#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১৯|
প্রবল বৃষ্টিতে আকাশ ভিজে। বৃষ্টির একেকটা ফোঁটা মাটিতে পরছে, পরপরই টুপটুপ শব্দে কান আন্দোলিত হয়ে উঠছে। প্রিয়ন্তি দৌঁড়ে বাস স্ট্যান্ডের ছাউনির নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। জামা থেকে পানি ঝাড়ার চেষ্টা করেছে। অর্ধেকটাই ভিজে গেছে সে। ঠান্ডা লাগছে খুব। বাসায় গিয়ে গরম পানির ভাপ নিতে হবে। সর্দি হয়েছে বোধহয়। নাকটা কেমন যেন পিটপিট করছে প্রিয়ন্তির। প্রিয়ন্তি বাসের জন্যে অপেক্ষা করছে। বাস আসতে এখনো আধা ঘণ্টা সময় আছে। প্রিয়ন্তি পা ভেঙে আসছে। আজ একটা প্রেজেন্টেশন ছিল তার। সারাক্ষণ দাড়িয়ে কথা বলে গেছে। অনুরাগ দুবার বসতে বলেছিল। তবে প্রিয়ন্তি মানা করেছে। বসে প্রেজেন্টেশন করলে ভালোভাবে কথা বুঝানো যায়না। প্রায় ঘণ্টাখানেক দাড়িয়ে থাকাতে পায়ের হাঁটু ব্যথা করছে। প্রিয়ন্তি পেছনে তাকাল। বসার জন্যে বেঞ্চে জায়গা খালি নেই। প্রিয়ন্তি তাই গেল ছেড়ে দাড়িয়েই রইল। হঠাৎ কোথা হতে দৌঁড়ে মাহতিম প্রিয়ন্তির পাশে এসে দাঁড়াল। প্রিয়ন্তি এসময়ে এখানে মাহতিমকে দেখে ভারী অবাক হল। মাহতিমের গায়ে ফরমাল ইন করে নেভি ব্লু রঙে শার্ট, অ্যাশ রংয়ের প্যান্ট। গলায় টাই বাঁধা। মাহতিম মাথার চুল থেকে হাত দিয়ে পানি ঝাড়াল। অতঃপর প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে মিষ্টি হেসে বলল,
‘ হ্যাই। ‘
প্রিয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে চেয়ে মাহতিমের দিকে। মাহতিমকে জিজ্ঞেস করল প্রিয়ন্তি,
‘ তুমি? এখানে কেন? তাও এই পোশাকে? ‘
‘ চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছি। তোমার অফিসের পাশেই। ‘
প্রিয়ন্তি বুঝতে পারল এবার। মাহতিম বলল,
‘ অফিসের কাজ কেমন চলছে? বস ঠিকমত ভদ্রতা দেখাচ্ছে তো? ‘
প্রিয়ন্তি হকচকিয়ে গেল। মাহতিমকে বসের কথা এখনো বলেনি প্রিয়ন্তি। কারণ প্রিয়ন্তি জানে, মাহতিম ভীষন রগচটা। বসের কথা বললে সেই আগের মারপিঠ শুরু করে দেবে। এখন শর্তের কথা বলে প্রিয়ন্তি মাহতিমকে এসব থেকে দূরে রেখেছিল। কিন্তু মাহতিম প্রিয়ন্তির বেলায় কতটা পজেসিভ তা প্রিয়ন্তির চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। প্রথম প্রথম প্রিয়ন্তির দিকে কেউ একটু মুগ্ধ চোখ তাকালেই মাহতিম টা হাড়গোড় ভেঙে দিত। আর এখন তো বস রীতিমত টিজ করছে প্রিয়ন্তিকে। বসকে না জানি কি থেকে কি করে বসে মাহতিম। প্রিয়ন্তি মৃদু হেসে বলে,
‘ হ্যাঁ, ভদ্র ব্যবহার করছে। ‘
‘ শিউর? ‘
প্রিয়ন্তি সায় দেয়। মাহতিম হাত মুষ্টিবদ্ধ করে প্রিয়ন্তির দিকে চায়। সে জানে প্রিয়ন্তি মিথ্যা বলছে। প্রিয়ন্তিকে একা একটা অফিসে চাকরি করতে দিয়ে মাহতিম প্রিয়ন্তির ব্যাপারে কোনো খবর রাখবে না, তা তো হয়না। বসের সব খবর মাহতিমের কাছে আসে। ইতিমধ্যে মাহতিম অ্যাকশন নিয়ে নিয়েছে। বাকি ফলাফল প্রিয়ন্তির কাছে দ্রুত পৌঁছে যাবে। মাহতিম প্রিয়ন্তির হালচাল জিজ্ঞেস করে। প্রিয়ন্তিও বেশ হেসেখেলে উত্তর দিচ্ছে। হঠাৎ প্রিয়ন্তির পাশে ভিজে চুপচুপে দেহ নিয়ে দাড়ায় অনুরাগ। প্রিয়ন্তি অনুরাগকে এখানে দেখে বিস্মিত হয়ে। মাহতিমের দৃষ্টি সামনের দিকে, স্বাভাবিক। হয়ত অনুরাগের সম্পর্কে সে জানে না দেখেই তার এত নির্লিপ্ততা। প্রিয়ন্তি অনুরাগকে দেখে। কিন্তু কথা বলে না। নিজের কাছেই আজকাল অনুরাগের সঙ্গে কথা বলতে শঙ্কা হয় প্রিয়ন্তির। নিজের মনে যা চলছে সেসব দামাচাপা দিতে চায় প্রিয়ন্তি। কিন্তু পারে না। অনুরাগকে দেখলেই প্রিয়ন্তির বুকের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে পরে। এলোমেলো হয়ে যায় তার দৃষ্টি। প্রিয়ন্তিকে চুপ থাকতে দেখে অনুরাগ নিজেই কথা তুলে,
‘ বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছ তুমি। ছাউনির ভেতর চেপে দাড়াও। ‘
প্রিয়ন্তি নিজের অজান্তেই অনুরাগের কথা শুনে। ছাউনির ভেতরে চেপে দাড়ায়। অনুরাগ এবার আরো ভালো করে প্রিয়ন্তিকে দেখতে পারছে। তার শান্ত চোখের চাওনি যেন প্রিয়ন্তিকে খু’ন করে ফেলছ। প্রিয়ন্তি অস্বাভাবিকতা ভাঙতে জিজ্ঞেস করে,
‘ গাড়ি থাকতে আপনি বাস স্ট্যান্ডে কি করছেন? ‘
অনুরাগ মৃদু স্বরে বলে,
‘ গাড়ির চাকা নষ্ট হয়েছে। তাই কদিন বাসেই যাতায়াত করতে হবে। ব্যাড লাক। ‘
প্রিয়ন্তি কথা বলার ফাঁকে হাঁচি দিয়ে বসে। পরপর পাঁচটা হাঁচি দিয়ে অস্থির হয়ে পরে। মাহতিম নিজের পকেট থেকে টিস্যু বের করে এগিয়ে দেয় প্রিয়ন্তির দিকে। অনুরাগও একই সঙ্গে টিস্যু বের করে প্রিয়ন্তিকে দেয়। প্রিয়ন্তি মাহতিমের এগিয়ে দেওয়া টিস্যু দেখার আগেই অনুরাগ টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ সর্দি লাগিয়েই ছাড়লে। বৃষ্টি গায়ে মাখার কি দরকার ছিল?’
প্রিয়ন্তি মুখ ফুলিয়ে চায়। অনুরাগের হাত থেকে টিস্যু নিয়ে মৃদু স্বরে জানায়, ‘ থ্যাংকস। ‘
অনুরাগ তার জবাবে মৃদু হাসে। মাহতিম এসব দেখে ভ্রু কুঁচকে গোপনে টিস্যু ফিরিয়ে নেয়। টিস্যু ধরে রাখা হাত পিঠের পেছনে নিয়ে হাতের দলায় দুমড়ে মুচড়ে করে টিস্যুকে। অতঃপর প্রিয়ন্তির অগোচরে ছুঁড়ে ফেলে দেয় মাটিতে। প্রিয়ন্তির দৃষ্টি অনুরাগের দিকে। অনুরাগের মুগ্ধ চাওনি প্রিয়ন্তির দিকে। এসব কিছুই মাহতিমকে ভেঙে গুড়িয়ে দেবার জন্যে যথেষ্ট। মাহতিম প্রিয়ন্তিকে ডাকতে চাইল। তবে মাঝপথে অনুরাগের কথা শুরু হয়ে গেছে দেখে সে থেমে গেল। বাস এসে গেছে। প্রিয়ন্তি আর আগেপিছে দেখে না। মাহতিমকে বাসে উঠতে বলে দৌঁড়ে নিজে বাসে উঠে পরে। অনুরাগ প্রিয়ন্তির পিছুপিছু বাসে উঠে। কিন্তু মাহতিম সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। বাসে উঠে না। ওই তো বাসের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রিয়ন্তি জানালার পাশে বসেছে। অনুরাগ তার পাশে। এই দৃশ্য দেখে মাহতিমের বুকের ভেতর দাউদাউ করে জ্বলে উঠে। চোখের কোণ ঘেঁষে জলের বিন্দু চিকচিক করে। মাহতিম ছাওনি থেকে বেরিয়ে যায়। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হেঁটে চলে সড়ক ধরে। হাত কাঁপছে মাহতিমের। মাহতিম বিড়বিড় করে আওড়ায়,
‘ তুমি আমার হও নি, তাতে আমার কোনো আফসোস নেই প্রিয়ন্তিকা। কিন্তু তুমি অন্য কারো হলে সে যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারব না। আমাকে নিঃস্ব করে দিও না, প্রিয়ন্তিকা। আমি তোমায় খুব বেশিই ভালোবাসি, প্রিয়ন্তিকা। এতটা ভালোবাসা তুমি কখনো কারো কাছে পাবে না।’#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |২০|
মাহতিম আর হাঁটতে পারছে না। পা দুটো যেন ভে”ঙে আসছে। এক ঘন্টা হেঁটেছে সে। বাসার প্রায় কাছেই চলে এসেছে। এতক্ষণ বৃষ্টির পানিতে তার চোখের কোণ ঘেঁষে পড়া জল লুকিয়ে ছিল। কিন্তু এখন বৃষ্টি নেই। ফকফকা আকাশ। আকাশের উপর বসে আছে উত্তাপহীন ঠসঠসে সূর্য। মাহতিমের ভিজে শার্ট এতক্ষণে শুকিয়ে যাওয়ার পথে। ইন করা শার্ট কুঁচকে গেছে বৃষ্টির পানিতে। মাহতিম বাসায় যায় না। গলার টাই ঢিলে করে বাসার সামনে টং দোকানে বসে একের পর এক সিগারেট ফুঁকে। ওয়াহিদ কল করেছিল একবার। মাহতিম কোথায় আছে, জানতে চেয়েছে। মাহতিম নিজের অবস্থান জানিয়ে সঙ্গেসঙ্গে কল কেটে দিয়েছে। প্রায় দশ মিনিটের মধ্যে ওয়াহিদ বাইক নিয়ে ঝড়ের গতিতে টং দোকানে আসে। এলোমেলো বিধ্বস্ত মাহতিমকে দেখে তার বুকের ভেতর মুঁ”চড়ে উঠে। ওয়াহিদ দৌঁড়ে গিয়ে মাহতিমকে জড়িয়ে ধরে। মাহতিমের হাত আগের ন্যায় সোজা হয়ে আছে। আঙ্গুলে ডগায় অবশিষ্ট সিগারেট। ওয়াহিদ মাহতিমকে ছেড়ে দেয়। ব্যস্ত কণ্ঠে বলে,
‘ কি হয়েছে তোর মাহতিম? এমন লাগছে কেন তোকে? ‘
মাহতিম অবশিষ্ট সিগারেটে শেষটান দিয়ে সেটা ফেলে দেয়। আরো একটা সিগারেট ধরায়। ওয়াহিদ সব দেখে। হাত বাড়িয়ে মাহতিমের হাত থেকে সিগারেট নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। রেগে বলে,
‘ শরীর খেয়ে ফেলার শখ জেগেছে? একদিন সিগারেট মুখে নিয়েই মরবি তুই শালা। ‘
মাহতিম কথা বলে না। পুনরায় সিগারেট ধরানোর তাড়া দেখায় না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। ওয়াহিদ মাহতিমের এমন নিরবতা দেখতে পারে না। কষ্ট হয় তার। ওয়াহিদ কিছুক্ষণ থেমে তারপর জিজ্ঞেস করে,
‘ প্রিয়ন্তির কিছু হয়েছে? ‘
মাহতিম ক্লেশপূর্ন হাসে। ওয়াহিদ যা বুঝার বুঝে যায়। এ আর নতুন কি? প্রিয়ন্তির সঙ্গে মাহতিমের সদা ঝামেলা হয়। আর এভাবেই মাহতিম ভেঙে পরে। তবে আজকের ন্যায় মাহতিমকে ভেঙে পরতে আগে কখনো দেখে নি ওয়াহিদ। ওয়াহিদ উত্তরের আশায় মাহতিমের দিকে চেয়ে। কিছুক্ষণ পর মাহতিম নিজে বলে,
‘ আমি কি খুব খারাপ, ওয়াহিদ? আমাকে কি একদম ভালোবাসা যায় না? আমি কি প্রিয়ন্তির অযোগ্য ছিলাম? ‘
ওয়াহিদের বুকটা পু”ড়ে ছা”রখার হয়ে যায় মাহতিমের কথা শুনে। ওয়াহিদ উত্তর দেয়,
‘ না, তুই হচ্ছিস দুনিয়ার সবথেকে গর্দভ প্রেমিক। এবার ঝেড়ে কাশ। কাহিনী কি হয়েছে খুলে বল। ‘
মাহতিম একে একে সব বলে ওয়াহিদকে। ওয়াহিদ মনোযোগী শ্রোতার ন্যায় সব শুনে। কিছুক্ষণ চিন্তিত থেকে তারপর হঠাৎ করেই বলে,
‘ আরে, তোর চোখের দেখা তো ভুলও হতে পারে। হতে পারে, ছেলেটা প্রিয়ন্তির অফিসের কলিগ। তার সঙ্গে দুটো কথা বলেছে তো কি এমন হয়েছে? বাসে করে গিয়েছে। চেনাজানা তাই পাশাপাশি বসতেই পারে। এতে এমন রিয়েক্ট করছিস কেন? এবার তোর স্বভাব পাল্টা। এমন অভার পজেসিভ হলে আমি নিশ্চিত তুই প্রিয়ন্তিকে হারাবি। ‘
মাহতিম কিছুক্ষণ ভাবে। তার মোটেও ইচ্ছে হচ্ছে না, অন্য কারো সঙ্গে প্রিয়ন্তিকে ভাবতে। ওয়াহিদের কথা সত্য হয়ত। হতে পারে, প্রিয়ন্তি ছেলেটার সঙ্গে ফরমাল কথাবার্তা বলেছে। অযথাই মাহতিম চিন্তা করছে হয়ত। আসলে, মাহতিম ছেলেটা বড্ড ভীতু। সে কষ্ট পেতে চায়না। তাই তো নিজের দেখা বিষয়কে সে মনের শান্তির জন্যে অদেখা করে গেল। সে সবসময় চায় সুখ পেতে। তাই প্রিয়ন্তির সঙ্গে অন্য কাউকে কল্পনা করে সে দুঃখী হতে চায়না। প্রিয়ন্তি তার, ভাবলে মনের মধ্যে যে শান্তি বয়ে বেড়ায়,সেই শান্তি, সেই উচ্ছাস মাহতিম হারাতে চায় না। মাহতিম ছেলেটা যে বড্ড বোকা।
মাহতিমের মুখশ্রী উজ্জ্বল হয়ে যায়। সে চমকিত কণ্ঠে বলে,
‘ হয়ত তোর কথাই ঠিক। সবসময় চোখের দেখা তো ঠিক হয় না। ‘
ওয়াহিদ হেসে মাহতিমের কাধে চাপড় দেয়। বলে,
‘ এই তো বুঝসস। বুঝালে বুঝো, আর না বুঝালে কচি খোকা সাজো। ধান্দাবাজ! ‘
মাহতিমের কণ্ঠে শান্তি দেখালেও মনের মধ্যে কেমন যেন একটা খচখচ থেকেই গেল। শান্তি পেয়েও যেন শান্তি পাওয়া হল না তার। কোথাও যেন একটা অসহ্য কষ্ট চিরবিরিয়ে উঠল।
ওয়াহিদ বলল,
‘ সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। বাসায় যা। ফ্রেশ হ। পারলে প্রিয়ন্তিকে কল কর। পুরো বিষয়টা খুঁটিয়ে জানার চেষ্টা কর। তোর উত্তর তুই নিজেই পেয়ে যাবি। ‘
মাহতিম শুনে ওয়াহিদের কথা। সিগারেট ফেলে মাউথ ওয়াশ দিয়ে মুখের ভেতর ধৌত করে বাসার দিকে চলে।
______________________
প্রিয়ন্তি বাসায় এসেছে অনেকক্ষণ হল। রাত বাড়ার সঙ্গে তার নাকের পিটপিট করাও যেন বেড়েছে। ঠান্ডা লেগে কাদা তার গা। এই হাঁচি দিচ্ছে তো এই কাশি দিচ্ছে। গা কাঁপিয়ে জ্বর এলো বলে। প্রিয়ন্তির মা ঔষধ এনে রেখেছেন টেবিলের উপর। প্রিয়ন্তি এই ঠাণ্ডা, কাশি গায়ে মেখে আগামী কালের জন্যে প্রেজেন্টেশনের স্লাইড তৈরি করছে। আজ সারা রাস্তা অনুরাগের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছে প্রিয়ন্তি। কেন যেন অনুরাগের সঙ্গে কথা বলতে প্রিয়ন্তির ভালো লাগে। অনুরাগ অনেক ম্যাচিওর একটা ছেলে। কথাবার্তা মার্জিত। আজ অব্দি প্রিয়ন্তির দিকে খারাপ নজরে তাকায় নি। মাহতিমের ন্যায় অযথা পাগলামি করে প্রিয়ন্তিকে বিব্রত করেনি। অনুরাগের কথার ধরনে প্রিয়ন্তি নিশ্চিত, অনুরাগ প্রিয়ন্তিকে পছন্দ করে। নাহলে এতটা কেয়ার সামান্য কর্মচারীর প্রতি সে নিশ্চয়ই দেখাত না। তাছাড়া প্রিয়ন্তি নিজের অজান্তেই চায়, অনুরাগ তার প্রতি সহনশীল হোক। আজকাল অনুরাগের সংস্পর্শ প্রিয়ন্তির মন কাড়ে। এই অনুভূতি এত বছর মাহতিমের জন্যে অনুভব করেনি প্রিয়ন্তি। এই অনুভব শুধুই অনুরাগের বেলায় তৈরি হয়েছে। এ কেমন অনুভূতি! মাহতিম, অনুরাগ, মাহতিম,অনুরাগ! এই দুই পুরুষের দ্বন্ধে প্রিয়ন্তি পি”ষে। অনুরাগকে ভালোবাসলে মাহতিম খুব কষ্ট পাবে। কিন্তু অনুরাগের থেকে দূরে থাকলে প্রিয়ন্তি কষ্ট পাবে। কি করবে, কোথায় যাবে, কিছুই ঠাহর করতে পারছে না প্রিয়ন্তি। তাই প্রিয়ন্তি এক সহজ উপায় বেছে নিল। আজ থেকে অনুরাগকে অদেখা করবে প্রিয়ন্তি। অনুরাগের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে। দরকার নেই এসব প্রেম ভালোবাসার। প্রিয়ন্তি একা আছেই, একাই থাকবে। তার জীবনে কোনো মাহতিম বা অনুরাগের দরকার নেই। সে একাই দিব্যি ভালো আছে। কিন্তু প্রিয়ন্তির এই পণ বেশিক্ষণ ঠিকল না। ভাবনার পরপরই কল এলো অনুরাগের। প্রিয়ন্তি অনুরাগের কল দেখে মোহাচ্ছন্ন হয়ে গেল। হাত বাড়িয়ে কল ধরতে গেলেও পণের কথা মনে পরে আর ধরল না। একবার রিং বাজল, আবার বাজল। তিনবারের সময় প্রিয়ন্তির হৃদয় নরম হয়ে গেল। সে সকল পণের কথা ভুলে কল রিসিভ করে বসল।
অনুরাগ এতক্ষণ কল কেন ধরেনি দেখে কোনপ্রকার রাগ দেখাল না। বরং বেশ নরম স্বরে বলল,
‘ ব্যস্ত ছিল? পরে কল করব? ‘
এখানেই মাহতিম এবং অনুরাগে পার্থক্য খুঁজে পেল প্রিয়ন্তি। মাহতিম একটু কল রিসিভ না করলে বাসার নিচে এসে যেত। রাত বিরাতে ঢিল ছুঁড়ত জানালায়। এই বিষয়টা প্রিয়ন্তি নিতে পারত না। রাগ উঠত। অনুরাগ তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
‘ কথা বলছ না? ব্যস্ত ভীষন? কল কেটে দেব? ‘
অনুরাগের আদর করে কথা বলা দেখে প্রিয়ন্তির মনের মধ্যে উদয় হওয়া শঙ্কা কোথাও যেন ঘাপটি মেরে বসল। প্রিয়ন্তি একগাল হেসে বলল,
‘ কালকের প্রেজেন্টেশনের জন্যে স্লাইড বানাচ্ছি। ‘
কথা বলার মধ্যে প্রিয়ন্তি আরো দুবার হাঁচি দিল। হাঁচির শব্দে অনুরাগ চোখ কুঁচকে বলল,
‘ ঠান্ডা লেগেছে নাকি? ‘
প্রিয়ন্তি টিস্যু দিয়ে নাক মুছে বলল,
‘ হু। জ্বরও আসবে বোধহয়। ‘
অনুরাগ শুনল। প্রিয়ন্তির কথা শুনে তার অযথাই খারাপ লাগল। অনুরাগ বলল,
‘ ঠান্ডা লাগলে আজ কাজ করার দরকার নেই। রেস্ট নাও। আর কালকের জন্যে সিক লিভ নিয়ে নাও। ‘
প্রিয়ন্তি আর একবার হাঁচি দিয়ে বলল,
‘ না, লাগবে না। আমি ঠিক আছি। ‘
অনুরাগ এবার খানিক রাগ দেখাল। কণ্ঠে কঠোরতা ঢেলে বলল,
‘ জেদ দেখাবে না। ল্যাপটপ বন্ধ করবে, গরম পানির ভাঁপ নেবে, তারপর ঔষধ খেয়ে চুপ করে শুয়ে পড়বে। আর এসব করবে এক্ষুণি, এই সময়ে। ‘
প্রিয়ন্তি কিছু কথা বলতে চায়। পারে না। কেন যেন অনুরাগের কথা মানতে ইচ্ছে করছে। তাই প্রিয়ন্তি রাজি হয়ে যায়। কল কেটে টেবিলে মোবাইল রাখবে, তার আগে দেখে মোবাইলে মাহতিমের দশটা কল। মাহতিম এতগুলো কল দিল কখন? ওয়েটিং-এ পেয়েছে নিশ্চয়ই। ইশ! কি না কি ভেবে ফেলেছে। প্রিয়ন্তি সঙ্গেসঙ্গে মাহতিমকে কল করে। এবার মাহতিমের মোবাইল বন্ধ দেখাচ্ছে। প্রিয়ন্তি আরো কবার কল করে। বারবার বন্ধ দেখাচ্ছে দেখে প্রিয়ন্তি হাল ছেড়ে অনুরাগের কথামত ল্যাপটপ বন্ধ করে, ঔষধ খেয়ে শুয়ে পরে।
#চলবে