#প্রণয়
#পর্বঃ৩৯
#তানিশা সুলতানা
সূচককের দানবের মতো শরীরের ভর তানহার মতো চুনোপুঁটি সয্য করে গেছে। তার ফল। এখন অসুস্থ হয়ে গেছে তানহার। শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এসে গেছে।
সূচক নিজের কপালে নিজেই দুই চারটা চর মারে। আরও একটু সময় নেওয়া প্রয়োজন ছিলো সূচকের। এখন করবে কি?
ঘুম নেই সূচকের চোখে। সারা রাত জলে পট্টি দিয়ে গেছেন তানহার মাথায়। তবুও শরীরের তাপমাত্রা কমাতে পারে নি।
ফজরের আজান দিয়ে দিয়েছে। তানহা বেঘোরে ঘুমচ্ছে। বা জ্বরের ঘোরে হুশ হারিয়ে ফেলেছে। মোটা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিয়েছে সূচক। তবুও মেয়েটার ঠান্ডা কমছে না। একটু পর পরই কেঁপে কেঁপে উঠছে। সূচকের নামাজ পড়তে হবে। তানহাকেও গোসল করানো প্রয়োজন। এই জ্বরের মধ্যেও গোসল করানো কি ঠিক হবে?
তাছাড়াও তো উপায় নেই।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শার্ট পড়ে নেয় সূচক। তানহা মাথা ঢেকে ঘুমচ্ছে। সূচক মাথার ওপর থেকে কম্বল সরিয়ে তানহার কপালে হাত রাখে। নাহহ একটুও কমে নি শরীরের তাপ।
“ওই ফকিন্নি ওঠ। গোসল করতে হবে।
তানহার মুখে ছোট ছোট করে থাপ্পড় দিয়ে বলে সূচক।
“ঘুমতে দিন না প্লিজ।
তানহা নরে চরে ঘুমের ঘোরেই বলে। সূচক মুচকি হাসে। একে সারা রাত ডাকলেও উঠবে না জানা আছে সূচকের।
গায়ের ওপর থেকে কম্বল সরিয়ে পাজা করে কোলে তুলে নেয় সূচক। তানহা চোখ মুখ কুঁচকে পিটপিট করে তাকায় সূচকের দিকে। এই মুহুর্তে ভীষণ বিরক্ত এই লোকটার প্রতি। এতো জ্বালাচ্ছে কেনো? সমস্যা কি এনার?
ওয়াশরুমে নিয়ে নামিয়ে দেয় সূচক। তানহা দেয়াল ধরে দাঁড়ায়। মাথা ঝিমঝিম করছে। সারা শরীর ব্যাথা হয়ে আছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটাও পাচ্ছে না।জ্বরের মধ্যে কেউ গোছল করে।
সূচক বালতি ভরে দিয়ে জামাকাপড় আনতে যায়। তানহা চোখ বন্ধ করেই দাঁড়িয়ে আছে।
“দুই মিনিটে গোসল শেষ করবি।
বলেই সূচক চলে যায়। তানহা কোনো রকমে দুই মগ পানি গায়ে ঢেলে জামাকাপড় পড়ে নেয়।
নভেম্বর মাস। ঠান্ডা পড়ে গেছে। এই ঠান্ডায় গোসল করা যায়? তাও আবার জ্বরের মধ্যে? এই লোকটা মা*রা*র প্লান করছে নিশ্চিয়।
সূচক দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। তানহা দরজায় হাত দেওয়ার সাথে সাথে কোলে তুলে নেয় সূচক। তানহা প্রথমে চমকে ওঠে। পরে মুখ বাঁ কায়।
খাটে তানহাকে বসিয়ে দিয়ে সূচক ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। তানহা আবারও কোম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। জ্বরটা মনে হচ্ছে বেরেই চলেছে।
সূচক গোসল সেরে নামাজ পড়ে নেয়। তারপর মাথা থেকে টুপি খুলে তানহার পাশে গিয়ে বসে৷ গায়ে হাত দিয়ে চমকে ওঠে। তাপমাত্রা আরও বেরে গেছে।
দ্রুত রুম থেকে বের হয় সূচক৷ কেউ এখনো ওঠে নি। এই বাড়ির কেউ নামাজ পড়ে না? না কি? সূচক বিরক্ত হয়।
কিচেনে চলে যায়। ফ্রিজ খুলে দেখে বিরিয়ানি রাখা আছে। কিছুটা বিরিয়ানি গরম করে প্লেটে নিয়ে রুমে চলে যায়। তানহাকে না ঢেকে আস্তে করে আধশোয়া করে দেয়। তারপর একটু খানি বিরিয়ানি মুখে পুরে দেয়।
ঘুমের ঘোরেই চিবতে থাকে তানহা। কিছুটা খায়িয়ে ঔষধ খায়িয়ে আবার শুয়িয়ে দেয় সূচক।
নিজেও তানহাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। পর পর কপালে কতোগুলো চুমু খায়। আস্ত একটা ভালোবাসার বস্তা এই মেয়েটা।
🥀🥀
সবার আগে ঘুম থেকে উঠে পড়ে ইমন। বাবাকে কল করে বলে দিয়েছে আটটার মধ্যে এই বাড়িতে চলে আসতে। একদম দেরি সয্য হচ্ছে না ওর।
এমনিতেই বিয়ের চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না। এ কোন জ্বালা? আচ্ছা তোহা ঘুমচ্ছে কি করে? ওর তো ঘুম হারাম হওয়ার কথা?
ওই মেয়েটা আস্ত একটা ঘুমের বস্তা। বিয়ে করবে দুজন অথচ একজনের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বিয়েটা হোক তারপর এর শোধ তুলবে ইমন।
বিছানায় গোল হয়ে বসে ভাবে ইমন। পাশে তাকিয়ে দেখে তাহের নাক ঢেকে ঘুমচ্ছে। সারা রাতই নাক ডেকেছে। মানে এই লোকটার সাথে তানহার মা ঘুমায় কি করে ভেবে পায় না ইমন?
অবশ্য এতোগুলো দিন এক সাথে আছে অব্ভাস হয়ে গেছে।
ইমন নাক ডাকলে নিশ্চয় তোহা জুতো পেটা করে রুম থেকে বের করে দেবে? আচ্ছা তোহা নাক ডাকলে ইমন কি করবে? সেটা না হয় পরেই ভাবা যাবে।
মুচকি হাসে ইমন। আগে কতোই না অন্যায় করেছে ইমন। তোহার সাথে রিলেশনশিপ এ থাকার পরেও অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করেছে। ভেবেছিলো তোহা তো আছেই। কিন্তু যখন দেখলো ইমন ছাড়াও তোহা ভালো থাকতে পারে তখনই ইমন নিজের ভুল বুঝতে পারলো।
হাই তুলতে তুলতে রুম থেকে বের হয় ইমন। মাকে দেখে সকাল বেলা পুরো বাড়ি ঝাড়ু দিয়ে। এটা না কি করতে হবে।
টিভির পেছনে ঝাঁড়ু দেখতে পায় ইমন। এক গাল হেসে ঝাঁড়ু হাতে নেয়। প্রথমে কিচেন ঝাড়ু দেয়। তারপর সবার রুমের সামনে ঝাঁড়ু দেয়। এখন বসার ঘরে ঝাঁড়ু দেবে। কেউ তো দরজা খোলে নি তাহলে সবার রুমও ঝাড়ু দিয়ে দিতো।
“এ কি কি করছো বাবা তুমি?
সাদিয়া বেগম দ্রুত ইমনের হাত থেকে ঝাঁড়ু নিয়ে বলে। উনি ফ্রেশ হয়ে কিচেনে যাচ্ছিলো রান্না বসাতে তখনই দেখতে পায় ইমন ঝাঁড়ু দিচ্ছে।
” শাশুড়ী মা আপনাদের ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছি।
এক গাল হেসে বলে ইমন। তোহাও উঠে পড়েছে। সকালে ঝাঁড়ু দেওয়ার দায়িত্বটা তানহার। ও যেহেতু বাড়িতে নেই তখন তো তোহাকেই করছে হবে। তাই উঠে চলে এসেছে।
ইমন আর মাকে কথা বলতে দেখে তোহা দাঁতে দাঁত চেপে এগিয়ে আসে।
“এই বাঁদরটা যাই নি এখনো?
তোহা মায়ের হাত থেকে ঝাঁড়ু নিয়ে বলে।
” স্বামীকে বাঁদর বলতে নেই। ও গো হ্যাঁ গো বলতে হয়।
ইমন গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলে।
“মা ওকে বের হতে বলবে তুমি?
দাঁত কটমট করে বলে তোহা।
” এই দাঁতের ওপর জোর খাটাচ্ছো কেনো? এই বয়সে দাঁত ভেঙে গেলে আমার ফিউচার বেবিরা তোমাকে মা না বলে নানি বলে ডাকবে। তখন কি ভালো লাগবে বলো?
তোহা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সাদিয়া বেগম হতাম। এখনকার ছেলেরা এতো নিলজ্জ কেনো? নিজের ছেলের একটা নিলজ্জ। বাবা কাকা মানে না। এখন আবার মেয়ের জামাই ও একই ধাঁচের। কোথায় যাবে উনি?
আঁচলে মুখ ঢেকে চলে যায় কিচেনে। তোহা ঝাঁড়ু দিয়ে পায়ে দুটো বাড়ি দেয়ে ঝাঁড়ু দেওয়া শুরু করে দেয়।
“এই তুমি ব্রাশ করো নি কেনো?
ইমন বলে ওঠে। তোহা চোখ পাকিয়ে তাকায়।
“আমার বাবা এসব পছন্দ করে না। আমি তো আগে ব্রাশ না করেই ব্রেকফাস্ট করতাম। তখন বাবা কি যে মাইর দিতো। বলার বাহিরে। তুমিও কি তাই করো? এখন করছো করো।বিয়ের পর কিন্তু করা যাবে না।
বাবা বকা দেবে।
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে ইমন।
” আর একটা কথা বললেও তোকে আমি ঝাড়ু পেটা করে বাড়ি ছাড়া করবো। শা*লা হনুমান
ঝাঁড়ু নিয়ে তাড়া করে তোহা। ইমন এক দৌড়ে চলে যায় কিচেনে।
তোহা নিজের চুল নিজে খামচে ধরে। এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লো?
🥀🥀
নয়টায় ঘুম ভেঙে যায় তানহার। নরে চরে বুঝতে পারে সূচকের শক্ত বাঁধনে বন্ধি ও। মুচকি হাসে তানহা। শরীরটা আগের চেয়ে অনেকটা ভালো লাগছে। পিটপিট করে চোখ খুলে সূচকের দিকে তাকায়। বেচারা বিভোর হয়ে ঘুমচ্ছে। হয়ত সারা রাত ঘুমায় নি তাই। আজকে কি লোকটা কোচিং এ যাবে না?
রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় কুঁকড়ে যায় তানহা। গাল দুটো টমেটোর মতো লাল হয়ে যায়।
“এই যে ফকিন্নির জামাই ওঠেন। সকাল হয়ে গেছে।
তানহা মুচকি হেসে সূচকের চুলে হাত বুলিয়ে বলে। সূচক চোখ বন্ধ করেই মুচকি হাসে। আরও একটু শক্ত করল জড়িয়ে ধরে তানহাকে। মুখ গুঁজে তানহার গলায়। তানহা চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে হাসে।
” কথা শিখে গেছিস?
গলায় নাক ঘসে বলে সূচক। তানহা বুঝতে পারে লোকটা ভারি অসব্ভ্য হয়ে গেছে।
তানহা চিমটি কাটে সূচকের হাতে। আলগা হয়ে যায় হাত। এই ফাঁকে লাভ দিয়ে উঠে পড়ে তানহা। একদম বিছানার নিচে গিয়ে দাঁড়ায়।
সূচক পুরো পুরি চোখ খুলে চোখ ছোটছোট করে তাকায় তানহার দিকে।
“কি হলো এটা?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে সূচক।
” রোমান্টিক হতে বলেছিলাম আপনাকে। আর আপনি অসব্ভ্য হয়ে গেলেন। ইটস নট ফেয়ার ফকিন্নির জামাই।
হাতের কাছে থাকা কোলবালিশ সূচকের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলে তানহা। সূচক কোলবালিশ ক্যাচ ধরে শব্দ করে হেসে ওঠে।
“ফকিন্নি একদম যাবি না। ঘুমবো আমি।
সূচক হাসতে হাসতেই বলে।
” ঢং দেখে বাঁচি না। জলদি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমাকে স্কুল যেতে হবে।
মুখ বাঁকিয়ে চলে যায় তানহা। সূচক আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে।
চলবে