পদ্মপাতার জল পর্ব ২২

#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_২২
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি

ইয়াশ- কাকে তুমি ভালোবাস? তার নাম জানতে চাই।

পদ্ম- তার নাম? জানা নেই। তবে আমি যখন স্কুলে যেতাম তখন সে আমার পিছু নিত। কলেজে যাওয়ার সময়ও পিছু নিত। সব সময় কালো জ্যাকেট, ক্যাপ আর মাস্ক পরা থাকত। এমন ছায়া সঙ্গীটাকে খুব ভালো লাগত। কখন যে তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম নিজেও জানি না।

সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। হয়ত কাহিনী জানার আগ্রহে। কিন্তু ও বেশি কিছু বলল না। বোতলটা আবার ঘুরিয়ে দিল। এভাবে চলতে থাকল ওদের খেলা। একবার আকাশ আর মনিকার দিকে থামল। আকাশ জিজ্ঞেস করল, ট্রুথ না ডেয়ার?

মনিকা- ডেয়ার।

আকাশ- ইয়াশকে প্রপোজ করতে হবে।

ইয়াশ মনিকার দিকে তাকাল। মনিকার চোখ আনন্দে ঝলমল করছে। ইয়াশকে উঠে দাঁড় করাল। তারপর ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল, উইল ইউ ম্যারি মি?

ইয়াশ- নো।

মনিকা দাঁড়িয়ে বলল, কেন ইয়াশ?

ইনু- এতদিন পরে ভাইয়ার নাম মনে ছিল মনি আপু?

মনিকা- জাস্ট সাট আপ। কেন তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারবে না। ঐ পদ্মের জন্য? যে তোমাকে ভালোবাসে না। তার জন্য?

ব্যাপারটা সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে দেখে ইরিনা বলল, মনিকা কি হচ্ছে? আমরা খেলতে বসেছি। তোমার প্রপোজ করার কথা ছিল। করে ফেলেছ। বসো এখন। মনিকা বসল না। বেরিয়ে গেল রুম থেকে। সবার খেলার মুড নষ্ট হয়ে গেল। রাহা বলল, আমার খেলতে ইচ্ছে করছে না।

ইনু- আমারও না।

রিনি- গানের কলি খেলবে?

ইরিনা- তা খেলা যায়। খেলবে?

সবাই রাজি হয়ে গেল। পদ্ম, ইরিনা, ইনু আর রিনি একদলে চলে গেল। ইয়াশ, রাফি, আকাশ আর রাহা একদলে। দুই দলের লিডার ইয়াশ আর পদ্ম। ওরা একটা কয়েন টস করল। টসে ইয়াশ জিতল। ওরা আলোচনা করে ঠিক করল ওরা আগে গান গাইবে।

ইয়াশ- আমরা আগে গান গাইবো।

পদ্ম- গাও।

ইয়াশ রাফিকে বলল আদনানের গিটারটা নিয়ে আসতে৷ গিটার আনতেই সুর ঠিক করে নিল। তারপর শুরু হয়ে গেল গানের কলি খেলা।
.
.
.
.
♪কোনো এক রূপালী দুপুরে, তোমার সাথে দেখা…
কেন তা বুঝেও বুঝি না …
জানালার কাছে থমকে থাকে…অবুজ কিছু কথা…
যেন তা শুনেও শুনছ না…

আমি তোমায় খুঁজে বেড়াই…ঘুরে ঘুরে হারায়…
তুমি অবাক চোখে তাকিয়ে কাকে দেখো।
ঘুমভাঙ্গা শহরে অচেনা প্রহরে…

উদাসীন এক বিকেলে নিজেকে ছাড়িয়ে…
আমি তোমায় নিয়ে কোথায় যাবো জানি না …
হা-হা হারিয়ে.…অথবা পালিয়ে…
তুমি তোমার মতো…
আমি নিজেরই মতো…

পাওয়া না চাওয়াতে-চাওয়া না পাওয়ারি ঠিকানা…
মুছে গিয়েছে সব সীমানা…
বিবাগী বাতাস…উড়ছে ভালোবাসা…
তুমি তা দেখছ কি দেখছ না…

আমি তোমায় খুঁজে বেড়াই…ঘুরে ঘুরে হারায়…
তুমি অবাক চোখে তাকিয়ে কাকে দেখো।
ঘুমভাঙ্গা শহরে অচেনা প্রহরে…

উদাসীন এক বিকেলে নিজেকে ছাড়িয়ে…
আমি তোমায় নিয়ে কোথায় যাবো জানি না …
হা-হা হারিয়ে.…অথবা পালিয়ে…
তুমি তোমার মতো…
আমি নিজেরই মতো…♪
.
.
.
.
ইয়াশ গান শেষ হতেই সবাই তালি দিয়ে উঠল। গানের পুরোটা সময় ইয়াশ পদ্মের দিকে তাকিয়ে ছিল। সেভাবেই বলল, এবার তোমার পালা।

পদ্ম- দাও।

ইয়াশ- যদি না পার তবে কি হবে?

পদ্ম- কি হবে?

ইয়াশ- যা করতে বলব তাই করতে হবে। রাজি?

পদ্ম- রাজি। বলো।

ইয়াশ- ঝ দিয়ে গান গাইতে হবে।

ইনু- এটা কি হল? ঝ দিয়ে গান হয় নাকি!

রিনি- ভাইয়া এটা কিন্তু চালাকি।

রাফি- চালাকির কি আছে? খেলা মানে খেলা। রুলস মানে রুলস। বাংলা বর্ণমালায় পঞ্চাশটা অক্ষর আছে। আমরা যেকোন একটা দিতেই পারি।

রাহা- ঠিক।

ইনু- আপু।

ইরিনা- হ্যাঁ রে পদ্ম, পারবি? না হলে তো …

আকাশ- দশ সেকেন্ড সময়। দশ… নয়… আট…

ইরিনা, ইনু আর রিনি অস্থির হয়ে গেল। ওরা কিছুতেই ঝ দিয়ে গান মনে করতে পারছে না। পদ্ম চুপ করে বসে আছে। মুখে মুচকি হাসি। ইয়াশ ওর দিকে একটু পর পর তাকাতে লাগল। এদিকে সবাই কাউন্ট ডাউন করতে লাগল।

সবাই- চার… তিন… দুই………

ওদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে পদ্ম হঠাৎ গান শুরু করে দিল। ইয়াশ বুঝতে পারল এতক্ষণ ওর মুচকি হাসার কারন।
.
.
.
.
♪ঝুম রেরে রারে রারি রেরে
ঝুম রেরে রারে রারি রেরে
ঝুম রেরে রারে রারি রেরে

তুমি আমায় ডেকেছিলে এক মেঘে ডাকা দিনে
কেন আমি দেইনি সাড়া
আমার চোখে আকাশ দেখে তুমি বলেছিলে কিছু
বুঝিনি কেন সেই ইশারা

এখন আমি অন্য আমি হয়ে ছুটে চলি তোমারই শহরে
হারিয়ে চোখের যত ঘুম

ঝুম উড়ে উড়ে দূরে দূরে
ঝুম মেঘে মেঘে ডানা মেলে
ঝুম ঘুরে ঘুরে তারে ডাকি

ঝুম উড়ে উড়ে খুঁড়ে খুঁড়ে
ঝুম মেঘে মেঘে ডানা মেলে
ঝুম ঘুরে ঘুরে তারেই খুঁজি

আলো আঁধারির এ মায়ায়
এই অবেলায়, মন যে হারায়
চেনা অচেনা কত পথ
হঠাৎ কেন থমকে দাঁড়ায়

তোমার আমার ফেলে আসা যত রঙিন মলিন স্মৃতি
লুকিয়ে অবুঝ ঠিকানায়
অচিন মনে অচিন কোন কোনে বন্দি আজও আমি
ভুল সে পথের সীমানায়

এখন আমি অন্য আমি হয়ে ছুটে চলি তোমারই শহরে
হারিয়ে চোখের যত ঘুম

ঝুম উড়ে উড়ে দূরে দূরে
ঝুম মেঘে মেঘে ডানা মেলে
ঝুম ঘুরে ঘুরে তারে ডাকি

ঝুম উড়ে উড়ে খুঁড়ে খুঁড়ে
ঝুম মেঘে মেঘে ডানা মেলে
ঝুম ঘুরে ঘুরে তারেই খুঁজি♪
.
.
.
.
সবাই খুব জোরে জোরে তালি দিতে লাগল। ইয়াশের মুখের কোনায় হাসি ফুটে উঠল। আস্তে আস্তে ওদের গানের আসর জমজমাট হয়ে উঠল।

হঠাৎ পদ্মের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসল। পদ্ম ম্যাসেজটা দেখে উঠে রুমের বাইরে চলে গেল। ইয়াশও একটা ছুঁতো ধরে বেরিয়ে এল ওর পিছু পিছু। পদ্ম সোজা চলে এল ছাদে। দরজা হালকা ভেজানো ছিল। হালকা ঠেলা দিতেই খুলে গেল।

পদ্ম- মনিকা, মনিকা?

মনিকা রেলিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। বাতাসে ওর চুল উড়ছে। পদ্ম জিজ্ঞেস করল, এতরাতে ছাদে কি করছ? আর ডেকেছ কেন?

মনিকা- ইয়াশকে ছেড়ে দাও।

পদ্ম- মানে?

মনিকা- মানে কি বুঝতে পারছ না? কেন পড়ে আছো ওর পেছনে? টাকার জন্য? কত টাকা লাগবে? আমি দেবো। যত টাকা লাগে। শুধু ইয়াশকে ছেড়ে দাও।

পদ্ম- আমি তো তাকে আটকে রাখিনি।

মনিকা- আমি এত কিছু জানতে চাই না। তুমি তো অন্য কাউকে ভালোবাসো তাই না? তাহলে ইয়াশ কেন?

পদ্ম- দেখো, আমি তোমার ইয়াশকে বেঁধে রাখিনি। আর কেউ যদি আমার কাছে নিজে আটকে থাকতে চায় তবে আমি কি করতে পারি?

মনিকা- কিন্তু আমার যে ইয়াশকে চাই।

পদ্ম- তোমাকে অসুস্থ মনে হচ্ছে। নিচে চল।

মনিকা- না। আমার ইয়াশকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।

পদ্ম- আমি কি করব?

মনিকা- বুঝেছি, তুমি এভাবে শুনবে না। তুমি এখানে থাকলে আমি ইয়াশকে কোনোদিন পাবো না।

পদ্ম- তুমি কি করতে চাও?

কিছু বুঝে ওঠার আগেই মনিকা পদ্মকে রেলিং থেকে হঠাৎ ধাক্কা মারল।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here