#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_২১
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি
পদ্ম ইয়াশের দিকে তাকাল। মুখ লজ্জায় লাল হয়ে আছে। তার মাঝে একটু রাগিভাব নিয়ে বলল, ব্ল্যাকমেইলার। তারপর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কোনোমতে রুম ছেড়ে পালালো।
.
.
.
.
পদ্ম এক দৌঁড়ে ইরিনাদের কাছে চলে এল। এসেই হাঁপাতে লাগল। ওকে দেখে সবাই এগিয়ে এল। একটু স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াতেই ইরিনা বলল, শেষ পর্যন্ত পেয়ে গেল?
পদ্ম- পাবে না। তোমার ভাই তো একটা মিচকি নেংটি ইঁদুর।
ইরিনা- মিচকি নেংটি ইঁদুর!
ইনু- ভাইয়া কি করল?
পদ্ম- দেখলাম খুঁজে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি দরজাও আটকে দিলাম। পরে দেখি সে রুমে! কেমনে কি? কোন ফাঁকে আবার রুমে ঢুকেছে টেরই পাইনি।
নিলা- তখনই ধরা খেলি নাকি?
পদ্ম- না, আরও আগে।
রাহা- কি করে?
পদ্ম- না মানে খেয়েছি আরকি একভাবে।
রিনি- বল না, বল না।
ইরিনা- হ্যাঁ রে, কি করে ধরা খেলি?
পদ্ম- আরে বাবা খেয়েছি আরকি।
মনিকা- কি এমন হল যে আমার জানু তোমাকে চিনে ফেললো।
ইরিনা কানের কাছে এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে রে? বলতে চাচ্ছিস না। পদ্মও ইরিনার কানের কাছে এসে নিচু স্বরে বলল, আমার একটা তিল দেখে চিনে ফেলেছে।
ইরিনা- কোথার?
পদ্ম লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। ইরিনা কি বুঝে বলল, থাক। কিন্তু জুতা পেল কেমনে?
পদ্ম- কি জানি, কেমনে বুঝে ফেলেছে আমার পায়ে আদনান ভাইয়ের জুতা।
নিলা- হয়ত হিসাব করে মিলিয়ে ফেলেছে।
রাহা- কি হিসাব?
নিলা- নিশ্চয়ই ও সারা রুম খুঁজেছে। কোথাও পায়নি। তারপর কোনো কারনে আন্দাজ করে নিয়েছে যে জুতা পদ্মের পায়ে।
পদ্ম- একটু হোঁচট খেয়েছিলাম। তখনই মনে হয়।
মনিকা- তোমার দ্বারা একটা কাজও হবে না। বলেছিলাম আমাকে দিতে।
ইনু- থাক, মনি আপু। তুমি তো ভাইয়াকে দেখলেই জানু জানু করে দৌঁড়ে চলে যেতে ওর কাছে।আর সব আগেই শেষ হয়ে যেত।
মনিকা- হুহ্, তোমার পদ্ম আপু কি কাজটা করেছে? শেষে তো ধরাই খেয়েছে।
ইরিনা- তুই এত সহজে ময়দান ছেড়ে এলি?
পদ্ম- তোমার ভাই ব্ল্যাকমেইল করে জুতা নিয়ে নিয়েছে নইলে কি এত সহজে ছাড়ি?
রাহা- ও আবার কি ব্ল্যাকমেইল করল?
পদ্ম- তার ব্ল্যাকমেইল করার জন্য আবার কিছু লাগে নাকি।
নিলা- ইস্, ভেবেছিলাম বলদগুলাকে আরেকটু নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাব। আমাকে বলে কি না, আমি একটা চিজ। কালকে রাতেও কথা বলার মধ্যে ঘুমিয়ে গিয়েছিল।
সবাই- কি?
নিলা জিভ কাটল। কেউ জানত না আদনানের সাথে নিলা রাতে ফোনে কথা বলেছিল। পদ্ম নিলার কাছে এসে বলল, থাক, আর ঘোরাতে হবে না। আজকে বাসররাতেই না হয় শোধটা তুলো। আর সারাটা জীবন তো পড়েই আছে।
এমন সময় একটা মেয়ে এসে বলল নিলাকে নিয়ে যেতে। ওরা নিলাকে নিয়ে নিচে গেল। স্টেজে উঠানোর সময় ইয়াশের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল পদ্মের। পদ্ম ইরিনাকে একটা গুঁতা দিয়ে বলল, দেখো আপু, তোমার ভাই কেমন ভেটকি মাছের মতো হাসছে।
ইরিনা- জিতে গেছে তো তাই।
পদ্ম- কচু।
পদ্ম মুখ বাঁকা করে ভেংচি কাটল ইয়াশের দিকে তাকিয়ে। ইয়াশও কম গেল না। ওর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দিল। সাথে সাথে লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলল পদ্ম। আর তাকানোর সাহস পেল না।
.
.
.
.
নিলা আর আদনানের বিয়ে হয়ে গেল। বিদায়ের সময় প্রচুর কান্না করল নিলা। পদ্ম সারাক্ষণ নিলার দিকে তাকিয়ে রইল। ইয়াশ পেছন থেকে ফিসফিস করে বলল, নিজের বিয়ের কথা মনে পড়ছে?
পদ্ম- হুম।
ইয়াশ- এভাবে কাঁদবে বুঝি?
পদ্ম- হুম। বাবা মাকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট কেবল মেয়েরাই জানে।
ইয়াশ- আচ্ছা, তোমার বিয়ের সময় তুমি ইচ্ছা মতো কাঁদবে। তারপর থেকে আর কাঁদতে দেবো না। কাঁদলে খবর আছে।
পদ্ম ইয়াশের দিকে তাকাল। ওদিক থেকে আদনানের বাবা ডেকে বলল, ইয়াশ, তুমি কি আদনানের সাথে যাবে?
ইয়াশ- জ্বি আঙ্কেল। আসছি।
ইয়াশ পদ্মকেও টেনে নিয়ে এল। পদ্মকে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসিয়ে নিজে ড্রাইভারের সিটে বসল। মনিকা ইয়াশের সাথে বসতে চেয়েছিল। কিন্তু ইয়াশ তার আগেই পদ্মকে বসিয়ে দিল ওর পাশে। বিয়ে বাড়িতে আর ঝামেলা করল না। পেছনে নিলার পাশে বসে পড়ল। রাফি বসল আদনানের পাশে। সবাই গাড়িতে উঠতেই ইয়াশ বেরিয়ে গেল আদনানের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
সন্ধ্যার একটু পরে ওরা আদনানের বাড়ি গিয়ে পৌঁছাল। সবাই ওদের জন্যই অপেক্ষা করছিল। গাড়ি ঢুকতেই অনেকগুলো বাচ্চা ‘বউ এসেছে বউ এসেছে’ বলে বাড়িতে খবর দিতে গেল। ওদের গাড়ি ঢোকার পর সবগুলো গাড়ি একে একে বাড়ির ড্রাইভিং ওয়েতে ঢুকল। কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো বাড়ি আবার মেহমানে গিজগিজ করতে লাগল। বউকে বরন করে ঘরে তুলল আদনানের মা। নিলাকে নিয়ে গেল ফ্রেশ হতে আর আদনান নিচে বন্ধুদের সাথে গল্প করতে বসল।
আদনান- ভাই তুই না থাকলে কি যে হতো।
ইয়াশ- আরে ধুর।
রাফি- কিন্তু ভাই তুই বুঝলি কেমনে ওটা নিলা না পদ্ম।
ইয়াশ- আন্দাজ করেছি আরকি।
আদনান- ভাই, তোর আন্দাজ তো সেই। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
ইয়াশ- কি বল।
আদনান- কাল নিলাদের বাড়ি কি হয়েছিল?
ইয়াশ চুপ করে গেল। রাফি বলল, আমিও ব্যাপারটা ভাবতে পারিনি এমন হবে। যে ছেলে কোনদিন কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না সে এই কান্ড করে বসল! পদ্ম কি করে তোর বউ হল? কবে থেকে?
ইয়াশ- যখন থেকে আমার বুঝ হয়েছে তখন থেকে।
.
.
.
.
রাত বারোটার পর আদনান বাসর ঘরে ঢোকার অনুমতি পেল। আদনানকে সাহস দিয়ে পাঠিয়ে সবাই একটা রুমে বসে পড়ল। ট্রুথ ডেয়ার খেলবে। সবাই গোল হয়ে বসল। ইয়াশ বসল পদ্ম বরাবর যাতে প্রশ্ন করতে পারে। মনিকা বসল ইয়াশের পাশে। নয়জনের মাঝখানে একটা বোতল।
ইরিনা- সবাই রেডি?
সবাই- হ্যাঁ।
ইরিনা বোতলটা ঘোরাল। বোতলটা ঘুরে থামল মনিকা আর আকাশ বরাবর। বোতলের মুখ আকাশের দিকে। মনিকা প্রশ্ন করল, ট্রুথ না ডেয়ার?
আকাশ- ট্রুথ।
মনিকা- কখনও কারো প্রেমে পড়েছিস?
আকাশ- হুম।
মনিকা- কে সে?
আকাশ উত্তর দেওয়ার আগেই ইরিনা থামিয়ে দিয়ে বলল, ওয়ান কোশ্চেন ওনলি। তারপর বোতল আবার ঘুরিয়ে দিল। বোতলটা ইয়াশ আর পদ্মের দিক করে থামল। ইয়াশ জিজ্ঞেস করল, ট্রুথ না ডেয়ার?
পদ্ম- ট্রুথ।
ইয়াশ- কাকে তুমি ভালোবাস? তার নাম জানতে চাই।
চলবে……