিলো নওশি।
তারপর পা বাড়াল মায়ার কেবিনের দিকে।
“আম্মু কেমন আছিস?”
“ভাল, কিন্তু ফুপি আমি হসপিটালে ভর্তি কেন?”
“তুই একটু দুর্বল হয়ে গেছিস তো, কয়েকদিন একটু ডক্টররা টেক কেয়ার করুক”
“ও আচ্ছা”
মায়ার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর নওশি ঈশানকে মায়ার কাছে বসিয়ে রায়ানকে নিয়ে আবার বাইরে আসলো।
“ছোট ভাইয়া কি সে কি! এভাবে হঠাৎ সবকিছু এখনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে” ছলছল চোখে বলল নওশি।
“বাবু, আমি ডক্টরের সাথে বলেছি দেশের বাইরে নিয়ে যাব কিন্তু ডক্টর বলল তাতে হয়তো বা লাভ হবে না। কিংবা তত সময় পাবো না আমরা”
“কি যা তা বলছ, আমার রাফসানার কিচ্ছু হবে না, ও তো সেদিনের বাচ্চা, জীবনটাকে এখনো দেখার সুযোগ পাইনি ভাইয়া” বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে নওশি।
নওশির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে রায়ান বলল,
“বাবু তুই শক্ত হ, বাসায় এখনো জানাইনি, কি করে জানাবো বুঝতে পারছি না।
তবে আমরা মায়াকে যেতে দেব না।
কয়েকদিনের মাঝেই বাইরে নিয়ে যাব”
কিছুক্ষণ পর নওশি বলে,
“বড় ভাইয়া???”
“দেখা যাক”
মায়ার কথা শোনার পর বাসার যে পরিস্থিতি হবে তা কারোর অবিদিত ছিল না।
.
“ইতু তুমি কি শুরু করেছ কি!
যেখানে খুশি যাও, আমাকে জ্বালিয়ো না তো!”
“মানে? আমি তোমাকে জ্বালাচ্ছি!”
“হুম ঠিক তাই, মাইন্ড ইউর অউন বিজনেস, আমাকে আমার মতো থাকতে দাও,
আমি কি তোমাকে সময় দেয় না?”
“আমার কোনো দাম নেই তোমার কাছে? সময় তুমি দাও আমাকে?”
রাহাত আর রাগ ধরে রাখতে পারে না।
চড় মারে ইতুর গালে, আর তখনি তাদের মেয়ে ঘরে ঢোকে।
“বাবাই তুমি মাকে মারলে কেন?”
থতমত খেয়ে যায় রাহাত।
ইতু চুপচাপ মেয়ে নিয়ে পাশের রুমে চলে যায়।
আর কিছুক্ষণ পর চলে যায় বাবার বাড়িতে।
ইতুর কান্না আসছে ভীষণ। কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না।
খুব কষ্ট হচ্ছে।
আচ্ছা সে এমন কিছু বলেনি যাতে রাহাত তাকে মারবে।
নিজেদের মাঝের সমস্যা গুলো একজায়গায় বসে ঠিক করে নিতে চেয়েছিল কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হলো!
মেয়েটার মনেও একটা বাজে প্রভাব পড়লো।
ইতু চলে যাওয়ায় রাহাতের মেজাজ আরো খারাপ হলো!
কেন যাবে ইতু! এত কিসের জেদ!
এমন সময় ফোন দিলো সানজানা।
সানজানার কথা শুনে অবাক রাহাত।
মায়ার লিউকেমিয়া হয়েছে!
প্রচন্ড রাগ এবার প্রচন্ড মন খারাপে রূপ নিলো।
.
পুরোদমে মায়ার চিকিৎসা হলো একমাস।
অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাওয়া হলো।
কিন্তু ফলাফল শূন্য! মায়ার অবস্থা দিনদিন খারাপ হতেই থাকলো।
ডক্টরদের সাথে কথা বলে শেষে মায়াকে আবার দেশে নিয়ে আসা হলো।
মায়া হয়তো বুঝেছিল তার বড় কিছু একটা হয়েছিল।
নিশিকা মায়ার মুখের দিকে তাকাতে পারেনি।
যে মেয়ের ভবিষ্যৎ ভেবে সে বহু ঝামেলা করে সিটিজেনশিপ, পাসপোর্ট সব কিছু করে রেখেছে,
যাতে যেকোনো সময় মায়া চাইলেই চলে যেতে পারে সেই মেয়ে আজ জীবন মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে এসেছে তার কাছে।
নিশিকা নওশির মতো অতটা শক্ত মেয়ে নয়।
সবসময় কেঁদেই যাচ্ছে।
সায়ান তানহা জাহরা সাহরাফ কারোর কথাই আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
জাহরা খাতুন এক প্রকার আধমরা হয়ে পড়ে আছেন।
তার মনে হচ্ছে আর হয়তো উঠবেন না।
সায়ান!
পাগলের মতো হয়ে গেছে…
কারোর সাথেই কথা বলে না।
কাঁদতে থাকে সারাক্ষণ।
বাবা হয়ে মেয়েকে অনেক কিছুই দিতে পারেনি।
যখন থেকে দিতে শুরু করেছে তার ঠিক পরেই মেয়েটা অভিমান করে বহুদূরে যেতে চাইছে।
এ অভিমান সায়ানের সইবে কি করে!
হাসপাতালে মায়ার পাশে বসে আছে নওশি, ঈশান, তানহা, রোশনি, সাহরাফ আর সানজানা।
সায়ান মায়ার পাশে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না।
মায়ার ফ্যাকাশে রক্তশূন্য মুখ তাকে প্রতিনিয়ত ছুরি দিয়ে আঘাত করে।
“ফুপি…” ক্ষীণ কণ্ঠে ডাকল মায়া।
“কি রে সোনা?”
“সবাইকে একটু যেতে বলো?”
নওশির ইশারায় সবাই চলে যায়।
“কি রে ময়না? কি বলবি?”
“ফুপি কাল আমার মাকে একটু আসতে বলবে?”
চমকে উঠে নওশি।
খুব নিচু স্বরে বলল,
“কার কথা বলছিস তানহা? সে এখানে আছে, ডাকবো?”
“আমার মা রিদিমা” কেঁপে উঠল মায়ার কণ্ঠ!
“আচ্ছা সে তুই সুস্থ হয়ে যাবি মা, এত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন?”
শুধু মায়ার অসুস্থতা মায়ার কাছে ঢাকতে নিজের কান্না চেপে উত্তর দিলো নওশি।
নওশির কথায় কোনো উত্তর দেয় না মায়া।
শুধু চোখের কোণা থেকে মুক্তোর মতো কয়েকফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসে নওশি।
পবিত্র এই বাচ্চা মেয়েটার অশ্রু সহ্য করার ক্ষমতা নওশির ছিল না।
বাইরে বারান্দায় এসে কান্না করতে থাকে নওশি।
শুধু তার মনে হচ্ছিল শরীরের সব শক্তি নিঃশেষ করে নিয়ে কাঁদতে পারত!
জন্মের পর থেকে মায়া সবচেয়ে বেশি থেকেছে তার কাছে।
যতটা সে তার বাবার কাছেও থাকেনি।
আজ সেই মা তুল্য নওশির পক্ষে এসব সহ্য করা বড্ড দুঃসহ হয়ে উঠেছে!
সবাই এগিয়ে আসে নওশির দিকে।
সবার চোখেই একই প্রশ্ন “কি হয়েছে?”
রায়ান ছুটে যায় মায়ার কেবিনের দিকে।
মায়া ঠিকঠাক আছে দেখে আবার ফিরে আসে।
নওশি কোনো মতে উত্তর দেয়,
“আমি ঠিক আছি, তোমরা যাও রাফসানার কাছে।”
সবাই গেলে নওশি ঈশান কে ডেকে মায়ার বলা কথা গুলো বলে
“এতদিন মায়ার অসুস্থতার মাঝে রিদিমার কাছে কোনো খবর দেওয়া হয়নি।
কাজটা ঠিক হয়নি।
কিন্তু এদিক নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত ছিল এসব ভেবে দেখার সময় হয়নি।”
ঈশান বলে,
“বেশ নাম্বারটা দাও আমি গিয়ে নিয়ে আসব কাল”
“হুম” বলে রিদিমার অফিসের ঠিকানা আর নাম্বার দিয়ে দেয় নওশি।
ঈশান ভাবতে থাকে একজন মাকে কিভাবে তার সন্তানের এত বড় অসুস্থতার খবর দেবে!
কিভাবে!
এতটা শক্তি কি তার আছে!
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here