#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৩৮
____________________________
–‘ঘুমাও না কেন?
বিছানার ওপর এক কোণে দুই পা ভাজ করে বসে আছে সূচনা।সাড়ে বারোটার বেশি বাজে রাত।সূচনার হাতে থাকা ফোনে সময় পরখ করছে মিনিট কয়েক পরপরই। আর বির/ক্তিতে ছেয়ে যাচ্ছে মুখ।প্রণয়ের প্রশ্ন কানে আসতেই তার দিকে তাকিয়ে সূচনা জবাব দিল-
–‘ম্যাচ দেখব, আজকে আর্জেন্টিনা আর পোল্যান্ডের ম্যাচ আছে না।
প্রণয় বুঝি অবাক হলো নাকি ভা’ন ধরলো শুধু। কে জানে?কিন্তু অবাক হওয়ার ভ/ঙ্গি করে জিজ্ঞেস করলো-
–‘তুমি ফুটবল ও দেখো?
সূচনা ভাবলেশহীন ভাবে বললো-
–‘ না দেখার কি আছে?আব্বু আর আমি একসাথে খেলা দেখতাম, শুধু ফুটবল বিশ্বকাপ ই না, বিভিন্ন ক্লাবের ম্যাচ গুলোও দেখতাম,আম্মু তো ঘুমে বি/ভোর থাকতো আর এদিকে আমি আর আব্বু রাতে বসে বসে খেলা দেখতাম।ক্রিকেট ও দেখি আমি।
–‘বাহ, বাহ।এটা তো জানতামই না।
–‘কারণ আগে কখনও জিজ্ঞেস করেননি।
–‘হুম।ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখেছিলাম জানো?
–‘না বললে জানব কীভাবে?
–‘শোনো তাহলে চুপচাপ। পোস্টটা ছিল- তোমরা মেয়ে তোমরা খেলবে ছেলেদের মন নিয়ে, তোমরা কেন খেলা নিয়ে মা/তামাতি করবে।
–‘ছি/হ কীসব ছে/ছরামো কথাবার্তা আর আপনার কী মনে হয় ফেবু আপনি একাই ব্যবহার করেন?ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন পোস্ট টা ছিল- তোমরা ছেলে তোমরা খেলবে মেয়েদের মন নিয়ে, তোমরা কেন খেলাধুলা নিয়ে প/ড়ে থাকবে?কী সব আজা/ইরা পোস্ট,ছেলেরা খেলা নিয়ে থাকবে না তো কে থাকবে?যত্তসব।আপনার সাথে আমি এগুলো নিয়ে কথাই বা বলছি কেন?সরুন সরুন, খেলা শুরু হয়ে গেল।
বিছানা থেকে তড়ি/ঘড়ি করে উঠে সোফায় বসে ল্যাপ্টপ অন করলো সূচনা।প্রণয় ও বিছানা থেকে উঠে পড়লো, বললো-
–‘তুমি থাকো ,চুপচাপ বসবে,আমি একটু আসছি।
–‘তাড়াতাড়ি আসুন।
–‘হুম।
প্রণয় উঠে চলে গেল ব্যালকনিতে।ট্রাউজারের পকেট থেকে কোন বের করে কল করলো মুগ্ধ কে।অনেকটা সময় নিয়ে ফোন রিসিভ করলো মুগ্ধ। প্রণয় তাই প্রশ্ন করলো-
–‘এত দেরি করলি কেন ফোন রিসিভ করতে?কোথায় ছিলি?
–‘ওয়াশরুমে, আওয়াজ পেয়েছি কিন্তু শাওয়ার নিচ্ছিলাম তাই বের হতে দেরি হয়েছে।
–‘ঠান্ডার মধ্যে এত রাতে শাওয়ার নিয়েছিস এমনিতেই তো ঠান্ডা পিছু ছাড়ে না।
–‘ক/বর স্থানে গিয়েছিলাম,তারপর ঘুরেছি অলি গলিতে, বাসায় আসতে তাই দেরি হয়ে গেছে।
–‘আমাকে নিলি না কেন?
–‘ভাবিনি যাব কিন্তু হুট করে ইচ্ছে হলো।
–‘আচ্ছা।
প্রণয় এ ব্যাপারে আর ঘা/টালো না।টুকটাক কথা বলে রেখে দিল,ফিরে আসলো রুমে।তাকে দেখে সূচনা ভ্রু নাড়ি/য়ে জিজ্ঞেস করলো-
–‘কী করছিলেন?এতক্ষণ লাগে?
–‘আমার ফ্রেন্ড কল দিয়েছিল,কথা বলছিলাম তার সাথে।
–‘ওহ।
–‘খেলার কী অবস্থা?
–‘আসুন,দেখুন।
সরে যেয়ে প্রণয়কে বসতে জায়গা করে দিল সূচনা।
খেলা দেখতে দেখতে প্রণয় বললো-
–‘শুধু শুধু দেখছি হা/রবে তারা।
–‘বা/জে ব/কবেন না একদম।চুপচাপ দেখুন।দেখে দেখে একটা ব্রাজিল সাপোর্টার করা বর খুঁজেছে আব্বু। খুজবেই বা না কেন,সে ও তো ব্রাজিল সাপোর্টার তাই খুজেছে ও একটা অমনই।
শেষের কথাগুলো বিড়বিড় করে বললেও প্রণয় একেবারে পাশে থাকায় শুনে ফেলেছে সে।ল্যাপ্টপের স্ক্রিনে চোখ রেখেই প্রণয় বললো-
–‘ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার।
সূচনা চ/ট করে প্রণয়ের দিকে তাকালো।খুশিতে আটখানা হয়ে বললো-
–‘সত্যি? উফফ কী যে শান্তি লাগছে, এতদিন আব্বু আমি একসাথে খেলা দেখলেও দুজন দুই টিমের সাপোর্টার ছিলাম।আব্বুকে তো আর বেশি কিছু বলতে পারতামনা, চুপচাপ খেলা দেখতে হতো।এবার জম/বে বেশ আপনি আর আমি একসাথে মিলে খেলা দেখব।ভাবতেই ভাল্লাগছে।
–‘সত্যি?
–‘হুম।
________________________
দাঁত দিয়ে নখ কা/মড়া/চ্ছে সুচনা।হাফ টাইম পার হয়ে গেছে অথচ গোল হয়নি।এখনও টেনশনে বেচা/রির কাঁদো কাঁদো অবস্থা।আজকে হারলে যে সাদা আকাশী রঙের জামাটায় ফুটবলে আর রাজত্ব করতে দেখা যাবেনা মেসিকে।এই এক কারণে কান্না করে দিবে দিবে অবস্থা সূচনার।কিন্তু তার চি/ন্তার অবসান ঘ/টলো।গোল হয়েছে।খুশিতে লা/ফিয়ে উঠে চেঁচি/য়ে উঠতেই মুখ চে/পে ধরলো প্রণয়।বললো-
–‘মাথা খা/রাপ হয়ে গেছে?চেঁ/চাচ্ছো কেনো?
সূচনা চুপ।
–‘বলছোনা কেনো?
সূচনা এবারও চুপ।সূচনার মুখের উপর নিজের হাত দেখে মাথায় আসলো প্রণয়ের।বলবে কি করে?মুখ তো আ/টকে রেখেছে।হাত সরিয়ে দিলো প্রণয়।সূচনা দাত কি/ড়মি/ড় করে বললো-
–‘মুখ চে/পে ধরলে বলবো কি করে?
প্রণয় কাঁ/চুমাচু স্বরে বললো-
–‘খেয়াল ছিলো না।
–‘আপনি কথায় কথায় মুখ চে/পে ধরেন কেনো এত?কবে যেনো দম ব/ন্ধ হয়ে উপরে চলে যাই আমি।
–‘বা/জে না ব/কে খেলায় মন দেও।
–‘হু।
খেলায় মনোযোগ দিল দুজন কিন্তু চি/ন্তা এক র/ত্তিও কমেনি। একটা গোল যেকোনো সময় শোধ করে দিবে,আরেকটা গেল দিলে জয় নিশ্চিত। বলতে না বলতেই দ্বিতীয় গোল।সূচনা চে/চাবে সে জন্য তার মুখ চে/পে ধরতে উদ্যত হলে প্রণয়কে থামিয়ে দিল সূচনা।বললো-
–‘চে/চাব না।চিল।
–‘গুড।
.
.
বাঁশি বে’জে উঠলো রেফারির।খেলা শেষ, উল্লাসে মেতে উঠলো পুরো দল, সাথে সূচনাও,তবে শব্দহীনভাবে।চোখ ঝা/পসা হয়েছে তার আনন্দে।প্রণয়ের দিকে ফিরে তাকিয়ে খো/চানির স্বরে বললো-
–‘হেহ হেহ কে যেন বলছিল হারবে?কই সে?
প্রণয় বুঝলো,বললো-
–‘আমি ঔ কথা বলেছি তাই তো জিতেছে নাহলে হার/তোই।
–‘এহহ আসছে অনেক হয়েছে এবার অফ করেন,ঘুমাব। আজকে শান্তির ঘুম ঘুমাব।হাহ!
প্রণয় মুখ বা/কিয়ে বললো-
–‘আর্জেন্টিনা জিতেছে তার জন্য এত শান্তি আর পাশে যে কেউ অ/শান্তি তে আছে তার খবর কে রাখে?
সূচনার মুখটা চুপসে গেল,কাচু/মাচু মুখে চো/রা দৃষ্টিতে প্রণয়কে দেখলো।নিচু স্বরে বললো-
–‘সরি।
এক ভ্রু উপরে তুলে প্রণয় জিজ্ঞেস করলো-
–‘কেন?
বলতে পারলোনা সূচনা।কেন সরি বলেছে সে?সে নিজেও জানে না,শুধু প্রণয়ের কথায় খা/রাপ লেগেছে তাই বলে দিয়েছে। প্রণয় পুনরায় জিজ্ঞেস করলো-
–‘কেন বলো?
–‘এমনি।
সূচনার কা/চুমাচু মুখ দেখে প্রণয় স্ব শব্দে হাসলো।হাসি বজায় রেখেই বললো-
–‘মজা করছিলাম আমি,মেয়ে তুমি বড়ই বো/কা।
বিনিময়ে জো/র পূর্বক হাসলো সূচনা।বললো-
–‘ইরার ব্যাপারটা নিয়ে টেনশন করছেন?করিয়েন না,আমি যে প্ল্যান করেছি তাতে কাজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।আর নাহলে ও আরেকটা রাস্তা খুজে নিব ইনশাআল্লাহ। বিশ্বাস রাখুন।
–‘আছে,থাকবে না কেন?রাত তিনটা বাজে এখন বাদ দাও এসব।ঘুমাও।
–‘হ্যা।
________________________
কুয়াশার চাদরে মোড়া সকাল | সূর্যের মুখ দর্শন হয়নি এখনও | কুয়াশার চাদরে লুকি/য়ে আছে বোধহয়|বলা হয় শীত হিমশীতল ঋতু,বি/বর্ন ও বটে।ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চি/ন্তিত ভঙ্গিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে সূচনা।চিন্তার কারন ইরা।এই মেয়ে আবার রুমে লেগে গেছে আগের মতো। তাকে বুঝাতে হবে সব প্ল্যান অনুযায়ী। কিন্তু সে তো কথাই বলছেনা।
–‘কি এত ভাবছো.?
আচমকা করা প্রশ্ন, কি/ঞ্চিত কে/পে উঠলো সূচনা।পাশ ফিরলে দেখা মেললো প্রনয় এর।তাদের দৃষ্টি এক হলো না।প্রনয় সামনের দিকেই তাকিয়ে।সূচনা ও পুনরায় সামনে তাকালো।স্বাভাবিক কন্ঠে শোধালো-
–‘ ভাবছি ইরার সাথে কিভাবে কথা বলবো।
–‘এত প্রে/শার নিও না আমি কথা বলব নি।
–‘আপনি জানেন সেটা জানার পর ই ও মুগ্ধর ওপরে এতটা ক্ষে/পেছে ও।এখন যদি আপনিই তাকে বুঝাতে যান ব্যাপারটা কেমন দাড়াবে বুঝতে পারছেন?
-তা ঠিক বলেছো।কিন্তু করবে কি?
-আমিই বলবো সুযোগ বুঝে।
-ঠিক আছে আমি অফিসে যাবো আজকে।আসো।
-সব গুছিয়ে দিয়েছি আমি।
-তো?
-তো কি?
-প্রনয় চোখ পা/কিয়ে তাকাতেই সূচনার যা বুঝার বুঝা হয়ে গেল।দ্রুত পা মেলালো প্রণয়ের সাথে।যাওয়ার আগে আগের ন্যায় কথাটা বলাতে সূচনাকে বলতে হয়নি।সূচনা দরজাায় দাড়িয়ে নিজে থেকেই বলেছে-
–‘যেয়ে তাড়াতাড়ি আসুন।
বিনিময়ে মুচকি হেসে বেড়িয়েছে প্রণয়।
________________________
দুপুর দেড়টা।লাঞ্চ টাইমে মুগ্ধকে কল করলো প্রনয়।রিং হচ্ছে একবার,দু’বার, তিনবার এর সময় রিসিভ করলো মুগ্ধ।
–‘হ্যালো….
বি/রশ কণ্ঠ মুগ্ধর।যদি ও সে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার চেষ্টা করলে ও প্রণয় ধরে ফেলবে।তাই চেষ্টা করাটা বৃথা।
–‘কেমন আছিস?
ঘো’ড় ভা/ঙলো মুগ্ধর।বললো-
–‘আলহামদুলিল্লাহ। তুই?
–‘আলহামদুলিল্লাহ।ফ্রি আছিস আজকে? এখন কোথায় তুই?
–‘ডা.আনান সিদ্দিকির মা/র্ডার কেস নিয়ে ব্যস্ত একটু।
–‘মা/র্ডার কেস? সে না সুই/সাইড করেছে?
–‘ভেবেছিলো কিন্তু ইনভেস্টিগেশন করে দেখা গেছে উনি সুই/সাইড করেননি,সেটা নিয়েই কাজ চলছে।
–‘ওহ আচ্ছা।খু/নি কে পেয়েছিস?
–‘পেয়েছি।
–‘আচ্ছা, ভালো কাজ করছিস তুই।দেখা করতে পারবি?
–‘আজকে?
–‘হ্যা।
–‘পারব কিন্তু বিকেল হবে।
–‘স/মস্যা নেই।
–‘ঠিক আছে তাহলে সময় আর জায়গা বলে দিস।
–‘আচ্ছা।
__________________________
–‘ইরা মুগ্ধ চট্টগ্রাম চলে যাচ্ছে একেবারের জন্য।
জানালার কাছে বই হাতে বসেছিল ইরা।হাতে বই থাকলেও দৃষ্টি ছিল বাইরে আর মন সে তো অন্যের পা/ড়া তেই পড়ে ছিল।আনমনা হয়ে বসে থাকা ইরার কানে উক্ত কথাটুকু আসতেই সে ত/ড়িৎ গতিতে সামনে তাকালো।শোনার ভু/ল মনে করে আবার জিজ্ঞেস করলো-
–‘কী বললে বুঝিনি?
–‘মুগ্ধ পুলিশে জয়েন হয়েছে, তার জন্য চট্টগ্রাম চলে যাচ্ছে একেবারে।
বু/ক ধ্ব/ক করে উঠলো ইরার।কোনোমতে জিজ্ঞেস করলো-
–‘একেবারে চলে যাবে মানে?আর ফিরবেন না?আর তোমাকে কে বললো?
–‘তোমার ভাইয়া বলেছেন,একেবারেই চলে যাবে কিন্তু কবে ফিরবেন বা আদৌও কখনো ফিরবেন কি না তা বলেননি।
ইরা এবার আর পারলো না, জানালার ধার থেকে উঠে এসে সূচনার সামনে দাড়িয়ে পড়লো। কান্না করে দিল একদম,ভা/ঙা কণ্ঠে বললো-
–‘একেবারে চলে যাবেন কেন?ভাবি আমার কী হবে তাহলে?আমি থাকব কীভাবে?
–‘কেন তুমি থাকতে পারবে না কেন?সে তো তোমার কেউ না।
–‘ভাবি।
–‘তুমিই তো বলেছো কালকে।
–‘আমি দেখা করব ওনার সাথে।
–‘ওনাকে সামনে আসতে না করেছিলে কাল।আর তোমার মনে হয় সে তোমার সাথে দেখা করবে।
–‘আমি মা/ফ চাইব দরকার হয় তবু ও দেখা করব।
–‘সে মা/ফ করে দিবে?
–‘জানিনা,আমি কিচ্ছু জানিনা, শুধু দেখা করবে ওনার সাথে।
–‘আমি কিছু জানিনা।
–‘ভাবি প্লিজ।
#চলবে
(