প্রণয় বর্ষণ পর্ব -১৮ ও শেষ

#প্রণয়_বর্ষণ
#অন্তিম_পর্ব
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
______________

ভোরের আলো কাচ ভেদ করে চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় স্পর্শীর। নিজেকে রুদ্রের বাহুতে দেখে মুচকি হাসে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মুখ গুজে দেয় রুদ্রের ন’গ্ন বুকে। রুদ্র নড়ে চড়ে নিজেও শক্ত করে চেপে ধরে। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,

‘আমার বুকের ভেতর তো ঢুকে যাবি মনে হচ্ছে।’

স্পর্শী মুখ তুলে রুদ্রর দিকে তাকায়। ভেংচি কেটে বলে, ‘আমার জামাইয়ের বুক আমি কি করবো আমার ব্যাপার। আপনি চুপ থাকেন!’

রুদ্র চোখ বুঝেই ঠোঁট কামড়ে হাসে। স্পর্শী ঠান্ডায় গুটি শুটি মে’রে ভালো ভাবে শুয়ে পড়ে। এর মধ্যেই দরজায় নক পড়ে। বাহির থেকে নিতুর কন্ঠ আসে,

‘রুদ্র দরজা খোলো!’

রাগে ফোঁস করে ওঠে স্পর্শী। দাঁতে দাঁত চেপে একটু জোড়েই বলে, ‘না গো এখন দরজা খোলা যাবে না। আমরা ব্যস্ত আছি। আর তুমি নিশ্চয় বুঝো কাপলরা ব্যস্ত আছে মানে!’

দরজার ওপাশে স্পর্শীর ইঙ্গিত বুঝতে একটুও দেড়ি হলো না নিতুর। রাগে দরজায় পা দিয়ে লা’থি দিয়ে গটগট করে চলে যায়। রুদ্র ততক্ষণে চোখ মেলে তাকিয়েছে। কপালে ভাজ ফেলে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘কি বললি ওকে?’

‘ন্যা’কা! কিছু বোঝেন না মনে হয়!’

রুদ্র বাঁকা হেঁসে বলে, ‘তাহলে কথাটা সত্যি করে দেই?’

স্পর্শী চট করে ছেড়ে দেয় রুদ্রকে। কিন্তু রুদ্র না ছেড়ে আরো শক্ত করে ধরে থাকে। বাঁকা হেঁসে ভ্রু নাচাতে থাকে। স্পর্শী ঢোক গিলে বলে,

‘ছাড়েন। শ্বাশুড়ি মা ডাকতেছে মনে হয়।’

রুদ্র ছাড়তে নারাজ। অনেক যুদ্ধ করে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড় লাগায় ওয়াশরুমে। রুদ্র হাসতে থাকে।
স্পর্শী শাওয়ার নিয়ে রুদ্রর সাহায্যে শাড়ি পড়েছে আজ। যদিও তার শাড়ি সামলাতে কষ্ট হয় তারপরও পড়েছে। রুদ্র ওয়াশরুমে গেলে স্পর্শী মাথায় কাপড় দিয়ে নিচে নামে। স্পর্শীকে শাড়ি পড়ে নামতে দেখে ভ্রু কুঁচকায় রেহেনা আর নিতু। রাইমা হেঁসে বলে,

‘ভাবি সাবধানে!’

স্পর্শী হাসে। শাড়ি ধরে ধীরে ধীরে নামে। রেহেনা গম্ভীর গলায় বলে,

‘কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে? নাকি বাড়ির সমস্ত কাজ আমিই করবো!’

স্পর্শী একবার রেহেনার দিকে তাকিয়ে নিজে গিয়ে সোফায় বসে। শাড়ির আঁচল মাথায় ভালো মতো দিতে দিতে লজ্জা পাওয়ার মতো করে বলে,

‘শ্বাশুমা আপনি তো জানেন নতুন বিবাহিত দম্পতিদের এমন একটু দেড়ি হয়। তবুও যে কেন জিজ্ঞেস করেন! আমার বুঝি লজ্জা করে না!’

রেহেনা হা করে তাকায়। শক কাটিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘বে’হায়া মেয়ে একটা।’

স্পর্শী কানে না তুলে হেঁসে নিতুর গালে টোকা দিয়ে বলে, ‘শ্বাশুমা আপনি বরং আমার ননদিনীকে দিয়ে একটু কাজ করান। নিতুকে তো বিয়ে দিতে হবে নাকি! বয়স তো আর কম হলো না। এবার বিয়ে দিয়ে দিন। তার আগে কিছু কাজকর্মও শিখিয়ে দিন।’

নিতু কটমট করে ওঠে। রাইমা শব্দ করে হেঁসে দিয়ে মুখ চেপে ধরে দৌড় দেয়। স্পর্শীও রেহেনা আর নিতুকে পাত্তা না দিয়ে রাইমার পিছু পিছু যায়।

_____
সকাল ৯ টায় কফিশপে এসে বসে আছে তানিয়া। ফয়সাল তাকে ফোন দিয়ে আসতে বলেছে। একা একটা মেয়ের বাড়িতে যাওয়াটা সে ভালো মনে করেনি। তাই নিজেই ডেকেছে। তানিয়া ঠিক সময় এসে হাজির হলেও পাত্তা নেই ফয়সালের। কয়েকবার ফোনও দিয়েছে তারপরও আসার নাম নেই। চুপচাপ বসে ফোন ঘাটতে থাকে। এর মধ্যেই হাজির হয় ফয়সাল। ব্যস্ত কন্ঠে বলে,

‘সরি সরি আসলে ফিহা অনেক কান্না করছিলো তাই দেড়ি হয়ে গেছে।’

তানিয়া শান্ত কন্ঠে বলে, ‘ইটস ওকে।’

তারপর ফয়সালের কোল থেকে ফিহাকে নিয়ে আদর করতে থাকে। ফিহা তানিয়াকে পেয়ে অস্পষ্ট শব্দ করে। খুশিতে হাত পা ছুড়তে থাকে৷ তানিয়া মুচকি হেঁসে বুকে জড়িয়ে নেয় ফিহাকে। পুরোটাই ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে ফয়সাল। তানিয়া কেমন যেনো ফিহাকে একদম মমতা, স্নেহ দিয়ে বুকে আগলে নেয়। যে কেউ দেখলে মনে করবে ওরা মা-মেয়ে। ফয়সালের ভাবনার মধ্যেই তানিয়া ফিহার দিকে তাকিয়েই বলে,

‘ডেকেছেন যে!’

ফয়সাল নড়েচড়ে বসে। গলা পরিষ্কার করে মাথা নিচু করে বলে, ‘সেদিনের বিহেভের জন্য সরি।’

‘ইটস ওকে।’

কিছুক্ষণ নীরবতায় কাটে। তানিয়া চুপচাপ ফিহার সাথে খেলতে থাকে। ফয়সাল কন্ঠে গম্ভীরতা এনে বলে, ‘এতো ভালোবাসো কেন?’

তানিয়া থমকে তাকায়। ফয়সালের চোখের দিকে একবার তাকিয়েই মাথা নিচু করে নেয়। গলা শুকিয়ে আসে। ফয়সাল ভাই জানে সে তাকে ভালোবাসে?

‘আপনি জানেন?’

‘হুম। জানতাম না। কাল তোমার ফ্রেন্ডসরা এসেছিলো। সবটা বললো।’

তানিয়া দীর্ঘশ্বাস নেয়। জবাব দেয় না। ফয়সাল ফের শুধায়, ‘আমিই কেন তানিয়া? তুমি তো জানো এটার কোনো ভবিষ্যৎ নেই।’

তানিয়া অদ্ভুত ভাবে হেঁসে বলে, ‘আপনি ভালোবেসে তো দেখেন ভবিষ্যৎ হয় কি না!’

‘তোমার পরিবার মানবে? তুমি বুঝতে পারতেছো আমি এক বাচ্চার বাবা!’

‘আপনি বুঝতে পারতেছেন গত সাড়ে ৩ বছরের কষ্ট! বুঝতে পারতেছেন কতটা পু’ড়েছি আপনার প্রণয়ে? আমি তো আর পু’ড়তে চাই না ফয়সাল ভাই। একটু বর্ষণ চাই। প্রণয় বর্ষণ।’

ফয়সাল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। রোবটের মতো বলে ফেলে, ‘তোমার পরিবার মানলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো।’

_______
পুরো ১ বছর কেটে গেছে। রুদ্র আর স্পর্শী দারুণ সংসার করছে। রেহেনাও আগের মতো খ্যাচ খ্যাচ করে না। ১ বছরে হাজার বার স্পর্শী রুদ্রকে বাচ্চার কথা বলেছে। তাতে অবশ্য রুদ্র ভ্রুক্ষেপ করেনি। তার মতে স্পর্শীর এখনো বয়স হয়নি। স্পর্শী প্রায়ই রেগে যায়। তার পরও রুদ্র পাত্তা দেয় না। আজ সামিরার বিয়ে। সামিরা তার চাশমিশকে পেয়েছে। অনেক কষ্টে তাকে রাজি করিয়ে ৭ মাস প্রেম করে অবশেষে আজ বিয়ে। তানিয়া আর ফয়সালেরও বিয়ে হয়ে গেছে। তানিয়ার বাবা-মা প্রথমে নিষেধ করে দিলেও পরে মেয়ের কাছে হার মেনেছে। ফয়সাল কোনো দিকেই তানিয়ার যত্নের কমতি রাখে না। হয়তো প্রথম প্রেম সব সময় মনের এক কোণে থেকে যাবে। সামিরাকে বউ সাজাতে পার্লার থেকে লোকজন এসেছে। সেই রুমেই বসে আছে স্পর্শী। তখন তানিয়া ফিহাকে কোলে নিয়ে তাদের কাছে আসে। স্পর্শী হেঁসে বলে,

‘কিরে এক বাচ্চার মা তোর জামাই তোরে আসতে দিলো!’

তানিয়া হেঁসে ফিহাকে স্পর্শীর কোলে দিয়ে বলে, ‘নাহ রে দেয়নি। এখনো আমি তার কোলে বসে আছি।’

স্পর্শী শব্দ করে হেঁসে দেয়। ফিহা চারপাশে একবার তাকায়। সামিরার সাজ কমপ্লিট হয়ে গেলে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ফয়সাল ভাই আসেনি?’

‘আসছে। উনি, রুদ্র ভাইয়া, সাফিন, নাহিদ, নীরব সবাই এক সাথে।’

সামিরা ঠোঁট গোল করে বলে, ‘কয়দিন পর আমার চাশমিশটাও ওই দলের হয়ে যাবে।’

তানিয়া বলে, ‘তুই কিন্তু বলছিলি আমার সামনে তুই চাশমিশকে প্রপোজ করবি অথচ কতগুলো সময় গেলো কিছুই করলি না।’

সামিরা ভেংচি কাটে। স্পর্শী হেঁসে বলে, ‘আতিক ভাইয়া (চাশমিশ) যে কোন শনি কপালে নিতেছে তা তো সে নিজেও জানে না দোস্ত!’

তানিয়া আর স্পর্শী হাই ফাই করে। ভয় পেয়ে ফিহা কান্না করে দেয়। দ্রুত কোলে তুলে নেয় তানিয়া। পিঠে হাত বুলিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করে। সামিরা আর স্পর্শী একবার সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। স্পর্শী হেঁসে বলে,

‘আসলেই ভালোবাসা সুন্দর। তাই না?’

সামিরা মাথা নাড়ায়। বলে, ‘নয়তো কি অন্যের বাচ্চাকে এতো ভালোবেসে বড় করা যায়?’

এর মধ্যেই রুমে আসে সাফিন, নাহিদ, নীরব। সাফিন সামিরার মাথায় গাট্টি মে’রে বলে, ‘তুই আর আমি জমজ অথচ বিয়ে তোর একার হচ্ছে! হোয়াই? আব্বু আম্মু কিন্তু আমার ওপর অ’ন্যায় করতেছে।’

পাশ থেকে নাহিদ, নীরব তাল মিলিয়ে বলে, ‘ঠিক ঠিক।’

সামিরা কটমট করে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘চুপ কর চা’ম’চারা। এই দা’নব যা বলবে তাতে কি তোদেরও সায় দিতে হবে!’

‘খবরদার আমাদের চা’মচা বলবি না শাঁ’ক’চু’ন্নি। নিজে তো বিয়ে করে মিঙ্গেল হয়ে যাচ্ছিস অবশ্য গত ৭ মাস থেকেই তো তুই মিঙ্গেল তাই আমাদের সিঙ্গেলদের কষ্ট আর কি বুঝবি!’

স্পর্শী বলে, ‘তোদের টা মানা যায় কিন্তু এই সাফিন! ‘ও’ থাকবে সিঙ্গেল! বাদ দে আল্লাহ মাফ করুক।’

সাফিন ফুঁসে উঠে বলে, ‘আমি সিঙ্গেলই। গত ৩ মাসে একটাও প্রেম করি নাই, একটাও মেয়ে পটাই নাই, একটা মেয়ের সাথেও ফ্লার্ট করি নাই।’

নাহিদ, নীরব, স্পর্শী, সামিরা একসাথে বলে, ‘হ্যাঁ ওই একটা মেয়ে বাদে বাকিগুলোর সাথে প্রেম, ফ্লার্ট সব করছিস।’

সাফিন থতমত খায়। মাথা চুলকে বিড়বিড় করে বলে, ‘এগুলো সবই দেখি ট্যালেন্টেড!’

সবাই হেঁসে দেয়। একটু পরই বর এসেছে শব্দ শুনে ছুট লাগায় সবাই। তানিয়াকেও ধরে বে’ধে এনেছে। ফিহাকে ফয়সালের কোলে দিয়ে সবাই মিলে গেট আটকে দাঁড়ায়। সাফিন দাঁত কেলিয়ে বলে,

‘দুলাভাই টাকা না দিলে তো বইন দিমু না।’

পাশ থেকে স্পর্শী সাফিনের পায়ে পা’ড়া দিয়ে বিড়বিড় করে বলে, ‘তুই না সামিরার ১ মিনিটের বড়!’

সাফিনও বিড়বিড় করে বলে, ‘কিসের বড় কিসের ছোট! আমরা জমজ ভাই বোন। আর আজকের জন্য ওরে আমার ১ মিনিটের বড় করে দিলাম।’

ওদের কথার মধ্যে বরপক্ষ থেকে এক মেয়ে বলে, ‘টাকা তো দেবো না বেয়াই সাহেব।’

সাফিন তাকিয়েই টাস্কি খায়। এটা তার এক্স। ঠিক কত নাম্বার তা মনে না পড়লেও ঠিকই মনে পড়ে এটা তার এক্স গফ। চোখ গুলো কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। না জানি আজ তার বাড়িতেই তার কু’র’বা’নি হয়! কয়েকবার ঢোক গিলে। এর মধ্যেই শুরু হয়ে যায় বরপক্ষ আর কনেপক্ষের টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি। সাফিন সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়। এক সময় টাকা দিয়ে তারপর বরপক্ষকে গেইট ছেড়ে দেওয়া হয়। স্পর্শী হাসতে হাসতে রুদ্রর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘এতো গুলো ছেলেমেয়ের মধ্যে যাওয়ার দরকার ছিলো?’

স্পর্শী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে একদম বাড়ির বাইরে বের করে দিবো।’

রুদ্র আর কিছু বলে না। স্পর্শী চলে গেলে রুদ্র হেঁসে দেয়। মেয়েটাকে জ্বা’লাতে তার ভীষণ ভালো লাগে। একটাই বউ তার না জ্বা’লালে হয়!

তানিয়া ফয়সালের কাছে এসে ফিহাকে নেওয়ার জন্য হাত বাড়ায়। ফয়সাল হেঁসে বলে, ‘ ‘ও’ থাকুক আমার কাছে। তুমি বরং সামিরার কাছে যাও।’

‘নাহ নাহ সমস্যা নাই। ওকে দিন। আমাকে না পেলে কান্না করবে।’

‘যখন কান্না করবে তখন দিয়ে আসবো। তানিয়া তুমি তোমার বান্ধবীর বিয়েতে আসছো একটু ওদের সাথে থাকো। ফিহা তোমার সাথে গেলে তোমাকে জ্বা’লাবে।’

তানিয়া কিছু বলতে নিলে ফয়সাল রাগী চোখে তাকায়। তানিয়া আর কিছু না বলে ফিহার কপালে চু’মু দিয়ে সিড়ির দিকে যায়। একবার পেছনে ফিরে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসে। বিড়বিড় করে আওড়ায়,

‘আপনি আজীবন এমনই থাকুন ফয়সাল ভাই।’

বিয়েটা ভালো ভাবেই মিটে যায়। আতিক কবুল বলার পর বিড়বিড় করে বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহ আজ থেকে আমার জীবন একদম উৎসর্গ করে দিলাম।’

পাশ থেকে সামিরা অস্পষ্ট ভাবে শুনতে পায়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় আতিকের দিকে। আতিক ভয় পেয়ে যায়। সামিরা বলে, ‘কি বললেন আপনি? আবার বলেন!’

‘কই কি বলছি আমি? কিছুই বলিনি। দেখো কিচ্ছু বলিনি।’

‘আমি শুনেছি। আপনি কিসের জীবন উৎসর্গ করার কথা বলতেছিলেন!’

‘আরেহ না তুমি ভুল শুনছো। আমি বলছি, ‘পুরোনো জীবন উৎসর্গ করে নতুন জীবনের সূচনা করলাম।’

তবুও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সামিরা। আতিক দৃষ্টি এদিক ওদিক করতে থাকে। একসময় বিদায়ের পর্ব আসে। যে সাফিন পুরো দিন সামিরাকে বলে ‘তুই গেলে আমি বাঁচি!’ সেই সাফিনই বাচ্চাদের মতো কান্না করেছে বোনকে ধরে। ভাই বোনের সম্পর্কগুলো এমনই হয়। সারাদিন ঝ’গড়া, ঝা’মেলা অথচ বোনের বিয়ের দিন সেই বেশি কষ্ট পায়। সামিরার বিদায়ের পর সবাই ছাঁদে যায়। সাফিনের তখনো মন খারাপ। স্পর্শী সাফিনের পেটে গু’তো মে’রে বলে, ‘সারাদিন তো ওকে তাড়ায় তাড়ায় করতি এখন পেন্দোস ক্যা?’

‘তোর কি! সর। আজকে আমি আমার এক্সরে দেখছি তাই কান্না করতেছি।’

এই পরিস্থিতিতেও সবাই হেঁসে ফেলে। তানিয়া বলে, ‘দোস্ত আমি গেলাম। উনি আর ফিহা নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ফিহাটা আবার ঘুমোনোর সময় আমাকে না পেলে কান্না শুরু করে।’

স্পর্শী তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘যাহ। আবার দেখা হবে ইন শাহ আল্লাহ।’

সাফিন, নাহিদ, নীরব ছাঁদে বসে আড্ডা জমায়। সাফিনকে খুশি করতে নাহিদ, নীরব দারুণ দারুণ জোকস শোনায়। স্পর্শী একবার সেদিকে তাকিয়ে নিজেও ছাঁদ থেকে নেমে যায়। রুদ্রর সাথে গাড়িতে উঠে বাড়ির পথে রওনা দেয়। আকাশের অবস্থা বেশ একটা ভালো না। স্পর্শীর মন খারাপ দেখে রুদ্র জিজ্ঞেস করে,

‘সামিরার জন্য মন খারাপ হচ্ছে?’

‘হুম। আগের লাইফটাই ভালো ছিলো। কারো কোনো প্যারা ছিলো না। সারাদিন ৬ জন চিল করতাম। একে অন্যের সাথে মা’রা’মা’রি, ঝ’গড়া, ঝা’মেলা করতেই থাকতাম। এখন! সবাই যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। সাফিন, নাহিদ, নীরব যখন পড়াশোনা শেষে জব করবে তখন ওরাও ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তখন আর বছরে একদিনও হয়তো কারোর সাথে কারোর দেখা হবে না, কথা হবে না। আবাার দেখা হলেও হয়তো আগের মতো সেই আমেজটা থাকবে না।’

রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি থামায়। স্পর্শীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে চোখের জল মুছে দিয়ে কপালে ঠোঁট ছোয়ায়। গাল দুটো হাতের আজলে নিয়ে বলে,

‘এসব নিয়ে মন খারাপ করতে হয় না পর্শী। সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবন বদলায় এটাই নিয়ম।’

স্পর্শী আঁকড়ে ধরে রুদ্রকে। রুদ্র স্পর্শীর মন ভালো করার জন্য বলে, ‘বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। নামবি?’

স্পর্শী সাথে সাথে লাফিয়ে ওঠে। চট করে গেইট খুলে গাড়ি থেকে নেমে যায়। দুহাত মেলে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ছোঁয়া নিতে থাকে। রুদ্র পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। স্পর্শী কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

‘আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো।’

রুদ্র ছোট্ট করে ‘হু’ বলে। স্পর্শী ফাঁকা ঢোক গিলে চোখ মুখ শক্ত করে বলে, ‘আমি প্রেগন্যান্ট।’

সাথে সাথেই রুদ্রের হাত আলগা হয়ে যায়। স্পর্শী ভয় পেয়ে দ্রুত পেছনে ফিরে তাকায়। জড়িয়ে যাওয়া গলায় বলে, ‘প্লিজ রাগ করবেন না। আমার কথা….’

রুদ্র হুট করেই জড়িয়ে ধরে৷ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। থতমত খায় স্পর্শী। রুদ্র ভাঙা ভাঙা গলায় বলে, ‘আমি বাবা হবো পর্শী!’

স্পর্শী প্রশান্তির হাসি হেঁসে নিজেও জড়িয়ে ধরে। বিড়বিড় করে আওড়ায়,

‘এ বর্ষণ আমাদের প্রণয়ের বর্ষণ। আজীবন এভাবেই একে অপরের পরিপূরক হয়ে থাকবো। ভালোবাসি বডি বিল্ডার। ভীষণ ভালোবাসি।’

সমাপ্ত..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here