প্রণয়সন্ধি পর্ব -১২+১৩

#প্রণয়সন্ধি– ১২ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না

গোধূলি বেলায় ক্লান্তিতে বাড়ি ফিরে তখন আঁখিজোড়া ছাপিয়ে ঘুমের মিছিল নামলো। ফ্রেশ হয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করতেই দেখলো ঘুম হাওয়া। মন মস্তিষ্ক জুড়ে তখন জুবরান নামক মানুষটা হানা দিলো। এ মানুষটা হঠাৎ পরিবর্তন সুখানুভব হওয়ার পরিবর্তনে ওর মাথায় দুঃশ্চিতার রেখা ফুটে উঠলো।
জুন এসে বলল
–‘ কি রে খেয়েছিস কিছু? ‘
–‘ হুম’
–‘ নোটিশ দেখেছিস?’
–‘ কিসের? ‘
–‘ আরে এক্সামের!’
–‘ কবে থেকে?’
–‘ আর ৮ দিন পর’
–‘ ওহ’
–‘ ওহ কী? ভালো করে পড়াশোনা শুরু কর। এমনিতেই সারাবছর কিছু পড়ি নাই। আমারে একটু দেখাস’
–‘ সাদা খাতা দেখিস’
–‘ বান্ধবী শোন না’
–‘ বল না’
–‘ ভাবছি টুকে নিয়ে যাবো’
–‘ থাপ্পড় দিব’
–‘ এমন করিস কেন?’
শানায়া উত্তর দিল না প্রগাঢ় দুঃশ্চিন্তায় ডুব দিল। জুন বক বক করছে শানায়ার কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে বলল
–‘ কি রে কি এতো চিন্তা করছিস?’
–‘ তেমন কিছু না!’
–‘ ওহ বুঝছি নিশ্চয়ই জুবরান ভাইয়াকে নিয়ে ভাবছিস?’
শানায়া জুনের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।
–‘ আরে এতো চাপ নিচ্ছিস কেনো? সবটা ঠিক করে নিলেই হয়।’
–‘ বলা কত সহজ না? তাহলে তুই কেন রাহাত ভাইকে কষ্ট দিচ্ছিস মেনে নিলেই হয়!’
শানায়ার মুখে রাহাতের কথা শুনে বড় বড় চোখে তাকালো জুন। শানায়া আচমকা বাঁশটা দিয়ে একটু ভালো লাগছে। আরাম করে শুয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
–‘ তু…তুই রাহাতের কথা কীভাবে জানলি?’
শানায়া সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল
–‘ রাহাত ভাই ওতোটাও খারাপ না একবার চান্স দিয়ে দেখতে পারিস!’

পরের দিন অফিসে জুবরান শানায়াকে কারণে অকারণে ডেকে বিরক্ত করছে। শানায়া বিরক্ত নিয়ে যাচ্ছে।
–‘ কী সমস্যা আপনার?’
জুবরান ইনোসেন্ট ফেস করে বলল
–‘ আমার আবার কী সমস্যা হবে?
–‘ তাহলে বার বার ডাকছেন কেনো? অন্যরা কী ভাববে?’
জুবরানের সহজ সরল সিকারক্তি করে বলল
–‘ বউকে চোখে হারাচ্ছি তাই তো বউকে ডাকছি কে কী ভাবলো আই ডোন্ট কেয়ার’
শানায়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–‘ কিন্তু আমার যায় আসে। কী দরকার বলুন? আর একবার ও ডাকলে আসব না ‘
জুবরান আচমকা মুখ গম্ভীর করে বলল
–‘ ওকে যাও। কোনো দরকার নেই’
জুবরানের এমন পাল্টা রূপে শানায়া হকচকিয়ে গেলো। পরমুহূর্তে ভেংচি কেটে বেড়িয়ে গেলো। জুবরান শানায়ার অগোচরে মুচকি হাসল।
জুবরান আর শানায়াকে জ্বালায় নি। শানায়াও মন দিয়ে কাজ করছিল। হঠাৎ কোথা থেকে পাপড়ি এসে ওকে সবার সামনে চ’ড় মা’রলো। শানায়া বিস্ময়ে কিছু বলতে ভুলে গেলো। সকলে অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। পাপড়ি রুষ্ট কণ্ঠে বলল
–‘ খুব বেশি বড় হয়ে গেছিস? এখন আর আমাদের দরকার পড়ে না তোর?’
শানায়া শান্ত কণ্ঠে বলল
–‘ এটা অফিস আপু আমরা বাইরে গিয়ে কথা বলি’
–‘ হ্যাঁ বাইরে চল তোর সাথে আমার বহুত বোঝাপড়া বাকি আছে।’
সকলে জানে পাপড়ি শানায়ার বোন তাই কেউ এটা নিয়ে কথা বাড়ালো না। হয়ত মান অভিমান করে বোন বোনকে চ’ড় মা’রতেই পারে এটা অস্বাভাবিক কিছু না।
রেস্টুরেন্টে দু’জন মুখোমুখি বসে আছে। পাপড়ির চোখ দিয়ে যেনো অগ্নিকুন্ডল ঝরছে। শানায়া শান্ত কণ্ঠে বলল
–‘ মামনি বাবাই কেমন আছে? তুমি কেমন আছো?’
–‘ তুই ভালো থাকতে দিলি কই?’
–‘ মায়ের দুঃশ্চিতায় প্রেসার বাড়ছে। বাবা তোকে কোথায় না কোথায় খুঁজছে। বার বার ফোন দিচ্ছে তোর কাছে সেটাও ধরছিস না। এতোটা পর হয়ে গেলাম আমরা!’
–‘ তোমাদেরকে আমি কখনো পর ভাবি নি আপু। তোমাদের ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারব না। তোমাদের জন্যই তো আজ বেঁচে আছি নাহলে কবেই ম’রে যেতাম!’
–‘ তাহলে আমাদের ছেড়ে আসলি কেনো? হাবিব ভাইয়ের কথায়?ঐ লোকটাকে আমরা কেউ মানি? তুই কেনো ঐ লোকটার কথা শুনে চলে আসতে গেলি?’
–‘ আমি কারোর কথায় চলে আসে নি আপু। তোমাদের ঘাড়ে বসে কতদিন খাবো তাছাড়া একদিন না একদিন তোমাদেরকে ছেড়ে চলে যেতেই হতো। আর কয়দিন পর এক্সাম শেষ হলে আমি ঢাকা থেকে চলে যাচ্ছি। তাই মায়া বাড়িয়ে লাভ কি?’
পাপড়ি শান্ত কণ্ঠে বলল
–‘ অনেক বড় হয়ে গেছিস তুই। সেই ছোট শানায়াটা আর নেয়।’
শানায়া হাসলো একটুখানি। কথা ঘুরিয়ে বলল
–‘ কী খাবে বলো? আজ আমি তোমাকে ট্রিঢ দি’
–‘ কিছু লাগবে না। আমার কাজ আছে যেতে হবে।’
–‘ মামনি বাবাইকে বলো আমি ঠিক আছি আমাকে নিয়ে ওতো টেনশন করা লাগবে না। আমি সময় পেলে দেখা করে আসব’
–‘ বাসায় ফিরবি না তাহলে? ‘
–‘ বললাম তো দেখা করে আসব’
পাপড়ি বুঝল শানায়া ফিরবে না হাবিবের ওপরে রাগ লাগতে লাগল। পাপড়ি চলে যেতেই শানায়া থম মেরে কিছুক্ষণ ক্যান্টিনে বসে রইল। মনের মধ্যে ঝড় চলছে। শায়লা হাসান আর মিরাজ হাসান কে যে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। এই এতোগুলো বছর নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছে। কালো অতীত জানার পরও ছুড়ে ফেলে দেয় নি বরং আদর করে ভালো খারাপের তফাৎ বুঝিয়েছে। সেই আপন মানুষ গুলোর মনে বড্ড আ’ঘা’ত করে ফেলেছে। আজ-কাল দিনে নিজের আপনজনেরা ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দেয় সেখানে ওরা বাইরের মেয়েকে আপন করে নিল কোনো অভিযোগ ছাড়া। শানায়া ফিরতে ইচ্ছে হলো কিন্তু তীব্র আত্মসম্মানে সেটা বাঁধলো। শানায়া ঠোঁট জোড়া চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। বিরবির করে বলল
–‘ আমার প্রিয় মানুষ গুলো কেনো থাকে না? লড়তে লড়তে আমি বড্ড হাঁপিয়ে উঠেছি। একটু শান্তি কী মিলবে না?’

পাপড়ির আজ-কাল সব কিছু এলোমেলো খাপছাড়া লাগে। কাজে ঠিক মতো মন দিতে পারে না। শানায়া চলে যাওয়ার দিন দেখা হলো প্রাক্তন স্বামী রুবেলের সাথে সে কি সুন্দর বউয়ের সাথে হাত দিয়ে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছে সে একটা বাচ্চা মেয়ে। এমন একটা সময় তার সাথেও কেটেছে। কিন্তু সময়টা আজ ভিন্ন আজ তার জায়গায় অন্য মেয়ে। তাদেরকে দেখে যে কেউ বলবে দিতে পারবে সুখী পরিবার। রুবেল পাপড়িকে দেখতে পেয়ে কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো
–‘ কেমন আছো?’
–‘ ভালো।’
–‘ জিজ্ঞেসা করলে না তো আমি কেমন আছি?’
–‘ দেখতেই তো পাচ্ছি ভালোই আছ। জিজ্ঞাসা করলে উত্তরটাও পাবো ভালোই আছো’
–‘ অনেক বদলে গেছ’
–‘ তোমাদের মেয়ের নাম কী?’
–‘ রূপা’
পাপড়ির কয়েক পল শ্বাস আটকে গেলো। এটা তার আর রুবেলের আইডিয়া ছিল। যে তাদের মেয়ে হলে রুবেলের নাম থেকে ‘র’ আর পাপড়ির নাম থেকে ‘প’ নিয়ে মেয়ের নাম রাখবে ‘রূপা’। কিন্তু সে আশা আশায় রয়ে গেলো কয়দিন পর জানা গেল পাপড়ি আর কখনো মা হতে পারবে না। তারপরই রুবেলের পরিবারের চাপে তাদের বিচ্ছেদ হয়। সেদিন রুবেলের চোখে পানি দেখেছিল মনের চাপা আর্তচিৎকার না শুনলেও অনুভব করতে পেরেছিল।
এদিন ও রুবেলের চোখে ভালোবাসা দেখেছে। সে চোখে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে নি। একপ্রকার পালিয়ে এসে দুদিন নিজেকে ঘর বন্দী করে রেখেছিল। রায়হানের সাথেও দেখা হয় নি। নিজেকে মুক্ত করে শুনলো শানায়া বাড়ি ছেড়েছে তখনি ছুটে এসেছে কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছিল।

চলবে ইনশাআল্লাহ#প্রণয়সন্ধি– ১৩ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না

মে মাস তখন আকাশে হলদেটে মেঘাচ্ছন্ন মৃদু শীতল বাতাস বইছে। কিন্তু ঢাকা শহরে সেটা দূষিত হয়ে আসছে। পাখিরা ক্লান্ত হয়ে নীড়ে ফিরছে। শানায়া ও অফিস থেকে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিসে। তখন কয়েকজন কলিগ এসে বলল
–‘ শানায়া তখন তোমার আপু ওভাবে মা’রল কেনো?’
জুবরান তখন ওখান থেকে ক্রস করছিল। কথাটা শুনে থেমে গিয়ে আবারও হাটা লাগাল। শানায়া হেসে বলল
–‘ ও তেমন কিছু না। ভাইবোনের মধ্যে মান অভিমান তো চলতেই থাকে’
কলিগ চাঁপা হেসে বলল
–‘ হ্যা তা ঠিক কিন্তু এসব থাপ্পড়াথাপ্পড়ি।রাস্তাঘাটে করো না। আমরা না হয় জানি ও তোমার বোন। রাস্তায় তো জানোই এসব কত ভাইরাল হয়। সেদিন জানো কি হয়েছে আমার ছোট ভাইকে রাস্তায় চ’ড় মা’রলাম ও আমাকে উলটোপালটা বলে রাগিয়ে দিচ্ছে ওমা টিকটকে গিয়ে দেখি ক্যাপশনে দেওয়া প্রেম করলে রাস্তাঘাটে এমন চ’ড় খেতে হয়। শুধু ভাবো সেদিন আমার মুখে ভাগিস মাক্স পড়াছিল বলে।’
চাঁপার কথা শুনে শানায়া সহ অন্যান্য কলিগেরা মজা নিতে লাগলো। রিফা বলল
–‘ আসলেই এখন মানুষ হুটহাট ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। এটা কোনো কথা? আজ-কাল মানুষ গুলো যা-তা সবকিছু হাসি-তামাশা বানিয়ে ফেলছে। মানুষের ভালোটাকে না দেখে খারাপটাকে সবার সামনে রিপ্রেজেন্ট করছে।’
চাঁপা বলল
–‘ আসলেই মানুষ বড়ই বিচিত্র। অন্যর জন্য সে জিনিসটা খারাপ হবে না-কি ভালো হবে সেটা না ভেবে ট্রোল করে মজা পায়।’
শানায়া মলিন হাসলো মনে মনে বলল ‘সেই ট্রোল করা মানুষ গুলো কে ঠিকি সময়ের সাথে ভুলে যাও শুধু মানুষের এই ক্ষণিকের ট্রোল গুলো যে সেই মানুষটার ওপর কতটা প্রভাব ফেলে সেটা কেউ ভাবে না! কী লাভ ক্ষণিকের মজা পেয়ে যেটা অন্যর জীবনকে ধ্বং’স করে দেয়!’

শানায়া সন্ধ্যার দিকে একটা ফ্ল্যাটে উঠলো সেখানে আরো মেয়েরা থাকে বলতে কয়েকজন মেয়ে মিলে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকে। এই ফ্ল্যাটে ৬ জন মেয়ে থাকে শানায়াকে দিয়ে ৭ জন হলো। জুনের বাড়িই বা আর কতদিন থাকবে যতই আপন হোক তাদের সুবিধা-অসুবিধা তো আছে। শানায়া ঠিকানার খোঁজ পেলে এক সিনিয়র আপুর কাছ থেকে ইউনিভার্সিটিতেই পরিচয়। সেও এখানেই থাকে মধ্যেবিত্ত ফ্যামিলি বাবা বৃদ্ধ সেই এখানে এক সরকারি চাকরি করে নিজে ও পরিবারের খরচ চালাই। শানায়া আসতেই কয়েক জন বাঁকা চোখে তাকাছে৷ কয়েক বা খুব আগ্রহের সাথে কথা বলতে এসে পরিচয় হচ্ছে। সাথী বলল
–‘ তোর এখানে কষ্ট হবে। তুই বরং… ‘
–‘ এই টুকু কষ্ট ম্যানেজ করে নিতে পারব তাছাড়া বেশিদিন থাকবো না চলে যাব। ওখানে একটা সরকারি এনজিওর চাকরি পেয়েছি। শুধু পরিক্ষার জন্য যেতে পারছি না।’
–‘ তোর মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। কি খাবি বল?’
শানায়া মলিন হেসে বলল
–‘ কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না আর জুনের ওখান থেকে নাস্তা করেই আসছি’
–‘ আচ্ছা শোন ওরা না একটু চিৎকার চেচামেচি করে তোর পড়ায় অসুবিধা হবে?’
–‘ ব্যাপার না ম্যানেজ করে নিব। সবকিছু তো মানিয়ে নিতে শিখেছি বুঝলে?’
–‘ বুঝলাম’

শানায়া আজ আর পড়ল না। ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুম হলো না নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশে কি আর নিশ্চিন্তে ঘুমানো যায়? ফোনটায়ও চার্জ নাই যে সবার খোঁজ নিবে তাই চোখ মুখ বুজে শুয়ে রইলো কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল…! সকালে ওদের চেচামেচিতে ঘুম ভাঙল। উঠে বসতে না বসতেই পাশের রুম থেকে কাচ ভাঙার শব্দ আসল। শানায়া ছুটে গেলো। দুইটা মেয়ে চুল টানাটানি করছে আর যা নয় তাই বলে যাচ্ছে। সে সব কথা শানায়া এহোজীবনে শুনে নি। হতভম্ব রেশ কাটিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে বলল
–‘ কি করছ তোমরা? ছোট নও।’
ওদের মধ্যে একজন বলল
–‘ নতুন এসে বাহাদুরি শুরু করে দিয়েছ ভাবটা এমন তুমি এখানকার রাজা।’
শানায়ার ভারী মন খারাপ হলো। সে-তো এমন কিছুই বলে নি। কী আশ্চর্য সবাই তার কথার উল্টোপাল্টা মিনিং বের করে কেনো!
–‘ আমি এমন কিছু বলতে চাই নি আপু। ওখানে কাঁচ আপনাদের লেগে যেত।’
কথাটা বলে দাঁড়ালো না। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে অফিসে চলে গেলো। এসবের চক্রে আজ দেরি হয়ে গেলো। অফিসে আসতে না আসতেই জুবরানের ডাক পড়ল।
কেবিনে গিয়ে জুবরানের চোখমুখ দেখে শানায়ার কাছে স্বাভাবিক লাগল না। মনে হচ্ছে প্রচন্ড রেগে আছে। তাই শানায়া মেজাজ না দেখিয়ে সুন্দর করে বলল
–‘ জী স্যার বলুন হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ’
জুবরান দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–‘ ফোন অফ কেনো তোমার? কাল সারারাত কই ছিলা? কোন বাসায় উঠছ?’
শানায়া ভ্রু কুঁচকে বলল
–‘ কেনো? আপনার তো এতো জেনে লাভ নেই’
–‘ দেখ আমাকে রাগিও না। আজ তুমি আমার সাথে যাবে’
–‘ আমি ইচ্ছুক নই। তাছাড়া অফিসে বিষয়টা জানাজানি হলে আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে সেটা আপনি চাইলেও আমি চাই না!’
জুবরান গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–‘ আ’ম ইউর হাসবেন্ড শানায়া!’
কথাটা শানায়ার বুকে লাগল কিন্তু গললো না শক্ত কণ্ঠে বলল
–‘ আমি ভুলে গেছি। আপনিও ভুলে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করুন অতীত আঁকড়ে ধরে তো বাঁচা যায় না!’
জুবরান ভয়ংকর রেগেমেগে শানায়ার দিকে তেড়ে এসে ও বাহু ঝাকিয়ে বলল
–‘ আর ইউ ম্যাড তোমার ধারণা আছে কি বলছ?’
–‘ আপনি বা আমি কেউ বিয়েটা মানে না সে সম্পর্কের কোনো মানেই হয় না’
–‘ তুমি চাইলে আর না চাইলেও আমার সাথে থাকতে হবে’
শানায়া বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো জুবরানের দিকে মনে মনে বলল ‘লোকটা তাকে অধিকার দেখাচ্ছে? কিন্তু কেনো? উনি তো সকলের চাপে পড়ে বিয়েটা করেছিলেন। তাহলে?’
–‘ শানায়া আমার চোখের সামনে থেকে যা আমি তোকে মে’রে দিব’
শানায়া আঁতকে উঠল সেই পুরনো ফর্মে চলে গেছে? লোকটা নিন্তাতই গিরগিটি শুধু রং বদলাই।

সারাদিন আর শানায়াকে জুবরান ডাকে নি। শানায়া কাজের চাপে ফ্যাশান হাউজের সব ড্রেসগুলো রিচেক করছিল কোনো ত্রুটি আছে কি-না সেটার। ছুটির শেষে রাহাতের সাথে রাস্তায় দাড়িয়ে হেসে হেসে কথা ছিল। জুবরান ভ্রু কুঁচকে সেটা দেখে চলে গেলো
–‘ আপনি তাহলে আমার জিজু কানফম হয়ে গেলেন?’
–‘ এখনও সিওরলি বলা যাচ্ছে না যেই না তোমার তারকাঁটা বান্ধবী’
শানায়া ছোট ছোট করে বলল
–‘ ডেটে গেলেন কাল আর আজ কনফিউশানে আছেন’
রাহাত মাথা চুলকে বলল
–‘ ঐ আর কি…’
–‘ থাক থাক লজ্জা পেতে হবে না’
–‘ তুমি ও সেদিন বলতে পারতে ও তোমার ফেন্ড তাহলে… ‘
–‘ তাহলে কি করতেন? ওকে ছেড়ে অন্য মেয়ে পটাতেন? খবরদার একদম আপনার মাথা ফাটিয়ে দিবো রাহাত ভাই। আপনার নামে কত ভালো ভালো কথা বললাম তার প্রতিদান এভাবে দিবেন নাকি?’

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here