#প্রণয়
#পর্বঃ৩৩
#তানিশা সুলতান
সূচকের প্লেটে এখনো অর্ধেক খাবার পড়ে আছে। সূচক অন্য ফাঁকা প্লেটে হাত ধুয়ে ফেলে।
“তানহা বাকিটা তুই খেয়ে নে।
ঢেকুর তুলে বলে সূচক। তানহা কটমট চাহনিতে তাকায়।
” এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো? বরের এঁটো খেলে ভালোবাসা বাড়ে জানিস না?
তানহার আঁচল টেনে মুখ মুছতে মুছতে বলে সূচক। ইমন আর তোহা মিটমিট করে হাসছে।
তানহা গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।
“গাল ফুলিয়ে না থেকে জলদি খাও। ইমন তোমাদের পৌঁছে দিয়ে কোচিং এ যাবে।
কড়া গলায় বলে সূচক। তানহা ফুসফুস করতে করতে প্লেট হাতে নেয়। ভালোবাসা না বাড়লে কিছুতেই এঁটো খেতো না। নেহাত ভালোবাসা বাড়ে। মনে মনে ভেবে নেয় এখন থেকে প্রতিদিনই এঁটো খাবে। যাতে ভালোবাসা বাড়তে বাড়তে একদম আকাশ ছুঁয়ে যায়। তখন আবার কমতে থাকলেও সমস্যা হবে না।
” গুড গার্ল
সূচক মুচকও হেসে উঠে দাঁড়ায়।
“তানহা বাসায় গিয়ে তোর বই খাতা জামা কাপড় যা যা দরকার। সব গুছিয়ে আমার রুমে চলে যাবি। বুঝলি?
কেউ কিছু বললে বলবি বাবুর হুকুম।
তানহা সবে মুখে খাবার পুরতে যাচ্ছিলো সূচকের কথায় মুখের সামনে হাত ধরে হা করেই তাকায় সূচকের দিকে।
সূচক খাটের ওপর থেকে আইসিটি বইা নিয়ে তাতে পিষ্ঠা উল্টাতে থাকে।
” না মানে বন্ধু বলছিলাম কি
এতো তাড়াতাড়ি ঝামেলা পাকানোর কি খুব দরকা
পুরোটা বলার আগেই সূচক তাকায় ইমনের দিকে। ইমন কেবলা মার্কা একটা হাসি দেয়।
“খুব দরকার। হেহে এতো তাড়াতাড়িই ঝামেলা পাকাতে হবে। শীত চলে আসলো। বউ ছাড়া থাকা যাবে না কি? ভাই আমি ভাবছি তুই এতোদিন ছিলি কি করে? আমি তো শালা একটা ঘন্টাও থাকতে পারবো না। টাকা পয়সা দিয়ে বিয়ে করেছিস কি দুরে দুরে থাকার জন্য?
হাসার চেষ্টা করে বলে ইমন। তোহা চোখ মুখ খিঁচে তাকায় ইমনের দিকে। বড় ভাইয়ের সামনে এরকম কথা শুনতে গায়ে লাগছে ওর। তানহা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। খাওয়া আর আজ হবে না ওর।
” মুখে কসটিউব লাগিয়ে দেবো আমি তোর। ইডিয়েট
সূচক দাঁত কটমট করে বলে৷
“যাচ্ছি আমি। এখনি মানে এখনি ওদের পৌঁছে দিবি বাসায়।
কড়া গলায় বলে সূচক।
“সন্ধায় তো সবাই আসবে তোদের বাসার। তখন না হয় যাবে?
ইমন আমতা আমতা করে বলে।
“একদমই না। এখনই যাবে মানে এখনই যাবে।
” আসছি
বলেই হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় সূচক। তানহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। তোহা ভাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ছোটমট একটা ঝড় হবে কি আজ?
“বুঝলে তানহা বরকে নজরে নজরে রাখবা বুঝলা?
কোচিং এ কতো কতো মেয়ে। মেয়েটা চোখ দিয়ে গিলে খায় তোমার বরকে। বলা তো যায় না কখন আবার কে কালো জাদু টাদু করে তোমার সুইট বরটাকে নিয়ে গেলো। তখন কি হবে বলো তোমার? জামাই থাকতে বিধবা
আল্লাহ
এই কষ্ট সয্য করবে কিভাবে তুমি? ভেবে ভেবেই তো আমি চাঁন্দে চলে যাচ্ছি।
ইমন মুখটাকে একদম সিরিয়াস করে বলে। তানহার মনের মধ্যে ভয় ঢুকে যায়। মুখে নেওয়া খাবার চিবতে ভুলে গেছে। বুকটা ফেটে যাচ্ছে। চোখে পানি চিকচিক করছে।
” থামুন তো আপনি। খালি আজাইরা কথা। তানহা এই পাগলের কথায় কান দিস না।
তোহা রেগে বলে।
“তানহা আমার কথায় লজিক আছে কি না?
ইমন গাল ফুলিয়ে তানহার দিকে তাকিয়ে বলে। তানহা একটুখানি ভাবে। সত্যিই তো সূচক দেখতে মাশাআল্লাহ। মেয়েটা তো তাকাবেই তাই না? আর ছেলে মানুষের মন। যদি বদলে যায়?
” হুম আছে।
মিনমিন করে বলে তানহা।
“কারেক্ট
আমার কথায় লজিক আছে। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো পাগল কে? যে লজিক ছাড়া কথা বলবো অবিয়েসলি সে পাগল।
দাঁত কেলিয়ে বলে ইমন। তোহা শুধু দাঁত কটমট করে। কিন্তু কিছু বলে না। কথা বললেই কথা বারবে।
তানহার চোখে পানি টলমল করছে। কোনোরকমে মুখে থাকা খাবারটা গিলে ফেলে।
” ভাইয়া এখন আমার কি করতে হবে? কি করলে আমি ওনাকে আটকে রাখতে পারবো?
তানহা নাক টেনে বলে।
“শুনবা?
” হুমম বলুন আপনি।
“তাহলে পাগল ছাগল এখান থেকে সরাও।
ভাব নিয়ে বলে ইমন।
” তানহা এই বদ লোকটার কথা শুনিস না।
তোহা কড়া গলায় বলে।
“তুই যা এখান থেকে।
তানহা ঝাঁড়ি দিয়ে বলে।
‘বিপদে পড়বি তুই। আমি ভাইয়াকে বলে দিবো।
তোহা মুখ বাঁকাতে বাঁকাতে চলে যায়। ইমন এবার আরাম করে বলে। তানহাও একটু এগিয়ে বসে ইমনের দিকে।
তোমাকে যা করতে হবে ________________
সবটা শোনার পরে তানহা চোখের পানি মুছে এক গাল হাসে। ইমন শয়তানীর হাসি দেয়।
” এবার বন্ধু আমার বুঝবে ঠেলা
🥀🥀
খাওয়া দাওয়া শেষে ইমন ওদের বাড়িতে দিয়ে আসে। বাড়ি গিয়ে আরেক দরফা চমকে ওঠে তানহা। কারণ বৃষ্টি এসেছে। আবার ফুপির দুই মেয়ে ইরা আর ইভাও এসেছে। বরাবরই বাড়িতে মেহমান আসলে তানহা তোহার বিরক্ত লাগে। কারণ হচ্ছে ওদের দুজনের মাঝে ঘুমতে যাবে তারা।
বৃষ্টি তানহাকে দেখে মুখ বাঁকায়। আর তোহাকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি হেসে খবর বার্তা জিজ্ঞেস করে।
মা বড়মা রান্না করছে। যদিও দাওয়াত আছে। কিন্তু মেহমান নিয়ে তো আর দাওয়াত খেতে যাওয়া যাবে না। তাই এদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা।
ইরা আর ইভা দাদিমার সাথে কথা বলছে। তানহা তোহাকে দেখে ওদের সাথেও কথা বলে।
তানহা সোজা রুমে চলে যায়। তোহা এখনো বৃষ্টির সাথে গল্পে ব্যস্ত। তানহার পেছন পেছন ইভা যায়।
“তানহা
তানহা সোজা খাটে বসে পড়ে ফ্যান ফুল পাওয়ারে ছেড়ে।
” হ্যাঁ বলো।
তানহা এক পলক ইভার দিকে তাকিয়ে বলে।
ইভা খুশিমতো গদগদ হয়ে তানহার পাশে গিয়ে বসে।
“একটা হেল্প করবা?
ইভা একদম তানহার সাথে চিপকে বসে বলে।
” কি হেল্প?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে তানহা।
“আমি না ভেবেছি ওনাকে প্রপোজ করবো। যদি তুমি একটু সাথে থাকতে তাহলে সাহস পেতাম।
লজ্জায় লাল নীল হয়ে বলে ইভা। তানহার কুঁচকানো ভ্রু আরও কুঁচকে যায়।
” এই উনি টা কে?
“সূচক ভাই
লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলে ইভা। তানহা বড়বড় চোখ করে তাকায়। ওর বরকে প্রপোজ করবে আর এটা ওর কাছেই বলছে?
নেহাত তানহা ভালো মানুষ। নাহলে এতখনে নাক ফাটিয়ে দিতো।
” ওই করবা না হেল্প?
তানহার হাত ধরল ইনোসেন্ট ফেস করে বলে ইভা। তানহা মনে মনে কিছু ভেবে একটু হাসে।
“ঠিক আছে করবো। কখন? কোথায়? প্রপোজ করবা?
ইভার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে।
” রাতে ছাঁদে।
“আচ্ছা আমি পাশে আছি।
🥀🥀
বড়রা দাওয়াত খেতে চলে গেছে বিকেলেই। এখন রাত আটটা বাজে। তানহা বসার ঘরে বসে টিভি দেখছে। আর ইরা ইভা বৃষ্টি তোহা ওরা ফোন দেখছে। আজকে বিকেলে বাড়িতে ওয়াইফাই দিয়ে গেছে দুটো লোক।তারা বলেছে সূচক দিতে বলেছে। বাড়ির সামনে ইট সিমেন্ট রাখা হয়েছে। এক তালা বাড়িটা দোতালা করা হবে।
দরজায় কড়া নরে। তানহার কানে তা ঢোকে নি। ইভা শুনেছে। সে দ্রুত উঠে দরজা খুলে দেয়। সূচক হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইভা সূচককে দেখে মুচকি হাসে।
” কখন এসেছিস?
সূচক গম্ভীর গলায় বলে।
“দুপুরে
মিষ্টি করে হেসে বলে সূচক। তানহার এবার খেয়াল করে।
সূচক ইভাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। সোফায় বৃষ্টি আর ইরাকে দেখে এগিয়ে যায় ওদের দিকে। তানহা চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে আছে।
” বৃষ্টি তোর সমস্যা কি? আমি তোর বিয়াই লাগি? বড় ভাই হই আমি তোর। ভুলে যাস না কি? আজেবাজে মেসেজ দেওয়ার সাহস পাস কই থেকে? থাপ্পড় গাল লাল করে দেবো আমি তোর। ইডিয়েট
ধমক দিয়ে বলে সূচক। কেঁপে ওঠে ওখানে উপস্থিত সবাই। বৃষ্টি কাচুমাচু হয়ে যায়।
“তোহা তুই এখানে কেনো? পড়তে বস যা। আমি যেনো আর কখনোই তোর হাতে ফোন না দেখি। ভাঙতে কিন্তু সময় লাগবে না আমার।
তোহার দিকে তাকিয়ে আরও একটা ধমক দিয়ে বলে সূচক। তোহা ফোনটা সোফায় রেখেই এক দৌড়ে রুমে চলে যায়।
” ইরা বোনু যা খাবার গরম কর। খাবো আমি।
ইরা একটু হেসে কিচেনে চলে যায়।
“তানহা আমার রুমে আয়।
তানহার দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে বলে সূচক। তানহা আবারও ভয় পেয়ে কেঁপে ওঠে।
” রররররুমে কেনো? এএএএখানে ববববলুন না।
তানহা কাঁপতে কাঁপতে বলে।
“তোকে আসতে বললাম না? জলদি আয়।
এবার পুরো বিল্ডিং কাঁপিয়ে ধমক দেয় সূচক। কেঁপে ওঠে তানহা সহ বৃষ্টি আর ইভাও।
তানহা কোনোদিক না তাকিয়ে এক দৌড়ে সূচকের রুমে ঢুকে যায়। সূচক শ্বাস টেনে রুমে চলে যায়।
বৃষ্টির চোখের কোনে পানি জমে গেছে। নাহয় কয়েকটা রোমান্টিক মেসেজই দিয়েছে। তার জন্য সবার সামনে এভাবে ধমক দিতে হবে? আলাদা করেও তো বলতে পারতো।
” আপু তুমি ওনাকে মেসেজ কেনো দাও?
ইভা নাক ফুলিয়ে কোমরে হাত দিয়ে বৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে বলে। বৃষ্টি হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়।
“তোমাকে বলতে হবে?
🥀🥀🥀
তানহা সূচকের রুমে ঢুকে একদম খাটের নিচে চলে গেছে। হাতের কাছে পড়লে থাপ্পড়ও মারতে পারে। একটা থাপ্পড় দিলে তানহাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না সুন্দর দাঁত গুলোও আর থাকবে না মাড়িতে। তার থেকে ভালো লুকিয়ে থাকাই।
খুঁজেও পাবে না আর ধমকেও দেবে না। কি দারুণ বুদ্ধি তানহার।
সূচক রুমে ঢুকে দরজা আটকে দেয়। সূচকের রুমের দরজার ছিটকিনি একদম উপরে। তানহা নাগাল পায় না।
হাতের শপিং ব্যাগ খাটের ওপর রেখে কাবাড থেকে টিশার্ট আর টাওজার নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। তানহা চোখ মুখ খিঁচে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। মশা কামড়াচ্ছে। খাটের নিচে এতো মশা থাকে? যেনো এখানেই মশাদের বাড়ি।
তানহার মাগনা রক্ত পেয়ে তারা ইচ্ছে মতো খেয়ে নিচ্ছে। বেচারা তানহা ধরা খাওয়ার ভয়ে চুপচাপ মশার কামড় খাচ্ছে। এছাড়া আর উপায় আছে? নেই তো।
খানিকটা সময় নিয়ে সূচক ফ্রেশ হয়। ভেজা চুল গুলো গামছা দিয়ে মুছতে মুছতে বের হয় ওয়াশরুম থেকে।
” আর কতো মশার কামড় খাবি? এবার বেরিয়ে আয়।
দেরি করলে মশার মতো আমিও কামড়াবো তোকে।
চলবে