পুতুল বউ পর্ব -০১+২

রাস্তা দিয়ে তিড়িংবিড়িং করে যাওয়ার সময় হঠাৎ কোনো কিছু সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে পড়ে গেলো পুতুল।কপাল খানিকটা ছি’লে গেছে মনে হয়,নির্জন রাস্তায় আবার কোন খাম্বা এসে পড়লো কে জানে!

মাথায় হাত চেপে ধরে বসে আছে, সদ্য বাজার থেকে আনা কালো গোলাপের চারা গুলো পিশে গেছে।সামনে তাকিয়ে দেখে একটা সাদা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে,এই গাড়ি দিয়েই হয়তো সে ধাক্কা খেয়েছে।পাশেই পরে থাকা চারাগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে পায়ে হাত দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে দেখার জন্য গাড়িতে কে আছে,যেই থাকুক তার তো আজকে খবর আছে।পায়ে হাত দিয়ে উঠার চেষ্টা করে কিন্তু গাড়ির সামনে থেকে তার হাটুতে লাগায় আর উঠেতে পারে না,ফলে আবার সেখানেই বসে থাকে।রাগে জিদ্দে এখন আর চিল্লাতেও মন চাচ্ছে না।তখন গাড়ি থেকে নেমে এলো একজন সুদর্শন পুরুষ!

যাকে দেখে পুতুল তো পুরাই টাস্কি,এ আবার কে?এই গ্রামে কোনোদিন দেখেছি বলে তো মনে হয়।চুরি ডাকাতি করতে আসলো নাকি?না না চুরি করতে আসলে তো আর গাড়ি নিয়ে আসতো না,আর দেখতেও তেমন মনে হয় না,চোখে আবার সানগ্লাস কিন্তু কে এই মুরগী?

ভাবনার মাঝেই ছেলেটি পুতুলের সামনে এসে হাটু ভাঝ করে বসে বাহুতে হাত দিয়ে বলল,

-উফসস এই পিচ্চি মেয়ে দেখে শুনে চলতে পারো না?এমন তিড়িংবিড়িং করে রাস্তায় কেও চলে?তোমার কি কোনো জ্ঞান নেই,সেই তো তুমিই ব্যথা পেলে,, যাও বাসায় যাও!

শেষে কথাটা বেশ ধমকের স্বরেই বলল ছেলেটি!পুতুল এখনো হা করেই তার দিকে তাকিয়ে আছে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিলো সে আবার আমাকেই বকছে?রাগটা চট করেই মাথায় ধরে বসলো,এইবার যেনো পুতুল কথা বলার শক্তি আবার ফিরে পেলো শুধু শক্তিই না তেজও বহুত এসেছে,এইবার দেখি এই ছেলের ভাব কই যায়।

-কিহ?আমাকে নিজের এই আদ্দিকালের গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে এক্সিডেন্ট করিয়ে আবার আমাকেই বকা হচ্ছে তাও আবার পিচ্চি বলে?এই আপনি জানেন আমি কে?আমার বাবা কে?আমার পেশা কি?আমার বাবার পেশা কি?অবশ্য জানলে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না।আর এইযে আপনি আপনার এই আদ্দিকালের গাড়িদিয়ে আমাকে ধাক্কা দিলেন না এরকম তিন চারটে গাড়ি আমাদের বাসায় ধুলোজমে পড়ে আছে।আবার আসছে আমাকে ধমক দিতে!

এতুটুকু কথার জবার এতো বড় আর এমন কিছু হবে তা কোনোক্ষণেই বুঝতে পারে নি ছেলেটি,যা এখন দেখেও নিচ্ছে।অবশেষে এতুটুকু একটা পিচ্চি মেয়ে কিনা তাকে শ্বাসাচ্ছে,টাকার গরম দেখাচ্ছে।এইবার রাগে মাথার রগ ফুলে উঠলো ছেলেটির।সামনে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে,তা দেখে সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটি চিল্লিতে বলতে লাগলো,,

-এই এই তুই আবার ওই ইমনের চ্যালাপেলা নাতো?আমাকে মারতে আসছিস ওই ইমন্নাইর সাহসতো কম না আমার ভাই এর কাছে মার খেয়ে আবার তার চ্যালাপেলাকে পাঠিয়েছে আমাকে মারার জন্য!ওকে তো আমি মেরেই ফেলবো তার আগে মারবো তোকে।

বলেই সেখানে রাস্তায় বসেই ছেলেটির গলা টিপে ধরলো।আর সেই ছেলেটি পুতুলের তুই তুকারি শুনে এখনো হা করেই আছে। পুতুলের নরম হাতের ছোয়ার তার কোনো রকমি লাগছে না কিন্তু পুতুল তার সর্বো শক্তি দিয়ে সামনের ছেলেটির গলাটিপে ধরে আছে।আর না পেরে শেষে গলা ছেড়ে কারো নাম ধরে ডাকতে থাকে,তখন সামনে কারো দৌড়ে আসার শব্দ হয়।পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে ভেবে নিজের গলা থেকে পুতুলের হাত ছাড়িয়ে ছূটে গাড়ি নিয়ে চটজলদি চলে যায়।যাওয়ার আগে বলে যায়,,

–I’ll see you more…!

এদিকে ছেলেটির ছুটে পালানো দেখে পুতুল এইবার শিউর হয়ে যায় এটা ইমনেরি পাঠানো লোক।তখন তাদের সামনে এসে হাজির হয় দুটো মেয়ে,ছোট মেয়েটি পুতুলকে জড়িয়ে ধরে বলে,,

-ফুপি ফুপি তোমার কি হয়েছে তুমি এভাবে রাস্তায় বসে আছো কেনো?মা মা দেখো ফুপির কপাল ছিলে গেছে,

পুতুল কিছু বলতে যাবে তার আগের পাশের মেয়েটি বলে,

-এ কিরে পুতুল তোর এই অবস্থা হলো কি করে?নিশ্চয় রাস্তায় লাফালাফি করে হাঠছিলি কেনো যে তকে ছেড়ে গেলাম।ইশশ দেখতো কি হাল করেছিস নিজের তোর ভাই জানলে তো আমাকে পিটাবে,

-আরে না ভাবিপু ওইযে ইমন…

-ইমন?ইমন কথা থেকে আসবে আবার,ইমনকে তো তোর ভাই কবেই মেরে হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়েছে!

-আরে ইমন হসপিটালে তো কি হয়েছে ওর সাথিরা আছে না,তারা হয়তো।

-ওর সাথিরা আবার কে জুহাদ সজীব?

-আরেহ না হয়তো নতুন কেও..!

-তোকে কত বার করে বললাম গার্ড নিয়ে বাসা থেকে বের হতে,আশেপাশে কত শত্রু আছে তুই জানিস না?আচ্ছা থাক বাদ দে এগুলো তর ভাই অথবা বাবা কে বলার দরকার নেই পরে আরো ঝামেলা হবে।

-ধুর কিন্তু আমার গোলাপ ফুলের চারা?কত কষ্ট করে সাত গ্রাম খুজে এই চারা গুলো পেয়েছিলাম তাও নষ্ট হয়ে গেলো এ এ এ..!

-আরে মেয়ে তুই এখন বাড়ি চল গোলাপের চারা পরে খুজে আনা যাবে।নয়তো এমপিদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসিস।

-ওই দারোয়ান হা’লায় দিবে না।

-তুই বাসায় চল বাবাকে দিয়ে আনাবো নি!

তারপর তারা দুজন ধরে পুতুলকে বাসায় নিয়ে গেলো।

_________
এদিকে,,,

ও খালাম্মা এইবার তো একটু রেস্ট দেন।সকাল থে,মেলা কাম করছি!আমগো তো একটা জান আছে নাকি?

বাড়ির সিড়ি মুছতে মুছতে কথা গুলো বলল রিনা।তার কথা শুনে সামিয়া বললেন,,

-সবসময় তো শুয়ে বসেই থাকিস আজকে না হয় একটু বেশি কাজ কর তার জন্য তো এক্সট্রা টাকা দিবোই বললাম তো।কত বছর পর আমাদের বাড়িতে আমার ছেলে আসবে তার জন্যই তো এতো আয়োজন!নে নে জলদি কাজ গুলো শেষ কর আর গিয়ে দেখে বাগানে কারা কিভাবে কাজ করছে,একটু উনিশ বিশ হলে কিন্তু তোর খবর আছে।

-হ হ কোনো ভুল হইলে তো আমারি দোষ আমি তো সব নষ্টের মূল।
বলেই হাক ছাড়তে ছাড়তে বাগানের দিকে চলে গেলো রিনি।তা দেখে পেছন থেকে মুচকি হাসলো সামিয়া।মেয়েটা সেই ছোট্ট বেলা থেকেই তাদের বাসায় কাজ করে যাচ্ছে সব কোথায় ছ্যানছ্যান বেশি করে,তবে মনের দিক দিয়ে অনেক ভালো।এই বাড়ির এক জন সদস্যর মতোই বেড়ে উঠেছে সে।
তখন পেছন থেকে এমপি সাহেব মানে সামিয়ার হাসবেন্ড সিরাজ বলে উঠলো,

-এদিকে সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো?সামির কিন্তু এয়ার্পোট থেকে গাড়িতে উঠে গিয়েছে আসতে বেশি সময় লাগবে না।

-হ্যা গো সব ঠিকঠাক!কত দিন পর আমাদের ছেলে আমাদের বাসায় আসছে বলো তো।

-কত দিন পরে নাকি বলো কত যুগ পরে,আজ থেকে আমাদের বাড়িটা ভরে উঠবে বলো।

-হ্যা এখন শুধু ছেলের বিয়ে দিতে পারলেই হলো শান্তি!

-আগে তো ছেলে বাড়ির চৌকাঠে পা দিক তারপর না হয় বিয়ের কথা ভাবা যাবে।

-হুম! তো চেয়ারম্যান সাহেবরা কখন আসবে?

-বলেছে তো বিকালে আসবে।

-আচ্ছা তুমি যাও দেখো ছেলে কদ্দুড়!

প্রায় ১২বছর পর নিজের বাড়িতে পা রাখলো সামির!সব কিছু কেমন অচেনা হয়ে গিয়েছে বাড়ি রাস্তা ঘাট সব।কিন্তু শুধু একি রয়ে গেছে তার বাগান!যা শুধু সম্ভব হয়েছে তার করা নির্দেশ আর মার যত্নে।না হলে কবেই এই বাগান মিলিয়ে যেতো।

বাড়িতে আসার পর থেকে সেই খেয়েই যাচ্ছে তো যাচ্ছেই থামার নাম নেই।নিজে থামতে চাচ্ছে এমননা, মা এবং বাবার কথায় এতো খেতে হচ্ছে,মনে হচ্ছে এখনি সব খাইয়ে মোটা বানিয়ে দিবে।অবশেষে আর না পেরে রেস্ট নেওয়ার বাহানা করে রুমে চলে গেলো।রুমটারো পরিবর্তন ঘটেছে ফার্নিচার অল্প সংখক থাকলেও ঘরে এইগুলোই মানিয়েছে।

ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুতেই ঘুমের দেশে চলে গেলো সামির।

চলবে…!#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_২

পরনের লম্বা স্কার্টটা উঁচু করে আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে পুতুল!এখন যদি বাবা তাকে এই কাটাছেঁড়া অবস্থায় দেখে তাহলে তার খবর তো আছেই সঙ্গে ওই ছেলেরো কপালে শনি আছে।তাই চুপিসাড়ে নিজের ঘরে যাচ্ছে।ড্রয়িংরুমেই বাবা বসে খবরের কাগজ পড়ছে,একটু শব্দ পেলেই বুঝে যাবে সে এসেছে।কিন্তু কথায় আছে না “যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়” তার বেলাও ঠিক তাই হলো।পেছন থেকে পুতুলের বড় ভাই পুতুলকে ডেকে উঠলো,

-কিরে কাঠপুতুল এরকম লুকিয়ে লুকিয়ে কোথায় যাস?

খবরের কাগজ থেকে মুখ উঠিয়ে পুতুলের দিকে তাকালো পুতুলের বাবা।পুতুল একটা শুক্ন ঢোক গিলে,কপালের কাঁটা যায়গা সামনে চুল দিয়ে ঢেকে এক হাত কোমড়ে গুজে আরেক হাত নাড়াতে নাড়াতে পুলুতের ভাই প্রণয়কে বলতে থাকে,

-এই ভাইয়া তোকে আমি কতবার বলেছি তুই আমাকে কাঠপুতুল বলে ডাকবিনা,আমার নাম পুতুল,শুধু পুতুল!কাঠ পুতুল না,,,

-আরে কাঠপুতলি এতো চেঁচাস কেনো তুই তো কাঠের মতো শুক্না তাই তো তোকে কাঠপুতুল বলে ডাকি।

-কেন রে পুতুলরা কি তোর মতো হাতি হয় নাকি?তারা একদম স্লিম হয় একদম আমার মতো।

-হুম আসছে,

-তো আসবে না কি যাবে নাকি?

ঝগড়ার মাঝে পুতুল প্রায় ভুলেই গেছিলো তার তখন কার কথা আর এও ভুলে গেছিলো যে আব্বু জানলে বকা দিবে।ঝগড়ার মাঝেই পুতুলের বাবা পুতুলকে ডেকে ওঠে,তখন তার মনে হয় এই কাঁটার কথা!সামনে প্রণয় ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে আর সোফায় আব্বু ডাকছে,এখন সেখানে যাওয়া মানেই ধরা খাওয়া।কি করবে ভেবে পাচ্ছে না পুতুল,তাই সেখানে দাঁড়িয়েই হাতের নখ কামরাচ্ছে।তার বাবা আরেকবার ডেকে উঠলো

-কিরে পুতুল আয় এদিকে তোকে ডাকছি তো!

পুতুল তাও সেখানে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে,কি করবে এখন দুঃখে কষ্টে খুব কান্না পাচ্ছে তার।সব দোষ ওই ইমনের চ্যালার সা’লা এখন তোর জন্য বাবার কাছে বোকা খেতে হবে।রেডি থাক তুই তুইও মার খাবি আমার বাবা আর ভাই এর কাছে।

কিন্তু ধরা খাওয়ার আগেই শয়ং ফেরেশতা এসে হাজির হলো সেখানে,মানে পুতুলের ভাবি।সে যানে এখন পুতুলের ব্যথার কথা জানলে পুরো বাড়ি মাথায় করে দিবে এই দুই বাপ বেটা তাই সে রিস্ক নিতে চায় না।ড্রয়িং রুমে এসে দেখে বাবা পুতুলকে সমান তালে ডেকে যাচ্ছে আর পুতুল সেখানেই ভয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।তাই পুতুলকে বাঁচানোর জন্য বাবার উদ্দেশ্য বলে,,

-বাবা আসলে পুতুল একটু পুকুর পাড়ে গিয়েছিলো তো তাই শরীরে একটু কাঁদা লেগেছে ও ফ্রেশ হয়ে আসুক তারপর নাহয় কথা বলা যাবে।

পুতুল যেনো এইবার জান ফিরে পেলো।তবে এখন কোনো রিয়েকশন দিলো না মনে মনে ভাবিকে অনেক অনেক থ্যাংকিউ দিলো।কাউকে কোনো কিছু না বলতে দিয়ে উল্টো হয়ে দৌড়ে ঘরে চলে গেলো।ঘরে এসে বুকে হাত দিয়ে বড় করে শ্বাস নিলো,আয়নার সামনে গিয়ে একবার নিজের মুখ পরখ করে নিলো ফর্সা কপালে দু টো দাগ পরে গেছে,পা এর কাঁটা নাহয় ঢাকা যাবে কিন্তু এই কপালেরটা কি করবে?ধুরু ভালো লাগে না।

বলে ধপাস করে চৌকিতে বসে পড়লো।দু হাত বিছানায় উল্টো করে রেখে পা ঝুলাতে ঝুলাতে ভাবতে থাকে কি করবে সে,এতো সুন্দর ছেলে কিনা ওই দাঁত পোকা ইমনের চা’ম’চা ভাবা যায়?দেখে তো ভালো ঘরের ছেলেই মনে হয়।আহারে না জানি কিভাবে ব্লাকমেইল করে এই ছেলেকে এই রাস্তায় এনেছে,অবশ্য টাকার জন্য মানুষ সব করতে পারে।

ভাবতে ভাবতেই বিছানায় কুশনের সাথে হেলান দিলো আবার ভাবতে লাগলো।এই ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো সে টেরি পায় নি।ঘুম ভাঙলো ভাবির ডাকে,পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে ভাবি উপর হয়ে তার কপালে কিছু একটা লাগাচ্ছে আর তাকে ডাকছে।দেখে পুতুল ঘুম থেকে উঠে গেছে, তা দেখে পুতুলের ভাবির মুখে হাসি ফুটে ওঠে,

-আরে উঠেছিস উঠ উঠ ভালো হয়েছে তুই ঘুমিয়েছিলি না হলে তোকেও তাদের সঙ্গে যেতে হত!

শোয়া থেকে উঠে বসে পুতুল!কাঠের জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে বাহিরের প্রকৃতি হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে,তার মানে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।জানালা থেকে চোখ ঘুরিয়ে ভাবির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,

-এদের সঙ্গে যেতে হতো মানে,কোথায় যেতে হতো?

-বাবা মা আর তোর ভাই তো গিয়েছে এমপিদের বাসায় তোকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু ঘুমিয়ে ছিলি বিধায় নিতে পারে নি আর তুই তো এমনি তেও ও বাসায় যাবি না তাই ভালোই হলো।আর তর কথা বলে আমিও থেকে গেলাম।এখন কিছু একটা করা যাবে এই মলমটা দিয়ে দিলাম আশা করি এখন ঠিক হয়ে যাবে।

-ও ভালোই হলো বল!আচ্ছা চলো বাগানে গিয়ে আমরা পেয়ারা পেরে খাই।

-হুম চল কিন্তু তুই কি এই অবস্থায় গাছে উঠতে পারবি?

-আরে ভাবিপু প্যারা নিয়ো না তো এই পুতুল সব পারে চলো।

তারপর তারা চুপিসারে বাড়ির গার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাগানে চলে গেলো।এই গ্রামের সব চেয়ে বড় বাগান হচ্ছে চেয়ারম্যান বাড়ির বাগানটি,চারোপাশ দিয়ে গাছ-পালা মাঝখান দিয়ে একটা গোলাকারের পুকুর!কিছুসংখ্যক মানুষ ছাড়া কেওই এই বাগানে ডুকতে পারবে না,তাই এই পুকুর আর বাগান স্বচ্ছ, এখানে সব ধরনের ফুল থেকে শুরু করে ফলের গাছ আছে।পুকুরের এক পারে শুধু ফুলের গাছ যেটার নাম দেওয়া হয়েছে “পুতুলের ফুলের রাজ্য” আরেক পাশে সব ফল এর গাছ যার নাম “ফল বাগান” আর বাকি দু পাশে শুধু গাছ।এইসব যত্ন করে পুতুলের বাব দাদা গড়ে তুললেও এখন এর সব নাম দেওয়া পুতুলের।কিন্তু সন্ধ্যা বেলা এই বাগানে সবার আসা নিশিদ্ধ তাই তারা লুকিয়ে এসেছে।

তারা ফল বাগানে যায়।সবার প্রথম পুতুল পেয়ারা গাছে উঠে পায়ের জন্য একটু কষ্ট হলেও সেটাকে পাত্তা না দিয়ে আরামছে পেয়ারা পেরে নিচে ভাবির হাতে নিয়ে সে গাছের ডালে বসে বসেই খেতে থাকে।
অন্ধকার হওয়ার আগে আগেই তারা বাড়ির ভেতরে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পরেই পুতুলের মা বাবা ভাই চলে আসে।এতক্ষণ দুই ভাবি ননদ মিলে খুব হৈ-হুল্লোড় করলেও তারা আসার পর সব স্বাভাবিক হয়ে যায় যেনো তারা এতক্ষণ এভাবেই চুপচাপ ছিলো।রাতে অনেক কষ্টে নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে পুতুল যাতে ভাইয়া বা বাবার চোখে না পড়ে।

সকাল সকাল উঠেই ফ্রেশ হয়ে স্কুল ড্রেস পরে চুলে দুই বেনি করে পুতুল রেডি হয়ে যায় স্কুলে যাওয়ার জন্য।কপালের কাঁটা দাগ লুকানোর জন্য হালকা পাউডার দেয় তাতে একটু দাগটা লুকিয়েছে।নিচে গিয়ে সবার সাথে নাস্তা করে বাবাকে একটা লম্বা হাগ করে বেড়িয়ে যায় স্কুলে যাওয়ার জন্য।বাড়িতে এতো এতো গাড়ি থাকতেও স্কুলে হেঁটে যায় পুতুল,তার নাকি গাড়িতে যেতে ভালো লাগেনা বমি বমি পায়।প্রথমে কেউ মানতে না পারলেও পরে তার জেদ আর ভাবির কোথায় তাকে একাই যেতে দেওয়া হয় স্কুলে।

হাঁটতে হাঁটতে কাঁচা রাস্তা পাড় হয়ে পাকা রাস্তায় পা রাখে পুতুল।তার দৃষ্টি বাম দিকের লম্বা বাগানটার দিকে,অবশ্য সেখানে ইট দিয়ে ঘের দেওয়া যেটা তার হাইটের চেয়েও দিগুণ বড়।কিন্তু তার নজর লম্বা গাছটার উপর যেখানে মুক্তার মতো ধরে রয়েছে অসংখ্য কালো গোলাপ।
“আহা কি মহনীয় এই গাছটা যদি আমার হতো কতোই না ভালো হতো। আচ্ছা গাছ না হোক এই গাছের একটা ফুল যদি আমার হতো,কিন্তু এই বেডা দারোয়ান তো আমাকে এদিকে আসতেই দেয় না ফুল নিবো কিভাবে?”

ভাবতে ভাবতে সামনে যেতেই এসে পড়ে এই বাগানের মালিকের বাড়ি মানে এমপিদের বাড়ি।পুরো এই কালো গোলাপের মতোই এই বাড়িটা একদম দৃষ্টিকারার মতো।এই গ্রামে দুটো বাড়ি এরকম মহনীয় এক, তাদের বাড়ি মানে চেয়ারম্যানদের বাড়ি আর দুই, এই এমপিদের বাড়ি।কত বন্ধুত্ব এই দুই চেয়ারম্যান এমপিদের অথচ তার মেয়েকেই কেও চিনে না এটা কি মানা যায়?বাড়ির দারোয়ানকে কতবার বলেছে,
আমি চেয়ারম্যানের মেয়ে পুতুল!
আমাকে এই বাড়িতে একটু ঢুুকতে দেন না হয় আপনি একটা ফুল ছিড়ে এনে দেন।কিন্তু প্রতিবারি তার উত্তর ছিলো

“হু এরকম কত জনেই তো বলে আমি অমুকের মেয়ে তমুকের মেয়ে তাই বলে কি আমি বিশ্বাস করবো নাকি?যাও যাও খুকি বাসায় চলে যাও”

আর প্রতিবারি সে দারোয়ানের সাথে তুক্ষের ঝগড়া করে তারপর বাড়ি যায়।

বাড়ির গেইটের সামনে আসতেই একটু দাড়ায় পুতুল।যদি একটু সুযোগ পায় ওমনি টুক করে বাড়ির ভেতরে চলে যাবে।কিন্তু এই দারোয়ান হয়তো এতক্ষণ পুতুলেরি অপেক্ষা করছিলো,তাই তো একদম সিনা টান করে দাঁড়িয়ে আছে।পুতুলকে দেখতেই তার পান খাওয়া লাল দাঁত দিয়ে একটা শয়তানি ভেটকি দেয়।তা দেখে পুতুল মুখ ভেংচি দিয়ে ধুপ ধাপ পা ফেলে সামনে চলে যায়।আর বিড় বিড় করে বলতে থাকে,

“এখন নিতে না পারলাম তো কি হয়েছে,দেখিস একদিন এর গাছটাই পুরো আমার রাজত্বে থাকবে”

চলবে..!

{
#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#সূচনা_পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here