#প্রণয়প্রেমিকের_নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৬
‘আপনি না বলছেন শুধু আমাকে ভালোবাসেন তাহলে এই মেয়ে কে! কোন কারণে আপনার নাম্বার চাইছে। তলে তলে টেম্পু চালান। আজ আপনারে খাওয়াব তবে গরুর মাংস না গরুর গোবর।’
আহিফার প্রত্যেক কথায় প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে বেকুব বনে রইল আশফি। ঘাড় বাকিয়ে সুশ্রী নারীর দিকে আড়চোখে পরখ করে। ফলে মেয়েটি মুখে হাত রেখে লাজুক হাসে। তার হাসি যেন আহিফার সাত অগ্নিকুণ্ডে ঘি ঢালার মত হলো। ‘জাস্ট ডেমম’ বলে চেঁচিয়ে আশফির কলার আঁকড়ে ধরল। গলা ফাটিয়ে বলে,
‘ওই হালকাট তুই আমাকে ছেড়ে অন্য মেয়ের সঙ্গে নিজের সেটিং করছিস। শরম করে না আমার মত সুন্দরী হবু বউ থেকেও পরনারীর দিকে নজর দিতে। ব্রেকআপ হলো চারঘণ্টাও হয়নি। তৎক্ষণে গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে নিলে বাহ্! তোর ভালোবাসার নমুনা বুঝাচ্ছি আমি দাঁড়া।’
আশফির মাথায় যেন বাজ পড়ল। বলে কি মেয়েটা! সে কার সঙ্গে পিরিত করে ফেলল আবার! তার মুখ হ্যাবলার চেয়েও করুণ হয়ে গেছে। আহিফা চর্তুপাশ্বে গভীর চাহনী নিয়ে গরুর গোবর খুঁজছে। যেনো কাঙ্ক্ষিত গোবর পেয়ে আজ সর্বনাশ করে ফেলবে আশফির। ঢোক গিলে উল্টো দৌড়ে অচেনা মেয়ের কাছে ছুটে যায় আশফি। আহিফার চুক্ষ অগোচরে অচেনা মেয়ের মুখোমুখি হয়ে ভীতিগ্রস্থ কণ্ঠে হাত জোড় করে বলে,
‘বোন কেনো আমার লাভ কানেকশনে ভিলেন হচ্ছো বলো! তোমার থেকে আমার ভাইয়ের নাম্বার লাগবে তো। দেব শুধু নাম্বার না তার ফেসবুক,হোয়াইট’স আপ,ইন্সটাগ্রাম যত সোশাল আইডি আছে দিয়ে দেব। তবুও আমার হবু বউয়ের সামনে মন্দ অপবাদ দিও না। না হলে হাতে যা পাবে তা দিয়েই আমার পরলোক গমনের ব্যবস্থা করে দেবে উড়নচুন্ডী কোনখান!’
‘কি বললেন আমি উড়নচুন্ডী রাইট! ওয়েট কাকে বলে উড়নচুন্ডী দেখাচ্ছি।’
হাতে যেন কোথার থেকে এক মিনি সাইজের গামলাভর্তি গরুর গোবর নিয়ে এসেছে আহিফা। অথচ সে নিজেকে প্রতিহত করতে মুখে মাস্ক লাগিয়ে রেখেছে। যেন গোবরের তীব্র গন্ধ তার নাক অব্দি না পৌঁছায়। আশফি শুকনো করুণ নয়নে চেয়ে বলে,
‘ওগো সুন্দরী গোবর কোথায় পেলে হে!’
‘কেনো আপনি যে পার্কে ঘুরঘুর করছেন তখন বুঝি চোখ এই মেয়ের দিকে ফেভিকল দিয়ে আঁটকে রেখে ছিলেন।’
থতমত খেয়ে আশফি তার বাঁ পাশে তাকায়। সেখানে এক রাখালের ফার্ম দেখা যাচ্ছে। গরুর গোয়ালখানাও সুস্পষ্ট নজরে আসছে এমুর্হুতে। ইশ! তার এখন মনে হচ্ছে কোন দুঃখে সে পার্কে সেহের করতে এসে ছিল। কপালে বুঝি তার শনি নয় অমঙ্গল ঘুরছে। গোয়ালখানা দেখে যা বুঝার বুঝে ফেলল আশফি। দৃষ্টি নামিয়ে চোরা চোখে আহিফার দিকে চাহনী নিক্ষেপ করে। মেয়েটি এখনো জোয়ালামুখির ন্যায় ফোঁসচ্ছে। আশফি ধ্যান করে আকস্মিক বলে,
‘এই তুমি জানো না তোমাকে কত ভালোবাসি। তারপরেও উৎকট কথাবার্তা কেমনে বলছো হুম!’
আহিফা শয়তানি হেসে গামলাভর্তি গোবরটি ছুঁড়ে দেয় আশফির মুখোমুখি বরাবর। সে এই অমিতাভ ছুঁড়ে দেওয়া দেখে গামলার সামনে থেকে সরে গেল। তবে কান্ড ঘটে গেল অন্যকিছু। আহিফার ভয়ে হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেল। কেননা গামলার গোবর গিয়ে পড়েছে সাদা চামড়ার এক বিদেশী পুলিশ অফিসারের উপর। অচেনা মেয়েটি মুখে হাত রেখে ‘ও মাই গড’ বলে উঠে। আহিফা ভীতিগ্রস্থ দৃষ্টিতে একপলক দেখে আশফিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। মিনমিনে কণ্ঠে বলে,
‘বাঁচিয়ে দাও না প্লিজ।’
অফিসার প্রথমত কিসের ময়লা ভেবে পেল না। হাত দিয়ে তার মুখ থেকে গোবরগুলো নিয়ে নাক বরাবর আনতেই ‘ওয়াক’ করে বমি করে দেয় রাস্তার মধ্যে। তার বমির দৃশ্য দেখে আশফির নিজের গা গলিয়ে আসছে। তন্মধ্যে আহিফা ঝোঁপের উপর বমি করে ফেলেছে। অফিসার ক্ষোভিত দৃষ্টি নিয়ে পিছু মোড়ে তাকায়। আহিফার হাতে গ্লাভস দেখে বুঝে যায় কাজটি এই মেয়ের! সে তার ব্লুটুথে বাকি অফিসার্সকে কনফার্ম করে উচ্চ আওয়াজে বলে যে,
আই হেভ ফাউন্ড এ ক্রিমিনাল! কাম ফাস্ট।’
আহিফার চোখ বড় হয়ে গেল। তাকে ক্রিমিনাল উপাধি দেওয়া হলো। ঠোঁট নাড়িয়ে আশফিকে আকঁড়ে ধরে বলে,
‘ওগো দেখো না তারা আমায় নিয়ে যাবে।’
‘যাক আমি তো ভাই বাঁচলাম। ওমন উড়নচুন্ডী মাথার উপর থেকে উড়াল দিলে সবার জীবন বাঁচব।’
কথাগুলো শুনে পুনরায় অগ্নিদেবীর রুপ নিয়ে নেয় আহিফা। আশফির কলার ধরে বলে,
‘কেন রে এই সাদা ময়দা সুন্দরীকে দেখে তোর মন ফিদে হয়ে গেছে রাইট! এখনি যদি এই ময়দার মুখে কালিচুন না মাখতে পারছি তবে আমার নামও আহিফা জামান আদাফাত না!’
চওড়া গলায় বলার কারণে অচেনা মেয়েটির কানে কর্ণগোচর হলো কথাগুলো। তীব্রবেগে ভয়ে ভিতু হয়ে যায়। অগ্নিশর্মা রুপে আহিফাকে দেখে আমতা ভাব নিয়ে বলে,
‘আ আপু আপ আপনি ভুল বুঝছেন! আমি আশফি ভাইয়ার কাছ থেকে তার নয় বরং…।’
অচেনা মেয়ের কথা সম্পূর্ণ হতে দিল না আহিফা। রাগের চটে একদলা ঘাসের বালি নিচু ঝুঁকে মাটি থেকে নিয়ে মেয়ের দিকে ছুঁড়ে দেয়। তথাপি এলাহি কান্ড পুনরাবৃত্তি হলো। বালিগুলো গিয়ে লাগল সেই গোবরে সজ্জিত অফিসারের উপর। যে আহিফাদের দিকে তেড়ে আসছিল। তার মুখে জোরালো ভাবে লাগায় ধপাস করে মুখ থুবড়ে পড়ল গেল সে। দেখে যেন অন্তআত্মা ফুড়ৎ করে উড়ল আহিফার। অচেনা মেয়ে হাটুমোড়ে ঝুঁকায় বেঁচে গেল একপর্যায়ে। আহিফার দিকে করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
‘আপু আমি আশফি ভাইয়ের নাম্বার নয়। আই ওয়ান্ট মাই কিউটি পিউটি আজীবের কনটাক্ট নাম্বার সিস নট ইউর ফিয়ন্সে।’
‘ফিয়ন্সে’,’আজীবের কনটাক্ট নাম্বার’ শব্দগুলো যেন আহিফার মাথায় টুপ করে মেঘের জল ফেলল। হ্যাবলার মত চেয়ে বলে,
‘আর ছেলে পেলে না বোন! আমার পড়ুয়া বিদ্যাসাগর দেবরের উপর নজর মে’রে দিলে।’
অচেনা মেয়ে লাজুক হেসে মুখে ঢেকে বলে,
‘সেও গোল আমিও গোল,আমাদের বেবি’সও গোল মটর।’
‘তো বি গোল,মেবি গোল সারী দুনিয়া গোল মটর’ গানের লিরিক্সের পিরিতমার্কা লিরিক্স শুনে আহিফা বাকশক্তিহীন চেয়ে রইল। সে অচেনা মেয়ের ধ্যান ফেরাতে বলে,
‘তোমার নাম কি!’
‘আইম নুসাইবা ফারিন।’
‘আইম…।’
আহিফার কথাকে মাঝপথে থামিয়ে ফারিনই বলা আরম্ভ করে।
‘আপনি মিস্টার আশফি ফাওয়াজ এর ফিয়ন্সে আহিফা জামান। আপনার পরিচয় দেওয়া লাগবে না কারণ আপনাদের ঝগড়ার সুফলে সব শুনে ফেলেছি।’
আহিফা ক্ষণিকে লজ্জা পেল। আশফি ঠোঁট চেপে মিটমিটিয়ে হাসি দেয়। কিন্তু হাসিটুকু বেশি সময় স্থায়ী রইল না। অফিসার চেঁচিয়ে বলে,
‘আই উইল এরেস্ট ইউ গার্ল।’
অফিসারের কণ্ঠস্বরে ফারিন,আশফি ও আহিফা চমকে গেল। আহিফা উদগ্রীব গলায় আওড়ায় বলে,
‘সুইটহার্টের হবু স্বামী আপনি আমাকে যেতে দেবেন!’
‘অবশ্য,রাইট,পার্ফেক্টলি দেব।’
শুনে যেন আহিফার কান থেকে গরম ধোঁয়াটে ভাব বের হতে লাগল। সে হাত দিয়ে আশফির ঘাড় চেপে ধরে। এতে বিন্দুমাত্র ব্যথিত হলো না সে। কেননা নরম হাতের তুলতুলে স্পর্শ আশফির ঘাড়ে আঘাত করার পরিবর্তে ব্যথার চেয়েও দরুণ মজা লাগছে তার। তবুও সে রসিকতা প্রকাশ করে অফিসারের সামনে ‘আহ্ উহ্ হুয়াই ইউ ওয়ান্ট টু কিল মি!’
আহিফা হা হয়ে যায়। অফিসার দেখে দ্বিগুণ রেগে যায়। সে গোবরমাখা রুপে তাদের সম্ভুখে প্রকট হলো। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) আশফির নাকে উদ্ভূত দুর্গন্ধ আসার পূর্বে নিঃশব্দে মাস্ক বের করে মুখে পরে নেয় সে। অফিসার আহিফার দিকে অগ্নিকুণ্ডের ন্যায় তাকিয়ে বলে,
‘ইউ আর আন্ডার এরেস্ট।’
আহিফা ড্যাব ড্যাব করে তাকায় আশফির দিকে। সেও গোলাকৃতির চোখে তার দিকে চাইল। দুজনের চাওয়াচাওয়ে বেশিক্ষণ অবধারিত হলো না। আহিফাকে টেনে অফিসার নিয়ে যেতে নেয়। ফলে আহিফা দৃষ্টিনত করে নিশ্চুপ হয়ে গেল। গাড়ির নিকটস্থ হয়ে যেই না অফিসার গাড়ির দরজা খুলে আহিফাকে টেনে নেবে। তৎক্ষণাৎ অফিসারের হাত থেমে গেল। থমকে গেল সে। আকস্মিক হাত আলগা করে আহিফাকে ছেড়ে দেয়। ব্যাপারটায় সে আশ্চর্যান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। অফিসার তার গোবরমাখা মুখে নমস্কারের মত মাথানত করে বিদায় নেয়। অফিসার জীপে বসে জীপ চালু করে প্রস্থান করে। আহিফা যেন ঘোরের মধ্যে ছিল। কাহিনী হলো কি বুঝতে পেরে খুশির ঠেলায় নিজের মাঝে প্রিন্সেস ভাব নিয়ে আশফির দিকে মুখ মোড়ায়। দেখল সে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার পিছনে। হকচকিয়ে উঠে আহিফা। প্রিন্সেস ভাব মুখে এঁটে রেখে বলে,
‘দেখলেন আপনার যাইতে দেওয়া কোনো কাজে আসল না হাহ্। আমি হলাম আহিফা মনে রাখিয়েন।’
শুনে দুষ্টু নজরে চেয়ে আশফি মৃদু ঝুঁকল আহিফার উপর। আহিফা বরাবর ৫’৪ হওয়ায় আশফির নিচু হয়ে ঝুঁকতে বেশ ভালো লাগে তার। আশফির মুখ এগিয়ে আনায় আহিফা কদম পিছিয়ে নেয় এক ইঞ্চি পরিমাণ। তবুও যেন লম্বাটে অথাৎ ৫’৮ ছেলের দুষ্টুমিপূর্ণ ভাব গেল না।
ফিসফিসিয়ে বলে,
‘প্রিন্সেসের গালটা বেশ আকৃষ্টময়। লুকিয়ে রেখো বালিকে,হাতে পেলে চিবিয়ে খেয়ে ফেলব।’
‘খায়িস’ করে মুখ থেকে শব্দ বের করে দাঁতজোড়া চাবানোর মত করে আশফি। আহিফার ভাব যেন উবে গেল। তৎক্ষণাৎ ফাজিলটার পাশ কেটে দৌড়ে হেঁটে গাড়িতে গিয়ে বসে। আশফি আড়চোখে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসল। দুঘণ্টার ক্রোধও শান্তিতে মিইয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে তার এই প্রণয়োণী। ভাবা যায় রাগান্বিত রুপকে নিয়ন্ত্রণকারী কেউ আছে তার। উফ চরম ভাবওয়ালী মেয়ে সে! গাড়ির থেকে নজর সরিয়ে রাস্তার দিকে তাকায় আশফি। যেখান দিয়ে অফিসার প্রস্থান করে ছিল। বাঁকা হেসে দৃশ্যটি মনে করে।
কিঞ্চিৎ পূর্বে…
অফিসার ক্রিমিনাল হিসেবে ধরার চেয়ে উদারচিত্তে ছেড়ে দিতে পারতো। তবে সে ছাড় দেওয়ার পরিবর্তে ধার করার অযোগ্য দায় করেছে আশফির সামনে। সে স্পষ্ট অফিসারের চোখে লোলুপ ও হিংস্র দৃষ্টিকোণ দেখেছে। সে আহিফাকে এরেস্ট করে নিয়ে যেতো ঠিক, তবে থানায় নয় বরং নিজের আস্তানায় নিয়ে কুৎসিত রুপ দেখাতো। ভেবেই যেন আশফির হাতমুঠোবদ্ধ হয়ে গেল। তবুও সে শান্ত,নিবিড় ছিল। যখন দেখল না অফিসার তার সীমা ছাড়িয়ে তার প্রণয়োণীকে তারই সামনে টেনেহিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে! এর বিহীত সে করবেই।
গপ্তচরের মত অফিসারের জিপের ড্রাইভিং সাইডে আহিফার অগোচরে এসে দাঁড়ায়। পকেট হাতড়ে আইডি কার্ড ও অফিশিয়াল গার্ন বের করে হাতে মুঠো করে রাখে। জিপের ফ্রন্ড সাইডে আহিফার জন্য জায়গা করার সময় অফিসার আশফির হাতে অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস দেখে ভয়ে ছিটিয়ে উঠল। ফলে লেজ গুটিয়ে পালায়।
‘স্যার!’
ড্রাইভারের কণ্ঠ পেয়ে আশফির হুঁশ ফিরে। ঠোঁট চেপে হাসি নিয়ন্ত্রণে রেখে গাড়িতে গিয়ে বসে।
চলবে….
(