প্রণয়ের সূচনা পর্ব – ৩৯

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৩৯
________________________________
অপ/রাধীর ন্যায় নত মস্তকে দাঁড়িয়ে আছে ইরা।তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ।তাদের দুজন থেকে কিঞ্চিৎ দূরত্ব নিয়ে দাড়িয়ে আছে প্রণয় আর সূচনা।একটা পার্কের মধ্যে অবস্থান করছে এখন তারা। প্রণয় মুগ্ধ কে এখানেই ডেকেছিল।কিন্তু এখানে আসার পর যে ইরার দেখা মিলবে ভাবতে পারেনি মুগ্ধ। অবাকের পাশাপাশি প্রশ্ন ও জাগছে,ইরা কেন এসেছে এখানে?আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতে অন্য দিকে মুখ ঘু/রিয়ে থম/থমে গলায় মুগ্ধ জিজ্ঞেস করলো-

–‘আমাকে এখানে কেন ডেকেছিস প্রণয়?

জবাব এলো না,আসবে কিভাবে?প্রণয় তো নেই এখানে।সে জানত মুগ্ধ তাকে এই কথা জিজ্ঞেস করবে তাই আগেই সরে গিয়েছে। তারা থাকলে কথা এগোবে কি করে?মুগ্ধ জবাব না পেয়ে পাশ ফিরে তাকালো কিন্তু সেখানে তো কেউ নেই।সে বি/চলিত হলো,সাথে অস্ব/স্তি ও কাজ করলো ইরার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে।ইরাকে কিছু জিজ্ঞেস করার ও ইচ্ছে বা সাহ/স কোনোটাই হলো না।যদি আবার কিছু বলে দেয়, যা তার জন্য শোনা আর মানা ক/ষ্ট সাধ্য।মুগ্ধ চুপ করে থাকলো,স্বরের নীরবতা টি/কে থাকলেও হৃদকোমলে শুরু হলো ঝ/ড়।মুগ্ধর হৃ/দস্পন্দ/ন বেড়ে গেল কয়েকগুণ। ইরার আচমকাই ঝা/পটে ধরেছে তাকে।আচ/মক ঘটা ঘটনায় ভ/ড়কে গেল মুগ্ধ,পিছিয়েও গেল দু-তিন কদম।তড়িঘড়ি করে ইরার দু বাহু ধরে সরানোর চেষ্টা করতে করতে বললো-

–‘মিস.ইরা কী করছেন এসব?ছাড়ুন।

ইরার হেলদোল নেই কোনো।মুগ্ধ কয়েকবার তার কথার পুনরাবৃত্তি করলো।কিন্তু ইরা তার মতোই ঝা/পটে ধরে রেখেছে মুগ্ধ কে,অনবরত কান্না করছে ইরা।মুগ্ধ এতক্ষণ হাত শ/ক্ত করে মুঠ করে রেখেছিল কিন্তু ইরার বে/হাল দশা তার মনকে অ/শান্ত করে দিয়েছে একদম,প্রেয়সীর এমন কান্না তার বু/কের ভেতরের শুরু হওয়া ঝ/ড় কে তীব্র হতে তীব্র করেছে। মনকে শ/ক্ত করে রাখতে পারেনি মুঠ করা হাত তার নরম হ’য়েছে।আস্তে আস্তে যেতে যেতে ইরার পিঠের ওপর যেয়ে থেমেছে হাত জোড়া।তার হাতের স্পর্শ পেয়ে যেন ইরা মোমের ন্যায় গ/লে গেল,কান্নার পরিমান বাড়লো,এতক্ষণ নিঃশব্দে কান্না করলেও এবার সুর উঠে গেল কান্নার,হিচ/কি তুলে দিল কান্না করতে করতে। মুগ্ধ দুইবাহু ধরে সোজা করে দাড় করালো ইরাকে,দুই গালে হাত রেখে কোমল গলায় জিজ্ঞেস করলো-

–‘এভাবে কেন কাদছেন?ম/রে যাইনি তো আমি।

ইরা চ/মকে উঠলো,কাঁদতে কাঁদতে বললো-

–‘এভাবে কেন বলছেন?

–‘কীভাবে বললাম?আপনি এই অসময়ে কেন দাড়িয়ে আছেন আমার সাথে?তাও একা।ভ/য় লাগছে না?আমি এক অপরিচিত ছেলে, আপনি অপরিচিত একা
একটা মেয়ে। মোটেও ভালো কথা না।

–‘ইচ্ছে করে এমন করছেন,আমি একা এসেছি নাকি,আপনি দেখেননি ভাইয়া ভাবি কে?বুঝতেও পারছেন সব তাহলে কেন ভান করছেন?

–‘কী বুঝতে পারছি?

–‘মুগ্ধ প্লিজ এমন করবেন না।আমি অনেক ল/জ্জিত আমার কালকের ব্যবহারে।প্লিজ আপনিও অমন ব্যবহার করবেন না।আপনি সহ্য করতে পারেন কিন্তু আমি পারবনা।

–‘শুধু কালকের ব্যবহারে?এর আগে যা করেছেন তার কী হবে?টানা এক মাস প্রণয়ের দহ/নে পু/ড়েছি, প্রতিক্ষণে ক্ষ/ত বিক্ষ/ত হয়েছে হৃ/দয়। তার হিসেব কে দিবে?কে নিবে দায়ভার?

ইরা করুণ চোখে তাকালো, করুণ স্বরে ই বললো-

–‘শুধু কী আপনার হৃ/দয়ে ক্ষ/ত হয়েছে? আমি বুঝি শান্তি তে ছিলাম?

–‘যখন আমার আপনাকে ভীষণ প্রয়োজন ছিল,আপনার কাধে মাথা রেখে নিজের দুঃ/খ প্রকাশ করার বর প্রয়োজন ছিল তখন আমি আপনার অ/ভিমান ভা/ঙাতে ব্যস্ত ছিলাম।একটা মানুষের পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন মানুষ টা যখন চিরতরে বিদায় নেয় তখন তার অবস্থা কেমন হয় ভাবতে পারেন?আমার অবস্থা তেমনই হয়েছিল,আপনার প্রয়োজন ছিল কিন্তু পাইনি।তখন ম/রিয়া হয়ে গিয়েছিলাম শুধু মাত্র এক নজর আপনাকে দেখার জন্য।তা কি কম?

–‘মা,,মানে?ক,,কে চিরতের বিদায় নিয়েছে?কী বলছেন এসব?
_______________________________
খোলা মাঠে ঘাসের ওপর বসে আছে সূচনা আর প্রণয়।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে প্রায়।সূচনা নজর ছিল দুজন কপোত-কপোতীর ওপর,তারাও ঘাসের ওপর বসে আছে তাদের মতো,তাদের থেকে অনেকটা দূরে তারা।মেয়েটা ছেলেটার কাধে মাথা রেখে বসে আছে।সুন্দর লাগছে দেখতে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে তাদের মধ্যে ভালোবাসার কমতি নেই।
শীতের প্র/কোপে জমে যাওয়ার উপক্রম হত সূচনার।ভাগ্যিস প্রণয় বলেছিল সুয়েটার পড়ে নাও,তাই এখনও পর্যন্ত ঠিকঠাক আছে।

–‘তোমার কী মনে হয় কাজ হবে?

প্রণয়ের প্রশ্ন কানে আসতেই সূচনা তাকালো তার দিক।নিজের ভাবনা একপাশে রেখে বললো-

-হবেনা কেনো? অবশ্য ই হবে।

-হলে তো ভালোই।

-হুম,হবে হবে বিশ্বাস রাখু।আচ্ছা আপনার অন্যরকম লাগছেনা কেমন? আপনি বড় ভাই হয়ে বোনের…

-লাগছে এখন।

-তবে ব্যাপার টা দারুন ইরার জন্য।সে ভাগ্যবতী কতো!

কিছু বললো না প্রণয়,স্বল্প পরিসরে হাসলো শুধু। সূচনা ও আর কিছু বললো না। পূর্বের ন্যায় তাকিয়ে রইলো আড়চোখে সামনের সেই কপোত-কপোতীদের দিকে।

-ওখানে তাকিয়ে থেকে কি লাভ?চাইলে আমরা ও তো এভাবে বসতে পারি।

সূচনা গলা খাঁকা/রি দিয়ে বললো।

-আপনাকে কে বলেছে, আমি ওইদিকে তাকিয়ে ছিলাম?

-আমার তো আর চোখ নেই যে দেখবো।

-বেশি দেখা ভালো না।

-কিছুই তো দেখলাম না এখনো।

-কি দেখবেন! এখানে দেখাদেখির কি আছে?

-এখানে দেখাদেখির কি থাকবে! ঐসব কি এসব জায়গায় হয় যে বলবো।

–‘কোনসব এসব জায়গায় হয়? কিসব বলছেন?আপনার মাথা দিনদিন খা….

সূচনা থেমে গেল,থ/ম মা/রা দৃষ্টি নিয়ে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো কিয়ৎপল। অতঃপর চোখেমুখে ল/জ্জার রেশ টের পেতেই দৃষ্টি নত করে নিল। প্রণয় নিজের জায়গা থেকে সড়ে এসে গা ঘে/ষে বসলো সূচনার। তাদের মধ্যে থাকা কিঞ্চিত পরিমান দুরত্বটাও মিটে গেল এবার।প্রণয়ের স্পর্শে সূচনা কে/পে উঠলো।

–‘এমন এক দিন আসবে যেদিন আমাদের ও এমন মুহুর্ত হবে।শুধু এই মুহুর্ত টাই না, প্রণয়ী চাইলে প্রণয় এমন হাজারো মুহুর্ত গড়তে রাজি শুধু প্রণয়ীর অনুমতির বাকি।

হিমশীতল আবহাওয়া আর নিস্তব্ধতায় ঘেরা পরিবেশে প্রণয়ের গাঢ় কণ্ঠে বলা কথাগুলো শুনে শিউ/রে উঠলো সূচনা।কেমন যেন ঘো/র লাগা কণ্ঠ তার।প্রণয়ের কথা অনুযায়ী চোখ বন্ধ করে নিজেদের কে কল্পনা করলো সেই জায়গায়।সেই সময়টায় তাদের কেমন লাগবে?কেমন হবে মুহূর্ত টা?দুজনের অনুভূতি কেমন হবে?ইশশশ লজ্জা!সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলল সূচনা।প্রণয় শান্ত চোখে তার দিকে ই তাকিয়ে আছে।
____________________________
–‘আম্মু মা/রা গেছে আজ এক মাস হয়ে গেছে।

মুগ্ধর মুখ থেকে উক্ত কথাটা শুনে ইরা স্ত/ব্ধ হয়ে গেল একদম।প্রতিক্রিয়া দেখাতেও ভুলে গেল,ট/লম/লে চোখ নিয়ে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে রইলো। মুগ্ধ নিজের মতো করে বলা শুরু করলো-

–‘আম্মু অনেক খুশি ছিল আমার পুলিশে জয়েন হওয়ার খবর শুনে।সুস্থ ছিল পুরোপুরি।সেদিন বিকেলে যখন ফোন দিয়ে জানালাম জয়েন হওয়ার জন্য ডেট ও ফিক্সড হয়ে গেছে, অনেক খুশি ছিল, হাসতে হাসতে বলছিল-

–‘ তাড়াতাড়ি বাসায় আসবি,তোর সব পছন্দের খাবার রান্না করে রাখব আমি।

আমিও হাসিমুখে রাজি হয়েছি,নিষে/ধ করিনি।স্বপ্ন টা তো আম্মু ই দেখিয়েছিলেন,সেই স্বপ্নের পূরণ হওয়ার খবরে খুশি হওয়াটা স্বাভাবিক বৈকি।সন্ধ্যার দিকে বাসায় যেয়ে দেখলাম সদর দরজা হা*ট করে খুলে রাখা,ভেতরে যেয়ে সোজা রান্নাঘরে ঢুকলাম,আম্মু ছিল না কিন্তু তার কথা মতো আমার পছন্দের সব খাবার ঠিকই রান্না করেছিলেন।রান্না ঘরের অবস্থাও বা/জে ছিল।পুরো বাসা খুজেও কাউকে পেলামনা।ভ/য় আস্তে আস্তে গ্রাস করতে লাগলো যখন তখনই কল আসলো ফোনে।আব্বুর নাম্বার থেকে,রিসিভ করার পর শুধু কানে এতটুকু কথাই এসে পোঁছায় –

–‘মুগ্ধ তোর আম্মু আর নেই।

সারা শরীর অব/শ হয়ে গিয়েছিল, নড়া/র শক্তিটুকু ও পাচ্ছিলাম না।কিন্তু হঠাৎ মাথায় আসলো -আমাকে যেতে হবে আম্মুর কাছে।প্রণয়কে কল দিলাম কোনোমতে।আব্বুকে ফোন দিয়ে হসপিটালের এড্রেস ও ই জেনেছে।ড্রাইভ করার বিন্দুমাত্র শক্তিটুকুও ছিল না হসপিটালে নিয়ে গিয়েছে প্রণয়ই।হসপিটালে পোঁছালাম,সারি করে রাখাা চেয়ারে নজর যেতেই দেখলাম আব্বুর বি/ধ্বস্ত চেহারা৷পাথর হয়ে যাওয়া শরীরটা কে কোনোমতে টে/নে নিয়ে আব্বুর সামনে বসলাম।আব্বু প্রতিক্রিয়া দেখাননি কোনো।নির্লিপ্ত কণ্ঠে কিছু কথা বললো,জানালো।আব্বু সেদিন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরেছিলেন,বাসায় যেয়ে দেখলেন আম্মু কেমন যেন করছেন,আম্মুর অস্থি/র লাগছিল অনেক,আব্বু হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার বললেন,আম্মু বিদায় নিয়েছেন।ব্রে/ন স্ট্রো/ক করেছিলেন আম্মু।

শেষের কথা বলতে যেয়ে কণ্ঠস্বর কে/পে উঠলো মুগ্ধর।স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কান্না আ/টকে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে মুগ্ধ। ছেলেরা সহজে কাদে না,খুব বেশি কিছু না হলে তাদের চোখ থেকে পানি কপোল গড়িয়ে পড়ে না।সেখানে নিজের মাকে হারিয়েছে মুগ্ধ, কান্না করাটা তো অস্বাভাবিক না।ইরা নিজেও কাদছে,সে আখি জোড়া মুছে অস্ফু/টস্বরে বললো-

–‘ সেই সময়টায় আমি আপনার সাথে কতকিছু করেছি, তার জন্য আপনার আমাকে ঘৃ/ণা করা উচিত। আপনার সামনে দাড়ানোর যোগ্যতা ও আমার নেই।আমি অনেক খা/রাপ, অনেক খা/রাপ নাহলে কখনোই এমন করতে পারতামনা। আমি আপনাকে বুঝতে পারিনি,কতটা অধ/ম আমি।আমিও আম্মুকে হারিয়েছি কিন্তু অনেক ছোট বেলায়, ছবি না দেখে থাকলে তো এখন চিনতামই না,জানতাম ও না আমার আম্মু কে?আম্মুর সান্নিধ্য পেয়েছি খুব কম সময়,তাই আপনার আম্মুকে হারানোর পর আপনার সেই সময়ের অবস্থা,কষ্ট আমি বুঝবনা কিন্তু একটু হলেও অনুধাবন করার শক্তি আছে।সেই সময়ে আমার কাজ গুলো আপনার সেই ক্ষ/তের সাথে যোগ হয়ে আপনাকে আরও ক/ষ্ট দিয়েছে।

–‘ঘৃ/ণা করে দূরে সরিয়ে দিলে ই শুধু শা/স্তি দেয়া যায় এমন কোনো নিয়ম আছে? কাছে রেখেও শা/স্তি দেয়া যায় তাও প্রতিক্ষণে, প্রতিমুহূর্তে।

–‘সে সুবাদে আপনার কাছে থাকতে পারলেও আমি রাজি,সপে দিব নিজেকে আপনার কাছে।শুধু আমার ভুল টার আবারও পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে,সেদিকটার খেয়াল রাখবেন।

–‘ঘটবে না।তার আগে কিছু জানা প্রয়োজন তোমার।

–‘কী?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here