পারলে ঠেকাও পর্ব -২০

#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মধুজা হাতে একটি টেডি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার মাথার উপরে এই টেডিটি রয়েছে। সাথে একটি চিরকুট। যেখানে লেখা,
‘এই টেডিটি আমার প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য। টেডি ডের শুভেচ্ছা।’

মধুজা টেডিবিয়ার টির দিকে তাকায়। যার মাঝখানে একটি লাভ সাইনের মধ্যে A+M লেখা। মধুজা টেডিবিয়ার পেয়ে খুশি হয়ে যায়। অক্ষরের কথা ভেবে বলে,
‘পাগলা ডাক্তার তো ভালোই পাগল হয়ে গেছে। কিরকম ভাবে সব ডে পালন করছে। আমরা তো প্রেমিক প্রেমিকা নই যে এগুলো পালন করব। আমরা তো স্বামী-স্ত্রী।’

কথাটা বলে নিজেই অনেকটা লজ্জা পায় মধুজা। আসলেই তো তারা স্বামী-স্ত্রী। সেই হিসেবে হলেও এই দিনগুলো পালন করতে পারে। মধুজা এ বিষয়ে আর না ভেবে নিচে আসে খাওয়ার জন্য। সকালে ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে পড়ে। বাইরে এসে সিরাজ হাসানের সাথে যোগাযোগ করে। দুজনে মিলে আবার ছদ্মবেশ নেয়। আজ মধুজার অপারেশনের ডেট। সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া শেষ।

মধুজা নিজের রিপোর্টগুলো ইতিমধ্যেই পুলিশকে দিয়েছে। যা দেখে পুলিশ মধুজাদের কথায় বিশ্বাস করেছে। আজ অপারেশন টাইমে সব আসল অপরাধীকে গ্রেফতার করা হবে।

সিরাজ মধুজাকে বলে,
‘আজ আমাদের সামনে অনেক ভালো সুযোগ রয়েছে। যে করেই হোক আজ সব সত্য সামনে আনতে হবে।’

‘হ্যা, আমি খোজ নিয়ে জেনেছি ডক্টর কেয়া রয়েছে আমার অপারেশনের দায়িত্বে। তিনি যে এসবের সাথে জড়িত সেটা তো আমরা আগে থেকেই জানি কিন্তু,,,’

‘কিন্তু কি?’

‘এর পেছনে একজন রাঘব বোয়াল আছে। তাকে ধরাই আমাদের মূল উদ্দ্যেশ্য হবে। তাকে ধরতে পারলেই এই অপরাধ চক্রটির ধ্ব*ংস নিশ্চিত হবে।’

‘দেখা যাক আমরা কত কি করতে পারি। এখন একমাত্র আল্লাহই ভরসা।’

অক্ষর হাসপাতালে অপেক্ষা করছে মধুজার জন্য। তার অনেক টেনশনও হচ্ছে। যদিওবা সবকিছু প্রায় ঠিকঠাকই আছে। তবে কিছু সমস্যা আছে। ঝুকি যে একেবারেই নেই তেমনটা নয়। অনেক বেশি ঝুকি আছে। এইরকম একটি অর্গান ট্রাফিকিং এর সাথে যারা জড়িত তারা নিশ্চয়ই অনেক ভয়ানক হবে। তাদের হাতে মধুজা পড়ে গেলে মধুজার ক্ষতি হতে পারে এটাই ভেবেই অক্ষরের টেনশন হচ্ছে।

ডাক্তার কেয়া ও রাহেলা খানমকে একসাথে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় অক্ষর। তার সন্দেহ এখন যেন বিশ্বাসে পরিণত হচ্ছে যে ডাক্তার রাহেলাই রয়েছে এসবের পেছনে।

৩৯.
মধুজা ও সিরাজ হাসপাতালে এসে পৌছেছে। সিরাজ মধুজার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছিল,
‘চিন্তা করিস না মা দেখবি তোর অপারেশনের পর তুই একদম ঠিক হয়ে যাবি।’

মধুজাও সমান তালে অভিনয় করে যেতে থাকে। তাদের দেখে যা কারোরই মনে হবে যে মধুজা আর সিরাজ সত্যিই বাবা মেয়ে। ডক্টর কেয়ার তত্ত্বাবধানে আজ অপারেশন হওয়ার কথা মধুজা। তবে এখানে মধুজার ছদ্মনাম দেওয়া হয়েছে মরিয়ম।

একজন নার্স এসে মধুজার সামনে দাড়িয়ে বলে,
‘তোমার নাম কি মরিয়ম?’

‘হুম।’

‘তোমার অভিভাবক কোথায়?’

মধুজা সিরাজের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,
‘উনি আমার আব্বা।’

নার্স এবার সিরাজকে বলে,
‘আপনার কাছে অপারেশনের টাকা আছে তো? টাকা ছাড়া কিন্তু অপারেশন করা সম্ভব নয়।’

‘জ্বি আছে।’

‘গুড। তাহলে আপনি টাকা জমা দিন রিশেপসনে। তারপর অপারেশন শুরু হবে।’

নার্সটি মধুজাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সিরাজ যায় টাকা দিতে। তাকে একটি বন্ড পেপারের মধ্যেও সাইন করতে হয়।

মধুজাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে আসা হয়। মধুজা মনে সাহস সঞ্চার করে। আজ যে করেই হোক তাকে সব সত্য সামনে আনতে হবে। ডক্টর কেয়া এখনো আসেন নি। অন্যান্য সব ডক্টর ও নার্সরা মিলে অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

একজন ডক্টর মধুজাকে বেডে শুইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর ডক্টর কেয়াও এসে উপস্থিত হয়। মধুজা এবার প্রস্তুত হয় মোক্ষম চালের জন্য।


অক্ষর ও সিরাজ হাসান মিলে হাসপাতালের বাইরে দাড়িয়ে আছে। একটু পরই পুলিশের আসার কথা। আজই সব অপরাধীরা সামনে আসবে। সিরাজ হাসানের ফোনে আচমকা কারো কল আসে। কল রিসিভ করে একটু দূরে গিয়ে কিছু কথা বলেন তিনি।

কথা বলা শেষ করে সিরাজ হাসান অক্ষরের কাছে এসে বলে,
‘কিছু জরুরি কাজে আমাকে এখনই হাসপাতালের মধ্যে যেতে হবে। আপনি এখানেই থাকুন। পুলিশ সদস্যরা চলে এলে তাদের নিয়ে আসবেন।’

অক্ষর বলে,
‘আচ্ছা আপনি যান।’

সিরাজ হাসান হাসপাতালের ভেতরে চলে যায়। অক্ষর সেখানেই দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিল।

৪০.
অপারেশন থিয়েটারে মধুজার মুখ দেখে ডাক্তার কেয়ার অনেক চেনা চেনা লাগে। আগে কোথাও যেন দেখেছিল বলে মনে হচ্ছে। একজন নার্স এসে ডাক্তার কেয়ার কানে কানে কিছু বলে। নার্সের কথা শুনে ডাক্তার কেয়া বাকা হেসে বলে,
‘আমি বুঝতে পেরেছি আমাকে কি করতে হবে।’

একটি ইঞ্জেকশন বের করে কয়েকজন ডাক্তার ও নার্সকে ইশারা করে ডাক্তার কেয়া বলেন,
‘মেয়েটিকে শক্ত করে চেপে ধরো যেন নড়তে না পারে।’

কেয়ার কথা শোনামাত্র তারা তাই করে। মধুজা বুঝতে পারে না এসব কি হচ্ছে। কেয়া এগিয়ে এসে মধুজার শরীরে ইঞ্জেকশন পুশ করে বলে,
‘তোমার খেলা শেষ মধুজা। কি ভেবেছ এত সহজে আমাকে ধরতে পারবে? সো স্যাড। এখন দেখ তোমার সাথে কি হয়।’

কিছুক্ষণের মধ্যেই মধুজা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। কেয়া দুজন নার্সকে বলে,
‘মেয়েটিকে এখান থেকে সরাতে হবে। ফাস্ট।’

কেয়ার কথা শুনে সেই দুজন মধুজাকে নিয়ে যায়। কেয়া এরপর একজন নার্সকে বলে,
‘তুমি যাও মধুজার সাথে ড্রেস অদল বদল করে এখানে শুয়ে পড়ো।’


পুলিশকে নিয়ে ডাক্তারের কেবিনে প্রবেশ করে থতমত খেয়ে যায় অক্ষর। সে দেখতে পায় মধুজার বদলে অন্য একটি মেয়ে শুয়ে আছে। ডাক্তার কেয়া বলেন,
‘এখানে কি করছেন আপনারা? একটা ক্রিটিকাল অপারেশন চলছে এখানে।’

অক্ষর কিছু বুঝতে পারছিল না। পুলিশও বেশ অবাক হয়ে গেছে। তারা তো এসেছিল অরগান ট্রাফিকিং এর সদস্যদের ধরতে। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি দেখে তেমন কিছু তো মনে হচ্ছে না।

অক্ষর কেয়াকে প্রশ্ন করে,
‘মধুজা কোথায়?’

কেয়া অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
‘মধুজা কে? তার খবর আমি কিভাবে জানব? এখানে মরিয়ম নামের এই মেয়েটির অপারেশন চলছে।’

‘একদম মিথ্যা বলবেন না। ভালোয় ভালোয় বলুন মধুজা কোথায় নাহলে কিন্তু আমি,,’

সিরাজ হাসানও ভেতরে চলে আসে।তাকে দেখে অক্ষর ভরসা পায়। বলে,
‘আপনি এসে গেছেন।’

সিরাজ হাসান অক্ষরকে উপেক্ষা করে ডাক্তার কেয়াকে বলে,
‘আমার মেয়ের অপারেশন ঠিকভাবে হয়েছে তো ডাক্তার ম্যাডাম? আর এখানে এত ভিড় কেন?’

‘আরে দেখুন না ডাক্তার অক্ষর চৌধুরী এখানে পুলিশ নিয়ে এসেছেন। তার জন্য আমরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছি।’

সিরাজ হাসান পুলিশকদের কাছে গিয়ে অনুরোধ করে বলে,
‘দয়া করে আপনারা যান। অনেক কষ্ট করে আমি নিজের মেয়ের অপারেশন এর জন্য টাকা জোগাড় করেছি। এই অপারেশন না হলে ও বাচবে না।’

এসব দেখে হতবাক হয়ে যায় অক্ষর। সে পুরো কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে যায়। কি করবে বুঝতে না পেরে সিরাজ হাসানের কলার ধরে বলে,
‘এরকম নাটক কেন করছেন আপনি? আজ তো আপনি মধুজার সাথে এখানে এসেছিলেন অপরাধীদেরকে ধরার জন্য। তাহলে এখন এসব নাটকের মানে কি?’

‘আপনার কোন কথাই আমি বুঝতে পারছি না। কে মধুজা?’

অক্ষর বুঝতে পারছিল কোন বড় ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যরাও এবার বিরক্ত হয়ে বলে,
‘এভাবে অকারণে আমাদের সময় নষ্ট হলো। এখানে তো সিম্পল অপারেশন চলছে। কোন সন্দেহজনক কিছু তো চোখে পড়ছে না।’

একজন পুলিশ অফিসার বলেন,
‘আমার তো এই ডক্টর অক্ষর চৌধুরীকেই সন্দেহ হচ্ছে। তাছাড়া নিউজ পেপারেও তো ওনার নামেই খবর বেড়িয়েছিল। উনি মনে হয় নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করার জন্য এভাবে আমাদের বিব্রত করতে চাইছেন।’

কথাগুলো অক্ষরেরও কানে আসে। কিন্তু সে এই মুহুর্তে কি করবে বুঝতে পারছিল না। সবার অগোচরে ডক্টর কেয়া এসে অক্ষরের কানে ফিসফিস করে বলে,
‘আপনার স্ত্রী মধুজা এখন আমাদের হাতে বন্দি। আপনি যদি চান তার কোন ক্ষতি না হয় তাহলে অর্গান ট্রাফিকিং এর সাথে যে আপনি জড়িত সেই কথাটা বলুন পুলিশ অফিসারদের। যদি না বলেন তাহলে কিন্তু আপনার স্ত্রীকে চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলবেন।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here