#প্রণয়
#পর্বঃ৩৭
#তানিশা সুলতানা
তানহা খুব মজায়ই আছে। সৈকতের সাথে খুব ভালো একটা সম্পর্ক ওর। ভাই হিসেবে একদম পারফেক্ট। মা*রা*মা*রি দৌড়াদৌড়ি লেগেই থাকে। সাথে খালামনিও এসেছে। এখন তো খুশির সীমা নেই। বাড়িটা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে।
বিরিয়ানি রান্না করতে লেগে গেছে তমা বেগম আর সুমা বেগম। সৈকত, তানহা তাজ আর ওদের মামা তুহিন লুডু খেলছে। আর আলুর চপ খাচ্ছে।
তানহা যেহেতু জামাকাপড় আনে নি তাই তুহিন গিয়ে ওর জন্য জামাকাপড় কিনে এনেছে। ওদের সাথে উল্লাসে মেতে সূচকের কথা ভুলেই গেছে তানহা। তানহার নানা ওদের পাশে বসে খেলা দেখছে। আর নানু মেয়েদের সাথে রান্না করছে।
তুহিন সৈকতের থেকে তিন বছরের বড়। তার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু পাকাপোক্ত ভাবে ঠিক হয়েও হচ্ছে না। সে এখন কলেজের টিচার। সুমার বিয়ের বছরেই জন্ম হয়েছিলো তুহিন।
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে সূচক। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। তানহা নানা বাড়ি যাওয়ার পরপরই তমা বেগম কল করে বলে দিয়েছে যে তানহা ওনার কাছে গেছে। যদিও সূচক জানতো এটাই হবে।
কিন্তু কথা হচ্ছে এখন তানহাকে আনবে কি করে? আর ওকে ছাড়া থাকবেই বা কি করে?
বাড়িতেই ফিরে নি আজ। দুপুরের খাবারটাও খাওয়া হয় নি।কোচিং এ বসে ছিলো সারাদিন।
এখন তিনটে বাজে। চারটায় এক ব্যাচ স্টুডেন্ট আছে৷ তাদের পড়ানো শেষ করে চলে যাবে তানহার কাছে। একটা রাতও থাকতে পারবে না ওকে ছাড়া। কোনো ভাবেই না।
ইমন খাবার নিয়ে আসে। সূচককে বসে থাকতে দেখে খাবার প্লেটে সার্ভ করে ভাত মাখিয়ে সূচকের মুখের সামনে ধরে। সূচক ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক তাকায় ইমনের দিকে। ইমন চোখের ইশারায় খেয়ে নিতে বলে। সূচকও কোনো কথা না বলে খেয়ে নেয়।
🥀
সন্ধার দিকে মামার জন্য মেয়ে দেখতে বের হয় তানহা সৈকত তুহিন আর সৈকতের বাবা। মেয়েকে আগেই দেখেছে সাহেলা বেগম আর ওনার স্বামী। ওনাদের ভারি পছন্দ হয়েছে। তাই এখন ছেলেকে পাঠাচ্ছে। এখনো ছেলে দেখেনি মেয়েকে।
মামা তানহাকে অনেক গুলো জামা এনে দিয়েছে। সেখান থেকে কালো রংয়ের গাউনটা পড়ে নেয় তানহা। সৈকতও কালো শার্ট পড়েছে।
“তুই আমার সাথে মেচিং করে পড়েছিস কেনো?
সৈকতের চোখের চশমা খুলে নিয়ে বলে তানহা।
“মেচিং কারে কয় আবার? এইডা কি ব্রিটিশদের ভাষা?
সৈকত তানহার থেকে নিজের চশমা নিয়ে চোখে পড়তে পড়তে বলে।
” শয়*তানের বা*চ্চা
তানহা সৈকতের চুল গুলো খামচে ধরে বলে।
“তোরা ঝগড়া না থামালে একটাকেও নিবো না আমি।
তুহিন চোখ পাকিয়ে বলে। ব্যাস দুজনেরই ঝগড়া থেমে যায়।
খুব বেশি দুরে না মেয়েদের বাড়ি। পায়ে হেঁটে গেলে দশ মিনিট লাগবে। ওরা সবাই পায়ে হেঁটেই যায়। একতালা একটা বাড়ি। খুবই ছোট বাড়িটা। কিন্তু খুব সুন্দর। বাড়ির চারপাশে নানারকমের ফুল গাছ দিয়ে ভরা।
সবাই ভেতরে যায়। সোফায় বসে। তানহা মামার পাশে বসে। সৈকত মামার আরেক পাশে। আর সৈকতের বাবা অন্য সোফায়।
সামনে টি-টেবিলের ওপরে শরবত রাখে একটা মহিলা। মনে হচ্ছে মেয়ের কাকি বা মামি হবে।
সৈকতের বাবা মেয়র বাবার সাথে অনেক কথা বলে। আর তানহা আর সৈকত তুহিনকে জ্বালিয়ে মে*রে*ছে।
অবশেষে মেয়েকে নিয়ে আসা হয়। মেয়ে দেখে তানহার মুখটা হা হয়ে যায়। এইতো সেই মেয়ে যার সাথে সৈকতকে দুই বার দেখেছিলো। এই মেয়ে এখানে আসলো কি করে?
তানহা দাঁড়িয়ে যায়। তুহিন তানহার হাত ধরে টান দিয়ে বসিয়ে দেয়। জোরে জোরে দুবার শ্বাস টেনে তানহা নিজেকে শান্ত করে। এভাবে সিনক্রিয়েট করার কোনো মানেই হয় না।
আলাদা কথা বলতে দেওয়া হয় ছেলে মেয়েকে।
তানহা সবার আগে উঠে মেয়েটার হাত ধরে আগে আগে চলে যায়। সৈকত আর তুহিন পিছনে পিছনে যায়।
” মামি তোমার নাম কি?
ছাঁদের শেষ সিঁড়িতে পা দিয়ে বলে তানহা।
“মারিয়া
মেয়েটা নিচু গলায় মাথা নিচু করে আরও একটু ঘোমটা টেনে বলে।
” তোমাকে আমি কয়েকবার সূচক ভাইয়ার সাথে দেখছি। কে হয় উনি তোমার?
তানহার কথায় ফট করে তানহার দিকে তাকায় মেয়েটা।
“ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
মুচকি হেসে বলে মারিয়া। তানহাও একটু হাসে।
” তোমার উনিকে দেখছি না যে? একা ছাড়লো তোমায়?
মারিয়া বলে।
“ছাড়ে নি। রেগে চলে এসেছি।
তানহা মন খারাপ করে বলে।
এরই মধ্যে সৈকত আর তুহিন চলে আসে। সৈকত তানহার হাত ধরে অন্য দিকে নিয়ে যায়। আর ওদের নিজেদের মধ্যে কথা বলার সুযোগ করে দেয়।
🥀🥀
অবশেষে মেয়ে দেখা শেষ করে একদম ডিনার সেরে বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে ওরা। দারুণ খাইয়েছে ওনারা। তানহার তো গলা ওবদি উঠে গেছে একদম। দুপুরে বিরিয়ানি আর রাতে গরুর মাংস পোলাও মুরগির মাংস দুই মিষ্টি ডিম রোস্ট আরও অনেক কিছুই ছিলো।
এতো খেয়ে এখন হাঁটতেই কষ্ট হচ্ছে তানহার। তুহিনের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটছে।
বাড়ি ফিরেই কোনো রকমে শরীরটাকে টেনে টুনে নিজের জন্য বরাদ্দ করা রুমটাতে চলে যায় তানহা। কেউ আর সুইচ অন করে নাই। তাই রুমটা অন্ধকার। তানহাও আর আলো জ্বালায় না। বিছানায় ধাপ করে শুয়ে পড়ে।
” আহহহহহ” করে একটা শব্দ হয়। আর তানহার পিঠের নিচের শক্ত কিছুর অস্তিত্ব টের পেয়ে এক লাফে আবার উঠে বসে তানহা। সমস্ত ক্লান্ত চলে যায়।
“ইডিয়েট
চোখে দেখিস না?
সূচক দাঁতে দাঁত চেপে উঠে বসে বলে। তানহা বড়বড় চোখ করে তাকায়। এই লোকটা এখানে আসলো কিভাবে? আর আসলোই বা কেনো?
সূচক চরম বিরক্তি নিয়ে সুইট টিপে বাল্ব অন করে। তানহা বড়বড় চোখ করে তাকায় সূচকের দিকে। সূচক রেগে তাকিয়ে আছে।
” আআআপনি এখানে কেনো এসেছেন?
তানহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
সাথে সাথে তানহার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড়ে। থাপ্পড়টা বেশ জোরেই পড়ে। তানহার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে যেনো। দুই পা পিছিয়ে যায়। গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে তাকায় সূচকের দিকে। সূচকের চোখ মুখ এখনো শক্ত।
“সাহস কি করে হয়? আমাকে না বলে এখানে আসার?
তানহার গাল দুটো চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে সূচক। ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে তানহা। দুই হাত দিয়ে সূচকের হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে তানহার।
হাত দুটো যেনো চোয়াল ভেদ করে মুখে ঢুকে যাচ্ছে।
” খুব শখ না অন্যদের সাথে ঢলাঢলি করার? মেরে পুঁতে রেখে দেবো তোকে আমি। স্টুপিট
চোয়াল শক্ত করে বলে সূচক। রীতিমতো রাগে কাঁপছে সূচক।
তানহার চোখের পানি গড়িয়ে সূচকের হাতে পড়তেই সূচক ছেড়ে দেয় তানহা। খানিকটা ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দেয়। তানহা তাল সামলাতে না পেরে একদম খাটের সাইডে পড়ে যায়। খাটের কোনা লেগে যায় তানহার মাথায়। আবারও ব্যাথায় কুঁকিয়ে ওঠে তানহা। খুব শব্দ করে “আহহহ” বলে ওঠে।
সূচক এখনো হাতের মুঠ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। তানহা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে৷ কপালে হাত দিতেই তরল পদার্থের অস্তিত্ব টের পায়।
হাঁটু মুরে বসে পড়ে তানহা।
“কেনো এসেছিস?
সূচক ধাপ করে খাটে বসে প্রশ্ন করে।
তানহা৷ উওর দেয় না। মাথা তুলে তাকায়ও না।
” জিজ্ঞেস করছি আমি৷ কোনো এসেছিস?
চোয়াল শক্ত করে ধমক দিয়ে বলে সূচক। তানহা কেঁপে ওঠে। আরও একটু কাচুমাচু হয়ে বসে। ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে গেছে।
“আপনার কি? নানা বাড়িতেও আসতে পারবো না?
কাঁদতে কাঁদতে রিনরিনিয়ে বলে তানহা।
সূচক দাঁত কটমট করে উঠে দাঁড়ায়। ঠাস করে দরজা আটকে দেয়।
চলবে