প্রিয়ন্তিকা পর্ব -২১+২২

#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |২১|

প্রিয়ন্তি অফিসের যাবে বলে বেড়িয়েছে। বাসা থেকে বাস স্ট্যান্ড পথটা রিকশা করে যেতে হয়। ভাড়া পাঁচ টাকা। তারপর বাসে করে অফিসে যেয়ে ভাড়া পরে বিশ টাকা। মোট, পঁচিশ টাকা। প্রিয়ন্তি বাসার নিচে দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজে যাচ্ছে। হঠাৎ প্রিয়ন্তির চোখ আটকে অদূরের একটা টং দোকানের সামনে। সাত সকালে টঙের দোকানে ভীষন ভিড় দেখা যাচ্ছে। দোকানের একটু সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাহতিম। আজও ফরমাল শার্ট ইন করে পড়া, গলায় টাই আর প্যান্ট। বোধহয় অফিসে যাচ্ছে। মাহতিমের চাকরি কি তবে হয়ে গেছে? প্রিয়ন্তি মনে পরে, পরশু রাত থেকে মাহতিমের সঙ্গে তার কোনোরূপ কথাবার্তা হয়নি। মাহতিম এই দুইদিন প্রিয়ন্তির আশেপাশেও আসেনি। প্রিয়ন্তির খটকা লাগছে। মাহতিম এমন করে চুপ করে যাওয়া ছেলে মোটেও নয়। প্রিয়ন্তি এগিয়ে যায় মাহতিমের দিকে। খানিক দূরে থেকেই ডাকে,

‘ এই মাহতিম! ‘

চেনা মানুষের কন্ঠস্বর শুনে চমকে পেছনে তাকায় মাহতিম। প্রিয়ন্তি তার দিকেই এগিয়ে আসছে। ভ্রু কুঁচকে, গাল দুখানা ফুলিয়ে ভীষন আকর্ষণীয় চেহারা নিয়ে ধেয়ে আসছে তার মন চুরি করতে। মাহতিম মৃদু হেসে উঠে। প্রিয়ন্তির দিকে এগিয়ে যেতে চায়। পরক্ষনেই পা”জোরা থেমে যায় তার। প্রিয়ন্তির সঙ্গে সে রেগে আছে। তাই সে পণ করেছে, যতক্ষণ অব্দি প্রিয়ন্তি তার রাগ না ভাঙাবে, সে প্রিয়ন্তির দিকে আর তাকাবে না। প্রিয়ন্তিকে অত্যধিক সুন্দর লাগলেও না। মাহতিম সিগারেট ফেলে দেয়। মুখে হাত নিয়ে দেখে, মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ আসছে। বি”দঘুটে গন্ধ। মাহতিম হাত উঁচু করে মুখের সামনে ঝেড়ে সিগারেটের ধোঁয়া কাটাতে চায়। এত সিগারেট গিলেছে সে, এখন তার চারপাশে সিগাররেটের ধোঁয়া কুণ্ডলিত হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। মাহতিম মাউথ ওয়াশ বের করে মুখ ধুয়ে নেয়। ততক্ষণে প্রিয়ন্তি সামনে এসে পরেছে তার। প্রিয়ন্তি দূর থেকেই মাহতিমের এসব উদ্ভট কাণ্ডকারখানা দেখছিল। মাহতিম এখন ফিটফাট। গলা কেশে গম্ভীর হবার ফেষ্টা করে বলে,

‘ তুমি এখানে কেন? ‘

প্রিয়ন্তি বুকের কাছে হাত আড়াআড়ি ভাঁজ করে তীক্ষ্ম চোখ চায় মাহতিমের দিকে। অতঃপর বলে,

‘ কটা সিগারেট পেটে গেছে? ‘

মাহতিম হকচকিয়ে যায়। কিন্তু চেহারা আগের ন্যায় গুরুগম্ভীর করে বলে,

‘ তোমার তাতে কি? আমি মরে গেলেই তো শান্তি তোমার। ‘

প্রিয়ন্তি মৃদু নিঃশ্বাস ছাড়ে। হাতের ভাঁজ ছেড়ে দিয়ে বলে,

‘ গতকাল রাতে ফোন বন্ধ কেন ছিল? ‘

মাহতিম প্রিয়ন্তির প্রশ্ন গায়ে তুলে না। বরং ত্যাড়াভাবে বলে,

‘ তোমার ফোনও তো ওয়েটিং এ ছিল! আমিও এখন একই প্রশ্ন করলে কি উত্তর দেবে? ‘

প্রিয়ন্তি বলে,

‘ অফিসের জরুরি কল ছিল। ‘

মাহতিম তাচ্ছিল্য ভরা হাসে। বলে,

‘ হ্যাঁ, ঠিকই তো। রাত দুইটার দিকে অফিসের খুব জরুরি কথাই আটত্রিশ মিনিট পাঁচ সেকেন্ড ধরে বলছিলে তুমি। ‘

প্রিয়ন্তি অবাক হয়। সুধায়,

‘ তুমি টাইম গুনে যাচ্ছিলে? ‘

মাহতিম উত্তর দেয় না। বরং মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে চেয়ে থাকে। প্রিয়ন্তি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। পুনরায় কি মনে পড়ায় প্রশ্ন করে,

‘ সেদিন বাসে উঠো কি কেন তুমি? দেখলাম বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটছিলে। আমি ডেকেওছিলাম কয়েকবার। শুনো নি। ‘

মাহতিম প্রিয়ন্তির দিকে চায়। কণ্ঠে অভিমান নিয়ে বলে,

‘ ওহ, তোমার খেয়াল ছিল তাহলে? ‘

‘ এভাবে কেন কথা বলছ? সোজাভাবে কথা বলো। ‘

‘ সোজা জিনিসকে তুমিই বাঁকা করছ, প্রিয়ন্তিকা। ‘

প্রিয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে ভীষন বিস্ময় নিয়ে মাহতিমে দিকে তাকিয়ে রইল। মাহতিমের হঠাৎ এরূপ বদলে যাওয়ার কারণ প্রিয়ন্তি কিছুতেই ধরতে পারছে না। হঠাৎ নিরবতা ভেঙে বেশ থমথমে স্বরে মাহতিম বলল,

‘ চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি, প্রিয়ন্তিকা। তোমার অফিসের পাশেই। মাসে ২৫০০০ হাজার টাকা স্যালারি। এটুকু দিয়েই খুব সহজেই সংসার চালানো যাবে। ভাইয়ের পুলিশের চাকরির টাকা দিয়ে আমার সংসার চালাতে হবে না। ‘

প্রিয়ন্তি শুনে। খুশি হয়। পাগলটা অবশেষে বুঝল। প্রিয়ন্তি উচ্ছল কণ্ঠে বলে,

‘ কংগ্রাচুলেশন। ‘

‘ শুধু কংগ্রেস? ‘

মাহতিমের আহত কণ্ঠ। মাহতিম চাকরিটা নিয়েছে শুধুমাত্র প্রিয়ন্তিকে বিয়ে করার জন্যে। তাই সে চাকরির কথা বলার পাশাপাশি নিজের সংসার চালানোর ক্ষমতা নিয়েও কথা বলেছে। বুক ভর্তি অনেক আশা নিয়ে প্রিয়ন্তির কাছে চাকরির কথা বলেছে মাহতিম। অথচ প্রিয়ন্তি…. মাহতিমের বুক ছিঁ”ড়ে দীর্ঘশ্বাস বের হয়। মনের মধ্যে বি”ষাক্ত পোকা যেন কা”মড়াতে থাকে অবিরত।

প্রিয়ন্তি কিছু একটা ভাবে। অতঃপর মাহতিমের হাতের দিকে চেয়ে বলে উঠে,

‘ প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে সবার আগে নিজের জন্যে একটা ঘড়ি কিনবে। তোমার হাতের ঘড়ির বেল্ট ছিঁ”ড়ে গেছে। ‘

মাহতিম নিজের হাতের দিকে চায়। ঘড়িটা আসলেই বেশ পুরনো হয়ে গেছে। বাবা এইচএসসি পাশ করার পর এই ঘড়িটা দিয়েছিল তাকে। এখনো পরে যাচ্ছে সে। নতুন ঘড়ি কিনতে ইচ্ছে করেনি। এখন দেখতে পারছে। ঘড়িটার বেল্ট ছিঁ”ড়ে গেছে জায়গায় জায়গায়। নিজস্ব চাকচিক্য হারিয়েছে ঘড়ি। মাহতিম অলস চোখে ঘড়ির দিকে চেয়ে আবার প্রিয়ন্তির দিকে তাকায়। তার অনেক ইচ্ছে, নিজের প্রথম বেতন দিয়ে সে প্রিয়ন্তিকে কিছু কিনে দেবে। এর আগেও প্রিয়ন্তিকে সে নানা কিছু দিতে চেয়েছে। কিন্তু প্রিয়ন্তি সেসবের কিছুই নেয়নি। ফিরিয়ে দিয়েছে বারবার। এবারেও যে নিবে না, সেটা মাহতিম খুব ভালো করে জানে। মাহতিম কৌশলে জিজ্ঞেস করে,

‘ তোমার একটা বেলিফুলের গাজরা ছিল না, প্রিয়ন্তিকা? ওই যে, বিদায় অনুষ্ঠানের দিন যেটা তুমি হারিয়ে ফেলেছিলে। ”

প্রিয়ন্তি মাথা নাড়ে। মাহতিম বলে,

‘ সেটা আমি খুঁজে পেয়েছি। আগামীকাল নিয়ে আসব। বাসায় আছে ওটা। আমার ড্রয়ারে রাখা।’

প্রিয়ন্তি মাথা নাড়ে। বলে,

‘ কোথায় পেলে? ‘

‘ স্টেজের পেছনে। তুমি রবীন্দ্র সঙ্গীতে নাচার সময় বোধহয় চুল থেকে খুলে পরে গিয়েছিল। আমি কুড়িয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। ‘

প্রিয়ন্তি ব্যস্ত চোখে হাতের ঘড়ির দিকে তাকায়। ইতিমধ্যে বেশ দেরি হয়ে গেছে। আধা ঘন্টার মধ্যে অফিসে না পৌঁছালে আজকের প্রেজেনটেশনের টাইম পেরিয়ে যাবে। প্রিয়ন্তি তাই তাড়াহুড়ো করে বলে

‘ আচ্ছা, নিয়ে এসো। এখন আমি যাই, হ্যাঁ? অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাকি কথা কাল হবে। ‘

প্রিয়ন্তি মাহতিমের দিকে বিদায় নিয়ে হুড়মুড় করে রিকশায় উঠে পরে। মাহতিম অলস চোখে প্রিয়ন্তির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর নিজেও অফিসের যাবার উদ্দেশ্যে বাইকে চড়ে বসে।
________________________
প্রিয়ন্তি অফিসে পৌঁছে দেখে অফিসের হাবভাব খুব একটা সুবিধার নয়। কোথাও যেন একটা গন্ডগোল লেগেছে। প্রিয়ন্তি সব দেখে চুপ করে নিজের কেবিনে এসে বসে। পরপরই উঠে দাঁড়ায় বসের কিছু নোং”রা কথা শুনে,

‘ রাতটা কোথায় কাটালেন, মিস প্রিয়ন্তি? নিজের ঘরে নাকি আপনার প্রেমিক মাহতিম ইয়ানের ঘরে? ‘
#প্রিয়ন্তিকা
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |২২|

‘ রাতটা কোথায় কাটালেন, মিস প্রিয়ন্তি? নিজের ঘরে নাকি আপনার প্রেমিক মাহতিম ইয়ানের ঘরে? ‘

প্রিয়ন্তির কানের মধ্যে কেউ যেন বি”ষ ঢেলে দিল। বসের এমন নোংরা মন্তব্যের প্রতিবাদস্বরূপ ঝাঁঝ নিয়ে প্রিয়ন্তি বলে,

‘ ভদ্রভাবে কথা বলুন। আমি একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। ‘

বসের এগিয়ে আসেন প্রিয়ন্তির দিকে। অফিসের সবার চোখ তাদের উপর। অনুরাগ এতক্ষণ নিজের কেবিনে ছিল। বাইরে এত হইচই শুনে অনুরাগ দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। বসের পাশে এসে বলে,

‘ এনি প্রবলেম স্যার? ‘

বস প্রিয়ন্তির দিকে তীক্ষ্ম চোখে চাইলেন। যেন ঐ দু চোখ দিয়েই তিনি প্রিয়ন্তির গা জ্বা”লিয়ে দেবেন। প্র”তিহিং”সার আ”গুন তার ভেতরের মনুষ্যত্ববোধ নিঃশেষ করে দিয়েছে। মাহতিমের করা দোষের জন্যে তার সমস্ত রাগ প্রিয়ন্তির উপর পরেছে। মাহতিমের চুল ছিঁড়বে সেই সাহস তো নেই, তাই নরম প্রিয়ন্তিকেই অপমান করে তার আত্মতুষ্টি মিলছে। অনুরাগ বিস্মিত চোখে প্রিয়ন্তির দিকে চাইল। প্রিয়ন্তির চোখে রা”গের উত্তাপ। কোনো মেয়েই তার চরিত্রের উপর দাগ সহ্য করতে পারে না। আর এ তো প্রিয়ন্তি স্বয়ং!

অনুরাগ বলল,

‘ স্যার, মিস প্রিয়ন্তি কিছু করেছেন? ‘

বস শেয়ালের ন্যায় চেঁচিয়ে বলল,

‘ ও করেনি। করেছে ওর প্রেমিক, যার ঘরে ওর দিনরাত কাটে। আমাকে, এই সুভাষ চন্দ্রকে হুমকি দেয়। ব্ল্যাকমেইল করে? আমি নাকি মেয়েদের সঙ্গে অসভ্যতামি করে বেড়াই। আমার নামে এত বড় মিথ্যা নিশ্চয়ই মিস প্রিয়ন্তিই তাকে বলেছেন। ভালো মেয়ে ভেবে চাকরি দিয়েছিলাম।। আর এখন আমার পেছনেই ছু”রি চালানো! আমি এসব বরদাস্ত করব না। ইউ আর ডিসমিস, মিস প্রিয়ন্তি। আজ অফিস থেকে বেরোনোর সময় নিজের ডিসমিস লেটার নিয়ে যাবেন। ‘

অফিসের সবার ঘৃণার চোখ প্রিয়ন্তির দিকে। যেন প্রিয়ন্তি মস্ত পাপী একটা মেয়ে। ফিহা নিজেও ঘৃণায় সরে দাঁড়াল প্রিয়ন্তির থেকে। প্রিয়ন্তি এসব শুনে হতভম্ব হয়ে পরেছে। সবার এসব চাওনি দেখে নিজেকে নর্দমার কীট মনে হচ্ছে। বসের কথা শুনে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, মাহতিম এসব করেছে। নিজের শর্ত ভেঙেছে। কেন ভাঙল? প্রিয়ন্তি তাকে এতদিনে নিজের খুব আপন ভাবতে শুরু করেছে। প্রিয় বন্ধু ভেবেছে। আর আজ? মাহতিম আরো একবার দেখিয়ে দিল, সে কারো প্রিয় হবার যোগ্য না। কারো না। প্রিয়ন্তির কান্না আসছে। দু চোখ ঝাঁপিয়ে কান্নার দলা উপচে পরছে। প্রিয়ন্তি আর কথা বলে না। ধপধপ পায়ে কাঁধে ব্যাগ তুলে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে। পেছনে পেছন অনুরাগ আসে।

প্রিয়ন্তির চোখের পানি, নাকের পানি এক হয়ে যাচ্ছে। ফের হৃদয় ভাঙল মাহতিম। এতটা অপমান করিয়ে আজ নিশ্চয়ই সে শান্তি পেয়েছে। তার সঙ্গে বোঝাপড়া আছে প্রিয়ন্তির। এইসব নোংরা কাজের জন্যে তার জবাবদিহি করতে হবে। প্রিয়ন্তি আজ আর বাসের জন্যে অপেক্ষা করল না। হেঁটেই চলল মাহতিমের অফিসের দিকে। অনুরাগ এসে প্রিয়ন্তির হাত পেছন থেকে ধরে ফেলল। প্রিয়ন্তি থেমে যায়। ভেজা চোখ নিয়ে অনুরাগের দিকে চায়। অনুরাগ বলে,

‘ কোথায় যাচ্ছ? ‘
‘ কারো সঙ্গে বোঝাপড়া করতে। ‘

প্রিয়ন্তির চোখের পানিতে আকাশসম রাগ ও অভিমান মিশে আছে। অনুরাগ হয়ত বুঝতে পারল সে অভিমান। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

‘ রাগের মাথায় ভুল কিছু করে বসো না, প্রিয়ন্তি। রাগের মাথায় এমন কিছু করো না, যার জন্যে পরবর্তীতে আফসোস করতে হয়। ‘

প্রিয়ন্তি শুনে। হঠাৎ করে উপলব্ধি করে, তার এতটা রেগে যাবার আগে মাহতিমের কাছে জেনে নেওয়া উচিৎ সে আদৌ বসকে এসব বলেছে কি না। একপাক্ষিক কথা শুনে রেগে ভূল সিদ্ধান্ত নেওয়া মূর্খতার পরিচয়। মাহতিমের প্রতি এক মায়া জন্মেছে প্রিয়ন্তির। আরো একবার তাকে বিশ্বাস করলে কি ক্ষতি তাতে।

অনুরাগ কিছুক্ষণ থামে। প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে থাকে নির্নিমেষ। দু চোখে কাতরতা নিয়ে হঠাৎ করেই সে এক অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসে,

‘ মাহতিম ইয়ান কি তোমার খুব বেশি আপন কেউ, প্রিয়ন্তি? ‘

প্রিয়ন্তি বিস্মিত হয়। উত্তর দিতে পারে না। সত্যি বলতে, এ কদিন মাহতিমের সঙ্গে মিশে প্রিয়ন্তির তাকে বেশ আপন আপন লাগে। প্রিয় একটা বন্ধু মনে হয়। এই প্রিয় স্থানটা নিজের জন্যে মাহতিম নিজেই প্রিয়ন্তির মনে গড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। প্রিয়ন্তি ঢোক গিলে। অতঃপর নরম কণ্ঠে বলে,

‘ হয়ত আপন কেউই। কিন্তু যে একবার আমার বিশ্বাস ভাঙে, সে দ্বিতীয়বার আমার আপন হয়না। ‘

অনুরাগ সঙ্গেসঙ্গে প্রিয়ন্তির হাত ছেড়ে দেয়। প্রিয়ন্তি আর দাঁড়ায় না। দ্রুত হেঁটে যায় মাহতিমের অফিসের দিকে।
_____________________
‘ নিচে এসো। তোমার সঙ্গে কথা আছে। ‘

মাহতিম খুশি হয়ে বলে,

‘ তুমি এসেছ নাকি? আমার জন্যে? ‘

প্রিয়ন্তি মৃদু স্বরে জানায়,

‘ হুঁ। দ্রুত এসো। আমি অপেক্ষা করছি। ‘

দেখা গেল, মাহতিম পাঁচ মিনিটের মাথায় নিচে নেমে এসেছে। অফিসের সামনে প্রিয়ন্তিকে দেখে তার ঠোঁটে রাজ্য জয় করা হাসি লেগে রইল। সে দ্রুতপদে প্রিয়ন্তির পাশে এসে দাঁড়াল।

প্রিয়ন্তি কোনোরূপ বাক্যক্ষয় না করে বলল,

‘ মাহতিম! তুমি আমার বসের সঙ্গে কি করেছ? ‘

হঠাৎ এমন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নে মাহতিম বিস্মিত হয়। পরক্ষনেই চোখ লাল হয়ে যায় তার। এমনিতেই অনুরাগকে নিয়ে সে ভীষন রাগান্বিত এবং বিরক্ত। আর এখন বসের এই কাহিনী তার মাথাটা আরো গরম করে দিল। নিমিষেই মাহতিম ভুলে যায় প্রিয়ন্তির দেওয়া সকল শর্ত। রাগের বশে স্বীকার করে নিজের বিশ্বাস ভাঙার কথা। তাই হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়ে মাহতিম বলল,

‘ বেশি কিছু করিনি। শিশু ডোজ দিয়েছি শুধু। ‘

প্রিয়ন্তির বুকে কাঁপন ধরে গেল। ধীরে ধীরে বোধ হল, প্রিয়ন্তি যা শুনতে চায়নি, মাহতিম এখন তাই বলতে যাচ্ছে।

প্রিয়ন্তি আহত কণ্ঠে বলল,

‘ মানে? ‘

‘ মানে হচ্ছে, তার বাথরুমের ফুটেজ আমার কাছে বন্দি। যতই হোক। একজন নামিদামি মানুষ তো আর চাইবে না নিজের প্যান্টের ভেতর থাকা অঙ্গ ভাইরাল হয়ে যাক। তাছাড়া তার বউকে তার কুকর্ম দেখানোর কথা বলেছি। কেউ তো চাইবে না আর বাহারওয়ালির কথা ঘরওয়ালির সামনে প্রকাশ পেয়ে যাক। তাই বেচারা চুপসে আছে। সমস্যা নেই। কদিন যাক। আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ডোন্ট ওয়ারি। ‘

প্রিয়ন্তি রাগে দুঃখ কথা বলতে ভুলে গেল। কানের মধ্যে পোকা কিলবিল করে উঠল যেন। ভেজা কন্ঠে বলল,

‘ আমার বিশ্বাস, আমার দেয়া বন্ধুত্বের শর্ত ভাঙতে লজ্জা করল না তোমার? এতটা নিচে কি করে নেমে গেলে? ‘

মাহতিমের স্বাভাবিক উত্তর,

‘ ওই শা”লার বাচ্চা তোমায় ই”ভটি”জিং করছিল। তোমার গায়ের পরিমাপ মেপেছে। তোমার দেহ চোখ দিয়ে আস্বাদন করেছে। আর আমি এসব বসে বসে দেখব? জেলাসি ঠেলার ইচ্ছে আমার নেই। এইবার অল্প ডোজে ছেড়ে দিয়েছি। নেক্সট টাইম এমন করলে জাস্ট খু’ন করে ফেলব। ‘

মাহতিমের কণ্ঠে রাগের আগুন। প্রিয়ন্তি অবাক হল ভীষন। এই সেই মাহতিম,যাকে প্রিয়ন্তি ভরসা করেছিল? প্রিয়ন্তি রেগেমেগে অস্থির হল। নিজের রাগ সংবরণ করতে না পেরে মাহতিমের কলার চেপে ধরে বলল,

‘ শুধু ভালোবাসা কেন,তুমি বন্ধুত্বেরও যোগ্য নও, মাহতিম। তুমি খুব স্বার্থপর একটা মানুষ। নিজের স্বার্থের জন্যে আমার কতবড় ক্ষতি করে দিলে, সেটা তুমি ভাবতেও পারছ না। আজ তোমার জন্যে সবার সামনে আমার মাথা হেট হয়ে গেছে। আমি আর কখনো কারো সামনে মুখ তুলে কথা বলতে পারব না। সবসময় তুমি এমনই করে আসছ, মাহতিম। বারবার নিজে হেয়ালি কাজের দ্বারা তুমি সবার সম্মুখে আমাকে ছোট করেছ, লাঞ্ছিত করেছ। আমি তোমাকে ঘৃণা করি, মাহতিম। এই ঘৃণাই তোমার প্রাপ্য! ‘

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here