#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_৮
#writer_nahida_islam
-ভালোই ভালোই যাবে নাকি অন্য পথ অবলম্বন করবো,
রুপম আর তুষার ইফাজকে টেনে নিয়ে রুমে ডুকিয়ে বাহির থেকে তালা লাগিয়ে রেখে চলে আসে।
ইফাজ রুমে ডুকতে ই দেখে বিছানার মাঝখানে অতসী ঘুমিয়ে আছে। এমন হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে অন্য কেউ ভালো করে বসতে ও পারবে না। ইফাজ টেবিলে থাকা পানির জগটা এনে সুন্দর করে অতসীর মুখে ঢেলে দিতে ই অতসী উঠে বসলো,
-এমন মাউন্ট এভারেস্ট মতো হাত পা গুলো নিয়ে ফ্লোরে ঘুমাতে পারলে না। বেডে তো কাউকে বসার পর্যন্ত জায়গা টা রাখনি।
-এই জন্য আপনি আমাকে এভাবে ভিজিয়ে দিবেন। এটার বিচারটা পরে করছি আগে শাড়িটা চেঞ্জ করে আসি।
অতসী উঠে দরজা খুলে গেলে ই দেখলো বাহির থেকে দরজা লক করা। ইফাজের দিকে তাকাতে ই ইফাজ বিছানায় শুয়ে পড়ে। অতসী দ্রুত হেটে এসে কোমরে হাত দিয়ে বললো,
-দরজা লক করেছে কে?
ইফাজ কোনো কথা বললো না।
অতসী আবার জিজ্ঞেস করলো, ইফাজ এবার ও চুপ করে থাকলো। অতসী ইফাজের পাঞ্জাবি কলার ধরতে গিয়ে ইফাজে উপরে পড়ে যায়। ইফাজ এক হাত দিয়ে অতসীকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। অতসী হাত পা ছুড়তে ছিলো তাই ইফাজ অতসীকে ইফাজের নিচে ফেলে দেয়
-এ কি অসভ্যতা হচ্ছে? আর আপনার ওজন তো দুইশ মন হবে মনে হচ্ছে। ছাড়ুন আমাকে।
-তুমি নিজে থেকে ই আমার কাছে এসেছো, আমি কী জোর করে এনেছি নাকি। তাছাড়া এটা আমার অধিকার।
-কী ভুতে ধরলো নাকি আপনাকে?
-হে, তোমার ভুতে ধরেছে। আজকে আর তোমাকে ছাড়ছি না। তুমি এখন আমার সম্পত্তি। যে করে ই হক তোমাকে চাই।
ইফাজ এক হাত দিয়ে অতসীর লিপস্টিক মুছে দেয়। কানের দুলগুলো খুলে দেয়। ইফাজের প্রতিটি স্পর্শ অতসী কেঁপে উঠছে। মুখ দিয়ে কোনো কথা ই বের হচ্ছে না। ইফাজ অতসীর এক হাত নিজের হাতের মধ্যে আটকে নেয়। আস্তে আস্তে কানে কাছে গিয়ে ঠোঁট স্পর্শ করতে ই অতসী চোখ বন্ধ করে ফেলে। খুব আস্তে করে বলে, আমার টেস্ট অতোটা ও খারাপ না।
কথাটা বলতে ই অতসী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে
-কী বলছেন?
ইফাজ অতসীর উপর থেকে উঠে হালকা ধাক্কা দিতে ই অতসী নিচে পড়ে যায়।
-আল্লাহ আমার কোমর ভেঙ্গে দিলো রে?
ইফাজ অতসীর সামনে দাড়িয়ে বললো,
-আবার আমার আশেপাশে দেখলে এর থেকে ও খারাপ হবে।বদ মেয়ে
-শয়তান ছেলে আমার সুযোগ আসতে দে, আব্বা ডাকিয়ে ছাড়বো।
ইফাজ দাড়িয়ে হাসতেছে, অতসী কোনো রকম উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে ই দেখলো রুপমের মেসেজ।
“বৌরানী আজকের জন্য আপনাদের একা ছেড়ে আসলাম, আমরা বাংলো বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি। দেখা হবে কালকে। শত চেষ্টা করে ও লাভ নেই দরজা কিন্তু খুলবে না। কালকে সকালে মালি কে বলে এসেছি উনি খুলে দিবে। তোমার বাবাকে ও নিয়ে গেলাম নো টেনশন। এ রাত বার বার আসবে না সো মোবাইল রেখে জামাইকে দেখে। হ্যাপি বাসর রাত🥴”
অতসী মেসেজ টা দেখে ইফাজের দিকে তাকিয়ে বললো,
-সব জানতেন আপনি?
-কি জানতাম?
-এই যে সবাই আমাদেরকে এই নরকে তালা বন্ধ করে চলে যাবে।
ইফাজ সাথে সাথে বসা থেকে দাড়িয়ে বললো,
-কী, সবাই চলে গেছে মানে। আমার মতো এক নিরিহ আন্ডা বাচ্চাকে কুমিরের গর্তে ফেলে চলে গেছে।
-এই অসভ্য বানার কথাকার সব জেনে এখন ভং ধরা হচ্ছে।
-এই তুমি হলিউডের নাইকা না হে, যে তোমার সাথে রোমান্স করার জন্য ভং ধরবো।
অতসী হেসে বললো,
-কী না আমার চেহেরা কুত্তায় দেয় পাহাড়া। নিজের মুখ আয়নায় দেখে আসুন একবার।
কথাটা বলে ই অতসী ইফাজের লাগেজ খুলতে থাকে। ইফাজ গিয়ে অতসীর থেকে লাগেজে দূরে সরিয়ে নেয়,
-এই তুমি আমার লাগেজ ধরো কেনো?
-আপনি যে আমাকে ভিজিয়ে দিছেন, সারা রাত কী ভেজা কাপড় নিয়ে থাকবো নাকি?
-সারা রাত নাই আরেকটু সময় বাকি আছে পড়ে তুমি রুম থেকে বের হতে পারবে।
-বেশি কথা বললে না এখন আপনার আব্বুকে কল দিবো।
অতসী ইফাজের থেকে টান দিয়ে লাগেজ টা নিয়ে একটা ট্রি শার্ট বের করে ওয়ায়রুমে চলে যায়।
অতসী শাড়ি পড়ে হাটতে অসুবিধা হয় তাই নিচে ল্যাগিন্স পড়া ছিলো। শাড়িটা খুলে উপরে ইফাজের ট্রি শার্ট টা পড়ে নিলো। অতসী ওয়াশরুম থেকে বাহিরে বের হতে যাবে তখন ই দেখলো বাহির থেকে লক করা। অতসী কয়েকবার বললো কিন্তু ইফাজ খুললো না। দরজায় লাথি মারতে ই ইফাজ দ্রুত এসে দরজ খুলে দিলো।
-এতোক্ষণ লাগলো কেন আপনার দরজা খুলতে?
-ড্রেস চেঞ্জ করছিলাম, তুমি এসে যেনো লজ্জাহরণ করতে না পারো তাই দরজা দিয়ে রাখছি।
ইফাজ অতসীর দিকে খেয়াল করে দেখলো অতসী ট্রি শার্টের উপর দিয়ে শাড়ির কিছু অংশ পেচিয়ে রেখেছে। ইফাজ সাথে সাথে একটা শার্ট বের করে দিয়ে বললো, এটা পড়ে নেও তাহলে শাড়ির আর প্রয়োজন হবে না। অতসী শার্টটা পড়ে নিলো,
-মনে হচ্ছে সাগরে ডুবে যাচ্ছি, এতো বড় শার্ট তাও ট্রি শার্ট টা একটু ছোট ছিলো কোনো রকম পিন দিয়ে আটকিয়ে পড়েছি এটা পড়ে তো মনে হচ্ছে আমার পাঞ্জাবি।
-এই এতো কথা শুনতে চাই না, ভালো না লাগলে আমার শার্ট দিয়ে দাও।
অতসী বিছানায় বসতে ই দেখলো, যে বালিয়ে ঘুমিয়েছিলো বালিশ সহ বিছানার চাদর ব্লাংকেট অনেকটা ভিজে গেছে। অতসী উঠে আলমারি থেকে বিছানার একটা চাদর বের করে নিলো। কিন্তু আলাদা বালিশ বা ব্লাংকেট পেলো না। চাদরটা উঠিয়ে নতুন চাদর বিছিয়ে নিলো।
ইফাজ দাড়িয়ে দাড়িয়ে অতসীর কান্ড দেখছে। অতসী সুন্দর করে শুকনা বলিশ নিয়ে শুয়ে পড়লো, ব্লাংকেটের যে অংশটুকু শুকনা ছিলো তাও গায়ের উপর নিয়ে নিলো।
-এই আমি কোথায় ঘুমাবো..
-নিচে.
-নিচে মানে?
-পানি ঢেলেছেন এখন আপনাকে নিচেই ঘুমাতে হবে এটা শাস্তি।
ইফাজ দ্রুত গতিতে শুয়ে পড়ে,
-এসব শাস্তি আমি মানি না। ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো।
ইফাজ অতসীর থেকে ব্লাংকেট নিয়ে টানাটানি শুরে করেছে। অতসী রেগে গিয়ে জোর ধাক্কা দিতে ই ইফাজ বেড থেকে পড়ে যায়। অতসী সাথে সাথে ব্লাংকেট টা গায়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে।
অনিতা বেগম ইফাজের ছোটবেলার এলবাম নিয়ে বসে আছে, কতো ধরনের ছবি এটাতে। সব ছবিতে হাত বুলাচ্ছে। কিবরিয়া চৌধুরী অনিতা বেগমের কাজ কর্ম শুধু দেখে যাচ্ছে অনেক্ষন যাবত,
-আচ্ছা ছেলে কে আমাদের ছেড়ে কোথাও চলে গেছে তুমি এমন কাঁদছো কেনো?
-আমার ছেলেটা যে অনেক বড় হয়ে গেছে। আমি কেনো জানি মানতে পারছি না।
-ছেলে বড় হবে এটা স্বাভাবিক এতো ভাবার কি আছে,
-আচ্ছা আমার ইফাজ কি আমাকে কখনো ভুলে যাবে।
-আজব এসব কেমন কথা হে ঘুমাও।
অনিতা বেগম আর কোনো কথা না বলে পাশে টেবিলে এলবামটা রেখে শুয়ে পড়লো।
তুষার আর রুপম ফোন নিয়ে বসে আছে।
-ভাই আর কতো কল দিবো ইফাজ তো কল ধরে না।
প্রথমে রুমে ডুকতে চাইনি এখন তো দেখছি কালকে সকালে বের করা যাবে না…….
চলবে,
[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, গঠনমূলক কমেন্ট করুন]