প্রণয়ে তুমি পর্ব -০৯

#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_৯
#writer_nahida_islam

তুষার আর রুপম ফোন নিয়ে বসে আছে।

-ভাই আর কতো কল দিবো ইফাজ তো কল ধরে না।

প্রথমে রুমে ডুকতে চাইনি এখন তো দেখছি কালকে সকালে বের করা যাবে না। অতসীর ফোন কল দাও তো দেখি।
তুষার অতসীর ফোনে ও কল দিলো কিন্তু কেউ ই ধরলো না। তুষার রুমপ দুজনে ই ক্লান্ত হয়ে আর কল দিলো না।

পর্দার ফাঁকা অংশ দিয়ে একগুচ্ছ আলো এসে অতসীর মুখে পড়তে ই চোখগুলো খুললো। সূর্যের আলোর কারণে সাথে সাথে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। কিন্তু নিজের উপর ভারি কিছু অনুভব হতে ই চোখ খুলে তাকাতে ই দেখলো ইফাজ অতসীর উপর পা দিয়ে শুয়ে আছে। এটা দেখে অতসী বেশ রেগে যায়। পা সরানোর চেষ্টা করলে ও পেড়ে উঠেনি। অতসী ইফাজের হাতে জোরে চিমটি কাটতে ই ইফাজ উঠে বসে।

–ব্যথা লাগলো,

-আসো তোমাকে দিয়ে বুঝায় কেমন লেগেছে।

-তো হাতির মতো পা গুলো তো আমার উপর না দিলে ও পারতেন।

-হাতির মতো পা মানে?

-এক পাল্লায় হাতি আরেক পাল্লায় আপনার এক পা দিলে আপনার পা আর হাতি সমান সমান।

-এই অদ্ভুত কথা কোথায় পাও তুমি হে। তোমাকে কালকে নিষেধ করলাম না যে আমার সাথে ঘুমাবে না। আমি এমন পা দিয়ে ই ঘুমাই।

-ওহ্ তাই বুঝি তা কার কার উপর পা দিয়ে আপনি ঘুমাতেন।

ইফাজ উঠে বালিশটা অতসীর মুখে ছুড়ে মেরে বললো,

-কোলবালিশের।

অতসী কিছু বলার আগে ই ইফাজ ওয়াশরুমের ডুকে পড়লো।

অতসী ফোন নিতে ই দেখলো তেরো টা মিসকল। সময় দেখে তো অতসী দাড়িয়ে পড়লো অলরেডি বারোটা বেজে গেছে। অতসী দ্রুত তুষার কে কল দেয়। কল দেওয়ার সাথে সাথে তুষার রিসিভ করে,

-হেই ভাবি আমাদেরকে ভুলে গেছেন নাকি?

-সরি ভাই কল দিয়েছেন দেখিনি।

-এখন তো আর আমাদের চোখে পড়বে না।

-আসলে ফোন সাইলেন্ট ছিলো তাই দেখিনি। কেনো এতো বার কল দিয়েছে কোনো প্রবলেম হয়েছে।

-নাহ্ রুপম ভাই নাকি ইফাজের সাথে কথা বলবে তাই কল দিয়েছিলাম। তা কোথায় ইফাজ সাহেব।

-ওয়াশরুমে গিয়েছে।

-আসলে বলবেন কল দিতে, রাখলাম।

অতসী ফোন রেখে দরজা ধাক্কা দিতে ই দরজা খুলে গেলো। অতসীর নিজের রুমে চলে গেলো।

ইফাজ ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে ই অন্তুকে কল দেয়,

-আজকে বাসায় আসবি নাকি বাংলো বাড়িতে ই থেকে যাবি।

-না আপু একটু পর ই চলে আসতেছি।

-চলে আসলে দ্রুত আসিস। আম্মু তোর জন্য টেনশন করতেছে।

ইফাজ বের হয়ে নাস্তা নিয়ে এসে অতসীকে ডাকে। দুজনে খেয়ে ই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

ইফাজের মা বরণ ডালা নিয়ে দাড়িয়ে আছে, অতসী দরজার সামনে আসতে ই অতসীকে বরণ করে বাসায় ডুকালো। অতসীকে সোফায় বসতে দিয়ে অনিতা বেগম রুমে চলে যায়। অন্তু রুপম সাথে ই বসে ছিলো,

-আসতে কোনো অসুবিধা হয়েছে অতুসী।

-না আপু,

-ইফাজ তোমার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করেছে?

-না, আপু আমার বাবা কোথায়।

-উপরের ডান সাইডের রুমে আছে, আংকেল। আমি সব ঔষুধ ঠিক মতো খাইয়ে দিয়েছি।

অনিতা বেগম শাড়ি আর জুয়েলারি এনে অতসীকে দিয়ে বললো,

-নেও মা এগুলো পড়ে এসে, বাসায় আমার আত্মীয়রা তোমাকে দেখতে আসবে এমন থ্রী পিস পড়ে থাকাটা ভালো দেখাচ্ছে না।

অন্তু অতসীকে নিয়ে ইফাজের রুমে চলে গেলো। অতসী চারদিকে তাকিয়ে ইফাজ রুমটা দেখছে। চারপাশে ইফাজের নানা ছবি। হঠাৎ একটা ডায়েরি দিকে চোখ যেতে ই অতসী গিয়ে ডায়েরিটা হাতে নেয়। কয়েকটা পৃষ্ঠা খুলতে ই দেখলো লিখা,

“আজ তোমাকে প্রথম দেখলাম, কি মায় আছে বলো তো যে বারবার তুমি শুধু আমাকে আকর্ষণ কর”

লাস্ট একটা লেটার লিখা P। অতসী অপর পৃষ্ঠাতে যাওয়ার আগে ই কেউ ডায়েরিটা টান দিয়ে নিয়ে যায়। তাকাতে ই দেখে ইফাজ।

-আমার রুমে এসে ই আমার জিনিস পত্রে হাত দেওয়া শুরু করেছো। তোমাদের মতো মেয়েরা এমন ই, প্রথমে কৌশলে বাসায় আসবে তারপর একে একে সব জিনিস হাতিয়ে নিবে।

ইফাজ এতো জোরে চিৎকার করে কথাগুলো বললো যে অতসীর চোখ দিয়ে না চাইতে ও জল পড়ছে। বাছানার উপর থাকা অতসীর শাড়ি আর জুয়েলারি সব ফেলে দেয় ইফাজ।

-আর কখনো আমার বেডে এসব জিনিস রাখবে না। আর আমার কোনো জিনিসে হাত দিলে হাত ভেঙ্গে দিবো।

ইফাজ অতসীকে কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
অতসী চোখের পানি মুছে, ফ্লোরে পড়ে থাকা শাড়ি জুয়েলারি উঠিয়ে নিলো। অতসী ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শাড়িটা পড়ে নিলো। শাড়ি পড়ে বিছায় বসে বসে ফোনে গেমস খেলতে থাকে।

-এই শোনো,

ফোনের স্কিন থেকে মুখ উপরে তুলতে ই দেখলো ইফাজ রাগি একটা লুক দিয়ে তাকিয়ে আছে,

-জ্বি বলুন, বিয়ে করে নিয়েছ এখন আমি না চাইলে ও আপনার কথা শুনতে বাধ্য।

-বিয়ে করতে আমি তোমার পায়ে ধরেনি,

-আপনাকে দেখে আমি বিয়ে ও করিনি।

-আমাকে দেখে যখন বিয়ে করোনি, তাহলে কখনো স্ত্রী অধিকার ও চাবে না।

অতসী মেকি হেসে বললো,

-আপনার আমাকে কী মনে হয়, আপনার চরিত্র এমন লটরপটর দেখে ও আপনাকে বিয়ে করতাম আমি কখনো।শুধু স্যারের দিকে তাকিয়ে বিয়ে করেছি।

–লটরপটর মানে কী বুঝাতে চাও।

-আপনাকে বুঝানের কোনো ইচ্ছে আমার নাই।

অতসী উঠে চলে যেতে চাইলে ই ইফাজ অতসীর হাত ধরে ফেলে,

-আমাদের দুজনের মাঝে কী কথা হয় এটা যেনো বাহিরের মানুষ না জানে।

-আমি যেমন স্ত্রীর অধিকার চাইতে আসবো না আপনি ও হুটহাট আমার হাত ধরতে আসবেন না।

কথাটা বলার সাথে সাথে ইফাজ হাত ছেড়ে দেয়।

-সরি

অতসী আর পিছনে না তাকিয়ে সোজা নিচে চলে যায়। অতসী নিচে যেতে ই দেখলো অনেকগুলো মহিলা বসে আছে।

অনিতা বেগম অতসীকে সাথে বসিয়ে বললো,

-এ হলো আমার একমাত্র মিষ্টি বউমা। অতসী আর এরা হচ্ছে আমার বান্ধবী। তোমাকে দেখতে এসেছে, আসলে বিয়ের আগে গল্প করতাম তো তোমাকে নিয়ে তাই আর লেইট করেনি, তুমি বাসায় এসেছো শুনে ই চলে এসেছে।

-কী বউমা বাসার কাজটাজ কিছু পারো, নাকি একটু চা করে আনো তো।

অতসী উঠে কিচেনে গিয়ে সবার জন্য চা করে আনে। একজন চায়ে খেয়ে বললো,

-বাহ্ ভালো চা বানাও তো, তা তোমার বাবার বাড়ি থেকে কি কি দিলো। কীরে অনিতা কি কি দিয়েছে ওর বাবার বাড়ি থেকে আমাদের দেখাবি না।

অনিতা বেগম, অতসীর পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বললো,

-তাদের সব ই দিয়ে দিয়েছে।

-সব কি কি দেখা।

-ভালো বউ পেয়েছি এটা ই অনেক। যৌতুক দিয়ে কি করবো। আর একটা বাবা যখন তার মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি দিয়ে দেয়। তখন তার কলিজাটা ই দিয়ে দেয়। আর এসব ঠুকনো আসবা পত্র দিয়ে কি করবো। আমি তো মা আমার মেয়েকে ও তো বিয়ে দিয়েছি বুঝেছি আমার কলিজাটা অন্যকে দিয়ে দিয়েছি। তাই আমি আমার এই বউমা নিয়ে ই সন্তুষ্ট। লাগবে না আমার কোনো যৌতুক।

মহিলাগুলো আর কোনো কথা বললো না। অতসী৷ শুধু চেয়ে চেয়ে অনিতা বেগমকে দেখছিলো। এমন শ্বশুর পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।

________________

ইফাজ বিছানায় শুয়ে আছে অতসী রুমে ডুকতে ই বললো,

-ভুলে ও বিছানায় এসে বসবে ও না, নিচে শুয়ে পড়ো। বিয়েটা করেছি কেনো জানো আমি কি তা তোমাকে বুঝানোর জন্য। কতো থাপ্পাড় যে তোমাকে খেতে হবে শুধু দেখবা। নয়তো আমি, এই ইফাজ তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করতো নাকি…..

চলবে,

[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here