প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব -২৫

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(২৫)

হুডিওয়ালা অজ্ঞাত সে জন উঠেই আঁখির উপর আবার আক্রমণ করতে আসলো হাতে থাকা ছু*রি দিয়ে, ছুরিঘাত করার আগেই আঁখি তার হাত ধরে একটা মোচড় দিল যাতে ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে ছুরিটা ছেড়ে দিল সে, আঁখি তাকে বেশ জোরালো কয়েকটা ঘুষি আর লাথি দিল,অজ্ঞাত জন আঁখির গায়ে একটাও আঁচড় দিয়ে উঠতে সক্ষম হলো না,বরং আঁখির সাথে পেরে না ওঠে মুখ থুবড়ে মাটিতে পরল।এবার হাতের পাশে লাঠি পেয়ে আবার আঁখির উপর আক্রমণ করতে গেলে আঁখি লাঠিটাও ধরে নেয়,তারপর সেই লাঠি কেড়ে নিয়ে তার পিঠ বরাবর প্র*হা*র করলে আবারও মুখ থুবড়ে পরে গেল সে,আঁখি এগিয়ে গিয়েই তার মাথা মাটির সাথে চেঁপে ধরে ওপর হাতে তার এক হাত পিছন দিক দিয়ে মুড়ে ধরে এবার কর্কশ গলায় বলল।

কে তুই?আমার সাথে কেন লাগতে এসেছিস?লাগতে আসবি ভালো কথা ক্ষমতা দেখে তো আসবি!শুধু শুধু মা*র খেলি,এবার বল কে তুই?আমাকে কেন মা*র*তে এসেছিস?
কিছুই বলল না সে জন,অজ্ঞাত ব্যক্তির হুডিটা অনেক আগেই মাথা থেকে সরে গেছে,চুল খোঁপা করা যাতে কাঠি লাগানো,আঁখি এবার তার চুল বেশ জোরে মুঠো করে ধরল।

বল কে তুই?নইলে এখনই সব চুল ছিঁড়ে ফেলব,এতো মা*র*ব যে নিজেকেই ভুলে যাবি,বল কে তুই কে?বল?বলবি না তো ঠিক আছে,এখনই তোর মুখোশ খুলে দেখছি তুই কোন ক্ষেতের মূলা।
আঁখি তাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে এবার তার মুখোশ খোলার চেষ্টা করলে সে তাকে ধাক্কা দিয়ে উঠে পালাতে শুরু করে,আঁখিও বেশ গতিতে তাকে ধাওয়া করল,আঁখির সাথে দৌঁড়ে পেরে উঠারও ক্ষমতা সে জন কুলিয়ে উঠতে পারছে না,আঁখি তার অনেক পাশে এসে তাকে ধরার জন্য হাত বাড়ালে তার খোঁপাতে তার হাত যায়,এক টান দিলে তার খোঁপার কাটা সহিত কিছু চুল আঁখির হাতে চলে আসে,কিন্তু সে জন অন্ধকারে কোথাও মিলিয়ে যায় প্রাণ বাঁচিয়ে।

আজ রিদিকা আসলো ডাক্তারের কাছে,একাই এসেছে,নিজের শরীরের এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে সে আদ্রিশকে জানাতে চায় না বর্তমানে কিছু,বড্ড ভয় হয় তার আদ্রিশকে হারিয়ে ফেলার,যে আদ্রিশ তার প্রাণের প্রিয়া আঁখির উপর রিদিকাকে নিয়ে এলো সামান্য বাচ্চার দোহাই দিয়ে তাকে নিয়ে কীভাবে কোনো সুযোগ নিবে রিদিকা!আদ্রিশ আজ দু’দিন হলো একটা কাজে শহরের বাহিরে গেছে সে সুযোগে ডাক্তারে চলে আসলো রিদিকা,ডাক্তার তাকে চেক আপ করে কিছু টেস্ট করানোর জন্য দিলেন,সে টেস্টগুলো করে বসে রইল রিপোর্টের জন্য।এবার তার রিপোর্ট দেখে বেশ চিন্তিত হলেন ডাক্তার,ডাক্তারের দুরাশাগ্রস্থ চেহারা দেখে অস্থিরতা আরও বেড়ে গেল রিদিকার।জিজ্ঞেস করল ডাক্তারকে।

″কি হয়েছে ডাক্তার?কি সমস্যা দেখলেন আমার?″

″দেখুন মিসেস রিদিকা রাহমান, আপনার কোনো রোগ হয় নি,বরং আপনার শরীরে এক ধরনের ভাইরাস পাওয়া গেছে।″

″হোয়াট! ভাইরাস?কিন্তু আমার শরীরে ভাইরাসের উৎপত্তি কীভাবে হলো?″

″সেটা উৎপত্তি হয় নি,বরং সেটা আপনার শরীর অব্দি পৌঁছানো হয়েছে।এই ভাইরাসের বিষয়ে আমি এখন তেমন কিছু বলতে পারব না কারণ ভাইরাসটা নতুন ধরনের একটা ভাইরাস,আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি এটা মনুষ্য সৃষ্টি, যা কোনো মাধ্যম ব্যতীত আপনার শরীরে প্রবেশ করে নি।উক্ত ভাইরাস আপনার শরীরের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দিচ্ছে।″

″এখন আমার কী করণীয় আছে ডাক্তার?কী হবে আমার?″

″আরে ঘাবড়াবেন না,ভাইরাসটা এখন আপনার শরীরে অল্প পরিমাণে আছে, আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি আপনি সেগুলো সেবন করুন,আর আপনার ব্যবহার্য সকল পুরাতন পন্য বদলে ফেলুন সেগুলো থেকেও সমস্যা হতে পারে,আমাকে ভাইরাসটা নিয়ে একটু রিসার্চ করতে হবে,এটা সম্পর্কে ভালোভাবে জানার পরই আপনাকে যথেষ্ট কোনো পথ্য আমি দিতে পারব।

আঁঁখি কাঠিটা হাতে নিয়ে অনেক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে,কাঠিটা কোথাও যেন দেখেছে আঁখি,খুব খেয়াল করে হয়ত তখন দেখে নি নয়ত আঁখির স্মৃতি খুবই প্রখড় মনে করে নিত মুহুর্তেই,তবুও মস্তিষ্কে প্রচুর জোর দিয়ে ভাবছে,তাকে সেই অজ্ঞাত জন পর্যন্ত পৌঁছাতেই হবে,তাকে যে বড্ড প্রয়োজন আঁখির,কিন্তু হঠাৎ খেয়াল করল
আঁখি দেরি হচ্ছে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য,তাই ওটা রেখে দিলো একটা ড্রয়ারে তারপর কাভার্ড থেকে পরার জন্য কাপড় বের করবে তখনই কাভার্ডের একটা থাকের উপর চোখ গেল,নীল রঙের রেপিং পেপারে আবৃত বাক্স,মনে পরল ওটা আঁখির জন্মদিনে আদৃত দিয়েছিল,আঁখি সেটা সেই যে রেখেছিল এখনও খোলার কথা মনে নেই।এবার বাক্সটা হাতে নিয়ে খুলে নিল।ভিতর থেকে বেড়িয়ে এলো কালো রঙের একটা কাতান শাড়ি, অদ্ভুত সুন্দর তার কাজ,এক কালার শাড়িটার সোনালি রঙের পাইর,আঁচলের দিকে হালকা কাজ,কালো শাড়ি বলতেই আঁখির ভালোলাগার একটা বড় অংশ,উপহারটা দেখে বেশ খুশি হলো আঁখি,বাক্সে একটা চিরকুটও পেল সে।চিরকুটটা উঠিয়ে পরতে লাগল সেটা।

মিস প্যারা
তোমাকে কালো শাড়িতে বেশ মানায়,কালো রঙের শাড়ি যেন তোমার জন্যই বানানো হয়।আসলেই সৌভাগ্যবান হবে সে শাড়ি যা চড়বে তোমার গায়,সৌন্দর্য তোমার বাড়িয়ে দিবে বহুগুণ, এতটা গুছিয়ে কথা বলতে জানিনা, জানো তো খুব ভালো করেই তুমি,চেষ্টা করলাম শুধু মাত্র সাথে চাহিদাও অল্প,একদিন গায়ে জড়িয়ে নিও এই সৌন্দর্য, হয়ত আকাশের চাঁদটাও হার মানবে সেদিন তোমায় রূপে,তোমার রূপের তেজে ঈ*র্ষা*ন্বি*ত হয়ে হয়ত লুকাবে সে সেদিন মেঘাতলে।
চোখা নাকওয়ালা।

চিরকুটটা পরে আঁখি হেসে দিল,চোখা নাকওয়ালা ডাকটা আঁখি প্রায় ডাকত আদৃতকে,যাতে বিরক্ত হতো আদৃত খুব,চেঁচিয়ে উঠত কখনও কখনও আর আঁখি তাকে উত্তপ্ত করে মজা নিত।কখনও আদৃত– আঁখির বা অন্য কোনো নারীর প্রশংসা করে নি,আজ তার মুখে নিজের জন্য প্রসংশা শুনে কি প্রতিক্রিয়া করবে ভেবে পাচ্ছে না।

″স্যার আজ কয়েকদিন থেকেই এতো খোঁজ নিয়েও আমরা প্রমত্ত অঙ্গনা সম্পর্কে তেমন কোনো সন্ধান পেলাম না।এদিকে ইশানা আর রিয়াদের দু’টো ফোনই আমরা পা*বে*র পিছনের জঙ্গল থেকে পেলাম,কিন্তু দু’জনের লা*শ তো আলাদা দুই স্থানে ছিল,কিছুই তো বুঝে ওঠা যাচ্ছে না।″

″ব্যপারটা খুব সিম্পল, ইশানার সাথে অ*বৈ*ধ সম্পর্কে ছিল রিয়াদ,সে রাতে তারা একসাথে ছিল পা*বে,সাথে প্রমত্ত অঙ্গনাও ওদের উপর নজর রাখছিল তখন,সুযোগ বুঝে সে সেখানের একটা বন্ধ রুমে ইশানাকে মে*রে ফেলে রাখে,অতঃপর তার ফোন দিয়ে রিয়াদকে ইশানা সেজে পাব এর পিছনের দিকটায় আনিয়ে নিয়ে তাকেও প্রানে মা*রা*র প্রচেষ্ঠা করে, কিন্তু রিয়াদ হয়ত কোনোরুপ নিজেকে বাঁচাতে জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে মেইন রোডে উঠতে গিয়েছিল, তখন নিজে থেকে বেখেয়ালে নয়ত প্রমত্ত অঙ্গনার ধাক্কায় গাড়ির নিচে এসে যায় রিয়াদ।আর তারপর তো প্রমত্ত অঙ্গনা হাসপাতালে এসেই তাকে মা*র*তে সক্ষম হয়।″

″কিন্তু স্যার প্রমত্ত অঙ্গনা হাসপাতালে কিভাবে প্রবেশ করল?কারণ হাসপাতালের সামনের সিসিটিভি দিয়ে তো ওকে প্রবেশ করতে দেখা যায় নি।″

″ও হাসপাতালের সামনা দিয়ে প্রবেশ করে নি,এদিকে গেলে ধরা পরার সুযোগ বেশি ছিল হয়ত তাই,খুব সম্ভবত হাসপাতালের পিছনের দিক দিয়ে কোনোরকম দেয়ালের দিকটায় চড়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেছে।সে যেই হোক খুব দক্ষ একজন।একে তো আমার স্যালুট করতে মন চাইছে,এতো নিখুঁত আর দক্ষতার সাথে হয়ত আজ অব্দি কোনো অপরাধীই পার পেয়ে যেতে পারে নি।তবে তাকে তো আমি ধরবই।কিন্তু তার আগে আমাদের নকল প্রমত্ত অঙ্গনা সম্পর্কে জানতে হবে,আর তাকে খোঁজে বের করতে হলে আমাদের ৪ বছর আগের সেই দু’টি খুন সম্পর্কে আবারও সন্ধান করতে হবে,আগা থেকে শুরু করলে গোড়ায় তাড়াতাড়িই পৌঁছাব ইনশাআল্লাহ। খু*ন দু’টো যশোর জেলায় হয়েছিল,আজ সন্ধ্যায় আমি দু’জন কনস্টেবল নিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হব,তুমি এদিকটার খেয়াল রেখ।″

আজ হাসপাতালে আদৃত আসে নি,কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আঁখির,কাজের ফাঁকে তো আদৃতের সাথেই তার আড্ডা জমে থাকত দিনভর,গম্ভীর সে লোকটা বেশি কথা বলতে না জানলেও আঁখির বকবকানি তো শুনত সারাদিন,মাঝে মধ্যে আঁখির সাথে মগ্ন হতো তার অতি গম্ভীর কিছু আলাপচারিতায়, বেশ ভালোই লাগে আখির তা।আদৃতকে দেখলেই যেন মনে হয় সে আবারও সেই ছয় বছর আগে ফিরে গেছে,তাই হুট করে আজ তার না আসা কেমন জানি এক খালিলাগা অনুভুতি জন্ম দিলো আঁখির মনে,ফোন দিবে আদৃতকে তখনই আদৃতের ফোন আসল।

″আরে ডা.সাহেব কোথায় আপনি?″

″আর বলো না অল্প জ্বর আসাতে মা ঘর বন্ধী করেছে আমায়।এমন বন্ধ অবস্থায় না আমি আমি হার্ট অ্যাটাক করে মা*রা যাই।″

″আরে কি যে বলেন?আপনি ভাগ্যবান যে আপনার পাশে আপনার মা-বাবা আছেন আপনাকে দেখাশোনা করার জন্য,আপনাকে ভালোবাসা দেওয়ার জন্য।আমার তো এমন অবস্থা যে ঘরে ম*রে পরে থাকলেও কর্মচারী দেখাশোনা ব্যতীত আহ্লাদ করে যে কেউ বুকে টেনে নিবে এমন কেউ নেই।″

″এভাবে বলো না আঁখি, দেখবে আশরাফ স্যার আর আহিল একদিন ঠিকই তোমায় মেনে নিবে।তুমি নিরাশ হয়ো না প্লিজ।″

″হুম, ভালো থাকুন রাখি কাজ আছে,নিজের খেয়াল রাখবেন কিন্তু।″

″হুম,বাই,তুমিও নিজের খেয়াল রেখো।″

আহিল তখন আঁখির কেবিনে এসেছিল কিছু কাজে আঁখির বলা কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পেল সে,যাতে এক মুহুর্তেই বুক হাহাকারে ভরে গেল তার বোনের জন্য।আঁখি ফোন রেখে দেখতে পেল আহিলকে।

″আরে ভাইয়া তুই?কোনো কাজে এসেছিস?″

″ডা.আঁখি আমি আপনার সিনিয়র স্যার বলে ডাকবেন আশা করি।″

″বয়েই গেছে আমার তোকে স্যার ডাকতে,আমি তোকে ভাইয়া বলব, কারণ তুই আমার ভাইয়া,আর তুই করেও বলব,কি করবি করে নিস।″

″আপনি কিন্তু বে*য়া*দ*বি করছেন ডা.আঁখি।″

″কি দেখেছিস তুই বে*য়া*দ*বির,সবকিছু আমিই করি উনারা কিছু করেন না,বাপ ছেলে বুড়ো বয়সে ঢং করতে শিখেছে,আমাকে সামনে থেকে জুনিয়র বলে অপদস্ত করবে আর আমার জন্মদিনে লুকিয়ে আমার কেবিনে এসে গিফট রেখে যাবে।″

এই রে এর কেবিনে গিফট রেখেছিলাম এ কিভাবে জানল!আর বাবাও একি কান্ড করলেন!যতই বলুক না কেনো বাবা আঁখিকে কখনও পর করতে পারবেন না।

কি ভাবছিস ভাইয়া এটাই তো আমি কিভাবে জানলাম?আরে ভাইয়া আমি তোর ছোট হতে পারি কিন্তু বুদ্ধিতে তোর নানি,আমার কেবিনের সামনের সিসিটিভি তো আর এমনি লাগানো হয় নি।বাপ ছেলে কীভাবে লুকিয়ে ধিমি পায়ে এসেছিল।হা হা হা হা।

আঁখি খিল খিল করে হেসে উঠলে আহিল আর দাঁড়ালো না সেখানে,জানে এখানে থাকলে ধরা পরবে সে আঁখির কাছে,আঁখি যে তাকে হাসিয়ে এবং মানিয়েই ছাড়বে,তাই বেগতিক পায়ে চলে গেল,আঁখি এখনও হাসছে।

″শুনছ শুভ্রতা আজ আমাদের একাউন্টে আঁখি ২ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছে,বলল আগামীতে আরও পাঠাবে, আমি মানা করলেও মানল না,বলল আমাদের কিছু লাগলে ওকে বলতে।মেয়েটা যখন থেকে জীবনে এসেছে আমাদের শুধু দিয়েই যাচ্ছে, মানুষ এতোটাও ভালো হয় কখনও তাকে না দেখলে বুঝতামই না,কোনোদিনও হয়ত তার ঋণ শোধ করার তৈফিক জুটিয়ে ওঠতে পারব না।″

″ঋণ শোধ করার কথা বাদই দেও,এখন তো ওর সাথে কথাটাও বলে ওঠার পরিস্থিতি রয়ে যায় না,দম বন্ধ লাগে আমার আদিল,প্লিজ কোনোমতে এখান থেকে নিয়ে চলো।″

″আর একটু অপেক্ষা করো,আমি সবকিছু ঠিক করে দিব,বর্তমানে এই টাকার কথা যাতে মা ব্যতীত আর কারো কানে না যায়।″

চলবে…

গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি,ভালো ভালো মন্তব্য পেলে আগামী পর্বে ইন্টারেস্টিং কিছু রাখার চেষ্টা করব😜।আসসালামু আলাইকুম সবাইকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here